২০১১: ডায়েরী থেকে দ্রব্যমূল্য বিষয়ে একটি ক্ষিপ্ত নোট

চিনি ৬৫, চাল ৫৪, সয়াবিন তেল ১০৫ টাকা... রাতে বাসায় ফিরে গৃহকর্ত্রীর ঘোষণা শুনে চুপ করে বসে রইলাম [..]

চিনি ৬৫, চাল ৫৪, সয়াবিন তেল ১০৫ টাকা… রাতে বাসায় ফিরে গৃহকর্ত্রীর ঘোষণা শুনে চুপ করে বসে রইলাম। অনেকদিন মুদি দোকানের বাজারপাতির খোঁজ করি না। কাজীর দেউড়ী বাজারের একটা দোকান থেকে জিনিসপত্র পাঠিয়ে দেয় ফোন করলে। যখন যা লাগে ফোনে বলে দেয়া হয়, ওরা বাসায় পৌঁছে দেয়। একটা আরামদায়ক হোম সার্ভিস। দামাদামির তেমন অবকাশ নেই, দাম একটু বেশী দিতে হলেও মেনে নেই, কারণ সময়ের টানাটানি বেশী আমার। এই ব্যবস্থায় বাজারে জিনিসপত্রের দাম কিরকম ওঠানামা করছে আমার জানা থাকে না। আমি সংসারে মাসের বাজেট দিয়েই খালাস।

কিন্তু কাল রাতে দামগুলো শোনার পর থেকে আমার কেমন যেন হাঁসফাঁস লাগছে। গলার টাইতে গিট্টু পড়লে যেমন অস্বস্তি, ঠিক তেমন। এই মাসের বাজেটে টান পড়বে নিশ্চিত। আবার ভাবি আমার মতো মোটামুটি সচ্ছল মানুষের যদি এই গিট্টু লাগে, যারা প্রান্তিক আয়ের মানুষ কিংবা তারও বহু নীচে যাদের বসবাস, তাদের কি অবস্থা? তাদের হাঁসফাঁসের শব্দ কি আমাদের কানে আসে না?

পেটের দায় বড় দায়। পেটের দায়ে বাজারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশী। অথচ এই বাজার নিয়ে কোথাও তেমন উচ্চবাচ্য দেখি না। যতটা দেখি পেটের সাথে সম্পর্কহীন ইস্যু নিয়ে। দেশে বিদ্যুতের সংকট কাটছে না, গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে, অপরাধ বেড়ে গেছে, শেয়ারবাজারে কঠিন ধস, যে-কোন সময় আসবে ভূমিকম্পের ধস, একের পর এক নানান শঙ্কায় দেশটা কাবু। অথচ যাদের এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা তাদের বদলে ঘামছে কোথাকার আবুল হোসেনের মাথা।

তাদের মাথা ঘামে না, কারণ তাদের বাজারে যেতে হয় না, বাজার তাদের কাছে চলে আসে। বাড়ী ফেরার পর তাদের বউরা দোকানের লিস্টি নিয়ে আসে না। মানিব্যাগের টাকা বারবার গুনে দেখতে হয় না আর কদিন চলবে এই কটা নোট দিয়ে। গায়ে ফু দিয়ে রাজনীতির ময়দানে মাগনা লেকচার তাড়িয়ে বেড়ায় ধনবান নেতারা। অথচ এই ব্যাটারাই ক্ষমতায় যাবার জন্য মানুষকে হাজারো মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেয় নির্বাচনের সময়। মানুষ কি সেসব ভুলে যায়?

গোল্ডফিশ মেমোরির জাতিটা এই সব দুষ্ট রাজনৈতিক দলকে পাঁচ বছরে একবার ‘শিক্ষা’ দিয়েই গণতান্ত্রিকভাবে তৃপ্ত। তারপর ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’ বাণী শুনে বাড়ী ফিরে দ্বিগুণ দামের বেগুন আর তিনগুণ দামের পেঁয়াজের ভর্তা খেয়ে ভাতঘুম যায় দুপুরবেলা। বাহ শান্তি।

এবার বোকার মতো দুটো প্রশ্ন :

মাননীয় ক্ষমতাবান, বাজারের আগুন আমাকে পীড়িত করে, আপনাদের করে না কেন?

আর মাননীয় জনগণ, ২০১৩ সালে আপনারা এই দলকে শিক্ষা দিয়ে আরেক দলকে ক্ষমতায় পাঠাবেন, তাই না?

[কয়েকমাস আগে এক রাতে লেখা ডায়েরী থেকে কপিপেস্ট]

নীড় সন্ধানী

অদেখা স্বপ্নের ব্যাপ্তিটা প্রতিদিন বিস্তৃত হতে থাকে.........

২ comments

  1. রায়হান রশিদ - ২২ এপ্রিল ২০১১ (১০:৪০ অপরাহ্ণ)

    গোল্ডফিশ মেমোরির জাতিটা এই সব দুষ্ট রাজনৈতিক দলকে পাঁচ বছরে একবার ‘শিক্ষা’ দিয়েই গণতান্ত্রিকভাবে তৃপ্ত। তারপর ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’ বাণী শুনে বাড়ী ফিরে দ্বিগুণ দামের বেগুন আর তিনগুণ দামের পেঁয়াজের ভর্তা খেয়ে ভাতঘুম যায় দুপুরবেলা। বাহ শান্তি।

    টিভি খুললেই দেখি দলীয় ভাড়াটে অর্থনীতির পন্ডিতেরা আমাদের মনে করিয়ে দেন কিভাবে বিভিন্ন পরিসংখ্যানের সূচকে আমাদের আসলে অবস্থার উন্নয়ন ঘটছে; কিভাবে আমরা এক অনন্যসাধারণ মিরাকল্ এর অংশ! সুতরাং, নীড়দার ব্যক্তিগত ডায়েরীর পাতায় যাই তিনি লিখে রাখুন না কেন, তা আসলে বেঠিক হতে বাধ্য! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গোল্ডফিশ মেমোরি বলুন, সিলেকটিভ মেমোরি বলুন কিংবা কালেকটিভ এ্যামনেশিয়াই বলুন – সেটা নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যকর, সেটা আসলে আমাদেরই ভালোর জন্য। এই যেমন আমরা শায়েস্তা খাঁর আমল মনে রাখি ১ টাকায় আট মণ চালের লভ্যতার গপ্প দিয়ে, আর ভুলে যাই এই শায়েস্থা খাঁই প্রতিদিন তার ব্যক্তিগত বিলাসে তখনকার হিসেবেই দৈনিক লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করতেন!
    আমরা জনগণই তো সকল ক্ষমতার উৎস, এতে কোন ভুল নেই। কারণ আমাদের অশেষ ক্ষমতা মনে রাখার কিংবা না-রাখার।

    • নীড় সন্ধানী - ২৪ এপ্রিল ২০১১ (২:৩৯ অপরাহ্ণ)

      দলচেনা ভাড়াটে পন্ডিতগন তবু অনেকটা নিরাপদ। আলগোছে তাদের সরিয়ে রাখতে পারি। কিন্তু বর্নচোরা পন্ডিতেরাই আজকাল যেভাবে চারদিক জাঁকিয়ে বেড়াচ্ছে, বোঝা মুশকিল হয়ে গেছে কোন পক্ষে আছে।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.