উপমহাদেশে হিংসার হাওয়া : ভারতে ফ্যাসিবাদের উত্থান

কিছুদিন আগেও জঙ্গিবাদের আছর লাগা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিশেষ বদনাম জুটেছিল। ভবিতব্য কী, তা আজ নয় বোঝা যাবে কাল। আজকের পরিস্থিতিতে ভারতে জঙ্গিবাদী কার্যকলাপ নতুন চেহারায় হাজির হয়েছে। সেখানে কিছুদিন পরপরই ট্রেনে-মসজিদে, বাজারে বোমা ফাটছে। এর পেছনে রাতারাতি একটা খলনায়কও পাওয়া গিয়েছিল। তার নাম ‘মুসলিম জঙ্গি’। কিন্তু ঘটনার ঘনঘটায় মনে হচ্ছে, উপমহাদেশে জঙ্গিবাদের একচেটিয়া খেতাব খোয়াতে যাচ্ছে মুসলমানরা। মাঠে হাজির হয়েছে ‘হিন্দু জঙ্গিবাদ’। বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও গুজরাত দাঙ্গায় সাম্প্রদায়িক দাপটের যে চেহারাটি দেখা গিয়েছিল; এটা তারই সম্প্রসারণ। তবে বেশিরভাগ বিশ্লেষকই ‘ওয়ার অন টেররের’ বাঁধা বুলি মোতাবেক চলেছেন, মনের ছানি সরিয়ে কঠিন সত্যকে মোকাবেলা করতে যাননি।

লালন থাকলে বলতেন, এসব দেখি কানার হাটবাজার। আর আজকের কবি রণজিৎ দাশগুপ্ত ‘যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাব’ বলে চোখ টেপেন। পরক্ষণেই বলেন, ‘সম্ভবত গড়িয়াহাটার দিকে’। আমাদেরও তাই। মন যা চায়, চোখও তাই খোঁজে। সেই মন জঙ্গিবাদ আর মুসলিমকে একাত্মা একদেহ ভেবেছে। ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী মায় গণমাধ্যমেরও বুনিয়াদি বিশ্বাসও ছিল তাই। কিন্তু এখন তাদের পাণ্ডুলিপি বদলাতে হচ্ছে। পুরনো তত্ত্ব ঝাড়পোঁছ করতে হচ্ছে। কারণ, দেখা যাচ্ছে গত কয়েক বছরের বেশিরভাগ সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত খোদ বিজেপি’র লোকজন। ভারতের একদল লেখক-সাংবাদিক-মানবাধিকার কর্মীরা অনেক আগেই ঘন্টা বাজিয়ে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের এই উত্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগের আঙুল ছিল বিজেপির লোক-লস্করদের দিকে। কিন্তু সবদেশেই কর্তাদের টনক এতই অনড় যে, তাঁরা দ্বিতীয়বার ভাবতে বসেননি। উল্টো দোষানো হয়; সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর বদনাম হচ্ছে। আজ পরিস্থিতি উল্টে গেছে। সরাসরি নাশকতার অভিযোগে এক সন্ন্যাসিনী ও এক কর্মরত কর্ণেলকে আটক করা হয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে পাওয়া যাচ্ছে কর্মী ও আলামত। জেরার মুখে হিন্দু জঙ্গিবাদী নেটওয়ার্কের গুমর ফাঁস হচ্ছে। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ তো সাপ, আস্ত আজদাহাই যেন বেরিয়ে আসছে! তবে এসবই ডুবোপাহাড়ের চূড়া। তলায় আরো গল্প আছে।

অথচ এতদিন সবাই ‘মুসলিম জঙ্গিবাদের’ আতঙ্কে বিভোর থাকায় হক-বেহক অনেক তরুণের প্রাণ গেছে, নির্যাতিত হয়েছে অনেক ‘সন্দেহভাজন’। তবে বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। তার মানে এই নয় যে, সেখানে মুসলিম জঙ্গিবাদ নেই। আছে। তবে বেমানান শোনালেও তারা বিলীয়মান, উদীয়মান হলো হিন্দু জঙ্গিবাদ। এরই মধ্যে গত আগস্টে ভারতীয় সাপ্তাহিক তেহেলকায় কংগ্রেস এমপি দিগ্বিজয় সিং ভারতে সাম্প্রতিক বোমা বিষ্ফোরণগুলির জন্য বিজেপিকে চিহ্নিত করেন। পার্লামেন্টে তথ্যপ্রমাণ হাজির করার কথাও ছিল তাঁর। তার আগেই জঙ্গিবাদের সঙ্গে বিজেপি পরিবারের আঁটঘাট চাউর হলো। তাদের ভারতজোড়া প্রস্তুতি নিয়ে গণমাধ্যমে যা এসেছে, তাতে অনেকের পিলে চমকানোর যোগাড়। বিভিন্ন রাজ্যে চালু আছে প্রশিক্ষণ শিবির। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো হিন্দু জনজাগরণ মঞ্চ, পানভেলের সান্তনা আশ্রম এবং সেন্ট্রাল হিন্দু মিলিটারি এডুকেশন সোসাইটির ভোনশালা মিলিটারি স্কুল। এমনকি কর্মরত কয়েকজন সেনা অফিসারের নামও চলে এসেছে তালিকায়। এসব থেকে ভারতে সন্ত্রাসবাদের নতুন মুখচ্ছবিটা ধরতে পারা যায়। বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক আদর্শের সঙ্গে মিলিয়ে একে বলা হচ্ছে, ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’। তবে যে ধর্মেরই লোক এধরনের তৎপরতা চালাক, তার জন্য ঐ ধর্মবিশ্বাস ও তার অনুসারিদের নির্বিচারে দায়ি করার বুশীয় খাসলত বিষয়ে সাবধান থাকা দরকার। ধর্মবিশ্বাসের চেয়ে বরং গোড়ার রাজনৈতিক স্বার্থটির দিকে মনোযোগ দেয়াই যুক্তিযুক্ত।

ঐ আজদাহার ফণা আরএসএস তথা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। এর প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২৫ সালে ইতালির ফ্যাসিস্ট নেতা মুসোলিনীর আদর্শে। বিজেপি এর রাজনৈতিক শাখা। উগ্র সাম্প্রদায়িক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সামরিক ও সাংষ্কৃতিক প্রশিণের ঘটনাও তাদের জন্য নতুন নয়। অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত বেঙ্গল ডিভাইডেড গ্রন্থে জয়া চ্যাটার্জি দেখিয়েছেন, কীভাবে ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার অনেক আগে থেকেই শরীর চর্চা কাবের আড়ালে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল। মজুদ করা হচ্ছিল গোলা-বারুদ। সেসময়ের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলোতে এসবের আকছার ব্যবহারের নজিরও তিনি দিয়েছেন। জয়া চ্যাটার্জিসহ আজকের গবেষকরা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে বলছেন, সেসময়কার হিন্দুত্ববাদীদের কার্যকলাপেই সাম্প্রদায়িক দেশভাগ ছিল অনিবার্য। সম্প্রতি খোলস ফেটে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, পুরাতন চালের মতোই পুরাতন কৌশল বেশ কাজে দিচ্ছে। তার জোরেই রাজনীতিতে গৌণ হিন্দুত্ববাদ আজ মূল ধারার রাজনীতির অন্যতম কারিকা শক্তি বনে গেছে। ভারতে দলিত-মুসলিম-খ্রীস্টান ও আদিবাসীদের মুক্তি আন্দোলনের প্রতিষেধক হিসেবে অনেকেই মধ্যপন্থি কংগ্রেসের তুলনায় চরমপন্থি বিজেপিকে ভরসা করছে।

বিজেপির ফ্যাসিবাদ প্রকারান্তরে ভারতীয় শাসকশ্রেণীরই ফ্যাসিবাদ। এবং তা বিশ্ব-পুঁজির কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক আদলকেই পরিপুষ্ট করছে। এই এই ফ্যাসিবাদ নিছক অর্থনৈতিক অনিবার্যতা নয়, বিদ্যমান সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য টিকিয়ে রাখবার অবিকল্প রাজনৈতিক আশ্রয়। এখানে খেয়াল করবার বিষয় এটিই যে, সেটা যে রাষ্ট্রকেই করদ করছে সেই রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও স্বার্থের ভেতর থেকে ফ্যাসিবাদ উপাদানকে বলবান করে সেভাবে রাজনীতি সাজাচ্ছে। সেকারণে ভরতে তা সনাতন সমাজের বর্ণাশ্রম প্রথা কেন্দ্রিক চরম প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শকে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ইসলামী চিন্তা ও শক্তিকেও চাহিদামতো বদলে নিয়ে ব্যবহার করতে পারছে। ইসরায়েলে তা জায়োনিজমকে এবং খোদ পাশ্চাত্যে শ্বেতাঙ্গ-খ্রিস্টান বর্ণবাদকে চাঙ্গা করেছে। এখানে বিশ্বপুঁজির চাহিদা ও স্থানীয় গড়নের একটা সন্ধি হচ্ছে। তার মানে এই যে, এই সন্ধির বাইরে আর কিছু বিরাজ করে না। একইসঙ্গে খেয়াল করা দরকার ওউপনিবেশিত ও অকরায়ত্ত ইরান-ফিলিস্তিন-লেবাননে ধর্ম স্বাধীনভাবে জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক বিকাশের সঙ্গি হচ্ছে, আরো ভাল ভাবে বললে ধর্মের একধরনের ডিথিওলাইজেশনের মাধ্যমে ধর্ম ও সমাজ উভয়ে উভয়ের রাজনৈতিকে শানিত করছে।

নিঃসন্দেহে জঙ্গিবাদ বিজেপির হিন্দুত্ববাদের প্রধান তরিকাও নয়। বিজেপি হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল: ধর্মনিরপেক্ষ বহুজাতিক ভারতকে তারা ‘হিন্দু ভারত’ বানাতে চায়। তাদের চোখে অ-হিন্দুরা ‘জাতীয়’ শত্র“। ভারতের পুঁজিপতি শ্রেণী ও আধুনিক মধ্যবিত্তদের মধ্যেও এই চিন্তার কদর বাড়ছে। ভয়ের কথা সেটাই। নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত এই ধরনের ঘৃণার রাজনীতির অতিকায় কর্মশালা। সরকারি মদদে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানো, ঘর-বাড়ি-দোকানপাট পোড়ানো, গণধর্ষণসহ বহু বীভৎসতার পাথুরে প্রমাণ থাকার পরও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী ‘সাচ্চা’ মানুষ, দক্ষ প্রশাসক। তাঁর প্রত্যক্ষ মদদের অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও তাঁর পুননির্বাচিত হওয়া ঠেকে থাকেনি। ভারত সরকারের নানাবতী কমিশনও মোদীকে নির্দোষ ঘোষণা করতে দ্বিধা করেনি। একেই বলে, যো জিতা ওহি সিকান্দার। ভয় হয়, একদিন হয়তো একাত্তরের গণহত্যাকারীদেরও এরকম সাচ্চা বনে যেতে মুশকিল হবে না।

এই মোদী বাদশা’র রাজ্যে মুক্তবাজার, বহুজাতিক বিনিয়োগ আর কর্পোরেট মডেলের সঙ্গে উগ্র ধর্মীয় আদর্শ একাকার হয়ে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে। সংখ্যালঘুদের দলন করা যেখানে বীরত্ব সেখানে ফ্যাসিবাদের উত্থানের পরিবেশ চৌদ্দ আনাই পাকা। নাৎসি জার্মানীতেও ইহুদিদের বিরুদ্ধে জার্মানদের ঘৃণায় মাতিয়ে হিটলার মতায় বসেন। বাদবাকি ইউরোপ তখন ভেবেছিল, দেখি না কী করে! সেই দেখার অপোর খেসারত গোটা মানবজাতিকেই রক্ত আর ধ্বংসের দামে দিতে হয়েছিল। বিজেপিও ওরকম ঘৃণার জিগির ছড়াচ্ছে ভারতের সংখ্যালঘু ও অহিন্দুদের বিরুদ্ধে। সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদেরও তারা ছেড়ে কথা বলছে না। বিজেপি’র এক শীর্ষ নেতা তো বলেই ফেলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের জার্মানীতে ইহুদিরা যেমন, এখনকার ভারতের মুসলমানরাও তেমন। গুজরাতের পাঠ্যপুস্তকে তাই হিটলার বন্দিত হন। ইহুদিমুক্ত জার্মানির আদলে বিজেপিও অহিন্দুমুক্ত ভারত চায়। বলপ্রয়োগ ও আতঙ্ক ছড়ানো তারই আয়োজন। এ ধরনের রাজনৈতিক মতবাদ ও কর্মসূচির বিশুদ্ধ নাম ফ্যাসিবাদ। বলতে দ্বিধা নেই, আজ ভারতে সেরকম এক ফ্যাসিবাদের উত্থানই আমরা দেখতে যাচ্ছি। ফ্যাসিবাদ ও বড় কর্পোরেশনের সম্পর্ক সুবিদিত। টাটা, রিল্যায়েন্সও বলছে, গুজরাত হলো পুঁজিপতিদের স্বপ্নের গন্তব্য। আকলমান্দ কি লিয়ে ইশারাই কাফি।

বিজেপির এই রাজনৈতিক যাত্রায় সন্ত্রাস এক মধ্যবর্তী স্টেশন মাত্র। তারা দিব্যি জানে, সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে পুঁজি করে নির্বাচনের পথেই মতা পাকা করা সম্ভব। হিটলার, মুসোলিনির মতো নরেন্দ্র মোদীও কিন্তু পরপর দু’বার নির্বাচিত হয়েছেন। যে এল কে আদভানীর জীবনের প্রধান কৃতিত্ব বাবরি মসজিদ ধ্বংস, সেই তিনিও ভারতের ভাবি প্রধানমমন্ত্রী বিবেচিত হচ্ছেন। সুতরাং ভোটেই কার্যসিদ্ধি হলে আর কেন সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করা? করা এক এক ঢিলে দুই পাখি মারার খায়েশে। নিজেদের সন্ত্রাসকে মুসলিম মুখোশ পরিয়ে দেখালে একদিকে মুসলিমদের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা সম্ভব অন্যদিকে জুজুর ভয় দেখিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে হিন্দুত্ববাদের পতাকাতলে জমায়েত করাও সহজ। এটা তাদের পরীতি পথ। গুজরাত গণহত্যা তাদের জনবিচ্ছিন্ন করেনি, বরং নির্বাচনী বাজিমাতকে সহজ করেছে। তাই গণতন্ত্রের মধ্যে অধিকাংশের শাসনের যে প্রতিশ্র“তি আছে তা মোদী গংয়ের হাতে পরিণত হচ্ছে অধিকাংশের দাপটে। কতিপয়ের উত্থানের চরিত্র ক্যু কিংবা সন্ত্রাসবাদ। আর অধিকাংশের দাপটের চরিত্র ফ্যাসিবাদ।

এই ফ্যাসিবাদ জার্মান বা ইতালিয় ফ্যাসিবাদের মতোই আধুনিকতার মুখোশ পরা বলে চিনতে অনেকের দেরি হচ্ছে। তাই অরূন্ধতি রায় তাঁর ইস্তাম্বুল বক্তৃতায় যথার্থই বলেন, ‘‘এটা কোনা কাকতাল নয় যে, ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের যে রাজনৈতিক দলটি আর্মেনিয়দের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল তার নামও ছিল ‘কমিটি ফর ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস’। হিটলার এবং মুসোলিনিও ছিলেন প্রগতির ধ্বজাধারী। আমেরিকার ভিয়েতনাম ও ইরাক-আফগানিস্তান-কসোভো সবই তো ভেক ধরা গণতন্ত্র ও প্রগতির রক্তাক্ত পদচিহ্ন। আদভানীর বিজয় রথও প্রগতি ও আধুনিকতার নামেই যাত্রা করেছে।’’ তারা দেখাচ্ছে, মুসলিম ও আদিবাসীরা এই প্রগতির শত্র“। অন্যদিকে ভারত যেহারে ইসরায়েল ও আমেরিকার অক্ষে ঢুকছে, তাতে ঐ দুটি পরাশক্তির জাতবিদ্বেষের সঙ্গে ভারতীয় মুসলিম বিদ্বেষও একাকার হওয়ার মওকা পাচ্ছে। পরাশক্তি ভারত যদি সে পথে যায়, উপমহাদেশে তার বিপদ কল্পনা করাও কঠিন।

এখানেই পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সঙ্গে তাদের তফাত। এই দুটি দেশে ধর্মীয় রাজনীতি প্রধানত আধুনিকতা বিরোধী। অথবা তারা আধুনিকতার নিজস্ব বয়ানে বিশ্বাসী। রাজনৈতিক ইসলামের ধারাটি এখানকার শাসকবর্গের মূল অংশ নয়। বড় জোর শাসকবৃত্তের ছোট তরফ তারা। শহুরে উঠতি ধনিক ও নিম্নবিত্ত এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের নিয়েই এদের কারবার। জেএমবি প্রধান শায়খ রহমানের জবানিতে থেকেও বোঝা যায় পশ্চিমা আধুনিকতায় ক্ষিপ্ত ও বিত্তবঞ্চিতরাই তাদের সহিংস রাজনীতির খাতক। ভারতের বেলায় তা আসছে অগ্রসর শ্রেণীগুলোর একচেটিয়া ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার রক্ষাকবচ হিসেবে। সনাতন ভারতীয় উচ্চবর্ণের আধিপত্যবাদী মতাদর্শ আর দেশি-বিদেশি পুঁজির বাসনা সেখানে গলাগলি করি পরস্পরকে পুষ্টি যোগাচ্ছে। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদ কায়েম করবার জন্য যে অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় তাকদ লাগে তা ভারত ছাড়া উপমহাদেশের অন্য দুটি রাষ্ট্রের নেই, সেরকম মতাদর্শও অনপুস্থিত। আমাদের মতো দেশে তা বড়জোর সেনাশাসন ও প্রধান দুটি দলের হাতিয়ার হওয়ার বেশি যেতে পারে না। ১৯৭১-এ যেভাবে তাদের নির্যাতকদের দোসর হিসেবে দেখা গেছে, সেটাই এখন পর্যন্ত তাদের রাজনীতির সীমানা। নিজের জোরে বড় আন্দোলন কিংবা নির্বাচিত সরকার গঠন তাদের সাধ্যের বাইরে। সরকারি প্রশ্রয় ছাড়া দাপট দেখানোর কোনো নজিরও এখনো মেলেনি। মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রোডলার আর মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক মদদের হিসেব কষলে, শক্তি নয় বরং এদের নির্ভরশীলতারই প্রমাণ মেলে।

আবার এটাও খেয়ালে রাখা দরকার যে, ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতির মধ্যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে সচেতনতা রয়েছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে তা খুবই কমজোরি। তাহলেও, ভারতে কিছু ঘটা মানে তার ঢেউ আলবৎ বাংলাদেশকেও দোলাবে। সেটা হবে ব্রিটিশ আমলের সাম্প্রদায়িক হানাহানির নতুন পর্ব। সেই পর্ব আসা মানে উপমহাদেশের সকল ধরনের সংখ্যালঘুদের জীবনে নরক নেমে আসা। সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষের জীবনও তখন আর আগের মতো থাকবে না। ফলে, বিপদ ভেতর-বাহির দুদিকেই। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার পরিবেশে এই ভয় আরো বেশি। মন্দার মধ্যেই কিন্তু ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদ জনগণের হতাশাকে পুঁজি করে বেড়ে উঠেছিল। সবসময়ই মন্দা-নৈরাজ্য হয় বিপ্লব নয়তো প্রতিবিপ্লব ডেকে আনে। আমাদের বেলায় অমঙ্গলের সোনায় সোহাগা আয়োজন দেখে ইতিবাচক পরিবর্তন দুরাশা মাত্র। কিন্তু ইতিহাস মানে পূর্বনির্ধারিত নিয়তি নয়। মানুষই ইতিহাস বানায় ও বদলায়। উপমহাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিগঠন আমাদেরই কর্মফল এবং আমরাই পারি তার খাত বদলে দিতে।

অরূন্ধতি রায়ের কথা ক’টি তাই কানে বাজে, ‘জার্মানিতে যখন ইহুদি-গণহত্যা (হলোকস্ট) চলছিল, তখনও জার্মানরা ছেলেমেয়েদের পিয়ানো বা বেহালার বাজনা শেখাতে নিয়ে যেত, উদ্বিগ্ন থাকত বাচ্চাদের পড়ালেখা নিয়ে!’ আমরাও কি মেতে থাকব মিথ্যা ভরসায়। শিশুরা ভয় পেলে চোখ বুঁজে ফেলে। এটাই তাদের আত্মরক্ষার সহজাত কৌশল। আমরাও কি তেমন চোখ বুঁজে থাকার আত্মরক্ষায় মাতবো? আর ভাববো, যেহেতু আমি দেখছি না সেহেতু ভয় নেই! ধন্য আশা কুহকিনী।

ফারুক ওয়াসিফ

চৌখুপি থেকে বেরিয়ে দিকের মানুষ খুঁজি দশদিকে।

১০ comments

  1. ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২৫ নভেম্বর ২০০৮ (১২:১২ পূর্বাহ্ণ)

    মন যা চায়, চোখও তাই খোঁজে। সেই মন জঙ্গিবাদ আর মুসলিমকে একাত্মা একদেহ ভেবেছে।

    খুব সত্যি কথা। এভাবে সাদা কালোতে বিশ্বকে দেখার কিছু সুবিধা আছে। এমন করে দেখার বিলাসিতা আছে, তেমন মানুষের সংখ্যাও আমাদের নেতৃবৃন্দ আর নীতিনির্ধারকদের মধ্যে খুব কম নয়। সম্ভবত, এই একই মুদ্রার অন্য পিঠ আমরা দেখি যখন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনের স্বানামধন্য সৈনিকেরা ওসামা-সাদ্দামদের তুলে ধরেন মহানায়কের ভূমিকায়; তুলে ধরেন প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রেরণা প্রতীকের ভূমিকায়। র‍্যামসে ক্লার্কের মত সংগ্রামী মানুষকে যখন দেখি সাদ্দামের হয়ে লড়তে, কিংবা আমাদের দেশের অনেক বাম বুদ্ধিজীবিকেও যখন দেখি “ওয়ার অন্ টেরর” এর বিরোধিতা করতে গিয়ে পক্ষান্তরে আল কায়েদা আর তাদের এদেশীয় দোসরদের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে, তখন বিভ্রান্তির আর কিছু বুঝি বাকী থাকেনা। সংবাদপত্রের কালি শুকিয়ে সারেনি, সেই নিকট অতীতের ইতিহাসেরও এমনকি বিস্মরণ দেখি আমরা। ভুলে যাই সাদ্দাম কিংবা ওসামাদের সাম্রাজ্যবাদী আঁতাতের ইতিহাস। এটা কি কেবলই বুদ্ধিজীবিতার সংকট?

    ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে বোমা হামলার পর পর আমার বন্ধুর বন্ধুকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে মাসের পর মাস নির্যাতন করেছে, কারণ তার নামটি ছিল মুসলমানদের মত। সে যে দিল্লীর একটি বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রদের একজন, কিংবা সে যে আসলে একজন নাস্তিক, কিংবা সেখানকার প্রগতিশীল সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সে যে একজন সক্রিয় কর্মী ছিল – সে কথা গোয়েন্দা পুলিশদের কে বোঝাবে তখন। এমনকি কিছু কিছু নামী মানবাধিকার সংগঠনও তাকে আইনী সহায়তা দানে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল সেদিন; কারণ, “পার্লামেন্ট ভবন তাদের কাছে মন্দিরের চেয়েও বেশী পবিত্র; সে পার্লামেন্টে বোমা হামলার দায়ে কিনা যে গ্রেফতার হয়েছে, সে তো অচ্ছুতেরও অচ্ছুত”! এখন সে বন্ধুটি মুক্তি পেয়েছে। তার অনেক আভ্যন্তরীন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে নির্মম পুলিশী নির্যাতনে (এ বিষয়ে সে এমনকি কথাও বলতে চায়না), বাকী জীবন যা তাকে বহন করে বেড়াতে হবে। সেইসাথে বাকী জীবন তাকে প্রতি মাসে ভারত সরকারের একটি নির্দিষ্ট দফতরে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যেতে হবে, কারণ তার নামটি ছিল মুসলমানদের মত।

    এর বিপরীত চিত্রও আছে। বিশ্ব চলচ্চিত্র আর শর্ট ফিল্ম নিয়ে সারাক্ষণ মশগুল আমার আরেক ভারতীয় ‘আয়ার’ বন্ধু। ওকে কতই না প্রগতিশীল মুক্তমনের ভাবতাম আমরা। অথচ, গুজরাটের দাঙ্গার পর আমাদের আড্ডায় ক্ষণে ক্ষণেই তার হিংস্রতা বেরিয়ে পড়তে দেখেছি। একদিন যখন বললাম, বিজেপি-শিবসেনার মত দলের সবচেয়ে বড় বন্ধু হল আমাদের দেশের জামায়াতের মত দলগুলো – তখন তার সে কি রাগ! ভেবেছিলাম ওকে বোঝাতে পারবো – যে, সীমানার এপারে আমাদের সাম্প্রদায়িকেরা যদি মন্দির না ভাঙ্গে, তাহলে সীমানার ওপারে ওদের সাম্প্রদায়িকেরা মসজিদ ভাঙ্গবে কোন্ অজুহাতে? সফল হইনি বোঝাতে, বরং বন্ধুত্বটিই টুঁটে গেছে (তাতে অবশ্য দুঃখিত নই)।

    ওয়াসিফকে ধন্যবাদ এই চমৎকার তথ্যবহুল লেখাটির জন্য। এমন লেখা আরও চাই।

    • ফারুক ওয়াসিফ - ২৫ নভেম্বর ২০০৮ (১০:৫১ পূর্বাহ্ণ)

      ধন্যবাদ ইনসিডেন্টাল ব্লগার। এই সময় একইসঙ্গে ধর্মীয় আইডেন্টিটিও সাম্রা‍জ্যবাদী উদারনীতির খপ্প‍রে না পড়ে ভূমিকা রাখা পুলসিরাত পার হওয়ার মতো কঠিন। কিন্তু এটা না করলে সংগ্রামের মাঠ থেকে বিতাড়িত ও ‍বনিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

      সামনে খুব কঠিন দিন আসছে বলে মনে হয়।

  2. স্নিগ্ধা - ২৫ নভেম্বর ২০০৮ (১:০৭ পূর্বাহ্ণ)

    তার অনেক আভ্যন্তরীন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে নির্মম পুলিশী নির্যাতনে (এ বিষয়ে সে এমনকি কথাও বলতে চায়না), বাকী জীবন যা তাকে বহন করে বেড়াতে হবে। সেইসাথে বাকী জীবন তাকে প্রতি মাসে ভারত সরকারের একটি নির্দিষ্ট দফতরে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যেতে হবে

    পড়ে অসম্ভব মন খারাপ হয়ে গেলো! একসময় নকশাল আন্দোলনের সময়কার লেখায় এ ধরনের কথা অনেক পড়েছি – কিছুই শেষ হয় না !

    চমৎকার একটা লেখার জন্য ফারুক ওয়াসিফকে ধন্যবাদ।

  3. ফারুক ওয়াসিফ - ২৫ নভেম্বর ২০০৮ (১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ)

    আমি যাকে চিনি আপনি কি সেই ‍স্নিগ্ধা?
    ধন্যবাদ আপনাক।ে

    • স্নিগ্ধা - ২৫ নভেম্বর ২০০৮ (৯:৫৩ অপরাহ্ণ)

      হ্যা, আমিই 🙂

  4. আরিফুর রহমান - ২৫ নভেম্বর ২০০৮ (১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ)

    হিন্দু-উগ্রবাদের কোন বৈশ্বিক চেহারা বা মন্ত্রনাদাতা নেই। যেটা রয়েছে ইসলামী জঙ্গীবাদের। এর পেছনে গৌরি সেন সৌদিয়ারব, মগজ মার্কিনি। উদ্দেশ্য একটাই ‘সর্প হইয়া দংশন, পরে ওঝা হইয়া ঝাড়ন’।

    মুসলিমদের সচেতনভাবে উচিত ইসলামের নামে জঙ্গীবাদের কড়া প্রতিবাদ করা। সামগ্রিক মুসলিম সচেতনতার পেন্ডুলাম এখন পর্যন্ত জঙ্গীদেরই নিরব সমর্থন দিয়ে যেতে দেখছি আমরা।

    • ‍িহল্লোল - ৩০ নভেম্বর ২০০৮ (৯:২৭ পূর্বাহ্ণ)

      মুম্বাই-এর ‍ঘটনাটাও কি ‍ভাজপা-র?

      “সামগ্রিক মুসলিম সচেতনতার পেন্ডুলাম এখন পর্যন্ত জঙ্গীদেরই নিরব সমর্থন দিয়ে যেতে দেখছি আমরা।”-এর সা‍‍থে একমত।

      আমরা কি আসলেই মুসলিম বাঙালি, না‍কি বাঙালি মুসলিম, ‍‍সে প্রশ্নের মীমাংসা কি এখনো হ‍‍য়েছে?

      “নাস্তিকতার আগুনে সবকিছুকে পুড়িয়ে নতুন করে শুরু করা ছাড়া আর কোনো পথ দেখছিনা”–ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথ….

  5. ‍িহল্লোল - ৩০ নভেম্বর ২০০৮ (৯:৩২ পূর্বাহ্ণ)

    কী জঘন্য বাংলা লিখছ।ি ব্যাপারটা কী? ‍বিজয় যেমন লিখি, তার সা‍থ মে‍‍লে না কেন?

    • মুক্তাঙ্গন - ৩০ নভেম্বর ২০০৮ (১:৫৬ অপরাহ্ণ)

      আপনি নিচের কোন্ কীবোর্ডটি ব্যবহার করছেন? “বিজয়” না “ইউনিজয়”? দু’টোতে সামান্য তফাত আছে। অথবা টাইপ করার সময় “বিজয়” ঠিকভাবে activate হয়নি কোন কারণে ‌- সেক্ষেত্রে নীচের “বিজয়” বাটনটি একাধিকবার ক্লিক করে টাইপিং শুরু করে দেখুন কোন পরিবর্তন হয় কিনা। এর পরও সমস্যা থাকলে লিখে জানান, চেষ্টা করবো সমাধানের।

  6. রায়হান রশিদ - ৩০ নভেম্বর ২০০৮ (৪:০০ অপরাহ্ণ)

    সুপ্রিয় হিল্লোল,

    একরকম বাধ্য হয়েই নতুবা নিতান্ত অভ্যাশবশে বিজয়ে আটকে আছেন বাংলাদেশের অনেক কম্পিউটার ব্যবহারকারী। কীবোর্ডটির সম্বন্ধে বেশীর ভাগ ব্যবহারকারীর মতামত – এটি backward, কারিগরি দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ, এবং একধরণের গোঁয়ার্তুমীর ফসল। একসময়ের pioneering বাংলা কীবোর্ড হিসেবে বিজয়ের অবদান স্বীকার করে নিয়েই বলতে হয়, পরবর্তী বছরগুলোতে বিজয় কীবোর্ডই (এবং এর সাথে জড়িত ফন্টগুলো) সম্ভবত কম্পিউটারে বাংলা ভাষার প্রসারে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সবচেয়ে বড় মাশুল গুনছে আমাদের প্রকাশনা শিল্প এবং অনলাইনে বাংলা পত্রিকাগুলো (যেগুলো অক্ষরদোষের কারণে এমনকি গুগলে পর্যন্ত সার্চ করা যায়না)। ভাবুন দেখি ক্ষতিটা! লক্ষ লক্ষ পৃষ্ঠা ভর্তি তথ্য অথচ সে সব গুগলে খোঁজার কোন উপায় নেই। স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের The Rime (Rhyme) of the Ancient Mariner এর লাইনগুলো মনে পড়িয়ে দেয়:

    “Water, water, everywhere,
    And all the boards did shrink;
    Water, water, everywhere,
    Nor any drop to drink.”

    এ যেন আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় প্যারাডক্সগুলোর একটি!

    সুতরাং, যত দ্রুত আমরা এর বলয় থেকে বের হয়ে আসতে পারি, ততই মঙ্গল। আপনাকেও বিনীতভাবে সে পরামর্শ দেব। আমার নিজের বিজয় থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্প আরেকটি কীবোর্ডে (আমার ক্ষেত্রে প্রভাত) অভ্যস্ত হতে লেগেছিল মাত্র কয়েকদিন; আপনারও বেশী সময় লাগার কথা না। চেষ্টা করেই দেখুন না! নিচে ওমিক্রন ফোরাম থেকে একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করছি:

    বাংলা সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে বিজয় হচ্ছে সর্বনিম্ন মানের। কিন্তু প্রিন্টিং লাইনে সবাই বিজয় ব্যবহার করে বলে আমাকেও করতে হচ্ছে এবং অন্যকেও ব্যবহার করতে বলতে হচ্ছে। বিজয়ের পুরোনো ভার্সনগুলো এক্সপি কম্পাটিবল নয়। আবার বিজয়ের নতুন ভার্সন ব্যাকওয়ার্ড কম্পাটিবল নয়। তাই পুরান ডকুমেন্টগুলোর ডিটিপি আউটপুট নিয়ে মহা ঝামেলা হয়ে গেল আজ।

    পুরান সিস্টেমেই ফিরে যাব নাকি অলটানেটিভ চিন্তা করবো, বুঝতে পারছিনা। বলাবাহুল্য, অল্টারনেটিভ অপশনগুলোও খুব একটা আকর্ষনীয় নয়। যেকোন অল্টানেটিভেই কনভার্সনের সুযোগ থাকে। আর, কোন কনভার্সনই ১০০% একিউরেট হয় না। অথচ প্রিন্টিং-এ দরকার পিন-পয়েন্ট একিউরেসি এবং এ ব্যাপারে কোন ছাড় নেই। মনে হচ্ছে আমাকেই এখন একটা বাংলা সিস্টেম (ফন্ট এবং কী-বোর্ড ইন্টারফেস) তৈরী করতে হবে!

    সমাধান ১: উইন্ডোজ ৯৮, বিজয় ২০০০, কোয়ার্ক এক্সপ্রেস ৫, ফটোশপ ৭, ইলাস্ট্রেটর ১০
    সুবিধা: অধিকাংশ প্রবন্ধকার/লেখক বিজয় ২০০০ ব্যবহার করে টাইপ করেন।
    অসুবিধা: পিএস প্রিন্টারে মিরর প্রিন্ট দিলে কিছু যুক্তাক্ষর ভেঙ্গে যায়।

    সমাধান ২: এক্সপি এসপি ২, বিজয় ২০০৪ / ক্লাসিক প্রো, কোয়ার্ক এক্সপ্রেস ৬, ফটোশপ ৭, ইলাস্ট্রেটর ১০
    সুবিধা: পিএস প্রিন্টিং-এ কোন সমস্যা হয়না।
    অসুবিধা: অধিকাংশ প্রবন্ধকার/লেখকদের পাঠানো লেখা বিজয় ২০০০ ব্যবহার করে টাইপ করা বলে আবার সেগুলো টাইপ করতে হয়।

    সমাধান ৩: ৫,০০০ টাকা দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ বিজয় একুশে ২০০৫ কেনা।
    সুবিধা: পুরোনো সিস্টেমে লেখা ডকুমেন্ট কনভার্ট করা যায় এবং পিএস প্রিন্টিং-এ কোন সমস্যা হয়না।
    অসুবিধা: কনভার্সন ১০০% সঠিক হয় না। তাই আবার প্রুফ দেখতে হয়।

    মোস্তফা জব্বার এবং তার আনন্দ কম্পিউটার্স বিজয়ের সাধারণ কিছু সমস্যার সমাধানে নিজেদেরকে বারবার অযোগ্য প্রমান করেছেন। সারা বাংলাদেশে অসংখ্য গ্রাহক থাকার পর‍‌‌ও তিনি কখনো ব্যবহারকারীর প্রয়োজনগুলো বুঝতে বা জানতে চেষ্টা করেননি। বরং, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যখন কোন সমাধান নিয়ে এগিয়ে এসেছে তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। তার জানা উচিত্ যে এটা ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের যুগ এবং বিজয় নিয়ে তার এই ব্যবসা তিনি আর বেশী দিন করতে পারবেন না। তাই সময় থাকতে তার উচিত্ কনভার্টারসহ বিজয় একুশের মূল্য ৫,০০০ থেকে ১,০০০ বা ১,৫০০ তে নামিয়ে আনা। কারণ, বর্তমানে কম্পিউটারে বাংলা নিয়ে আমরা যে সমস্যাগুলোতে পড়ছি সেগুলো মূলত তারই সৃষ্টি। এবং এই সমস্যাগুলোর সমাধান করে তিনি আরেক দফা ব্যবসা করবেন তা মেনে নেয়া যায় না। বিশেষত, বিজয়ের নিয়মিত ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ব্যবসা করাটা তার অন্যায় হবে।

    ধন্যবাদ।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.