গত ডিসেম্বরের ২ তারিখ থেকে ব্লগের অনেক সুহৃদ যে পোস্টটিকে মমতায় ভালবাসায় ঋগ্ধ করেছিলেন, যাদের প্রাণোচ্ছ্বল সহমর্মী উপস্থিতি আমাকে রোজ একটি করে পর্ব লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিল, তাদেরই ঐকান্তিক ভালবাসা আর স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহে অবশেষে সিরিজটি বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পিতিবারে বইটি মেলার "ঐতিহ্য" স্টলে উঠেছে। বইটি নিয়ে ইতিমধ্যে বন্ধুবর মুনশিয়ানা রিভিউ পোস্টও দিয়েছেন। তাই আমি শুধু কাল (১৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার) বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য এই পোস্ট দিচ্ছি। ১৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার সন্ধ্যে ৬ টায় নজরুল মঞ্চে। যারা পুরো সিরিজ পড়েছেন, মূল্যবান কমেন্ট করেছেন, বই প্রকাশের উৎসাহ দিয়েছেন তারা এবং যারা অফলাইনে পড়েছেন কিংবা ভিজিটর হিসেবে পড়েছেন তাদের সবাইকে অনুষ্টানে সবিণয় আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। রি-পোস্ট সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতায় "মুক্তাঙ্গন" এ সিরিজটি রি-পোস্ট করিনি। আমন্ত্রণ পোস্টটিও রি-পোস্ট। মুক্তাঙ্গনের সকলকে আমন্ত্রণ।
ইতিহাসের দীর্ঘতম অধ্যায় ধরে টিকে-থাকা হত্যাকারীর দল, যারা একতাবদ্ধ হয়েছিল ধর্মের নামে, আর শেষমেষ কোথায় যে মিলিয়ে গেল তেমন কোন হদিশ না রেখে, আজ তাদের কথা স্মরণ করতে চাই কিছুটা, শ্রদ্ধায় নয় অবশ্যই, নয় ঘৃণায়ও [...]
(ইহা শুষ্ক এবং নিশ্ছিদ্র ইতিহাস নহে; নিতান্তই ভালোলাগার এবং বিস্মিত হওয়ার কিছু ব্যক্তিগত উপাদান লইয়া ইহা রচিত। ভুলভ্রান্তি পাইলে নিজগুণে মার্জনা করিবেন) ইতিহাসের দীর্ঘতম অধ্যায় ধরে টিকে-থাকা হত্যাকারীর দল, যারা একতাবদ্ধ হয়েছিল ধর্মের নামে, আর শেষমেষ কোথায় যে মিলিয়ে গেল তেমন কোন হদিশ না রেখে, আজ তাদের কথা স্মরণ করতে চাই কিছুটা, শ্রদ্ধায় নয় অবশ্যই, নয় ঘৃণায়ও। নিজেদের ব্র্যান্ডিং করেছিল তারা অসাধারণভাবে, যদিও ওই শব্দের মানেটা নিশ্চয়ই তারা জানতো না। আজকাল যেমন হোন্ডা বলতে বুঝি মটরসাইকেল, কোকা-কোলা বা সংক্ষেপে কোক বললে বুঝি কোমল পানীয় বা প্যাম্পার্স শব্দটা হয়ে উঠেছে বাচ্চাদের ডায়াপারের প্রতিশব্দ, তেমনি তাদের সঙ্ঘটির নাম, তথা নামবাচক বিশেষ্যটি ইতিহাসের পাতায় তো বটেই, একটি টিউটোনিক/ জার্মানিক ভাষাগোষ্ঠীজাত ভাষার শব্দসম্ভার এবং অভিধানে চিরকাল অক্ষয় হয়ে থাকার দাবি নিয়ে রূপ নিয়েছে জাতিবাচক বিশেষ্যে, অর্থও ‘ধর্মীয় গোষ্ঠী’ থেকে হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘আততায়ী’। ভাষাটি ইংরেজি, শব্দটি এ্যাসাসিন (assassin)।ইতিহাসের পাতায়, পরিহাসমূলকভাবেই বোধকরি, গোষ্ঠীটির সাথে এমন দু’জনের নাম জড়িয়ে আছে, একজনের প্রত্যক্ষভাবে, অন্যজনের পরোক্ষভাবে, যাঁদের একজন কট্টর ধর্মীয় মৌলবাদী এবং গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা, অন্যজন জগদ্ব্যাপী শিক্ষিত লোকেদের কাছে একজন কবি এবং বিজ্ঞানী হিসেবে সুপরিচিত। আর দু’জনের মাঝে যোগসূত্র বেঁধেছিল সেকালের এক অনন্য নগরী, যাকে কবিবরটি প্রিয়ার একটি গালের তিলের বিনিময়ে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন (সাথে আরো একটিকেও অবশ্য)। সমরখন্দ। কবিবর এবং বিজ্ঞানী ওমর খৈয়ামের সুখ্যাত কর্মভূমি। ওমরের জন্ম বস্তুত নিশাপুরে। ‘খৈয়াম’ কথাটা মূলত ‘তাঁবু প্রস্তুতকারী’ বোঝায়। সম্ভবত, ওমরের পিতৃপুরুষ ওই কাজ করতেন, কমপক্ষে তাঁর পিতা ইব্রাহিম, যদিও তিনি নিজে তাঁর চতুষ্পদীতে ওই পদবি নিয়ে বেশ ব্যঙ্গ করেছেন। ধরা হয় মোটামুটি ১০৭২ খ্রিস্টাব্দে ওমর পা রাখেন এই শহরে, যা তখন ত্রানসাজোনিয়া সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। রাজসিংহাসনে তখন তুরুক বংশধর নাসর খান। বলা হয়, ওমরের হাতে সমরখন্দের কাজি আবু তাহের তুলে দেন একটি সাদা পাতার বই, যা কালক্রমে বিশ্বের বহুলপঠিত বইয়ের একটি হয়ে উঠবে। তাই, ওটি পরিচিতই হয়ে উঠেছিল ‘সমরখন্দ পাণ্ডুলিপি’ নামে। মুসলিম সাম্রাজ্যে তখন সর্বাধিক ক্ষমতাধর নৃপতি তুর্কি সেলজুক বংশের অধিপতি আলফ আরসালান, বয়েস যাঁর প্রায় ৩৮, আর যাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত কাবুল থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত। এমনকি পূর্ব রোমের সম্রাট রোমেনাস দাইওজেনুসও হার মেনেছেন তাঁর কাছে, বাইজেন্টাইন সম্রাটও পরাভূত। অথচ, কাছের শহর সমরখন্দ…
কিশোর-সংশোধনাগারের বাইরে অনন্ত সবুজে চোখ রেখে আমাকে একজন গৃহায়ন ব্যবস্থাপক বলেছিলেন- "আপনি জানেন, যুক্তরাজ্যের জেলখানাগুলিতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ? সব জেলখানায়ই একই চিত্র?” আমি তাতে সংকুচিত হই, আমার চোখে বারবার ধরা পড়তে থাকে- আলজেরিয়ানরা ফিন্সবুরিপার্কের বাসস্টপে মারপিট করছে, সোমালিরা স্টোক নিউয়িংটনে পকেট মারছে [...]
কিশোর-সংশোধনাগারের বাইরে অনন্ত সবুজে চোখ রেখে আমাকে একজন গৃহায়ন ব্যবস্থাপক বলেছিলেন- "আপনি জানেন, যুক্তরাজ্যের জেলখানাগুলিতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ? সব জেলখানায়ই একই চিত্র?” আমি তাতে সংকুচিত হই, আমার চোখে বারবার ধরা পড়তে থাকে- আলজেরিয়ানরা ফিন্সবুরিপার্কের বাসস্টপে মারপিট করছে, সোমালিরা স্টোক নিউয়িংটনে পকেট মারছে, তুর্কি কসাই হ্যারিংগেতে মাংস বিক্রির সময় ওজনে কম দিচ্ছে। আমার অবস্থা কুড়োল হারানো ঐ লোকটার মত হয়, কুড়োল হারানোর পরে তার প্রতিবেশীর ছেলেটার সব গতিবিধি সন্দেহজনক লাগে। ইয়া-দাড়ি (বুলবুল চশমেদার দাড়ি…) আর জোব্বা পরা পাকিস্তানি এক আইটি এক্সপার্ট খিঁচিয়ে ওঠেন, ক্রিশ্চিয়ানরা গাড়ির বুটে লাশ ফেলে রাখলে কোনো অসুবিধা নাই, একটা মুসলিম ছেলে মার্ডার চার্জে ধরা পড়লে সেইটা দুই-ইঞ্চি বড় হেডলাইন এ ছাপা হয়!” আমি মনে মনে বলি, তাইতো! মুসলিমরা কি মানুষ না? তাদের কী নরহত্যা করার অধিকার নাই?তাদের কী নারীধর্ষণের অধিকার নাই (যেখানে জীবজগতে প্রাইমেটদের মধ্যে মনুষ্যনারী ছাড়া কেবল আর একটিমাত্র স্পিসি শারীরবৃত্তীয়ভাবে ধর্ষোপযোগী)? তাদের কী মসজিদে আশ্রয় নেয়া আর্তমানুষকে কচুকাটা করার অধিকার নাই? আছে, সকল পাপে তাদের সম-অধিকার আছে, অতএব সকল শাস্তিতেও। সুমেরীয়-আক্কাদীয়-এসিরীয় এইরকম পাঁচখানা আদি সভ্যতার সকল চিহ্ন গুঁড়িয়ে ফেলবার পরে আমেরিকা আর বৃটেন যখন হাত মুছতে মুছতে জগতের কাছে সাফাই দিতে থাকে, তখন যুক্তরাজ্যের অনেকের অবস্থা আবার কুড়োল ফিরে পাওয়া ঐ লোকটার মত হয়, কুড়োল ফিরে পাবার পরে তার প্রতিবেশীর ছেলেটিকে আর সন্দেহজনক লাগেনা, রীতিমত সজ্জন মনে হয়। কেন লিভিংস্টোন ট্রাফালগার স্কোয়ারে গলা কাঁপিয়ে অসভ্য যুদ্ধকে অভিশম্পাত করেন। আমরা আহা-উহু করি। যেন আমাদের কুড়োলই খোয়া গিয়েছিল, অফেরতযোগ্যভাবে হারিয়ে যায়নি লক্ষলক্ষ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশু, ক্যালাইডোস্কোপের অফেরতযোগ্য নকশার মত। আমার আরেক বন্ধু ভবঘুরেদের আশ্রয়কেন্দ্রে কাজ করেন- হাসতে হাসতে বলেন - “জেলখানায় মুসলিম বেশী কেন হবেনা? একে তো মুসলিমরা স্বল্পপ্রজ একথা শত্তুরও বলতে পারবেনা, তায় খাওয়াদাওয়া ভাল দেয় - উপাসনার জন্যে বারবার সেল থেকে বেরুতে দেয় এইজন্যে জেলে গেলেই লোকে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়।” ধর্মাচরণকে সামনে রেখে আড়ালে প্রাকৃতিক সম্পদ দোহনের এই পন্থা নতুন নয়, এই পন্থার বলি ছিল মায়াসভ্যতার লোকেরা, ইনকারা, রেড ইন্ডিয়ানরা, এখন মুসলমানরা। অ্যাজটেকরা নরবলি দিতে পারে, নরমাংসের স্বাদ নিতে পারে, তা বলে তার জমিন-জল-হাওয়া তার সোনালী সুর্যাস্ত তার পুর্বপুরুষের ভিটা দখল করবার অধিকার আর কারো উপর বর্তায়না…
২৪ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হওয়ার তিনদিন আগের কথা। দুপুরবেলা লন্ডনের বেশ কয়েকজন বাঙালি সাংবাদিক টেলিফোন পেলেন, বিকেলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ ফারুক রহমানের এক সন্তান তাদের সঙ্গে বসতে চান। [...]
২৪ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হওয়ার তিনদিন আগের কথা। দুপুরবেলা লন্ডনের বেশ কয়েকজন বাঙালি সাংবাদিক টেলিফোন পেলেন, বিকেলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ ফারুক রহমানের এক সন্তান তাদের সঙ্গে বসতে চান। তার আগের দিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রতিনিধি প্রধান স্টিফেন ফ্রোয়ান বাংলাদেশ সরকারকে জানান, সংস্থাটির পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি সম্পর্কিত উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ক্যাথরিন এস্টোনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে সব ধরণের মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। সরকারের কাছে ইইউ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শাসি-প্রাপ্তদের শাস্তি পরিবর্তনের দাবি জানানোর পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধ ও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রেও যাতে এ ধরণের শাস্তি প্রয়োগ করা না হয় তার আগাম আবদার রাখে এ বিবৃতিতে। পরিপ্রেক্ষিতই বুঝিয়ে দিচ্ছিল, সৈয়দ ফারুক রহমানের সন্তান ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই উদ্যোগটির জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন। যদিও তিনি তা স্বীকার করেননি। তার কাছে বিষয়টি ছিল নেহাৎই কাকতালীয়। যদিও এটি জানাতে তিনি দ্বিধা করেননি, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কাছেই তারা লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে ফাঁসির রায় বাংলাদেশ সরকার পরিবর্তন করে, অন্য কথায় পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। এটি মনে করা মোটেও অসঙ্গত হবে না যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওই সিদ্ধান্ত ছিল নেহাৎই লবিং-এর ফল। কেননা, পরদিন ২৫ জানুয়ারিতেই ইরাকে কার্যকর হয় কেমিক্যাল আলীর ফাঁসি। সব ধরণের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতার ধ্বজাধারী বকধার্মিক ইউরোপীয় ইউনিয়নের সে ফাঁসির ব্যাপারে কোনও বিবৃতিই ছিল না, যেমন ছিল না এর আগে সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির বিরুদ্ধে। বিকেল পাঁচটার দিকে ব্রিকলেনের অপেক্ষাকৃত নির্জন একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয় কর্নেল ফারুকের সন্তান ড. জুবায়ের ফারুকের সেই সংবাদ সম্মেলন। দেখা গেল, সংবাদ সম্মেলনটির ব্যাপারে রক্ষা করা হয়েছে কঠোর গোপনীয়তা। সম্মেলনে জন্যে বেছে নেয়া হয়েছে এমন একটি রেস্টুরেন্ট, যেটির অবস্থান ব্রিকলেনের অপেক্ষাকৃত নির্জন জায়গায় আর তার মালিকেরও ১৯৭২ সালের সংবিধানবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতি রয়েছে। রেস্টুরেন্টটির দোতলায় স্বল্পালোকিত কক্ষটিতে টেবিলের ওপর মাইক্রোফোন, সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যপত্র এবং দুটি পানিভর্তি গ্লাস আর তার পেছনে দু’জন মানুষ। একজন, লেখার অপেক্ষা রাখে না, সৈয়দ ফারুক রহমানের ছেলে ড. জুবায়ের ফারুক; আরেকজন, নিজেই নাম জানালেন তিনি- ব্যারিস্টার আলী মোহাম্মদ আজহার। লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার একজন গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক আমাকে অনুচ্চ গলায় পরে জানালেন, ঘোরতর পাকিস্তানবাদী এই আলী মোহাম্মদ আজহার। সংবাদ সম্মেলনের…
আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হচ্ছে হচ্ছে ভাব, এটা হলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আবার নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যাশিতভাবেই জামাত হৈ-হুংকার শুরু করেছে, ছোটবড় কিছু দলকে সাথে নিয়ে এখানে ওখানে ও লন্ডনে বিদ্রোহী সমাবেশ করছে, উত্তেজক শ্লোগান দিচ্ছে। বানানো হয়েছে ‘‘ইসলাম ও ধর্মীয় রাজনীতি রক্ষা জাতীয় কমিটি’’, বক্তারা ‘‘কাফনের কাপড়’’ পরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এটা আরো বাড়বে, একটা মরণকামড় জামাত দেবেই [...]
আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হচ্ছে হচ্ছে ভাব, এটা হলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আবার নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যাশিতভাবেই জামাত হৈ-হুংকার শুরু করেছে, ছোটবড় কিছু দলকে সাথে নিয়ে এখানে ওখানে ও লন্ডনে বিদ্রোহী সমাবেশ করছে, উত্তেজক শ্লোগান দিচ্ছে। বানানো হয়েছে ‘‘ইসলাম ও ধর্মীয় রাজনীতি রক্ষা জাতীয় কমিটি’’, বক্তারা ‘‘কাফনের কাপড়’’ পরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এটা আরো বাড়বে, একটা মরণকামড় জামাত দেবেই। মুক্তিযুদ্ধে জাতি ইসলামে রাজনীতি মেশানোর আগুনে পুড়েছে। কিন্তু তারপরেও ইসলাম-ব্যবসায়ীদের হিংস্র চেহারা জাতির চোখে যতটা স্পষ্ট তাদের ধর্মতত্ত্বের ভয়াবহ দিকটা ততটা স্পষ্ট নয়। সেজন্যই জাতিকে জানানো বিশেষ জরুরী, নিজামুদ্দীন আওলিয়া-মঈনুদ্দীন চিশতি-হজরত শাহ জালাল-শাহ পরানের ইসলামের সাথে মওদুদী-নিজামী-সাঈদী-গোলাম আজমের ইসলামের সংঘর্ষ কেন ও কোথায়। জাতিকে জানানো দরকার মুক্তিযুদ্ধে জামাত যে হিংস্রতা করেছে তার শিকড় সেই মওদুদী-ব্যাখ্যার বিকৃত ও বিক্রীত অধর্মতত্ত্বের মধ্যেই নিহিত। যে-কোন প্রতিপক্ষকে যে-কোন উপায়ে নির্মূল করাই তাঁদের কাছে তাঁদের ধর্মবিশ্বাসের দাবী। সেখানে হিংস্রতা বৈধ ও মিথ্যা বলা ‘‘বাধ্যতামূলক’’। মুখে, কাজে ও সংবাদপত্রে জামাতের সদাসর্বদা হিংস্রতা ও মিথ্যার যে বেসাতি আমরা দেখি ওটা তার ‘‘ধর্মীয় কর্তব্য’’। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে তাদের খপ্পরে পড়া থেকে বাঁচানোর জন্য ইসলামের যে ভয়াবহ ব্যাখ্যা তারা জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চান সে দলিলগুলো দেখানো দরকার, এবং দেখানো দরকার তাদের কেতাব ও কর্মকাণ্ড থেকেই। সেটা সম্ভব, দরকার হলে আদালতে এসব দলিল দেখানো যাবে। ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, গণসমর্থন ছাড়া শুধুমাত্র আইনের জোরে ধর্মীয় হিংস্রতা উচ্ছেদ করা যায়না। নিজেদের উদ্দেশ্য অর্জনে কখন সংবিধানকে ‘‘পবিত্র’’ বলে মাথায় তুলতে হয় ও কখন ‘‘ধর্ম-বিরোধী’’ বলে পায়ে দলতে হয় তা জামাত জানে। তাদের হুমকি-ধামকি ও হিংস্রতার কৌশল বেশ সফল, সেটা আইনের বিরুদ্ধে হলেও। মাত্র গত সপ্তাহে মালয়েশিয়াতে ক্যাথলিক পত্রিকা ‘‘হেরাল্ড’’-এর মালয় সংস্করণে স্রষ্টাকে বোঝাতে ‘‘আল্লাহ’’ শব্দটা ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। শব্দের ওপরে কারো মালিকানার আইন নেই বলে আদালত হেরাল্ড-এর পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু আইনে হারলেও ওখানকার ইসলাম-ব্যবসায়ীরা জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলে খ্রিষ্টানদের ওপরে তুমুল হুমকি-ধামকি ছাড়াও এগারোটা গীর্জায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এই হিংস্রতার চাপে আদালত তার রায় স্থগিত রেখেছে, তাতে ইসলামি রাজনীতিকদের সাহস ও মনোবল দুটোই বেড়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে ইসলাম-ব্যবসায়ীরা দেশ ও জাতির কত ক্ষতি করেছে ও করছে সে দলিলগুলোও জাতিকে…