লাতিন ভাষার কথা : ৩৬

|| ঐতিহ্যের অভিভাবকসকল (প্রথমার্ধ) || প্রাচীনকালে যা ঘটেছিল তার বহু কিছু যে আমরা জানি তার কারণ অনেকটাই লিভি, ত্যাসিতাস এবং অন্যান্যদের রচনা, যাঁরা তাঁদের সমাজের ইতিহাস লিখে গেছেন। ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার ধারণা কখনোই বিলুপ্ত হয়নি, এবং তার ফলে এসব ঐতিহাসিক রচনায় ইউরোপের প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব অবদান আছে। [ . . . ]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর

ঐতিহ্যের অভিভাবকবৃন্দ

(প্রথমার্ধ)

 

প্রাচীনকালে যা ঘটেছিল তার বহু কিছু যে আমরা জানি তার কারণ অনেকটাই লিভি, ত্যাসিতাস এবং অন্যান্যদের রচনা, যাঁরা তাঁদের সমাজের ইতিহাস লিখে গেছেন। ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার ধারণা কখনোই বিলুপ্ত হয়নি, এবং তার ফলে এসব ঐতিহাসিক রচনায় ইউরোপের প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব অবদান আছে। মধ্য যুগ সম্পর্কে আমি এর আগে যা কিছু লিখেছি তার বেশিরভাগই সেসব বিষয় নিয়ে যা আমরা জানি, কারণ কোনো না কোনো ধরনের ঐতিহাসিক রচনায় সেসবের উল্লেখ রয়েছে।

এমন ঐতিহাসিক বহু রয়েছেন যাঁরা তাঁদের লেখায় বহু শতাব্দীর ঘটনাবলী সংকলিত করে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, মধ্য যুগে এরকম ইতিহাস লেখার একটা চল ছিল যা শুরু হতো ৬০০০ খৃষ্ট পূর্বাব্দে বিশ্বসৃষ্টির ঘটনা দিয়ে। সে যাই হোক, যে-বিষয়ে লেখক সবার চাইতে বেশি জানেন সে-ব্যাপারে তার কি বলার আছে সেটার ব্যাপারেই ভাবীকালের মানুষ আগ্রহী ছিল সব সময়। এই কাজগুলো, বা কাজের অংশগুলোকেই আধুনিক ঐতিহাসিকেরা তাঁদের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। এমন কাজ অসংখ্যই আছে, কিন্তু রোমক ঐতিহাসিকেরা যে দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী ছিলেন তার খোল-নলচে পাল্টে যায় পশ্চিম সাম্রাজ্যের পতন-পরবর্তী নতুন পরিস্থিতির কারণে। ঐতিহাসিকেরা কখনোই একটা ফাঁকা স্থানে অবস্থান করেন না, বরং একটি নির্দিষ্ট দেশে একটি নির্দিষ্ট শাসনামলে কাজ করেন, এবং প্রায়ই দেখা যায় যে সেই দেশের বা শাসনামলের ইতিহাস তাঁদের আগ্রহের কারণ ঘটাচ্ছে। ত্যাসিতাস বা লিভি একটা সাম্রাজ্যের কেন্দ্রে বাস করতেন, এবং তাঁরা সেই সাম্রাজ্যের-ই ইতিহাস লিখে গেছেন।

পঞ্চম শতকের পর সে-সাম্রাজ্যের আর অস্তিত্বই রইল না, এবং ইতিহাসবিদরা বাস করতে লাগলেন ক্ষুদ্রতর এলাকায় বা রাজ্যে। তাঁরা ছিলেন গির্জার, ঠিক যেমন ছিলেন তাঁরা যাঁরা লিখতে জানতেন। কাজেই বিভিন্ন রাজ্যের বা গির্জার ইতিহাস লিখে গেছেন তাঁরা। প্রাচীনতম এবং সবচাইতে উপভোগ্য লেখাগুলোর একটি হলো Tours-এর গ্রেগরিরটি; তিনি বর্ণনা করেছেন ফ্র্যাঙ্কদের ইতিহাস, তাদের রোমক প্রদেশ গঅল আক্রমণ থেকে শুরু করে তাঁর নিজের সময় — ষষ্ঠ শতকের শেষ পর্যন্ত। গ্রেগরি ছিলেন Tours-এর বিশপ, অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন মানুষ ছিলেন তিনি; যাঁদের সম্পর্কে লিখেছেন তাঁদের সবাই ব্যক্তিগতভাবে তাঁর পরিচিত ছিল। এঁদের মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন ফ্র্যাঙ্কদের রাজা ও রাণীরা এবং প্রধানত মেরোভিঞ্জিয়ান রাজবংশের অন্তর্ভুক্ত তাঁদের আত্মীয়স্বজন। গ্রেগ্ররি যেসব ব্যাপার নিয়ে লিখেছেন তা ভয়ংকর। মনে হয়, যখন তারা তাদের চারিপার্শ্বের দুনিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ব্যস্ত ছিল না তখন মেরোভিঞ্জিয়ানরা মূলত যেন একে অন্যকে খুন করার কাজেই তাদের সমস্ত শক্তি ব্যয় করেছে। রাজা চিল্ডবার্টের সংবাদ বাহক যখন রাজা গুনট্রামের-এর কাছে এসে রানী মাদার ফ্রেডেগুন্ডাকে তার কাছে হস্তান্তর করার কথা বলে তখন সে-কথাই মনে হয়।

Redde homicidam, quae amitam meam suggilavit, quae patrem interfecit et patruum, quae ipsus consobrinus meus gladio interemit.

Hand back the miurderess, who had my aunt’s eues put out, who killed both her father and uncle, and who had my cousins stabbed to death.

ফিরিয়ে দিন এই খুনী নারীকে যে লোক লাগিয়ে আমার চাচীর চোখ তুলে নিয়েছে, যে তার বাবা আর চাচা দুজনকেই খুন করেছে, এবং যে কিনা আমার তুতো ভাইদেরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করিয়েছে।

খেয়াল করুন লাতিন কিভাবে ইংরেজির চাইতে বেশি কার্যকভাবে এই নিষ্ঠুরকর্মকাণ্ডের শিকারদের চিহ্নিত করতে দিচ্ছে আমদের। Amita, যেখান থেকে ইংরেজি ‘aunt’ এসেছে, সেটা নির্দিষ্ট করে ফুপুকে বোঝায় আর ‘pátruus’ হচ্ছে চাচা। এর উল্টোদিকে মায়ের দিককার আত্মীয় হলেন ‘matértera’ আর ‘avúnculus’ (যেখান থেকে ফরাসির মাধ্যমে এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘uncle’)। একটা খুনে যুগে এসব বংশগত সুক্ষ্মাতিসূক্ষ্মতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারত। এবং এটা অসম্ভব নয় যে ফ্রেডেগুন্ডা হয়তো ওখানে বলা সবগুলো কাজ-ই করেছিলেন। তাঁর স্বামীও এমন কিছু ভালো লোক ছিলেন না। তিনি মারা যাওয়ার পর গ্রেগরি তাঁকে বর্ণনা করেছিলেন ‘Chilpericus, Nero nostri témporis et Heroes’ অর্থাৎ ‘আমাদের যুগের চিলপেরিক, নিরো আর হেরড’ বলে। নিজের দেশটাকে লুঠ করে, পুড়িয়ে তছনছ করে দিয়েছিলেন তিনি; গরীব মানুষকে ঘৃণা করতেন, তাঁর কথা মতো আজ না করলে লোকের চোখ উপড়ে নিতেন।

 

(ক্রমশ)

জি এইচ হাবীব

জন্ম ১০ই মার্চ ১৯৬৭। পেশা: শিক্ষকতা।

১ comment

  1. Pingback: লাতিন ভাষার কথা : ৩৫ | জি এইচ হাবীব

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.