সুপারিশকৃত লিন্ক: জানুয়ারি ২০১৯

মুক্তাঙ্গন-এ উপরোক্ত শিরোনামের নিয়মিত এই সিরিজটিতে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। কী ধরণের বিষয়বস্তুর উপর লিন্ক সুপারিশ করা যাবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, মানদণ্ড বা সময়কাল নেই। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই তাঁরা মন্তব্য আকারে উল্লেখ করতে পারেন এখানে।
ধন্যবাদ।

আজকের লিন্ক

এখানে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই সুপারিশ করুন এখানে। ধন্যবাদ।

১৬ comments

  1. মাসুদ করিম - ১ জানুয়ারি ২০১৯ (৪:৫২ অপরাহ্ণ)

    চিরনিদ্রায় ইন্টারনেট অন্যতম পথিকৃত লরেন্স রবার্টস

    ২৬ ডিসেম্বর হার্ট অ্যাটাকের কারণে চিরবিদায় নিয়েছেন ইন্টারনেটের অন্যতম পথিকৃত লরেন্স রবার্টস। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

    বিবিসির খবরে বলা হয়, ষাটের দশকের শেষ দিকে মার্কিন অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (আরপা)-এর একটি অংশের দায়িত্বে ছিলেন রবার্টস। আরপানেট নামের একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরির কাজে লাগানো হয় তাকে।

    এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা তৈরি এবং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার পরীক্ষার জন্য প্রকৌশলীও নিয়োগ দিয়েছেন রবার্টস।

    এখন যে ইন্টারনেট বিশ্বের মানুষ ব্যবহার করছে, তার মূলে রয়েছে রবার্টসের ওই আরপানেট। টেক বিশ্বে ল্যারি রবার্টস নামেই তিনি বেশি পরিচিত।

    ইন্টারনেটের চার জনকের মধ্যে একজন ধরা হয় রবার্টসকে। বাকি তিনজন হলেন বব কান, ভিন্ট সার্ফ এবং লেন ক্লেইনরক।

    দুই রসায়নবিদের ছেলে ড. রবার্টস। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ইলেকট্রনিকস নিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহী হন তিনি।

    নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক সাক্ষাৎকারে রবার্টস বলেন, “আমি নতুন কিছু চেয়েছি, রসায়নের মতো পুরানো কিছু নয়।”

    ইন্টারনেট প্রযুক্তির দুইটি ব্যবস্থার জন্য কৃতিত্ব রয়েছে রবার্টসের, মূল নেটওয়ার্কের কাঠামো নকশা এবং নোডগুলোর মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান।

    আরপানেট-এ প্রথম চারটি কম্পিউটার যুক্ত হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটি এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এতে যুক্ত হওয়ায় এই নেটওয়ার্ক দ্রুত বাড়তে থাকে।

    বাস্তবিক প্রয়োগের দিকেও নজর ছিল রবার্টসের। যোগাযোগ এবং সহায়তা উন্নত করতে প্রথম দিকের আরপানেট ব্যবহারকারীদের উৎসাহ দিয়েছেন তিনি।

    ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল আরপানেট। এরপর বিস্তৃত ইন্টারনেট ব্যবস্থার একটি অংশ হয় এটি।

    আরপা ছাড়ার পর ক্যারিয়ার ফান্ডিং এবং বেশ কয়েকটি নেটওয়ার্কিং স্টার্ট-আপ চালিয়েছেন রবার্টস।

  2. মাসুদ করিম - ২ জানুয়ারি ২০১৯ (৮:১৫ অপরাহ্ণ)

    Finding Mrs Sen: The first Indian woman to fly in a plane was a poet called Mrinalini Devi

    The woman who made history in December 1910 doesn’t have to be remembered by her husband’s initials.

    Mrs NC Sen, the first woman to fly in an airplane in India, does not need to be known by her husband’s initials anymore. Her full name was Mrinalini Devi Sen, and she was a poet whose adventures began long before her ride in a Henry Farman biplane became an immutable part of aviation history.

    On December 19, Scroll.in had published an article, headlined Who was Mrs Sen? The search for the first woman to fly in India, about an aviation enthusiast’s attempts to ascertain the identity of Mrs NC Sen. The aviation enthusiast, Debasish Chakraverty, had been scouring the archives of the elite Tollygunge Club in Kolkata, and found that in December 1910, Mrs Sen had flown as a passenger in a short flight piloted at the club by Belgian aviator Baron Pierre de Caters.

    Newspapers and magazines of the time had celebrated her as the first Indian woman to take to the skies, but she was identified merely as “Mrs NC Sen”. Some reports said she was the sister of the Maharaja of Cooch Behar, a princely state in Bengal. Others describer her as the sister-in-law of the Maharani of Cooch Behar.

    Chakraverty corroborated in his research that Mrs Sen was indeed the sister-in-law of Maharani Suniti Devi of Cooch Behar. Suniti Devi was the daughter of prominent Bengali philosopher Keshub Chandra Sen, and Mrs NC Sen was, therefore, one of Keshub Chandra Sen’s four daughters-in-law.

    Through a process of elimination, Chakraverty inferred that Mrs Sen could have either been Mrinalini Devi, wife of Nirmal Chandra Sen, or it could have been Nirmala “Nellie” Sen, wife of Saral Chandra Sen. Scroll.in was unable to trace either of their descendants before publishing the December 19 report. However, after the article was published, a descendant of the Sen family emailed Scroll.in and confirmed that Mrs NC Sen was, in fact, Mrinalini Devi.

    That descendant was Sanjiv Lall, the grandson of well-known thumri singer Naina Devi, great-grandson of Nirmala “Nellie” Sen, and the great-grandnephew of Mrinalini Sen. “It most certainly was Mrs Mrinalini Sen, who was the first woman from India to fly,” said Lall, a conservator of heritage homes in Goa.

    Lall then put Scroll.in in touch with Mrinalini Devi’s grandson, Devdan Sen, who was able to paint a more vivid picture of his paternal grandmother’s life, through a small autobiography she wrote about her life.

    The woman who eloped

    Mrinalini Devi was born in or around 1878 to the Luddhi family in Bhagalpur. She was barely around 12 when she was married to the Raja of Paikpara, on old princely state in Bengal. Her husband was a few years older than her. “He had a propensity for drink and was by all accounts prone to flippant whims,” said Devdan Sen, a travel writer and businessman who lives in England. Once, the Raja arranged a wedding of two monkeys, which prompted Mrinalini Devi to quip that “she didn’t know who the actual monkey was – the poor creature or her husband”.

    This was just one indication of Mrinalini Devi’s spirited personality. Another example is the story of her elopement – a legend in the Sen family history.

    The Raja of Paikpara died at the age of 27, leaving Mrinalini Devi a young widow. At the time, says Devdan Sen, Calcutta had a thriving middle class society, with many social gatherings. At one of them, Mrinalini Devi met Nirmal Chandra Sen, a promising civil servant and one of Keshub Chandra Sen’s 10 children. The Sens were a reformist family affiliated to the Brahmo Samaj, which had worked hard to abolish the funeral custom of sati.

    “After her husband’s death, he [Nirmal Chandra Sen] helped my grandmother escape the confines of young widowhood by climbing a wall and riding off in his carriage,” said Devdan Sen. Since Mrinalini Devi did not have any children from her first marriage, she placed her brother on the throne of Paikpara and went on to marry Nirmal Chandra Sen.

    The couple was a part of Calcutta’s elite society and it was during this period that, as Mrs NC Sen, Mrinalini Devi got to fly in the historic Tollygunge flight of December 19, 1910. In her autobiography, she dedicated a small chapter to the experience.

    “In my opinion, she was deeply spiritual and would not have encouraged any commemoration of the remarkable flight,” said Devdan Sen.

    Feisty, outspoken, beautiful

    Mrinalini and NC Sen had four children. Their three daughters – Srilata, Arati and Anjali – were nicknamed Violet, Pansy and Rosie, respectively. Their son, also called NC Sen, was nicknamed George because he was born on the day of King George V’s historic visit to Delhi in 1911, which the senior NC Sen was attending.

    Soon after becoming the first Indian woman to fly, Mrinalini Devi moved to England, where her husband worked as a senior civil servant looking after the interests of Indians living and visiting the United Kingdom. According to Devdan Sen, Mrinalini Devi travelled quite a bit around Europe, visited Egypt, accompanied Rabindranath Tagore to Paris, and knew British author HG Wells. “She maintained some of her Hindu customs despite being the head of Brahmo household, and had aarti performed at the home every evening,” said Devdan Sen.

    Before the start of World War II, Mrinalini and NC Sen returned to India and lived in Calcutta. Mrinalini Devi was fond of writing Bengali poetry, and in Kolkata her poems were published occasionally in Desh magazine.

    Devdan Sen describes his grandmother as “notoriously outspoken, known to speak her mind to all, whether a child or the governor of the state”.

    Rena Ripjit Singh, one of Mrinalini Devi’s nieces, remembers her as a “feisty, gutsy and beautiful woman”. “I knew her in her sunset years, but she must have been beautiful,” said Singh. “You could see the vestiges of beauty in her face.”

  3. মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০১৯ (১০:১৩ পূর্বাহ্ণ)

    সৈয়দ আশরাফ নেই

    ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে হার মানলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

    ব্যাংককের হাসপাতালে কয়েক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয়েছে তার।

    দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও।

    সৈয়দ আশরাফের ব্যক্তিগত সহকারী এ কে এম সাজ্জাদ আলম শাহিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে মরদেহ দেশে আসবে।

    সৈয়দ আশরাফের জানাজা ও দাফনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত রাতে হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

    আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ জনপ্রশাসনমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

    ৬৮ বছর বয়সী সৈয়দ আশরাফ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

    হাসপাতালে থেকেই তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ নৌকার প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন।

    বৃহস্পতিবার সকালে নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি সৈয়দ আশরাফ। পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জানিয়েছিলেন, শপথের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছেন নবনির্বাচিত এই সংসদ সদস্য।

    তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। এই খবর পেয়ে শিরীন শারমিন চৌধুরীও সঙ্গে সঙ্গে শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন।

    নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা স্বয়ং আশরাফের জন্য ভোট চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে।

    তিনি জেলার নেতাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেছিলেন, “যেহেতু এখানে সৈয়দ আশরাফ সাহেব অসুস্থ, সবাই মিলে তার জন্য কাজ করে যাবেন, যেন তিনি নির্বাচনে জয়ী হন। সুস্থ হয়ে তিনি যেন আমাদের মাঝে ফিরে আসেন এই দোয়া করছি।”

    বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলের হাল ধরেন। ওই বিশ্বস্ততার পুরস্কার হিসেবে পরে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন তিনি।

    দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৬ সালের কাউন্সিলে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীতে নিয়ে যান শেখ হাসিনা।

    ২০০৯ সাল থেকে নানা ঘটনা এবং ২০১৪ সালে বিএনপির বর্জনের মধ্যে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পাশাপাশি আশরাফের ভূমিকার কথা গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করেন দলটির কর্মীরা।

    ২০১৬ সালের কাউন্সিলের আগে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সৈয়দ আশরাফকে সরিয়ে দেওয়ার পর নানা গুঞ্জন ছড়ালেও কাউন্সিলে শেখ হাসিনার সঙ্গে আশরাফের ছবি তা নাকচ করে দিয়েছিল।

    ২০১৭ সালে স্ত্রী শীলা আহমেদের মৃত্যুর পর থেকে নিজেও অসুস্থ ছিলেন আশরাফ। একমাত্র মেয়ের সঙ্গে লন্ডনেই বেশি সময় কাটাতেন। মন্ত্রিসভার কাজেও অনিয়মিত ছিলেন তিনি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংসদ থেকেও ৯০ দিনের জন্য তিনি ছুটি নিয়েছিলেন।

    ব্যাংককের হাসপাতালে থেকেই করা ওই আবেদনে আশরাফ বলেছিলেন, তিনি ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন ইউনিটে’ ভর্তি রয়েছেন। তার চিকিৎসায় আরও অনেকদিন সময় লাগবে।

    তার চার মাসের মধ্যে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন এই রাজনীতিক।

    সাবেক রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুলের ছেলে আশরাফের রাজনীতির হাতেখড়ি ছাত্রলীগের মাধ্যমে, ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি, ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও।

    ১৯৭৫ সালের অগাস্ট ট্র্যাজেডির পর নভেম্বরে কারাগারে সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর বিরূপ পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন আশরাফ। লন্ডনে নির্বাসিত জীবনে প্রবাসে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন সৈয়দ নজরুলের বড় ছেলে।

    দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আশরাফ। এরপর ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পুনর্নির্বাচিত হন।

    এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার সময় আশরাফের আসনে কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত তার উপরই আস্থা রাখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

    এবার নিয়ে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

    আশরাফ তার কীর্তিতে বেঁচে থাকবে চিরদিন: হাসিনা

    দল ও সরকারে বিশ্বস্ত সঙ্গী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    তিনি এক শোকবার্তায় বলেছেন, মানুষের হৃদয়ে এই জননেতা চিরদিন তার কীর্তির মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন।

    ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ব্যাংককের হাসপাতালে কয়েক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

    আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আশরাফ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জনপ্রশাসনমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

    শোক বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, “সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে দেশ ও জাতি আজ শোকে মুহ্যমান। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের অত্যন্ত সুযোগ্য পুত্র সৈয়দ আশরাফ ছিলেন পুরোদস্তুর সৎ ব্যক্তিত্ব, দক্ষ সংগঠক ও গণমানুষের নেতা।”

    বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলের হাল ধরেন। ওই বিশ্বস্ততার পুরস্কার হিসেবে পরে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন তিনি।

    দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৬ সালের কাউন্সিলে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীতে নিয়ে যান শেখ হাসিনা।

    সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আশরাফের বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এই শোক বার্তায় বলা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী এক/এগারোর দুঃসময়ে তার বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি আরও বলেন, মানুষের হৃদয়ে এই জননেতা চিরদিন তার কীর্তির মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন।”

    শেখ হাসিনা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

    • মাসুদ করিম - ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ (৫:৩০ অপরাহ্ণ)

      লন্ডনে আশরাফের কষ্টের দিনের কথাও জানালেন ‘বোন’ হাসিনা

      একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সদ্যপ্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে বলতে গিয়ে ‘দুর্দিনের সহযোদ্ধার’ নানা স্মৃতি তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

      পঁচাত্তরে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে তার মেয়ে হাসিনাকে। অনেকটা একই ঘটনা ঘটে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফের জীবনেও।

      ওই বছরেরই ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর সৈয়দ আশরাফ চলে যান লন্ডনে। প্রায় দুই দশক পর দেশে ফিরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে টানা চার বার কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।

      গত ৩ জানুয়ারি মারা যাওয়া সৈয়দ আশরাফ সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাল ধরেছিলেন দলের। পরে দুই দফায় দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

      বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শেখ হাসিনার অবস্থান পোক্ত হওয়ার আগে নির্বাসিত জীবনের সেই সময়েও তার সঙ্গী ছিলেন সৈয়দ আশরাফ।

      সেই স্মৃতি তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “১৯৮০ সালে আমি লন্ডনে গিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ গড়ে তোলার কাজ করি। তখন আশরাফও আমার সঙ্গে ছিল। আমাকে বড় বোনের মত জানত। পঁচাত্তরে আমরা স্বজন হারিয়েছি প্রত্যেকেরই খুব কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করতে হয়েছে। সততার সাথে চললে পরে কষ্ট করতে হয়।”

      সৈয়দ আশরাফের কষ্টের সেই দিনগুলোর চিত্র ফুটে ওঠে শেখ হাসিনার বর্ণনায়।

      তিনি বলেন, “অনেক স্মৃতি আমার মনে পড়ে। লন্ডনে এমন একটা অবস্থার মধ্যে থাকত কখনো এমনও অবস্থা গেছে হয়ত খাবারের পয়সাও ছিল না। লন্ডনে কাজ করত আর সেই সাথে রাজনীতিও করত।”
      আশরাফের অর্থকষ্টের কথা বোঝাতে একটি ঘটনা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা: “আমি যখন লন্ডনে রেহানার বাসায়, একদিন ফোন দিলে বলে আপা অনেক দিন বাড়ির রান্না খাই না। আমি বললাম চলে আসো। এতই সোজা সরল ছিল যে বলল, আসব তো ট্রেনের ভাড়া তো নেই।

      “আমি বললাম তুমি যে কোনোভাবে আসো আমি ব্যবস্থা করব। বড় বোনের কাছে যেভাবে আবদার করে সেইভাবেই আবদার করত আমার কাছে। আমার এতো বেশি কাছে ছিল যে, আপন ভাইয়ের মতো দেখতাম।”

      পঁচাত্তরের ঘটনার পর শেখ হাসিনা যাদের কাছে পেয়েছিলেন, তাদেরই একজন সৈয়দ আশরাফ।

      তিনি বলেন, “কামালের সাথে তার খুবই বন্ধুত্ব ছিল। তার সাথে রাজনীতি করত বলে আমার কাছে তার আলাদা কদর ছিল। যে কোনো সমস্যা হলেই আমার কাছে আসত। কথা বলত।”

      বিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকেও প্রশংসিত সৈয়দ আশরাফের মূল্যায়নে শেখ হাসিনা বলেন, “আশরাফ অত্যন্ত সৎ, মেধাবী ছিল। রাজনৈতিক জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মেধাবী ছিল। সব সময়ই পড়াশুনোর মধ্যে থাকত। বিশ্বের কোথায় কী হচ্ছে, তার সব খবর সে রাখত। আমিই তাকে লন্ডন থেকে এখানে নিয়ে এসে নির্বাচন করাই। প্রতিটি ক্ষেত্রে খুবই সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে।”

      ওয়ান-ইলেভেনের পর আশরাফের ভূমিকা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “জরুরি অবস্থার সময়ে দলের দুঃসময়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিল। সেই সময় সে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে। আজকে যে গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছি এজন্য তার অবদান রয়েছে।”

      ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত সৈয়দ আশরাফের চিকিৎসায় যথাসাধ্য চেষ্টা করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

      “মন্ত্রী হিসেবে চিকিৎসার খরচ যা দরকার তা দিতে পেরেছি। তার স্ত্রী যখন অসুস্থ ছিল তখনও খোঁজখবর রেখেছি। সব থেকে দুঃখজনক যে, স্ত্রী শিলা মারা গেল। তার কিছু দিন পরে আশরাফও মারা গেল। একটি মেয়ে লন্ডনে আছে। সে সেখানে চাকুরি করে, তার প্রতি সমবেদনা জানাই। তার ভাইবোনদের প্রতিও সমবেদনা জানাই।”

      আশরাফের জন্য শোকার্ত শেখ হাসিনা বলেন, “আমি ভাবতে পারিনি এত তাড়াতাড়ি আশরাফ আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।
      “আশরাফের মত একজন মেধাবী মানুষকে হারানো দলের জন্য ও দেশের জন্য সত্যি ক্ষতিকর। ক্যান্সার তাকে আমাদের থেকে কেড়ে নিয়ে গেল।”

      সৈয়দ আশরাফের ওপর আলোচনায় আরও অংশ নেন আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ নাসিম, আমির হোসেন আমু, রওশন এরশাদ, তোফায়েল আহমেদ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

      সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী, চলমান সংসদের কোনো সদস্যের মৃত্যুতে তার জীবন ও কাজের উপর আলোচনা করা হয়। পরে অধিবেশন মুলতবি হয়।

      তবে রাষ্ট্রপতির ভাষণের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য অধিবেশন কিছু সময়ের জন্য বিরতি রাখা হয়।

      পরে মৃতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

  4. মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০১৯ (১১:১০ পূর্বাহ্ণ)

    প্রয়াত পিনাকী ঠাকুর, নির্জনের কবি যাত্রা করলেন চিরন্তন মৌনের উদ্দেশে

    নিয়মিতভাবে তাঁর কবিতা লেখা শুরু হয় গত শতাব্দীর সাতের দশকের শেষের দিক থেকে। প্রথম কবিতার প্রকাশও ওই দশকেই। ১৯৭৪ সালে। ‘উশীনর’ পত্রিকায়।

    রতিটি মৃত্যু চলমান সময়কে আরেকটু বেশি মৌন করে তোলে। আমাদের চারপাশের যা কিছু, একটি মৃত্যু মানে, তাকে দেখার আরও একটি চোখ কমে গেল। অর্থাৎ, তা হয়ে পড়ল নির্জন। এই নির্জনতার ওপরেই কোন এক ঢাল বেয়ে গড়িয়ে এসে চেপে বসে এক বন্ধ্যা অন্ধকারের মতো সংবাদ। এক কবি চলে গেলেন…চলে গেলেন পিনাকী ঠাকুর। এ এমন এক মৃত্যু, যা কবিতাকে আরও বেশি করে বিষয়ের সংস্পর্শে নিয়ে আসে। যে বিষয়টির নাম- অস্তিত্বের সংকট। এছাড়া, কবিতার যেমন আর কোনও দ্বিতীয় বিষয় নেই…

    নিয়মিতভাবে তাঁর কবিতা লেখা শুরু হয় গত শতাব্দীর সাতের দশকের শেষের দিক থেকে। প্রথম কবিতার প্রকাশও ওই দশকেই। ১৯৭৪ সালে। ‘উশীনর’ পত্রিকায়। ১৯৭৯ সালে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর কবিতা। কিন্তু, কবি হিসেবে খ্যাতিলাভের শুরুটা নয়ের দশকে এসে। ওই দশকের শুরুর দিকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র পিনাকী কর্পোরেটের হাতছানি এড়িয়ে পুরোপুরি কবিতা লেখাতেই মনোনিবেশ করবেন বলে স্থির করেন৷ তাঁর কথায়, ‘তখন থেকেই হয়ে উঠেছিলাম পরিপূর্ণ বেকার’।

    পিনাকীর কবিতায় বরাবরই থেকে গিয়েছে মফসসলীয় বৃত্তান্তের এক অব্যর্থ নান্দনিক উচ্ছ্বাস। মফসসলের বাস্তবধৃত এবং বহু বিষয় সমন্বিত জটিল নকশা প্রস্তুত করতে করতেই তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন লোকাল ট্রেনের উইন্ডোসিট বা স্থানীয় মাঠের এক কোণে একা পড়ে থাকা ঘাসের শিকড়ে। মফসসলের অন্তহীন দোকান, চামড়ার কারখানা, ঘোরানো-প্যাঁচানো রাস্তা, কলহমান কুকুরের দল কোনওকিছুই নজর এড়ায়নি তাঁর।

    কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে ‘অঙ্কে যত শূন্য পেলে’ কিংবা ‘একদিন অশরীরী’ বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘ কৃত্তিবাস’-এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকা এই কবি ২০১২ সালে পেয়েছিলেন তাঁর ‘চুম্বনের ক্ষত’ কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন বাংলা আকাদেমি এবং কৃত্তিবাস পুরস্কারও।

    বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর আজ সকালে পিজি হাসপাতালে মাত্র ৫৯ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন এই কবি।

    নির্জনতা পছন্দ করতেন এই কবি। আজ চলে গেলেন চিরন্তন মৌনের জগতে। আঁধার রাতের কোনও কোনও একলা পাগল যে এই পৃথিবীর কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক স্তম্ভগুলির পাশে বসে পিনাকীর কবিতা পড়ে যাবেন, তেমন একটি আশাই আমাদের আগামীকালটির দিকে তাকানোর স্বপ্নটি জাগিয়ে রাখে…

  5. মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০১৯ (১১:২১ পূর্বাহ্ণ)

    প্রয়াত সাহিত্যিক দিব্যেন্দু পালিত

    বছরের শুরুই ফের দুঃসংবাদ। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হল বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব দিব্যেন্দু পালিতের। মৃত্যুর সময়ে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। বুধবার তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

    ১৯৩৯ সালের ৫ মার্চ দিব্যেন্দু পালিতের জন্ম হয় বিহারের ভাগলপুরে। পরবর্তী সময়ে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে মাস্টার্স করেন।

    ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্প ‘ছন্দপতন’। তাঁর লেখা প্রথম উপন্যাস ‘সিন্ধু বারোয়াঁ’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৯ সালে।

    ১৯৮৪ সালে দিব্যেন্দু পালিতকে আনন্দ পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। ১৯৯০ সালে তাঁর ‘ঢেউ’ উপন্যাসটির জন্য পেয়েছেন বঙ্কিম পুরষ্কার। ‘অনুভব’ উপন্যাসটির জন্যে সাহিত্য অ্যাকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৯৮ সালে।

    • মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০১৯ (১১:২৭ পূর্বাহ্ণ)

      দিব্যেন্দু পালিত – সেই মুখ -মুখগুলি
      অমর মিত্র

      দিব্যেন্দুদার সঙ্গে আলাপ আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয়র ঘরে। সম্পাদক রমাপদ চৌধুরী। দু’জনেই খুবই গম্ভীর মানুষ। আমাকে বললেন, পড়েছি লেখা, ভালো। এই পর্যন্ত। রমাপদ চৌধুরীর ঘরে যে আড্ডা হতো তা ছিল শুধুই সাহিত্যের। আমি চুপ করে অগ্রজ বড় লেখকদের কথা শুনতাম। অনুধাবন করতে চাইতাম তাঁদের কথা। কথা শুনতে শুনতে শেখা। দিব্যেন্দুদা আলবেয়ঁর কামু ও ফ্রানজ কাফকার কথা বলতেন। তিনি অনুজপ্রতিম তরুণ লেখকদের বলতেন বিশ্ব সাহিত্য বদলে দিয়েছেন এই দুই লেখক, এঁদের পড়।

      পড়েছি তখন, খুব বেশি নয়, সামান্য। কিন্তু সামান্য পড়ে কথা বলার চেয়ে শোনাই ভালো। ১৯৮২-৮৩ হবে। তাঁর ‘ঘরবাড়ি’ উপন্যাসটি বেরিয়েছে তখন। একটি আত্মহত্যার কাহিনি ছিল সেটি। বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল বধুটি। পড়ে স্তম্ভিত হয়েছিলাম। এরপর পড়ি ‘ঢেউ’। তারপর ‘সহযোদ্ধা’।

      ‘সহযোদ্ধা’ আগেই লেখা, পরে পড়া। ভীষণ এক হত্যাকাণ্ড দেখে ফেলে মধ্যবিত্ত মানুষটি সত্য ভাষণে অগ্রসর হলো। এই উপন্যাস বহুকাল মনে থাকবে আমাদের। আমরা সব এড়িয়ে যেতে ভালোবাসি। লেখকের দায় তিনি শিখিয়েছিলেন ‘সহযোদ্ধা’ আর ‘অন্তর্ধান’ লিখে। তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ এক নাগরিক লেখক। নাগরিক মননের। মিতভাষী মানুষ, লেখায় একটিও অতিরিক্ত শব্দ নেই। লিখতেন অনুভব থেকে। লিখতেন নিমগ্ন হয়ে। নিভৃতচারী। রুচিমান। উচ্চকিত ছিলেন না। আমাদের এই শহর আর এই শহরের মানুষকে তিনি খুব ভালো চিনতেন। যা লিখেছেন এই কলকাতাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু সে লেখা কখনওই নিরুপায় মানুষকে বাদ দিয়ে নয়। একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভাগলপুর নিয়ে লেখেননি কেন কোনও উপন্যাস ? হেসেছিলেন। জবাব দেননি।

      ভাগলপুরে জন্ম। কলকাতায় এসেছিলেন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে। লেখক হবেন। ১৬ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে আনন্দবাজারের রবিবাসরীয়তে ডাকে পাঠিয়েছিলেন একটি গল্প। ছাপা হয়েছিল। তখনই ঠিক হয়ে গিয়েছিল তাঁর ভবিষ্যৎ।

      আমি বছর ৩৫ আগে লেখা তাঁর একটি গল্পের কথা বলি। ‘মুখগুলি’। কোনও কোনও গল্প পাঠকের হৃদয়কে এমন ভাবে ছুঁয়ে যায় যে সে ভোলে না, ভোলে না কিছুতেই। আর দিব্যেন্দু পালিত যেন সমকালের থেকে সব সময়ই এগিয়ে ছিলেন কয়েক পা। ‘মুখগুলি’ গল্প যখন বেরোয়, তখন ওল্ড এজ হোমের ধারণা তেমন স্বচ্ছ ছিল না আমাদের কাছে। সবে তা আসছে এই শহরে, শহরতলীতে। মা গেলেন ওল্ড এজ হোমে। বাবার মৃত্যুর পর মা তাঁর ছেলে-মেয়েদের ভিতরে ভাগ হয়ে গিয়েছিলেন একটু একটু করে। ভাগ হয়ে কখনও বালিগঞ্জ, কখনও ভবানীপুর, কখনও বাগবাজার, কখনও রিষড়ায় ঘুরে ঘুরে আশ্রয় পান। কিন্তু তারপরও মা হয়ে যাচ্ছিলেন ভার। মায়ের প্রয়োজন যে ফুরিয়ে যাচ্ছে তা টের পেয়েছিল তাঁর পুত্র কন্যারা। তাই গোল টেবিলে বিচার হয়ে গিয়েছিল মা ‘সুধা’ ওল্ড এজ হোমে যাবেন। সুধা কোনও অনুযোগ করেননি। গভীর রাতে দিবাকরের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল, সে মায়ের ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছিল, স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি কুঁকড়ে শুয়ে আছে মা। মিলিত সিদ্ধান্তে মা সকাল হলে চলে যাবে। মা গিয়েছিল। মাকে সেখানে রেখে দিয়ে আসতে পেরে সবাই নিশ্চিন্ত। দিবাকর মাকে কিছু খাম, পোস্ট কার্ড আর ড্রাইভারের কাছ থেকে চেয়ে তার সস্তার ডট পেনটি দিয়ে এসেছিল। সুধা চিঠি লিখবে। সুধার চিঠি আসে। সেই চিঠির কথা দিয়েই গল্প আরম্ভ। পরম কল্যাণীয় স্নেহের বাবা দিবাকর……, মা সকলের কুশল জানতে চেয়েছে, নাতি নাতনি, বৌমা। মা খবর দিয়েছে হোমের কৌশল্যাদি নামের একজন মারা গিয়েছে। তাঁর ছেলে থাকে বিলেতে, মেয়ে বাচ্চা হওয়ার জন্য হাসপাতালে। কেউ আসেনি। হোমের ওরাই তাকে কালো গাড়ি করে শ্মশানে নিয়ে গিয়েছে। মা খবর দিয়েছে, রানি-পরমেশ, মেয়ে-জামাই, তাঁকে দেখতে এসেছিল। কমলালেবু আর আপেল এনেছিল। ছোট ছেলে ভাস্কর এসেছিল মাকে দেখতে। মায়ের ওল্ড এজ হোমে আর এক কন্যার চিঠি এসেছে। মা সেখানে বসেই বড় ছেলে দিবাকরকে অনুনয় করেন, ছোট ছেলে ভাস্করকে একটা ভাল চাকরি জুটিয়ে দেওয়ার জন্য। মায়ের চিঠি পড়েই ধরা যায় মা ভাল আছেন। হোমে সকলেই গিয়ে যোগাযোগ রাখছে মায়ের সঙ্গে আগের চেয়ে বেশিই। দিবাকর গিয়েছিল হোমে মাকে দেখতে। সারি সারি বেতের চেয়ারে বসে আছেন যাঁরা, বেশিরভাগই বৃদ্ধা। বৃদ্ধও আছেন দু’একজন। তাদের একজনকে মা বলে ভুল করেছিল দিবাকর। পরে ভুল ভাঙল। মায়ের ভিজিটর হয়ে সে বসেছিল ভিজিটরস রুমে। মায়ের সঙ্গে তার যে তেমন কোনও কথা ছিল না তা টের পেয়েছিল দিবাকর। মা বলেছিল, ‘খুব ভাল আছি আমি, আমার জন্য ভাবিস নে।‘

      দিব্যেন্দু পালিতের এই গল্প ক্রমশ ডুবিয়ে নিতে থাকে আমাকে তাঁর মগ্নতায়। মায়ের সঙ্গে বেশি কথা বলতে পারে না দিবাকর। মায়ের অনেক জিজ্ঞাসা, হুঁ, হাঁ করে উত্তর দিয়েই সে হোম ছেড়ে আসে। ক’দিন আগে কারা যেন মাকে কমলালেবু আপেল দিয়ে এসেছে। দিবাকর তাই কিছু নিয়ে যায়নি। মা একা আর কত খাবে। ফলগুলো পচবে। মায়ের চিঠি আবার আসে। এই চিঠিতেও হোমের আর একজনের মৃত্যু সংবাদ, গিরীনবাবু মারা গিয়েছেন। মায়ের চিঠিতে আসলে সত্য যেমন থাকে, থাকেও না। তাঁর কাছে কেউ যায় না তেমন।

      দিব্যেন্দু পালিত আমাদের মুখের সামনে এক আয়না ধরেছেন। এই গল্পের নাম সারা দুপুর মনে করতে পারছিলাম না কেপিসি হাসপাতালে। অথচ গল্পটি বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল। আইসিইউ থেকে রাতের ঘুম ঘুমোবেন যে হিমশীতল গৃহে, সেখানে যখন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, মনে পড়ছিল নিঃসঙ্গ সুধা মায়ের কথা। মুখগুলি আমি ভুলতে পারিনি এখনও। দুপুরের খাবার পর মায়ের বুকে পেন শুরু হয়েছিল…।

      এই গল্পে যেন পুত্র দিবাকরও এক নিরূপায় মানুষ। মা নিরূপায় হয়েও সব কিছু মেনে নিয়েছেন। ছেলেদের কথা ভেবেছেন, পুত্র কন্যাদের নিষ্ঠুরতাকে আড়াল করেছেন। আড়াল করে নিজের কল্পিত সুখ আহরণ করেছেন।

      গল্পটি যতবার মনে করি আর্দ্র হয়ে পড়ি। গল্পের মুখগুলি ভেসে ওঠে চোখের সামনে। ভেসে ওঠে সারি সারি বেতের চেয়ার, অস্পষ্ট মুখগুলি তাকিয়ে আছে গেটের দিকে। গেট পেরিয়ে রাস্তা। ধুলো উড়লে মেঘ ঘনাত, সন্ধে হত তাড়াতাড়ি। ওখান থেকে মায়ের মুখটি মুছে গেছে আজ। এই গল্প আমার স্মৃতি থেকে মুছবে না এক বিন্দুও।

      দিব্যেন্দুদা আপনার ভালোবাসা পেয়েছি। স্নেহ পেয়েছি। আমি কেন, আমাদের সময়ের অনেকে। আমাদের পরবর্তীকালের লেখকরাও। লেখা আর বন্ধুতা নিয়ে আপনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন। লেখকের মৃত্যু হয় না। আমি এখন মুখগুলির পাতা খুলছি। খুলতে খুলতে আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে।

  6. মাসুদ করিম - ৫ জানুয়ারি ২০১৯ (৪:১৮ অপরাহ্ণ)

    Don’t look now: the artists who turn their backs on the world

    Making art is not enough. Today, artists are expected to promote themselves. They have to rub shoulders with supermodels at the big art fairs and gladhand movie stars at glitzy summer parties. But in his new collection of essays, Tell Them I Said No, the art critic Martin Herbert focuses on the ones who refuse to play the game – or who quit it altogether.

    The book’s title comes from the emphatic response given to Herbert when he requested an interview with Trisha Donnelly. Her 2014 show at London’s Serpentine gallery was the kind of career milestone that usually sees an artist perform for the press – confessing, perhaps, a fear of cheese, or a desire to pickle a contemporary in formaldehyde. But Donnelly declined. There was no formal press release, no contact with the media.

    She is not alone in having rejected such conventions. In Tell Them I Said No, Herbert examines 10 artists who have withdrawn, some in extreme ways, from the self-promotion and courting of celebrity that is bundled up with our understanding of artworld success. Here we find Lutz Bacher, who assumed a near invisible, gender-ambiguous identity; Cady Noland, who ceased making art despite acclaim, and now monitors and bedevils anyone seeking to sell or show her work; and Stanley Brouwn, who shunned photographic documentation and recordings, and once had all the copies of a book featuring images of his performances destroyed.

    He chronicles, too, the shortlived career of Laurie Parsons, so disoriented when a collector purchased her entire exhibition that she soon quit the art world to concentrate instead on work in mental health and homelessness.

    “A big part of the artist’s role now, in a massively professionalised art world, is showing up to self-market, being present,” writes Herbert. That “present” is a nod to Marina Abramović, who, as one of the art world’s most visible personalities, is very much not profiled in Herbert’s book. For her 2010 show at New York’s Museum of Modern Art, Abramović undertook a lengthy performance in which visitors queued up to sit in a chair opposite her. (A Tumblr, Marina Abramović Made Me Cry, documents the result.)

    Abramović’s self-identification as an artist “present” at MoMA was meant to indicate her mindful mental state in locking gaze with the public. But there was nevertheless a certain suggestion of holding court: visitors queued up to be transformed by art, like the scrofulous awaiting the king’s touch.

    In more commercial arenas, artists now make themselves present, like the pop stars on promo tours who used to turn up at Tower Records to meet and greet the fans. Personality is a selling point, celebrity an economically viable plus. In a marketplace that no longer even requires artists to be physical involved in the production of their own work, the momentary presence of, say, Jeff Koons alongside a piece carrying his name serves as a kind of testament, an endorsement by visual association.

    As critics fly off this spring to the opening of the latest Documenta, the influential contemporary art exhibition held in the German city of Kassel every five years, they might like to remember Charlotte Posenenske, who distributed flyers protesting the event in 1968. To her, such events “blind us to social misery and the deplorable state of affairs in society”. Her words were vitriolic: “You culture vultures … here you are, all gathered together to chat and lie and talk crap so as to gain the upper hand.” (Ironically, as Herbert points out, Posenenske was posthumously venerated in 2007’s Documenta, without any mention of her protest some 40 years earlier.)

    In 1983, David Hammons sold snowballs of various sizes off a pavement pitch in downtown Manhatten, in an event titled the The Bliz-aard Ball Sale. A few years later, in a rare interview, he detailed his objection to the gallery-visiting public. He thought that audience was “overly educated, it’s conservative, it’s out to criticise and not to understand, and it never has any fun. Why should I spend my time playing to that audience?”

    Hammons instead engages with the art market on his terms: for his 2002 work Concerto in Black and Blue, he blacked out a New York gallery and invited visitors to negotiate their way round the space with blue torches. At MoMA in 2010, he placed his painting behind a curtain and requested that visitors make an appointment to view it at a time of his choosing. My own run-ins with Hammons include an attempt to track down an image of Concerto in Black and Blue for a book. The trail led to a scatty if polite woman in a New York apartment. I never got the photograph. Such a non-compliant strategy has served Hammons well. As Herbert points out, by 2014 he had quietly become the eighth most expensive living American artist.

    In this oversharing age, few things are as liable to pique curiosity as deliberate and determined invisibility. Even Herbert is not immune. Researching the elusive Brouwn, he finds pictures in a book thought to have been destroyed on the artist’s instructions – and illicitly captures them with his phone.

  7. মাসুদ করিম - ৫ জানুয়ারি ২০১৯ (৫:০৭ অপরাহ্ণ)

    মৃণাল সেনের একটি দুষ্প্রাপ্য সাক্ষাৎকার

    মৃণালবাবু, আপনি খুব পড়েন টড়েন শুনেছি। বসার ঘরে তো চারদিকে খালি বই দেখলুম। ফিল্ম-সংক্রান্ত অত বই লেখা হয়েছে বলে বিশ্বাস হয় না।

    মৃণাল সেন: আরে! না-না। বোধ হয় একটাও নেই। ওখানে রয়েছেন সপরিবারের বাঁড়ুয্যেরা— মানিক, বিভূতি আর তারাশঙ্কর। মজুমদাররা রয়েছেন, অমিয়ভূষণ এবং কমলকুমার। ভাদুড়ি কিন্তু ঐ একজনই, সতীনাথ, দা হ্যাপি প্রিন্স। ‘আত্মপ্রকাশ’ও আছে বোধহয়। শক্তি চট্টোপাধ্যায় তো আপনার বন্ধু, না?

    মিনিবুক: বল্লে কেউ আর বিশ্বাস করে না।

    মৃ. সেন: কেন ঝগড়া হয়েছে নাকি? ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ তো আপনারাই? দেখেছেন তো ছবিটা?

    মিনিবুক: না-না, ওটা গল্প, বা লেখক বলতে পারবেন। অবশ্য আমরা আগে এদিক ওদিক যেতুম। বছরদশেক আগে একবার চক্রধরপুর থেকে আমরা পাহাড়ের পর পাহাড়ের ভেতর ক’মাইল ঢুকে যাই ও কিছুদিন থাকি। আমরা একটা কাঠ-কাটা লরি ধরি, সে কি বৃষ্টি, সত্যিই মুষল-ধারা। শক্তি, সুনীল, দীপক মজুমদার… ৩০ মাইল পাহাড়ি রাস্তা এরা তেরপলের নিচে কাটায়। আমি জায়গা নিই ড্রাইভারের পাশে, যে জন্যে হেসাডিতে নেমেই ওরা আমাকে তাড়া করে। সে আরেকটা গল্প। আপনি দেবেশ রায় বা মতি নন্দীর গল্প পড়েছেন?

    মৃ. সেন: আপনার লেখাও পড়েছি। এবং বেশ আগে থেকে।

    মিনিবুক: বিবর পড়েছেন? বাই সমরেশ বোওস?

    মৃ. সেন: হাঃ হাঃ। বেশ নকল করেছেন তো?

    মিনিবুক: ইউলিসেস দেখলুম?

    মৃ. সেন: উম্উম্… পড়েছি, বুঝলেন। বল্লে কেউ আর বিশ্বাস করে না। (একচোট হেসে) ওঃ হাড় ভেঙে গিয়েছিল মশায়। এই ইউলিসেসকে যখন রাশিয়া ব্যান করল— একটা লেখায় পড়েছিলুম— আইজেনস্টাইনের সে কি ঘেন্না, প্রচণ্ড রাগ, বললেন, ‘ফিল্ম-প্র্যাকটিশনাররা একটা মস্ত জিনিস থেকে বঞ্চিত হলো।’ … ইংরেজিতে রাশান, ফরাসি ও জার্মান কম-বেশি পড়েছি, মানে গড়পড়তা যা পড়া হয়ে থাকে আর কি। লরেন্স আমার ওপর প্রথম দিকটা খুব চেপে বসে, বুঝলেন। বিশেষ করে যৌনদিক থেকে গরিব আর বড়লোককে যেভাবে দেখিয়েছেন, সেটা।

    মিনিবুক: মানে যৌনদিক দিয়ে গরিব বড়লোকের চেয়ে বেশি মাইটি!

    মৃ. সেন: (হাসতে হাসতে) হ্যাঁ। একদম কিন্তু উল্টো। সি-বিচে একজন গরিব আর একটা বড়লোককে ন্যাংটো করে ফেলে দিন…

    মিনিবুক: ওরা খায়-দায় ভালো।

    মৃ. সেন: (অন্যমনস্কভাবে) গরিবরা পাওয়ারফুল সে অন্য কারণে। মার্কস ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন। অর্থাৎ শ্রেণী হিসেবে। … কিন্তু, আপনি একজন ফিল্ম ডিরেক্টরের কাছে এসেছেন, নয় কি?

    মিনিবুক: আপনি তাহলে শুরু করেন একজন সাহিত্যপাঠক হিসেবে?

    মৃ. সেন: হ্যাঁ। তারপর কিছু লিখিও। ফিল্ম সংক্রান্ত লেখাই সব, তাও পড়ে-টড়ে। ছবি করার কথা তখনো মনে হয়নি, সবে দু-একটা দেখা শুরু হয়েছে। ’৪৬ সালে একটা চেক বই অনুবাদও করি, ‘দি চিট’— কার্ল চাপেকের। চাপেকের অনুবাদ তার আগে কেউ করেনি।

    মিনিবুক: পরেও করেনি বোধহয়।

    মৃ. সেন: না-না। মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় করেছেন। তো, একজন পটেনশিয়াল পাঠক হিসেবে লেখার মধ্যে আমি পেলুম মাল্টিপ্লিসিটি অব হিউমান বিহেভিয়ার, প্লুরালিটি ইন অ্যাকশন— জয়স, হেনরি জেমস, দস্টয়ভস্কি, মানিক বাঁড়ুয্যে— এরা— আমি ভিক্টোরিয়ান মডেলের কথা বলছি না— যেখানে শুরু, মাঝখান এবং শেষ আছে। প্লট নয়। এই পাঠকের এক্সটেনশন হিসেবেই কিন্তু আমি লেখাতে এলুম। তার এক্সটেনশন হিসেবে ফিল্মে। ফিল্মকে আমি দেখতে পেলুম একটা লিটারারি টেকনিক হিসেবেই।

    মিনিবুক: লিটারারি?

    মৃ. সেন: হ্যাঁ, টেকনিক। এটা আমি বলছি। লিটারেচারের আরেকটা ডায়মেনশন হিসেবেই ফিল্মকে মনে হলো। এর বাইরে কেউ পারেনি, লিটারেচারের প্রভাবমুক্ত হয়ে একেবারে। আপনি একটু আগে ফেলিনির কথা বলেছিলেন। ফেলেনি সম্পূর্ণ নিউ ল্যাংগুয়েজ হিসেবে দাঁড় করাতে অনেকটাই পেরেছেন অবশ্য। আর পেরেছেন গদার। গদার একটা জ্যান্ত নিউজ পেপার যেন। একটা কাগজ উল্টিয়ে যা দেখেন আর কি— এখানে রেপ, ওখানে রায়ট, গলা কাটা, আগুন, মসজিদ হতে পতনের ফলে বালকের মৃত্যুও ঘটছে আবার বারাসতে আটটা লাশও পাচ্ছেন— আবার সাউথ ইন্ডিয়ান অ্যাকট্রেসের সঙ্গে মন্ত্রী প্রণয়-ব্যাপারে কী করে উড়িষ্যা গভর্নমেন্টের দুই লাখ টাকা নষ্ট হলো, দেখেছেন তো আজকের কাগজে? দ্যাট হিজ হিম, জাঁ লুক গদার। স্ক্রিপ্ট-ফ্রিপ্ট করে না, জানেন তো? যন্ত্রপাতি ও লোকজন নিয়ে বেরিয়ে পড়ল, ব্যস, হয়ে গেল ছবি।

    মিনিবুক: অ্যান্তনিওনি?

    মৃ. সেন: চুল থেকে মোজা পর্যন্ত একজন লিটারারি ম্যান। অ্যান্ড হি ইজ গ্রেট!

    মিনিবুক: লিখতে বা আঁকতে গিয়ে আমরা প্রকাশ করি রঙ ও ভাষার মাধ্যমে। দেখি, শব্দ রপ্ত নেই, ভাষা জানি না। পেইন্টার দেখে, সে রঙ চেনে না। আমাদের অসুবিধে হয়। তবু মানুষ মাধ্যমের তুলনায় সে অসুবিধে কিছুই না। টেকনিশিয়ান বা বিশেষত অভিনেতা-মাধ্যমে আপনি নিজেকে এক্সপ্রেস করেন কি-করে? এ তো অসম্ভব।

    মৃ. সেন: এ ব্যাপারে একজন ফিল্ম ডিরেক্টরের অসুবিধে খুবই। ইউনিক!

    মিনিবুক: অনেকটা কবি যদি সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে গিয়ে বলেন, আমার মন বুঝে পদ্যটা লিখে দাও, অভিনেতার কাছে আপনার চাওয়াটা সে রকমই হয়ে দাঁড়ায় নাকি?

    মৃ. সেন: ফিল্ম একটা লোকের কাজ। ডিরেক্টরের। টেকনিশিয়ান ও অভিনেতা-অভিনেত্রীর বুদ্ধি, দক্ষতা ও সহমর্মিতার ওপর নির্ভর করতে হয় ঠিকই— রঙ ও শব্দের চেয়ে এর জটিলতা হয়তো বেশিই— কেননা যদিও রঙ বা শব্দও কম বেগ দেয় না জানি— তবু এক-একটা জ্যান্ত মানুষ, সে বড় গোলমেলে ব্যাপার মশায়। তবু ঠিক পেইন্টার, কবি বা ঔপন্যাসিকের মতোই ফিল্ম হচ্ছে শেষ পর্যন্ত একজন লোকেরই এক্সপ্রেশন। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যে নিজেকে আরো বিশদভাবে প্রকাশ করতে গিয়ে ক্রমশই আমি টেকনিশিয়ান বা অভিনেতাদের ওপর কম নির্ভরশীল হচ্ছি।

    মিনিবুক: ব্যাপারটা খুলে বলবেন কি?

    মৃ. সেন: বলছি। নিশি! আর একবার চা কর।

    মিনিবুক: দেশলাইটা।

    মৃ. সেন: আপনি যখন লিখছেন বা আঁকছেন, সেখানে আপনি একাই। রঙের তো চরিত্র থাকে না, বা… মিনিবুক: হয়তো থাকে, তবে সে অন্য ব্যাপার।

    মৃ. সেন: বা আত্মা থাকে না। শিল্পী সেটা আরোপ করেন। তেমনি ভাষা। কিন্তু আমাদের মানুষ-মিডিয়া নিয়ে অসুবিধে সত্যি বেশি— এক-একসময় তো আনসারমাউন্টেবল মনে হয়, ঢের কমপ্লিকেটেড। টেকনিশিয়ান বা অভিনেতা যাদের নিয়েই কাজ করি, ফিল্ম, আমি হাতে-কলমে কাজ করে দেখতে পাচ্ছি, যে অর্গানাইজ করে, সেই একটা লোকের কাজ। বাকি সকলের শিল্পবোধ, বুদ্ধি-বিবেচনা বা কর্মদক্ষতা, এককথায় কন্ট্রিবিউশন, এ তো নিজ নিজ স্তরে থাকেই, যা নইলে ছবি হয় না এবং তাকে যথার্থ সম্মান করেই আমি এটা বলছি। আমি… আমি ক্রমেই তাদের ওপর কম নির্ভরশীল হচ্ছি।

    মিনিবুক: আপনি চুপ করে আছেন।

    মৃ. সেন: বলছি… আমি বলছি। (উত্তেজিতভাবে, হঠাৎ) যেমন ধরুন এই মেয়েটি, ইন্টারভিউয়ের এই বুলবুল, শি প্রুভড টু বি এ টোটাল ফ্লপ। যেমন, যখন ফোনে বন্ধুর খবর নিচ্ছে বা রঞ্জিতের কথা বলছে, ‘তুমি ওকে চেন না?… লম্বা, ছিপছিপে—’ দেখবেন ওর মুখ খুব কমই দেখিয়েছি। বান্ধবীর আঁকা ছবি দেখিয়ে যাচ্ছি, তবু ওকে দেখাচ্ছি না। বা উলু, টোপর… এসব তারপর রঞ্জিতের ‘বোগাস’, ওর হাসি— জাম্পকাট— মালা সিনহার মুখ। বা মিউজিয়াম-সিনে দু’বার একই ডায়ালগ, পেছন থেকে লং শট, এসব একই কারণে। দুমদাম এসে গেছে। যখন দেখলুম পারছে না মেয়েটা, আর আমাদের সে পয়সাও নেই যে আর একদিন শুট করব—

    মিনিবুক: মানে, আপনি কী বলতে চান, আপনার…

    মৃ. সেন: হ্যাঁ, আমি তাই বলতে চাই। আমার ব্লু-প্রিন্ট বলে কিছু থাকে না। নো স্ক্রিপ্ট, নাথিং ওয়ার্থ দ্য নেম। একটা মোটামুটি ধারণা থাকে। মোটামুটি, বুঝলেন। অ্যান্ড আই ফিল আই অ্যাম গ্রোয়িং উইথ দ্য ফিল্ম হোয়াইল ডুইং ইট। কিংবা, যখন শেখর কাকা এসে বলল, ‘শেষ পর্যন্ত একটা ক্লাউন সেজে এল?’ এডিটিং প্যাটার্নটা মনে আছে কী আপনার?

    মিনিবুক: হ্যাঁ। বসে আছে… একটা ক্লোজ শর্ট। পেসিং আপ অ্যান্ড ডাউন। তারপর ফ্রন্টাল শট একটা, বসে কি দাঁড়িয়ে ঠিক মনে নেই।

    মৃ. সেন: একটা ইমপেসেন্স। একটা ইনটলারেন্স। একটা উত্তেজনা। শেখরবাবুকে বললুম, আপনি হাঁ করুন। হাঁটুন। ওদিকে তাকান। এইভাবে আর্থাল কন্টিনিউটিকে ভেঙে দিলুম— ভেঙে দিলে একটা ক্র্যাক তৈরি হলো ‘দিজ আর দ্য ক্র্যাকস’ যাকে ককতো বলেছিলেন, ‘থ্র হুইচ পোয়েট্রি এনটার্স।’ এভাবে করলে অভিনেতার কাজ কত হালকা হয়ে যাচ্ছে দেখুন, এবং আমি তার ওপর অনেক কম নির্ভরশীল হয়েও নিজেকে বেশ ভালোভাবেই এক্সপ্রেস করতে পারছি। অন্তত নতুন ভাবে।

    মিনিবুক: কিন্তু এভাবে কতক্ষণ? যেমন ধরুন ইন্টারভিউয়ের লাস্ট সিকোয়েন্স। ওখানে তো ফ্রেমের মধ্যে অনেকক্ষণ— অন্তত ১০ মিনিট ধরে একা রঞ্জিত। যদিও ওখানেও আপনি বারবার ফ্রেম ভেঙে দিচ্ছেন, ‘ক্র্যাক’ও তৈরি হচ্ছে— কিন্তু এখন, এখানেও যদি অভিনেতা কাজ করতে না পারে…

    মৃ. সেন: তাহলে আমি পারি না। যদিও পুরোপুরি অভিনেতার ওপর নির্ভরশীল হতে আমি এক ফুটের জন্যও পারি না, তবু এ রকম ক্ষেত্রে একই সঙ্গে তার ডেডিকেটেড সাহায্য না পেলে আমি নিঃসন্দেহে পারব না। ব্যর্থ হয়ে যাব। এবং এক্ষেত্রে একজন পাকাপোক্ত অ্যাক্টরের চেয়ে কিছুটা ইন্টেলেকচুয়ালি অ্যাডভান্সড ছেলেপেলে পেলে আমি খুশি হব। একজন পোক্ত অভিনেতার মধ্যে ম্যানারিজম এসে যায়, তাকে কমিউনিকেট করা কিছুতেই যায় না। এদের যায়। এ রকম বুদ্ধিমান ছেলেমেয়ে কিছু কিছু পেয়েছি।

    মিনিবুক: যেমন?

    মৃ. সেন: এই ভুবন সোম-এর মেয়েটার কথাই ধরুন না। তখন ওর বয়স কত? ১৬ বছর? ষোড়শী বাঙালি মেয়ের মানসিকতার কথা ভেবেই ওকে সব কথা বলিনি। ছবি শেষ হতে আর দু-এক দিন বাকি, এমন সময় একা পেয়ে মেয়েটা একদিন আমাকে চেপে ধরল, ‘মৃণালদা, কুড ইউ টেল মি হোয়াট ইজ প্রিসাইজলি দ্য রিলেশন বিটুইন দ্য ফাদার অ্যান্ড দ্য চাইল্ড?’ আমি বললুম, ‘থাক না। ছবি তো হয়েই গেল।’

    ‘এ কি শুধু বাবা আর মেয়ের সম্পর্ক?’

    মশায়, আই সিম্পলি কুড নট মিট হার আইজ। হেসে বললুম, ‘অ্যাম্বিগুয়াস থাক না কেন।’ ‘এই-ই! মৃণালদা! জানো, আমি কিন্তু ঠিক তাই ভেবেছিলুম।’

    এই জন্য ছেলেমেয়েদের পছন্দ করি। এ রকম একটা অভারতীয় কথা ও কী করে বল্লে? আমি কিন্তু বলব না সুহাসিনী মূলে একজন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী আনলেস আই— আই ওয়ার্ক উইথ হার অ্যাগেইন, আর সি এনাদার ফিল্ম মেড বয় হার। কিন্তু এটা বলব, সুহাসিনী মূলে একজন অসামান্য বুদ্ধিমতী মেয়ে। এই বুদ্ধিটা না থাকলে ও ছবিতে এতখানি চার্ম ছড়াতে পারত না। এর অনেক আগের কথা বলি। ‘বাইশে শ্রাবণ’ দেখেছেন?

    মিনিবুক: না।

    মৃ. সেন: তাহলে থাক।

    মিনিবুক: না-না, আপনি বলুন। লক্ষ লক্ষ লোক দেখেছে।

    মৃ. সেন: একদিন মাধুরী মুখার্জি এল।

    মিনিবুক: ?

    মৃ. সেন: ঐ মাধবী। আপনি দেখছি কিচ্ছু জানেন না। তো আমি ছবির গল্প বলতে লাগলুম। এক-একটা সিচুয়েশন বলছি অ্যান্ড আই কুড ক্লিয়ারলি সি দেম প্রিন্টেড অন হার ফেস! সে যে কি এক্সপিরিয়েন্স আমার! তার মানে ওর মনটা অপারেট করছে! ‘শি ইজ দ্য গার্ল ফর মি’, আমি বুঝতে পারলুম, অ্যান্ড আই ইমিডিয়েটলি সিলেক্টেড হার।

    হলোও তাই। ওকে নিয়ে একটা খুবই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলছি। ছবিতে মাধবী বিবাহিতা, স্বামীর সঙ্গে বহুবছরের তফাৎ। স্বামী বহুদিন ধরে পঙ্গু— লোকটি এমবিটার্ড অ্যান্ড ফ্রাসট্রেটেড। তবু ‘বিবাহ’ বলে কথা, আনঅলটারেবুল ইনস্টিটিউশন— সব অ্যাকসেপ্টেড— কেউ খুশি কি খুশি না, সে প্রশ্ন ওঠে না। অন দ্য সারফেসে অন্তত। একটা সিচুয়েশন হলো স্বামী আউট অব বোরডম একটা টিকটিকিকে এ-ঘর থেকে ও-ঘরে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সময় বৌ তার পাশের ঘরে হাসাহাসি করছে একটা বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে। স্বামী খোঁড়াতে খোঁঁড়াতে পাশের ঘরে এল। বৌ তাকে শুইয়ে দিতে গেল। সে নিজে শুতে পারে না। স্বামী বলল, ‘থাক।’ দেখাল তার খুব কষ্ট। সেই মুহূর্তে সে সরে যাচ্ছে ক্যামেরা থেকে। এবার মাধবী। আমি মাধবীকে বললুম, ‘দ্যাখো, তোমার যদি দেওর হতুম আমি, তোমাকে বলতুম, এই কাঁদার কি হয়েছে— যাঃ— কাঁদার কী হয়েছে— তাহলে তো কেঁদে ফেলতে? এ অবস্থাটা তৈরি করো।’ সে যে কী অসাধারণ করলে! বলতে বলতে দেখতে পাচ্ছিলুম ও কেঁদে ফেলবে— ফেললও তাই— এবং এইভাবে ওর মধ্যে আমি নিজেকে এক্সপ্রেশড হতে দেখলুম। এ কাজ প্রফেশনালদের কাছে পাব কী? আর কিছু না, স্রেফ মাথাটা— একটু বুদ্ধি— একটু ডেডিকেশন এটা আজকালকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে খুব পাই।

    মিনিবুক: ইন্টারভিউয়ের শেষ দৃশ্য। রঞ্জিত শোকেস ভেঙে ডামিকে বিবস্ত্র করছে। গোটা সিকোয়েন্সটাকে ভায়োলেন্সের সঙ্গে সম্পর্কিত একটা সেক্স-ফ্যান্টাসি বলা চলে কী?

    মৃ. সেন: (একটু চুপ করে থেকে) দেখুন এ কথা এই প্রথম শুনছি। ফ্রাংকলি সেক্স-ফ্যান্টাসির কথা ভাবিনি। ঐ যে বলে না, ‘তোর প্যান্টুল খুলে নোব,’ এই আর্থাল আটপৌরে লজিকের কথাটাই মনে ছিল। তবে যেটা ভীষণ ইন্টেন্ডেড ছিল তাহলো, ‘লুক, হি ইজ নেকেড’, যেটা এম্ফ্যাসাইজ করার জন্য আনরোবিং সম্পূর্ণ হবার পরেও ওর হাত থেকে একটা ন্যাকড়া ঝুলতে দেখা গেছে।

    • মাসুদ করিম - ৫ জানুয়ারি ২০১৯ (৫:১০ অপরাহ্ণ)

      মৃণাল সেনের একটি দুষ্প্রাপ্য সাক্ষাৎকার

      মিনিবুক: কিন্তু আমরা বলছি, লুক, দিস ম্যান ইজ উইদাউট এ জেনিটাল,’ এটাই ওখানে স্ট্রং পয়েন্ট। আপনি তো আগেই এটা দেখাননি। প্রথমে রঞ্জিত ভায়োলেন্টলি পাথরটা ছুড়ল, কাচ ভেঙে গেল। তারপর লম্বা লম্বা টানে ছিঁড়ল তার পোশাক, তারপর আমরা ডামির বালিকাসুলভ পাছা দেখলুম এবং তারপর, সবশেষে, দেখানো হলো ডামির জেনিটাল নেই। যেন বলা হচ্ছে, দ্যাখো এটার লিঙ্গই নেই। ‘একে ভয় পাবার কিছু নেই।’ কোনো দিন ছিল না। আপনি কি পিটার ভাইস-এর ‘মারা/সাদে’ নাটকটা পড়েছেন?

      মৃ. সেন: না। পিটার ভাইস…

      জার্মান নাট্যকার। নাটকটিকে এ কালে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ থিয়েট্রিক্যাল ইভেন্ট বলেছেন অনেকেই। সাদ-ইজমের মার্কুইস দ্য সাদে আর ফরাসি বিপ্লবের জাঁ-পল মারাকে নিয়ে, ফ্রয়েড ও মার্কস, সেক্স ও রেভল্যুশান নিয়ে নাটক। এ কথা সত্যি যে যেকোনো ভায়োলেন্সের মধ্যে অ্যামাউন্ট অব সেক্স থাকেই। যেকোনো রায়ট বা রেভল্যুশনে বিস্তর রেপিং হয়ে থাকে।

      মৃ. সেন: দেখুন, হ্যাঁ, ওখানে ফ্রয়েড থাকতে পারে। তবে কম্পার্টমেন্টালাইজড বা ডায়াগ্রামেটিকভাবে নয়। জ্যাক ট্যাটি (ফরাসি চিত্রপরিচালক যাকে বলেছেন ইনস্পায়ার্ড ননসেন্স— সে-ভাবে। ভুবন সোমের শেষ দৃশ্যে, সেখানে পুরনো দৃশ্য ফ্লাশ-ব্যাকে যা আছে, সব মেয়ে। গাড়োয়ানটা অনেকটা ছবি জুড়ে ছিল, সে কিন্তু এখন নেই। ভুবন সোম খালি মেয়েছেলে দেখছে— দুধউলি থেকে সুহাসিনি মূলে— যত মেয়ে ছবিতে ছিল, সব। এবং তার বন্দুক রয়েছে উঁচনো। টাইমস অব ইন্ডিয়ায় রিভিউআর ঐ বন্দুকের মধ্যে একটা ফ্যালাস-সিম্বল দেখতে পান। ইফ হি ফাইন্ডস ইট ভ্যালিড, আমার বলার কিছু নেই। থাকতে পারে। যখন টোরসো দেখাচ্ছি তখনো আমি ডামির জেনিটাল দেখাইনি কেন? হতে পারে সেটা। মানিক বাবু— সত্যজিত্বাবুর ‘অপরাজিত’, অদ্যাবধি যা সবচেয়ে কনটেম্পোরারি বাংলা ফিল্ম— সেখানে মা ও ছেলের সম্পর্ক— দ্যাট টু ইজ নট ফার ফ্রম ফ্রয়েডিয়ান ইনফ্লুয়েন্স।

      মিনিবুক: এখানে আর-একটা কথা আসে। ইন্টারভিউ দেখে মনে হয় যে আপনি বলতে চান আমাদের দেশে রাজনৈতিক বিপ্লবের আগের অবস্থা রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন এটা আইডিয়ার প্লেন-এ অপারেট করছে— বাস্তবিক তা না-ও থাকতে পারে।

      মৃ. সেন: কেউ কেউ তা বলতে পারেন। যার যা স্যুট করে। আমি পলিটিক্যাল ম্যান নই। কিন্তু আমি পলিটিক্যালি রিঅ্যাক্ট করি। আমি বলছি, রয়েছে। ইন্টারভিউয়ে আমি বলতে চেয়েছি হোয়াট উই লিভ ইজ এ কমপ্লিট ওভারহোলিং। আই বিলিভ ইন আর্মড রেভল্যুশন।

      মিনিবুক: আমাদের দেশে?

      মৃ. সেন: হ্যাঁ। আমাদের দেশে।

      ঠিকই, কিন্তু এমনই ছবি আমেরিকা বা দেশে ঢুকতেই দিলে না। তাড়িয়ে দিলে চ্যাপলিনকে। ‘দেয়ার আর সিচুয়েশনস’— চ্যাপলিন বলেছিলেন, ‘হোয়েন মাডারস বিকাম কমিক্যাল।’ এ-যাবৎ বাংলাদেশে এই মেজাজকে কিছুটা পেয়েছি একমাত্র গোপালভাঁড়ে। এই কুইকসোটিক মেজাজ, এটাই আরো বেশি করে এল ইন্টারভিউয়ে, এবারে স্টাইল বা ফর্মের দিক থেকে। এখন এই যে স্টাইল, এ কোনো বিচ্ছিন্ন জিনিস হয়ে এল না, তা এল এর কনটেন্ট থেকেই।

      মিনিবুক: হ্যাঁ। যেমন আমাদের লেখকদের অনেক সময় বলা হয়, ‘তোমার ভাষাটা ভালো।’ বলে শো-অফ করে দেয়া হয় কিন্তু এ তো নারাণ গাঙুলির ভাষা নয়। এ কিছু জামা নয়, এই ভাষা, এ হচ্ছে গায়ের চামড়া।

      মৃ. সেন: হ্যাঁ, খুবই ডেলিভারেট এই স্টাইলাইজেশন, এর ফর্মের দিকটা। ইন্টারভিউয়ের শেষের দিকে কলকাতার দৃশ্যের ওপর ছুরির ফলার মতো এদিক থেকে ওদিক থেকে রঞ্জিতের মুখ আছড়ে পড়ছে… পকেটমারকে নিয়ে ব্যালে নাচের ভঙ্গিতে যাচ্ছে থানার দিকে, তখন বাজনাও নাচের… সাগিনা মাহাতো ও দক্ষযজ্ঞের পাশাপাশি হোর্ডিং… একটা হোর্ডিংয়ের কাপড় গেছে কুঁচকে, এটা অবশ্য ঐভাবেই পাই, তাতে শেখ মুখতারের মুখে এসেছে একটা ভারি মজা— বিশেষ করে পকেটমারকে ধরার পর থেকে যেকোনো আরবান শহরের সঙ্গে কীভাবে ইন্সপারেবল হয়ে আছে, অ্যাডভার্টিজনের মেজাজ সেটা— বিজ্ঞাপন বারবার এনেছি এই জন্যে— এ ম্যান লিভস আপ টু অ্যাডভার্টিজম, এটা দেখাতে। কলকাতার এট্রসাশ বিজ্ঞাপন নিয়ে একটা শর্ট ফিল্ম করার ইচ্ছেও আছে।

      আমি বিশ্বাস করি এই কুইকসোটিক এলিমেন্টে। আমি বিশ্বাস করি ফ্লিপান্সি বা খানিকটা ফিচলেমিতে। প্রপার্টিজ অব অপটিক অ্যান্ড সাউন্ড ইন রিলেশন টু ম্যান অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড ইন জেনারেল— এতে আমি বিশ্বাস করি। এদের অন্তর্গত ও আপাতবিরোধ ও জাকস্টাপোজিশনে আমি বিশ্বাস করি এবং এভাবেই ইউ মেক আউট ইওর পয়েন্ট ভেরি শার্পলি। একটা মজার কথা আপনাকে বলি। ইন্টারভিউয়ে যেখানে রঞ্জিত ঐ অশোক মিত্রের প্রবন্ধের প্রুফ পড়ছে— এটা এক্ষণে বেরিয়েছিল— তারপর বিস্ফোরণ, পুলিশ মারছে, একবার ছাত্র একবার পুলিশ দেখাচ্ছি— সেখানে, সত্যি-সত্যি আমার কিছু টাকা পকেটমার হয় বুঝলেন? সেইখানে একটা শট ঢোকাতে চেয়েছিলাম, হঠাৎ সব বন্ধ, স্ক্রিন অন্ধকার, নেপথ্য থেকে হয়তো একজন টেকনিশিয়ান এগিয়ে এসে বলছে, ‘‘এইখানে আমাদের পরিচালকের শ’দুই টাকা পকেটমার হয়।’’ তারপরেই আবার মিছিল, পুলিশ মারছে… এইসব। একটা মেট্টোপলিটন শহরের মেজাজ তো একটা লেভেল-এ চলে না।

      মিনিবুক: বেশ তো হতো। করলেন না কেন।

      মৃ. সেন: হয়তো একটু বেশি ডাইপ্রেস করা হয়ে যেত। কিংবা প্রগতিবাদী সমালোচক বলত এতে করে মিছিলের ওপর একটা ডেফিনিট অ্যাশপার্সান করা হয়েছে।

      মিনিবুক: নিশ্চিত বলত। কিন্তু ছবিটা মডার্ন হতো।

      মৃ. সেন: ট্রাম-সিকোয়েন্সে তো তাই করেছি— এই ইলিউশন অব রিয়েলিটি। ‘দেশ’ বলে এ তো ব্রেখট বা ব্রেশট। থিয়েটারে যা হয়েছে, ‘ফিল্ম মিডিয়ামে এ ব্রেখট-পদ্ধতি তাত্পর্যপূর্ণ হবে কী করে? কী কাণ্ড। আমি তা জানব কী করে। আমি কি একাডেমিশিয়ান নাকি। ফিল্মে বুলবুল মুখার্জি যে ফোন নাম্বারটা বার-দুই বলে সেটা আমার ফ্ল্যাটের নাম্বার। ঐ ৪৭-৮৮৯৯। আমি শুধু জানি দৈনিক কম করে ৪০/৫০টা টেলিফোন এসেছে, ‘বুলবুল মুখার্জি আছেন?’ ‘না’ বলায়, একজন মাঝারি ভদ্রলোক তো বলেই বসলেন, ‘আই ওয়ান্টেড টু অ্যাজটেড অ্যাজ টু হোয়াট এক্সটেন্ট ইউ আর ট্রুথফুল।’

      মিনিবুক: হ্যাঁ, দেশ-এ ইন্টারভিউয়ের সমালোচনা আমি মন দিয়ে পড়েছিলুম। যার যা কাজ, সে তাই করছে এ দৃষ্টান্ত অবশ্য কিছুকাল ধরে আমাদের দেশে বিরল। যে লিখছে, সে আসলে লেখকই না, যে পলিটিকস করছে প্রকৃত প্রস্তাবে সে গেরস্ত, আর্টিস্ট ছাড়া সবাই ছবি আঁকছে। বিশেষ করে এক্ষেত্রে একজন না-চিত্রসমালোচক সমালোচনা করেছেন একজন হ্যাঁ-চিত্রপরিচালককে। দেশ-এর সমালোচনাটি এ বিরোধজাত কমপ্লেক্স থেকে সৃষ্ট মনে হয়েছে।

      মৃ. সেন: কিন্তু চটেও যাই। হাস্যকর, বর্বর; ইগনোর করার চেষ্টাও করি। তবু পারি না। এই দেখুন না, বললে যে, একটা শুট নিয়ে এত কাণ্ড? ‘এমন সুদর্শন নায়ককে ধুতি-পাঞ্জাবিতে তো আনস্মার্ট দেখাবার কথা নয়?’ অথচ এই ধুতি-পাঞ্জাবি পরেই ‘সুদর্শন নায়ক’ যখন ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে দাঁড়ায়, অডিয়েন্স তবে কেন হো হো করে হেসে ওঠে। এর উত্তর কী?

      প্রতি শোতে দেখেছি এই দৃশ্য দেখে হাসতে।…

      মিনিবুক: মাস মিডিয়ায় এ রকম সমালোচনা কি ক্ষতি করে না?

      মৃ. সেন: করছে এবং করে। আমাদের দেশের অ্যাভারেজ দর্শক দেশ-আনন্দবাজারের কথাকে বেদবাক্য মনে করে। কিন্তু কিছু সময়সাপেক্ষভাবে ভেবে দেখলে এরা এদের প্রভুরও সমূহ সর্বনাশ করছে। যাক, সে অন্য কথা।

      নিশি: বাবু, টেলিফোন।

      মৃ. সেন: (হাত নেড়ে) নেই বলে দে।

      নিশি: বাবু…কুমার।

      মৃ. সেন: বললুম তো নেই। নে, আর-একবার চা চাপা।

      মিনিবুক: তাহলে আপনি বলছেন আক্রমণাত্মক ভঙ্গি নেয়া উচিত?

      মৃ. সেন: নিশ্চয়ই। কাজটা কঠিন অবশ্যই। সাহিত্য, ব্যবসা, ফিল্ম, রাজনীতি, সব ক্ষেত্রেই এস্টাব্লিশমেন্ট তার আইন বেঁধে দিয়েছে… এ আইন— এ আইন— এসব মানাবার জন্যে তৈরি করেছে অতি ইফিশিয়েন্ট মেশিনারি, যা আবার চালাচ্ছে বেতনভুক ও ক্রীতদাস আমাদের ভাই-বন্ধুরাই। এমনকি পাঠক বা দর্শক-প্রতিক্রিয়াও তো এরাই কন্ট্রোল করছে। ‘কিন্তু রসস্থ হলো কী?’ জিজ্ঞেস করছে ডোরাকাটা কাগুজে বাঘ। ‘হলো তো মা?’ মাথা নেড়ে উত্তরটাও দিয়ে দিচ্ছে দর্শকের হয়ে। দর্শকও মাথা নাড়ছে। … মানিক বাঁড়ুয্যের চেয়ে নীহার গুপ্ত তো ঢের বেশি পপুলার হবেই। ডাজ দ্যাট মিন এনিথিং? মানিকবাবুও তার মাইনরিটি রিডারশিপ ঠিকই পেয়ে যাচ্ছেন ও যাবেন যদিও এই রিডারশিপ রয়েছে ভারতবর্ষময় ছড়িয়ে। একে ইন্টিগ্রেট করতে হবে। সেটাই কাজ। যেমন করেছিলেন আপনি আপনার মিনিবুকগুলোর। আমি প্রতিটি দেখেছি। ২০-২২টা কবিতা ছিল একটা বইয়ে, কোনোটা গল্প, আশা করি অ্যাব্রিজ্ড নয়?

      মিনিবুক: আজ্ঞে না।

      মৃ. সেন: হাজারে গড়ে কত খরচ পড়েছিল?

      মিনিবুক: ৭০-৮০ টাকা, যেটা ছয় হাজার ছাপি।

      মিনিবুক: আমার মনে হয় এরপর পুজোসংখ্যা বা পাবলিশারের দ্বারস্থ হওয়ার আর দরকার নেই। ১০০ টাকার মধ্যে যদি ২০-২২টা পুরো পদ্য ছাপা যায় বা গল্প— ছয় হাজার কপি বই— না থাক শক্ত মলাট— হোক না ছোট্ট দেখতে— এভাবেই অগ্রাহ্য করা যেতে পারে— বিবেক বিক্রি না করে সরাসরি পৌঁছানো যেতে পারে মাইনরিটি রিডারশিপের কাছে। আমরাও প্রমাণ করছি যে ফিল্মমেকিং ইজ অ্যান ইনএক্সপেনসিভ প্রপোজিশন। এভাবে ডিফাই করছি মেশিনারির রাজা কোটিপতিদের। চ্যালেঞ্জ করছি তাদের নিয়মকানুন। ভেঙে দিচ্ছি।

      মিনিবুক: কিন্তু সেটা ফিল্মের ক্ষেত্রে কীভাবে হচ্ছে?

      মৃ. সেন: ভুবন সোমের বাজেট করেছিলুম ১ লাখ ৫০ হাজারে। ফিল্ম ফিন্যান্স করপোরেশনের টেকনিক্যাল অফিসার বললেন, ‘এত কমে ছবি হয় না।’ বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিলেন। নাকচ হয়ে গেল। যা-ই হোক, তখনকার চেয়ারম্যানের হিম্মৎ ছিল, শেষ পর্যন্ত টাকা পেলুম। অ্যান্ড ইট হ্যাজ গিভেন এনরমাস প্রফিট টু দ্য প্রডিউসার অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটর্স।

      মিনিবুক: ইন্টারভিউয়ে কত খরচ হয়েছে?

      মৃ. সেন: আরো কম। আরো কম। ১ লাখ ৪০ হাজার।

      মিনিবুক: ভাবা যায় না!

      মৃ. সেন: আমরা কিন্তু জানি না হাউ উই কুড স্পেন্ড মোর। ২৫ দিনে ছবিটা করি। তৈরি ছিলুম না একদম, নইলে ১৬ দিনেই করতে পারতুম। আরো অনেক কমে। একটা বাড়ি ভাড়া করে সকলকে জড়ো করেছিলুম। যন্ত্রপাতি, আর্টিস্ট, টেকনিশিয়ান— সব্বাইকে, যাতে ভোরে উঠেই কাজে নামতে পারি। যে যার বাড়িতে থাকলে ১০টার আগে কিছুতেই হতো না। অস্টারিটি মেনটেইন করতে হয়েছিল বৈকি, তবে আমরা খেয়েছি খুব কদিন বুঝলেন এবং পারিশ্রমিকও পেয়েছি যে যা পেতে পারি, অ্যাস্ট্রো নমিক্যাল কোনো ফিগার নয় অবশ্য।

      আমি কিছুই জানতুম না যে এরপর কী হবে, এরপর কী হবে আই ওয়াজ সিম্পলি গ্রোয়িং উইথ দ্য ফিল্ম। এত ইয়ুথফুল লেগেছিল, ওজন বেড়ে গিয়েছিল কদিনে। যেদিন থানায় নিয়ে গেলুম ওদের— টালিগঞ্জ থানায়— ওসিকে বললুম, ‘এ পিকপকেট করেছে, এর পিকপকেট হয়েছে আর এই হচ্ছে পার্স। এরা সাক্ষী। নিন, এবার আপনারা করুন।’ ওসি বললেন, ‘সেকি। না না এ কী করে হয়?’ যা-ই হোক হলো কিন্তু। এবং ঐভাবেই। শেষ পর্যন্ত একজন এএসআই, হু হ্যাজ স্পেশালাইজড ইন ক্যাচিং পিকপকেটস, পকেটমারের রোলটা করলেন। ওসি রোল করলেন ওসির। পুরো ৪০০ ফিটের একটা ম্যাগাজিন শুট করলুম এক কোনে দাঁড়িয়ে, যাকে আমরা মাস্টার শট বলি। পরে এডিট করে, কিছু কম্পোজিশন, মিডশট, ক্লোজআপ জুড়ে দিলুম, সাউন্ড অ্যাড করা হলে সেটাই হয়ে দাঁড়াল ছবির ওয়ান অব দ্য বেস্ট সিনস, যার নাকি একটা অক্ষরও বেস্ট ছিল না। দৃশ্যটা অনেকেরই ভালো লেগেছে। তাই বলছিলুম ভারতবর্ষের ভালো ছবির মাইনরিটি দর্শক মোটেও কম নয়— ভালো ছবি পেতে থাকলে এরা দিনকে দিন মোবিলাইজড হবে এবং আশানুরূপ বাড়বেও—এবং, অন্যদিকে খরচা বেশ কম করতে পারলে এদের কাছ থেকেই টাকা উঠে আসবে। এভাবে ছাড়া হবে না। এটা ভুলে গেলে চলবে না, এই বাংলাদেশেই হিন্দি ছবির বড় বাজার। অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টাকা কিছু হবে না ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দেবার দরকারও হবে না। কিন্তু ছবি হবে। বঙ্কিমবাবু তো বহুকাল আগেই বলে গেছেন, ‘টাকার জন্য লিখিবেন না। ও দেশে অনেকে লেখে, লেখা ভালো হয়, টাকাও পায়। কিন্তু এ দেশে এখনো সে সময় হয় নাই।’ এ দেশে হয় তেজারতি হবে, না হয় আর্ট হবে। দুটো একসঙ্গে এ দেশে হবে না। সে সময় এখনো হয়নি।

      মিনিবুক: উত্তরাধিকারী মনোনীত করতে পারেন নতুনদের মধ্যে, এমন কাদের দেখছেন?

      মৃ. সেন: প্রশ্নটা বেশ অহংকারী, তবে আমি করিনি। যা-ই হোক, নতুনদের কাজ বাংলায় কিছু দেখছি না। পুনা ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করে বেরিয়েছে মনি কাউল, একদম ছোকরা, তার দুর্দান্ত ছবি ‘উসকি রোটি’ দেখেছি। গল্পও তরুণ লেখকের: মোহন রাকেশ। একটা পাঞ্জাবি বৌ, সে তার ড্রাইভার স্বামীর জন্যে খাবার নিয়ে রাস্তার ধারে অপেক্ষা করছে— ইটারনাল ওয়েটিং! কী ভায়োলেন্ট সেই ছোকরার ছবি… তার ক্যামেরা কোনো স্ট্রাকচার মানে না— কোনো অ্যাকসেপ্টেড নর্ম বা গিভন অ্যাটিচিউড মানে না… সে একটা ডিভাসটেটিভ কাজ… দ্য ক্যারেক্টারস আর পারফর্মিং এ রিচুয়াল যেন। বালিকা বয়সে মেয়েটা একটা বিরাট পেয়ারা বাগানে ঢোকে। সে একটা পেয়ারা চুরি করে। ডাল, পেয়ারা, মেয়েটা— সে কতক্ষণ ধরে, যেন শেষ হবে না। তারপর ঐ রকম টাইম স্পেসের অসহ্য স্রিংকেজের মধ্য দিয়ে মেয়েটা একটা ইট তুলল। ছুড়ল। পেয়ারাটা মাটিতে। পেয়ারার ওপর মেয়ের কুমারী হাত। এবং সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর আরেকটা হাত রোমশ পুরুষ— বাগানের মালী। অ্যান্ড শি ওয়াজ রেপড দেআর। গোটা দৃশ্যটা স্লো, স্লো আর শীতল— এবং সাউন্ডট্র্যাক করাই হয়নি! নিঃসন্দেহে একটা মেজর ইভেন্ট।

      বাংলাদেশে এ রকম দেখিনি। হয়তো কবিতায়, গল্পে হচ্ছে কিছুটা। কিন্তু ফিল্মে দেখিনি। আমরা বড় বেশি হোম-বাউন্ড। বুঝলেন। অ্যান্ড মরাল। এখানে আসল জায়গা ধরে একটু নাড়ালেই হৈ-হৈ পড়ে যাবে। লিরিকের কাঙাল পেটি মিডিওকার সব— যারা আধুনিক-ফাদুনিক বলে চেঁচায় তারা আবার সবার ওপরে। ওরা রুটলেস— এই রুটলেসনেস থেকে রুথলেসনেস এসেছে। রাত দুটোর সময় বলে কী জানেন, ‘মৃণালদা, লেটস মুভ ইনটু দা রেডলাইট এরিয়া!’ আমি অবশ্য যাই-টাইনি কখনো, গেলুমও না। কিন্তু কত সহজে ওরা চলে গেল। দিস মে লিড দেম টু ডু সামথিং হুইচ ডিজার্ভস বিইং নোটিসড। এই রুথলেসনেস। লিরিক্যালি ইউ উইল গেট নো-হোয়ার। কিচ্ছু হবে না।

      —ওটা কী?

      —অ্যাকাদেমি পুরস্কার।

      —ও। আচ্ছা, মৃণাল সেনের পাবলিক ইমেজ কী রকম হলে আপনি খুশি হন? বহুপদকপ্রাপ্ত?

      —আমাকে কেউ যদি বলেন, সোস্যালি কমিটেড ডিরেক্টর, শুনতে আমার বেশ লাগে। আই অ্যাম ক্যাপেবল অব ইনটেন্সলি হেট; থিংস বিকজ দেয়ার আর থিংস দ্যাট আর হেটফুল। কিন্তু আমি প্যাশনেটলি ভালোবাসতেও পারি। তাই কেউ যদি বলেন, ‘না, আমার কোনো কমিটমেন্ট নেই,’ আমার কেমন খটকা লাগে। একটা বিশ্বাস না থাকলে ডিরেকশন থাকে না। মনি কাউল সম্পর্কে আমার যেখানে ভয়, ছেলেটা ফ্যাসিস্ট না হয়ে যায়।

      —ফেলিনির কমিটমেন্ট কী? তিনি তো কিছুই বলেন না।

      —আই ডোন্ট এগ্রি উইথ ইউ দেয়ার। আমরা কি ফেলিনি দেখে রিঅ্যাক্ট করি না। পোলানস্কির ‘নাইফ ইন দ্য ওয়াটার’ দেখে মানিকবাবু বলেছিলেন, ‘পেসিমিস্টিক।’ আই বেগ টু ডিফার। এটা ‘অব দ্য রেকর্ড’ রাখবেন বাট নট অ্যাট অল। দেখেছেন ছবিটা? নাইফ ইন দা ওয়াটার দেখে আমি দৌড়ে বাড়ি এলুম। স্ত্রীকে বললুম, ‘চলো আমাদের দেখতে পাবে।’ বন্ধুবান্ধব বলে, ‘মৃণালরা কত ভালো, সকলের বিবাহিত জীবন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মৃণালরা…।’ ছবি দেখে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলুম, ‘চিনতে পারলে?’ আমার বৌ কিন্তু ইয়টিংয়েও যায় না, বিকিনিও পরে না। আমি ওর চোখের দিকে চাইলুম। অ্যান্ড উই আন্ডারস্টড ইচ আদার এ লিটল বেটার। এ রকমই হয়েছিল আন্তওনির ‘লা নতে’ দেখে। শেষ দৃশ্যে যখন ওরা দুজনের কাছে দুজনে ধরা পড়ে গেছে— পরিষ্কার ধরা পড়ে গেছে— স্ত্রীর ব্যাগ খুলে স্বামী একটা পুরনো চিঠি খুলে পড়তে লাগল, ‘সেদিন রাতে ঘুম ভেঙে গেল। দেখি চাঁদের আলোয় তোমারই একগাছা চুল উড়ে এসে পড়েছে তোমার ঠোঁটে। দেখে বুঝি কত নির্ভরশীল তুমি সম্পূর্ণ আমার ওপর, and I pressed my lips against yours.’ স্ক্রিপ্টে রয়েছে, ‘The man looks deep into her eyes’. তারপর বলল, ‘Who wrote this letter and to whom?’ ‘You wrote this letter ten years back and to me’— স্ত্রী উত্তর দেয়। এবং তারপর স্ক্রিপ্ট থেকে আমি আক্ষরিক মুখস্থ বলছি: ‘This ultimately led to a violent physical intimacy in remembrace of what was and what will never be.’ আমি এত বড় প্রোফাউন্ডলি ট্রু অ্যান্ড ট্র্যাজিক— আধুনিক ব্যাপারে— কখনো পড়িনি। দেখিনি। শুনিনি। বিলেতে দেখে বন্ধু লিখলেন, PORNO. অ্যান্ড আই ডু নট এগ্রি। বন্ধু শুধু ঐটুকুই দেখলেন ফিজিক্যাল রিয়েলিটি পর্যন্ত। কিন্তু রিয়েলিটি যেখানে ট্রানসেন্ড করছে, সেই ইলিউশন তিনি দেখতে পেলেন না। এই যে আমি যাচ্ছি এটা তো একটা স্টেপ— একটা ফিজিক্যাল রিয়েলিটি— অশিক্ষিত, মূর্খ ও বর্বর ছাড়া শুধু এটা নিয়ে কে মাথা ঘামাবে। কিন্তু এর মধ্যেই রয়েছে আমি আর একটা জায়গায় যাব— মাই ফ্রেন্ড কুড বি মোর কনসার্নড উইথ দি অবজারভেশনস অব দি অবজারভড হোয়েন হি ওয়াজ বিয়িং অবজারভড।

      —ইন্টারভিউ তো চলল না। এখন কী করবেন? কম্পোমাইজ?

      —এর উত্তর কিছুক্ষণ আগে দিয়েছি। যা বলেছি, তাই করব। সেইভাবে করব। মাইনরিটি স্পেক্টেটরের কথা ভেবে আরো কম খরচে ছবি করব। এখন ‘গোত্রান্তর’ করছি।

      —এমন কোনো ছবি তুলেছেন কি, যাকে আপনার key-film বলা যেতে পারে?

      —‘ভুবন সোম’ বলতে পারেন। ভুবন সোমে এ ফর্মটা পাই। ছবিটা অ্যাকসেপ্টেড হতে দেখে কনফার্মডও হয়েছি। বুঝতে পেরেছি যে এভাবেই করতে হবে। পথ ঠিক হয়ে গেছে। এবং এখন আর ফেরার পথ নেই।

      —আপনি তো অনেকগুলো ছবি করলেন। তার মধ্যে কোনো কানেক্টিং ইস্যু আছে কী?

      — ’৬৪/ সালে তোলা ‘প্রতিনিধি’ পর্যন্ত ছিল। সেই পর্যন্ত ছবিতে একটা ডোমিনিয়ারিং থিম ছিল। তা হলো পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েদের চেহারা এবং পুরুষের বজ্জাতি, যে তোমরা ঠিক আছ, সব ঠিক আছে, সো দ্যাট দে ক্যান রুল। তারপর সেটা থাকেনি।

      —ভুবন সোম করার পর আগের ছবিগুলোকে অনেকটাই অগ্রাহ্য করেন কী?

      —শেষতম ছবিই সবচেয়ে ভালো ছবি। পরের ছবি যতক্ষণ না তুলি। এ যেন পাহাড় ডিঙিয়ে যাওয়া। প্রতি পদে হরাইজনটাও বেড়ে যায় না? সেই রকম। ‘ইন্টারভিউ’ আমি মনে করি ভুবন সোমের চেয়ে অনেক বেশি স্টাইলাইজড তো বটেই, হোলসামও অ্যান্ড কম্পিট্যান্ট।

      —রঙ পছন্দ করেন কী?

      —না, রঙ চলবে না। অন্তত আমাকে সাহায্য করবে না। শিল্পগত ব্যাখ্যা দিতে পারব না, তবে রঙ কেমন যেন ছবির প্রাণ থেকে আমাকে দূরে ঠেলে দেয় বা আমার অ্যালার্জি আছে রঙে।

      —আপনি কার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বোধ করেন, বাংলাদেশে বা আন্তর্জাতিক?

      —প্রতিদ্বন্দ্বিতা?

      —একজন তরুণ লেখক, বাসুদেব দাশগুপ্ত সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন ‘সত্যজিং যতবার পুরস্কার পাবেন, ঋত্বিক ততবার পাগলাগারদে যাবেন।’ এ সম্পর্কে আপনি মন্তব্য করুন।

      —উনি এ রকম মনে করতে পারেন। আমি তা করি না। ফর মি, মানিকবাবু ইজ সুপার্ব। আমি তো বলেছি তার ‘অপরাজিত’ অতুলনীয়। ঋত্বিক এর উল্টো। সে ইম্পালসিভ ও অবসেড। এবং অবসেস্ট লোকের দ্বারা পুরো কাজ করা সম্ভব নয়। ইউ কান্ট বিল্ড এ কমপ্লিট কেস আউট অব ইট।

      —আমরা কিন্তু ঋত্বিকের ভক্ত। বিশেষত সুবর্ণরেখা… অতুলনীয়

      মৃণাল সেন: নিশি! তুই নিচে গিয়ে লাট্টু ঘোরা বাবা! এখানে টেপ চলছে। বায় দা ওয়ে, এসব কিন্তু অব দ্য রেকর্ড।

      মিনিবুক: হ্যাঁ। ছাপা হলেই দেখতে পাবেন।

      মিনিবুক: ৭১, কাশীনাথ দত্ত রোড। কলকাতা

  8. মাসুদ করিম - ১২ জানুয়ারি ২০১৯ (১:২৩ অপরাহ্ণ)

    The sari specialists

    The sari as living heritage—a new generation of textile enthusiasts is taking the popularity of the garment beyond Instagram hashtags to explore its archival value

    Coimbatore’s 100-year-old Lakshmi Mills—one of the oldest textile mills in one of the biggest textile hubs in India—is now fully mechanized. The amount of yarn and cloth produced here is no longer measured in units of length, but units of weight—in quintals and tonnes instead of metres. Yet, from 20-27 January, a 30,000 sq. ft hall inside the mill’s compound will be given over to the display and study of handspun, handwoven cotton cloth. A week-long exhibition and conference organized by the Bengaluru-based Registry of Sarees, a resource and study centre for Indian textiles, will be held here. Titled Meanings, Metaphors, the event will showcase 108 Khadi saris and fabric swatches from a unique collection commissioned by the late textile historian, revivalist and conservationist Martand Singh for his Vishwakarma series of exhibitions that travelled the world between 1982-92.

    The showcase will be accompanied by talks, discussions and workshops on handloom and weaving. It will also touch upon the dynamics between the so-called rivals, handlooms and power looms, and the need for both to coexist. The show, which was first held in November at a major weaving cluster in Chirala, Andhra Pradesh, will move to Bengaluru later this year.

    Late last year, Bengaluru-based sari label Angadi Silks found itself in the spotlight when it dressed Deepika Padukone in her wedding and reception saris. As the ensuing discussion over the saris’ provenance showed, today’s sari lovers are keen to know more about where their favourite garment comes from—who designed this, who made this, which weaving tradition does it belong to, what is the name of the technique used? Angadi itself is mindful of this need to know—it has produced coffee-table books on the family’s own centuries-old textile history. Colourful, informative posters on popular sari weaving, dyeing and embroidery techniques line the walls of its flagship store in Bengaluru.

    But the explosion of social media posts has also resulted in self-styled experts and inaccurate tags, and along with that, a certain amount of misinformation about the provenance of saris. Shows like Meanings, Metaphors are attempts to set the record straight and be as accurate as possible about a living culture and art form.

    In Mapu’s footsteps

    When he died at the age of 70 in April 2017, Martand Singh, or Mapu, as he is widely referred to within India’s design community, had created a vast and unique legacy. Not only had he relentlessly worked, since the 1980s, on a series of exhibitions, institutions and museums dedicated to preserving Indian textiles, his interventions had often been at a grass-roots level—he brought weavers and artisans in touch with designers and created a new awareness about textiles, embroideries and weaves among the fashion-week crowd. One of Mapu’s biggest contributions to the arts was the rigour he brought to the study and documentation of Indian design, not least through his celebrated directorship of the 70-year-old Calico Museum of Textiles in Ahmedabad, which continues to be the most trusted repository of textile knowledge in the country.

    Ahalya “Ally” Matthan seems, on the surface, to be an unlikely inheritor of this legacy. A Bengaluru-based entrepreneur who runs a business that manufactures organic, handmade personal care products that retail under their own brand name, Areev, and are supplied to other brands, Matthan’s only association with saris initially was that she loved wearing them. In 2015, she, along with her friend Anju Maudgal Kadam, a content producer, started a social media trend that took them to unexpected places. The #100SareePact, as it later came to be known, started as a way for women like Matthan and Kadam to encourage each other to wear their saris more often instead of storing them reverentially in their closets. But as the pact drew to a close towards the end of 2015, not only had it created almost a revolution in the way urban women looked at saris—not as “occasion-wear” reserved for family weddings and stuffy official functions but as everyday garments with beautiful form and versatile functionality—it had also evoked a newfound appreciation of India’s vast textile landscape, and the handloom sari in particular. “It made me want to learn, and I sought out people who could educate me—not just about the design aspect of saris but their cultural, social and economic aspects as well,” says Matthan.

    Although today Matthan dismissively calls it a “vanity project”, the 100 Saree Pact made her curious about the many different weaves and varieties of saris. Actually, “curious” is a mild word, and what Matthan experienced was closer to an academic awakening. This year, she started The Registry of Sarees Resource and Study Centre in collaboration with designer, textile historian and curator Mayank Mansingh Kaul, which will focus on handmade textile research and documentation, working with collections of saris that will be studied, catalogued and documented through print and digital publications.

    Kaul, who has a special interest in the post-Independence era of Indian textiles, has headed several sari archival projects over the years—in 2016, he convened a seminar on the Baluchari from Bengal, as part of an exhibition that showcased Baluchari saris from the late 19th to early 20th centuries, and edited a publication on the subject, connecting the visual and material aspects of the “historical” Baluchari to the contemporary one. He is currently working on a project that looks at a century of Indian fashion through family albums and personal histories.

    While Matthan and Kaul focus on collection and curation, the documentation effort at the Registry of Sarees is led by textile designer and academician Pragati Mathur, who is an expert weaver herself and plans to conduct weaving workshops as part of the Registry’s activities.

    It is one of the most interesting ongoing efforts to recognize the archival value of saris. “It is hard not to look at the sari as an important aspect of the country’s design landscape. Not only has the drape of the sari evolved over the decades, remaining one of the most innovative forms of dress in the subcontinent, but its use of textiles has itself reflected in experiments in the evolution of Indian textiles,” says Kaul.

    Mapu’s protégés, like textile historians Rta Kapur Chishti, Rajiv Sethi and Rahul Jain, are names that are familiar to anyone even remotely connected with India’s textile culture, though they remain largely unknown to the general public. Saris were a special area of love and focus for Mapu, and along with Chishti, he edited and contributed to one of the seminal books on the garment—Saris Of India: Tradition And Beyond (2010, Roli Books). Today, although the popularity of saris in Indian metros has soared and revival projects are doing essential work to preserve techniques and varieties, the study of saris as important, living bearers of cultural, technical and social knowledge is still quite nascent. There hasn’t been a new, non-academic and accessible sari book published in almost a decade.

    Soapmaking and saris

    The Registry is housed on the top floor of a three-storey building in Bengaluru’s Domlur area, right above Areev’s factory. Warm, sweet scents from downstairs envelop the space, which is dominated by a long wooden table surrounded by custom-made chests of drawers to store saris wrapped into long rolls—the best way to preserve them. There are over two dozen books on textiles and saris on bookshelves, and in one corner, a simple frame loom rests against the wall.

    On our first visit in December, we found Mathur and Kaul bent over a Khadi sari stretched out on the long table, looking at it through a magnifying loupe—a small, foldable device, indispensable part to the textile trade, as it allows weavers, buyers and archivists to closely observe the fabric, noting its thread count, pattern details and any peculiarities in the weave.

    The saris they were studying share a special provenance—they were all designed by Rakesh Thakore, of the Abraham & Thakore fashion house, under Mapu’s tutelage for the Vishwakarma series, in which Rahul Jain and Rta Kapur Chishti were also involved. The collection, which was in the custodianship of Chishti since then, comprises 108 varieties of fabric and 108 saris, the fabric swatches meticulously mounted on slides and annotated in detail. It was acquired by The Registry of Sarees in late 2018, and first displayed at the Chirala exhibition.

    The Registry currently houses another collection of heirloom saris—these are from wedding trousseaus across the country, acquired by Matthan and Kaul over the space of a year during cross-country trips to small villages and towns; from individuals, dealers and sari sellers, and spanning over a century in vintage. This collection will be the second to be studied and displayed after the Khadi collection, and promises to be a vibrant documentation project. The Registry team will be releasing richly produced catalogues and books on each collection, besides holding regular talks, interactions and workshops at its studio. It also encourages interested people to drop in by appointment to view and study the archival saris.

    A road map for Bharat Darshan

    Saris Of India: Tradition And Beyond is possibly the only comprehensive compendium of different sari-weaving and wearing traditions in India, covering 15 states and countless variations of colour, weave and pattern from each state, besides documenting 108 methods of draping. In her foreword to the book, Chishti writes: “The sari has been our means of finding a pathway through the labyrinth of India’s inherited material/textile culture. The most fluid of worn garments, the sari reflects and communicates with all that we can see and touch, feel and experience. It takes us headlong into the intangible aesthetic, philosophy and technology from which it emerges. It is our road map for Bharat Darshan—a visitation of this land. Often enough, the underlying linkages are not fully perceived as they are too far removed from the overwhelming reality of the present in which they exist. Yet, as this is not a historical account but one based on living memory, it is the practitioners who provide the clues, however faint, through colour and material associations, names and meanings of symbolic patterns and usage of particular saris. In retrospect, the sari’s significance becomes clearer.”

    Malika Verma Kashyap, a former fashion branding executive who attended and was inspired by Chishti’s sari-draping workshops, is the founder of Border&Fall, a digital publication dedicated to India’s craft and fashion community and creating compelling narratives about these traditions through interviews, articles and visual documentation. In 2017, Border&Fall launched “The Sari Series”, a digital anthology documenting India’s regional sari drapes through short films and how-to-drape videos. “The terms ‘relevance’ and ‘cultural documentation’ are charged and bear weight… However, in order to have a conversation about the future, a documentation of the past is equally important, as knowing where we come from informs where we are headed,” says Kashyap, who believes the sari needs to be unmoored from the single, dominant draping style that has become the most common way of wearing it in the urban setting—the so-called “Nivi” style, said to have been developed by the social reformer Gyanodanandini Tagore in the 1870s following a visit to Mumbai. “As with all the sari drapes in the past, we believe the sari must continue to adapt to reflect our current lives—in which a floor-length sari with a blouse, petticoat and 15 safety pins may seem cumbersome to everyday living. The irony remains that most of the drapes do not have a petticoat, are often worn without a blouse and always without safety pins,” writes Kashyap in an article introducing The Sari Series in Border&Fall.

    Take the East Champaran Drape, for instance: worn with a plain black bandeau minus a petticoat in the Border&Fall video, the sari doesn’t have the usual front pleats but is draped progressively higher on the body with each tuck, creating a waterfall effect that displays the border. Or the Boggili Posi Kattukodam drape, worn by the Golla shepherd community and Gudati Kapulu agriculturists of southern Andhra Pradesh, in which a nine-yard sari is tucked and pleated in the usual style, but the ends are gathered and tucked at the back to create a butterfly-wing effect that lends immense grandeur.

    Currently, besides three short films on the sari’s past, present and future by three independent filmmakers, The Sari Series consists of 89 how-to-drape videos, almost all of which show different varieties of saris, from handloom saris to nylon ones, worn without cumbersome petticoats or even traditional blouses (replacing them with shirts, kurtis and bandeaus—as they are in fact still worn by the women of many communities in India.) They make for fascinating viewing, especially with the attendant details of where each style originated and insights into the draping culture of different communities.

    Dynamics of an engineered garment

    On 1 December, Abhay Mangaldas, who runs an Ahmedabad-based hospitality group that has converted the heritage properties owned by the Mangaldas family into boutique hotels, threw open the doors to an tightly curated exhibition of saris at the Ahmedabad Trunk, a textile gallery located at their signature property, The House of MG. The show, curated by Aditi Ranjan, a textile designer and archivist and senior faculty at the National Institute of Design, was put together to showcase saris from the personal collections of Abhay’s grandmother, Leena Sarabhai Mangaldas, an educationist and founder of the alternative school Shreyas, and his mother, Anjali Mangaldas.

    The 25 saris selected for the show, Art Of The Loom, were not only chosen for their beauty and craftsmanship, but also because they reflected the culture and lifestyles of their wearer. Ranjan says she was inspired by visual documentation work such as the Indian Memory Project. The show focused on the Sarabhai ladies’ “ceremonial saris”—Ikat silks from both Odisha and Andhra, Benaras silks and brocades, Jamdani cottons, Ashavali saris, and muga silks and mekhla chadors from Assam.

    Ranjan, who, with her husband M.P. Ranjan, wrote the monumental work Handmade In India: A Geographic Encyclopaedia Of Indian Handicrafts (2009), says: “The sari is often not just a beautiful artwork—in it are embedded many values and linkages, many symbiotic and often even exploitative relationships. From a design perspective, saris are vital to understanding the dynamics of an engineered garment that is unique because it comes ready to wear from the loom…studying how the weaver maps it, structures it, where the border will go, what motifs the pallu will have, and how its structure is related to the way it will be draped is fascinating.”

    The evolution of saris—from those made on handlooms and power looms to factory-made “synthetic” ones—tells a story of changing sociopolitical dynamics, and is not necessarily a negative or lamentable phenomenon. In all the excitement over the revival of handloom and lost weaves, it is important to remember that power looms and factory-made saris brought a certain amount of democratization to the garment, besides providing employments to hundreds of thousands of textile workers, says Bessie Cecil, a Chennai-based textile historian. “Mechanization changed everything. There was a phase when nylon saris were the rare ones—our grandmothers and mothers treasured them. I cannot say that power looms are evil—the possession of certain kinds of saris was a mark of privilege and exclusivity, and about making sure that large sections of the population did not have access to them,” she says.

    One example of this is the very sari Cecil studied as her PhD thesis—the Kodali Karuppur, which has now more or less vanished from mainstream production though there are attempts being made to revive it. The saris were made exclusively for the queens of Thanjavur up to the 19th century in the village of Kodali Karuppur in Tamil Nadu. Expensive to produce because of a long and laborious process executed by highly skilled artisans, the Kodali Karuppur sari was the ultimate sign of privilege. “Treat handlooms as distinct from heritage; they are separate things and have separate value. One is part of a living culture and economy while the other has historical and academic value. The government and other organizations should have different approaches to preserving them,” says Cecil, who is working on a book called Weaving India, which will be out sometime this year.

    Notwithstanding these efforts to bridge the gap between dry academic work and Instagram hashtags by creating resources for serious appreciation, the number of documentation projects falls short of the need. Why don’t we have museums (or even digital repositories) dedicated to each and every variety of sari created in India—surely a worthy objective?

    “I think textile historians find that studying or writing about saris is less rewarding than other historical material. Perhaps this has to do with the fact that so many traditions of saris in India are living, reflecting a broader tendency in the country to ignore more recent histories?” says Kaul. “There are some outstanding collections of saris in museums across the country—both governmental and private—but they are inaccessible to scholars, as well as the general viewing public,” he laments.

    There are also companies and designers in the country who work with saris, and have profited enormously from the commerce, but have not taken the initiative to invest in museums and private study centres. “I think Varanasi is a case in point: it has helped companies amass turnovers of hundreds of crores, but there isn’t a single publicly accessible collection which reflects the history of the region’s saris,” says Kaul.

    A few years ago, a pop-up exhibit from the Levi Strauss Museum in San Francisco came to Bengaluru. Beautifully curated and presented, it showcased the history of the brand through its iconic products. Historian and archivist Lynn Downey showed visitors around, lovingly pointing to pairs of frayed blue jeans in glass cases. “They are fragile,” she said.

    Levis—indeed, blue jeans—are barely 165 years old. Yet, there are several museums across the world dedicated to their history, and the company has invested time and effort in archiving their evolution. It seems obvious that each of the thousands of variations of saris deserve a dedicated effort to archive the knowledge coded into its warp and weft, and be recognized as an artefact of history and living culture

  9. মাসুদ করিম - ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ (১০:২৭ পূর্বাহ্ণ)

    নস্যির ঝাঁজেই সাড়া কোমায় থাকা রোগীর

    প্রথমটায় চমকে উঠলেও, আর থামেননি চিকিৎসকরা। কোমার গভীর খাদে তলিয়ে যাওয়া রোগীর পঞ্চেন্দ্রিয়কে চাঙ্গা করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন এসএসকেএমের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পিএমআর) বিভাগের চিকিৎসকরা। একসঙ্গে প্রয়োগ করা হয়েছে মিউজিক থেরাপির মূর্চ্ছনা, টেবিল ল্যাম্পের আলো, গোলাপ-রজনীগন্ধার সুবাস, নুন-মধুর স্বাদ আর ত্বকে বিদ্যুতের ‘শক’, যাতে অসাড় হয়ে যাওয়া পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়কে ধীরে ধীরে উত্তেজিত করা যায়। তাতেই চেতনা ফিরেছে কোমাচ্ছন্ন রোগীর।

    পিএমআর বিশেষজ্ঞ রাজেশ প্রামাণিকের অধীনে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভর্তি জনার্দন ভট্টাচার্য নামে আগরতলার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব ওই রোগী। সামান্য হলেও চার সপ্তাহের মাথায় এখন নাড়াতে পারছেন হাত-পা। কথা এখনও বলতে পারছেন না, তবে চিকিৎসকরা আত্মবিশ্বাসী, মাসখানেকের মধ্যে আরও অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে ত্রিপুরা সরকারের ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকে। যখন এসএসকেএমে ভর্তি হয়েছিলেন, তখন চেতনা মাপার সূচক গ্লাসগো কোমা স্কেলে (জিসিএস) জনার্দনের ‘রিডিং’ ছিল মাত্র ৩। অর্থাৎ, গভীর কোমা। স্বাভাবিক মানুষের জিসিএস রিডিং হয় ১৫। সোমবার চিকিৎসকরা দেখেছেন, এখন জিসিএস রিডিং অন্তত ১২।

    কোমায় থাকা রোগীর চেতনার জগতে ফেরা বা না-ফেরার জন্য অনন্ত অপেক্ষাকেই ভবিতব্য হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। সেখানে মারাত্মক স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে কোমা থেকে টেনে বের করার এ প্রয়াস যে অভিনব, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। প্রবীণ স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ তৃষিত রায়ের উচ্ছ্বাস, ‘দারুণ কাজ। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে, প্রতিটি রোগীর ধরন আলাদা। সকলকে এই পদ্ধতিতে কোমা থেকে বের করে আনা হয়তো সম্ভব নয়। তবে মিউজিক থেরাপি, অ্যারোমা থেরাপি সারা দুনিয়ায় ধীরে ধীরে এই সব ক্ষেত্রে ভালো কাজে দিচ্ছে। এসএসকেএমে তেমনই কাজ হয়েছে দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।’

    তৃপ্ত জনার্দনের চিকিৎসক রাজেশও। তিনি বলেন, ‘শুধু প্রথাগত চিকিৎসায় কাজ হচ্ছিল না। তাই চেষ্টা করে দেখলাম, এর পাশাপাশি কোনও ভাবে যাতে ওঁর মস্তিষ্কের সুপ্ত অংশকে সক্রিয় করে তোলা যায়। রোগীর নস্যির নেশা ছিল বলেই একটিপ নস্যি দিয়ে কাজটা শুরু করেছিলাম ভর্তির দিন দুয়েকের মাথায়। পুরোপুরি অচেতন রোগী প্রথমেই যখন নাকের গোড়ায় নস্যির গন্ধ পেয়ে গভীর শ্বাস নিলেন, তখনই বুঝেছিলাম, কাজে দিয়েছে আমাদের চেষ্টা। পঞ্চেন্দ্রিয়কে চাঙ্গা করার সামগ্রিক চেষ্টাটাও এখন সফল।’

    গত ১৮ অক্টোবর আগরতলার বাড়িতে ব্রেনস্ট্রোক হয় জনার্দনের।

  10. মাসুদ করিম - ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ (৯:২৬ পূর্বাহ্ণ)

    Brexit deal: Theresa May suffers historic defeat in vote as Tories turn against her

    Theresa May has pledged to face down a vote of no confidence in her government, after her Brexit deal was shot down by MPs in the heaviest parliamentary defeat of the democratic era.

    On a day of extraordinary drama at Westminster, the House of Commons delivered a devastating verdict on the prime minister’s deal, voting against it by 432 to 202.

    The scale of defeat, by a majority of 230, was greater than any seen in the past century, with ardent Brexiters such as Jacob Rees-Mogg and Boris Johnson walking through a packed division lobby cheek-by-jowl alongside passionate remainers.

    As noisy protesters from both sides of the Brexit divide massed outside in Parliament Square, the prime minister immediately rose to accept the verdict of MPs – saying she would welcome a vote of no confidence in the government.

    “The house has spoken and the government will listen,” she said. “It is clear that the house does not support this deal, but tonight’s vote tells us nothing about what it does support.”

    In a raucous Commons, the Labour leader, Jeremy Corbyn, confirmed he had tabled a formal motion of confidence in the government, backed by other opposition leaders, which MPs would vote on on Wednesday.
    How does a no-confidence motion work, and what’s next for May?
    Read more

    Corbyn told MPs: “This is a catastrophic defeat. The house has delivered its verdict on her deal. Delay and denial has reached the end of the line.”
    Advertisement

    The Brexit-backing European Research Group (ERG) and the Democratic Unionist party (DUP) later announced that they would support the prime minister, making it unlikely Labour could succeed in triggering a general election.

    May said that if she survived the vote on Wednesday, she would hold meetings with senior parliamentarians from all parties to “identify what would be required to secure the backing of the house”.

    The prime minister’s spokesman later said May would be contacting Conservative and DUP MPs among others , but declined to say whether or not she would meet with Corbyn or the SNP leader, Ian Blackford.

    He cited the example of May’s meetings with Labour MPs such as Caroline Flint and Gareth Snell about an amendment on workers’ rights, although both of those MPs eventually voted against the government. “We will approach it in a constructive spirit,” the spokesman said.

    May had no plans to head to Brussels immediately, No 10 said, implying that the prime minister first needed to test what would be acceptable to MPs.

    Downing Street said May would approach the talks wanting to find a solution to deliver a Brexit deal that would honour the result of the referendum – suggesting she would not countenance talks with those pushing for a second referendum, or even a full customs union, which Labour has backed.
    Sign up to our Brexit weekly briefing
    Read more

    She would then make a statement on Monday, setting out how she intended to proceed. MPs would get the chance to amend the statement, and were likely to take the opportunity to try to demonstrate support for their own favoured alternatives – including a Norway-style soft Brexit, and a second referendum.
    Advertisement

    Several cabinet ministers, including Amber Rudd, Philip Hammond and Greg Clark, had pressed the prime minister at Tuesday’s cabinet meeting to pursue a cross-party solution if her deal was defeated. But Brexit-backing ministers, including Andrea Leadsom and Penny Mordaunt, urged her instead to seek revisions to the Irish backstop – and failing that, to pursue a “managed no deal”.

    The former foreign secretary Boris Johnson said the crushing defeat gave the prime minister a “massive mandate” to return to Brussels and seek a better deal.

    “We should not only be keeping the good bits of the deal, getting rid of the backstop, but we should also be actively preparing for no deal with ever more enthusiasm,” he said.

    On Tuesday night Johnson was joined by other prominent Brexiter MPs, including John Redwood and Bill Cash, at a champagne celebration party at Rees-Mogg’s house.

    Hammond moved quickly after the vote to quell business anger over the failure of May to get her deal ratified. The chancellor expressed his “disappointment” at the result in a conference call at 9pm with main business groups, including the CBI and the British Chambers of Commerce, as well as dozens of chief executives.

    One source on the call said it was constructive and that Hammond’s tone was “realistic” about the damage prolonged uncertainty around Brexit was inflicting on the economy. However, Hammond was hammered by business leaders over parliament’s refusal to take a no-deal Brexit off the table. “This was the single biggest question he was asked,” said the source.
    The Guardian view on May’s Brexit deal: it’s over, but what’s next?
    Read more
    Advertisement

    May said any plan that emergeed from the talks would have to be “negotiable” with the EU27. She earlier rejected an amendment from the Tory backbencher Edward Leigh calling for the Irish backstop to be temporary, saying it was not compatible with the UK’s legal obligations.

    In Brussels, Donald Tusk, the European council president, appeared to back a second referendum soon after the crushing result for the prime minister was announced, and urged her to offer a way forward.

    May was expected to return to Brussels within days to consult with Tusk and the European commission president, Jean-Claude Juncker. Officials said the EU was now in listening mode.

    In a statement, Juncker urged the British government to “clarify its intentions as soon as possible”, and warned that “time is almost up”.

    “I take note with regret the outcome of the vote in the House of Commons this evening”, he said. “On the EU side, the process of ratification of the withdrawal agreement continues”.

    In a defence of Brussels’ role in the negotiations, Juncker said that the EU and the bloc’s chief negotiator, Michel Barnier, had shown “creativity and flexibility throughout” and “demonstrated goodwill again by offering additional clarifications and reassurances” in recent days.

    He said: “The risk of a disorderly withdrawal of the United Kingdom has increased with this evening’s vote. While we do not want this to happen, the European commission will continue its contingency work to help ensure the EU is fully prepared.”

    May, in Westminster earlier knowing that she faced a heavy defeat, made a heartfelt plea to MPs to support her, calling it “the most significant vote that any of us will ever be part of in our political careers”.

    “Together we can show the people we serve that their voices have been heard, that their trust was not misplaced,” she said.

    Earlier in the day, as one Conservative backbencher after another stood up to attack her painstakingly negotiated withdrawal agreement in the House of Commons, it became clear that few had changed their mind.

    May had embarked on a last-ditch charm offensive on Tuesday, holding meetings with MPs including the ERG’s Steve Baker, who said the pair had held a “constructive and substantial conversation about the future”.
    Advertisement

    Corbyn, speaking just before the vote , saidMay had “treated Brexit as a matter for the Conservative party, rather than the good of the whole country”.

    He called the government’s efforts to steer Brexit through parliament “one of the most chaotic and extraordinary parliamentary processes” he had experienced in 35 years as an MP. The attorney general, Geoffrey Cox, told his colleagues that if they did not accept the prime minister’s deal, they risked condemning the UK to the chaos of a no-deal Brexit.

    “It would be the height of irresponsibility for any legislator to contemplate with equanimity such a situation,” he said.

    Corbyn would come under intense pressure to throw his weight behind a second Brexit referendum if May wins on Wednesday; but his spokesman said Labour did not rule out tabling another no-confidence motion at a later stage.

    Labour MPs were joined by 118 Conservative rebels in voting down the prime minister’s deal, including erstwhile loyalists such as the chair of the backbench 1922 committee, Graham Brady. That was one more than the number who had backed a no-confidence vote in May’s leadership of the Conservatives in December. Under party rules, the prime minister’s victory in that vote means she cannot be challenged for party leadership again within the next 12 months.

  11. মাসুদ করিম - ২০ জানুয়ারি ২০১৯ (১২:১৮ অপরাহ্ণ)

    সাহিত্য জগতে নক্ষত্রপতন, প্রয়াত অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    সাহিত্য জগতে আরও এক নক্ষত্রপতন। চলে গেলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। বার্ধক্যজনিত কারণে ৮৫ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে সাহিত্য জগতে বিরাট শূন্যস্থান সৃষ্টি হল।

    ১৯৩৪ সালে অবিভক্ত বাংলার ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছোটবেলা কেটেছে একান্নবর্তী পরিবারে। তবে দেশভাগের পর চলে আসেন বাংলায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। নিজেকে পুরোপুরি সাহিত্য জগতে নিয়োজিত করার আগে সাংবাদিকতা, কারখানার ম্যানেজারের মতো একাধিক পেশায় যুক্ত ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন শিক্ষকতার সঙ্গে। ১৯৮৬ সালে স্থায়ীভাবে কলকাতার বাসিন্দা হয়ে ওঠেন। সাহিত্য জগতে তাঁর অবদান ভাষার প্রকাশ করা কঠিন। উপন্যাসের পাশাপাশি নানা ছোটগল্পও লিখেছেন। বহরমপুরের একটি স্থানীয় ম্যাগাজিন অবসরে তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। লেখার জগতে তাঁকে আলাদা মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’। মানুষের ঘরবাড়ি, অলৌকিক জলযান, ঈশ্বরের বাগান তাঁর অনন্য সৃষ্টি। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’র সঙ্গে গ্রীক ট্র্যাজেডির তুলনা টেনেছিলেন লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।

    অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে বারবার উঠে এসেছে দেশভাগের যন্ত্রণা, সবহারাদের কাতরতা। এছাড়াও লিখেছেন একগুচ্ছ কিশোর উপন্যাস। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, রাজার বাড়ি, নীল তিমি, উড়ন্ত তরবারি, হীরের চেয়েও দামি। সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত এই সাহিত্যিকের প্রয়াণের সঙ্গে একটি যুগের অবসান ঘটল। শোকের ছায়া সাহিত্য মহলে।

    https://mknewsmedia.tumblr.com/post/182156186619/ন-লকণ-ঠ-প-খ-র-খ-জ-অত-ন-প-রয়-ত-স-হ-ত-য-ক-অত-ন

  12. মাসুদ করিম - ২২ জানুয়ারি ২০১৯ (১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ)

    আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের চিরবিদায়

    সুরের মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নিলেন বরেণ্য সুরকার, গীতিকার, সংগীত পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।

    দীর্ঘ চার দশকের ক্যারিয়ারে দুইশর বেশি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করে গেছেন তিনি। ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’র মত দেশাত্মবোধক গানে তার দেওয়া সুর বাংলাদেশের মানুষের বুকে চিরদিন বাজবে।

    মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আফতাবনগরের বাসায় হার্ট অ্যাটাক হলে বুলবুলকে মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে গীতিকার কবীর বকুল জানান।

    একুশে পদক পাওয়া এই গানের মানুষটির বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন।

    হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় গতবছর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে তার অস্ত্রোপচারও করা হয়েছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।

    হাসপাতালের চিকিৎসকরা শেষ কথা জানিয়ে দেওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে পরিবারের সদস্যরা বুলবুলের মরদেহ নিয়ে যান আফতাবনগরের বাসায়। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এই গীতিকার- সুরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন।

    সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, বুলবুলের মরদেহ মঙ্গলবার বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। বুধবার বেলা ১১টায় তার কফিন নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবদনের আগে এই মুক্তিযোদ্ধার প্রতি জানানো হবে রাষ্ট্রীয় সম্মান।

    জোটের সাবেক সভাপতি নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জানাজা বা দাফনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

    মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল

    ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন মাত্র ১৫ বছর বয়সে। তখন তিনি ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্টটেন্ট হাইস্কুলের ছাত্র।

    আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসালমীর সাবেক আমীর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে সেই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল।

    ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা দেখার পর প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেন বুলবুল ও তার কয়েকজন বন্ধু। প্রথমে বিহারিদের বাসা থেকে অস্ত্র ছিনতাই করে ছোট একটি মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করেন তারা। পরে জিঞ্জিরায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি তৈরি করেন।

    সেখানে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে ঢাকায় ফিরে আসেন বুলবুল। জানতে পারেন বড় ভাই ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ টুলটুল মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দিয়েছেন। পরে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া গ্রেনেড নিয়ে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে নিউ মার্কেটের ১ নম্বর গেইটে পাকিস্তানি বাহিনীর লরিতে আক্রমণ করেন বুলবুল ও তার বন্ধূ সরোয়ার।

    অগাস্টে ভারতের মেলাঘরে গিয়ে এক দফা প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে ঢাকার লালবাগ এলাকায় কাজ শুরু করেন বুলবুল ও তার বন্ধু সজীব। তাদের প্লাটুনকে বলা হত ওয়াই (ইয়াং) প্লাটুন। অক্টোবরে রোজার মাসে আবার ভারতে যাওয়ার সময় কুমিল্লা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাঝামাঝি তন্তর চেকপোস্টে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে বন্দি হন বুলবুলরা চারজন।

    নির্মম নির্যাতনের পর তাদের উলঙ্গ অবস্থায় বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে। সেই জেলখানায় অন্তত ৫৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বন্দি রেখেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।

    রোজার ঈদের দিন সন্ধ্যায় ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় পুলিশ কর্মকর্তা ছিরু ও তার ছেলেসহ ৩৯ জনকে আলাদা করে জেল থেকে বের করে এনে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। তাদের মধ্যে একজন প্রাণে বেঁচে যান।

    দুই দিন পর বুলবুলদের চার বন্ধুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শান্তি কমিটির অফিস দানা মিয়ার বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। সেই রাতেই সেখান থেকে পালিয়ে যান বুলবুলরা।

    ২০১২ সালের অগাস্টে বুলবুল ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার পরের বছর খুন হন তার ছোট ভাই আহমেদ মিরাজ। ২০১৩ সালের ৯ মার্চ রাতে কুড়িল ফ্লাইওভারের পাশ থেকে পুলিশ মিরাজের লাশ উদ্ধার করে।

    সেই ঘটনার বিচার না পাওয়ায় হতাশা ছিল বুলবুলের মনে। ২০১৮ সালের মে মাসে এক সাক্ষাৎকারে তিনি গ্লিটজকে বলেছিলেন সে কথা।

    “ভাইয়ের বিচার পাইনি-ওটা হলো অভিমান। এটা অভিমানের বিষয়। আমি সরকারের নির্দেশেই কিন্তু ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়েছি। এটা অভিমান ছিল। ..এটা তো আমি বলবই।”

    গানের ভুবনে চার দশক

    ১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন বুলবুল। এরপর আমৃত্যু তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন সংগীতের সাধনায়।

    বেলাল আহমেদের পরিচালনায় ১৯৮৪ সালে নয়নের আলো চলচ্চিত্রের সংগীতায়োজন করেন বুলবুল। ওই সিনেমার জন্য তার লেখা ‘আমার সারাদেহ খেয়োগো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমি তোমার দুটি চোখের দুটি তারা হয়ে’ গানগুলো সে সময় তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

    এর পরের চল্লিশ বছরে মরনের পরে, আম্মাজান, প্রেমের তাজমহল, অন্ধ প্রেম, রাঙ্গা বউ, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, পরেনা চোখের পলক, তোমাকে চাই, লাভ স্টোরি, ভুলোনা আমায়, আজ গায়ে হলুদ, লাভ ইন থাইল্যান্ড, আন্দোলন, মন মানে না, জীবন ধারা, সাথি তুমি কার, হুলিয়া, অবুঝ দুটি মন, লক্ষ্মীর সংসার, মাতৃভূমি, মাটির ঠিকানাসহ দুইশ শতাধিক চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেন বুলবুল।

    প্রেমের তাজমহল সিনেমার জন্য তিনি ২০০১ সালে এবং হাজার বছর ধরে সিনেমার জন্য ২০০৫ সালে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

    দেশের সংগীত অঙ্গনে অবদানের জন্য ২০১০ সালে সরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে একুশে পদকে ভূষিত করে।

    চলচ্চিত্রের জন্য সংগীত আয়োজনের পাশাপাশি দেশের সমকালীন শিল্পীদের নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করেছেন বুলবুল। তার কথা আর সুরের গান নিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আবদুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনক চাঁপাসহ দেশের বহু জনপ্রিয় শিল্পীর অ্যালবাম বের হয়েছে।

    • মাসুদ করিম - ২২ জানুয়ারি ২০১৯ (৪:৫৭ অপরাহ্ণ)

      ‘সব ক’টা জানালার’ সুর কাঁদিয়েছিল সাবিনাকে

      যে দেশপ্রেমের টানে একাত্তরে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র, সেই একই আকুলতা দেশের গানে ছড়িয়েছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। দেশের গানে বুলবুল যতটা দরদ দিয়ে সুর বসিয়েছেন, ঠিক ততটাই দরদ দিয়ে তার অনেক গানই কণ্ঠে তুলেছেন আরেক কিংবদন্তী শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।

      বিশেষ করে গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু, সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আর কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন- এই ত্রয়ীর কালজয়ী সৃষ্টি ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’ গানটি তো এখন বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গেই জড়িয়ে গেছে।

      সুরকার, গীতিকার, সংগীত পরিচালক, মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে আরও কয়েকটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন; বুলবুলের সুরে কণ্ঠে গান তুলেই পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

      যে কণ্ঠে বুলবুলের করা সুর ছড়িয়ে দিয়েছেন সারাদেশে, জনপ্রিয় সব গানের স্রষ্টার প্রয়াণের পর সাবিনার সেই কণ্ঠেই স্মৃতিচারণে যেন বেশি কাতরতা।

      বাংলা সংগীতের অন্যতম প্রভাবশালী এ সুরকার-কণ্ঠশিল্পী জুটির আবির্ভাব গত শতকের আশির দশকে। সাবিনা ইয়াসমিন তখন দারুণ জনপ্রিয় আর ব্যস্ত শিল্পী। বিপরীতে বুলবুল সংগীতে নতুন; পায়ের নিচে শক্ত মাটি খুঁজছেন। মাঝে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ নামে চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করে নিজের হাত পাকিয়েছেন।

      বুলবুল তার একটি গান করার জন্য সাবিনা ইয়াসমিনকে বেশ কয়েকবার বলেছিলেন। কিন্তু সাবিনা ইয়াসমিন ভেবেছিলেন, ‘ছোটমানুষ কী করবে!’
      কি মনে করে হঠাৎ সাবিনা একদিন সেই ছোট ছেলেটিকেই ডেকে বললেন, ‘তোমার কিছু গান শোনাও তো।’ দুয়েকটি গান শুনেই ‘থ’ বনে গেলেন। গানের সুরগুলো মনে কোনে দাগ কেটে গেল তার।

      সেইদিনের স্মৃতি ঘেঁটে সাবিনা ইয়াসমিন বললেন, “এখনও মনে আছে। অদ্ভুত ছিল সেই সুর! একদম আলাদা সুর। আমাদের দেশে এমন গান তো শুনিনি। আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম।”

      একটা নয়, বুলবুলের পাঁচটির মতো গানের সুরে কণ্ঠ তুললেন তিনি। সেই গানগুলোর মধ্যে ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘ও আমার আট কোটি ফুল দেখ গো মালি’, ‘একদিন ঘুম ভেঙে দেখি তুমি নাই’ দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।

      সব ক’টা জানালা খুলে দাও না

      নিজে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলেই হয়তো বাঙালির স্বাধীনতা নিয়ে গানের প্রতি বেশি দুর্বলতা ছিল আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের।

      নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা ও আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে কালজয়ী গানটিতে কণ্ঠ দেন সাবিনা ইয়াসমিন। আলাপচারিতায় গানটির পেছনের গল্প তুলে আনলেন তিনি।

      সাবিনা ইয়াসমিন বললেন, “নজরুল ইসলাম বাবুকে গানটি লেখার ধারণা দিয়েছিলেন বুলবুল। বাবুও কিছু ধারণা যোগ করে নিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে গানটি লেখা হয়েছিল।”

      প্রথমবার গানটির সুরে কেঁদে ফেলেছিলেন বলে জানালেন তিনি।

      “আমি তো শুনে অবাক হয়ে গেছি। এও কী সম্ভব! বুলবুলকে বললাম, সুরটা তুমি এরকমভাবে কী করে এতো সুন্দরভাবে বসালে? আমি প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলাম। তারপর বাকিটা তো ইতিহাস।”

      রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বুলবুলের দেশাত্ববোধক গানগুলো আর দশটা গানের চেয়ে আলাদা বলে মনে করেন তিনি।
      “উনি (বুলবুল) মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন; সেকারণে তার গানগুলোও বৈচিত্রময়। ওনার দেশের গানগুলো আর আট-দশটা দেশের গানের মতো না। প্রত্যেকটা গানের মধ্যে ছবি আছে; গানটা যখন শুনছি, তখন দেখতেও পাচ্ছি।”

      ‘বুলবুলের মূল্যায়ন করতে পারিনি’

      মাত্র ১৫ বছর বয়সে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া এ শিল্পীকে জীবদ্দশায় যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি বলে আক্ষেপ ঝরেছে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে।

      মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ওনাকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারিনি। বুলবুলের মতো এমন প্রতিভা আসবে বলে মনে হয় না। সেরকম জিনিয়াসের আসলে কোনো দাম দিতে পারিনি। এখন আমরা অনেক কথায় বলছি, বলব কিন্তু বেঁচে থাকা অবস্থায় আসলেই কোনো মূল্য দিতে পারিনি।”

      তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা এত কম বয়সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন; এটা সবাই পারে না। সে হিসেবেও কিন্তু অনেক কিছু পাওয়ার মতো ছিল, কিন্তু পাননি।”

      বরেণ্য এ সুরকারকে ‘জিনিয়াস’ অভিহিত করে তার এতো তাড়াতাড়ি চলে যাওয়াকে দুঃখজনক বললেন সাবিনা।

      “তার প্রয়াণে যে ক্ষতি হল, তার শূন্যস্থান কখনই পূরণ হবার নয়। বুলবুলের মতো মিউজিক ডিরেক্টর কখনো আসেওনি; ভবিষ্যতেও আসবে কি না জানি না। তাকে সালাম জানাই।”

      ইচ্ছে ছিল আবারো একসঙ্গে গান বাঁধার..

      মাস চারেক আগেও শয্যাশায়ী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের দেখা করতে গিয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন; আশায় ছিলেন, সুস্থ হয়ে ফিরলে আবার একসঙ্গে গান করবেন। কিন্তু তার আগেই মঙ্গলবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওপারে পাড়ি জমান তিনি।

      আফসোসের সুরে সাবিনা বলেন, “আমার অপূর্ণ ইচ্ছাটা আর পূরণ হল না।”

      ইতোমধ্যে তাদের পুরানো গানগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

      “বিটিভির আমলের গানগুলো বিটিভির কাছে আছে কি না জানি না। বিটিভির যে অবস্থা তাতে গানগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে গানগুলো রিমেক করেছি। তা না হলে এতদিন মানুষ গানগুলো শুনতেও পেত না; হারিয়েই যেত।”

      তার কণ্ঠে তোলা বুলবুলের সুরে আরো বেশ কিছু নতুন করে সঙ্গীতায়াজোনের পরিকল্পনা আছে বলেও জানালেন সাবিনা ইয়াসমিন।

      বুলবুলের সুর করা যেসব দেশাত্মবোধক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন সেগুলো হল- সব কটা জানালা খুলে দাও না, ও মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে, সেই রেল লাইনের ধারে, সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য, ও আমার আট কোটি ফুল দেখ গো মালি, মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না, একতারা লাগেনা আমার দোতারাও লাগে না।

      এর বাইরে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে চলিচ্চিত্রের যেসব গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ও আমার মন কান্দে, ও আমার প্রাণ কান্দে (চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা), পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে যেন পেয়েছি (এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে সহযাত্রী চলচ্চিত্র), পৃথিবীতো দু দিনেরই বাসা, দু দিনেই ভাঙে খেলাঘর (সৈয়দ আবদুল হাদীর সঙ্গে ‘মরণের পরে’ চলচ্চিত্র), একদিন দুইদিন তিনদিন পর, তোমারি ঘর হবে আমারি ঘর (এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে ‘মহামিলন’ চলচ্চিত্র)

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.