কলকাতার ঔপন্যাসিকদের উপন্যাস নিয়ে বাংলাদেশে টিভি সিরিয়াল বানানোর তীব্র প্রতিবাদ করছি

সর্বপ্রথম কে কলকাতার ঔপন্যাসিকদের উপন্যাস নিয়ে টিভি সিরিয়াল কিংবা একক নাটক বানানো শুরু করেছিল সেটা মনে করতে পারছি না। তবে আফসানা মিমি-র কৃষ্ণচূড়া প্রডাকশনের 'কাছের মানুষ' সিরিয়ালটিই হয়তো বা প্রথম হতে পারে। সূচিত্রা ভট্টাচার্যের এ উপন্যাস নিয়ে সিরিয়াল শুরু হতে যাচ্ছে এটা প্রথম শুনতে পাই আমার প্রজাপতিকাল টেলিফিল্মের শুটিংয়ের সময়।


সর্বপ্রথম কে কলকাতার ঔপন্যাসিকদের উপন্যাস নিয়ে টিভি সিরিয়াল কিংবা একক নাটক বানানো শুরু করেছিল সেটা মনে করতে পারছি না। তবে আফসানা মিমি-র কৃষ্ণচূড়া প্রডাকশনের ‘কাছের মানুষ’ সিরিয়ালটিই হয়তো বা প্রথম হতে পারে। সূচিত্রা ভট্টাচার্যের এ উপন্যাস নিয়ে সিরিয়াল শুরু হতে যাচ্ছে এটা প্রথম শুনতে পাই আমার প্রজাপতিকাল টেলিফিল্মের শুটিংয়ের সময়। মেকাপম্যান রবীনের কাছে কাছের মানুষের এককপি দেখতে পেয়ে জানতে পারি মিমি আপা তাকে এই বইটি পড়তে বলেছেন যেন আর্টিস্টদের মেকাপ সম্পর্কে সে আগেভাগেই একটা ধারণা করতে পারে। জানি না মিমি আপা তার অন্য কোনো সিরিয়াল নিয়ে এতোটা সিরিয়াস ছিলেন কিনা অর্থাৎ বন্ধন নাটকের সময়ও কি তিনি তার মেকাপম্যানকে স্ক্রিপ্ট পড়তে দিয়েছিলেন কিনা জানতে পারিনি।

কাছের মানুষ নিয়ে আগ্রহ ছিল। কারণ সানজিদা প্রীতি তাতে অভিনয় করেছিল, সৈনিক ক্যামেরা চালিয়েছিল। প্রীতি আমার সন্ধি নাটক করার পর ড্রিম ফ্যাক্টরির স্পর্শের বাইরে করেছিল। আমি ফাজলামো করে বলতাম, হায়রে প্রীতি, আমার সঙ্গে ‘সন্ধি’ করে ‘স্পর্শের বাইরে’ চলে গেলে, এখন আবার আরেকজনের ‘কাছের মানুষ’ হয়ে গেলে।

কাছের মানুষ টিভিতে কয়েক পর্ব দেখেছি। কলকাতা ঢংয়ের সংলাপগুলো যতোই বাংলাদেশিকরণ করার চেষ্টা হোক না কেন সেগুলো জুৎসই হয়নি। একটা উদাহরণ দিই। অফিসে সেরে গৃহকত্রী বাসায় ফিরেছে। তিনি এখন চা খাবেন। স্বামীকে বলছেন,

গৃহকত্রী : এই শুনছ। আমি চায়ের পানি চড়াচ্ছি। তোমার জন্যও করব?

এ সংলাপটা আমার কানে খট করে লাগল। প্রচুর পরিমাণে কলকাতার উপন্যাস পড়ার ফলে আমি বুঝতে পারি এটা নিতান্তই সাদামাটা সংলাপ, কলকাতাবাসীদের জন্য। আমি হাজার চেষ্টা করেও মনে করতে পারিনি আমার এ বয়স পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশী কাউকে ‘চায়ের পানি’ বেশি করে চড়াবে কিনা জিজ্ঞেস করছে। বরং এমনটাই শুনেছি যে,

গৃহকর্ত্রী : আমি চা খাব। তুমি খাবে? বানাব?

শুনেছি কাছের মানুষকে বাংলাদেশিকরণ করা হয়েছিল কিছু কিছু শব্দ পরিবর্তন করে। যেমন, জানালার কপাট লাগিয়ে দাও না বলে জানালা লাগিয়ে দাও; বাতিটা নিভিয়ে দাও না বলে লাইটটা অফ করে দাও।

পত্রপত্রিকায় আগেই পড়েছিলাম আর এই সেদিন বিডিনিউজে এই রিপোর্টটা পড়ে আরো বেশি হতাশ হয়েছি। এখন বাংলাদেশে বেশ জোরেসোরেই চলছে কলকাতার উপন্যাস নিয়ে টিভি সিরিয়াল বানানোর হিড়িক। আমি এর তীব্র বিরোধিতা করছি। রিপোর্টে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জেগেছে যে বাংলাদেশে কি ভালো স্ক্রিপ্টের অভাব! বেশিরভাগই তা স্বীকার করেছেন। আমিও মানি। কিন্তু এর কারণে অন্য কারো দ্বারস্থ হতে হবে এতোটা অভাবগ্রস্ত আমরা নই। কলকাতার উপন্যাসগুলোর পটভূমি কি? কারা কথা বলে ওইসব উপন্যাসে? কি বলে? কতোটা বাংলাদেশের দৈনন্দিন জীবনযাপনকে ছুঁয়ে যায় সেসব?

এটিএন বাংলার অনুষ্ঠান উপদেষ্টা নওয়াজীশ আলী খান বলেছেন,

আমাদের দেশের নাটকে তাদের গল্প-কাহিনী ব্যবহারের ফলে আমাদের নাটকে কোনো প্রভাব পড়ছে না। এখন আমাদের দেশে চ্যানেলের সংখ্যা নয়টি। প্রতিদিন গড়ে নাটক প্রচারিত হচ্ছে প্রায় ২০টি। এর মধ্যে তাদের গল্প নিয়ে তৈরি নাটক খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। তবে আমাদের যে স্ক্রিপ্ট সংকট চলছে সেটার জন্য আরো বেশি নিজেদের মেধা-মনন, সময় এবং শক্তি দিয়ে স্ক্রিপ্ট বানানো উচিত।

জ্বি না জনাব। তাদের গল্প-কাহিনী আমাদের উপর প্রভাব ফেলছে। যে হারে জাকজমক করে, সাংবাদিক সম্মেলন, মহরত, প্রেস কনফারেন্স করছে তাতে পরোক্ষভাবে দর্শকদের ওদের নাটক দেখানোয় উৎসাহিত করছেন। তাই ফাঁকে ফুঁকে চলছে বলে অন্য নাটকের উপর প্রভাব ফেলবে না একথা আপনি বলতে পারেন না। যে স্ক্রিপ্ট সংকট চলছে, তা মেটানোর জন্য বাংলাদেশের স্ক্রিপ্ট রাইটারদেরই আরো বেশি বেশি সুযোগ দিতে হবে।

ফাল্গুনী হামিদ বলেছেন,

এই যে বাইরের গল্প নিয়ে কাজ করি, অনেকে বলেছেন, এটা এক ধরনের নাম কামানো এবং ব্যবসা।

একদম ঠিক বলেছেন, নাম কামানোর ব্যবসা ছাড়া এটা আর কিছুই নয়। কারণ পরের লাইনে আপনি বলছেন

আমি বলতে চাই সমরেশের একটা নাটক বানালে চ্যানেল আমাকে যে টাকা দেবে, এক্স বা ওয়াই-এর নাটক বানালেও ঠিক ঐ পরিমাণ টাকাই দেবে।

তাহলে কেন সমরেশের জায়গায় একটা বাংলাদেশী স্ক্রিপ্ট রাইটারকে সুযোগ দিচ্ছেন না। আপনি এতো ভালো স্ক্রিপ্ট বুঝে সমরেশের উপন্যাশ হাতে নিয়ে নিচ্ছেন তো দুর্বল স্ক্রিপ্ট শক্তিশালী করুন না স্ক্রিপ্ট রাইটারের সঙ্গে বসে। আপনি নিজেই ভাবুন না, গল্প দিন না, দেখেন স্ক্রিপ্ট রাইটার কি করে।

মেজবাউর রহমান সুমন বলেছেন,

আমাদের এখানে ভালো স্ক্রিপ্টের আসলেই খুব অভাব … ভারতের লেখকদের লেখা নিয়ে একারণেই বেশি কাজ করা হয় যে, তাদের প্রেক্ষাপট আর আমাদের প্রেক্ষাপট অনেক কাছাকাছি।

সুমনের কাছ থেকে এরকম কথা আশা করিনি আমি। তাকে খুব উঁচুমানের পরিচালক ভাবি। একটি ভুল ধারণা পোষণ করছেন তিনি। ভারতীয় বাঙালি আর আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট এক নয়। তাদের চিন্তাভাবনার উপায়ের সঙ্গে আমাদের মেলে না। রবীন্দ্র, নজরুল, বৈশাখ উদযাপন দিয়ে প্রেক্ষাপট একভাবার তরিকাটা খুবই দুর্বল। ওখানকার শ্রমজীবী আর আমাদের শ্রমজীবী গরিব মানুষের শরীরে ঘাম হয়তো একই রকম দেখতে হয়, কিন্তু তাদের জীবনধারা, সংলাপ সম্পূর্ণ আলাদা।

ওপার বাংলার উপন্যাস নিয়ে সিরিয়াল, নাটক, ফিল্ম বানানোর দায়িত্বটা অনেকেই নির্মাতার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে একজন নির্মাতা সুনীলের, সমরেশের, শীর্ষেন্দুর চরিত্রগুলোকে বাংলাদেশের মাঠেপ্রান্তরে কিভাবে চড়াবেন? বাতিটা নিভিয়ে দাও না বলিয়ে লাইট অফ করে দাও টাইপ সংলাপ প্রতিস্থাপন করে। তার মানে হলো আপনাদের ওদের সাহিত্যকে ঘষামাজা করতে হয়। তো এ পরিশ্রমটা এখানকারই কোনো স্ক্রিপ্ট রাইটারের সঙ্গে বসে করুন না। আমাদের দেশের কটা নাটক ওদের টিভিতে চলে। টিভিই তো দেখায় না। এক ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ রিমিক হয়েছিল, তারপর তো আর কোনো খবর পাই না।

নির্মাতাদের বলি, পারলে চেষ্টা করেন বাংলাদেশী কোনো স্ক্রিপ্ট রাইটারের স্ক্রিপ্ট ওদের টিভির নাটকের জন্য কোনো ডিরেক্টরকে গছিয়ে দিতে। আনন্দবাজারের বাজার দরকার। তাদের বই বিক্রির বাজার দরকার, সেটা তৈরি করেও নিয়েছে। এখন হাত বাড়িয়েছে টিভির দিকে। দাদাদের বলি, কষ্ট করে কলা খান। আসেন বাংলাদেশে। থাকেন টানা কয়েকমাস। তারপর বাংলাদেশী চরিত্র নিয়ে গোটা কয়েক স্ক্রিপ্ট লিখে দিয়ে যান।

এপার বাংলা-ওপার বাংলার সাংস্কৃতিক বন্ধন বলে যে মোয়াটা খাওয়ানো হচ্ছে তাতে আমাদের পক্ষে ভাগটা কমই পড়ছে। এটা সুস্থ চর্চা না। তাদের আগ্রাসনের মনোভাবটা বড়ই নির্মম। বাংলাদেশি নির্মাতাদের প্রতি অনুরোধ, শিল্পের দোহাই দিয়ে অন্য কাউকে প্রমোট করার চেষ্টা করবেনা প্লিজ। আমাদের সংস্কৃতিতে উপাদান কম নেই। ব্লগেই ঘুরে দেখুন না, আপনার পছন্দের স্ক্রিপ্ট পেয়ে যাবেন। যদি পারেন, সমানে সমান হন। ওদের একটা নাটক বানালে আদায় করে নিন আমাদেরও কোনো সাহিত্যিকের একটা উপন্যাস ওদের দেশে নাটক হবে। যে হারে দাদাদের তোষণ করা হচ্ছে তা রীতিমতো দৃষ্টিকটু।
ছবি কৃতজ্ঞতা : বিডিনিউজ২৪.কম

Site Default

হতে চাই ফিল্মমেকার। ১০/২০ জনের জন্য পাবলিক লাইব্রেরির ছবি না। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার সব দর্শকের জন্য নাচ-গান সমৃদ্ধ ছবি বানাতে চাই।

৬ comments

  1. মুনতাসির - ২৯ নভেম্বর ২০০৮ (৫:৪১ পূর্বাহ্ণ)

    মন্তব্য করার মত পেটে আমার কিছু নাই। পাহাড়ে যাবার কারনে কলকাতাবাসী কিছু মানুষের সাথে সখ্যতা হয়েছিল এবং এখনও আছে। নন্দনের এক ভ্রমণ লেখক (আমি দর্শক ছিলাম) আড্ডায় তাদের মুখে আমাদের নাটকের কিছু ভাল কথা শুনেছিলাম বলে মনে পরে। ঠিক তেমনি বাৎসরিক ভ্রমণ আড্ডায় বাংলাদেশ বিষয়ক এক স্লাইড প্রর্দশনের সময় হল ভর্তি মানুষের মাঝে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের যে তারনা তা অনুভব করেছিল আমার অর্বাচিন মন। ভুল হতে পারে।

    আমরা কেন জানি বাড়াবাড়ি করি, নিজেদের কে প্রকাশ করার মত মেধা মনে হয় আমাদের কাছে নেই আর। ব্যপারটা একাধারে দু:খের এবং লজ্জার।

    কথা গুলে একান্ত আমার নিজের, ঠিক কিনা জানি না।

    দারুন লাগল, আমরাও সিনেমা দেখতে চাই হলে। ৩৫’ এর নাটক না।

  2. রায়হান রশিদ - ১০ ডিসেম্বর ২০০৮ (২:৩১ পূর্বাহ্ণ)

    “ভালো স্ক্রিপ্ট”-এর অভাব নিয়ে এক শ্রেণীর নির্মাতার যে হীনমন্যতা আর পক্ষপাত, সেটা অলৌকিক হাসানের পোস্টটি না পড়লে জানা হতো না। এমনটিও তাহলে হয়!

    কিছুদিন আগে শুনেছিলাম, সীমানার ওপারে নাকি বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো দেখানোর সরকারি অনুমতি নেই। জানি না কথাটা কতটুকু সত্য। যদি সত্য হয়, তাহলে ব্যাপারটি সাংস্কৃতিক সুপিরিয়রিটির চেয়েও সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গ (নাকি ভারত?) সরকারের সংরক্ষণবাদী বাজার নীতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ারই বেশি সম্ভাবনা। শিল্পকে যতই আমরা স্বাধীন সর্বজনীন আর মুক্ত করতে চাই না কেন, শেষাবধি তা টাকা-আনা-পাই আর রাজশক্তির জোয়ালেই বাঁধা পড়ে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! আর যখন দেখি কর্পোরেট মিডিয়া এক্সিকিউটিভরা শিল্প আর শিল্পীর মান নির্ধারক হয়ে যান, সৃজনশীল মানুষেরা তাদের মন জুগিয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছেন, তখন মাথার ভেতর এক ধরণের যন্ত্রণা তো হয়ই।

    মাঝে মাঝে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পুরো বিষয়টিকেই কেমন ডারউইনীয় জঙ্গলের লীলাখেলা বলে মনে হয়। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের বাজার যেমন বাংলাদেশের বাজারে আগ্রাসন চালাতে চায়, তেমনি তাদের নিজেদের বাজারও কি ভারতের তথাকথিত মূলধারার বাজার দ্বারা প্রতিনিয়ত দলিত হচ্ছে না? আর এসব আগ্রাসন আর সংরক্ষণের সুযোগে সীমানার দু’দিকেই যে মধ্যস্বত্বভোগী তাঁবেদার শ্রেণী গড়ে উঠবে, তাতে আর অবাক হওয়ার কী আছে?

    আবার উপরে মুনতাসির যা বলেছেন, তাও কিন্তু মিথ্যে নয়। এই অমোঘ চক্রের যদি কোথাও শেষ থাকে, তবে তার চাবি হয়তো আছে এই আমজনতার হাতেই, যাঁরা ভালো লাগা আর ভালোবাসা থেকেই প্রতি নিয়ত রুচি গড়েন, রুচি ভাঙেন। যাঁরা রাজনীতি আর বাজারের হালচালও বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তাতে হিতে বিপরীত হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। একটি ভুলকে আরেকটি ভুল দিয়ে শোধরানো মনে হয় সম্ভব না।

    এই বিষয়টি নিয়ে আমার নিজের খুব একটা স্পষ্ট ধারণা নেই। মনে যা এল তাই লিখলাম। আরো জানতে চাই।

  3. মোহাম্মদ মুনিম - ২৩ আগস্ট ২০০৯ (৬:০৬ পূর্বাহ্ণ)

    বেশ কয়েকবছর আগে সমরেশের একটি ছোট গল্প পড়েছিলাম, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লেখা, ৯০ এর দশকের ঢাকা। যদ্দুর মনে পড়ে, গল্পের নায়িকার নাম ছিল ফরিদা, দিলরুবা বা আফরোজা এই ধরনের কিছু। নায়িকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, বইমেলায় যায়। ঢাকা শহরের ৯০ এর দশকের একজন তরুনীর নাম তন্বী, তিথি বা বিপাশা হওয়াটাই স্বাভাবিক, দিলরুবা নয়। সমরেশ বাংলাদেশ নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ দেখান, বাংলাদেশে বেশ কবার এসেছেন, কিন্তু তিনি এবং কোলকাতার অন্যান্য লেখকরা আধুনিক বাংলাদেশকে কতখানি বোঝেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কোলকাতার অনেক লেখকেরই আদি বাড়ি বাংলাদেশে, তাঁরা বাংলাদেশের মাঝে তাঁদের ফেলে যাওয়া চল্লিশ দশকের পূর্ববঙ্গই খোঁজেন, আধুনিক বাংলাদেশ নিয়ে তাঁদের তেমন আগ্রহ আছে এমন মনে হয় না। ৯০ এর দশকে কোলকাতার এক টিভি সিরিয়ালের প্রধান চরিত্র ছিল বাংলাদেশের এক ফিল্ম ডিরেক্টর, সেই ফিল্ম ডিরেক্টর কোলকাতায় তাঁর এক ফিল্মের শ্যূটীং এ গেছেন এবং তাঁর ফেলে আসা ভারতীয় প্রেমিকা খুঁজে পেয়েছেন, এই হছে সিরিয়ালের কাহিনী। সিরিয়ালে প্রায়ই বাংলাদেশের বিভিন্ন চরিত্র দেখানো হত, পুরুষ চরিত্ররা পাকিস্তানি (কাবুলি) পোশাক পরা, তাঁদের সংলাপ আরবী, উর্দু এবং বাংলা মেশানো এক অদ্ভূত ভাষায়।
    বাংলাভিশনে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘জ়ুয়াড়ীর বউ’ নিয়ে নাটক হয়েছে। মূল গল্পটি পড়া নেই, তবে নাটকটি বেশ ভালো লেগেছে। পুরান ঢাকার সেটিংএ করা। মানিক বন্দোপাধ্যায় অবশ্য সে অর্থে পস্চিম বঙ্গের নন, এভাবে দেখলে তো রবীন্দ্র নজরূল সকলেই কোলকাতার। ৮০ বা ৯০ এর দশকের কোলকাতার প্রেক্ষাপটে লেখা কোনো উপন্যাস নিয়ে ঢাকায় সিরিয়াল করার মানে হয় না। তবে theme টা নিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাটক বা সিরিয়াল তৈরী করাই যায়। সেটা কোলকাতা কেন, পৃথিবীর যে কোন দেশের গল্প নিয়েই করা যায়। সুনীলের ‘সেই সময়’ বা ‘প্রথম আলো’ নিয়ে কোন সিরিয়াল তৈরী হলে খুব ভাল হয়, কোলকাতা কেন্দ্রিক হলেও ইতিহাসভিত্তিক এই উপন্যাসগুলো তো আমাদের ইতিহাসের কথাই বলেছে।

    • রায়হান রশিদ - ২৩ আগস্ট ২০০৯ (১:৩৫ অপরাহ্ণ)

      @ মুনিম
      প্রথমেই ধন্যবাদ পোস্টের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া পুরনো এই আলোচনাটাকে আবার বাঁচিয়ে তোলার জন্য।

      সমরেশ বাংলাদেশ নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ দেখান, বাংলাদেশে বেশ কবার এসেছেন, কিন্তু তিনি এবং কোলকাতার অন্যান্য লেখকরা আধুনিক বাংলাদেশকে কতখানি বোঝেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কোলকাতার অনেক লেখকেরই আদি বাড়ি বাংলাদেশে, তাঁরা বাংলাদেশের মাঝে তাঁদের ফেলে যাওয়া চল্লিশ দশকের পূর্ববঙ্গই খোঁজেন, আধুনিক বাংলাদেশ নিয়ে তাঁদের তেমন আগ্রহ আছে এমন মনে হয় না।

      আপনি উল্লেখ করার পর বিষয়টা এখন তেমনই মনে হচ্ছে আসলে। বাকী ভারতের বাংলাদেশ-ভাবনা নিয়ে মন্তব্য না করাই ভাল। ভারতবর্ষে একটা পুরো Rediff প্রজন্ম বেড়ে উঠছে বাংলাদেশ সম্বন্ধে না জেনে, ভুল জেনে, কিংবা হেয় জেনে। তবে এটা হয়তো আশা করা খুব বেশী ছিল না যে ভারতের (মূলতঃ কোলকাতার) যেসব লেখকের আদি নিবাস বাংলাদেশে ছিল, তারা অন্তত বাংলাদেশকে সঠিক আলোয় দেখতে শিখবেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি, তাদের সেই দেখার চোখে কিছুটা exoticism থাকে, আর তার চাইতেও বেশী থাকে নস্টালজিয়া। এটা সে ধরণের ক্ষতিকর নস্টালজিয়া যা পরিবর্তন দেখতে চায় না, মানতে চায়না, তাকে বুঝতেও চায় না। এমন “সুহৃদ” দিয়ে আমরা কি করবো?

    • রেজাউল করিম সুমন - ২৬ আগস্ট ২০০৯ (১২:৩৩ অপরাহ্ণ)

      সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পূর্ব-পশ্চিম’ নিয়ে উভয় বঙ্গের একটি যৌথ প্রযোজনার সম্ভাবনার কথা শুনেছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে। পরে তা আদৌ তৈরি হয়েছিল কি না জানি না। একই লেখকের ‘সেই সময়’ আর ‘একা এবং কয়েকজন’ অবলম্বনে তৈরি দুটি টিভি সিরিয়ালের কয়েকটি পর্ব দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার, বলা বাহুল্য পশ্চিমবঙ্গের দুটি টিভি চ্যানেলে। আর সে অভিজ্ঞতা খুব আনন্দের ছিল না। ‘সেই সময়’-এর মতো ইতিহাস-আশ্রয়ী বিপুলায়তন লেখাকে চিত্রায়িত করা সহজ কম্মো নয়, রাম-শ্যাম-যদু-মধুকে দিয়ে সে-কাজ হবার নয়। ‘একা এবং কয়েকজন’-এর হাস্যকর রকমের দুর্বল সংলাপ শুনে আমার ভিরমি খাওয়ার দশা হয়েছিল। এর শিল্পী নির্বাচনের পেছনেও হয়তো ছিল দর্শকের পিলে চমকে দেয়ার গোপন দুরভিসন্ধি!

  4. এশার - ২১ মে ২০১০ (১০:৪৯ অপরাহ্ণ)

    বেশ অনেক দিন আগে “স্বপ্নভূক”(আজাদ আবুল কালাম অভিনয় করেছিলেন তাতে) নামে একটা নাটক দেখেছিলাম। দস্তোভস্কির কোনো একটা গল্প থেকে নেয়া হয়েছিলো এর কাহিনী। এতো কম সাজসজ্জায়/বাজেটে এর চেয়ে ভালো নাটক আমি কম দেখেছি।
    আমার কাছে মনে হয় আমরা বাঙ্গালীরা বিভিন্নরকম অহেতুক হীণমন্যতায় ভূগি।
    কাছের মানুষ আমার কাছে খুব উন্নত্মানের কোনো উপন্যাস বলে মনে হয়নি। নাটক দেখিনি তাই বলতে পারছিনা কেমন করেছেন তারা।
    বিশ্বসাহিত্য নিয়ে অবশ্যই আমাদের কাজ করার প্রয়োজন আছে এবং আমি মনে করি তা বাছাই করবার জন্যও যথেষ্ট পরিমান বিবেচনাবোধ প্রয়োজন।
    পশিম বঙ্গের লেখকদের নিয়ে আমাদের আদিখ্যেতা আমার কাছে অহেতুক বলে মনে হয়। বাংলাদেশে তাদের মানের অগণিত লেখক আছেন। তারা লিখছেন নিয়মিত কিন্তু সে অনূযায়ী সাফল্য পাচ্ছেন না।
    এ ব্যার্থতার পুরো দায়ভাগই বোধহয় আমাদের পাঠকের। আমরা এখনো কোনো শক্তিশালী পাঠকগোষ্ঠী তৈরী করতে পারিনি। লেখক যতোই ভালো হোক না কেনো একটা সময় তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যোগ্য পাঠক প্রয়োজন।

    কলকাতার লেখকদের স্ক্রিপ্টে নাটক আমাদের দেশে কেনো ভালো বিক্রি হয় তা জানার জন্য আমাদের বোধহয় নিজেদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষন করা প্রয়োজন সবার আগে।
    “দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো” বোধহয় পুরো ব্যাপারটিকে ভালো ব্যাখ্যা করবে। অকর্মণ্যবোধ থেকে এধরনের মানসিকতার জন্ম হয়।
    আমি মানতে নারাজ যে আমরা লিখতে জানিনা।

    আপনার লেখার সাথে একমত।
    পশ্চিমবংগ “রাশিয়া/কেনিয়া” হলে আমার কোনো আপত্তি ছিলোনা।
    বাংলা নাটক হিসেবে এগুলোর উপস্থাপন আমার কাছে ভন্ডামো।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.