টাইগার হিলে সূর্যোদয়

টাইগার হিলের পথ ধরে যাচ্ছি। কত উপরে সমতল থেকে আমরা? আমাদের নিচে কয় পাহাড়ের বসতি? আকাশ জুড়ে নক্ষত্রের অজস্র ফুল। [...]

ভোর। তখনও অন্ধকার রাতের মতো। শ্রেষ্ঠা লজ-এর কিশোর আকমল আমাদের জাগাতে এল। নিচে অপেক্ষা করছে লজ-এর ভাড়া-করা জিপ। লেপের মায়া ছেড়ে দ্রুত তৈরি হয়ে আমরা ছুটলাম সূর্যোদয় দেখবো বলে। দেখতে কি পাবো? লতা মুঙ্গেশকরের সেই যে গান “টাইগার হিল থেকে সূর্য দেখা ভীষণ মজার/ সোনার থালায় ভরে,আবীর গুলাল নিয়ে/ফাগু আর ফাগ খেলা খেলতে খেলতে নাকি সূর্য আসে…,/ টাইগার হিল থেকে সূর্য ওঠা দেখা হলো না সে-বার…” — সেই টাইগার হিলের পথ ধরে যাচ্ছি। কত উপরে সমতল থেকে আমরা? আমাদের নিচে কয় পাহাড়ের বসতি? আকাশ জুড়ে নক্ষত্রের অজস্র ফুল। যেন হাত পাতলেই টুপটাপ ঝরে পড়বে হাতে। কিন্তু না,পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে পাইনের সারি রাতপ্রহরী হয়ে জেগে আছে। তাদের প্রহরার মাঝে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ধরে হিমশীত সাথে করে পৌঁছে গেলাম আমরা টাইগার হিল। অন্ধকার চিরে একটু একটু করে কীভাবে ফুটে উঠে আলোর রেখা, দেখা হলো সেই প্রথম।
Tiger Hill

Tiger-Hill-(1)

Tiger Hill (2)

Tiger Hill (3)

Tiger Hill (4)

Tiger Hill (5)

Tiger Hill (6)

Tiger Hill (61)

Tiger Hill (7)

Tiger Hill (8)

Tiger Hill (9)

Tiger Hill (10)

Tiger Hill (11)

Tiger Hill (12)

Tiger Hill (13)

Tiger Hill (14)

Tiger Hill (15)

Tiger Hill (16)

Tiger Hill (17)

Tiger Hill (18)

আসমা বীথি

সম্পাদিত ছোটকাগজ : ঘুড়ি। দৈনিকে কাজ করি। কবিতা লিখি।

২৩ comments

  1. কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৬ নভেম্বর ২০০৯ (১১:২৬ অপরাহ্ণ)

    তীব্র-তীক্ষ্ণ অন্ধকারের হৃদয় ফুঁড়ে ক্রমাগত আলোর নাচনের মুখোমুখি হই আমরা। কুসুম আবৃত মায়া যেন হুলস্থূল ফেলে দেয়। খুবই স্পষ্ট তার বিচ্ছুরণ, আলোর এই সৌন্দর্য যেন স্পর্শ করা যায়। এমন মাধুর্যের মায়ায় ফেলার জন্য আসমা বীথিকে শুভেচ্ছা।

    • আসমা বীথি - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (৯:৪৯ অপরাহ্ণ)

      আপনাকেও শুভেচ্ছা, এমন বাক্যে সুন্দরের অনুভূতি ব্যক্ত করার জন্য।

  2. বিনয়ভূষণ ধর - ৭ নভেম্বর ২০০৯ (১১:২৫ পূর্বাহ্ণ)

    বীথি! তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমার লেখা ও ছবির মাধ্যমে টাইগার হিলে সূর্যোদয়ের বর্ণনা দেয়ার জন্যে…

    • আসমা বীথি - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (৯:৫১ অপরাহ্ণ)

      পড়া এবং দেখার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

  3. মাসুদ করিম - ৭ নভেম্বর ২০০৯ (১:১১ অপরাহ্ণ)

    ভাবছিলাম ফটোব্লগ বুঝি বিলুপ্তই হয়ে গেল, ভাল লাগছে — না, নির্মাণব্লগে ফটোব্লগ আছে। ব্লগে খুব একটা ঘোরাঘুরি করি না, কিন্তু তথ্যের দিক থেকে এ মনে হয় সত্য বাংলা ফটোব্লগ নির্মাণব্লগের আগে আর কোনো ব্লগে হয়তো হয়নি, এবং এখনো হয়তো নির্মাণব্লগেই হয়।

    আসমা বীথিকে
    টাইগার হিল কি কাঞ্চনজঙ্ঘায়? আমার ঠিক জানা নেই! আর ক্যামেরা কি মোবাইল না ডিজিটাল? আর মডেল নাম্বার? জানাতে পারলে ভাল, তাতে ফটোব্লগের তথ্যভাষ্য সম্পূর্ণ হয়।

    • রায়হান রশিদ - ৭ নভেম্বর ২০০৯ (৭:০০ অপরাহ্ণ)

      @ আসমা বীথি,
      অনেক ধন্যবাদ। টাইগার হিলের কথা আপনার পোস্ট পড়ার আগ পর্যন্ত জানা ছিল না। এখন আরও জানতে ইচ্ছে করছে। শুরুর চমৎকার ছোট্ট ভূমিকাটুকু ভাল লেগেছে, আরও পড়তে ইচ্ছে করছিল যদিও। ছবিগুলোর প্রথম দু’তিনটায় নিকষ অন্ধকার দেখে প্রথমটায় ভুল হয়েছিল কোন কারিগরি সমস্যা ভেবে। আরেকটু স্ক্রল করে নামার পরই ভুল ভাঙলো। বুঝলাম এটাই আসলে উদ্দেশ্য ছিল, ধীরে ধীরে টাইগার হিলের সূর্যোদয়ের গল্প সবার সাথে ভাগাভাগি করা।
      আবারও ধন্যবাদ।

      @ মাসুদ ভাই,
      মাঝে মাঝে বেশ কিছু ভাল ফটোব্লগ চোখে পড়ে। মুক্তাঙ্গন ছাড়াও অন্যরাও করছে। সামনে থেকে তেমন ভাল কিছু পেলে এখানে ‘আজকের লিন্ক’ এ দেয়ার চেষ্টা করবো।

      • আসমা বীথি - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (৯:৪৩ অপরাহ্ণ)

        @ রায়হান রশিদ,
        যবনিকা উন্মোচনের মতো মোহময় যাদুর ক্ষমতা হাতে থাকলে অবশ্যই লিখে ফেলতাম ৬ দিনের সেই অচেনা দিন-যাপনের বৃত্তান্ত। তবু যে ভাল লেগেছে আপনার, এ-জন্য আনন্দ অনুভব করছি। ধন্যবাদ।

    • আসমা বীথি - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (৯:২২ অপরাহ্ণ)

      টাইগার হিল দার্জিলিং শহর থেকে খুব সম্ভব ৮০০ ফুট ওপরে। আর দার্জিলিং সমতল থেকে প্রায় ৯ হাজার ফুট ওপর।কাঞ্চনজঙ্ঘা হিমালয়ের একটি চূড়া,চূড়াটি টাইগার হিল থেকে ভাল দেখা যায়। আর ক্যমেরা ডিজিটাল,সনি ৬.০ মেগা পিক্সেল। যদিও ব্যটারির চার্জ দ্রুতই ফুরিয়ে যেত ক্যমেরাটির, কয়েকবার মেরামতের পরও।

      • আসমা বীথি - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (৯:৩৩ অপরাহ্ণ)

        নাম লিখতে ভুলে গেছি। উত্তরটি মাসুদ করিমের উদ্দেশ্যে।

  4. আহমেদ মুনির - ৭ নভেম্বর ২০০৯ (৪:৪৭ অপরাহ্ণ)

    হিমালয় আর তার ভোর আমাকে যেন ডাকছে । ছবি যার এত সুন্দর তার আসল রূপ কেমন? বীথিকে ধন্যবাদ।

    • আসমা বীথি - ১১ নভেম্বর ২০০৯ (১০:৪৩ অপরাহ্ণ)

      @ আহমেদ মুনির,
      হিমালয়ের একটি ছবিরূপ দেখানোর ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মন্তব্যের ঘরে ছবি বোধহয় পোস্ট করা যায় না। মানে আমি চেষ্টা করে পারিনি।

      • মাসুদ করিম - ১২ নভেম্বর ২০০৯ (৮:১৪ পূর্বাহ্ণ)

        সবচেয়ে ভাল হয় যদি হিমালয়ের ছবিরূপ নিয়ে আরেকটি ফটোব্লগ/ভ্রমণব্লগ করতে পারেন।

  5. মুয়িন পার্ভেজ - ৮ নভেম্বর ২০০৯ (১:২৪ পূর্বাহ্ণ)

    অনেকদিন ধ’রে ভাবছিলাম, ‘ফটোব্লগ’-এর কৃশতামোচন করা গেলে ভালো হত। আসমা বীথির সৌজন্যে টাইগার হিলের টাটকা কিছু ছবি পেলাম। ক্রমশ ফুটে ওঠা ভোরের আলোর সঙ্গে যেন মিশে আছে যবনিকা-উন্মোচনের জাদু; দেখতে দেখতেই মনে এল কবুতরছানার কথা — একটু একটু ক’রে তার চোখ ফোটে, ডানার লোম বাড়ে। ভাবছিলাম, সূর্যোদয়ের এই সৌষ্ঠব কি কাছের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকেও উপভোগ করা যায়? বা বান্দরবানের মেঘলা থেকে?


    ‘টাইগার হিল্-এ সূর্যোদয়’ নামেরই একটি কবিতা আছে বুদ্ধদেব বসুর, নতুন পাতা কাব্যে। বুদ্ধদেব টাইগার হিল দেখেন ৮ অক্টোবর ১৯৩৮ তারিখে (কবিতার পঙ্‌ক্তিতেই স্পষ্টভাবে উল্লেখিত), কবিতাটি লিখেছেন দু’দিনের মাথায় — ১০ অক্টোবর। আসমা বীথিরও টাইগার হিল দেখা সম্ভবত অক্টোবরের শেষ নাগাদ। কাকতালীয় যোগাযোগ, বলা যায়! একাত্তর বছর আগের টাইগার হিলের সঙ্গে কী-কী মিল-অমিল পাওয়া যায় এখন? না কি কিছুই নয়, ‘সহস্র রাত্রি ধ’রে একই ভঙ্গির অভিনয় ক’রে-ক’রে ক্লান্ত’ টাইগার হিলের সূর্যোদয়?

    টাইগার হিল্-এ সূর্যোদয়

    প্রেক্ষাগৃহ প্রস্তুত।
    চাঁদ ক্লান্ত চক্রমণের শেষে
    আকাশে উষার নিঃশ্বাস কাঁপে তারায়-তারায়।
    বিচিত্র শীতবস্ত্রে মোড়া
    দেড়শো কি দু-শো স্ত্রীপুরুষ আজকের দর্শক।
    ঘেঁষাঘেঁষি ঠেসাঠেসি,
    নানা ভাষার নানা সুরের বলাবলি।
    কেবল ছবিওয়ালারা
    ওৎ পেতে গুপ্ত চক্ষু খুলে চুপ।
    কিছুতেই ঠিক মুহূর্তটিকে ফসকাতে দেবে না,
    তক্ষুনি কয়েদ করবে ক্যামেরার কামরায়।

    কোনো ক্লান্ত-পাখির স্তব্ধতার মতো
    নীল-কালো একখানা মেঘের উপরে
    লাল রেখা ফুটেছে অনেকক্ষণ।
    আর কতক্ষণ? আর কতক্ষণ?
    দর্শক মহলে চঞ্চলতা।
    এ কি ফাঁকি? না কি বুজরুকি? কোথায়
    সূর্য? এরই জন্যে এই শীতে এলুম নাকি?
    আরে দাঁড়াও, এক্ষুনি দেখবে।
    পিছনে চোখ রেখো, দেখছো এভারেস্ট?
    কাঞ্চনজংঘা কী গ্র্যাণ্ড!
    But is it worth while, after all?
    একটি বাঙালি মহিলা ফিরঙ্গ ইংরিজি ছিটোচ্ছেন,
    ভুরু পেন্সিলে আঁকা, মুখে রং।

    প্রতীক্ষা ও পয়সা,
    ভাঙা ঘুম আর বুক-ভাঙা পাহাড়ে চড়।
    একেবারে ব্যর্থ হ’লো না।
    সূর্য উঠলো।
    সহস্র রাত্রির পরেও দর্শকরা চির উৎসুক
    এমনি ওস্তাদ নট।
    সহস্র রাত্রি ধ’রে একই ভঙ্গির অভিনয় ক’রে-ক’রে
    ক্লান্ত, তবু নিখুঁত নিপুণ।
    তাই আজ ৮ অক্টোবর, ১৯৩৮-এও
    নীল পাহাড়ের আড়াল থেকে
    আগুনের ঘোড়ার মতো লাফাতে-লাফাতে
    সূর্য উঠে এলো।

    ক্লিক ক্লিক ক্লিক,
    ক্যামেরার অরণ্যের মর্মর,
    দর্শকদের বাহবা।
    কড়ি ও কোমলে উল্লাসধ্বনি,
    দ্যাখো দ্যাখো দেখলে!
    Oh how lovely! Really wonderful!
    ফিরঙ্গ ইংরিজির উচ্ছ্বাস।
    কিছুই বাদ পড়েনি :
    উত্তর থেকে পশ্চিম তুষারের চূড়ায়-চূড়ায় আগুন,
    মেঘের কালো-নীল শরীরে রামধনু-রং,
    পয়সা উশুল, সার্থক ক্লেশ।
    দিনের স্পষ্ট আলোর রং-মাখা মুখ শবের মতো।

    …সূর্যদেব, তবু কি তোমাকে উঠতে হ’লো,
    আজো কি তোমাকে উঠতে হ’লো,
    বিশ্বের নিয়ম কি এতই নিষ্ঠুর নির্ভুল?
    কিছুতেই তার ব্যতিক্রম নেই
    কোনোদিন?
    হে সূর্য, হে তুষারশ্রেণী, উপত্যকায় ময়ূরকণ্ঠী মেঘ,
    প্রকৃতির অলঙ্ঘ্য নিয়মে বন্দী ব’লে
    মানুষের বাহবারও কি ক্রীতদাস তোমরা?
    না কি সত্যিই তোমরা সুদূর,
    সত্যিই সম্পূর্ণ ও নিস্পৃহ,
    কালের খেলাঘরে চিরকাল নিঃসঙ্গ?
    এই ক্যামেরা-কণ্টকিত প্রগল্‌ভ জনারণ্য
    কখনোই তোমাদের জানে না?

    ১০ অক্টোবর ১৯৩৮

    (কবিতাসংগ্রহ, প্রথম খণ্ড, নরেশ গুহ-সম্পাদিত, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, তৃতীয় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃ. ২৪৭-২৪৯)

    কেতকী কুশারী ডাইসন-কৃত একটি ইংরেজি-অনুবাদ পাওয়া যাবে এই কবিতার, এখানে। কেতকীর একটি অনুবাদগ্রন্থও (The Selected Poems of Buddhadeva Bose) আছে বুদ্ধদেবের কবিতা নিয়ে।

    ধন্যবাদ, আসমা বীথি।

    • আহমেদ মুনির - ৮ নভেম্বর ২০০৯ (১:১২ অপরাহ্ণ)

      বীথির অনুচ্চারিত অনুভূতির বয়ান যেন পেলাম বুদ্ধদেব বসুর ‘টাইগার হিল্-এ সূর্যোদয়’ কবিতায়। এমন অসাধারণ কবিতাটি আগে পড়িনি। মুয়িনকে ধন্যবাদ ।

      • মুয়িন পার্ভেজ - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (১২:১৮ পূর্বাহ্ণ)

        আহমেদ মুনির

        বীথির অনুচ্চারিত অনুভূতির বয়ান যেন পেলাম বুদ্ধদেব বসুর ‘টাইগার হিল্-এ সূর্যোদয়’ কবিতায়।

        অন্যজনের ‘অনুচ্চারিত অনুভূতির বয়ান’ কীভাবে অনুসন্ধান করা গেল তা বোধগম্য নয় (আধ্যাত্মিক সাধনা হলে বলার কিছু নেই)। টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখে বীথির কী অনুভূতি হয়েছিল, তার অন্তত ব্যক্ত রূপটি তো ভূমিকাতেই স্পষ্ট — মুগ্ধতা ও বিস্ময়ের সরল উদ্বোধন। আর বুদ্ধদেবের কবিতা শুরুই হয়েছে ‘প্রেক্ষাগৃহ’-এর রূপকে — সৌন্দর্য-উপভোগের প্রক্রিয়া যেন এক শুকনো গতানুগতিক আড়ম্বরে বাঁধা, ‘প্রতীক্ষা ও পয়সা’ যেখানে জড়াজড়ি ক’রে আছে; ‘ক্যামেরা-কণ্টকিত প্রগল্‌ভ জনারণ্য’-এ দাঁড়িয়ে কবি ভাবছেন, ‘সহস্র রাত্রি ধ’রে একই ভঙ্গির অভিনয় ক’রে-ক’রে ক্লান্ত’ এই সূর্যোদয়। প্রসঙ্গত মনে পড়ে এ-কবিতারই সমীপবর্তী বুদ্ধদেবের ‘চিল্কায় সকাল’-এর কথা; আগ্রহী পাঠকদের জন্য তুলে দিচ্ছি কবিতাটি, নতুন পাতা কাব্য থেকে :

        চিল্কায় সকাল

        কী ভালো আমার লাগলো আজ এই সকালবেলায়
        কেমন ক’রে বলি।

        কী নির্মল নীল এই আকাশ, কী অসহ্য সুন্দর,
        যেন গুণীর কণ্ঠের অবাধ উন্মুক্ত তান
        দিগন্ত থেকে দিগন্তে :

        কী ভালো আমার লাগলো এই আকাশের দিকে তাকিয়ে;
        চারদিক সবুজ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা, কুয়াশায় ধোঁয়াটে,
        মাঝখানে চিল্কা উঠছে ঝিলকিয়ে।

        তুমি কাছে এলে, একটু বসলে, তারপর গেলে ওদিকে,
        ইস্টিশনে গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে, তা-ই দেখতে।
        গাড়ি চ’লে গেলো। — কী ভালো তোমাকে বাসি,
        কেমন ক’রে বলি।

        আকাশে সূর্যের বন্যা, তাকানো যায় না।
        গোরুগুলো একমনে ঘাস ছিঁড়ছে, কী শান্ত!
        — তুমি কি কখনো ভেবেছিলে এই হ্রদের ধারে এসে আমরা পাবো
        যা এতদিন পাইনি?

        রুপোলি জল শুয়ে-শুয়ে স্বপ্ন দেখছে, সমস্ত আকাশ
        নীলের স্রোতে ঝ’রে পড়ছে তার বুকের উপর
        সূর্যের চুম্বনে। — এখানে জ্ব’লে উঠবে অপরূপ ইন্দ্রধনু
        তোমার আর আমার রক্তের সমুদ্রকে ঘিরে
        কখনো কি ভেবেছিলে?

        কাল চিল্কায় নৌকোয় যেতে-যেতে আমরা দেখেছিলাম
        দুটো প্রজাপতি কত দূর থেকে উড়ে আসছে
        জলের উপর দিয়ে। — কী দুঃসাহস! তুমি হেসেছিলে, আর আমার
        কী ভালো লেগেছিলো

        তোমার সেই উজ্জ্বল অপরূপ সুখ। দ্যাখো, দ্যাখো,
        কেমন নীল এই আকাশ — আর তোমার চোখে
        কাঁপছে কত আকাশ, কত মৃত্যু, কত নতুন জন্ম
        কেমন ক’রে বলি।

        ১১ নবেম্বর ১৯৩৪

        (কবিতাসংগ্রহ, প্রথম খণ্ড, নরেশ গুহ-সম্পাদিত, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, তৃতীয় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃ. ২৪৩-২৪৪)

        আগামীকালই ১১ নভেম্বর — ‘চিল্কায় সকাল’ কবিতার বয়স পঁচাত্তর পূর্ণ হবে!

        • আসমা বীথি - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (১১:৫০ অপরাহ্ণ)

          ৫.১ ও ৫.১.১ এর প্রত্যুত্তরে–
          @ আহমেদ মুনির @ মুয়িন পার্ভেজ
          এটি একটি ফটোব্লগ, কবিতা বা ভ্রমণ বৃত্তান্ত নয়। অনুভূতি যেটুকু ব্যক্ত হয়েছে ফটোব্লগের প্রয়োজনীয়তায়। বুদ্ধদেব বসুর কবিতা আর ফটোব্লগের ভূমিকা দুটো নিশ্চয় ভিন্ন ব্যাপার!

        • আহমেদ মুনির - ১১ নভেম্বর ২০০৯ (১:০৩ অপরাহ্ণ)

          মুয়িন
          কথাটা ওভাবে বলিনি । এ নিয়ে তর্ক করার ইচ্ছেও নেই । আমি অনেক বিষয়েই কম জানি ,স্বীকার করছি । ভবিষ্যতে সতর্ক হব । আপনার পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলোচনা থেকে অনেককিছু শিখলাম । ভুল কিছু বলে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন ।

        • রায়হান রশিদ - ১৯ নভেম্বর ২০০৯ (৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ)

          @ মুয়িন পার্ভেজ,

          অন্যজনের ‘অনুচ্চারিত অনুভূতির বয়ান’ কীভাবে অনুসন্ধান করা গেল তা বোধগম্য নয় (আধ্যাত্মিক সাধনা হলে বলার কিছু নেই)। টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখে বীথির কী অনুভূতি হয়েছিল, তার অন্তত ব্যক্ত রূপটি তো ভূমিকাতেই স্পষ্ট — মুগ্ধতা ও বিস্ময়ের সরল উদ্বোধন।

          বিষয়টি মনে হয় অহেতুক একটু জটিল করা হল, বিনীত মত।

    • আসমা বীথি - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (১১:২০ অপরাহ্ণ)

      @ মুয়িন পার্ভেজ,
      কোথাও পড়েছিলাম, প্রদীপের আলো তারার আলো এরা নিজেদের অপ্রধান রেখে আলো দেয়ার রহস্য জানে, বিদ্যুতের আলো যাকে মানুষ ঘরে আনল সে এ-রহস্য জানে না। সেই অসুন্দর আলো-কে সুন্দর দেখবার জন্য মানুষ তার উপরে নানারকম ঘোমটা পরিয়ে দিয়ে চলেছে।
      বুদ্ধদেব বসু সূর্যোদয় দেখতে গিয়ে চারপাশে এই ঘোমটা পরাবার যজ্ঞে বিতশ্রদ্ধ হয়েই সম্ভবত কবিতাটি লিখেছিলেন। কিন্তু এই যজ্ঞ ছিল বলেই না তিনি বানাতে পারলেন একটি প্রেক্ষাগৃহ; যেখানে বিভিন্ন রুচির দর্শক আছে, আছে ওস্তাদ নট সূর্য, গুপ্তচক্ষু সমেত ক্যামেরাম্যান। আমরা পেলাম ‌‌টাইগার হিলে সূর্যোদয় নামক পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র।
      আবার পর্দার অন্তরালে সাড়ম্বরের বাইরে আকাশে উষার নি:শ্বাসের কম্পন, মেঘের কালো নীল শরীরের রামধনু রঙ দেখলো কে?
      কালের খেলাঘরে চিরটিকাল যে নি:সঙ্গ সূর্য, সেই নি:সঙ্গতার অনুভব; বাহবা-হাততালির কাছে কৃতদাস হয়ে পড়বার যাতনা এ-কার অনুভূতি?
      এই অনুভূতিটাই প্রত্যেকের আসল, স্বতন্ত্র, একেকরকম এবং প্রতিবার নতুন। এই নতুনের স্পর্শ স্হিরচিত্রে আর কতটা মেলে;অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিন্তু বলেছেন ফটোগ্রাফের যে কৌশল তা বস্তুর বাইরেটার সঙ্গেই যুক্ত।
      বিশ্বপ্রকৃতির ঔদার্য পায়ের পাতা স্পর্শ না করলে সব দেখাই হয়তো নিরর্থক। তার মানে আবার এই নয় সেই প্রকৃতির খেঁাজে কাউকে ভিক্টর হারবার বা ক্যারেবিয়ান দ্বীপে যেতে হবে!

      ধন্যবাদ মুয়িনকে, ফটোব্লগের সাথে মিল রেখে যথার্থ একটি কবিতা সবাইকে পড়ানোর জন্য।

      • আসমা বীথি - ১০ নভেম্বর ২০০৯ (১১:২৮ অপরাহ্ণ)

        মুয়িন,এটা ছিল ৫-এর প্রত্যুত্তর।
        অনাবশ্যক ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

  6. রেজাউল করিম সুমন - ১২ নভেম্বর ২০০৯ (১০:৩৭ অপরাহ্ণ)

    বুদ্ধদেব-কথিত ‘ক্যামেরা-কণ্টকিত প্রগল্‌ভ জনারণ্য’-র অংশ না হয়েও (বা না হতে পেরেও) আসমা বীথির ‘ক্যামেরার কামরায়’ কয়েদ-করা একুশটি স্থিরচিত্রে দেখা হয়ে গেল টাইগার হিলের সূর্যোদয় — ‘অন্ধকার চিরে একটু একটু করে কীভাবে ফুটে ওঠে আলোর রেখা’! ছোট্ট ভূমিকায় সূর্যোদয় দেখার প্রস্তুতিপর্বের বিবরণ ভালো লাগল।

    মন্তব্যের ঘরে উদ্ধৃত বুদ্ধদেবের কবিতায় পাচ্ছি সূর্যোদয়কালীন কয়েকটা টুকরো ছবি — যথাক্রমে :

    কোনো ক্লান্ত-পাখির স্তব্ধতার মতো
    নীল-কালো একখানা মেঘের উপরে
    লাল রেখা ফুটেছে অনেকক্ষণ।

    নীল পাহাড়ের আড়াল থেকে
    আগুনের ঘোড়ার মতো লাফাতে-লাফাতে
    সূর্য উঠে এলো।

    উত্তর থেকে পশ্চিম তুষারের চূড়ায়-চূড়ায় আগুন,
    মেঘের কালো-নীল শরীরে রামধনু-রং

    উদ্ধৃতির প্রথম ও তৃতীয় টুকরোকে অনায়াসেই মিলিয়ে নেয়া যায় এই ফটোব্লগের কয়েকটি ছবির সঙ্গে। তবে ‘নীল পাহাড়ের আড়াল থেকে/ আগুনের ঘোড়ার মতো লাফাতে-লাফাতে’ সূর্যকে উঠে আসতে দেখতে হলে বোধহয় সশরীরেই যেতে হবে টাইগার হিলে! ১৯৩৮-এর ৮ অক্টোবরের ভোরে সেখানে ছিল দেড়-দুশো লোকের ভিড়। আর একেই নির্জনতাকামী বুদ্ধদেবের মনে হচ্ছিল ‘জনারণ্য’। (বীথি ভিড়ের কথা কিছু লেখেনি।) ভাবছি ২০১১-র অক্টোবরে টাইগার হিলে কেমন ভিড় হবে।


    বীথির এক মন্তব্যে অবনীন্দ্রনাথের নাম দেখে মনে পড়ে গেল তাঁরই জাদুকরি কলমে কুঁকড়োর গানে সূর্যের জেগে ওঠার গল্প; কিন্তু এখানে কি তা প্রাসঙ্গিক হবে?

    • আসমা বীথি - ১৪ নভেম্বর ২০০৯ (২:৫৮ অপরাহ্ণ)

      ধন্যবাদ রেজাউল করিম সুমন। কুঁকড়োর গানে সূর্যের জেগে ওঠার গল্প অবশ্যই শুনতে চাই। এখানে প্রাসঙ্গিক না হলে,আলাদা একটি পোস্ট হিসেবে তো আমরা শুনতেই পারি গল্পটি।

      • রেজাউল করিম সুমন - ২০ নভেম্বর ২০০৯ (১০:২০ অপরাহ্ণ)

        ধন্যবাদ। মন্তব্যের ঘরেই আলোর ফুলকি বইয়ের ওই অংশটুকু হয়তো উদ্ধৃত করা যেত যদি না সেটা এত দীর্ঘ হতো। আলাদা পোস্ট হিসেবে তুলে দেয়ার সুযোগ নেই। বরং বইটাই দিতে পারি – হার্ড কপি!

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.