আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হচ্ছে হচ্ছে ভাব, এটা হলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আবার নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যাশিতভাবেই জামাত হৈ-হুংকার শুরু করেছে, ছোটবড় কিছু দলকে সাথে নিয়ে এখানে ওখানে ও লন্ডনে বিদ্রোহী সমাবেশ করছে, উত্তেজক শ্লোগান দিচ্ছে। বানানো হয়েছে ‘‘ইসলাম ও ধর্মীয় রাজনীতি রক্ষা জাতীয় কমিটি’’, বক্তারা ‘‘কাফনের কাপড়’’ পরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এটা আরো বাড়বে, একটা মরণকামড় জামাত দেবেই [...]

আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হচ্ছে হচ্ছে ভাব, এটা হলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আবার নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যাশিতভাবেই জামাত হৈ-হুংকার শুরু করেছে, ছোটবড় কিছু দলকে সাথে নিয়ে এখানে ওখানে ও লন্ডনে বিদ্রোহী সমাবেশ করছে, উত্তেজক শ্লোগান দিচ্ছে। বানানো হয়েছে ‘‘ইসলাম ও ধর্মীয় রাজনীতি রক্ষা জাতীয় কমিটি’’, বক্তারা ‘‘কাফনের কাপড়’’ পরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এটা আরো বাড়বে, একটা মরণকামড় জামাত দেবেই। মুক্তিযুদ্ধে জাতি ইসলামে রাজনীতি মেশানোর আগুনে পুড়েছে। কিন্তু তারপরেও ইসলাম-ব্যবসায়ীদের হিংস্র চেহারা জাতির চোখে যতটা স্পষ্ট তাদের ধর্মতত্ত্বের ভয়াবহ দিকটা ততটা স্পষ্ট নয়। সেজন্যই জাতিকে জানানো বিশেষ জরুরী, নিজামুদ্দীন আওলিয়া-মঈনুদ্দীন চিশতি-হজরত শাহ জালাল-শাহ পরানের ইসলামের সাথে মওদুদী-নিজামী-সাঈদী-গোলাম আজমের ইসলামের সংঘর্ষ কেন ও কোথায়। জাতিকে জানানো দরকার মুক্তিযুদ্ধে জামাত যে হিংস্রতা করেছে তার শিকড় সেই মওদুদী-ব্যাখ্যার বিকৃত ও বিক্রীত অধর্মতত্ত্বের মধ্যেই নিহিত। যে-কোন প্রতিপক্ষকে যে-কোন উপায়ে নির্মূল করাই তাঁদের কাছে তাঁদের ধর্মবিশ্বাসের দাবী। সেখানে হিংস্রতা বৈধ ও মিথ্যা বলা ‘‘বাধ্যতামূলক’’। মুখে, কাজে ও সংবাদপত্রে জামাতের সদাসর্বদা হিংস্রতা ও মিথ্যার যে বেসাতি আমরা দেখি ওটা তার ‘‘ধর্মীয় কর্তব্য’’। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে তাদের খপ্পরে পড়া থেকে বাঁচানোর জন্য ইসলামের যে ভয়াবহ ব্যাখ্যা তারা জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চান সে দলিলগুলো দেখানো দরকার, এবং দেখানো দরকার তাদের কেতাব ও কর্মকাণ্ড থেকেই। সেটা সম্ভব, দরকার হলে আদালতে এসব দলিল দেখানো যাবে। ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, গণসমর্থন ছাড়া শুধুমাত্র আইনের জোরে ধর্মীয় হিংস্রতা উচ্ছেদ করা যায়না। নিজেদের উদ্দেশ্য অর্জনে কখন সংবিধানকে ‘‘পবিত্র’’ বলে মাথায় তুলতে হয় ও কখন ‘‘ধর্ম-বিরোধী’’ বলে পায়ে দলতে হয় তা জামাত জানে। তাদের হুমকি-ধামকি ও হিংস্রতার কৌশল বেশ সফল, সেটা আইনের বিরুদ্ধে হলেও। মাত্র গত সপ্তাহে মালয়েশিয়াতে ক্যাথলিক পত্রিকা ‘‘হেরাল্ড’’-এর মালয় সংস্করণে স্রষ্টাকে বোঝাতে ‘‘আল্লাহ’’ শব্দটা ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। শব্দের ওপরে কারো মালিকানার আইন নেই বলে আদালত হেরাল্ড-এর পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু আইনে হারলেও ওখানকার ইসলাম-ব্যবসায়ীরা জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলে খ্রিষ্টানদের ওপরে তুমুল হুমকি-ধামকি ছাড়াও এগারোটা গীর্জায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এই হিংস্রতার চাপে আদালত তার রায় স্থগিত রেখেছে, তাতে ইসলামি রাজনীতিকদের সাহস ও মনোবল দুটোই বেড়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে ইসলাম-ব্যবসায়ীরা দেশ ও জাতির কত ক্ষতি করেছে ও করছে সে দলিলগুলোও জাতিকে…

অবযৌনতা মানুষের বিকল্প যৌনতা। এই যৌনতাই আবার তৈরি করে আছে এক বিশাল শিল্পসাম্রাজ্য। যৌনশিল্প এই অবযৌনতার চাহিদাই মিটিয়ে থাকে।[...]

মানুষের যৌন ইচ্ছার অনুভব ও কর্মকাণ্ডই যৌনতা। নারী পুরুষের বিষমকামকেই আমরা স্বভাবকাম বা স্বাভাবিক যৌনতা বলি। কিন্তু এর বাইরেও মানুষের যৌন অনুভব ও কর্মকাণ্ড ক্রিয়াশীল। উপযৌনতা : পুরুষ সমকাম, নারী সমকাম, উভকাম, পরিবর্তকাম, পশুকাম। অপযৌনতা : শিশুকাম, ধর্ষকাম, মর্ষকাম, বিভিন্ন ধরনের মাদক নির্ভর যৌনতা, সার্বক্ষণিক যৌনাচ্ছন্নতা। অবযৌনতা : যৌনকর্মীর ভোক্তা, পর্নোগ্রাফির দর্শক ও সেক্সশপের ভোক্তা। এর মধ্যে উপযৌনতা মানুষের স্বীকৃত কামানুভূতি ও কর্মকাণ্ড। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবেই তার এই অনুভব ও কর্মকাণ্ডগুলোকে প্রকাশ করে। অপযৌনতা পুরোপুরিই মানুষের যৌনতার বিকট প্রকাশ। এই অপযৌনতা মানুষের যৌন অনুভব ও কর্মকাণ্ডকে বিকৃত ও বিভৎস করে তোলে। অবযৌনতা মানুষের বিকল্প যৌনতা। এই যৌনতাই আবার তৈরি করে আছে এক বিশাল শিল্পসাম্রাজ্য। যৌনশিল্প এই অবযৌনতার চাহিদাই মিটিয়ে থাকে। যেমন অবসংস্কৃতি* – স্থূল গানবাজনা, স্থূল বইপত্র, স্থূল সিনেমা, মাদকাসক্তি মানুষকে গ্রাস করেছে এবং এক বিশাল বাণিজ্যশক্তি হয়ে উঠেছে, আর এই বাণিজ্যশক্তির নিরন্তর প্রচেষ্টা প্রতিনিয়ত এর ভোক্তার সংখ্যা বাড়াচ্ছে – একই ভাবে অবযৌনতাকে ঘিরে যে যৌনশিল্প সাম্রাজ্য সেটাও অত্যন্ত আগ্রাসী মোহ বিস্তার করে এর ভোক্তা বাড়িয়ে চলেছে। যৌনচাহিদা আছে তাই যৌনশিল্পের রমরমা, একথা বলে পৃথিবীর সব জায়গায় যে নৈতিক দুর্যোগের সৃষ্টি করা হয়েছে –অর্থনৈতিক রাজনৈতিক কোনো দুর্যোগই আজ আর অবযৌনতা ও অবসংস্কৃতির মাধ্যমে সৃষ্ট নৈতিক দুর্যোগের সঙ্গে তুলনীয় নয়। অবযৌনতাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে সারা পৃথিবী জুড়ে যৌন উদ্দেশ্যে মানুষ পাচারের এক ভয়ংকর চক্র। এ চক্রের হাত ধরেই আজ মধ্যপ্রাচ্যে, ভারতে, নেপালে, পাকিস্তানে, বাংলাদেশে যৌনকর্মে পর্নোছবিতে ক্যাবারেক্লাবে কখনো বাংলাদেশের কোনো পাড়াগাঁয়ের মেয়ের দেখা পাওয়া যায় দুবাইয়ের অভিজাত হোটেলে, কেরালা বোম্বের কোনো মেয়েকে দেখা যায় নেপালের ক্যাসিনোতে, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো মেয়ের দেখা মেলে করাচির পাঁচতারা মেসেজ পার্লারে, ভারতের শ্রমিক অধ্যুষিত কোনো বাজারের ‘মান্ডি’-তে কত জাত-উপজাতের কত দেশ কত অঞ্চলের মেয়ে যে পাওয়া যায় তার সঠিক হিসেব আজ আর কারো কাছেই নেই মনে হয়। মানুষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থানের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অবযৌনতার আকর্ষণীয় বাজার হাতে রাখতে যৌনশিল্পের অপ্রতিরোধ্য পুঁজির মালিকেরা আজ আর কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। কিভাবে আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব? যেমন অপসংস্কৃতি অবসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে রেহাই পেতে হলে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চার কথা বলা হয়, এক্ষেত্রেও কি আমরা শুধু সুস্থ…

এতে (‌‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার') পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী তার ভাই-বেরাদর সহযোগে একধরনের ফুর্তির আয়োজন করতে পেরেছেন। এতে অন্তত পাঁচ ধরনের বাণিজ্যিক জোশ আমদানি করতে পেরেছেন। [...]

সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখি না বহুদিন হলো। পারিবারিক আয়োজনের ভিতর দিয়েই তা দেখতে হলো। তার মানে শহুরে মধ্যবিত্তকে টিভি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এতে কিছুটা হলেও বোঝা যায়। এটি প্রায় দুই ঘণ্টা সময়ের এক আয়োজন। এতে পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী তার ভাই-বেরাদর সহযোগে একধরনের ফুর্তির আয়োজন করতে পেরেছেন। এতে অন্তত পাঁচ ধরনের বাণিজ্যিক জোশ আমদানি করতে পেরেছেন। সেগুলি একে একে জানানোর চেষ্টা করব। ১. যৌনতা : যৌনতার এমন সর্বব্যাপী ব্যবহার খুব কম ছবিতেই দেখা গেছে। একাকী এক মেয়ে এই সমাজে চলা খুবই ডিফিকাল্ট। নষ্টভ্রষ্ট সমাজ তাকে বেঁচে থাকার এতটুকু সাহস শক্তি তৎপরতা দিতে পারে না। তা এ ছবিটিতে আছে। কিন্তু এটিকে পুঁজি করে পুঁজি বানানোর এমন ধান্ধা সত্যি বিরল। ২. কমপিউটারাইজ্‌ড লাইফ : ইন্টারনেটে এখন যে ফেসবুক, ব্লগ, ইমেইল, টিভি-কার্ডের সম্মিলিত ব্যবহারের আয়োজন লক্ষ করা যায়, এমনই হুলস্থূল এক লম্ফঝম্ফ দেখা যায়। আমরা আশির দশকে শুনতাম, অঞ্জু ঘোষ সিনেমায় থাকবে, আর সে জলে নামবে না, তা তো হয় না। সেই রূপ ফারুকী ফিল্ম করবে তাতে সেলফোন থাকবে না, তা কী করে হয়? ৩. সতীত্ব প্রকল্প : যত যাই হোক, সতী নারীর পতি মরে না! এই হচ্ছে সনাতন চিন্তাভাবনার আধুনিক রূপায়ন। পরকীয়া আছে-আছে করেও নাই। আর এমন হাস্যকর সতীপনা, বাবা কেন চাকর ধরনের বাণিজ্যিক ছবিতেও হয়ত এতো দেখা যায় না। ৪. পার্টনার বাণিজ্য : এর রেডিও পার্টনার রেডিও ফুর্তি; আর এটিকে অত্যন্ত নির্লজ্জের সাথে চালাকি করে ফিল্মটিতে সরাসরি দেখানো হলো। তপু নামের গায়কটির সরাসরি উল্লেখ থাকলেও তিশা আর মোশাররফকে যথাক্রমে রুবা আর মুন্না চরিত্রেই অভিনয় করে যেতে হয়। ৫. চরিত-বিধান : কোনো একটা চরিত্রেরই কোনো বিকাশ নেই। এমনকি কেন্দ্রীয় মেয়ে চরিত্রটিও শেষতক পরিচালকের হাতের পুতুল হয়ে থাকে। আবার তাদের সুখে-শান্তিতে বসবাস করানোর জন্য স্বামী-স্ত্রী-বন্ধুকে একেবারে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেয়া হয়। কক্সবাজার পাঠানো মানেই যেন ভালোবাসার বিদ্যানিকেতনে ভর্তি করিয়ে দেয়া। বালখিল্যতা কারে কয়! চট্টগ্রামের আলমাস সিনেমা হলে খেয়াল করলাম, এর দর্শক মূলত কলেজ-ভার্সিটির ছেলে-মেয়ে। এরা যে ছবিটি দেখে কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে! কর্পোরেট পুঁজির কী যে দাপট এখানে! এই ধরনের ছবির চেয়ে কথিত বাণিজ্যিক ছবি অনেক ভালো, কারণ এ সম্পর্কে আমরা জানি, আগে থেকেই…

আমাদের মধ্যে এমন ছেলেমেয়ে বোধহয় খুব কমই আছে, আশি আর নব্বইয়ের দশকে যারা গণতন্ত্রের জন্যে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেনি। হয়তো আমাদের অনেকেই কোনও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না; কিন্তু তারপরও আমাদের একটি সংগঠন ছিল : ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১০ দফা দাবির মধ্যে একটি অন্যতম দাবি ছিল : একমুখী, সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। এই শিক্ষানীতি কেমন হবে, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে বিতর্কও ছিল। ড. কুদরত-ই খুদার শিক্ষানীতি নিয়েও ভিন্নমত ছিল আমাদের মধ্যে। কিন্তু তারপরও মোটা দাগে আমরা চেয়েছিলাম এমন এক শিক্ষানীতি যা প্রাথমিক স্তর থেকেই একমুখী, সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার প্রচলন ঘটাবে। এই শিক্ষানীতির আকাঙ্ক্ষায় আমাদের অনেকে রাজপথেই শহীদ হয়েছেন, আমরা আমাদের সঙ্গীর লাশ কাঁধে বয়েছি, আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও শপথ আরও তীব্রতর হয়েছে। একসময় স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের প্রথানুগত শিক্ষা জীবন শেষ হয়েছে, কিন্তু আমাদের সেই আকাঙ্ক্ষা এখনও পূরিত হয়নি। এসবই পুরানো কাসুন্দি। কিন্তু কী করব বলুন? লোককথা বলে, অতৃপ্তি নিয়ে মৃত্যু ঘটলে মানুষ ভূত হয়ে যায়; অতৃপ্তি নিয়ে আমাদের শিক্ষাজীবন ফুরিয়ে গেছে, আমরা বেঁচে আছি ভূতের মতো। এবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। ওই শিক্ষানীতি ওয়েবসাইটেও দেয়া আছে, যাতে সবাই মতামত দিতে পারেন। সত্যি কথা বলতে গেলে, দেখি-দেখি করেও তা দেখা হয়নি। এবং দেখার আগেই এখন পত্রপত্রিকা থেকে জানতে পারছি, মৌলবাদীরা বলছে, এই শিক্ষানীতি নীতি নাকি মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে। এই শিক্ষানীতি নাকি শিশুদের ধর্মশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করবে, নৈতিকতাহীন করে তুলবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আশি আর নব্বইয়ের দশকে বছরের পর বছর আমরা শ্লোগান দিয়েছি, ‘একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি চালু কর’, ‘সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি চালু কর’। শিক্ষাঙ্গনে পাত্তা না পেলেও এই মৌলবাদীরা তখন আন্দোলনের নামে বড় বড় দলগুলির পিছু-পিছু ছুটোছুটি করেছে আর আমাদের সঙ্গীদের সময়-সুযোগমতো হত্যা করেছে, হাতপায়ের রগ কেটে দিয়েছে, ড্রিলিং মেশিন দিয়ে শরীর ফুটো করেছে। একবার আমি ভার্সিটিতে দেখেছিলাম, পেয়ারাওয়ালার কাছ থেকে পেয়ারা নিয়ে এক শিবির কর্মী সেটি টুকরো করার চেষ্টা চালাচ্ছে, আর তার সঙ্গী তাকে বলছে, ‘এই পেয়ারা ঠিকমতো কাটতে পারিস না, কম্যুনিস্টদের কাটবি কেমন করে?’ এখন এই মৌলবাদীরাই…

বাংলাদেশে এনজিও-কাযর্ক্রম নিয়ে কিছু আশঙ্কা ও প্রশ্ন [...]

এনজিও যে আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছায়ার মতো তাদের থাবা বিস্তার করছে তা বোধহয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা যদি এনজিও-কার্যক্রমের দিকে নজর দিই তাহলে দেখব, স্বাধীনতার পর-পর মাত্র গুটিকয় এনজিও তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। আর এখন তো বাংলাদেশের প্রতি ধূলিকণায় তাদের রক্তাক্ত ছোঁয়া রেখে যাচ্ছে। রুরাল ইকোনোমির প্রায় সবটুকুই তারা তাদের করায়ত্ত করে ফেলছে। তাদের কাজের বিস্তৃতির কিছু নমুনা দেয়া যাক। রেলের টেলিকম সিস্টেমের সাথে গ্রামীণ ফোনের সম্পর্ক বরাবরই বেশ নিবিড়। এখন এরা সুবর্ণ এক্সপ্রেসের একটা বগি সেলফোনের জন্য নানান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করছে। আরও এক মজাদার বিষয় কেউ কেউ লক্ষ্য করে থাকবেন : চট্টগ্রাম শহরের অলঙ্কার মোড়ে একটি পুলিশ বক্স। তা এমনই দৃষ্টিনান্দনিকতায় পরিপূর্ণ যে, মনে হবে বেহেশতের স্নিগ্ধস্রোত চুঁইয়ে চুঁইয়ে নামছে। যে-কোনো পুলিশ বক্সকে বরাবরই ষড়যন্ত্রমুখর, পলায়নপর, যন্ত্রণাময় এক জায়গা মনে হয়। কিন্তু এমন স্মার্ট আর রোমান্টিক পুলিশ বক্স এই দেশে কমই আছে। এটি নির্মিত হয়েছে সানমারের সৌজন্যে। এ-ধরনের বহু কাজ সরকার-নিয়ন্ত্রিত অঙ্গনে হরহামেশাই চোখে পড়ে। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হচ্ছে, এই যে, এনজিও-গ্রাস শুরু হয়েছে তা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? বাংলাদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিকাশ কি এতে রুদ্ধ হবে না?

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.