সুপারিশকৃত লিন্ক: ডিসেম্বর ২০২০

মুক্তাঙ্গন-এ উপরোক্ত শিরোনামের নিয়মিত এই সিরিজটিতে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। কী ধরণের বিষয়বস্তুর উপর লিন্ক সুপারিশ করা যাবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, মানদণ্ড বা সময়কাল নেই। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই তাঁরা মন্তব্য আকারে উল্লেখ করতে পারেন এখানে।
ধন্যবাদ।

আজকের লিন্ক

এখানে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই সুপারিশ করুন এখানে। ধন্যবাদ।

১০ comments

  1. মাসুদ করিম - ৪ ডিসেম্বর ২০২০ (২:৪১ অপরাহ্ণ)

    প্রতিমা বনাম ভাস্কর্য: হাদিস ও কোরানের রেফারেন্স

    সরকার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর বিরুদ্ধে প্রায় সব আলেম দাঁড়িয়ে গেছেন এবং তাদের অসংখ্য অনুসারী আছেন। তারা দাবি করছেন, ইসলামে সব মূর্তি অবৈধ; সরকার বলছে- শুধু উপাসনার প্রতিমা অবৈধ, সম্মানের ভাস্কর্য বৈধ। নানা পক্ষের হুংকারে প্রায় যুদ্ধাবস্থা! বর্তমান বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে আমরা দেখবো কোরান ও হাদিসে ভাস্কর্য এবং এর বিরোধিতা নিয়ে ঠিক কী বলা আছে। পাঠকের সুবিধায় লেখাটি চার অংশে ভাগ করে নিয়েছি- (ক) কারণ, (খ) বাস্তবতা, (গ) কোরান এবং (ঘ) হাদিস।

    ক. ভাস্কর্য বিরোধিতার কারণ

    বিশেষজ্ঞের মতে অতিরিক্ত কেতাব-প্রবণতা ধর্মগুরুদেরকে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। অক্ষরের এই কারাগারকে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ শারিয়াবিদ ড. হাশিম কামালী বলেছেন আক্ষরিকতা “LITERALISM- প্রিন্সিপলস অব ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স। তখন শুরু হয় কে কার চেয়ে কত বেশি অক্ষর-শব্দ-দাঁড়ি-কমা জানেন বা “ব্যাখ্যা” করতে পারেন সেই বিপজ্জনক প্রতিযোগিতা। হ্যাঁ, অতীতে মানুষ ভাস্কর্যের পূজোআর্চা করতো যা তৌহিদের বিপক্ষে। তাই যদি সেই সময়ে ভাস্কর্য নিষিদ্ধ হয়েও থাকে, তবুও সেটা তখনকার প্রজ্ঞা, এখনকার নয়। ঠিক যেমন জিজিয়া কর বা দাসপ্রথার ওপরে কোরান রসুলের (স.) হুকুমগুলো তখনকার প্রজ্ঞা, এখনকার নয়। বর্তমানে ভাস্কর্য-বিরোধিতার কারণ কী? ভাস্কর্য দেখে কি কোনও মুসলিমের ঈমান আকিদার ক্ষতি হয়েছে? হয়নি। কোনও মুসলিম কি ধুপধুনো জ্বেলে তার ইবাদত শুরু করেছে? করেনি। কেউ ভাস্কর্যের ইবাদত শুরু করবে সে সম্ভাবনা কি আছে? নেই, একেবারেই নেই। অর্থাৎ বর্তমানে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে “কেতাবে আছে” ছাড়া আর কোনো কারণ বা প্রজ্ঞা নেই। তাহলে দেখা যাক কেতাবে কী আছে এবং সেটা বর্তমানের বাস্তব-বান্ধব কিনা।

    খ. বাস্তবতা

    বিভিন্ন কারণে বহু দেশসহ মুসলিম দেশগুলোতেও ভাস্কর্য আছে শত শত। এমনকি পাকিস্তানেও জিন্নাহর বিশাল ভাস্কর্য আছে। সেসব দেশের আলেমরা কোনোদিন মিছিল হুংকার তো দূরের কথা, কোনোই আপত্তি করেননি। অর্থাৎ তাদের মতে ইসলামে ভাস্কর্য বৈধ। পুরো মুসলিম দেশগুলোর আলেমরা ভাস্কর্যের বিপক্ষে নন কিন্তু আমাদের আলেমরা ভাস্কর্যের বিপক্ষে কেন- এ প্রশ্নের জবাব আমাদের পেতেই হবে। কেন আমাদের আলেমরা তাদের সাথে কথা বলে উনাদের যুক্তিগুলো জানতে চান না? আশ্চর্য এই যে সৌদি আলেমদের সাথে মতে মিললে আমাদের আলেমরা বলেন, “ওখানেই তো ইসলাম এসেছিল উনারাই তো সবচেয়ে বেশি ইসলাম বোঝেন।” আর মতে না মিললেই বলেন, “সৌদি কী করে না করে তাতে কিছুই এসে যায়না, আমাদের ব্যাখ্যাই ঠিক।” কিন্তু বিষয়টা তো বিশেষ কোনো দেশ বা সরকারের নয়, বিষয়টা হল ভাস্কর্যের প্রতি এতো দেশের এতো এতো আলেমদের সম্মতি। সরকারের উচিত ওই আলেমদেরকে এনে দেশের আলেমদের সাথে বসিয়ে দেয়া যাতে উনারা সমস্যাটার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেন।

    কোরানে ‘বিসমিল্লাহ’ সহ ৬৩৪৯ আয়াত এবং সহি সিত্তার মোটামুটি ২৮,০০০ হাদিস মিলে মোটামুটি ৩৪,৩৫০টি ইসলামী সূত্রের বহু জায়গায় অবৈধ করা হয়েছে “উপাসনার প্রতিমা” অর্থাৎ IDOL. কিন্তু STATUE অর্থাৎ ভাস্কর্য্যকে অবৈধ করা হয়েছে মাত্র একটাতে – সহি মুসলিম বুক ২৪-৫২৫০। সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। বলা বাহুল্য সহি মুসলিমে আছে রসুল (স) সবাইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সব সমাধি-সৌধ ভেঙে ফেলতে। আদেশটায় প্রজ্ঞা আছে, কারণ লোকে ওগুলোতে চাদর জড়িয়ে ইবাদত শুরু করে। কিন্তু সমাধি সৌধ আর ভাস্কর্য এক নয়।

    গ. কোরান

    সূরা সাবা আয়াত ১৩: They made for him what he willed: synagogues and statues, basins like wells and boilers built into the ground.

    অনুবাদ: সূরা সাবা আয়াত ১৩: তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, কুয়ার মতো বৃহদাকার পানির পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত।

    কোরান মেনে চললে এখানেই সিদ্ধান্ত হয়ে চ্যাপ্টার ক্লোজ হবার কথা, কিন্তু তা হয়নি। শব্দ বাক্য দাঁড়ি কমা নিয়ে অন্তহীন চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে, যা করে অতীতের অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। কোরানে প্রতিমা, প্রতিমা-পূজারী এবং ধর্মগুরুকে উপাস্যের স্থানে বসানোর নিন্দা আছে ও পরিহার করতে বলা হয়েছে সুরা হজ ৩০, ইব্রাহিম ৩৬, আনকাবুত ১৭, নুহ ২৩-২৪, মায়েদা ৯০, আম্বিয়া ৫২ ইত্যাদিতে।

    কোরানের ‘রিজস’ ও সংশ্লিষ্ট শব্দের বাংলা তর্জমাতে শব্দ “মূর্তি” ব্যবহার করা হয়েছে যার মধ্যে দুর্গামূর্তি গান্ধীমূর্তি, হনুমান-সাপ-মাছ উপাসনার প্রতিমা, সম্মানের ভাস্কর্য- সবই অন্তর্ভুক্ত। ইংরেজিতে উপাসনার মূর্তি (প্রতিমা- IDOL) ও সম্মানের ভাস্কর্যের মূর্তি (STATUE) আলাদা দুটো শব্দ। আলেমরা কোরানের শব্দটার কি ইংরেজি অনুবাদ করেছেন? প্রাচীন সভ্যতাগুলোতে গুহায়, পাহাড়ের গায়ে বা পরের আমলের নগরগুলোতে মানুষ, প্রাণী ইত্যাদির ভাস্কর্য থাকত। কিন্তু আরবভূমিতে প্রাচীন সভ্যতা নেই তাই কোনো ভাস্কর্যও ছিলনা। অতএব, যার অস্তিত্ব নেই তা নিষিদ্ধ করার সুযোগও নেই। তাই কোরানে যেখানে নবী সুলায়মানের (আ) রাজপ্রাসাদে ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা দিয়ে সেটা বৈধ করা আছে, সেই সূরা সাবা আয়াত ১৩ ছাড়া কোরানের ইংরেজী অনুবাদে কোথাও STATUE অর্থাৎ “ভাস্কর্য” শব্দটিই নেই। আমি বহুল প্রচারিত ইউসুফ আলী ও পিকথল-এর অনুবাদ থেকে একথা বলছি।

    (কোরান – ইউসুফ আলী’র ইংরেজী অনুবাদ-ফ্রি ডাউনলোড – https://globalquran.com/download/download.php?file=pdf/English-Quran-Yusuf-Ali.pdf কোরান – মার্মাডিউক পিকথল-এর ইংরেজী অনুবাদ-ফ্রি ডাউনলোড –

    https://www.globalgreyebooks.com/meaning-of-the-glorious-quran-ebook.html)

    ঘ. হাদিস

    এবারে সহি সিত্তা অর্থাৎ আমাদের ছয়টি সহি হাদিস গ্রন্থ- সহি বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও তিরমিযী। হাদিসের অনুবাদক আলেমরা কী প্রমাণ করেছেন?

    সহি বুখারি

    পুরো সহি বুখারিতে STATUE অর্থাৎ ভাস্কর্য শব্দটিই নেই, IDOL অর্থাৎ উপাসনার প্রতিমার উল্লেখ আছে এই হাদিসগুলোতে – ১ম খণ্ড ৬, ২য় খণ্ড ৩০৩, ৬৭১, ৭০৬, ৩য় খণ্ড ১৮, ৪৩৮, ৬৫৮, ৪র্থ খণ্ড ২৬২, ২৭৬, ৪৬১, ৫৫৮, ৫৭৮, ৭২৩, ৫ম খণ্ড ১৬৯, ২০৬, ৩৭৫, ৬ষ্ঠ খণ্ড ২২, ৮৯, ১০৪, ১৪৭, ২৪৪, ৩৮৪, ৪৪২, ৪৪৭, ৪৪৮, ৪৭৮, ৪৮৩, ৭ম খণ্ড ৩৮২, ৩৮৩, ৮ম খণ্ড ২২৬, ২৭১, ৩১৪, ৩৪৫, ৯ম খণ্ড ২৩২, ৫২৭ ও ৫৩২।

    সহি নাসাঈ

    ১ম খণ্ড – STATUE অর্থাৎ ‘ভাস্কর্য’ শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ আছে ১৩টি জায়গায়,

    ২য় খণ্ড – STATUE অর্থাৎ ‘ভাস্কর্য’ শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ আছে ১৬টি জায়গায়,

    ৩য় খণ্ড – STATUE অর্থাৎ ‘ভাস্কর্য’ শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ আছে ২৭টি জায়গায়,

    ৪র্থ খণ্ড – STATUE অর্থাৎ ‘ভাস্কর্য’ এবং IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ শব্দ দুইটির কোনোটিই নেই,

    ৫ম খণ্ড – STATUE অর্থাৎ ‘ভাস্কর্য’ শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ আছে ২০টি জায়গায়,

    ৬ষ্ঠ খণ্ড – STATUE অর্থাৎ ‘ভাস্কর্য’ শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ আছে ২৫টি জায়গায়।

    সহি ইবনে মাজাহ

    ১ম খণ্ড – STATUE অর্থাৎ ‘ভাস্কর্য’ শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ আছে ১৯টি জায়গায়,

    ২য় খণ্ড – STATUE অর্থাৎ ‘ভাস্কর্য’ শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ আছে ৮টি জায়গায়,

    ৩য় খণ্ড – STATUE অর্থাৎ ‘ভাস্কর্য’ শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ আছে ৩টি জায়গায়,

    ৪র্থ খণ্ড – STATUE অর্থাৎ ‘ভাস্কর্য’ শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ আছে ৭টি জায়গায়,

    ৫ম খণ্ড – STATUE অর্থাৎ ‘ভাস্কর্য’ শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ আছে ২৮টি জায়গায়।

    সহি আবু দাউদ

    STATUE অর্থাৎ “ভাস্কর্য” শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ আছে ১১টি জায়গায়।

    সহি তিরিমিযী

    IDOL অর্থাৎ ‘প্রতিমা’ আছে ৮ জায়গায়। আর STATUE অর্থাৎ ভাস্কর্য আছে হাদিস ২৭৬৪-এ যেটার বিষয় এ নিবন্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়।

    সহি মুসলিম

    IDOL অর্থাৎ উপাসনার প্রতিমার উল্লেখ আছে এই হাদিসগুলোতে – বুক ১ – ৩০৪, ৩০৫, ৩৫২, ৩৬৭, বুক ৪ -: ১৮১২, বুক ৫ – ২৩১৮, বুক ৭ – ২৯২৩, বুক ১০ – ৩৮৪০, বুক ১৫ – ৪০৪৩, বুক ১৯ – ৪৩৯৫, ৪৩৯৭, ৪৩৯৮, ৪৪৩১, বুক ৩১ – ৬০৪৬, ৬০৫৩, বুক ৪০ – ৬৮৩৯ ও বুক ৪১ – ৬৯৪৪, ৭০২৩। আর STATUE অর্থাৎ ভাস্কর্যকে অবৈধ করা আছে মাত্র একটি হাদিসে- বুক ২৪-৫২৫০।

    অর্থাৎ আমরা দেখলাম, কোরান-হাদিসের মোটামুটি ৩৪,৩৫০টি ইসলামী সূত্রের মাত্র একটাতে STATUE অর্থাৎ ভাস্কর্যকে অবৈধ করা আছে, সহি মুসলিম বুক ২৪- ৫২৫০। আমরা বলতে পারি, সহি হাদিস নিয়ে আমাদের আলেমদের আলোচনার সুযোগ আছে। যেমন, আলেমরা আমাদেরকে শিখিয়েছেন রসূল (স) মক্কায় ছিলেন ১৩ বছর, মদিনায় ১০ বছর। কিন্তু ওই সহি মুসলিমেই আমরা পাই তিনি মক্কায় ছিলেন ১৫ বছর- বুক ০৩০, হাদিস ৫৮০৫। সহি বুখারিতে ৩টি হাদিসে আছে তিনি মক্কায় ছিলেন ১৩ বছর (৫ম খণ্ড ১৯০, ২৪২ ও ২৪৩), আবার ওই সহি বুখারিতেই ৪টি হাদিসে আছে তিনি মক্কায় ছিলেন ১০ বছর (৪র্থ খণ্ড ৭৪৭, ৭৪৮, ৬ষ্ঠ খণ্ড ৫০২ ও ৭ম খণ্ড ৭৮৭।

    আবার, আলেমরা আমাদেরকে শিখিয়েছেন রসূল (স) হজ করেছেন মাত্র একবার যাকে ‘বিদায় হজ’ বলে। সেখানে বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, আমাদের জন্য তিনি রেখে যাচ্ছেন কোরান ও তার সুন্নাহ- এ দুটো ধরে রাখলে আমরা “কোনদিন পথভ্রষ্ট হবনা”। কিন্তু ওটা সহি সিত্তার প্রায় ২৮০০০ হাদিসের কোত্থাও নেই, বরং সহি সিত্তাতেই এক রসূলের (স) এক বিদায় হজ্বের এক ভাষণের দুটি পরস্পরবিরোধী প্রতিবেদন আমরা পাই:-

    ১। উনি রেখে গেলেন শুধুই কোরান “যা ধরে রাখলে আমরা কোনদিন পথভ্রষ্ট হবনা”- (ক) সহি মুসলিম ২৮০৩, (খ) সহি ইবনে মাজাহ ৪র্থ খণ্ড ৩০৭৪। এর সমর্থনে হজরত ওমরের ভাষ্যে আছে “শুধু কোরানই আমাদের জন্য যথেষ্ট”- সহি বুখারী ১ম খণ্ড-১১৪, ৯ম খণ্ড ৩৭৪ ও ৪৬৮।

    ২। উনি রেখে গেলেন কোরান ও তার প্রজন্ম (আহলে বায়েত) “যা ধরে রাখলে আমরা কোনদিন পথভ্রষ্ট হবনা”- সহি মুসলিম হাদিস ৫৯২০।

    অর্থাৎ সহি হাদিস নিয়ে আমাদের আলেমদের আলোচনার সুযোগ আছে, দরকারও আছে।

    সংক্ষেপে আরো কিছু দলিল

    (ক) স্বয়ং রসূলের (স) বাড়িতে বিবি আয়েশা (র) প্রাণীর পুতুল নিয়ে খেলেছেন – বুখারি ৮ম খণ্ড ১৫১, আবু দাউদ ৪৯১৪, মুসলিম ৩৩১১, ৫৯৮১। বালিকা পুতুল নিয়ে খেলবে, এটাই স্বাভাবিক নাকি ইসলাম বিরোধী?

    (খ) কাবার দেয়ালে ছিল ৩৬০টি মূর্তি ও হযরত ঈসা (আ) ও (তার) মাতা মেরির ছবি – বুখারি ৩য় খণ্ড ৬৫৮। “রাসুল (সা) হযরত ঈসা (আ.) ও (তার) মাতা মেরির ছবি বাদে বাকি সব ছবি মুছিয়া ফেলিতে নির্দেশ দিলেন।”- সিরাত – ইবনে হিশাম/ইবনে ইশাক-এর পৃষ্ঠা ৫৫২।

    (গ) প্রাচীন সভ্যতা আছে এমন দেশ সহ বহু দেশ জয় করেছিলেন মুসলিমরা, সেখানেও নিশ্চয়ই অনেক প্রতিমা-ভাস্কর্য ছিল। কিন্তু সাহাবীরা কিংবা ৭১০ সালে মুহম্মদ বিন কাশেম হিন্দু রাজা দাহিরের সিন্ধুদেশ জয় করার পর কোনো ভাস্কর্য ভেঙেছিলেন তেমন দলিল আমরা পাই না।

    সবকিছু মিলিয়ে যা সুস্পষ্ট তা হল ইসলামে তৌহিদ বিরোধী আরাধনার প্রতিমা হারাম, কিন্তু সম্মান সৌন্দর্যের ভাস্কর্য হারাম হবে? প্রশ্নই ওঠেনা।

    সবাইকে সালাম।

  2. মাসুদ করিম - ৬ ডিসেম্বর ২০২০ (৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ)

    ল্যানসেটে চীনা প্রি-প্রিন্ট: উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে

    কোভিড প্যানডেমিকে রোগী আর বিভ্রান্তি যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। অতিমারির মতো কোভিডের কল্যাণে আমাদের শব্দ ভাণ্ডারে যে নতুন-নতুন সংযোজন তার অন্যতম একটি হলো ‘ইনফোডেমিক’। কোভিড-১৯ নিয়ে যে চলমান বিভ্রান্তি তাতে সর্বশেষ সংযোজন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে চাইনিজ একাডেমি অব সাইন্সের একদল গবেষকের একটি প্রি-প্রিন্ট। এটি অনলাইন হয়েছে গত ১৭ নভেম্বর। তারপর বিষয়টি গড়িয়েছে বহুদূর। এ নিয়ে সংবাদ ছেপেছে বিলেতের নামজাদা ডেইলি মেইল আর বক্তব্য এসেছে এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও। গবেষণাপত্রটিতে দাবি করা হয়েছে সার্স-কোভ-২’র উৎপত্তি উহানে নয় বরং এটি চীনে ঢুকেছে ইউরোপ হয়ে। কোভিডের সম্ভাব্য জন্মস্থান হিসাবে এতে ৮টি দেশকে দায়ী করা হয়েছে। তালিকার শীর্ষে বাংলাদেশ, সাথে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, ইতালি ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোর নামও। চীনা গবেষকদের ‘তত্ত্ব’ অনুযায়ী গত মে-জুন মাসে যখন উত্তর-মধ্য ভারত ও পাকিস্তান তীব্র দাবদাহে আক্রান্ত ছিল তখন এ অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট দেখা দেয়। এ সময় নাকি মানুষের সাথে বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে বানরের খাবার পানি নিয়ে সংঘাত শুরু হয়। এবং তারই এক পর্যায়ে বানর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের শরীরে চলে আসে সার্স-কোভ-২। অতঃপর এই দুই দেশ থেকে বিমানে চেপে ইউরোপ হয়ে চীনে পৌছায় ভাইরাসটি।

    এ প্রবন্ধটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন নানা দেশের বিদগ্ধজনেরা। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক মার্ক সাচার্ড সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে চীনা গবেষণাটির মেথডোলজির ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। আর গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির ডেভিড রবার্টসন তো ব্রিটেনের ডেইলি মেইলকে দেয়া বক্তব্যে এই গবেষণাটিকে উড়িয়েই দিয়েছেন। সবশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ডক্টর মাইকেল রায়ান গত ২৭ নভেম্বর এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এ গবেষণাটিকে একেবারেই অনুমান নির্ভর বলে মন্তব্য করেছেন।

    হঠাৎ করে কোভিডের জন্মের সাথে বাংলাদেশের নাম জুড়ে দেয়ায় সঙ্গত কারণেই বিষয়টি নিয়ে আমরা আগ্রহী হই। প্রথমেই দেখা যাক প্রি-প্রিন্টের অর্থ কী? ল্যানসেটই বলছে এর অর্থ এই বৈজ্ঞানিক নিবন্ধটির একেবারেই চীনা গবেষকদের নিজস্ব বিষয়। ল্যানসেটের বিজ্ঞ রিভিউয়াররা এটি পিয়ার রিভিউ করেননি। কাজেই এই গবেষণা বিষয়ক কোনো তথ্য সাধারণ মানুষের সাথে শেয়ার করা যাবে না। অথচ কার্যতঃ তাই করা হচ্ছে এবং মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে যে কোভিডের উৎপত্তিটা চীনের বাইরে।

    বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করলেও চীনা গবেষণাটির নানা দুর্বলতা দৃষ্টিকটুভাবে চোখে পড়ে। ২০১৯-এর গ্রীষ্মে বাংলাদেশের কোথাও পানি নিয়ে বানরের সাথে মানুষের সংঘর্ষ হয়েছে এমন কোনো তথ্য কোথাও পাওয়া যায় না। আর উত্তর-মধ্য ভারত এবং পাকিস্তানে যদি সেরকম কোনো ঘটনা ঘটেও থাকে তবে সেসব বানর হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কেন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সার্স-কোভ-২ ইনফেকশন ছড়াতে আসলো সেটিও নিশ্চয়ই একটি বড় প্রশ্ন। তেমনি আরেকটি বড় প্রশ্ন হচ্ছে বানরে-মানুষে পানি নিয়ে কাড়াকাড়ি হলো ভারত আর পাকিস্তানে অথচ, চীনা গবেষকদের দেয়া কোভিড জন্মভূমির সম্ভাব্য ৮ দেশের তালিকায় কোথাও পাকিস্তানের নাম নেই। গবেষকরা তাদের গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছেন যে সার্স-কোভ-২’র সত্যিকারের ন্যাচারাল হোস্টটি শনাক্ত করা জরুরি। তাদের এই পর্যবেক্ষণের সাথে আমরা পুরোপুরি একমত, কারণ তা না করা গেলে এই চলমান প্যানডেমিকটিকে যেমন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে তেমনি অসম্ভব হয়ে পড়বে ভবিষ্যতে এ ধরনের নতুন কোনো প্যানডেমিকের বিস্তার ঠেকানোও। কাজেই এ ধরনের ভ্রান্ত বিজ্ঞান যে ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে তা বলাই বাহুল্য।

    চীনা গবেষকরা দাবি করছেন বাংলাদেশ এবং ভারতে সার্স-কোভ-২’র জেনোমে মিউটেশন হয়েছে তুলনামূলকভাবে কম। কাজেই তাদের যুক্তিতে এখানকার সার্স-কোভ-২কে’ই অন্যান্য দেশের সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের ফাইলোজেনেটিক শিকড় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এটি প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান যে ভাইরাসের মিউটেশন হওয়া বা না হওয়া ইমিউনিটি এবং পাশপাশি এনভায়রনমেন্টাল অনেক ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। কাজেই কোনো ভাইরাসের কম বা বেশি সংখ্যায় মিউটেশন দেখে এর উৎপত্তি নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বরং যেখানে ভাইরাসের উৎপত্তি সেখানে ইমিউন স্ট্রেসজনিত কারণে ভাইরাসের মিউটেশন বেশি হবে এমন পাল্টা হাইপোথিসিসও কেউ-কেউ প্রস্তাব করতেই পারেন।

    ভাইরাসের ব্যাপারে আরেকটি প্রতিষ্ঠিত সত্য হচ্ছে এই যে, যেকোনো ভাইরাসের বেলাতেই মিউটেশন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা আর তা যদি হয় সার্স-কোভ-২’র মতো আরএনএ ভাইরাস হলে তো কথাই নাই। তবে সাধারণত দেখা যায় যে মিউটেটেড ভাইরাসের ভিরুলেন্স কম থাকে অর্থাৎ মিউটেটেড ভাইরাসজনিত রোগের তীব্রতা কম হয়। ফলে মিউটেটেড ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খারাপ হবার ঝুকিও কম থাকে। তবে ভাইরাস কোনো ফর্মুলা মেনে চলে না। অনেক সময়ই দেখা যায় যে মিউটেটেড ভাইরাসই কিলার ভাইরাসে পরিণত হয়। আর ‘কিলার’ সার্স-কোভ-২’র জন্ম যে চীনের মূল ভূখণ্ডে তা নিয়ে কিন্তু সন্দেহের ন্যূনতম সুযোগ নেই। কারণ এটি এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য যে ইউরোপে কোভিডের শুরুটা ইতালি থেকে আর ইতালিতে কোভিড ছড়িয়েছিল সে দেশে কর্মরত চীনা নাগরিকদের মাধ্যমে। একইভাবে ইরানেও কোভিডের আমদানি চীনা নাগরিকদের দিয়েই। আর এর পরেরটুকু তো সবারই জানা। এই ক’মাস আগেই কোভিডে মৃত্যুর মিছিলে লাশজট দেখা দিয়েছিল ইরান, ইতালি আর ইতালি থেকে ইউরোপের দেশে-দেশে ছড়িয়ে পরা ‘চীনা সার্স-কোভ-২’র তাণ্ডবে।

    চায়না থেকে কোভিড বিষয়ক কোনো গবেষণাপত্র কোনো বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ করতে হলে তার জন্য অবশ্যই সেদেশের সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। সরকারি অনুমোদন ছাড়া চীনা গবেষকরা কোথাও কোনো কোভিড বিষয়ক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করতে পারেন না। কাজেই প্রশ্ন জাগে যে এ ধরনের একটি অবৈজ্ঞানিক প্রি-প্রিন্ট প্রকাশের পেছনে বৈজ্ঞানিক চেতনার চেয়ে অবৈজ্ঞানিক তাড়না বেশি কাজ করেছে কিনা? বিশেষ করে চীনা তালিকায় কোন কোন দেশের নামের উপস্থিতি আর কোনটির অনুপস্থিতি এই সন্দেহকে বাড়িয়ে দেয়। এই প্রেক্ষাপটে গত ১ ডিসেম্বর সিএনএন-এ প্রচারিত চীনের কোভিড ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনটির দিকে নজর দেয়া যেতে পারে। সিএনএন-এর হাতে এসেছে চীনের হুবে প্রভিন্সিয়াল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের ১১৭ পাতার গোপন নথি যা থেকে কোভিড প্যানডেমিক মোকাবেলায় চীনা হ-য-ব-র-ল অবস্থাটা স্পষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি স্থানীয় একটি সমস্যাকে বিশ্বব্যাপী সংকটে রূপান্তরিত হওয়া ঠেকানোয় চীনা ব্যর্থতাও এই ডকুমেন্টের পাতায়-পাতায় বিধৃত। অক্টোবর ২০১৯ থেকে এপ্রিল ২০২০ সময়ের কোভিড সংক্রান্ত ঘটনাবলীর বিবরণ আছে এতে। জানা যাচ্ছে শুরুর দিকে একেকজন কোভিড রোগী শনাক্ত করায় চীনাদের সময় লেগেছে গড়ে ২৩.৩ দিন। বিশ্ববাসীকে চীনারা যখন প্রথম উহানে কোভিড রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানায়, ততদিনে হুবে প্রদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা-লাইক রোগের একটি আউটব্রেক চলছিল। এ সময় সেখানে ইনফ্লুয়েঞ্জা-লাইক সিম্পটমের রোগীর সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় বিশগুণ বেশি ছিল। শুধু তাই না, এসময় উহানের পার্শ্ববর্তী ইচেং এবং জিয়ানিন শহরেও এই ইনফ্লুয়েঞ্জা-লাইক এপিডেমিকটি ছড়িয়ে পড়েছিল।

    সিএনএন-এর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে আরো সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে চীন জানিয়েছিল পুরো দেশে ২৪৭৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। অথচ সেদিন শুধু হুবে প্রদেশেই শনাক্ত হয়েছিল ৫৯১৮ জন নতুন রোগী। পাশপাশি অনেক কোভিড রোগীকেই ক্রাইটেরিয়ার মারপ্যাচে ফেলে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শুরুর দিকে কোভিড শনাক্তের জন্য ‘সার্স’ টেস্ট কিট ব্যবহার করা হচ্ছিল যার ফলে ফলস নেগেটিভ রিপোর্টের সংখ্যা ছিল খুবই বেশি। অথচ চাইনিজ ন্যাশনাল হেলথ ইন্সটিটিউট কনফার্ম পজেটিভ রিপোর্ট ছাড়া কোভিড রোগী শনাক্ত না করার জন্য এ সময় চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়েছিল। তার উপর চীনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোভিড রোগীর সংখ্যা আন্ডার রিপোর্টিংয়ের জন্যও চাপের মুখে ছিলেন। রিপোর্টটির পাতায়-পাতায় চলমান প্যানডেমিকটি মোকাবেলায় চীনা আমলাতন্ত্রের দুর্বলতাও উঠে এসেছে।

    সিএনএন এই ডকুমেন্টটি প্রকাশ করার আগে ৬ জন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। একজন ইউরোপিয়ান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞও এর বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে সিএনএন-কে নিশ্চিত করেছেন। একই ধরনের মতামত দিয়েছেন ব্রিটেনের ক্র্যানফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ সারা মরিস।

    কাজেই ল্যানসেটে যে চীনা সাম্প্রতিক প্রি-প্রিন্ট সেটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তিই যে শুধু নড়বড়ে তাই-ই নয়, বরং এটি উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের চেষ্টা বললেও বোধহয় ভুল হবে না।

  3. মাসুদ করিম - ৬ ডিসেম্বর ২০২০ (৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ)

    Abandoned Dupchanchia post office building still serving people

    Members of the staff of Dupchanchia upazila post office, houesed in an old and dilapited building, are serving clients risking their lives as it may collapse any time.

    The shabby three rooms of upazila post office have been declared abandoned but the officials are to use them as there is no alternative.

    With officials of post office, a good number of clients of the region are performing their necessary work daily with fear of collapsing the building. Whenever they visit the dilapidated office building, they are seen worried.

    Every day the clients come for making savings, term calculation (meyadi hisab), mobile money exchange, general money exchange and computer training.

    The dilapidated state of the upazila post office has been causing extreme sufferings of the clients, said upazila post master Shamsun Nahar. The authorities concerned were informed of the present condition of the office and sufferings of officials and clients several times but to no effect, she added.

    Huge cracks have developed on the roof. The officials have to face sufferings and unwanted accident due to the sorry state of the post office.

    On a visit on Thursday this correspondent found plaster from both walls and roof have been faling down. The ceiling fans have been hung with dilapidated roof.

    Besides, floor of the post office has been damaged and numerous holes were created and the authority concerned did not pay heed to the dilapidated condition and yet to take any step to construct a new building.

    More than 20,000 clients of all six unions and two municipalities have been using the post office daily and they have to face untold sufferings.

    A client Md Azim Uddin, coming from Paul para of municipality area, said he came to post office to send a letter to his friend. He fears to enter the room though he is to perform work, he added.

    Deputy postmaster general of Bogura region Md Anwar Hossain said he knew the dilapidated condition of the post office and suffering of clients and officials. The tender for constructing a new building hs been floated, the work will be started very soon, he added.

    Additional postmaster general of Rajshahi division Pervin Banu said they are trying to provide smooth citizen service round the clock but sometimes unexpected situation hinder the smooth serviceto clients.

  4. মাসুদ করিম - ৭ ডিসেম্বর ২০২০ (৪:৩৮ অপরাহ্ণ)

    Sheikh Hasina offers Thimphu use of different ports

    First-ever PTA signed with Bhutan

    Prime Minister Sheikh Hasina Sunday said the Bangladesh-Bhutan Preferential Trade Agreement (PTA) would further consolidate the relations between the two neighbouring countries for mutual benefit, reports BSS.

    “The PTA which both sides signed today will contribute to further consolidating the relations between our two countries,” she said, joining the signing ceremony virtually from her official Ganabhaban residence.

    She added that the PTA signing was held Sunday to make the day memorable as on this day in 1971, Bhutan became the first country in the world to recognise Bangladesh’s independence and it marks the 50th anniversary of bilateral and diplomatic relations between the two countries.

    “It is time to make our extraordinary relations even more meaningful for mutual benefits and for the overall development and well-being of our citizens. It is in this spirit that we have signed today the Bangladesh-Bhutan PTA,” said the PM.

    Noting that it is a historic moment, she said Bangladesh is signing its first ever PTA with any country in the world and this country is also the first country that recognized Bangladesh as a sovereign and independent state after the War of Liberation in 1971.

    Under this agreement, Sheikh Hasina said, a wide range of products from Bangladesh and Bhutan can find duty-free entry into each other’s markets, adding that the PTA also has a provision for including an additional list of products through mutual consensus.

    “Once the agreement comes into force, I believe more people in Bangladesh can have access to fresh Bhutanese apples and oranges, while the fashion-conscious people of Bhutan can choose from more varieties of quality apparels from Bangladesh,” she hoped.

    The PM also said that infrastructure projects in Bangladesh can further benefit from boulder stones from Bhutan, while Bangladeshi pharmaceuticals can increase contribution to the health sector in Bhutan.

    Besides, Bangladesh and Bhutan share ancient linkages, common cultural values, tradition and geo-political realities. Today, the areas of cooperation are many, including trade, tourism, hydro-power, climate change impacts, health, bio-diversity, agro-processing, agriculture, ICT, education, water resource management and much more, she continued.

    Commerce Minister Tipu Munshi and Bhutan’s Economic Affairs Minister Lyonpo Loknath Sharma signed the PTA on behalf of their respective countries.

    Prime Minister Sheikh Hasina and her Bhutanese counterpart Lotay Tshering witnessed the signing ceremony joining the event virtually respectively from Ganabhaban in Dhaka and Thimphu in Bhutan.

    During the ratification of the treaty, both the prime ministers unveiled a logo virtually, marking the 50-year friendship between Bangladesh and Bhutan.

    Both the PMs later cut cakes in celebration of signing the PTA agreement and 50 years of diplomatic and bilateral relations between the countries.

    Foreign Minister Dr. A. K. Abdul Momen, M.P, Commerce Minister Tipu Munshi, Foreign Minister of Bhutan Tandi Dorji and its Economic Affairs Minister Lyonpo Loknath Sharma spoke on the occasion while Commerce Secretary Dr Jafar Uddin gave the welcome address.

    Among others, PM’s Private Industry and Investment Adviser Salman Fazlur Rahman, Foreign Secretary Masud Bin Momen, Federation of Bangladesh Chambers of Commerce and Industries (FBCCI) President Sheikh Fazle Fahim and Ambassador of Bhutan to Bangladesh Kutshab Rinchen Kuentsyl witnessed signing of the PTA from Bangladesh site while Bangladesh Ambassador to Bhutan AKM Shahidul Karim from Bhutan end.

    An audio-visual presentation was made on bilateral engagements between the countries marking their 50 years of relations.

    On this occasion, Sheikh Hasina offered Bhutan to use its existing ports and newly developed Syedpur regional airport for mutual benefits of the two countries.

    She said, “We are developing our Chilmari port and Pangaon Port in Narayanganj. Not only that, if wants, Bhutan can use any of our three ports – Chattagram, Mongla and Payra. We are developing a regional airport in Syedpur. For Bhutan, it is open. If you wish you can use it too.”

    The Prime Minister, however, said, “As we endeavour to reach our goals, we want valuable cooperation of our friends and neighbors to strengthen our government’s initiatives, including regional connectivity designed to make all of us in the region prosperous.”

    She continued: “The Covid-19 pandemic has opened our eyes to the new realities that we must consider while we strive to move forward.”

    The Prime Minister added that the world is countering new and deeper fallouts of the Covid-19 pandemic on countries and communities across the globe.

    “The evolving pandemic has propagated beyond a health crisis into a growing threat on socio-economic systems and livelihoods. To counter the impact of this unknown enemy, Bangladesh has shared excellent cooperation with Bhutan and other South Asian neighbours and beyond. Stronger regional and international cooperation is necessary in the coming days for mitigating the impact of the pandemic and for the rebuilding phase,” she opined.

    She came up with the opinion that the next 50 years will witness sustained development and happiness of citizens of the region.

    At the outset of the ceremony, the premier paid homage to the Greatest Bangalee of all time, Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, four national leaders, 3.0 million martyrs and 0.2 million women who were violated during the War of Liberation in 1971.

    “The occasion is further blessed as this is the year, we are celebrating the birth centenary of our Father of the Nation, and the auspicious 40th birth anniversary of His Majesty Jigme Khesar Namgyel Wangchuk,” she continued.

    Noting that the Kingdom of Bhutan has a special position in the hearts of all Bangladeshis, and a permanent place in the history of Bangladesh, she said, “The unwavering support of His Majesty the Third King and the people of Bhutan to our War of Liberation in 1971, and your country’s recognition of the blood-soaked independent Bangladesh, evokes powerful emotions in our hearts even today.”

    The PM said they have observed with great admiration the transformation Bhutan has undergone under the visionary guidance of the Fourth King, His Majesty King Jigme Singye Wangchuck.

    “It is today a democratic, modern and progressive country. His concept of “Gross National Happiness” has won the admiration of the world. His able and wise son and successor, His Majesty King Jigme Khessar Namgyel Wangchuck, the Fifth King, has wisely continued with his father’s policies in leading Bhutan,” she added.

    In Bangladesh, she said that their aim is similar and that is to strengthen democracy, achieve economic growth, and make the citizens happy individuals of a hunger-poverty-free developed-prosperous country as dreamt by the Father of the Nation.

    “Today, our democratic institutions are stronger, and our economy is on a sound footing. The rule of law and human rights are well established, and we strictly follow a zero-tolerance policy against all forms of terrorism and extremism,” she added.

    Mentioning that the ‘Vision 2021’ and ‘Vision 2041’ are guided by the dream of Golden Bangladesh as envisioned by Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, she said, “Already significant progresses have been made on food and energy security, education, poverty alleviation, empowerment of women, social welfare, and development with sustained economic growth.”

  5. মাসুদ করিম - ১১ ডিসেম্বর ২০২০ (৫:১২ অপরাহ্ণ)

    Kim Ki-Duk Dies Of Covid-19 At 59: South Korean Director Won Prizes At Venice, Cannes, Berlin

    South Korean filmmaker Kim Ki-duk has died at the age of 59 from complications arising from Covid-19 while in Latvia, according to local sources.

    The filmmaker died in the early hours this morning local time at a Latvian hospital where he was being treated for coronavirus. He is understood to have travelled to the Baltic country with the intention of buying a house in order to obtain a residency permit. The news was confirmed by Vitaly Mansky, the Russian documentary filmmaker who lives in Latvia and runs the local ArtDocFest, and the Korean Ministry of Foreign Affairs has been quoted as confirming the director’s death in Korean media reports.

    Born in Bonghwa, South Korea in 1960, Kim Ki-duk established himself as a director of high-end, often dark and controversial arthouse cinema that made waves on the international festival circuit. He also had controversies in his personal life and was accused of sexual misconduct by multiple women after the seismic #MeToo industry shift, though a Korean court partially dismissed a sexual assault charge against the filmmaker.

    The director’s feature debut was the 1996 low budget pic Crocodile, which was well-received in Korea and screened at European festivals.

    His 2000 film The Isle gained notoriety for its gruesome violence and dark content – a pattern recognized throughout his oeuvre – including scenes of cruelty towards animals, which the director claimed were real. The film was poorly received in Korea but caused a stir internationally, notably at Venice where it reportedly caused some audience members to vomit or faint. It went on to screen at Toronto and Sundance and received international distribution, though did not receive certification in the UK due to the nature of its content.

    Perhaps his most fondly regarded film is the 2003 pic Spring, Summer, Fall, Winter… and Spring, about a Buddhist monastery that floats on a lake in a pristine forest. The pic received glowing reviews and a U.S. release via Sony Pictures Classics.

    His 2004 film Samaritan Girl premiered at the Berlinale and won a Silver Bear, while in the same year the director’s 3-Iron won a Silver Lion at Venice. Kim also had success in Cannes, screening Breath in Competition in 2007 and then winning the Un Certain Regard Award with Arirang in 2011. He returned to the Lido in 2012, winning the coveted Golden Lion for Pieta.

    Kim Ki-duk’s most recent release was the Russian-language pic Dissolve, which debuted at Cannes in 2019.

  6. মাসুদ করিম - ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ (২:৩৭ অপরাহ্ণ)

    রাজশাহীতে আলবদর গঠনের দলিল, মুজাহিদের চিঠি

    রাজশাহীতে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী আলবদর বাহিনী গঠনসহ তাদের ভয়ঙ্কর কর্মসূচির কয়েকটি নথি উদ্ধার করেছেন সেই সময়ের স্থানীয় এক সাংবাদিক।

    একাত্তরে আলবদর বাহিনীর উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় সদরদপ্তর ছিল রাজশাহীতে। শহরের রাণীবাজার মোড় এলাকার পণ্ডিত অমরেশ দাস চৌধুরীর বাড়ি ‘মোহিনী নিকেতন’ দখল করে ‘আলবদর বাহিনী’ তাদের সদর দপ্তরের কার্যালয় গড়ে তোলে। সেখান থেকে তারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল।

    যুদ্ধ শেষে আলবদর বাহিনীর পরিত্যক্ত বেশকিছু নথিপত্র ওই দপ্তরে পাওয়া যায়। রাজশাহীর যুদ্ধকালীন সাংবাদিক আহমেদ শফি উদ্দিন সেখান থেকে বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার করেন, যা তিনি গবেষণার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামকে দিয়েছিলেন।

    এছাড়া সম্প্রতি তিনি তার বাড়ির পুরাতন কাগজপত্রের মধ্যে আলবদরদের তিন পৃষ্ঠার একটি নথি পান।

    এই তিন পৃষ্ঠার একটির উপরে লেখা আছে- ‘সিক্রেট’, তার নিচে আছে-‘আল বদর ভলান্টিয়ার ফোর্স’।
    অপর দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে সম্বোধন করা হয় ডেপুটি সাব মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটরকে এবং চিঠির শেষে নামের জায়গায় লেখা হয়- আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ইসলামী জমিয়ত-এ-তালাবা পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তান।

    ওই সময় আহমেদ শফি উদ্দিন দৈনিক পাকিস্তান (পরে দৈনিক বাংলা) পত্রিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এবং রাজশাহী থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সোনার দেশ পত্রিকার চিফ রিপোর্টার ছিলেন।

    এই সাপ্তাহিক ১৯৭০ সালে জাতীয় চার নেতার অন্যতম এএইচএম কামারুজ্জামান প্রকাশ করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সৈনিক সাঈদ উদ্দিন আহমেদ এর সম্পাদক ছিলেন।

    শফি উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজশাহী শহরের রাণীবাজার এলাকায় সাপ্তাহিক সোনার দেশের অফিস ভাঙচুর করে এবং পত্রিকার সব সাংবাদিকদের ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ ঘোষণা করে। সেসময় সাংবাদিকরা গ্রামে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

    “স্বাধীনতার পর রাজশাহী শহরে ফিরে আমি যুদ্ধের প্রমাণগুলো বিভিন্ন স্পট থেকে সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাদের বাড়ির ১০টি বাড়ি পরে শহরের রানীবাজারে আলবদর বাহিনী ক্যাম্প করেছিল। আলবদরের ডিভিশনাল সদরদপ্তর ‘মোহিনী নিকেতন’ ঘুরে দেখার সময় কুয়োর ভেতরে পানির ময়লার স্তরের উপর আমি একটি ব্যাগসহ কিছু কাগজপত্র দেখতে পাই।”

    পরে বাড়ি থেকে দড়ি নিয়ে এসে চাচাত ভাই রাজশাহী বেতারের কর্মচারী আমজাদ আলীর সহায়তায় ওই ব্যাগসহ কাগজপত্র উদ্ধার করেন শফি।

    তিনি বলেন, “সেখানে আলবদর বাহিনী গঠনের নথি পাওয়া যায়। গবেষণার জন্য ওই নথিগুলো বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামকে দিয়েছিলাম, যেগুলোর একাধিক কপি ছিল সেগুলো রেখে দিয়েছিলাম।”

    কাত্তরে আলবদর বাহিনী ভয়ঙ্কর মিলিশিয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। তাদের কর্মকাণ্ড পরিকল্পিত গণহত্যার রূপ নেয়।
    যুদ্ধের শেষ দিকে পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও শিল্পীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছিল।

    পরে বিভিন্ন বধ্যভূমিতে অনেকের মরদেহ বিকৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, তাদের অনেকের পরিচয় আর জানা যায়নি।

    আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, ইংরেজিতে লেখা দিন, তারিখ ও স্বাক্ষরহীন এসব নথিপত্রে আলবদর বাহিনী গঠনের বর্ণনা আছে। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ‘শত্রু’ এবং ‘দুর্বৃত্ত’ বলে তাদের নির্মূল করার লক্ষ্যে আলবদর বাহিনীর কর্মপরিকল্পনা, উদ্দেশ্য ও তৎপরতার কথা বলা হয়েছে।

    ওইসব নথিতে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের কাছে আলবদর বাহিনী গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন; দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা ইসলামি ছাত্র সংঘের (আইসিএস) কর্মীদের এই সংগঠনের সদস্য করার প্রস্তাব করেন।

    সংঘের কর্মীদের ‘অনুগত, আন্তরিক ও সৎ পাকিস্তানি’ এবং তারা ওই ‘দুঃসময়ে’ সর্বোত্তমভাবে জাতির সেবা করতে প্রস্তুত বলেও বর্ণনা করা হয় মুজাহিদের ওই নথিতে।

    ওই সময়ের পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুজাহিদ নিজেকে ‘ইসলামী জামিয়ত-ই-তালাবা পাকিস্তান’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

    তিনি আলবদর বাহিনীতে ‘কেবলমাত্র সেই পরীক্ষিত কর্মীদের নিয়োগ করতে প্রস্তাব করেন, যারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও পাকিস্তানের অখণ্ডতার জন্য কাজ করবে’। আলবদর কর্মীদের সংখ্যার চেয়ে ‘মানের দিকে’ খেয়াল রাখার কথাও তিনি চিঠিতে বলেন।

    পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ‘দুর্বৃত্তদের’ বাছাই ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে আলবদর বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার কথা তিনি প্রস্তাব করেন।

    একই সঙ্গে তিনি আলবদর বাহিনীকে পাকিস্তানি হানাদারদের অন্যান্য সহযোগী সংগঠন, রাজাকার ও মুজাহিদ বাহিনীর মর্যাদার উপরে রাখার পরামর্শ দেন; এবং এর কারণ হিসেবে তিনি ওই সংগঠনগুলো ‘সুবিধাবাদীদের দ্বারা দূষিত’ বলে অভিযোগ করেন।
    চিঠিতে মুজাহিদ বলেন, “রাজাকার ও মুজাহিদদের উপরে স্বেচ্ছাসেবীদের একটি নতুন দল সংগঠিত করা যেতে পারে, যার বেশিরভাগই হবে ছাত্র। অবশ্য ছাত্র নয়, এমন যুবকদের মধ্যে যারা বুদ্ধিমান ও সৎ, তাদের এই বাহিনীর অধীনে রাখা যেতে পারে।”

    মুজাহিদ আলবদর বাহিনীকে এতটা শক্তিশালী ও সাহসী হিসেবে প্রস্তুত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেন তারা পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থানকারীদের নিকটাত্মীয়দেরও ‘রেহাই না দেওয়ার সক্ষমতা’ অর্জন করে।

    এক পৃষ্ঠার নথিটি সামরিক প্রশাসনের একটি চিঠি, যেটা ‘গোপনীয়’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাতে আলবদর গঠনের রূপরেখা বর্ণনা করা হয়েছে।

    সেখানে বলা হয়, আলবদরকে কমান্ডো ধরনের বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যাদের লক্ষ্যগুলো হবে সরকার/সেনাবাহিনীকে সহায়তা করা এবং নাশকতা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা।

    স্বাধীনতার পরপরই মুজাহিদ আত্মগোপনে চলে যান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে জিয়াউর রহমানের আমলে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন এই আল-বদর নেতার।
    ২০০১ সালে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি জোট ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনকারী এই দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী করে।

    বুদ্ধিজীবী গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের দায়ে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। দুই বছর পর ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর তার ফাঁসি কার্যকর করা হ

  7. মাসুদ করিম - ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ (৫:৫০ অপরাহ্ণ)

    Aditya Kabir passes away

    Poet, writer and one of the top advertising professionals of the country, Aditya Kabir passed away yesterday at the age of 50. According to close sources, Aditya Kabir died of a stroke in his sleep at his in-law’s house in Uttara.

    He led advertising agency CarrotComm Limited, after working for Asiatic MCL for 15 years.

    He was son of noted poet and DU teacher Humayun Kabir. Aditya left behind his wife, a daughter, his mother, two sisters and a brother.

    He was buried in Rayerbazar graveyard last evening. Born on November 13, 1970, Aditya got his bachelor’s degree from International Relations department of DU.

  8. মাসুদ করিম - ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ (৯:০৭ পূর্বাহ্ণ)

    এই বাংলার ইতিহাস আপনারা জানেন না?

    লেখার শিরোনামটি শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের দেয়া একটি সংবাদ শিরোনামের অংশ। ১৯৬৪ সালের ১৩ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রথম পাতা জুড়ে প্রকাশিত হয়েছিল ‘জুলুম প্রতিরোধ দিবসে’ আওয়ামী লীগের জনসমাবেশের একটি ছবি। জনসমুদ্রের সামনে বক্তব্য রাখছেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার ঠিক উপরেই উদ্ধৃতিচিহ্নের ভেতরে দুটো কমা ও দুটো হাইফেন সহযোগে শিরোনাম নির্ধারণ করেছিলেন সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন। জনসভায় দেয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার একটি অংশকেই শিরোনাম করা হয়েছে। সিরাজুদ্দীন হোসেন বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা থেকে ঘড়ির বয়স্ক কারিগরের মতো খুঁজে এনেছিলেন একটি নাতিদীর্ঘ বাক্য এবং তাতে যুক্ত করেছিলেন সম্পাদকীয় বিরামচিহ্ন। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের প্রস্তুতিপর্বে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার এই শিরোনাম তাই কেবল নির্দিষ্ট একটি দিনের নিউজ হেডলাইন হিসেবেই আটকে থাকেনি; এর ব্যাপ্তি ঘটেছে বহুদূর। বস্তুত শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন নথিভুক্ত করেছেন ইতিহাস ও রাজনীতির মাঝখানে একজন সাংবাদিকের অবস্থান— প্রকৃত প্রস্তাবে যা বিরামচিহ্নের মতোই তীব্রভাবে সাড়া দেয়।

    প্রায় ৫৬ বছর আগে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের করা দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার শিরোনামটির অংশ নিয়ে তাতে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন যোগ করা হলো। এই প্রশ্ন সরাসরি দৈনিক ইত্তেফাকের কাছেই, কেননা জাতি বিস্মৃতিপ্রবণ হলে আমরা তার সংশোধনকল্পে ব্যবস্থা নিতে পারি; কিন্তু গণমাধ্যম ইতিহাস ভুলতে শুরু করলে তার দাওয়াই কে দেবে? ইত্তেফাক কথাটি উচ্চারিত হলেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে মুক্তি সংগ্রামের প্রস্তুতিপর্ব থেকে শুরু করে বাংলা ও বাঙালির দীর্ঘ দার্ঢ্য ইতিহাসের সেলুলয়েড— যার সঙ্গে ইত্তেফাক নামটি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। ফলে গত ২৪ ডিসেম্বর পত্রিকাটির ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে যে সংখ্যাটি তারা প্রকাশ করেছেন, তার বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার আগ্রহ ছিল বিপুল। ফলে প্রথম পাতাতেই প্রণম্য গবেষক জনাব শামসুজ্জামান খানের বাংলাদেশের জন্ম ও ইত্তেফাক শিরোনামের নিবন্ধটি পড়ি। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, গোটা লেখার কোথাও তিনি শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের কথাটি লিখলেন না। এমন তো নয়, জনাব শামসুজ্জামান খান তৎকালীন আওয়ামী লীগ, ইত্তেফাক এবং সিরাজুদ্দীন হোসেনের রাজনৈতিক রসায়ন সম্বন্ধে অবগত নন। তাহলে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখায় তিনি এই প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেলেন কেন?

    এই প্রশ্নের উত্তর পেতে সাংবাদিক আসিফুর রহমান সাগরের লেখা ইতিহাসের আলোয় বর্তমানের পথচলা প্রতিবেদনটি মন দিয়ে পড়লাম। পাঠান্তে মনে হলো, ইতিহাসের যে আলোর কথা প্রতিবেদক লিখেছেন, সে আলো আসলে কর্তৃত্বের প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাওয়া বিভক্ত আলো। ইতিহাসের সাদা সত্য তাতে নেই। থাকলে প্রতিবেদনের সপ্তম বাক্যে “দৈনিক ইত্তেফাক গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে…” বলে যে ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের নাম প্রতিবেদক উল্লেখ করেছেন, সেখানে অন্তত শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের নামটি থাকা উচিৎ ছিল। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণ করেছে ইত্তেফাক, কিন্তু পত্রিকাটির সবচেয়ে গৌরব ও সংগ্রামের যে অধ্যায় শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন— তার নামটি গোটা প্রতিবেদনের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। প্রতিবেদক লিখেছেন, “মানিক মিয়ার মানস দর্পন ছিল যেন ইত্তেফাকের প্রতিটি পৃষ্ঠা”; কিন্তু এ কথা নিশ্চয়ই প্রতিবেদক জানেন, মানস দর্পনকে পত্রিকার পৃষ্ঠায় পরিণত করার দক্ষ কারিগর ছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। যে আপোসহীন আর মাথা নত না-করার সাংবাদিকতা ইত্তেফাক সে সময় করেছিল, তার চরম মূল্য দিতে হয়েছিল সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনী তাদের এদেশীয় রাজাকার, আল-বদর দোসরদের সহযোগিতায় সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ রাতে ইত্তেফাক ভবন পুড়িয়ে দেয়া হয়, কিন্তু তারপরও পত্রিকাটি তার নির্ভীক সংবাদভাষ্য জারি রেখেছিল। ইত্তেফাক আজকে স্বীকার না করলেও ইতিহাস জানে— এই সাহসী ভাষ্যের ভাষ্যকার ছিলেন সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন; কারণ তিনিই সেই যুদ্ধকালীন চরম বৈরী পরিস্থিতিতে ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। পত্রিকাটির মুক্তিযুদ্ধকালীন যে ভূমিকা নিয়ে আজ আমরা গর্ববোধ করি, তার মূল কাণ্ডারী ছিলেন সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন।

    সুতরাং ‘মোসাফির’ শিরোনামে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার রাজনৈতিক মঞ্চ কলামের কথা যদি ঐতিহাসিক কারণেই লিপিবদ্ধ করা হয়, তবে ‘অনামী’ শিরোনামে সিরাজুদ্দীন হোসেনের মঞ্চে-নেপথ্যে কলামের কথাও লিপিবদ্ধ করতে হবে। না হলে, আমাদের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস অর্ধেকটা বলা হয়, আদতে বিকৃত করা হয়। ইতিহাস বিকৃতির এই নির্লজ্জ চিহ্ন গত ২৪ ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক তার ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সিংহভাগ পাতায় রেখে গেছে।

    দুই

    সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেন তার বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ইত্তেফাকের ভূমিকা শিরোনামের লেখাটিতে একটি মারাত্মক তথ্য-বিভ্রাট ঘটিয়েছেন। লেখাটির শেষ দিকে তিনি লিখছেন, “কৌশলগত কারণেই মানিক মিয়া সম্পাদকীয় ছাড়াও ইত্তেফাকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ ও পরবর্তী সময়ে ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ কলামে ‘মোসাফির’ ছদ্মনামে নিয়মিত উপসম্পাদকীয় লিখতেন”। একই তথ্য দিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতিপর্বে দৈনিক ইত্তেফাকের সাহসী ভূমিকা। এই নিবন্ধে অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিকের নাম থাকলেও নেই শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের নাম।

    ড. কামাল হোসেনের দেয়া তথ্যের সঙ্গে কিন্তু একই পাতায় প্রকাশিত আবুল কাসেম ফজলুল হক স্যারের লেখা মানিক মিয়া ও ইত্তেফাক নিবন্ধটির তথ্য মিলছে না। কারণ, আবুল কাসেম ফজলুল হক স্যার তার লেখাতে ‘মোসাফির’ ছদ্মনামে রাজনৈতিক মঞ্চ কলামটির কথাই উল্লেখ করেছেন— যা প্রকৃত সত্য। মূল ইতিহাস হচ্ছে মঞ্চে-নেপথ্যে লিখতেন সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ‘অনামী’ ছদ্মনামে। বয়সের কারণে ড. কামাল হোসেন সাহেবের স্মৃতি বিভ্রাট হতে পারে কিন্তু ইত্তেফাকের সম্পাদনায় এই তথ্য বিভ্রাট ও বিকৃতি ধরা পড়ল না কেন?

    এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে মঞ্চে-নেপথ্যে কলামটির ইতিহাস জানতে হবে। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জীবনাবসান ঘটে ১৯৬৯ সালের ১ জুন। তার পরপরই সিরাজুদ্দীন হোসেন এই কলামটি লিখতে শুরু করেন জাতীয় রাজনীতির প্রয়োজনেই। সত্তরের ঐতিহাসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে একদিকে আওয়ামী লীগের প্রচারণা, অন্যদিকে রাজনৈতিক বাতাবরণে রাজনৈতিক মঞ্চের মতো কলামের প্রয়োজনীয়তা— এ দুটো লক্ষ্য সামনে রেখেই তিনি মঞ্চে-নেপথ্যে লিখতে শুরু করেন ‘অনামী’ ছদ্মনামে। কলামটি ইত্তেফাকে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালের ৮ অগাস্ট। সে সময়েই পত্রিকায় যোগ দেন খন্দকার আবদুল হামিদ। তিনি সাংবাদিকতার নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করেই পত্রিকার মালিকপক্ষের যোগসাজশে ‘অনামী’ ছদ্মনামেই মঞ্চে-নেপথ্যে লেখা শুরু করলেন। কী লিখলেন, সেটা আর বুঝতে বাকি থাকে না, কারণ খন্দকার আবদুল হামিদ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের দালালি করেছেন— এ কথা আমরা সবাই জানি। কাজটি তিনি করেছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেনের ঢাকায় অনুপস্থিতির সুযোগে। স্বাধীন বাংলাদেশে খন্দকার আবদুল হামিদই পরবর্তীতে ‘স্পষ্টভাষী’ শিরোনামে মঞ্চে-নেপথ্যে লিখেছেন এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের অপ-দর্শন প্রচার করেছেন। তখন অবশ্য ইত্তেফাকও তার এই ভূমিকায় সায় দিয়েছিল। কারণ পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে ইত্তেফাকের ভূমিকা আমাদের জানা।

    এই ইতিহাস থেকেই বোঝা যায়, কেন ড. কামাল হোসেনের দেয়া ভুল তথ্যটি সংশোধন না করেই ইত্তেফাক তাদের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সংখ্যায় ছেপে দিলো। আসলে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নীতিই বোধ করি সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ও তার অবদানকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার বিষয়ে তৎপর। এই উদ্দেশ্য নিয়েই পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তাদের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সংখ্যাটি ছাপিয়েছে।

    একমাত্র জনাব নূরে আলম সিদ্দিকীর লেখা বাঙালির চেতনায় সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করেছে ইত্তেফাক লেখাটিতে সে সময়ের নিবেদিতপ্রাণ কয়েকজন সাংবাদিকের নাম এসেছে। সিরাজুদ্দীন হোসেন, আসাফ উদ্দৌলা রেজা, মাহমুদ উল্লাহ, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রমুখ যে ইত্তেফাক পত্রিকার তৎকালীন আদর্শিক লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন— এ কথা একমাত্র এই লেখাটিতেই উঠে এসেছে। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার নেতৃত্বে থেকেও কীভাবে সিরাজুদ্দীন হোসেন তার স্বকীয়তা ও আদর্শিক সংগ্রামের অনন্যতা অক্ষুণ্ন রেখেছিলেন— এই লেখাতে তার একটি আভাস পাওয়া যায়।

    জনাব নূরে আলম সিদ্দিকীর লেখার একটি ছোট্ট অংশে আছে— ১৯৬৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর আইয়ুব খানের মুসলিম লীগ পূর্ব পাকিস্তানে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। সিরাজুদ্দীন হোসেন তখন কাঠের হরফে আট কলামের শিরোনাম করেছিলেন— ‘পূর্ব-বাংলা রুখিয়া দাঁড়াও’। সম্পাদক মানিক মিয়া তখন বার্তা-সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে শিরোনামটি বদলে দেবার ‘অনুরোধ’ করেন। সিরাজুদ্দীন হোসেন কিন্তু সেদিন সম্পাদকের ফরমায়েশ মানেননি; বরং স্বভাবসুলভ হাসিতে জানিয়েছিলেন— ‘মানিক ভাই, এই মুহূর্তে হেডিং অথবা সিরাজুদ্দীন হোসেন— দুটোর একটাকে আপনার বেছে নিতে হবে। শিরোনাম আমি বদলে দেব কিন্তু আমি আর ইত্তেফাকে বসবো না’। মানিক মিয়া অকপটে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বললেন, ‘শিরোনাম বদলানোর প্রয়োজন নাই, আমার সিরাজুদ্দীন হোসেনকেই প্রয়োজন’।

    তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ইত্তেফাকে সিরাজুদ্দীন হোসেনের প্রয়োজন ছিল; কিন্তু বর্তমান ইত্তেফাকে যে নেই— এটা তো তারা ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সংখ্যাতেই জানান দিলেন। সিরাজুদ্দীন হোসেনকে ইতিহাস থেকে বাদ দেবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্পাদকীয় নীতি ইত্তেফাক গ্রহণ করতেই পারে— সেটা তাদের নিজস্ব রাজনীতি; কিন্তু এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির যে অন্যায় পত্রিকাটি করছে, তার জবাব কিন্তু তাকে দিতেই হবে। ইতিহাস বিকৃতির এক ভয়াবহ সময় পার করেছে বাংলাদেশ। আমাদের প্রজন্ম তার নিষ্ঠুর শিকার। এখনও চারদিকে তাদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস জারি আছে। কিন্তু ইতিহাস নিজেই সাক্ষ্য দেয়, বিকৃতকারীরা প্রকৃত ইতিহাসকে সাময়িক আড়াল করতে পারলেও তার শাশ্বত আলোকে কখনও বিনষ্ট করতে পারেনি। প্রজন্মের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো দৈনিক ইত্তেফাক এই সত্যটি যেন মনে রাখে।

  9. মাসুদ করিম - ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ (৬:২৮ পূর্বাহ্ণ)

    বাংলাদেশে বন্যপ্রাণীর বিশাল কালোবাজার

    বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক অপরাধগুলোর একটি। বাংলাদেশেও অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবৈধ বাণিজ্যের কারণে বন্যপ্রাণীর বহু প্রজাতির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। বন্যপ্রাণী নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে এক দল মানুষ ছুটছে এর পেছনে। সেই দলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আছে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পেশাদার প্রতারক।

    বন্যপ্রাণীর বিশাল কালোবাজারে যেমন আছে কোটি কোটি টাকা হারানোর গল্প, তেমনি গহিন জঙ্গলে প্রাণী কিনতে গিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটছে। বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে বিদেশ থেকে বন্যপ্রাণী পাচার হয়ে আসার ঘটনাও ঘটছে। মিঠাপানির কচ্ছপ চোরাচালানের মাধ্যমে লাখ লাখ ডলারের যে ব্যবসা চলছে বিশ্বজুড়ে, তার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ঢাকা। দেশে সবচেয়ে বেশি, ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ বন্যপ্রাণী কেনাবেচা হচ্ছে রাজধানীতেই।

    সারাদেশে সিন্ডিকেট :পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জেলা ও উপজেলাগুলোতে অনেক দিন ধরে সক্রিয় তক্ষক পাচারকারীরা। যদিও তক্ষক দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ওষুধের ‘উপকারিতা’ নিয়ে যেসব কথা শোনা যায়, বৈজ্ঞানিকভাবে তার কোনো ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারপরও সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র নানা গুজব ছড়িয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

    তক্ষকের ব্যবসা ঘিরে বাড়ছে অপরাধের ঘটনা। এ ব্যবসা করতে গিয়ে ২০১১ সালে দালালের খপ্পরে পড়ে নিহত হয় ফটিকছড়ির নারায়ণহাট এলাকার নন্দীপাড়ার রূপক নন্দী নামে এক ব্যক্তি। তক্ষক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মধ্য বেতছড়ির গোরস্তানপাড়ার যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেনকে দুর্বৃত্তরা খুন করে। এ ঘটনার ছয় মাসের মাথায় গত বছরের ২৩ নভেম্বর তক্ষক ব্যবসার সূত্র ধরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে এনে খুন করা হয় ঢাকার এনজিও ‘সেতু বন্ধন’-এর ম্যানেজার হেলাল উদ্দিনকে।

    গতকাল মঙ্গলবার বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানী এলাকা থেকে একটি তক্ষকসহ একজনকে আটক করা হয়। গত ২৫ ডিসেম্বর জামালপুরে দুটি তক্ষকসহ ৫ কারবারিকে আটক করে র‌্যাব-১৪। অক্টোবর মাসে নওগাঁর বদলগাছীতে তক্ষক কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে পুলিশের এক উপপরিদর্শকসহ সংঘবদ্ধ একটি চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এভাবে প্রায় প্রতি মাসেই তক্ষকসহ গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে।

    হাঙরের ব্যবসাও চলছে বাংলাদেশে। ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (ডব্লিউসিএস) বাংলাদেশ জানিয়েছে, ২০১৬ সালেই হাঙরের পাখনা রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কেজি। এর পর আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়া না গেলেও অবৈধ পথে যাচ্ছে হাজার হাজার টন হাঙর। আবার শাপলা পাতা মাছের চামড়া দিয়ে বানানো হয় অভিজাত ও শৌখিন পণ্য। প্রচলিত আছে, এ মাছের চামড়া ও বিশেষ অঙ্গ চীনসহ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় দামি মাছ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে ৮-১০ প্রজাতির শাপলা পাতা মাছের মধ্যে চারটি প্রজাতি মহাসংকটাপন্ন ও সংকটাপন্ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

    অন্যদিকে মিঠাপানির কচ্ছপ চোরাচালানের মাধ্যমে লাখ লাখ ডলারের যে ব্যবসা চলছে বিশ্বজুড়ে, তার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ঢাকা। আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ওয়াইল্ডলাইফ জাস্টিস কমিশন (ডব্লিউজেসি) দু’বছর অনুসন্ধান চালিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।

    এ ছাড়া সুন্দরবনে বাঘ ও নিঝুম দ্বীপে হরিণ শিকার করছে একটি চক্র। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চোরা শিকারিরা সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বন্যপ্রাণী ধরে বাজারে চালান দেয়। চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও মিয়ানমার সীমান্ত পথে অনেক বন্যপ্রাণী বিদেশে পাচার হচ্ছে। থাইল্যান্ড, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ এগুলোর সবচেয়ে বড় ক্রেতা।

    বন্যপ্রাণী ব্যবসার ওপর নজরদারি করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ট্রাফিক’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে ৩০০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ বন্যপ্রাণীর ব্যবসা হচ্ছে।

    অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়ার দাম ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা। মেছোবাঘ ও লামচিতার চামড়া মিলবে ২০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়।

    জ্যান্ত মেছোবাঘ বা লামচিতা এক থেকে দুই লাখ টাকায় পাওয়া যাবে বলে জানান এক ব্যবসায়ী।

    ভালুকের পিত্ত বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার চট্টগ্রাম। পিত্ত দিয়ে তৈরি হয় ওষুধ। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ভালুকের পিত্ত সরবরাহ হয়ে থাকে। ওই অঞ্চলের চোরা শিকারিরা ফাঁদ পেতে ভালুক ধরে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নিয়মিতভাবে জীবিত ভালুক ও এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচার হয়ে থাকে। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও তাইওয়ানের মানুষ এর সবচেয়ে বড় ক্রেতা।

    ২০১২ সাল থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত ডব্লিউসিএসের গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে যে বন্যপ্রাণীর ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে, তার মধ্যে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীর বাণিজ্য শতকরা ২৮ শতাংশ, সরীসৃপ ২৯, পাখি ৩৫, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী ৭ এবং হাঙর ও শাপলাপাতা রয়েছে এক শতাংশ।

    বিশ্বজুড়ে বন্যপ্রাণী পাচারের ক্ষেত্রে বিশেষ নজরদারি বা ‘ফোকাস’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। ডব্লিউসিএসের গবেষণায় বলা হয়েছে, সারাদেশের মধ্য ঢাকায় ৩৩.৮, খুলনায় ৩১.৫, বরিশালে ৯.০, রাজশাহীতে ৭.৯, সিলেটে ৬.৪, চট্টগ্রামে ৬.১, রংপুরে ৩.৩ এবং ময়মনসিংহে ১.৮ শতাংশ বন্যপ্রাণীর বেচাকেনা হয়।

    ভুয়া ছাড়পত্রে বন্যপ্রাণী পাচার :বন বিভাগের অনুমোদন ছাড়া কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্যপ্রাণী আমদানি-রপ্তানি করতে পারে না। এ জন্য সাইটিসের (বিলুপ্ত নয়- এমন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী রপ্তানিতে দেওয়া সনদ) ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে এই ছাড়পত্র দিয়ে থাকে বন অধিদপ্তর। তবে বন বিভাগের নামে ভুয়া ছাড়পত্রে অনেক বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহন হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, কার্গো বিমানে পাচার করে আনার পর ভুয়া ঠিকানা, জাল কাগজপত্র দেখিয়ে দ্রুত বিমানবন্দর থেকে খালাস করা হয়। সেখান থেকে ৭-১০ দিনের মধ্যে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করানো হয়। প্রথমে প্রাণীগুলোকে রাখা হয় রাজধানীর উত্তরা ও আশপাশের এলাকায়। পরে সুযোগ বুঝে সেগুলো সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হয়। তবে কচ্ছপগুলো আকাশপথে চীন, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাচার করা হয়। পরিবহনের সময় বন্যপ্রাণীকে অজ্ঞান কিংবা বিশেষ কায়দায় রাখা হয়। বন্যপ্রাণী সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে যায়।

    ডব্লিউসিএসের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বন্যপ্রাণী নিয়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কালোবাজার চলছে। এ বাজারে প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার আদান-প্রদান হচ্ছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে বাংলাদেশে বন্যপ্রাণীর বড় অংশ আজ বিলুপ্ত প্রায়।

    বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চোধুরী বলেন, বন্যপ্রাণী শিকার, পাচার এবং পণ্য হিসেব ব্যবহারের জন্য এশিয়া একটি বৈশ্বিক হটস্পট। বাংলাদেশ এখনও বিশ্বব্যাপী বিলুপ্ত প্রজাতির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বন্যপ্রাণীর ধারক ও বাহক হওয়া সত্ত্বেও এখানে বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য ভৌগোলিকভাবে বিস্তৃত। পাচারের ক্ষেত্রে অস্ত্র ও ড্রাগের পরই রয়েছে বন্যপ্রাণী।

    বন অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বন্যপ্রাণীবিষয়ক অপরাধের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৭৮টি। এ-সংক্রান্ত মামলা হয়েছে প্রায় ৩৮৬টি, গ্রেপ্তার হয়েছে ৬৮৪ জন, সাজা হয়েছে ৯২ জনের। এই অপরাধে শাস্তি হয়েছে মাত্র ৬৫ জনের।

    বন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য দমনে মূল চ্যালেঞ্জ অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় জটিলতা। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী, বন্যপ্রাণী নিধন এবং ব্যবসার সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা ও ১২ বছরের কারাদণ্ড।

    বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন আকন বলেন, ২০১২ সালে গঠন হওয়া ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটের জনবল মাত্র সাতজন। তবুও গত আট বছরে বহু অভিযোগ পরিচালনা করেছি।

  10. মাসুদ করিম - ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ (৪:৫০ অপরাহ্ণ)

    দু’ হাজার বিশে সাংস্কৃতিক যেসব ব্যক্তিত্বদের হারালাম

    ত এক বছরে (জানুয়ারি ২০২০ থেকে ডিসেম্বর, ২০২০) বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতি সফল অথবা জাতীয় পর্যায়ে সুপ্রতিষ্ঠিত ও অতিশয় বিখ্যাত যতজন বাঙালি মারা গেলেন, একাত্তর ছাড়া, আমার স্মরণকালে আর কখনো এত অল্প সময়ের ভেতর এতজন গুণীর, এমন স্মরণীয় ও বরণীয় প্রখ্যাত বাঙালির, মৃত্যু ঘটেছে বলে মনে হয় না। এর ভেতর বিশ্ব মহামারী কোভিড ১৯-এ সরাসরি আক্রান্ত হয়ে কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন, কারো চলমান ব্যাধির সঙ্গে করোনা যুক্ত হয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি করেছিল, সেটাই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে বেশির ভাগ মৃত্যু-ই হয় করোনা-বহির্ভূত শারীরিক অন্যান্য অসুস্থতার কারণে। গত বছরে মৃত্যু বরণকারী সেই সব কৃতিমান খ্যাতিমান বাঙালি গুণীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবার উদ্দেশে তাঁদের প্রত্যেকের নাম, সংক্ষিপ্ত জীবনী ও প্রধান অবদানের কথা স্বল্প পরিসরে গ্রন্থিত করার চেষ্টা করেছি নিচে। সকলের জন্যে সমান বা এক-ই রকম তথ্য দিতে পারিনি। প্রখ্যাত এই ব্যক্তিদের সম্পর্কে লেখার দৈর্ঘ কোনভাবেই তাঁদের অবদানের সূচক নয়। তথ্যের প্রতুলতা, জীবনের বর্ণিলতার আধিক্য, তুলনামূলকভাবে তাঁদের কর্মজীবন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের পরিচিতির ঘাটতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিবেচনায় কারো সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত বেশি, আবার কারো সম্পর্কে কম লেখা হয়েছে ।

    ড. আনিসুজ্জামান (১৯৩৭-২০২০) একজন অসাধারণ চিন্তাবিদ ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান জাতির যে কোন বিপদে সবসময় সবার আগে এগিয়ে এসে তাঁর প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশকে বিপদমুক্ত করে এনেছেন। তাঁকে তাই জাতির বিবেক ও পথপ্রদর্শক বলে বিবেচনা করতেন বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগন। তার বহু সাহিত্যকর্মের মধ্যে “মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য” সুনাম কুড়িয়েছে। নির্ভেজাল অসাম্প্রদায়িক আনিসুজ্জামান বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতীয়বাদকে সমুন্নত রাখার প্রয়াসে বহুবার সরকারের কুনজরে পড়েছেন। তিনি ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে গিয়ে ২০২০ এর গণতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলন পর্যন্ত সকল সুস্থ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। উল্লেখযোগ্য বই ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’ ছাড়াও ,‘বাঙালি নারীঃ সাহিত্যে ও সমাজে’ সহ আরও বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। বাংলা একাডেমী পুরস্কার ও একুশে পদক, পশ্চিম বাংলা থেকে আনন্দ পুরস্কার এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্মভূষণ উপাধি অর্জন করেন সাহিত্যে অমূল্য অবদানের জন্যে।

    মুর্তজা বশীর (১৯৩২-২০২০); মুর্তজা বশীর বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী। তিনি একাধারে অধ্যাপক, গবেষক, কবি, লেখক, চিত্রনাট্যকার, শিল্পনির্দেশক এবং মুদ্রা ও ডাকটিকিট বিশারদ। উপমহাদেশের ভাষাবিদ, চিন্তক ডক্টর মোহম্মদ শহীদুল্লাহর পুত্র। বাম ধারার রাজনীতি করতে গিয়ে পার্টির জন্যে পোস্টার তৈরির মধ্য দিয়েই শিল্পী জীবনের শুরু। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ ও আমিনুল ইসলামের কাছে ছবি আঁকার পাঠ গ্রহণ করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘কাচের পাখির গান, ‘গল্প সমগ্র’, ‘ত্রসরেণু’, ‘তোমাকেই শুধু’, ‘এসো ফিরে অনুসূয়া’, ‘সাদায় এলিজি’, ‘আল্ট্রামেরিন’, ‘মিতার সঙ্গে চার সন্ধ্যে’, ‘অমিত্রাক্ষর, ‘মূর্ত ও বিমূর্ত’, ও ‘আমার জীবন ও অন্যান্য’। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস সর্বক্ষেত্রেই তার বিচরণের সাক্ষী এই বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে পুস্তকপ্রকাশ। তাঁর মৃত্যুর কারণ করোনা সংক্রমণ। তিনি সাহিত্য ও শিল্পে অবদানের জন্যে একুশে ও স্বাধীনতা পদক অর্জন করেন।

    অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ( ১৯৩৩ — ২০২০) বহু বছর থেকে জার্মানিতে বসবাসকারী একজন বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও চিন্তাশীল গদ্যকার। তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধ বিষয়বৈচিত্রে যেমন, নান্দনিকতা ও বৈদগ্ধে তেমনি বিশাল ও স্বতন্ত্র। তাঁর ছন্দনৈপুণ্য ও ঐতিহ্যের পুনরাবিষ্কার এবং পুননির্মাণ তাঁর সৃষ্টিতে অসামান্য মাত্রা যোগ করেছে। একজন প্রকৃত সৃষ্টিশীল বাঙালি ও চিন্তক হিসাবে বিশ্বময় পরিচিতি দিয়েছে তাঁকে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টোরেট ডিগ্রী লাভ করেন। এর পর থেকেই তিনি জার্মান ভাষায় লিখিত সাহিত্য বাংলায় অনুবাদ শুরু করেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যে কয়েক বছর অধ্যাপনা করার পর ফেলোশিপ নিয়ে জার্মানি যান ১৯৭১ সালে এবং বাকি জীবন বাংলা সাহিত্যের চর্চা ও বাংলা পড়িয়ে জার্মানিতেই থেকে যান। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি ভারত ও জার্মানির মধ্যে সুসম্পর্ক ও আরো ঘনিষ্ঠ সংযোগ স্থাপনের জন্যে জীবনভর নিবিড়ভাবে কাজ করেন। জার্মান সরকার প্রীত হয়ে তাঁকে গ্যাটে পুরস্কারে ভূষিত করেন। তিনি সারাজীবনে প্রচুর লিখেছেন যাঁর মূল্যায়ণে পৃথিবী জুড়ে সতীর্থ কবিসাহিত্যিকগন তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাঁর লেখার মান উঁচু, যেমন তা তীক্ষ্ণ, পরিণত ও স্বতন্ত্র। তাঁর প্রকাশিত লেখার সংখ্যা বা পরিমানের প্রাচুর্য-ও বিষ্ময়কর। অলোকরঞ্জন মনীষা এবং সংবেদনশীলতায় বাংলাসাহিত্যের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলা ও সাঁওতালি কবিতা জার্মান ও ইংরাজি ভাষায় অনুবাদ করেছেন, এবং প্রচুর ফরাসি ও জার্মান সাহিত্য বাংলায় তর্জমা করেছেন। তিনি ২০টিরও বেশি কবিতার বই লিখেছেন। এছাড়া তিনি বেশ কয়েকটি প্রবন্ধের বই প্রকাশ করেছেন। তাঁর স্বতন্ত্র গদ্যশৈলীর জন্য তিনি সুপরিচিত। তিনি জীবনভর প্রচুর পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন । তার মধ্যে আছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুধা বসু পুরস্কার , জার্মানিতে গ্যাটে পুরস্কার, ভারত থেকে আনন্দ পুরস্কার , প্রবাসী ভারতীয় সম্মান , রবীন্দ্র পুরস্কার , তাঁর কবিতার বই মরমী করাত (অনুবাদ করেছেন দ্য মিস্টিক্যাল স অ্যান্ড আদার পোয়েমস) এর জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার এবং প্রবাসী ভারতীয় সম্মান অর্জন করেন ।

    দেবেশ রায় (১৯৩৬-২০২০) জন্ম ১৯৩৬ সালে পাবনা জেলার বাগমারা গ্রামে। ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও প্রাবন্ধিক। কলেজে অধ্যাপনা করেছেন বহু বছর। আকাদেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত তিস্তাপারের বৃত্তান্তের জন্যে। । বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে তিস্তাপারের বৃত্তান্ত, দাঙ্গার প্রতিবেদন, খরার প্রতিবেদন, সময়-অসময়ের বৃত্তান্ত, মফস্বলি বৃত্তান্ত, বরিশালের যোগেন মন্ডল, শরীরের সর্বস্বতা, তিস্তাপুরাণ, করপোরেট ইত্যাদি। ১৪ মে, ২০২০ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

    রাহাত খান (১৯৪০-২০২০) কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। বিখ্যাত গ্রন্থ অমল ধবল চাকরী, দিলুর গল্প, হে অনন্তের পাখী। বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার ও একুশে পদক পেয়েছেন। ইত্তেফাক গ্রুপে দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেন। ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ অমল ধবল চাকরি, ছায়াদম্পতি, শহর, হে শূন্যতা, হে অনন্তের পাখি, মধ্য মাঠের খোলোয়াড়, এক প্রিয়দর্শিনী, মন্ত্রিসভার পতন, দুই নারী, কোলাহল ইত্যাদি। ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

    রশীদ হায়দার (১৯৪১-২০২০) কথাসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক। সাবেক নির্বাহী পরিচালক, নজরুল ইন্সটিটিউট। জিয়া হায়দারের অনুজ ও দাউদ হায়দার, জাহিদ হায়দার, মাকিদ হায়দারের অগ্রজ রশিদ হায়দারের পরিবারে প্রায় সবাই লেখক। সাহিত্যকর্মের জন্যে রশীদ হায়দার বাংলা একাডেমী ও একুশে পদক লাভ করেন। উল্লেখযোগ্য বই, স্মৃতি ১, স্মৃতি ২, আমার প্রেমের গল্প, গল্পসমগ্র ১, যুদ্ধ ও জীবন, গল্পসমগ্র ২, সামান্য সঞ্চয়, তিনটি প্রায়োপন্যাস, যদি দেখা পাও। ২০২০ সালে ১৩ অক্টোবর তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

    কামাল লোহানী (১৯৩৪-২০২০) কামাল লোহানী ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। সংস্কৃতির অমিয় সাধক, ভাষা সৈনিক কামাল লোহানী করোনাতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি উদীচী, বাংলাদেশ -এর কর্ণধার ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গঠিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের সংবাদ বেতারে তিনিই প্রথম পাঠ করেন সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০২০ সালে ২০ জুনে তিনি মৃত্যু বরন করেন।

    জামিলুর রেজা চৌধুরী (১৯৪৩-২০২০)–জাতীয় অধ্যাপক প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, গবেষক, শিক্ষাবিদ, লেখক। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার পক্ষে অনেক বক্তব্য রাখেন ও প্রবন্ধ লেখেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রকৌশলী জামিল রেজা চৌধুরী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদক লাভ করেন। বুয়েটে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করে পরে এশিয়াপেসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যন্সেলরের পদ অলংকৃত করেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারে তিনি অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেতু, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলি টানেল, ইনডোর স্টেডিয়াম ইত্যাদি বহু জাতীয় প্রকল্পে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। দেশের বহু বিখ্যাত ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে তাঁর অবদান রয়েছে। ২০২০ সালে ২৮ এপ্রিল তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

    নীলোৎপল সাধ্য (১৯৫৫-২০২০) নীলোৎপল সাধ্য ময়মনসিংহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ধোবাউড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ সাধ্য গ্রামে তবলা বাজাতেন এবং ফুটবল খেলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অতি অল্প বয়সে কাকা সুনীল সাধ্যর কাছে গানে প্রথম হাতেখড়ি। প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময়েই প্রথম একটি জারিগানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম হন নীলোৎপল। তাঁদের গ্রামে সংগীত জানা একজন মানুষের বাড়িতে রেডিওতে কলকাতার আকাশবাণীর সংগীত শিক্ষার আসর প্রতি রবিবার শুনতে যেতেন। তখন থেকেই রবীন্দ্রনাথের গানের প্রতি তাঁর ভালোবাসা জন্মায়। তবে প্রথম যেদিন সংগীতাচার্য শৈলজারঞ্জনের কাছে তিনি গান শেখার সুযোগ পান, তাঁর নিজের ভাষায়, ‘সেদিন মনে হয়েছিল যেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই আমার সামনে বসা। মনে হলো যেন জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মৃতি এটাই।’ তিনি সবসময় বলতেন, ‘রবীন্দ্রনাথের গান আমার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। সমস্ত গ্লানি ও মলিনতা থেকে দূরে রাখে।’ পেশায় তিনি বাংলাদেশ টিএনটি বোর্ডে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরি করে অবসরগ্রহণ করেন ২০১৬ সালে। কিন্তু পেশা চালিয়ে যাবার পাশাপাশি সংগীতের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ১৯৮১ সালে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের ময়মনসিংহ শাখার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ২৬ বছরের নীলোৎপল সাধ্যর সাংস্কৃতিক জীবনের সূচনা। রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষাদানের ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুব শুদ্ধাচারী ও আবেগপ্রবণ। সংগীতের শিক্ষাদানে ব্যতিক্রমী পদ্ধতিটি তিনি শিখেছিলেন তাঁর গুরু ওয়াহিদুল হকের কাছ থেকে। তাঁর আদর্শ ওয়াহিদুল হকের মৃত্যুর পর নীলোৎপল সাধ্যর জীবনের সাধনা ছিল তরুণ প্রজন্মকে শুদ্ধভাবে রবীন্দ্রসংগীত শেখানো এবং রবীন্দ্রচেতনায় উদ্বুদ্ধ, সুস্থ সংস্কৃতির রুচিবান বাঙালি হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি রবীন্দ্রনাথের গানকে বাংলার আপামর জনসাধারণের কাছে ছড়িয়ে দেবার সাধনায় নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন। নীলোৎপল সাধ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ সাল থেকে সংগীত বিভাগে রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষক হিসেবে খণ্ডকালীন অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। পাশাপাশি ২০১৪ সাল থেকে ত্রিশালে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েও সংগীত বিভাগে তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তিনি সারাদেশে চল্লিশ বছরে কমপক্ষে সহস্রাধিক সংগীতকর্মশালা করেছেন। পশ্চিম বাংলায়ও তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। যদিও এই মহান গায়ক, সংগঠক, প্রচারবিমুখ শিল্পী ক্যান্সারে ভুগছিলেন কয়েক বছর ধরে, তিনি করোনাকালে মারা যাওয়ায় শহীদ মিনার দূরে থাক তাঁর প্রাণপ্রিয় ছায়ানটেও আনতে দেয়া হয়নি তাঁর মৃতদেহ। এটা সকলের মনেই গভীর কষ্টের জন্ম দেয়। তিনি ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ শুদ্ধ রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, শিক্ষক তথা সংগীত গুরু। রবীন্দ্রসংগীত চর্চার বিশাল মাপের সংগঠক নীলোৎপল সাধ্য ওয়াহিদুল হকের ভাবশিষ্য, জীবদ্দশায় ওয়াহিদুল হকের ছায়াসঙ্গী এবং তাঁর মৃত্যুর পর ওয়াহিদুল হকের কাজকে অব্যাহত রাখার সারথী ছিলেন নীলোৎপল সাধ্য।

    এন্ড্রু কিশোর (১৯৫৫-২০২০) একজন গায়ক, ও নাটক ও চলচ্চিত্রের গানে কন্ঠদানের জন্যে বিখ্যাত। চলচ্চিত্রে তাঁর অতি জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, ডাক দিয়েছেন দয়াল আমারে, হায়রে মানুষ রঙিণ ফানুষ, আমার সারা দেহো খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যখানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন, সবাই তো ভালোবাসা চায়, ভেঙেছে পিঞ্জর, মেলেছে ডানা ইত্যাসি। তিনি বাংলাদেশে এবং অন্যান্য দেশে চলচ্চিত্রের গানে কন্ঠ দেন। তাকে “প্লেব্যাক সম্রাট” বলে আখ্যা দেয়া হয়।
    রাজশাহীতে জন্ম, রাজশাহীতেই মৃত্যু। পিতার নাম ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ । মাতা মিনু বাড়ৈ রাজশাহীর বুলনপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। মায়ের কাছেই তার পড়াশোনায় হাতেখড়ি হয়েছিল। তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে রাজশাহী। তার মাতা ছিলেন সংগীত অনুরাগী, তার প্রিয় শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার। প্রিয় শিল্পীর নামানুসারে তার সন্তানের নাম রাখেন ‘কিশোর’। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতেই তিনি সংগীতাঙ্গনেই পা রাখেন।
    কিশোর ছয় বছর বয়স থেকে সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি রাজশাহী বেতারে নজরুল, রবীন্দ্র, লোকসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গান শাখায় তালিকাভুক্ত হন। চলচ্চিত্রে তার প্রথম গান মেইল ট্রেন (১৯৭৭) চলচ্চিত্রের “অচিনপুরের রাজকুমারী নেই”। বড় ভাল লোক ছিল (১৯৮২) চলচ্চিত্রের “হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস” গানের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি আরো সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি পাঁচবার বাচসাস পুরস্কার ও দুইবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।
    তার স্ত্রীর নাম লিপিকা অ্যান্ড্রু ইতি। এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। রাজশাহী খৃষ্টান গোরস্থানে তাকে সমাধিস্ত করা হয়। তাঁর মৃত্যুর কারণ ক্যন্সার। তিনি দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করেন।

    আবুল হাসনাত (১৯৪৫-২০২০) বাংলাদেশের বিখ্যাত সাহিত্য সম্পাদক। কর্মজীবনের প্রথম ছাব্বিশ বছর সংবাদের সাহিত্য পাতার সম্পাদক হিসেবে কাটিয়ে দেন। পুরণো দৈনিক সংবাদ-এর মূল আকর্ষন এর “সাহিত্য সাময়িকী” বিভাগ। প্রগতিশীল সংবাদপত্র সংবাদের প্রচন্ড দুর্দিনেও কখনো তিনি এই কাগজ থেকে বিচ্ছিন্ন হন নি। এর অন্যতম কারণ দেশের বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন ছাত্রাবস্থা থেকেই। পরে বেঙ্গল গ্রুপের সাহিত্যপত্রিকা কালি ও কলমের সম্পাদক হিসেবে পত্রিকাটির শুরু থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিযুক্ত ছিলেন। সাহিত্য সম্পাদক ছাড়া তাঁর আরেকটি পরিচয় তিনি একজন নিভৃতচারী কবি। মাহমুদ আল জামান নামে কবিতা লিখতেন। তিনি চিত্রশিল্পের একজন বড় সমঝদার ও সমালোচক ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত চিত্র সংগ্রহশালা অনেক প্রাতিষ্ঠানিক গ্যালারীর চাইতে সমৃদ্ধশালী। দেশের প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন।

    জিয়াউদ্দিন তারিক আলী (১৯৪৫-২০২০)- সাংস্কৃতিক নেতা, প্রগতিশীল চিন্তক, মুক্তিযোদ্ধা, প্রকৌশলী, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরেরে অন্যতম ট্রাস্টি (অছি)। দেশের সকল সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। করোনা আক্রমনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে সংগীত শিক্ষা নেন। এছাড়া ছায়ানটের সঙ্গে আজীবন সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৯৭০-১৯৭১ সালে গণসঙ্গীতের দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে তিনি রাজপথে গান গেয়ে বেরিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে লড়াইয়ে যোগ দেন। মুক্তিসংগ্রামের শিল্পী দলের সদস্য হয়ে শরণার্থী শিবির, মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প, মুক্ত এলাকায় যোদ্ধাদের গানের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণে এই দলের ছিল বিশেষ ভূমিকা। লিয়ার লেভিন ধারণকৃত সেই দলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ফুটেজ কয়েক দশক পরে উদ্ধার করেন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ যা দিয়ে তাঁরা নির্মাণ করেন ‘মুক্তির গান’ প্রামাণ্যচিত্র। মুক্তির গান বর্তমান তরুণদের আলোড়িত করে। তারিক আলী ছিলেন এই প্রামাণ্যচিত্রের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব।

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর (১৯৩৬-২০২০) লেখক, শিক্ষাবিদ ও চিত্র সমালোচক। তিনি সাহিত্যে অবদানের জন্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং শিক্ষা ও গবেষনাক্ষেত্রে অবদানের জন্যে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন। তিনি একজন কথাশিল্পী হলেও বেশি সুনাম অর্জন করেছেন মননশীল রচনার জন্যে। উল্লেখযোগ্য বই বাংলাদেশের জাতীয়তা ও মৌলবাদ, রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা, নৈঃশব্দের সংস্কৃতি।

    অরুণ সেন (১৯৩৬-২০২০) অরুণ সেনের পূর্বপুরুষ পূর্ববঙ্গের হলেও তিনি আজন্ম কলকাতাবাসী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ শেষ করে কলকাতারই একটি কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা করেন। অরুণ সেন পশ্চিমবঙ্গে বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট লেখক। তাঁর প্রবন্ধের বিষয়বৈশিষ্ঠ্য এবং প্রাঞ্জল গদ্য ব্যাপক সমাদৃত। বাংলাদেশের সাহিত্যে তাঁর আগ্রহ ও চর্চার কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে বাংলাদেশ বিষয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আমন্ত্রিত হন। সেখানকার কর্মসূত্রে বাংলা বিভাগের ওই বিষয়ের পাঠক্রম তৈরি করেন তিনিই। বাংলাদেশ ও তার সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক লেখালেখি, সেমিনারে ভাষণ বা পাঠ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁর সক্রিয়তা সর্বজনবিদিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য বই সাহিত্যের বাংলাদেশ, বিষ্ণু দে, আধুনিক কবিতা, চিত্রকলা ও ভাস্কর্য, বাংলা বানান ইত্যাদি। বাংলাদেশের সমাজ ও সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে বহু বছরের চর্চার ফসল বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর কয়েকটি বই: দুই বাঙালি, এক বাঙালি, বাংলা বই বাংলাদেশের বই, দুই বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য।

    নিমাই ভট্টাচার্য (১৯৩২-২০২০) একজন প্রখ্যাত বাঙালি লেখক ও সাংবাদিক। পশ্চিম বাংলায় জন্ম হলেও আদিনিবাস পূর্ববাংলার যশোরে। প্রায় ১৬০টি উপন্যাস লিখেছেন। কিন্তু যে উপন্যাস সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং যা তাঁকে অমরত্ব দেবে সেই উপন্যাসের নাম ‘মেমসাহেব’। নিমাই ভট্টাচার্য্য তাঁর সময়ের অন্যতম সাহিত্যিক যাঁর রচনার যথেষ্ট ইতিবাচক মূল্যায়ণ হয়নি বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। ২০২০ সালে ২৫ জুন তিনি কোলকাতায় মৃত্যু বরণ করেন।

    সাইদা খানম (১৯৩৭-২০২০) প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক নারী আলোকচিত্র শিল্পী। সাইদা খানমের ফটোগ্রাফিতে আগ্রহ জন্মে অনেক ছোটকাল থেকে। যখন তার খালা তার জন্য আমেরিকা থেকে ভাল ক্যামেরা নিয়ে আসেন। ফটোগ্রাফার হিসেবে তার হাতেখড়ি এবং প্রেরণা ছিল বিভিন্ন বিদেশি পত্রিকার প্রচ্ছদসমূহ। ১৯৫৬ সালে চাকুরী জীবন শুরু করেন তখনকার দিনের একমাত্র নারী পত্রিকা ‘বেগম’-এ কাজের মাধ্যমে। তার তোলা ছবি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সুনাম অর্জন করে। সাইদা খানম কাজ করেছেন চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের সাথে, তাঁর তিনটি ছবিতে। ১৯৫৬ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন সাইদা খানম। ওই বছরই জার্মানিতে ইন্টারন্যশনাল অ্যাওয়ার্ড ‘কোলন’ পান তিনি। ভারত, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, পাকিস্তান, সাইপ্রাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বেশ ক‘টি দেশে তার ছবির প্রদর্শনী হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়েও তিনি অনেক ছবি তুলেছেন। তিনি একুশে পদক বিজয়ী আলোকচিত্র শিল্পী। ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট তিনি মৃত্যু করেন।

    মকবুলা মনজুর (১৯৩৮-২০২০) বাংলাদেশের লেখক, ঔপন্যাসিক, শিক্ষক ও সম্পাদক। সৈয়দুর রহমান তার ‘হিস্টরিক ডিকশনারি অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থে তাকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সেলিনা হোসেন ও হাসান হাফিজুর রহমান-এর পাশাপাশি আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যে অবদানকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাংলা উপন্যাসে অবদানের জন্য তিনি ২০০৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে লেখিকা সংঘ পুরস্কার ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। তিনি জীবনে অনেক উপন্যাস রচনা করেছেন। তার ভেতর “কালের মন্দিরা” সবচাইতে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। এছাড়া অন্যান্য জনপ্রিয় উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে কনে দেখা আলো , নির্বাচিত প্রেমের উপন্যাস, নদীতে অন্ধকার, লীলা কমল, বাউল বাতাস, ছায়াপথে দেখা ও একটাই জীবন ইত্যাদি। ‘কালের মন্দিরা’ বাংলা সাহিত্যে এক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। গ্রন্থটি জাতীয় আর্কাইভ ও গ্রন্থাগার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পুরস্কার অর্জন করে ১৯৯৭ সালে। ৮২ বছরে বয়সে তিনি ২০২০ সালে ৩ জুলাই মৃত্যু বরণ করেন।

    পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল (১৯৪৯-২০২০) আত্মমগ্ন ও নির্জন কবি হিসেবে মননশীল পাঠকের কাছে দীর্ঘদিন ধরে আদৃত। কলকাতার দমদমের সন্নিকটে সিথির মোড়ে থাকতেন। বাম রাজণীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ দেবী বেরোয় ১৯৭০ সালে । এই গ্রন্থ সকলের চোখে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে হুলুস্থুল পড়ে যায়। এরপর রাত্রি চতুর্দশী, টেবিল, সাদা পাথরের গোলাপগুচ্ছ, নবান্ন , বহিরাগত, দূরের সন্ধ্যা একে একে অনেক কাব্যগ্রন্থ বের হয়। তিনি ২০২০ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর মৃত্যু বরণ করেন।

    ঊষা গাঙ্গুলি (১৯৪৫-২০২০) দুই বাংলায় সুপরিচিত নাট্যনির্দেশক ও অভিনয়শিল্পী ঊষা গাঙ্গুলি। মাতৃভাষা হিন্দি হলেও কলকাতায় বাংলায় এবং হিন্দিতে নাটক করে মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন। নারীবাদী নাট্যশিল্পী ও সমাজকর্মী ঊষা গাঙ্গুলি বিবাহসূত্রে বাঙালি ছিলেন। রুদালী তার সবচেয়ে জনপ্রিয় কীর্তি। নারীবাদী দৃষ্টিকোন বিশেষত নাটকে নারীর নিরাপত্তা ও স্বাবলম্বিতা ফুটিয়ে তুলতে তাঁর তুলনা ছিল না। ২০২০ সালে ১৩ এপ্রিল মৃত্যু বরণ করেন।

    আলম তালুকদার (১৯৫৬-২০২০) করোনার বলি জনপ্রিয় ছড়াকার ও মুক্তিযোদ্ধা আলম তালুকদার। আলম তালুকদার ‘চাঁদের কাছে জোনাকি’ ছড়ার বইয়ের জন্য ২০০০ সালে অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়া পালক অ্যাওয়ার্ড, জয়নুল আবেদিন পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার পান। বই, এক স্বাধীন, তিন রাজাকার, দশ ফালি রোদ। ২০২০ সালে ৮ জুলাই মৃত্যু বরণ করেন।

    দাউদ আল হাফিজ (১৯৬৫-২০২০) নব্বই দশকের অন্যতম কবি দাউদ আল হাফিজ এর জন্ম শৈলকুপার কবিরপুর গ্রামে। ১৯৮১ সালে শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে যশোর শিক্ষাবোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে মেধা তালিকায় ২য় স্থান অর্জন করেন। তিনি ইংরেজিতে এম এ পাশ করেন। ১৯৯৩ সালে T S Elliot নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। পরে “আনাবাস” নামে আর একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পায়। দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে তিনি লেখালেখি করতেন। শৈলকুপায় শিশুদের জন্য তিনি একটি ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েকবছর পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন। মুক্তমনা, স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন কবি দাউদ আল হাফিজ। সকলের থেকে সবক্ষেত্রেই একটু আলাদা ধাচের। তিনি লেখালেখি, সাহিত্য আড্ডা পছন্দ করতেন। অনুবাদ, সমালোচনা, সম্পাদনা করতেন। খন্দোকার আশরাফ হোসেন সম্পাদিত একবিংশ পত্রিকার তিনি সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০১ সাল পর্যন্ত। ঢাকার যান্ত্রিক জীবন ত্যাগ করে দীর্ঘদিন নানা সংকটের মধ্য দিয়ে শৈলকুপায় পরিবারের সাথে বসবাস করতেন। ২০২০ সালে ২৯ জুন মৃত্যু বরণ করেন।

    আলেয়া চৌধুরী (১৯৫৬- ২০২০) বাংলাদেশের কবি। গত চার দশক ধরে প্রবাসী। গত পঁয়ত্রিশ বছর যাবত নিউ ইয়র্ক শহর ও আশেপাশেই বসবাস করছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোন লেখাপড়া না করা অবস্থায় গ্রাম থেকে প্রথমে ঢাকা চলে আসেন বিদ্রোহী আলেয়া। সম্পূর্ণ একা। এরপর প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যে, পরে ইউরোপে এবং শেষে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রকম পেশায় খুব সংগ্রামময় জীবন কাটাতে হয় আলেয়াকে। এর-ই ভেতর কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে তার কঠিন চিকিৎসা সমাপ্ত করে জয়ীও হন। ছোটবেলা থেকেই কবিতা আন্দোলিত করতো আলেয়াকে। সময় এবং সুযোগ পেলেই তার কবিতা লেখার খাতাখানি খুলে বসতেন। নিজের খুশিমতো কবিতা লিখতেন। বহু সংঘাতের ভেতর দিয়ে গিয়েও তিনি কখনো তার কবিসত্তা হারান নি। তার গ্রন্থ সংখ্যা অর্ধ ডজনের বেশি। তিনি সারাজীবন অবিবাহিত থাকেন। তার এরকম দুর্লভ জীবন গাথার সংবাদ পেয়ে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যলয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর পড়তে এসে বাংলাদেশের ছাত্রী দীনা হোসেন (ব্যারিস্টার কামাল হোসেনের কনিষ্ঠা কন্যা) আলেয়ার সংগ্রামময় জীবনের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করেন। ২০২০ সালে ৪ আগস্ট মৃত্যু বরণ করেন।

    সুব্রত মুখোপধ্যায় (১৯৩৫—২০২০ )পশ্চিমবঙ্গের লেখক। ঔপন্যাসিক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। ২০১২ সালে তাঁর বীরাসন উপন্যাসের জন্যে আকাদেমী পুরস্কার পান। এছাড়া তাঁর প্রাপ্ত আরো নানা পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে বঙ্কিম সাহিত্য পুরষ্কার। বিক্রমমপুরে জন্ম গ্রহণ করা সুব্রত মুখোপধ্যায়ের অন্যান্য উপন্যাস অগ্নিবীজ, উদ্ভট সাগর, গর্ভগৃহ, আয় মন বেড়াতে যাবি, কালান্ত, আলতাপা, নিগড় ইত্যাদি। ২০২০ সালে ১৮ মার্চ ৬৯ বছর বয়সে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

    সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৫-২০০০) সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বিখ্যাত অভিনেতা, আবৃত্তিকার এবং কবি। তিনি অস্কার বিজয়ী জগৎবিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ৩৪টি সিনেমার ভিতর ১৪ টিতে অভিনয় করেছেন । তাঁর প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’। সেই পঞ্চাশের দশকে অপুর সংসার চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেই দর্শকের মন কেড়েছিলেন সৌমিত্র।
    পঞ্চাশের দশকের অভিনেতা, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আজীবন অভিনয় করে গেলেও অভিনেতা হিসেবে এতোটুকু ঔজ্জ্বল্য হারান নি। । বরং একের পর এক ছবিতে অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। আমৃত্যু, ৮৫ বছর বয়সেও, মঞ্চ আর ছায়াছবি দুই ক্ষেত্রেই সক্রিয় চরিত্রাভিনেতা ছিলেন। নিজেকে বরাবর বলতেন থিয়েটারের মানুষ। তাঁর দরাজ কণ্ঠের আবৃত্তি শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে।

    কবিতার বই লিখেছেন ১৪টি। শিল্পক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্যে ফ্রান্স সরকার তাঁকে দিয়েছে সে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরষ্কার। স্বদেশে তিনি আগে থেকেই সন্মানিত হয়েছেন পদ্মভূষণ, দাদা সাহেব ফালকে-সহ বহু পুরষ্কারে। গোটা ভারতের সর্বসেরা নায়ক হিসেবে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন সুমন ঘোষের ‘পদক্ষেপ” ছবিতে অভিনয় করার জন্যে। এতো সুনাম করা সত্ত্বেও কখনো বম্বে পাড়ি জমাননি।

    ড. আলী আসগর (১৯৩৬-২০২০) তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী, গবেষক, জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক ও সংগঠক। অধ্যাপক আলী আসগর কর্মজীবনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। সুদীর্ঘকাল তিনি জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। শিশুদের বিজ্ঞানমনস্ক করতে গড়ে তুলেছেন ‘বিজ্ঞান খেলাঘর’। বিজ্ঞান মেলার আয়োজনের মূল উদ্দীপক ছিলেন। জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। যুক্তি ও মুক্ত বুদ্ধির আন্দোলনের , অসাম্প্রদায়িকতার প্রচারে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন। প্রতিটি শিশুর মধ্যে তিনি অমিত সম্ভাবনা দেখতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন শিশুদের সঠিক গন্তব্যের সন্ধান দিতে পারলে তারা নিজেরাই পথ খুঁজে নিতে পারবে। খেলাঘরের লেনিন চৌধুরীর ভাষায়, “ মাথাভরা বাবরি চুল, প্রাণবন্ত উচ্ছল দেহভঙ্গি, আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় কথা বলে যাচ্ছেন একজন স্বাপ্নিক মানুষ। শব্দের পর শব্দেরা বেরিয়ে এসে মায়াজাল রচনা করছে, অন্যদিকে মোহাবিষ্ট শ্রোতাবৃন্দ—এই দৃশ্যকাব্য আর রচিত হবে না। একজন বুড়ো শিশু অনায়াসে মিশে যেতেন শিশু-কিশোরদের সঙ্গে। শিশুদের শোনাতেন স্বপ্ন নির্মাণের গল্প, শোনাতেন জ্ঞানবিজ্ঞানের হিরণ্ময় জগতের বর্ণনা। নির্ভয়ে আপন বিশ্বাস এবং আস্থার কথা বলতেন। তিনি বলতেন, ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। অতএব স্বপ্ন দেখো, অনেক বড় স্বপ্ন।

    শিশির ভট্টাচার্য্য (১৯৪০-২০২০) অধ্যাপক ড. শিশির ভট্টাচার্য বরিশালের উজিরপুর থানার ঢামুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিশির ভট্টাচার্য ১৯৮০ সালে কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে জ্যোতি-পদার্থবিজ্ঞান (এস্ট্রোফিজিক্স) বিষয়ে পিএইচডি করেন। তিনি ২০১৯ সালে বাংলা একাডেমীর ‘মেহের কবীর পুরস্কার’ অর্জন করেন। গণিত ছাড়াও তিনি মহাবিশ্ব ও মহাজাগতিক বিষয়ের ওপর বেশ কিছু বই রচনা করেছেন। তার বেশ কিছু গবেষণা প্রবন্ধ দেশ-বিদেশে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৬৫ সাল থেকে শুরু করে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৪০ বছর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্ক বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তারপর অবসর গ্রহণ করেন।
    আশির দশকে মহাকাশ গবেষণার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। লিখেছেন বিজ্ঞানবিষয়ক বহু বই। সজ্জন ব্যক্তি শিশির ভট্টাচার্য্য মৃত্যুকালে স্ত্রী ও দুই পুত্র রেখে যান।

    কালিদাস কর্মকার (১৯৪৬-২০২০) আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার। তার আঁকা ছবি দেশে বিদেশের বহু গ্যালারিতে রয়েছে। তিনি শিল্পকলা একাডেমী পদক ও একুশে পদক অর্জন করেন তাঁর ছবির জন্যে। তিনি Viscosity Printing এর জন্যে খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর অঙ্কিত চিত্রের বহু প্রদর্শনী হয় দেশে বিদেশে। ফ্যাশন দুরস্ত কালিদাস কর্মকার খুব প্রফুল্লচিত্তের আধুনিক মানুষ ছিলেন, তাঁর বহু বিদেশী গুণগ্রাহী রয়েছে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে।

    আলী যাকের (১৯৪৪-২০২০) প্রখ্যাত অভিনেতা, পরিচালক ও লেখক। তাছাড়া তিনি একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। তিনি এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশন্স লিমিটেড -এর মালিক ছিলেন। আলী যাকের ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। তিনি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ছিলেন। তিনি তার নাটকের দলে ১৫ টি নাটক পরিচালনা করেন এবং ৩১টি নাটকে অভিনয় করেন। তাঁর অনবদ্য অভিনয়ের জন্যে তিনি একুশে পদক অর্জন করেন। চার বছর ধরে তিনি ক্যান্সারর সাথে যুদ্ধ করছিলেন। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তিনি কভিড ১৯ পজিটিভ বলে শনাক্ত হন। তাঁর স্ত্রী বাংলাদেশের বিখ্যাত অভিনেত্রী সারা যাকের। আলী যাকের অভিনীত কালজয়ী নাটকের মধ্যে কোপিনিকের ক্যাপ্টেইন, গ্যেলিলিও, নূরুলদিনের সারাজীবন, ম্যাকবেথ, অচলায়তন, দেওয়ান গাজীর কিসসা বিখ্যাত।

    ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান ( ১৯৫৮– ২০২০) বিখ্যাত সরোদবাদক ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান কোভিড ১৯-এ আক্রমণের কারণে রাজধানীর এক হাসপাতালে মারা যান।
    তাঁর শরীরে করোণা ভাইরাস সংক্রামিত হলে বারোদিন আগে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে থাকাকালীন তিনি নিউমোনিয়ায় ভোগেন। এছাড়া তাঁর ডায়েবিটিস ছিল। শাহাদাত হোসেন খান কুমিল্লার ব্রাহ্মমনবাড়িয়ার এক ঐতিহ্যশীল সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান একজন প্রসিদ্ধ সেতারবাদক ছিলেন।
    তাঁর পিতামহ, ওস্তাদ আলাউদ্দীন খানের অনুজ ওস্তাদ আয়েদ আলী খান উপমহাদেশের

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.