সুপারিশকৃত লিন্ক সেপ্টেম্বর ২০২১

মুক্তাঙ্গন-এ উপরোক্ত শিরোনামের নিয়মিত এই সিরিজটিতে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। কী ধরণের বিষয়বস্তুর উপর লিন্ক সুপারিশ করা যাবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, মানদণ্ড বা সময়কাল নেই। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই তাঁরা মন্তব্য আকারে উল্লেখ করতে পারেন এখানে।
ধন্যবাদ।

আজকের লিন্ক

এখানে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই সুপারিশ করুন এখানে। ধন্যবাদ।

৪ comments

  1. মাসুদ করিম - ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ (৬:২২ অপরাহ্ণ)

    কিশোরগঞ্জের চ্যাপা শুঁটকি
    যেখানে বাঙালি আছে সেখানেই মেলে ঘ্রাণ
    https://samakal.com/todays-print-edition/tp-khobor/article/2109119522/%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%99%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%98%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A3

    পুঁটি মাছের চ্যাপা শুঁটকি- নাম শুনলেই জল এসে যায় ভোজনরসিকদের জিভে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর অধ্যুষিত জনপদসহ কিশোরগঞ্জ তথা বৃহত্তর ভাটি অঞ্চলের মানুষের খুবই প্রিয় খাবার এই চ্যাপা শুঁটকি, যার আঞ্চলিক নাম হিদল। খাবারের পাতে চ্যাপা শুঁটকি

    থাকার মানেই ভূরিভোজন। সাধারণত চ্যাপা শুঁটকি সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় হাওরাঞ্চলে। এখানকার জেলে জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ সনাতন পদ্ধতিতে মাছকে শুঁটকি বানিয়ে সংরক্ষণ ও বিক্রি করে থাকে। তবে পৃথিবীর যেখানে বাঙালি আছে, সেখানেই মেলে চ্যাপা শুঁটকির ঘ্রাণ।

    চ্যাপা শুঁটকি উৎপাদনের মূল কাঁচামাল পুঁটি মাছ। এর প্রস্তুতপ্রণালিও বেশ বৈচিত্র্যময় এবং দর্শনীয়। সবাই এই চ্যাপা শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করতে পারে না। কিশোরগঞ্জে মাত্র কয়েকটি সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবার বংশ পরম্পরায় আসল চ্যাপা শুঁটকি তৈরি করতে পারে। সনাতন পদ্ধতির গাঁজন প্রক্রিয়ায় চ্যাপা শুঁটকি প্রস্তুত করা হলেও চূড়ান্তভাবে গাঁজন করা

    হয় না। শুঁটকির পুঁটিমাছও বাছাই করা হয় সতর্কতার সঙ্গে। নষ্ট, পচা বা আংশিক পচা মাছ শুঁটকির জন্য

    ব্যবহার করা যায় না। মজাদার চ্যাপা তৈরির জন্য সংগ্রহ করতে হয় সদ্য ধরা মাছ।

    এরপর বাছাই করা মাছ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিস্কার করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুঁটকি করা হয়। বড় আকারের শুঁটকিগুলো বাছাই করে চ্যাপা শুঁটকির জন্য রাখা হয়। মাটির মটকায় তেল দিয়ে ভালোভাবে ভেজানো হয় সেগুলো। পুঁটি মাছের তেলে অনেক ময়লা ও বাড়তি আর্দ্রতা থাকে। তাই তা ভালোভাবে ছেঁকে নিতে হয়। ছেঁকে নেওয়া তেল পুনরায় উনুনে বা চুলায় ভালোভাবে ফুটিয়ে বা গরম করে ব্যবহার করতে হয়। এতে তেলের বাড়তি আর্দ্রতা চলে যায় এবং চ্যাপাও জীবাণুমুক্ত হয়। তেলে ভেজানো মাটির মটকায় এগুলো ভালোভাবে পরিস্কার হাত দিয়ে চেপে চেপে ভরতে হয়।

    মটকায় শুঁটকি ভরার পর সেটির মুখে চূর্ণ করা শুঁটকি মাছ ও মাছের তেল দিয়ে তৈরি করা পেস্ট প্রথমে একটি স্তর ফেলা হয়। মটকার মুখের সেই স্তর একটি পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিতে হয়। ঢেকে দেওয়া পলিথিনের ওপর মাটির কাই দিয়ে মটকার মুখ এমনভাবে আটকে দিতে হয়, যাতে কোনো বাতাস ঢুকতে না পারে। এভাবে মটকার মুখ বায়ুরোধী করা হলে ভেতরের শুঁটকি মাছ ও মাছের পেস্ট মাটির সংস্পর্শে আসতে পারে না। এই মটকা গাঁজন প্রক্রিয়ার জন্য ঠান্ডা ও শুস্ক স্থানে পাঁচ থেকে ছয় মাস সংরক্ষণ করতে হয়।

    চ্যাপা শুঁটকি ঢাকা, নরসিংদী ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের অনেক জেলায় মণপ্রতি ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয় বলে জানান কিশোরগঞ্জ বড় বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। চ্যাপা ব্যবসায়ী কাজল বর্মণ জানান, তার বাবা আদি চ্যাপা ব্যবসায়ী। তার বাবা মোহন চন্দ্র বর্মণ তার ভাই প্রহদ্মাদ চন্দ্র বর্মণ এবং মরম আলী মিয়াকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ বড় বাজারে সর্বপ্রথম বড় পরিসরে চ্যাপা শুঁটকি উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেন।

    প্রহদ্মাদ চন্দ্র বর্মণ এবং মরম আলী মিয়া পরে আলাদাভাবে ব্যবসা শুরু করেন। কাজল বর্মণ জানান, প্রায় ৫০ বছর ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা। ৩০ বছর আগে পিতার প্রয়াণের পর অষ্টম শ্রেণি পড়া অবস্থায় বাবার ব্যবসায় হাল ধরেন তিনি।

    কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান বেলাল বলেন, কিশোরগঞ্জ তথা বৃহত্তর হাওরের চ্যাপা শুঁটকি সারাদেশের ভোজনরসিকদের কাছে আলাদা মর্যাদা বহন করে। চ্যাপা শুঁটকি ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর নানা দেশে রপ্তানি হয়। কোনো প্রবাসী দেশে এলে চ্যাপা শুঁটকি না নিয়ে কর্মস্থলে যান না। বিশেষ করে প্রবাসী বাঙালিদের

    কাছে চ্যাপার চাহিদার জুড়ি নেই। অচিরেই তা বিদেশিদের মনও জয় করবে, প্রত্যাশা চ্যাপা শুঁটকি ব্যবসায়ীদের।

  2. মাসুদ করিম - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ (৪:১১ অপরাহ্ণ)

    শিল্পী মনিরুল ইসলাম: মহামারী আমার ভিতরে অতিআতংক তৈরি করেছে
    https://arts.bdnews24.com/%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a7%80-%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%ae/

    মহামারী আরম্ভ হয়েছে আজকে প্রায় দুই বছর এবং এটা সমস্ত দুনিয়াকেই ওলটপালট করে দিয়েছে। এর ফলে যেকোন শিল্প, ব্যবসা, বিশেষ করে সংস্কৃতি বেশি প্রভাবিত হয়েছে, পূর্ব-পশ্চিম সর্বত্র একই ব্যাপার। দীর্ঘকাল ধরে আমি স্পেনে আছি- প্রায় ৪০/৪৫ বছর, কিছুদিন আগে ৩ মাসের জন্য বাংলাদেশে আসি এবং এসেই আটকে গেছি।

    ঢাকায় এসে তখনই কাজ শুরু করছিলাম-আমি সবসময় কাজ করি- সম্প্রতি ইচ্ছে করে কাজ আরও বাড়িয়েছিলাম। ছবি কোনদিন শেষ হয়না, পেইন্টিং করা কোনোদিনই শেষ হয় না- শুধু আমার না, কাররই শেষ হয়না। একটা সময়ে আমাদের ছবি আঁকা ছেড়ে দিতে হয়, তখনই শেষ হয়।

    কোভিড যখনও আসেনি, তখন সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো। এরপর কোভিড এলো এবং এর ইমপ্যাক্ট যে এত হবে সেটা আমরা শুরুতে বুঝতে পারি নাই।

    বিশেষ করে শিল্পীরা, আমরাতো একাকিত্ব কিছুটা পছন্দ করি। তাই কোভিডের সাথে সাথে যে একাকিত্ব এলো তা প্রথমে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিলাম। বাংলাদেশে আসাতে অনেক সোশ্যাল ইভেন্ট ছিলো, একসময়ে এসবে বিরক্তই হয়ে গেছিলাম। মনে হতো, আমার ছবির আকার সময় কোথায়? তাই এসব ইভেন্ট থেকে আমি দূরে থাকতে শুরু করি। মনে করেছিলাম যদি একা থাকতে পারি তাহলে আমার জন্য ভালো হবে। অবশ্য একাই আছি সবসময়- শেষ চল্লিশ বছর ধরেই আমি একা।
    আমরা আর্টিস্টরা বেশির ভাগ সময়েই একটু সেলফ-সেন্টার্ড হই, একাকিত্ব থাকে ভিতরে ফলে লক-ডাউনে ভেবেছিলাম এবার একটু নিস্কৃতি হবে, বাসায় থাকতে পারবো। কিন্তু সেটা বেশিদিন সম্ভব হয়নি। ইভেন্টগুলি সব অনলাইনে এসে হাজির হলো।

    আর্ট এখন আর ব্যক্তি বা শিল্পী পর্যায়ে নাই, আর্ট এখন চলে গেছে ইকোনোমিক্স,পলিটিক্স, গ্লোবাল কালচারের ভিতরে। ৫০/৬০ বছর আগে বলা যেত, একজন শিল্পী ছবি আঁকবে ঘরে বসে, বাইরের কোন খবরের তার দরকার নাই কিন্তু এখন আর এমন সম্ভব নয়। ইমোশনের পর্যায় থেকে আর্ট এখন ঢুকে গেছে ইন্টেলিজেন্সের ভিতরে। সমস্ত কিছু এখন ডিজিটালি কনভার্ট হচ্ছে, আর্টও এর বাইরে থাকেনি। বিগত সময় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আর্টের নানা রকম ধরন তৈরী হয়েছে। যেমনঃ কন্সেপচুয়াল আর্ট, ভিজুয়াল আর্ট, ইলেক্ট্রনিক আর্ট,ডিজিটাল আর্ট এই ধরনের বহু নামকরণের আর্ট। এগুলি কিছুদিন আগেও ছিলনা, আগেতো আমরা করতাম পেইন্টিং, যারা গ্রাফিক্সের তারা গ্রাফিক্স করতো, এত ধরনের আর্ট ছিলনা। আর্টের এত ডাইভারশনের কারণ, মনে করি, বিশ্ব বিজ্ঞানের দিকে গত পঞ্চাশ বছরে যতটা এগিয়েছে, বিগত পাঁচশ বছরেও এতটা আগায় নাই। এবং আর্টের এই নতুন অবস্থা থেকে নিজেকে বিছিন্ন করে রাখা যায় না।

    কোভিড কিন্তু আসলেই খুব ভয়ংকর আর বিরাট ব্যাপার। হয়তো কোন আর্টিস্ট ভেবেছে কোভিড নিয়ে ছবি আঁকবে, কিন্তু আমরা কি নিয়া ছবি আঁকবো! ছবি আঁকার বিষয় হিসেবে কোভিড এতই শক্তিশালী যে, এটা আর্টিস্টের আয়ত্বের বাইরে। হয়তো ঝড়ের একটা ছবি অথবা দুর্ভিক্ষের একটা ছবি ইমেজ দিয়া আঁকা যায় কিন্তু এই কোভিডের কোন ছবি আমি আঁকি নাই, আঁকতে পারবোও না।

    মহামারী আমার ভিতরে অতিআতংক তৈরী করেছে, এমনকি অন্যের উপর থেকে আমার বিশ্বাস ছুটে গেছে। তাছাড়া কোভিড আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে আসলে আমরা সকলেই মূলত একা। আমার ধারণা, প্রকৃতির যে ক্ষতিসাধন আমরা করেছি, প্রকৃতি এভাবেই তা পুনরুদ্ধার করছে।

    ঢাকায় এসে করোনার মধ্যে আমি প্রচুর ছবি এঁকেছি। পেপারওয়ার্ক,পেইন্টিং, ক্যানভাস ,কার্টুন বক্স, ক্যালেন্ডার, ক্যাটালগের উপর, বইয়ের উপর নানা রকম ছবি এঁকেছি। এবং এই কাজগুলো আমি করেছি সম্পূর্ণ আমার অভ্যাসের বাইরে গিয়ে, এগুলো এমন সব কাজ যা আমি সাধারণত করবো না কোনদিন। এগুলো করতে গিয়ে আমি সর্বোচ্চ স্বাধীনতা গ্রহণ করেছি এবং এ ছবিগুলো বিক্রি করা বা এক্সিবিশনে দেবার কোন উদ্দেশ্য আমার ছিলনা। ফলে এসব ছবিতে কোন শর্ত নেই, এগুলো একান্তই নিজের আনন্দের জন্য, যদি মিরাকুলাস কিছু ঘটে, যদি নতুন কিছু পেয়ে যাই, এমন অবস্থান থেকে এগুলো সৃষ্টি। ক্রিয়েটিভ প্রসেসটাই এমন হওয়া দরকার।

    আর তাছাড়া অভ্যাসের বাইরে যাওয়াটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অভ্যাসটা (যেকোন প্রকার অভ্যাস) আমার কাছে এক ধরনের ধীর মৃত্যু। কারণ এই অভ্যাসের জন্য আমাদের মস্তিষ্কে শ্যাওলা জমে, আমরা দাসে পরিণত হই, তখন আমরা নতুন রাস্তায় হাঁটতে চাইনা, নতুন কিছু করতে চাইনা, নতুন লোক দেখতে চাইনা, ধীরে ধীরে একটা লিমিটেশনের ভিতরে চলে আসি। আর্টের ক্ষেত্রেও একটা অভ্যাস গ্রো করলে দেখা যায় ঐ অভ্যাসের অনুযায়ী একই ছবি এঁকে যাচ্ছি।

    তো, যতদূর সম্ভব এই করোনার মধ্যেও আমি প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছিলাম এবং আনন্দও পাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ঐ গতি কমে গেলো। করোনার প্রভাব আর্টিস্টের স্টুডিও থেকে পুরো আর্ট সোশায়িটিটাতেই পরলো। আর্ট এক্সজিবিশন, ওয়ার্কশপ,সেমিনার তারপরে আরও বিভিন্ন কার্যক্রম,কর্মশালা ছিলো, সেসব হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেলো।

    একজন আর্টিস্টের মূল খোরাক কোথায়? আর্টের উপাদান সে পায় কোথা থেকে? প্রকৃতিই আমাদের সকল সৃজনশীল শক্তির উৎস। কিন্তু এই করোনাকালে আমি বাইরে যেতে পারি নাই। বিশেষ করে আমি আছি ধানমন্ডির এক ফ্লাটে, লেকের পাড়ে, সেখানে আকাশও দেখা যায় না। ঢাকা শহর যেন একটি জেলখানা; জালনা খুললে কাপড়-চোপড়,ডেগ-পাতিল এগুলাই দেখা যায়। শিল্পীরতো একটা ইন্সপিরেশন দরকার। এই বদ্ধ পরিস্থিতিই শিল্পীদের সবথেকে বেশি ক্ষতি করছে।

    এটা একটা বিরাট সংকট, এটা কবে শেষ হবে বা এটা নিয়েই আমাদের সর্বদা থাকতে হবে কিনা তা অনিশ্চিত। এছাড়া আমার অনেক ছাত্র, ছাত্রদের ছাত্র অনেকে চলে গেল কোভিডে, এগুলি মানসিকভাবে আমাকে অনেক তাড়িত করেছে।

    আর্টের কমার্শিয়ালাইজেশনও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, যদিও এরকম অসহায় পরিস্থিতির মধ্যেও অনেকে ডিজিটালি ছবি বিক্রি করছে, বিদেশে অনেকে নিজের ওয়েবসাইট করে ছবির প্রদর্শনী করছে।
    এরকম বদ্ধ পরিস্থিতিতে সব ভুলে ছবি আঁকবো, এমন মানসিকতার জন্য দরকার দৃঢ় সংকল্প। ছবি আঁকার জন্য একটা খোরাক দরকার, আর এ খোরাক নিতে হলে বাইরে একটা সময়ে রোজ ঘোরা উচিত। এমনি সময়ে দুটো লোকের কথা শুনি বা দুটো বই পড়ি বা প্রকৃতি দেখি, বিভিন্ন এক্সিজিবিশন দেখি কিন্তু এখন আমরা একটা গন্ডির মধ্যে, একটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে আটকে আছি।

    ছবি আঁকা একটা ক্লান্তিকর কাজ,ছবি নিয়ে চিন্তা করতে করতেই একসময় এত ক্লান্ত লাগে! আর আমি যেহেতু একাই থাকি তাই গৃহস্থালীর প্রায় সবকিছুই আমাকেই করতে হয়। ঘর পরিষ্কার-কাপড় ধোয়া-রান্না করা এগুলি বিরাট কাজ। এতে দেখা যায় বিকালে কাজ শেষ করে সন্ধ্যার পরে ক্লান্ত হয়ে যাই, তারপরে যে কাজ করবো এই ইচ্ছাটা তখন আর থাকে না।

    আগে রাতেই কাজ করতাম, কিন্তু এখন দেখি যে রাতে কাজ করাটা ঠিক না, শরীরের জন্যও ভালো না। রাত প্রকৃতিগতভাবেই ঘুমানোর জন্য। রাতে গাছের পাতা পর্যন্ত ঘুমায়, পাখিরা চলে আসে।
    এর আগে অথবা করোনার মধ্যে যেসব ছবি আমি এঁকেছি সেগুলির যে আলাদা কোন চরিত্র আছে এমন নয়। মহামারী আমাকে অনেক প্রভাবিত করেছে ঠিকই, কিন্তু আমার ছবির সাবজেক্ট ম্যাটারকে কোন প্রভাবিত করে নাই। কিন্তু একটা বিষয়কে আমি সবসময় গুরুত্ব দেই তাহলো আমার ছবি যাতে রিপিটেটিভ না হয়, এবং ছবিতে যেন আমার পারসোনালিটি থাকে। যাই আঁকি মনে হবে আমারই আঁকা, ক্রিয়েটিভ প্রসেস এমনই হওয়া উচিত। সকল ভালো আর্টিস্টের এই দিকটি থাকে। পিকাসো হয়তো একদিনে ছবি আঁকছে তিন রকমের, সকালে প্রতিকৃতি, দুপুরে আঁকছে এচিং বুলফাইটের ছবি, রাতে আঁকছে কিউবিজম, কোনটার সাথে কোনটার মিল নাই, এত ভ্যারিয়েশন, কিন্তু তার একটা ছবি দেখলেই বলে দেয়া যায় যে এটা পিকাসোর ছবি। আমরা অনেক আর্টিস্ট আছি, যারা যাই করি একই কাজ করছি বোধহয়। সুতরাং ঐ পারসোনালিটিটা তৈরী করা জরুরি।

    এবং একটা ছবির জন্য প্রচুর কাজ দরকার। আর্টের জন্য আরেকটা বিষয় দরকারি তাহলো তার নিজের কাজকেই তার নিজের ধ্বংস করতে হবে। অনেক সময় বলা হয়, নো ডিস্ট্রাকশন, নো ক্রিয়েশন। যেটা আমরা দেখতেই পাই যে দুর্গা পুজায় মূর্তি সারা বছর ধরে নির্মাণ করে পরে তারা এটা বিসর্জন দেয়, এটা যে শুধু হিন্দু ধর্মে তাই নয়, অনেক জায়গায় আছে এমন। কারণ তারা নবজন্ম চায় , অন্য কিছু নতুন চায়। এইজন্য ডিস্ট্রাকশনটা জরুরি, তবে কোন সময়ে ডিস্ট্রাকশন করছি সেটাও দেখতে হবে, এখন একটা চারা গাছ সেটা ধ্বংস করলে হবেনা, এটা ফল দিবে কিনা সেটা দেখতে হবে।

    আমার প্রায় ৪০০ ছবি আছে যা এখনও শেষ হয় নাই, শেষ হয় নাই কারণ ছবি কখনো শেষ হয় না, কোনদিনও না, একটা ছবি যদি আমি ২০ বছরও আঁকি তাও শেষ হবেনা। আমি একটা ছবি দিনের পর দিন আঁকি, আমি কখনো জানি যে ছবিটা যত ভালো করে আঁকি না কেন তাও ভালো হবেনা, তখন আমি অন্য ছবিতে চলে যাই এবং পরে আবার আগের ছবিটাতে ফিরে যাই। এই প্রসেসে ছবি বাড়তে বাড়তে অনেক ছবি হয়ে গেছে। কিন্তু স্টুডিউতে আমি এসব ছবিগুলো রেখে দেই, আমি যখনই স্টুডিওতে হাটি বা থাকি- আমি ছবিগুলো দেখতে থাকি প্রতিমুহূর্তে। সাতদিন পরে দেখা গেলো, একেকটা ছবি নিজেরা নিজেরাই তৈরী হচ্ছে। অর্থাৎ ঐ দিনে ঐ সময়ে ছবিটার যে সমস্যা ছিলো তখন ছবিটাতে তা ধরা পড়ে নাই, কিন্তু কয়েকদিন পরে আমি সমস্যাটা পেয়ে গেলাম। দেখা গেলো এটা সহজ একটা ব্যাপার ছিলো, প্রতিনিয়ত ছবিটা দেখতে দেখতে এটা এখন পাওয়া গেলো।
    আমার বেশিভাগ ছবিই অসমাপ্ত। আমার অসমাপ্ত ছবি দেখতেই বেশি ভালো লাগে। ছবি শেষ মানে সেখানে আর কিছু করার নাই, আর অসমাপ্ত বলতে যে ছবির এখনও জন্মই হয় নাই।

    করোনাকালে আমি একটানা ছবি আঁকিনি, কিছু বিরতি আছে। শারীরিক অসুস্থতা ছিলো, ব্যাকপেইন ইত্যাদি। এমনও হয়েছে কখনো কখনো মনে ভেঙে গেছে, মনে হয়েছে এত আঁকলাম আর কি আঁকবো! কিন্তু এটাও একটা পজিটিভ দিক কারণ ছবি আঁকাতো আর রোবোটিক কাজ না যে আমি এই টাইমে এই টাইমে কাজ করবো–এভাবে ঠিক করে রাখা যায়, এইভাবে হয়না। সুতরাং একটা সময় আসে যখন ছবি আঁকা না হলেও, ছবি নিয়ে চিন্তা করা হয়।

    চিন্তা আসে, আমি যে কাজগুলো করলাম- কি জন্য করলাম! ক্রিটিক কে! আমার মনেহয় মাইসেলফ। আমিই নিজেই ক্রিটিক। আমি যখন একটা ছবি আঁকি, আমি তখন নিজেকেই জিজ্ঞেস করি কেন করছি, কি জন্য করছি। এর উত্তরগুলি আমাকে আমাকে উৎসাহিত করে। এছাড়া আমার ছবি দেখলে বোঝা যায় যে এটা মনিরের ছবি। এটাই আমার অর্জন।

    আমি ভাগ্যবান, আমি বহু কাজ করছি। কোনদিন আমাকে কেউ গিফট দেয় নাই, আর পৃথিবীতে বহু জায়গায় আমাকে সম্মান দিয়েছে, নানা প্রকার আওয়ার্ড, বাংলাদেশের একুশে পদক, স্পেনের রাষ্ট্রিয় দুটো পদক, তারপর নাশন্যাল আওয়ার্ড। যাইহোক, আওয়ার্ডটা পেলে পরে ভালোই লাগে। কিন্তু আসলে এটা এমন কিছু না। অলিম্পিক গেমসে যে আওয়ার্ডটা দেয়, সেখানে ১০০ মিটার দৌড়ে, এক হাজার ভাগ করে এক এক সেকেন্ডকে বিশ্লেষণ করে আওয়ার্ড নির্ধারন করা হয়। আর্টের বহু জায়গায় আমি দৌড়ে গেছি, বলা মুশকিল কোনটা ভালো কোনটা খারাপ। একেকজন আর্টিস্ট একেকটা ওয়ার্ল্ড নিয়ে কাজ করে, কেউ মানুষ আঁকে, কেউ ল্যান্ডস্কেপ আঁকে, কেউ স্ট্রিট লাইফ আঁকে, কেউ মিনিমাল আর্ট আঁকে, কেউ আবসট্রাক্ট আর্ট আঁকে, যে যার দুনিয়া নিয়ে আছে। যখন কোন ক্রিটিক বা বোদ্ধা বা কোন দর্শক যখন বলে কি আঁকলেন কিছু বুঝি না, তখন আমি উত্তর দেই, আমিও বুঝি না। তারা অবাক হয়, কিন্তু আমি আসলেই এক চুলও বুঝিনা। কারন ছবি আঁকায় বোঝার কিচ্ছু নাই। ইউ লাইক অর ডোন্ট লাইক। যদি আমি হিস্ট্রি লিখতাম, একটা গল্প তৈরী করতাম, একটা ইলাস্ট্রেশান করতাম ( বাচ্চাদের বইতে যেমন কমলা, আম, খরগোশ ইত্যাদি থাকে) বা একটা পোষ্টার বানাতাম, তাহলে সেখানে সবকিছু পরিষ্কার বলে দেয়া থাকতো, কিন্তু আর্টতো পোষ্টার নয়, যে সবকিছু স্পষ্টভাবে বলে দিতে বাধ্য থাকবে।

    বেশিভাগ আর্টিস্ট যারা আবস্ট্রাক্ট আর্ট আঁকে তাদের প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করছে। তার নিজের একটা ল্যাঙ্গুয়েজ থাকে, তার ল্যাঙ্গুয়েজে সে কি বলছে সেটা বোঝা মুশকিল। এইজন্যই পিকাসো বলেছিলো যে, ‘চাইল্ড ইজ দ্য বেস্ট আর্টিস্ট’ এবং বাচ্চারা ক্রিয়েটিভও। বাচ্চাদের মনটা খুব পিওর থাকে দুই থেকে ছয় বছর পর্যন্ত। ওদের আইডিয়া মৌলিক। বাচ্চাদের ছবি অপূর্ব, আমার খুব ভালোলাগে, অনেকসময় বাচ্চাদের মতো ছবি আঁকতে ইচ্ছা হয়, কিন্তু এই ৮০ বছরে এসে বাচ্চা হওয়া কঠিন, সবকিছু ভুলে বাচ্চাদের মতো করে ছবি আঁকা খুবই কঠিন।

    বিগত প্রায় দুই মাস আমি কাজ করি না, কারন ক্লান্তি আছে, বহু কাজ করার পর একসময়ে বেশ ক্লান্ত লাগে। কিন্তু এই যে কাজ করছি না–এতে একটা হতাশা তৈরী হচ্ছে মনে। ছবি আঁকা ছাড়া অন্যকোন কাজতো আমি তেমন পারি না, তাই ছবি না আঁকা মানে কোন কাজই না করা। ( কিন্তু বর্তমানে সময়ের অল্পবয়স্ক আর্টিস্টরা কত ধরনের কাজ করতে পারে, এখন আর্টের হাজার ধরনের জব হয়ে গেছে, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, গার্ডেনিং, ইন্টেরিওর ডেকোরেশন, ইলেক্ট্রনিক ডিজাইন, বহুধরনের এত এত আর্টিস্ট বের হচ্ছে পাশ করে, এরাতো মিশে যাচ্ছে বহু ধরনের আর্টের কাজে। ৫০/৬০ বছর আগে, তখন আমাকে আমার ফ্যামিলি না করতো, আর ছবি এঁকে করবি কি, একমাত্র সাইনবোর্ড লেখা ছাড়া আর কোন কাজই ছিল না! তখনতো ছবি বিক্রি হতো না। এখনকার দিনে যারা ভালো ছবি আঁকে, তারা ছবি এঁকেই বেশ ভালো জীবন যাপন করছে, কারণ বাংলাদেশের মতো জায়গায় এখন ছবি বিক্রি হচ্ছে এবং প্রচুর দামে বিক্রি হচ্ছে, এবং এটার জন্য তার কয়েক বছর কাজ করতে হবে ফোকাসে আসতে।

    দুই মাস ধরে কোন কাজ না করার পরে, এখন আবার আমার মধ্যে একটা ওয়েভ আসছে কাজ করার, উদ্বিগ্নতা বাড়ছে, এটা আমি বেশ ইতিবাচকই মনে করছি। এই যে বিরতি গেল এটা আমার জন্য ভালো হবে।
    এই করোনাকালে আমার সবাই বন্দি। এবং বিশ্বাসও চলে গেছে বন্ধুবান্ধবের উপর থেকে। কেউ কেউ বাসায় আসতে চায়, আমি না করি। আগে সবসময় কেউ না কেউ আসতো- আমি লাঞ্চ একা খেয়েছি খুব কম, ছাত্র ছাত্রী হোক, মন্ত্রি হোক বা ডিপ্লোম্যাট হোক, অনেকে আসতো, একসাথে খাওয়া দাওয়া করতো। কিন্তু এখন আর এমন হচ্ছেনা। এর ফলে একাকিত্বটা বেড়ে গেছে। আগে একাকিত্ব সেভাবে ছিলনা, একটা বিরাট কম্পানি সবসময় থাকতো।

    আমার অনেকবার মনে হয়েছে, ছবির এই জগতে না থাকলে হয়তো আমি এতদিনে মরেই যেতাম। বয়সতো অনেক, এই আগষ্টে ৭৯ হলো। এখনও ইনশাল্লাহ ভালো আছি, সক্ষম আছি। এই স্বল্প জীবনে, প্রতিটা মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ।

    কাজ করে যেতে চাই, তাইই করতে হবে, কেন না কাজই থাকবে। অনেকে আমার ছড়ানো ছিটানো সহস্র কাজগুলির ভবিষৎ নিয়ে জানতে চায়, মিউজিয়াম করে সংরক্ষণ করতে চায়। আমি সবসময় বলি এসব কাজ সময় মতো নিজের গন্তব্য পৌছাবে। আমি জানি না কী হবে।

    কিন্তু এত কাজ করার কারণে আমি একটা আনন্দ পাই, বা একটা টেনশন বা নার্ভাসনেস থাকে কাজটা করার সময়, যদি কোন ছবিতে মিরাকেলি কোন কিছু ঘটে যায়, নিজেই যদি চমকে যাই, এই আনন্দটা- এমন কিছু ঘটার অপেক্ষা করি।

    করোনাকালে আমি প্রায় ২০০ এর মতো ছবি এঁকেছি। এর ভিতরে ছোট্ট ছবি আছে যেটা হতে পারে ৩ ইঞ্চি বাই ৫ ইঞ্চি, আবার এমন ছবিও আছে যেইটা ৫ বাই ৭ ফুট। ছবিতে আসলে ছোট বড় কিছু নাই, প্রধান বিষয়টা হচ্ছে স্কেল, ছোট ছবিটাকে আমি যদি ১০ ফুটে আঁকি তাহলে সেটা মানাবে না।
    অসংখ্য ছবি জমে গেছে আমার: হাজার হাজার, এগুলো আঁকা শেষ হবে না। এর ভিতর পেইন্টিং আছে, ড্রয়িং আছে, জল রঙ আছে, প্রিন্ট আছে, গ্রাফিক্স আছে। একটা টাইমে হতাশ হয়ে যাই, আবার দেখা যায় পরে আঁকছি, এই প্রসেসে চলছে কাজ।

    আমরা শিল্পী হিসেবে আলাদা কোন ব্যক্তি না, আমরা আর সকলের মতোই। যেহেতু মহামারী সময়ে বাইরে বের হওয়াটা বিপজ্জনক, সারাদিন ঘরে থাকছি, নিজের কাজ, কাপড় ধোয়া ইত্যাদিতেই সময় চলে যায়। ছবি দেখি, এসব চিন্তা করি এবং ছবি আঁকি। নিজেই রান্না করে খাই, স্পেনে থাকতেও নানারকম এক্সপেরিমেন্ট করেছি খাবারের রেসিপি নিয়ে, এখনও করছি, এইভাবেই দিন কাটছে।
    দ্রুতই যেন এই মহামারী চলে যায়, স্বাভাবিকতায় ফিরে আসুক সবকিছু– এমনটাই কামনা।

  3. মাসুদ করিম - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ (৪:১৪ অপরাহ্ণ)

    বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র: বাহাত্তরের সংবিধান ও সমতামুখী সমাজের আকাঙ্ক্ষা
    https://samakal.com/tp-kaler-kheya/article/2109122084/%E0%A6%AC%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%93-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%96%E0%A7%80-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE

    বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আবুল ফজল একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছিলেন, যার নাম ‘শেখ মুজিব :তাঁকে যেমন দেখেছি’। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৮ সালে, কিন্তু মূল লেখাগুলো রচিত হয়েছে বেশ আগেই। লেখাগুলো স্মৃতিচারণমূলক- অনেকক্ষেত্রে ‘রোজনামচা’ থেকে সরাসরি উদ্ধৃতি দেওয়া। ১৯৭৬ সালের ২৬ আগস্ট একটি রোজনামচায় তিনি লিখেছেন:

    ‘নিঃসন্দেহে শেখ ছিলেন এ যুগের সর্বপ্রধান বাঙালী। যে সর্বপ্রধান বাঙালীকে আমরা বাঙালীরাই কি না নিজের হাতে হত্যা করলাম! আশ্চর্য, এমন অবিশ্বাস্য ঘটনাও সত্য হলো। বাঙালীকে বাঙালী বলে পরিচয় দিতে কে জুগিয়েছিল সাহস? শেখ মুজিব নয় কি? বজ্রগর্ভ আর অমিত প্রেরণার উৎস ‘জয় বাংলা’ শ্নোগান কে তুলে দিয়েছিল বাঙালীর মুখে? শেখ মুজিব নয় কি? জিন্দাবাদে সে জোর, সে চেতনা, সে উদ্দীপনা কোথায়? জয় বাংলা প্রদীপ্ত শিখা, জিন্দাবাদ ধার করা এক মৃত বুলি। গ্রাম বাংলার শতকরা নব্বইজন যার অর্থই বুঝে না। এ যুগের শ্রেষ্ঠ বাঙালী মুসলমান শেখ মুজিব- এ কথা বল্লে কিছুমাত্র অত্যুক্তি করা হয় না। হিন্দু বাঙালীয়ানা আর মুসলমান বাঙালীয়ানায় কিছুটা পার্থক্য আছে। তাই মুসলমান কথাটা যোগ করলাম। তবে এ পার্থক্য সবসময় বিরোধমূলক নয়। শেখ মুজিবের বেলায় যেমন তা ছিল না। তাঁর সমগ্র মুসলমানিত্ব নিয়েই তিনি এক পরিপূর্ণ বাঙালী ছিলেন। এমন বাঙালী বিরল। এ বিরল বাঙালীটিকেই কি না হত্যা করা হয়েছে। আমরা নিজেরাই করেছি। এ যেন নিজের অঙ্গ নিজে ছেদন করা।’

    এই অনুশোচনা ও পিতৃহত্যার গ্লানি জাতির বিবেককে প্রতি মুহূর্ত দংশন করছে এটা বারবার ওই পুস্তকে উচ্চারিত হয়েছে। এটা কাকতালীয় নয় যে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের রাজধানীর নাম ‘মুজিব নগর’ করা হয়েছিল- সেটা আর কারও নামে নয়, শেখ মুজিবের নামেই। অন্যত্র আবুল ফজল লিখেছেন: ‘এ স্বাধীনতার জন্য আমরা শেখ মুজিবের কাছে ঋণী। তিনি সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও তাঁর নাম যাদুমন্ত্রের মতো কাজ করেছে। তাঁর ইচ্ছা-অনিচ্ছা ব্যতিরেকে এবং অনুপস্থিতিতে যে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল তাঁকেই করা হয়েছিল সে সরকারের রাষ্ট্রপতি এবং সে সরকারই নিয়ন্ত্রণ করেছে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে, সে সরকারের বাস্তব বা কাল্পনিক রাজধানীর নাম ‘মুজিব নগর’ হয়েছিল। অন্য নাম কারো মাথায় আসেনি।’ ১৯৭৫ সালের ৪ অক্টোবরের রোজনামচায় তিনি আরও লিখেছেন:

    ‘সাম্প্রতিক ঘটনায় শেখ সাহেবের হত্যা সম্পর্কে আমি অনবরত বিবেকের একটা দংশন অনুভব করছি। এত বড় একটা দ্বিতীয় কারবালা ঘটে গেল দেশে, নির্মমতায় যে ঘটনার জুড়ি নেই ইতিহাসে। সে সম্পর্কে দেশের সর্বাপেক্ষা সচেতন অংশ শিক্ষিত আর বুদ্ধিজীবী সমাজ কিছুমাত্র বিচলিত বোধ করছেন না, এ ভাবা যায় ন। আশ্চর্য, মননশীল লেখক-শিল্পীদের মধ্যেও তেমন একটা সাড়া দেখা যায়নি এ নিয়ে।… এত বড় একক ট্র্যাজিক ঘটনা তাঁরা আর কোথায় খুঁজে পাবেন লেখার জন্য?’

    আবুল ফজল বারে বারে এটাই বলতে চেয়েছেন, বাঙালিদের জন্য একটি নিজস্ব স্বাধীন আবাসভূমি শেখ মুজিবই দিয়ে গেছেন, অথচ তাকেই আমরা কী অবহেলাই না করেছি তার মৃত্যুর পর- অনেক অনেক দিন পর্যন্ত! প্রশ্ন উঠতে পারে, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে গড়া ‘বাঙালিদের’ জন্য এক স্বতন্ত্র স্বাধীন আবাসভূমি তার মধ্যে কি ‘অন্য জাতি-উপজাতি’ও পড়েন? এ নিয়ে কিছুটা ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে গত তিন দশকে। সে বিষয়ে দ্রুত আলোকপাত করতে চাই।

    এর আগে এ বিষয়ে ইংগিত দেওয়ার চেষ্টা করেছি যে বঙ্গবন্ধুর ‘বাঙালি’ ও ‘বাংলার মানুষ’ এই শব্দযুগলের মধ্যে বৃহত্তর পরিচিতির আভাস পাই। এই পরিচিতিকে (আইডেনটিটি) কেবল নিছক ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’ (মেজোরিটারিয়ান) জনগোষ্ঠীর পরিচয় হিসেবে নির্দিষ্ট করা চলে না। এর মধ্যে প্রথাগত-অর্থে যারা বাঙালি তারাও আছেন, আবার যারা মাতৃভাষা হিসেবে বাঙালি নন, তারাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ যে ধরনের ‘মহাজাতি’ গঠনের কল্পনা করেছিলেন, শেখ মুজিবের কাছে ‘বাঙালি’ ছিল তেমনি এক মহাজাতিক প্রকল্প। যার মধ্যে বাঙালি হিন্দুরাও পড়েন, বাঙালি মুসলিমও পড়েন। কারও কারও কানে এটা কষ্টকল্পিত দাবি বলে মনে হতে পারে, সে জন্যে বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে গণপরিষদ বিতর্কে অংশ নেওয়া এএইচএম কামারুজ্জামান সাহেবের বক্তব্যের একটি অংশ তুলে ধরছি। এই ভাষণের প্রেক্ষাপটটি বলি। এর একদিন আগেই নির্দলীয় সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তার ‘ডিসেন্ট’ ব্যক্ত করেছেন। তিনি গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন:

    ‘এই খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি আমাদেরকে সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। এই খসড়া সংবিধানে আমাদের অবহেলিত অঞ্চলের কোন কথা নাই।… পার্বত্য চট্টগ্রাম হল বিভিন্ন জাতি-সত্তার ইতিহাস। কেমন করে সেই ইতিহাস আমাদের সংবিধানের পাতায় স্থান পেল না, তা আমি ভাবতে পারি না। সংবিধান হচ্ছে এমন একটা ব্যবস্থা, যা অনগ্রসর জাতিকে, পিছিয়ে-পড়া, নির্যাতিত জাতিকে অগ্রসর জাতির সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে নিয়ে আসার পথ নির্দেশ করবে। বস্তুতপক্ষে এই পেশকৃত সংবিধানে আমরা সেই রাস্তার সন্ধান পাচ্ছি না।’ এর কিছু পরে লারমা যোগ করলেন- ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের একটা ইতিহাস আছে এবং সেই ইতিহাসকে কেন এই সংবিধানে সংযোজিত করা হল না?… এই সংবিধানে মানুষের মনের কথা লেখা হয়নি। কৃষক, শ্রমিক, মেথর, কামার, কুমার, মাঝি-মাল্লার জন্য কোন অধিকার রাখা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগণের অধিকারের কথাও সংবিধানে লেখা হয়নি।’ এর পর সভা পরদিন সকাল পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়।

    মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার সেদিনের বক্তব্য পুনরুক্তিমূলক ও আবেগ-আক্রান্ত ছিল। কিন্তু আবেগের আতিশয্যের কারণেই এই কথাগুলোকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার কোনো হেতু নেই। রাজনীতিতে ‘পার্সেপশন’ একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। এটা ভেবেই তৎকালীন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান এর পরের দিন একটি পরিশীলিত প্রত্যুত্তর দিলেন লারমার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। প্রথমেই তিনি লক্ষ্য করলেন যে, ‘সংবিধানে সবকিছু লেখা থাকে না এবং সব কথা লিখেই শুধু মানুষের কল্যাণ সাধন করা যায় না। সংবিধানের পরে আসে আইন, আসে আরও অনেক কর্তব্য।’ দ্বিতীয়ত, তিনি লারমাকে ‘আঞ্চলিকতার’ কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। লারমাকে উদ্দেশ করে তিনি বললেন যে, ‘আমার বন্ধু পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সদস্য গণপরিষদে তাঁর অঞ্চলের কথা বলেছেন। তাতে আপত্তি নাই। কথা বলা খারাপ নয়। তবে আঞ্চলিকতা পরিহার করা অত্যন্ত প্রয়োজন, যে আঞ্চলিকতা মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে।’

    তৃতীয়ত, কামারুজ্জামান বললেন যে, জাতীয় পরিকল্পনার চৌহদ্দি গোটা বাংলাদেশ জুড়েই। সেই পরিকল্পনা পার্বত্যবাসীদের বাদ দিয়ে নয়। তাদের উন্নতির রাস্তা ঐ জাতীয় পরিকল্পনার নির্দেশিত পথেই নিহিত। তিনি বললেন, ‘কিন্তু সেই সঙ্গে এ কথাও সত্য যে, এই সমাজের কোনো অংশ অবহেলিত ও উপেক্ষিত হলে ক্ষমতাসীন সরকার যদি সেই অবহেলিত, উপেক্ষিত মানুষের জন্য কোন কিছু না করে, তাহলে তা হবে অন্যায়। আমরা কল্পনা করেছি সমস্ত অঞ্চলকে একটা অঞ্চল হিসাবে। তাই আগামী দিনে আমাদের [পার্বত্য] বন্ধুদের পরিস্কার নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, এই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোন আঞ্চলিকতা থাকবে না। এই বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলকে একটি অঞ্চল হিসাবে পরিকল্পনা করে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে একটি সামাজিক জীব হিসেবে কল্পনা করে উন্নত করা হবে।’

    চতুর্থত, লারমাকে আশ্বস্ত করে তিনি বললেন যে, ‘ইতিহাস আমরা জানি, ইতিহাস আমরা অস্বীকার করি না।’ এদিকে ‘আমাদের সুতীক্ষষ্ট দৃষ্টি আছে’ এবং এটাও ঠিক যে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোন অঞ্চলের প্রতি যদি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়, তাহলে অন্যায় করা হবে’। কেননা, তাতে করে ‘সেই ব্যাধি শুধু সেই অঞ্চলেই থাকবে না- সেই ব্যাধি বাংলাদেশের প্রতিটি স্তরে, সারা বাংলাদেশেই ছাড়িয়ে পড়বে।’

    সবশেষ, তিনি মহাজাতির মধ্যে বিভিন্ন জাতির সহাবস্থানের ইনোভেটিভ যুক্তিটি পেশ করলেন। এটি হচ্ছে ‘সেলিব্রেটিং ডাইভার্সিটির’ যুক্তি :’আমার পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাইরাও অধিকার পাবেন। কোন অংশ হতেই তাঁরা বঞ্চিত হবেন না। বাঙালী হিসাবে আমরা বেঁচে থাকব। একটা জাতির অভ্যন্তরে বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণে বৈচিত্র্য অনেক বেশী, মাধুর্য অনেক বেশী। এই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে শুধু এক জাতি, এক কৃষ্টি, এক সংস্কৃতি- তা নয়। বহু অঞ্চলের বহু মানুষ আছে, তাদের নিজস্ব অনেক কিছু আছে। শত বৈচিত্র্য নিয়ে আমরা আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকব। কিন্তু সর্বোপরি থাকবে আমাদের বাঙালী জাতীয়তাবাদ। সেই জাতীয়তাবাদ অক্ষুণ্ণ রেখে সেই জাতির অভ্যন্তরের প্রতিটি মানুষের প্রতি আমরা সম-দৃষ্টি রেখে আমাদের জাতীয়তাবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করব।’

    এর থেকে কি কোনোভাবে এই অনুমান করা চলে যে বঙ্গবন্ধু ও তার নিকটতম সহকর্মীরা পার্বত্যবাসীকে সমতলবাসী হয়ে যেতে বলেছেন, বা পাহাড়ি জনগণকে ‘বাঙালি’ হয়ে যেতে বলেছেন? অথচ এরকমই অবাস্তব অভিযোগ তোলা হয়েছে পরবর্তীকালে কোনো কোনো মহল থেকে। এমনকি শেখ মুজিবকেও এ পরিপ্রেক্ষিতে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে তারা দ্বিধাগ্রস্ত হননি। সেটা করা যেতেই পারে যদি তার পেছনে জোরালো যুক্তি থাকে। দুঃখের বিষয়, অতীতে এই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতার পরিচয় দেওয়া হয়নি। যেমন, পার্বত্য ইস্যুতে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত লেখিকা তার কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পন্ন পি,এইচ,ডি অভিসন্দর্ভে এই মর্মে অভিযোগ তুলেছেন যে শেখ মুজিব পাহাড়ি জনগণকে তাদের পৃথক পরিচিতি/আত্মসত্তা (আইডেনটিটি) ‘ভুলে গিয়ে বাঙালি’ হয়ে যেতে বলেছেন। মূল ইংরেজিতে বিবরণটি এই রকম: ‘He therefore asked the Hill people to forget about their separate identity and to become Bengalis’ এর সপক্ষে লেখিকা আমেনা মোহসীন সমর্থন হিসেবে দেখিয়েছেন একটি মাত্র তথ্যসূত্রের উৎস। সেটি হচ্ছে, অনন্ত বিহারী খীসার সঙ্গে সাক্ষাৎকার (যেটি ১৯৯৩ সালের অক্টোবর মাসে নেওয়া)। লেখিকা আমাদের জানিয়েছেন যে, ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে যে প্রতিনিধি দল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন অনন্ত বিহারী খীসা। স্বাধীনতার আগে ও পরে বঙ্গবন্ধুর অসংখ্য বক্তৃতা-বিবৃতি বিচার করেও অনন্ত বিহারী খীসার বক্তব্যের সমর্থনে কোনো লাইন আমি অদ্যাবধি খুঁজে পাইনি। এমনকি এই মর্মে কোনো ইংগিতও পাইনি। এটি যদি শেখ মুজিবের চিন্তার একটি ‘স্তম্ভ’ হতো তাহলে কোথাও না কোথাও এর চিহ্ন (ঃৎধপব) থাকত। বরং এর বিপরীতেই তথ্য-প্রমাণের পাল্লা ভারী। শেখ মুজিব পূর্বাপর দেশের অনগ্রসর জাতি-গোষ্ঠী ও নৃগোষ্ঠী নিয়ে তার উন্নয়ন-বাসনা ব্যক্ত করেছেন, এবং আন্তরিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কয়েকটি উদাহরণ।

    প্রথমত, যে সভার বরাত দিয়ে কথিত ‘বাঙালি হয়ে যেতে’ বলা হয়েছে তা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার এক মাস পরে। এর পরে ১১ এপ্রিল ‘খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি’ গঠন করা হয়। কয়েক মাস কাজের পরে কমিটি তৎকালীন বাংলাদেশ গণপরিষদে ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর খসড়া সংবিধানটি উত্থাপন করে এবং অনেক আলাপ-আলোচনার পর সেটি ৪ নভেম্বর সংশোধিত হয়ে গৃহীত হয়। এখন দেখা যাক যে খসড়া সংবিধানে, গণপরিষদ বিতর্কে বা চূড়ান্তভাবে গৃহীত সংবিধানের পাঠে কোথাও পাহাড়ি জনগণকে ‘বাঙালি’ হয়ে যেতে বলা হয়েছিল কিনা বা সেরকম ইংগিত দেওয়া হয়েছিল কিনা। বা কেউ সেরকম ইংগিত দিয়ে থাকলেও তা গণপরিষদের অনুমোদন পেয়েছিল কিনা। সেরকম কিছু সংবিধানে থাকলে বা গণপরিষদ বিতর্কের প্রধান সুর হয়ে দাঁড়ালে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার কথায় ও কাজে তা প্রতিফলিত হতো নিশ্চয়ই। কিন্তু তা কি আমরা দেখতে পাই? মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বাহাত্তর সালের সংবিধানের গৃহীত চূড়ান্ত পাঠে সই করেছিলেন। শুধু সই করা নয়, এই সংবিধানের বিভিন্ন অধ্যায়ের সঙ্গে তিনি সহমতও ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে গভীর বোঝাবুঝির কারণে তিনি আস্থা রাখতে পেরেছিলেন যে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে যে সংবিধান তৈরি হয়েছে তারই পথরেখা ধরে লারমার স্বপ্নেরও বাস্তবায়ন ঘটবে তথা পাহাড়ি জনগণের জীবনের আমূল উন্নয়নও ঘটবে।

  4. মাসুদ করিম - ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ (৪:১০ পূর্বাহ্ণ)

    নারীবাদী ‘আইকন’ কমলা ভাসিন আর নেই
    https://bangla.bdnews24.com/world/article1945367.bdnews

    উপমহাদেশে নারী অধিকার আন্দোলনের সুপরিচিত কর্মী, দক্ষিণ এশিয়ায় ‘ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং’ প্রচারণার অন্যতম মুখ কমলা ভাসিন ৭৫ বছর বয়সে মারা গেছেন।

    বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার ফুসফুসে পানি জমে গিয়েছিল। অবস্থা খারাপ হলে শুক্রবার তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়।

    চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ৩টার দিকে কমলা মারা যান বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।

    নারীবাদী এ কবি, লেখক তিন দশক ধরে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জেন্ডার, উন্নয়ন, শান্তি ও মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করেছেন।

    কমলা নিজের পরিচয় দিতেন ‘প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সমাজবিজ্ঞানী’ হিসেবে। নারীবাদ ও নারী সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি একাধিক বই লিখেছেন।

    তার মৃত্যুর খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ভরে উঠছে একের পর এক শোকবার্তায়।

    শোক জানানোদের তালিকায় দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনিশ সিসোদিয়া, সামাজিক আন্দোলনদের কর্মী হর্ষ মান্দেরও আছেন।

    “কমলা ভাসিন কেবল নারী অধিকার কর্মী ছিলেন না, ছিলেন লোকহিতৈষীও। তিনি জনস্বার্থে অসংখ্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যার মধ্যে আছে হিমাচল প্রদেশের জাগোরি, রাজস্থানে স্কুল ফর ডেমোক্রেসি। অনেকেই তাকে মিস করবে। তার আত্মা শান্তিতে থাকুক,” টুইটারে লিখেছেন আইনজীবী, অধিকার কর্মী প্রশান্ত ভুষণ।

    পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত সুনিতা কৃষ্ণন লিখেছেন, “নারী আন্দোলনের বড় ক্ষতি হয়ে গেল।”
    সমাজকর্মী কবিতা শ্রীবাস্তব তার টুইটে লেখেন, “কমলার মৃত্যু ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ায় নারী আন্দোলনের জন্য বড় ধাক্কা। যত প্রতিবন্ধকতাই থাকুক, কমলা লড়তেন। তিনি আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।”

    “কমলা ভাসিন ছিলেন, থাকবেন নারীবাদীদের আশার বাতিঘর হয়ে। তার চিন্তাভাবনা আমাকে অনেকবারই নিজেকে বদলে নিতে সহযোগিতা করেছে। আমরা সবসময়ই তাকে মিস করবো, কিন্তু তার বলা শব্দগুলো সর্বত্র, সবসময় মেয়েদের পথ দেখাবে,” লিখেছেন লেখক রিচা সিং।

    কমলা বিশ্বজুড়ে ছাপ ফেলা ‘ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং’ প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে এক দশক আগে এই প্রচারণা শুরু হয়েছিল।

    ২০০২ সালে কমলা ‘সঙ্গত’ নামের একটি ফেমিনিস্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। তিনি জাতিসংঘে কর্মরত থাকলেও পরে নেটওয়ার্কের কাজে বেশি সময় দেওয়ার আগ্রহে চাকরি ছেড়ে দেন।

    ২০১৭ সালে তিনি ‘লাডলি লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে’ ভূষিত হয়েছিলেন।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.