একুশ শতকের এই সময়ে ২০১৯ সালে, কলকাতা ও চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে শক্তি-সামর্থ্যে নিঃসন্দেহে কলকাতা অনেক এগিয়ে। কিন্তু ৩৩৩ বছর আগে জব চার্নকের সামনে ছিল বিপরীত চিত্র। তাই সে সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চট্টগ্রাম অভিযান পরিকল্পনায় তিনি সায় দিতে সাহস করেননি। তবু ১৬৮৬ ও ১৬৮৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গোঁয়ার্তুমি করে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়েছিল। যে অভিযান লজ্জাজনকভাবে ব্যর্থ হওয়ার ফলে কলকাতা নগরের জন্ম প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছিল।[...]

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চট্টগ্রাম অভিযান (১৬৮৬-৮৮) প্রবল প্রতাপশালী আরাকানি শক্তির কাছ থেকে ১৬৬৬ সালে যখন চট্টগ্রাম শহর অধিকার করেন, তখন শায়েস্তা খান কল্পনাও করেননি, মাত্র দুই দশক পর এই শহরের প্রতি নজর পড়বে নতুন এক বিদেশী শক্তি ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির। বাংলা তখন ভারতবর্ষের সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রদেশ। শাহ সুজার সুবেদারিত্বের সময় এ প্রদেশের সাথে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের অধিকার পেয়েছিল কোম্পানি। সেই সুবিধাটি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল শায়েস্তা খানের আমলে। হুগলি বন্দরে সৃষ্ট একটি বিবাদের জের ধরে লন্ডনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সদর দপ্তর থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, মোগলদের কাছ থেকে একটি শহর কেড়ে নিয়ে সেখানে বানানো হবে শ্রেষ্ঠতম ইংরেজ বাণিজ্যনগরী। নগরীটির নাম চট্টগ্রাম। একুশ শতকের এই সময়ে ২০১৯ সালে, কলকাতা ও চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে শক্তি-সামর্থ্যে নিঃসন্দেহে কলকাতা অনেক এগিয়ে। কিন্তু ৩৩৩ বছর আগে জব চার্নকের সামনে ছিল বিপরীত চিত্র। তাই সে সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চট্টগ্রাম অভিযান পরিকল্পনায় তিনি সায় দিতে সাহস করেননি। তবু ১৬৮৬ ও ১৬৮৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গোঁয়ার্তুমি করে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়েছিল। যে অভিযান লজ্জাজনকভাবে ব্যর্থ হওয়ার ফলে

কলকাতা নগরের জন্ম প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছিল। ইতিহাসের ছোট্ট কোনায় এখনো খুব তুচ্ছ আকারে Child’s War নামে সেই যুদ্ধটির উল্লেখ আছে। ভারতবর্ষে মোগলদের বিরুদ্ধে সেটা ছিল প্রথম যুদ্ধযাত্রা। সেদিন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চট্টগ্রাম আগ্রাসন যদি সফল হতো এবং ইংরেজরা যদি চট্টগ্রাম দখল করতে সক্ষম হতো, তাহলে আজ কলকাতা নামের কোনো নগরীর অস্তিত্বই থাকত না। জব চার্নক হয়তো কলকাতার বদলে চট্টগ্রামের গভর্নর হিসেবে যাত্রা করতেন। এ যুগের কলকাতা বা চট্টগ্রামবাসী সম্ভবত ইংরেজের সেই চট্টগ্রাম অভিযানের ঘটনা জানে না। জানে না, কেননা পরবর্তীকালে ইতিহাসের ওই পর্বটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছিল। ইংরেজদের অতীত কেলেঙ্কারিগুলো আমাদের সমকালীন ইতিহাসে খুব অল্পই টিকে আছে। কলকাতার ইতিহাসের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হলেও সেই ঘটনাটি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার কলকাতার ইতিহাস অংশেও রাখা হয়নি। বরং সেখানে বলা হয়েছে Charnock had previously had disputes with officials of the Mughal Empire at the river port of Hugli (Hooghly) and had been obliged to leave, after which he attempted unsuccessfully to establish himself at other places down the river. শুনে আশ্চর্য হবেন যে ব্রিটানিকার…

"তোমরা ভাত খেয়ে খেয়ে কী ফুটবল খেলবে?" শুধু বাংলাদেশের ফুটবল নয়, পুরো বাংলাদেশের ইতিহাসের ৪৭-৭১ পর্বকে এই ছোট একটি বাক্যেই বেঁধে ফেলা যায় বোধহয়।

"তোমরা ভাত খেয়ে খেয়ে কী ফুটবল খেলবে?" শুধু বাংলাদেশের ফুটবল নয়, পুরো বাংলাদেশের ইতিহাসের ৪৭-৭১ পর্বকে এই ছোট একটি বাক্যেই বেঁধে ফেলা যায় বোধহয়। আরেক ফুটবলার মেজর জেনারেল নূরুন্নবী, আরেকটু খোলাসা করে বললেন, পাকিস্তান ফুটবল দলে কখনোই এক দুজনের বেশী বাঙ্গালীর জায়গা হয়নি, পূর্ব পাকিস্তানের খেলাধুলার বিস্তারে সরকারী ফান্ডিং ছিল না বললেই চলে। কিন্তু "তোমরা ভাত খেয়ে খেয়ে কী ফুটবল খেলবে?" জাকারিয়া পিন্টুর এই এক বাক্যে পুরো পাকিস্তান আমলের শোষণ, বঞ্চনা, জাতিগত বিদ্বেষ পুরোটাই উঠে আসে। ভাত খেয়ে খেয়ে ফুটবল খেলা চলে না, ক্রিকেট হয় না, যুদ্ধ করা যায় না, যোগ্য প্রশাসক হওয়া যায় না, কিছুই করা যায় না। কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে দেখা গেলো, ভাত খেয়ে খেয়েই সর্বাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত লাখখানেক সৈন্যের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধে হারিয়ে দেওয়া যায়। ১৯৭১ সালের পরপর ভাত খাওয়া এই জাতি কিস্যু করতে পারবে না, দেশি বিদেশি অনেক কুতুবই এমন কথা বলেছেন। কিন্তু ৭১ এর পরে এই অনেকগুলো বছর বাদে পেছনে ফিরে দেখা যাচ্ছে ভাত খেয়ে খেয়ে অনেক কিছুই অর্জন করা হয়েছে, জাতি হিসাবে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে ভাত খাওয়াটা কোন বাধা হবে না বলেই মনে হচ্ছে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল কোন সাধারণ দল নয়, 'খেলার সাথে রাজনীতি' মেশানো দল। কলকাতা কেন্দ্রিক বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের নেতৃবৃন্দ তাঁদের অসামান্য দূরদর্শিতার কারণে যুদ্ধকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ফুটবলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের পরিকল্পনা করেন। শুধু জনমতই নয়, ফুটবল খেলে যুদ্ধের জন্য টাকাও জোগাড় করতে হবে। ভারতে চলে আসা খেলোয়াড়রা তো বটেই, ঢাকায় থেকে যাওয়া খেলোয়াড়দেরও উদ্বুদ্ধ করে নিয়ে আসা হয়। কাজী সালাউদ্দিন, বাংলাদেশের একমাত্র সুপারস্টার ফুটবলার, ৭১ এ কিশোর বয়সী ছিলেন, তিনি নিজের উদ্যোগেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারতে গিয়ে এই দলে যোগ দেন। https://www.youtube.com/watch?v=8AGtkIfjrFI স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল বিষয়ক এই তথ্যচিত্রটির অন্যতম নির্মাতা জনাব আবু নঈম মাহতাব মোর্শেদ এবং সঙ্গীত পরিচালক জনাব আলমগীর কবির আমার বাল্যবন্ধু। তাঁরা কোনরকম ধারাভাষ্য ছাড়া শুধুমাত্র সাক্ষাৎকার, মুক্তিযুদ্ধের কিছু স্টক ফুটেজ আর স্থিরচিত্র ব্যবহার করে মাত্র বিশ মিনিটের মাঝে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ঐতিহাসিক পটভূমি এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড যেভাবে তুলে এনেছেন, সেটা বেশ বাহাদুরির ব্যাপার। "তোমরা ভাত খেয়ে খেয়ে কী ফুটবল খেলবে?" অথবা "ওরা যদি…

বইটির সম্পদ হল ত্রয়োদশ অধ্যায় Engagement with the National Struggle থেকে সপ্তদশ অধ্যায় Fulfilment: The Liberation of Bangladesh যেখানে আইয়ুব যুগের অবসান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম ইংরেজি নববর্ষ যাপন পর্যন্ত এক বুদ্ধিজীবী মুক্তিযোদ্ধা রেহমান সোবহানের কথা সবিস্তারে বলা হয়েছে [...]

পুরনো বইপ্রস্থ বইপ্রস্থ ২৫ আগস্ট ২০০৯ বইপ্রস্থ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বইপ্রস্থ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ বইপ্রস্থ ২৬ জুন ২০১২ বইপ্রস্থ ২৩ এপ্রিল ২০১৩ বইপ্রস্থ ১৮ নভেম্বর ২০১৩ বইপ্রস্থ ১১ মে ২০১৪ বইপ্রস্থ ৫ নভেম্বর ২০১৫ বইপ্রস্থ ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ বইপ্রস্থ ১২ মার্চ ২০১৬ বইপ্রস্থ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ স্বাধীনতা অর্জনের স্মৃতি UNTRANQUIL RECOLLECTIONS, The Years of Fulfilment ।। Rehman Sobhan ।। প্রকাশক : SAGE India ।। মূল্য : ভারতীয় টাকা ৮৯৫ (হার্ডকভার) ও ৪৫০ (পেপারব্যাক) চৈতন্য ও বঙ্গভঙ্গ বিষয়ে পড়তে থাকা বেশ কয়েকটি বই ফেলে রেখেই গত বছরের একটা তাজা ইংরেজি বই নিয়ে পড়তে বসে গেলাম, বইটি পড়া শেষ করতে পারব কিনা জানা ছিল না, কারণ আজকাল অনেক বই পড়তে শুরু করে আর শেষ করা হয় না, এবং তুলনামূলকভাবে এটা ইংরেজি বইয়ের সাথেই বেশি হয়, ফলে বইটি শেষ করার আগ পর্যন্ত একটা অস্বস্তি ছিল কারণ বইটি পড়তে শুরু করার পরপরই মনে হয়েছিল বইটি নিয়ে একটা 'বইপ্রস্থ' লিখব এবং যদিও এটা সম্ভব বইটি পুরো না পড়েও কিছু একটা লেখা তারপরও যেহেতু এখনো পর্যন্ত কোনো বই পুরো না পড়ে একটাও 'বইপ্রস্থ' লিখিনি তাই বইটি পড়ে শেষ করতে পেরে আমি 'বইপ্রস্থ' লিখতে বসে গেছি, যদিও আমার ডান হাতটি সাম্প্রতিক এক দুর্বৃত্তায়নের শিকার হয়ে এখনো লেখার উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। রেহমান সোবহান সবদিক থেকেই একজন অভিজাত ব্যক্তি, তার শিক্ষার পরিসরটা ভারত পাকিস্তান ইংল্যান্ড জুড়ে যেখাতে বয়েছে সেটাও তার পরবর্তী জীবনের একটা ছক তার আয়ত্তাধীন করেছে, এবং বইটি পড়তে পড়তে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করা নেই এরকম একজন মানুষের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক গুরুত্বে অভিষিক্ত হওয়াকে আমার খুব চমকপ্রদ কাহিনি মনে হয়েছে, সেসাথে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের প্রেক্ষাপট মিলে এই চমকপ্রদ কাহিনিকে অসাধারণের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এবং তার জীবনের তাৎপর্য ওই অর্থে আরো বেড়ে গেছে যখন পাঠক শুরুতেই জেনেছেন তিনি একজন উর্দুভাষী আর বাংলাদেশের সন্তান নন তিনি ১৯৫৭ সালে ঢাকায় অধিবাস শুরু করেছিলেন। যেকারণে রেহমান সোবহান সবচেয়ে পরিচিত 'দুই অর্থনীতি' ও '৬ দফা' এদুটি প্রসঙ্গে সাধারণ জ্ঞান অর্জনের জন্যও এই বইটিই আমি পড়তে বলব, অনেকে অবশ্যই এদুটি বিষয়ে তার প্রবন্ধ ও সাংবাদিক রচনা পড়বেন কিন্তু আমি নিজে সেসবের চেয়ে তার এই আত্মস্মৃতি…

পঞ্চমীর চাঁদ তখনো ডুবে যায়নি। তার আলোয় প্রথম যা নজরে পড়লো তা একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেলের নল। শীতের ঠাণ্ডা এখন স্বস্তিদায়ী। তারপরও নদীর খোলা হাওয়ায় একটু শীত অনুভব করি আমরা। আমরা যে নৌকাটিতে উঠেছি তা ঠিক সাম্পান নয়। যদিও নাফ নদীতে প্রায় সব নৌকাই ছই তোলা সাম্পান। এ নৌকাটি ছিপ নৌকার মত। লম্বা ও খোলা। তার দু’পাশে দু’জন করে চারজন যুবক বৈঠা নিয়ে বসেছিল। নৌকার পাটাতনে বিছানো ছিল রাইফেলটি। মোক্তারের নির্দেশে ঐ যুবকেরা আমাদের ব্যাকপ্যাকগুলো এমনভাবে গুছিয়ে রাখছিল যাতে নৌকার ভারসাম্য ঠিক থাকে। আমরা পনের জন যুত হয়ে বসেছি। নৌকা চলতে শুরু করেছে। সঁপাসপ বৈঠা পড়ছে। নাফ নদীর নোনা পানি কেটে নৌকা চলছে তীরবেগে। জামার সাইড পকেটে হাত ঢোকাল মোক্তার। তারপর বের করা হাত যখন মেলে ধরল, তখন চাঁদের আলোয় পাঁচটি বুলেট চকচক করে উঠল। আমরা চলেছি অজানা গন্তব্যে। মোক্তার আমাদের গাইড। সুঠাম চার যুবকের আটটি হাতের ছন্দময় আন্দোলনে নৌকা এগিয়ে চলেছে। সাম্পানের গতি মন্থর। আমাদের এপারে যেমন আছে ই পি আর ঠিক তেমনি ওপর পারে সীমান্তরক্ষী নাসাকা বাহিনী। দ্রুত গতির গানবোট আছে তাদের। ওদের দৃষ্টি এড়িয়ে ওপারে পৌঁছাতে হবে। এই নিশুথি রাতে লম্বা ছিপ নৌকা বেছে নেয়ার কারণটি বোঝা গেল। খোলা রাইফেল ও তাজা বুলেট কেন দেখালো মোক্তার? তা কি একথা বোঝাতে যে আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অস্ত্র আছে আমাদের সাথে। না কি আমাদের মনে ভয় সঞ্চার করা তার উদ্দেশ্য? টেকনাফ বাজারের পশ্চিমে পাহাড় পেরিয়ে মোক্তারের বাড়ি। আমাদের নিয়ে যাচ্ছে আরাকানে। চার যুবকের সাথে তার কথোপকথন আমরা সামান্যই বুঝতে পারি। তবে আমাদের সাথে যখন সে কথা বলে, তখন তা ভিন্ন। ঠিক চট্টগ্রামেরও নয়। পনের জনের এই দলে সাঈদ ভাই ও আমি চট্টগ্রামের ভাষা বেশ বুঝতে পারি। আমাদের স্কুল জীবনের একটা সময় কেটেছে মিরেশ্বরাই স্টেশনে। তবে মোক্তারের কথা অন্যেরাও বুঝতে পারে। মোক্তার বহু জায়গা ঘুরেছে। শুনেছে নানা ভাষা। সবার বোধগম্য করে কথা বলার কায়দাটি সে ভালই রপ্ত করেছে। আমরা যখন ওপারে পৌঁছেছি, তখন চাঁদ প্রায় ডুবে গেছে। আরও যুবকদের আমরা অপেক্ষমাণ দেখি। মোক্তারের নির্দেশে ওরা টপাটপ ব্যাকপ্যাকগুলো মাথায় উঠিয়ে নেয়। ওদের সাথে মোক্তারের স্বল্প বাক্যবিনিময় আমরা ধরতে পারি…

"আপনাদের বাচ্চারা থাকবে মাটির কাছাকাছি, তারা মাটির গন্ধ নিয়ে বড় হবে।" বেশ কয়েক বছর আগে, একটি আধুনিক ইংরেজি কেজি স্কুলের উদ্বোধনীতে আমাদের বিখ্যাত এক কবি ও সাংবাদিক বলেছিলেন কথাগুলো, শিশুদের দেশের মাটি ও সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়া প্রসঙ্গে। আমি ঠাট্টাচ্ছলে প্রতিবাদ করলাম, "এটা কি বললেন, স্যার! আমাদের বাচ্চারা কি চাষা হবে নাকি, তারা কেন মাটি কাদা নিয়ে পড়ে থাকবে? দোয়া করেন, তারা যেন আপনার সন্তানদের মতো নু'ইয়র্ক, টরোনটো-তে থাকতে পারে।" আমার লুম্পেন মধ্যবিত্ত টাইপ কথা শুনে তিনি কিছু না বলে হতাশ হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। [...]

"আপনাদের বাচ্চারা থাকবে মাটির কাছাকাছি, তারা মাটির গন্ধ নিয়ে বড় হবে।" বেশ কয়েক বছর আগে, একটি আধুনিক ইংরেজি কেজি স্কুলের উদ্বোধনীতে আমাদের বিখ্যাত এক কবি ও সাংবাদিক বলেছিলেন কথাগুলো, শিশুদের দেশের মাটি ও সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়া প্রসঙ্গে। আমি ঠাট্টাচ্ছলে প্রতিবাদ করলাম, "এটা কি বললেন, স্যার! আমাদের বাচ্চারা কি চাষা হবে নাকি, তারা কেন মাটি কাদা নিয়ে পড়ে থাকবে? দোয়া করেন, তারা যেন আপনার সন্তানদের মতো নু'ইয়র্ক, টরোনটো-তে থাকতে পারে।" আমার লুম্পেন মধ্যবিত্ত টাইপ কথা শুনে তিনি কিছু না বলে হতাশ হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। http://www.flickr.com/photos/27671489@N04/12463928315/ দেশ জাতি মাতা ভাষা নিয়ে যারা বেশী সোচ্চার, যারা এই ভাষা সংস্কৃতির ধারক বাহক, তারা এবং তাদের ছেলেমেয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আধুনিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত এবং সমস্ত সুবিধা নিয়ে তারা দেশ বা দেশের বাইরে থাকেন। আর আমরা তাদের মন ভুলানো কথায় দেশ-মাটি-ভাষা নিয়ে পড়ে থাকি। আবার দিন শেষে দেখা যায়, আমরা যখন কষ্ট করে মাঠে হাল চাষ করে ফসল তুলে ঘরে তুলবো, তখন তারা জমিদারের মতো বিদেশ থেকে এসে আমাদের অবস্থান বা অবদানগুলো কেড়ে নিয়ে দেশ ও দশের নেতৃত্ব দেয় । কারন, তারা বিদেশী শিক্ষায় শিক্ষিত, তারা দশের মাথা ও অতুলনীয়! তাদের সাথে থাকে বিদেশী যোগাযোগ, যা তাদের আমাদের উপর রাজত্ব বিস্তারে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। আমরা সারা বছর এই দেশের হাটে মাঠে ধুলোয় কাদায় চড়ে ক্লান্ত এবং দিন শেষে তাদের দার্শনিক শেকলে অতঃপর বন্দি হই। আমাদের সন্তানেরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সেই মাঠে পড়ে থাকে, রাস্তায় গুলি-বোমা খায় - খেয়ে চলে। রাষ্ট্র আমদের সন্তানদের নিশ্চয়তা বিষয়ে উদাসীন। খুব বেশি শোনা যায় না, রাস্তায় বুদ্ধিজীবীদের, রাজনীতিবিদদের, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ছেলেমেয়েরা গুলি খেল, ককটেল খেল। তারা এসব থেকে অনেক দূরে, শুধু ফসল তোলার সময় হাজির হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক - বুদ্ধিজীবীরা ঠিকই জানেন উচ্চশিক্ষার জন্য ইংরেজি জানা কেমন দরকারি । তারা নিজ সন্তানদের ঠিকই তা বুঝিয়ে দেন, কিন্তু চাষা,মজুর, খেটে খাওয়া লোকদের সন্তানদের তারা উপেক্ষা করেন। অনেকক্ষেত্রে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ গুলো নিতে দেন না। পরামর্শ তো দেন না, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল পথে পরিচালনা করেন। এদের ছেলেমেয়েরাও বিদেশের মাটিতে নিজেদের বাচ্চাদের টুংটাং বাংলা ছড়া আর দেশাত্মবোধক…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.