দেখতে খুব সাদাসিদে মেয়েটি। মাত্র ক্লাস এইটে পড়তো। বাবামার কনিষ্ঠা কন্যা। রাস্তার প্রেমিকদের যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে বিষপান করলো গতকাল। ইলোরা তার নাম। ...

দেখতে খুব সাদাসিধে মেয়েটি। মাত্র ক্লাস এইটে পড়তো। বাবামার কনিষ্ঠা কন্যা। রাস্তার প্রেমিকদের যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে বিষপান করলো গতকাল। ইলোরা তার নাম।

এরকম আরো অনেক ইলোরা প্রাণ দিয়েছে বিগত বছরগুলোতে, আরো দেবে। কেবল পত্রিকায় প্রকাশিত হিসেব ধরলে গত কয়েক বছরে হিসেব করলে শ’ খানেক আত্মহনন পাওয়া যাবে।

নাম তার ইভ টিজিং। আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখনো ছিল। ক্লাসফাইভের মেয়েকেও স্কুলছাড়া হতে দেখেছি ইভ টিজিং-এর যন্ত্রণায়। আমার নিজের ছোট বোনও পড়েছিল ইভ টিজিং-এর হুমকিতে। আমি ঠেঙ্গানি দিয়ে নিরস্ত করেছিলাম। ঠেকাতে না পারলে কি হতো বলা মুশকিল।

ইভ টিজিং-এ সবাই আত্মহত্যা করে না। যদি করতো তা কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে যেতো। যারা ইভ টিজিং করে, তারা সমাজের নীচুস্তরের ছেলে না। বেশিরভাগই স্বচ্ছল প্রভাবশালী ঘরের সন্তান। ফলে তারা অপরাধ করেও বিচারের উর্ধ্বে থেকে যায়, সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।

বলি, আইন শক্ত করতে হবে। কিন্তু ভাবি আইন শক্ত করে কী হয়। এত আইন করেও এসিড নিক্ষেপ বন্ধ করা যায়নি, ইভ টিজিং বন্ধ হয়নি, আরো অনেক অপরাধকর্ম বন্ধ হয়নি। এদেশে আইন করে কোন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্যে পরিণত হয়ে গেছে।

অপ্রিয় সত্য হলো, আমাদের দুর্বলতা আইন প্রয়োগে। আইনকে প্রয়োগের আওতায় আনতে পারছি না কেন? রাস্তাঘাটে টহল পুলিশকে পান বিড়ি খেয়ে বৈকালিক ভ্রমণে রত অবস্থায় দেখি সবসময়। ওদের কাজটা কি আসলে? আমি কখনো কোন পুলিশ বা অন্য বাহিনীকে সমাজে অপরাধ দমনে এগিয়ে আসতে দেখি না। কাঁধে অচল রাইফেল ঝুলিয়ে পর্যটকের মতো ঘুরে বেড়ানো পুলিশকে অপরাধী দুরে থাক, রাস্তার টোকাইও ভয় পায় না।

এই পুলিশ বা অন্য যে সকল বাহিনী আছে, তাদেরকে টহলের নামে অলস পর্যটনে না পাঠিয়ে একটু হাত পা নেড়ে কাজে লাগানো যায় না?

এদেশে এখন আইনের লোক দেখি দুরকম। হয় একদম অলস অকর্মণ্য পুলিশ, নয় একেবার কালো চশমার ডাইরেক্ট ক্রসফায়ার। এর মাঝামাঝি কোন রাস্তা নাই?

উন্নত দেশের এত টেকনোলোজি ফ্যাশান আমদানি করি আমরা, সভ্যতা আমদানি করতে পারি না?

আসলেই কি আমরা এতটাই অকার্যকর জাতে পরিণত হয়ে গেছি?

সংবাদ সুত্রঃ
http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=132905

নীড় সন্ধানী

অদেখা স্বপ্নের ব্যাপ্তিটা প্রতিদিন বিস্তৃত হতে থাকে.........

৬ comments

  1. সৈকত আচার্য - ৫ এপ্রিল ২০১০ (৭:০০ পূর্বাহ্ণ)

    দেশের প্রধান প্রধান দৈনিকগুলোতে এই সংবাদ জায়গা করে নিয়েছে, আজ। আজকের জনকণ্ঠে দেখতে পেলাম, তারা লিখেছেঃ

    মাদক এবং অবৈধ অস্ত্রের সহজলভ্যতার কারণে অল্প বয়সী তরুণ-যুবকদের বিপথগামী করে সস্তা হিরোইজমের পথে ঠেলে দিয়ে তাদের নানা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে চলেছে বলেও মনোবিজ্ঞানীরা অভিমত দেন। মাদকের নেশায় ভাসতে থাকা তরুণ বখাটেদের একটি অংশ এক সময় জীবনটাকেও সেলুলয়েডের পর্দার মতো রঙিন ভাবতে শুরু করে। একতরফা প্রেম বা জোর করে প্রেম নিবেদনের পর এক সময় সম্পর্ক গড়ে ওঠা কিংবা অশিৰিত, গ-মূর্খের সঙ্গে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীর ‘অসম’ প্রেম হয়ে যাওয়া এসব যে রঙিন পর্দাতেই সম্ভব তা যেন এ ইন্দ্রজালে আবিষ্টরা বুঝতেই পারে না।

    বোঝা যায়, এই সমস্যার মূল অনেক গভীরে। এটাতো সমাজের ক্যান্সার। কিন্ত তাই বলে কি মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকতে হবে। এই মেয়ের বাবা বলছেন, লজ্জায় তিনি বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি। [দেখুনঃ আজকের ‘মানব জমিন’] কার লজ্জা, কিসের লজ্জা! কে দেবে লজ্জা? ৭ নং সেক্টরের একজন মুক্তিযোদ্ধা এই বাবার কাছে অন্ততঃ আমরা এটা আশা করতে চাইনা। একজন নির্যাতিত মেয়ের বাবারাই কি লজ্জায় মুখ লুকাবেন? চিরদিন? এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে, চিৎকার করে কথা বলতে না শিখলে এবং এত ক্ষতির পরও এই অযৌক্তিক লজ্জার বোধ দূর না হলে আরো অনেক ঘটনা ঘটবে প্রতিদিন। জানি, এই ঘটনা নিরাময়যোগ্য নয় কিন্ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিরোধযোগ্য তো বটেই।

  2. মোহাম্মদ মুনিম - ৮ এপ্রিল ২০১০ (৬:১২ অপরাহ্ণ)

    খুব সম্ভবত সানন্দাতে ইভ টিজিং নিয়ে একটা রিপোর্ট দেখেছিলাম, ৯০ দশকের মাঝামাঝিতে, রিপোর্টটিতে দেখা গেল কলকাতার পুলিশ কর্তারা ইভ টিজিং নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন। একটি ছেলে তার পছন্দের মেয়ের জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতেই পারে, দেখা হলে চিঠি ছুঁড়ে দিতেই পারে, এই অপরাধে তো তাকে আর জেলে নেয়া যায় না। বাংলাদেশের পুলিশও সম্ভবত এই ধারাতেই চিন্তা করে। কিন্তু নির্দোষ প্রেম নিবেদন তো আর ইলোরাদের আত্নহত্যায় বাধ্য করে না। দিনের পর দিন অশ্লীল উক্তি, অংগভঙ্গি, তুলে নিয়ে যাবার হুমকি, এসব ঠেকাতে পিতার অক্ষমতা, বরং ‘ঢেকেঢুকে’ না চলার দোষে পিতার চড় থাপ্পড়, এই সবই ইলোরাদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। যারা আত্মহত্যা করে না, তারাও নিদারুন বিষন্ন কৈশোর কাটায়। অল্প কিছু ধনীর দুলালী, যারা গাড়ীতে স্কুলে আর প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে যায়, তারা বাদে বাংলাদেশের সকল মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত পরিবারের কিশোরীদের ইভ টিজিংয়ের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
    Wikipediaতে দেখা গেলো, ইভ টিজিংইয়ের ব্যাপারটা (মানে পাড়ায় বা বালিকা স্কুলের সামনে দল বেঁধে আড্ডা মারা, কোন মেয়ে দেখলেই অশ্লীল উক্তি করা) ভারতীয় উপমহাদেশেই সীমিত। ভারতেও ইভ টিজিংইয়ের কারণে বেশ কিছু মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ভারতে সিভিল সোসাইটি শক্ত হওয়াতে এই বিষয়ে লবিং করে বেশ কিছু আইন পাস করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু সামাজিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইভ টিজারদের হাতেনাতে ধরে সবার ইভ টিজিং বিরোধী লিফ লেট বিতরনে বাধ্য করা, এই জাতীয় উদ্যোগ। বাংলাদেশে সামাজিক অনুশাসন নিয়ে এত কথাবার্তা হয়, কিন্তু ইভ টিজিংয়ের সময় সেই অনুশাসন কোথায় থাকে। দেশে তো ইসলামীকরন কম হচ্ছে না, তার সাথে তো ইভ টিজিংয়ের ব্যাপারটাও বাড়ছে, এটা কেন হচ্ছে?

  3. তানবীরা - ১০ এপ্রিল ২০১০ (৪:৫১ পূর্বাহ্ণ)

    অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে এই আত্মবিশ্বাসটা অপরাধীদের মধ্যে দেশে মারাত্বক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যার কারনে অপরাধের প্রবনতা নষ্ট যুব সমাজের মধ্যে মহামারীর আকার ধারন করেছে।

  4. সাগুফতা শারমীন তানিয়া - ১২ এপ্রিল ২০১০ (১২:২৭ পূর্বাহ্ণ)

    আমরা যখন স্কুলে পড়তাম, তখন ‘শঙ্খনীল কারাগার’ পড়ে খুব ঘাবড়ে গেছিলাম, একখানা চিঠি লেখার অপরাধে একটি মেয়ের জীবন আশ্চর্য অসমাপ্ত থেকে যায়। চিঠি লিখেছো কি মরেছো, সে চিঠি প্রায় সংবাদপত্রের মতন অমর হয়ে থাকবে, ফটোকপি মেশিনে কপি হবে, হাতে হাতে পৌঁছবে, বাপের হাতে পৌঁছলে তো ভালো কথা, যে কোনো ভবিষ্যত সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেই সব চিঠিগুলি সনদের মত কাজ করবে…কী অসম্ভব সব ভয়ের ভেতর একেকটা মেয়ের যাত্রা! এই মানসিকতা যতদিন থাকবে ততদিন ইভ টিজিং এবং সংশ্লিষ্ট মাস্তানি বহাল তবিয়তে থাকবে।
    উচ্চবিত্তঘরের ছেলেরাই শুধু ইভ টিজিং করে, এটা আসলে সত্য নয়। তেজগাঁ কলেজ এ বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলতে ঝুলতে পড়তে আসা ছেলেরাও করে, কলেজ শেষে টিউশনিতে না গেলে যাদের পোষায়না, তারাও করে, রাস্তার ধারে গেঞ্জি বেচা লোকটাও করে, ঝরঝর করে পা-মেশিন চালানো দর্জিও করে। এটা সামাজিক ব্যাধি/বৃহত্তর ব্যাধিলক্ষণ, যা সামাজিক স্তরে সীমিত নয়।
    আর এই ব্যাধির উৎস খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, পারিবারিকভাবে-সামাজিকভাবে এইসব ছেলেরা বিশ্বাস করে এসেছে মেয়েরা হীন জীব, তারা রান্নাঘরের ঝুল, তারা সমান খাদ্যেরও দাবীদার নয় (আর সমান সম্মান!), তাদের প্রণয় পাবার উপায় তাদের হেনস্থা করা (তথ্যসূত্র- এফ.ডি.সি.এর ছবি, টালিউড কী বলিউডের বেশির ভাগ চলচ্চিত্র) তাদের খোঁচালে কেউ কিছু বলেনা, উলটো মেয়েটাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়- আর কারো পিছনে লাগেনা, তোমার পিছে লাগে কেন?”
    ইভ টিজিং এখন যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তাতে রাষ্ট্রের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, সামাজিক প্রতিরোধ করে এই ব্যাধি আর উন্মূল করা যাবে বলে মনে হয়না। আজকাল যত ইভ টিজিং এর খবর আসে, সবক’টির সাথে আসে মৃত্যুসংবাদ। এইসব মৃতা কিশোরীর অভিশাপ আমাদের গোটা জাতকে জড়িয়ে ধরছে, আমরা সেই জাত হিসেবে পরিচিত হচ্ছি- যারা ধর্ষিতকে দোষী করে, ধর্ষককে তোষে, যারা ন্যায় জানেনা, জীবনের মূল্য জানেনা, আত্মার অবমাননা কী বস্তু বোঝেনা।

  5. মোহাম্মদ মুনিম - ১২ মে ২০১০ (৭:০৩ পূর্বাহ্ণ)

    ইভ টিজিং প্রতিরোধে প্রয়োজনে নতুন আইন হবে

    মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, ইভ টিজিং ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সরকার প্রয়োজনে নতুন আইন করবে।্রদণ্ডবিধি সংশোধন করার দরকার হলে তা-ও করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিয়াম মিলনায়তনে ‘ইভ টিজিং ও যৌন হয়রানিমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এক কথা বলেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ সভায় অংশ নেওয়া ছাত্ররা মেয়েদের উত্ত্যক্ত না করার এবং উত্ত্যক্তকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার শপথ নেন।
    মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ সভায় সভাপতিত্ব করেন। বিজ্ঞপ্তি।

  6. মাসুদ করিম - ২৬ জানুয়ারি ২০১১ (৫:২৮ অপরাহ্ণ)

    হ্যাঁ, হাইকোর্ট ঠিকই করেছে – ইভটিজিং শব্দটি নিষিদ্ধ করেছে, তার পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে যৌন হয়রানি – ঠিকই, যা ঘটছে তা যৌন হয়রানি ছাড়া কিছুই নয়।

    আদালত রায়ে বলেছেন, ইভটিজিং শব্দটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে কারণ শব্দটি অপরাধের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। প্রস্তাবিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ১০ (ক) এ অস্ট্রেলিয়ান স্টকিং ল-এর সারমর্ম করে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই আইনের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

    এসএমএস, এমএমএস, ফোন, ই-মেইলের মাধ্যমে উত্যক্ত করাও এই আইনের আওতায় আসবে। প্রতিটি থানায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য একটি করে সেল গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এই সেল মাস শেষে মাসিক প্রতিবেদন এসপি’র নিকট জমা দেবে। প্রতিটি জেলায় মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী, সাংবাদিকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

    বিস্তারিত পড়ুন এখানে

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.