অপব্যবহারের ভয়ে এখনই এত কাতর কেন হয়ে পড়লেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বুঝতে পারছি না, তার চেয়ে বরং সাজিদ আলী হাওলাদারের গবেষণার মানকে তো বেঞ্চমার্ক হিসেবে ব্যবহার করে বলা যেত সাজিদ আলী হাওলাদারের মানের গবেষক হলেই একমাত্র মাস্টার্স না থাকলেও কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়া যাবে।

আজই দৈনিক সমকালের শেষের পাতায় একটা খবর দেখলাম সকালে এ কেমন নিয়োগ নীতিমালা, সেখানে বলা হচ্ছে ড. সাজিদ আলী হাওলাদার। ২০১১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী থাকাকালে ফেজারভারিয়া আসমতি নামের সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির একটি ব্যাঙ আবিস্কার করেন এ তরুণ। বিশ্বের সরীসৃপ প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে তাই মিলেছে সর্বকনিষ্ঠ বিজ্ঞানীর খেতাব। ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অধ্যাপক ইয়োহা মারিলা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাজিদের কৃতিত্বে আকৃষ্ট হয়ে মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) বাদ দিয়ে বিশেষ বিবেচনায় সরাসরি পিএইচডি প্রোগ্রামে তাকে নিয়ে নেন। ফলে বয়স ৩০ পেরোনোর আগেই সাজিদ পিএইচডি সম্পন্ন করেন। দেশকে সমৃদ্ধ করতে নিজেকে নিয়োজিত করতে চেয়েছেন গবেষণায়। আর এজন্য তার পছন্দ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে। তাই আবেদন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে। তবে শিক্ষক নিয়োগের আবেদনের শর্ত হিসেবে মাস্টার্স না থাকায় তাকে ডাকাই হয়নি মৌখিক পরীক্ষায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনে এমন শর্তের কারণে গবেষণার সুযোগ চাপা পড়ায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এটুকু পড়েই আমি বুঝলাম এই সাজিদ আলী হাওলাদারের কথা তো আমি 'আজকের লিন্ক'এ আগেও কয়েক বার শেয়ার করেছি এই ব্যাঙ গবেষকের কথা আমি তো ভুলে যাইনি, তাহলে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন তার গবেষণার কথা ভুলে শুধু তার মাস্টার্স না করার অজুহাত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সমকালকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী বলছেন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের যেসব নীতিমালা রয়েছে, তার মধ্যে কোনো একটি পূরণ করতে না পারলে ওই প্রার্থীকে আমরা মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকতে পারি না। প্রার্থীর আবেদনের যোগ্যতার শর্ত পূরণ হয়েছে কি-না, তা প্ল্যানিং কমিটি যাচাই করে দেখে। যাচাই শেষে পুনরায় রেজিস্ট্রার অফিসে পাঠায়। সেখানে কোনো যোগ্য প্রার্থী বাদ পড়েছে কি-না, পুনরায় যাচাই করা হয়। পরে যারা আবেদনের শর্ত পূরণ করেছে, তাদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। সাজিদের হয়তো কোনো শর্ত পূরণ হয়নি, তাই তাকে ডাকা হয়নি। তবে এ ধরনের প্রার্থীকে নেওয়ার জন্য যদি নিয়ম করা হয়, তবে তার অপব্যবহার হওয়ার শঙ্কা থাকে বলে মন্তব্য করেন তিনি। অপব্যবহারের ভয়ে এখনই এত কাতর কেন হয়ে পড়লেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বুঝতে পারছি না, তার চেয়ে বরং সাজিদ আলী হাওলাদারের গবেষণার মানকে তো বেঞ্চমার্ক হিসেবে ব্যবহার করে বলা যেত সাজিদ আলী হাওলাদারের মানের…

প্রাণবিজ্ঞানকে বর্তমান শতাব্দীর বিজ্ঞান বলে অভিহিত করা হয়েছে। তা বিনা কারণে নয়। প্রাণজগত বিস্ময়কর, গভীর রহস্যপূর্ণ ও জটিল। ডি এন এ-র পেঁচানো সিঁড়িতে থরে থরে সাজানো আছে জীবনের মৌলরহস্য। একথা জানবার পর থেকে গত অর্ধ শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানের যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি তা মূলত প্রাণবিজ্ঞানের পরিমণ্ডলে ঘটেছে। প্রাণবিজ্ঞানের জটিল বিষয়াদি নিয়ে বাংলায় লেখা সহজ কাজ নয়। কিন্তু সে কঠিন কাজটি সরস বাংলায় উপস্থিত করবার দক্ষতা দেখিয়েছেন আশরাফ আহমেদ তাঁর ‘জলপরি ও প্রাণপ্রভা’ গ্রন্থে। রম্য রচনায় লেখক যে হাত পাঁকিয়েছেন তার পরিচয় মেলে ‘কলাচ্ছলে বলা’ নামের তাঁর প্রথম পুস্তকটিতে। গল্পের মত করে পুরনো স্মৃতি বর্ণনা – যাতে জড়িয়ে থাকে হাস্য-কৌতুকের অনুষঙ্গ, তেমন হাল্কা মেজাজের রসোত্তীর্ণ রচনা সৃষ্টিতে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন আশরাফ আহমেদ। ‘জলপরি ও প্রাণপ্রভা’ গ্রন্থের ১৩টি কাহিনী বর্ণনায় সে ছাপের পরিচয় মেলে। একটি বড় সুবিধে তাঁর আছে। নিজেই তিনি প্রাণবিজ্ঞানী। চার দশকের বেশী সময় ধরে প্রাণবিজ্ঞান গবেষণায় শুধু নিমগ্ন থাকা নয়, খ্যাতিও অর্জন করেছেন আশরাফ আহমেদ। শিক্ষকেরা কথা বলেন। সেসব কথা শুনে ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা মুগ্ধ হলে শিক্ষকেরা নিজেদের ধন্য জ্ঞান করেন। শিক্ষকতার সে সৌভাগ্যও হয়েছে আশরাফ আহমেদের। পল্পেও কথা বলে যেতে হয়। এছাড়া সৃষ্টিশীল লেখার জন্য পরিমণ্ডলের সাহায্য লাগে। স্ত্রী-পরিবার-পরিজন-বন্ধু-স্বজন সে পরিমণ্ডল গড়ে তোলে। তা যদি হয় সহায়ক তবে তা অণুঘটকের কাজ করে। আশরাফ আহমেদ সে সাহায্যও পেয়েছেন। এবারে ‘জলপরি ও প্রাণপ্রভা’ পুস্তকের লেখাগুলো নিয়ে কথা বলব। জলপরি ও প্রানপ্রভার ইংরেজি প্রতিশব্দ Mermaid and Bioluminisense । ১৩টি গল্পের বেশ কয়েকটিতে পুস্তকের নামকরণের কার্যকারণ বোঝা যায়। জলপরি ও প্রাণপ্রভার নানা বৃত্তান্ত পাব আমরা ক্রমশ। জ্ঞান অর্জনে গুরুর প্রয়োজন হয়। বইয়ের প্রথম রচনা ‘গুরু বিন কেয়সে গানা গা-আ-ও’ তে তার পরিচয় পাই। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা কিভাবে আশরাফ আহমেদের মধ্যে বিজ্ঞান মনস্কতার আধুনিক ভুবনটি খুলে দিলেন তার নিবিড় বর্ণনা পাই এ রচনায়। লেখাটি শেষ করেছেন তিনি এমন একটি সহায়কপঞ্জি যুক্ত করে যাতে পরবর্তী লেখাগুলো পাঠে সুবিধে হয়। শিক্ষাগুরুদের কাছ থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে কি শিক্ষা পেলেন তিনি তারও সারাংশ টেনেছেন ঐ পঞ্জিতে। অনুঘটকের কথা শুরুতে বলেছি। তার কথা আছে সেখানে। এ গল্প পড়ে ভিন্ন একটি কথা ভাবছিলাম। ইদানিং আমাদের স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি কমে যাচ্ছে আশংকাজনক হারে।…

...এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশে, বুর্জোয়া দল হওয়া সত্ত্বেও, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে যে রাজনৈতিক দূরত্ব রয়েছে, তার উৎসও একদিক দিয়ে দেখতে গেলে ভাষা আন্দোলনকালীন ওই রাজনৈতিক মেরুকরণ। রাজনীতির প্রতিষ্ঠিত ধারাটির নেতৃত্ব দিচ্ছিল অভিজাত সামন্ততান্তিক বিভিন্ন পরিবার থেকে অংশগ্রহণকারী রাজনীতিকরা, মুসলিম লীগের রাজনৈতিক স্রোতধারা ছিল তাদের নিয়ন্তণে। কিন্তু একুশকে যারা সৃষ্টি করলেন, একুশের মধ্যে দিয়ে যে নেতৃত্ব গড়ে উঠল, যে রাজনৈতিক সংগঠকরা বিকশিত হতে শুরু করলেন তারা মূলত কৃষক পরিবারের সন্তান- তাদের মধ্যেও সামন্তবাদী চিন্তাচেতনা ছিল বটে, সামন্তীয় সংস্কৃতি তাদেরও আচ্ছন্ন করে রেখেছিল বটে, কিন্তু তারা সামন্ততন্ত্রের নিয়ন্তক ছিলেন না, তাদের জীবনযাপন সামন্তের ছিল না।...

একুশ বিজ্ঞানমনস্কতার জন্ম দিয়েছিল, অন্যভাবে বলতে গেলে পূর্ববাংলার বাঙালির বিজ্ঞানমনস্কতা থেকে একুশ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। একুশ প্রতীক হয়ে উঠেছিল ধর্মের উর্ধ্বে ইহজাগতিক জীবনযাপনের, প্রতিভাস হয়ে উঠেছিল ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরের অনবচ্ছিন্ন এক সামাজিকতা ও জাতিগত ঐক্যস্থাপনের । পূর্ববাংলার গ্রামগুলিকে, গ্রামের কৃষক পরিবারগুলিকে একুশ পরিণত করেছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণি সৃষ্টির আঁতুরঘরে। সাতচল্লিশে বাঙালির বিজ্ঞানমনস্কতা পরাজিত হয়েছিল। মধ্যযুগ থেকে অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা বিকশিত হতে শুরু করেছিল, ঔপনিবেশিক রাজনীতি সেই বোধকে পরাজিত করেছিল। কিন্তু ভারত বিভক্তির আগেই পাকিস্তান আন্দোলনে অদৃশ্য এক ফাটল দেখা দিয়েছিল রাষ্ট্রভাষাকে নিয়ে এবং ওই ফাটলই হয়ে উঠেছিল বিজ্ঞানমনস্কতা বিকাশের নতুন আধার। একুশের মধ্যে দিয়ে বাঙালির মনোজগতে লুকিয়ে থাকা বিজ্ঞানমনস্কতার উদ্বোধন ঘটে নতুন করে এবং রাজনীতি ও বিজ্ঞানমনস্কতা পরস্পর পরস্পরের হাত ধরতে শেখে। ষাট অতিক্রান্ত একুশে এসে আমাদের চারপাশে সেই বিজ্ঞানমনস্কতা আরও বিস্তৃত হবে- এমনটিই সঙ্গত ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিজ্ঞানমনস্কতা খুব বেশি এগুতে পারেনি বাঙালির সমাজে। আরও কঠিনভাবে বলতে গেলে, বিজ্ঞানমনস্কতার মৃতুøই ঘটেছে। তার বদলে, ইদানিং প্রায়শই মনে হয়, ধর্মান্ধতা এ দেশের নাগরিকদের একটি জেনেটিক উপাদানে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানমনস্কতা কেন এগুতে পারল না? মোটা দাগে বলতে গেলে, রাষ্ট্র বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসঙ্গকে ধামাচাপা দিতে চাইছে বলে, বিজ্ঞানমনস্কতা প্রচলিত রাজনীতির শত্রু বলে। বাঙালির বিজ্ঞানমনস্কতার মৃতুø ঘটেছিল রাজনীতিকদের উচ্চাভিলাষ থেকে, ভারতীয় মুসলমানদের এক অবিচ্ছিন্ন সংস্ড়্গৃতির কল্পিত রূপরেখা দাঁড় করিয়ে তারা চেষ্টা করেছিলেন সেই উচ্চাভিলাষকে চিরস্থায়ী করতে। মুসলমান শাসকরা একসময় সাফল্য অর্জন করেছিলেন তাদের সামরিক বাহিনীর সংহতির প্রয়োজনে কৃত্রিম এক ভাষা উর্দুর প্রচলন ঘটাতে, পাকিস্তানের প্রভাবশালী প্রদেশ পাঞ্জাবের শিক্ষিত মুসলমানরাও নিজেদের মাতৃভাষার তোয়াক্কা না করে চর্চা করতেন উর্দু ভাষার- অভিজাত, সামন্তীয় ঘর থেকে উঠে আসা পাঞ্জাবকেন্দ্রিক নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থবাহী মুসলিম রাজনীতিক ও তাদের বৃত্তাবদ্ধ অপরাপর রাজনীতিকরাও একইভাবে চেয়েছিলেন উর্দুকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে অদৃশ্য ও অনুপস্থিত এক সংস্ড়্গৃতির বৃত্তে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে আবদ্ধ করতে। এইভাবে রাজনীতিকরা জনগণের জন্যে এক বিভ্রম নিয়ে এসেছিলেন, জনগণকে তারা উদ্বেলিত করেছিলেন এই ধারাভাষ্যে- ধর্মশাসিত রাষ্ট্রই পারে তাদের মুক্তি দিতে, পারে তাদের সংহত রাখতে। মুক্তি না আসুক, মানুষ সংহতি চেয়েছিল এবং স্বাভাবিকও ছিল তাই- দারিদ্র নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে, অনিশ্চয়তা তৈরি করে এবং সাধারণ মানুষ চায় নৈকট্যের মধ্যে দিয়ে সেই নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তাকে দূর করতে, সংহতির…

ব্যাপারগুলো এভাবেই হয় [...]

বাংলাদেশ এর মধ্যেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে ভাবছে। বাংলাদেশ সুপেয় পানির জন্য এবং তার দক্ষিণ উপকূলীয় লবণাক্ততার কথা বিবেচনা করে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে পানির লবণাক্ততা বিনাশের নিউক্লিয়ার ডিস্যালিনেশন নিয়েও খুব স্বাভাবিকভাবেই ভাবতে পারে। এদুটি ভাবনাকে কাজে রূপান্তরিত করতে পারলে বাংলাদেশ দেখা যাবে এরপরেই নিজেকে পারমাণবিক শক্তি হিসাবে ভাবনার দিকে এগুবে। ব্যাপারগুলো এভাবেই হয়, এবং বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থান খুব দ্রুতই সেভাবনায় ঘি ঢালবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই – বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত পাকিস্তান এরমধ্যেই পারমাণবিক শক্তি হিসাবে পরিচিত, বার্মার পারমাণবিক সক্ষমতার কথাও এখন মাঝে মাঝে শোনা যায়, নেপাল ও শ্রীলন্কার দুধর্ষ সামরিক শক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষা এদুটি দেশকেও পারমাণবিক শক্তি অর্জনের দিকে ধাবিত করতে পারে। এই হাতছানি আমাদেরকে সত্যিই কি সেখানে নিয়ে যাবে, যেখানে দাঁড়িয়ে বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে পারমাণবিক শক্তির বিরুদ্ধে একদিন দাঁড়াতে হবে আমাদের নিজের রাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের বিরুদ্ধে?

অনেকেই সমকামিতা নিয়ে বেজায় বিব্রত থাকেন। নাম শুনলেই আঁতকে উঠেন। কাঠমোল্লারা তো গালি দিয়ে খালাস- সমকামীরা হচ্ছে খচ্চর স্বভাবের, কুৎসিৎ রুচিপূর্ন, মানসিক বিকারগ্রস্ত। এমনকি প্রগতিশীলদের মধ্যেও রয়েছে নানা রকম ওজর আপত্তি [...]

সমকামিতা কি প্রকৃতিবিরুদ্ধ? অনেকেই সমকামিতা নিয়ে বেজায় বিব্রত থাকেন। নাম শুনলেই আঁতকে উঠেন। কাঠমোল্লারা তো গালি দিয়ে খালাস- সমকামীরা হচ্ছে খচ্চর স্বভাবের, কুৎসিৎ রুচিপূর্ন, মানসিক বিকারগ্রস্ত। এমনকি প্রগতিশীলদের মধ্যেও রয়েছে নানা রকম ওজর আপত্তি। যারা শিক্ষিত, ‘আধুনিক’ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন, গে লেজবিয়ন ইত্যকার তথাকথিত ‘পশ্চিমা’ শব্দের সাথে কমবেশি পরিচিত হয়েছেন, তারাও খুব কমই ব্যাপারটিকে মন থেকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মেনে নিতে পারেন। তাদের অনেকেই এখনো ব্যাপারটিকে ‘প্রকৃতি বিরুদ্ধ’ মনে করেন, আর নয়ত ভাবেন – পুরো ব্যাপারটি উৎকট ধরনের ব্যাতিক্রমধর্মী কিছু, এ নিয়ে ‘ভদ্র সমাজে’ যত কম আলোচনা করা যায় ততই মঙ্গল। উপরে উপরে না বললেও ভিতরে ভিতরে ঠিকই মনে করেন সমকামীরা তো হচ্ছে গা ঘিন ঘিনে বিষ্ঠাকৃমি জাতীয় এঁদো জীব। মরে যাওয়াই মনে হয় এদের জন্য ভাল। সমাজ সভ্যতা রক্ষা পায় তাহলে। আমি এই বছর বৈজ্ঞানিক দিক (মুলত জীববিজ্ঞান ও জেনেটিক্সের দৃষ্টিভঙ্গি) থেকে নির্মোহভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একটি বই লিখেছি; নাম - 'সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান' (২০০৯)। বইটি প্রকাশ করেছে 'শুদ্ধস্বর'। বইটির বেশ কিছু অংশ ইন্টারনেটের ব্লগসাইটগুলোতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের সময় প্রকাশের সময় সুধীজনের আগ্রহ তৈরি করে। মুক্তাঙ্গন ব্লগের জন্য এই প্রবন্ধটি লেখা হয়েছে আমার এবারকার বইয়ের উপর ভিত্তি করেই। আমি নিজে সমকামী নই, কিন্তু সমকামী বন্ধু-বান্ধবদের জীবন প্রত্যক্ষ করার এবং এ নিয়ে কিছু পড়াশুনা করার ও লেখালেখি করার সুবাদে কিছুটা ধারনা অর্জন করেছি। আমার এ প্রবন্ধটি সে চিন্তাভাবনারই ফসল বলা যেতে পারে। মুক্তাঙ্গন ব্লগের পাঠক-পাঠিকাদের কাছে এ প্রবন্ধ ভিন্নমাত্রার আবেদন তৈরি করবে বলে মনে করি। তবে, এ নিয়ে পাঠকদের ভিন্নমত থাকলে আমি তা সদরে পর্যালোচনা করতে, এবং যুক্তিনিষ্ঠ হলে তা গ্রহণ করতেও আমি রাজী। আমি প্রবন্ধটি শুরু করছি ভুল ভাবে ব্যবহৃত কিছু মন্তব্য দিয়ে, যা সমকামিতার বিরুদ্ধে প্রায়শই ব্যবহার করা হয় : “সমকামিতা প্রাকৃতিক কোনোভাবেই হতে পারে না মূলত (নারী-পুরুষে) কামটাই প্রাকৃতিক” কিংবা অনেকে এভাবেও বলেন - “নারী আর পুরুষের কামই একমাত্র প্রাকৃতিক যা পৃথিবীর সকল পশু করে। যার মূল লক্ষ্য হলো বংশ বৃদ্ধি” উক্তিগুলো স্রেফ উদাহরণ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। অনেকেই সমকামিতাকে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ বা ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে প্রতিপন্ন করার জন্য উপরোক্ত ধরণের যুক্তির আশ্রয় নেন। আমি এই…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.