সুপারিশকৃত লিন্ক: আগস্ট ২০১৭

মুক্তাঙ্গন-এ উপরোক্ত শিরোনামের নিয়মিত এই সিরিজটিতে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। কী ধরণের বিষয়বস্তুর উপর লিন্ক সুপারিশ করা যাবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম, মানদণ্ড বা সময়কাল নেই। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই তাঁরা মন্তব্য আকারে উল্লেখ করতে পারেন এখানে।
ধন্যবাদ।

আজকের লিন্ক

এখানে থাকছে দেশী বিদেশী পত্রপত্রিকা, ব্লগ ও গবেষণাপত্র থেকে পাঠক সুপারিশকৃত ওয়েবলিন্কের তালিকা। পুরো ইন্টারনেট থেকে যা কিছু গুরত্বপূর্ণ, জরুরি, মজার বা আগ্রহোদ্দীপক মনে করবেন পাঠকরা, তা-ই সুপারিশ করুন এখানে। ধন্যবাদ।

৭ comments

  1. মাসুদ করিম - ১ আগস্ট ২০১৭ (৫:১৭ অপরাহ্ণ)

    Jeanne Moreau, legendary French actress and star of ‘Jules and Jim,’ dies at 89

    French actress Jeanne Moreau, a smoky-voiced femme fatale who starred in Francois Truffaut’s love triangle film “Jules and Jim” and whose award-winning, seven-decade career included work with some of the world’s most acclaimed directors, has died. She was 89.

    The French president’s office announced her death in a statement Monday without providing a cause. An assistant to her agent confirmed the death but would not provide details.

    President Emmanuel Macron said Moreau epitomized her art like few others, and praised her for going beyond her earlier roles as a screen siren to embrace other genres, starring in comedies and action films.

    “That was her freedom … always rebellious against the established order,” Macron said in a statement.

    Outspoken and politically active, Moreau starred in more than 100 films, recorded albums and worked well into her 80s. She won an honorary Oscar in 1998 for lifetime achievement. She was also honored with numerous French cinema and theater awards, and presided over the jury at the Cannes Film Festival twice.

    Moreau also performed in films by Orson Welles, Peter Brooks, Wim Wenders and other international directors. She starred in her last feature film in 2015, a French comedy called “My Friends’ Talent.”

    She had a brief marriage with William Friedkin, the Oscar-winning director of film classics “The French Connection” and “The Exorcist,” and had a high-profile, five-year relationship with designer Pierre Cardin, described by both as a “true love” though they were never married.

    Macron celebrated a “spark in her eye that defied reverence and was an invitation to insolence, to liberty, to this whirlpool of life that she loved so much, and that she made us love.”

    Information about funeral arrangements and survivors was not immediately available.

    She was perhaps best known for her performance as Catherine in Truffaut’s 1962 “Jules and Jim,” in which two friends vied for her character’s love.

  2. মাসুদ করিম - ১ আগস্ট ২০১৭ (৫:২১ অপরাহ্ণ)

    আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের বিকল্প গড়ার ডাক বামদের

    আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বে জোটের বাইরে ‘বিকল্প গণতান্ত্রিক শক্তি’ গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা।

    মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টন মুক্তি ভবনে সরকারের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু ‘প্রস্তাব ও দাবি’ তুলে ধরেন বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

    লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মহাজোট সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসনে মানুষ আজ দিশেহারা। গণতান্ত্রিক অধিকারসমূহ এখনও রুদ্ধ, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। নিপীড়ন, হয়রানিমূলক মামলা, অপহরণ, গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আইনের শাসনের ছিটেফোঁটা রাখা হচ্ছে না।

    “রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদী ভাবাদর্শ ও চিন্তা-চেতনাকে মদদ দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী ও সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী শক্তির গাঁটছড়ার পাশাপাশি সরকারি দল আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে খোলাখুলি মদদ দিয়ে চলেছে, ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিকে অবলম্বন করছে।”

    আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেন্দ্রিক ‘লুটেরা ধনীক শ্রেণির দ্বি-দলীয় অপরাজনীতির’ বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাম প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক শক্তিকেই জনগণের প্রকৃত ভরসার স্থল হয়ে উঠতে পারে।”

    গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে সভা, সমাবেশ, মিছিল, হরতাল ও স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ নিশ্চিতকরণ, সাংবিধানিক পদে নিয়োগের বিধান চালু, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ও ৫৪ ধারা বাতিল ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের গ্রহণযোগ্য তদন্তের দাবি জানান তিনি।

    দলীয়করণ, দুর্নীতি, লুটপাট, দখলদারিত্ব রোধ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বাঁচার মতো মজুরি, জাতীয় সম্পদের মালিকানা, সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও জানানো হয়।

    নির্বাচনের আগে বামপন্থিদের ঐক্য এক প্রশ্নের জবাবে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “এটা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঐক্য নয়, আমাদের যেসব দাবি-দাওয়া আছে সেগুলো আদায়ে আমাদের সংগ্রাম, এর মধ্যে নির্বাচনের প্রসঙ্গও আছে।
    “নির্বাচন বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হল- অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সেই লড়াইয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি।”

    নতুনভাবে ঐক্য আরও ‘ঘনিষ্ঠ’ হবে মন্তব্য করে সিপিবি সভাপতি বলেন, “ওই ঐক্যের রূপটা ভিন্ন ধরণের হতে পারে, সেই রূপকে আরও ঘনিষ্ঠ করার প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন একটা স্তরে উন্নতি হয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে পালন করছি।”

    সেলিম বলেন, যেসব প্রস্তাবনা ও দাবি তুলে ধরা হয়েছে তা সংগ্রামের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল। আশু দাবি আদায়ে বামপন্থি শক্তি রাজপথে থাকবে। সেগুলো আদায় করার জন্য জনগণের সহযোগী নিয়ে সব শক্তি প্রয়োগ করার কথা জানান তিনি।

    অন্যদের মধ্যে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বাসদের (মার্কসবাদী) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

  3. মাসুদ করিম - ৬ আগস্ট ২০১৭ (৭:৪১ অপরাহ্ণ)

    Is Handwriting History?

    Have you got a pen? My answer to such a question, following some clumsy digging in my backpack, is increasingly no. Sometimes, embarrassment giving way to defensiveness, I wonder why anyone bothers to ask. For years an “e-signature” has sufficed for my letters of recommendation; it’s months since I wrote a check. Presented with a credit card, more and more cashiers point me to a screen to scribble on with my right index finger. (I worry that the scrawl bears no resemblance to my real signature, but on the other hand—ha! hand!—I’ve begun losing all sense of what that indication of my individual personhood might look like.)

    And yet, my colleagues and I increasingly require students to show up in class once again equipped with those 20th-century marvels, ballpoint or felt-tip pens. I have started to prohibit laptops, tablets, and smartphones, dubious that students who claim to use those machines to take notes can actually resist the lure of Facebook. My own phone plies me with links to scientific studies that associate longhand note-taking with improved comprehension and memory.

    And then, too, I write books, and sometimes am even asked to sign copies of those books, personalizing them with my autograph. My manual formation of the letters of my name bears little relation to the activities that produced these books in the first place—they have uniformly been the products of word processing. But I will readily take pen in hand to comply with that fetishistic arrangement that makes the material trace of a scribal self a proof of authorship.

    I am, in short, a half-hearted participant in what observers like Anne Trubek, in The History and Uncertain Future of Handwriting, and Aileen Douglas, in Work in Hand: Script, Print, and Writing, 1690–1840, identify as our contemporary moment of media transition. Is handwriting history? Trubek’s and Douglas’s histories of penmanship illuminate the complicated feelings—indignation and nostalgic regret, tinctured, maybe, by relief—this question provokes. Readers mourning handwriting won’t find comfort in these books. But they will learn about the social preconditions that shaped the romanticizing of the writing hand and its work in the first place.

    Both Douglas and Trubek emphasize how recent and historically contingent that romanticization is. Each homes in on the familiar association between handwritten (as opposed to mechanically produced) communication and values like self-expression, authenticity, and individuality. Their books show instead how often ideals of replicability—of accurate, uniform, mechanical copying—have overshadowed the value system that prizes in handwriting those distinguishing lapses from legibility that lend communication a personal touch.

    Handwriting instruction is no longer the preserve of writing masters, a once honored profession that has long since gone the way of the town crier. But lessons in penmanship still involve some equivalent of the copybooks that helped those writing masters win their fame in 18th-century England. Most of the under-eight set continue to enter literacy by retracing, with as much exactitude as little fingers can muster, the letters furnished them in standard-setting alphabets. Although novels of education and modern autobiographies often represent writing as an agent of the self’s transformation, children in schoolrooms will first form their characters by imitating other people’s characters. Copying still precedes composition. Impersonation is part of becoming a person.

    Trubek and Douglas remind us that, until the 20th century, the largest group to make a living from “writing” was the clerical work force. The Bob Cratchitts and Bartlebys of the past spent workdays laboriously transcribing business correspondence and legal documents. What we call “data entry” haunted 18th-century efforts to heroicize authors, writers in the more familiar sense, with originality and agency. Even authors themselves sometimes failed to disentangle wordsmithing from quill-driving. The Romantic cult of the authorial autograph had the unintended consequence of repositioning authors within just the context they hoped to elude, that “of mere writing and laborious inscription.”

    Douglas challenges that winner-takes-all account of media history, in which one stage succeeds another and the disappearance of an old medium must follow the introduction of a new one. (Trubek also questions this historiographical framework, but sometimes, in her zeal for getting her readers to move with the times, she brings it back into play.) Work in Hand therefore stresses the coexistence of print and script. In Douglas’s account, the printing revolution actually increased scribal production, diversified and diffused the styles of penmanship, and through these developments gave “script new opportunities for change and expansion.”

    And Douglas proposes that it was literate people’s encounter with a print form—the popular epistolary novels of 18th-century England—that first taught them to correlate the individual’s inward disposition with the characters she inscribed manually on the surfaces of the page. In Samuel Richardson’s 1747–8 novel in letters, the beauties of Clarissa Harlowe’s penmanship, as described by her confidante, register the beauties of this heroine’s mind. The pseudoscience of graphological analysis, topic of an entertaining chapter in Trubek’s book, lies just over the horizon.

    In 1726 Daniel Defoe, better known now for launching, with Richardson, the rise of the English novel, published a book that is identifiable as a prototype for both The History and Uncertain Future of Handwriting and Work in Hand. (Douglas acknowledges the resemblance.) No mere human could have invented the miraculous art of writing, Defoe states in An Essay upon Literature (literature denoting here not creative writing but something more fundamental—the knowledge and the forming of letters).

    Waving aside the “extravagant” claims Japan and China made about their peoples’ long-held knowledge of writing, Defoe locates the origins of letters in “the two Tables of Stone written by the Finger of God himself, containing … the Ten Commandments”: “GOD himself was the first Writing Master in the world.” Defoe insinuates that one way human beings manifest their status as creatures made in God’s image is by taking up their pens to copy. The plot of Defoe’s most famous work, too, hinges on Robinson Crusoe’s decision to begin a diary.

    But Defoe isn’t always so reverent. Elsewhere in the Essay, framing his discussion within the more familiar terms of stadial media history, Defoe comments on how, “since the Art of Print has been invented, the laborious part of Writing is taken off”; “the Printing Art has out-run the Pen.” Here manual writing is work—good riddance to it! Douglas and Trubek, each with a keen eye for the drudgery and ache that longhand entails, would partially concur with this assessment. But Defoe’s etiological fable makes it tricky to agree at the moments when Trubek hard-headedly dismisses handwriting as a “neutral technology” or “fine motor skill.” Appeals to efficiency don’t explain why being caught penless can feel like a blot in one’s copybook.

  4. মাসুদ করিম - ৯ আগস্ট ২০১৭ (১১:১৫ পূর্বাহ্ণ)

    অচেনা পত্রিকাগুলোরও এত প্রচার সংখ্যা!

    সংবাদপত্রের নাম আমার সংবাদ, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সংবাদপত্রের স্টলে গিয়ে এটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংবাদপত্র বিপণনকারী আবদুল হামিদসহ কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলে তারাও নাম শোনেননি বলে জানান।

    অথচ সরকারি তথ্য বলছে, আমার সংবাদের প্রচার সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ২০০। এই সংখ্যার কথা শুনে অনেক পাঠকেরই চোখ কপালে উঠে।

    সংবাদপত্র নিয়ে মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের তালিকায় দেখা যায় আমার সংবাদের এত সংখ্যক প্রচার সংখ্যার তথ্য।

    আমার সংবাদের মতোই গণকণ্ঠের প্রচার সংখ্যা ৫১ হাজার ১০০, ঢাকা প্রতিদিনের ৫০ হাজার, নব চেতনার ৫০ হাজার, দৈনিক বাংলার ৪০ হাজার, খবরের ৪০ হাজার প্রচার সংখ্যার তথ্য আছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এই দপ্তরের হিসাবে।

    এই তালিকারই সবার শীর্ষে বাংলাদেশ প্রতিদিন; তাদের প্রচার সংখ্যা ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০। তারপরে স্থান প্রথম আলোর, প্রচার সংখ্যা ৫ লাখ ১ হাজার ৮০০।

    তালিকায় তৃতীয় স্থানে যৌথভাবে কালের কণ্ঠ ও যুগান্তর; যাদের প্রচার একেবারে এক, একটিও বেশি না, একটিও কম না; ২ লাখ ৯০ হাজার ২০০। ইত্তেফাক জনকণ্ঠেরও প্রচার সংখ্যাও সমান, ২ লাখ ৪০ হাজার।

    আমার সংবাদের প্রচার সংখ্যা নিয়ে যেমন সন্দেহ উঠেছে, তেমনি দুটি পত্রিকার প্রচার সংখ্যার একেবারে এক হওয়াও সন্দেহের উদ্রেক ঘটায়।

    ইংরেজি দৈনিকগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা ডেইলি স্টারের প্রচার সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৪৪ হাজার ৮১৪। এই তালিকায়ও নিউ এইজ ও ডেইলি অবজারভারের প্রচার সংখ্যা একদম এক, ৩৮ হাজার ৫০০।

    তালিকার একেবারে উপর থেকে একেবারে নিচ পর্যন্ত সব পত্রিকার প্রচার সংখ্যা নিয়েই একই রকম গড়বড় রয়েছে বলে অধিদপ্তরেরই একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেন; অথচ এর ভিত্তিতেই পত্রিকাগুলো সরকারি বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকে।

    সংবাদপত্র শিল্পের ভেতরের খবর রাখেন এমন এক ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক সময় শীর্ষে থাকা পুরনো একটি বাংলা দৈনিকের সার্কুলেশন এখন ১৭ হাজার। অথচ ডিএফপির তালিকায় তাদের প্রচার সংখ্যাও আড়াই লাখের কাছাকাছি।”

    দুই লাখের বেশি প্রচার সংখ্যা হিসাবে এই তালিকায় উল্লেখিত আরেকটি দৈনিকের প্রকৃত প্রচার সংখ্যা ২৩ হাজার বলে তিনি জানান।

    ইন্টারনেটের প্রসারের এই সময়ে ছাপানো সংবাদপত্র যখন অবলুপ্তির পথে হাঁটছে বলে বলা হচ্ছে, তখন সরকারি বিজ্ঞাপনদাতা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রকাশিত সংবাদপত্র ও সাময়িকীর সর্বশেষ প্রচার সংখ্যা নিয়ে এই শিল্প সংশ্লিষ্ট অনেকের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।

    এই সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সভাপতি ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এত সংখ্যক সংবাদপত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

    তিনি বলেন, “১৫টি হবে কি না আমার সন্দেহ আছে, ২০টি হতে পারে বড়জোড়। এই যে পাঁচশ কতটা কী আছে খবরের কাগজ, অল বোগাস… কাগজ পায়, এটা পায়, ওটা পায়।”

    ওই তালিকায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ২০৩টি বলা হয়েছে। সারাদেশের মিলিয়ে দৈনিক পত্রিকার এই সংখ্যা ৪৭৯টি। সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈ-মাসিক মিলিয়ে ঢাকা থেকে মোট ৩০৪টি পত্রিকা। তালিকাভুক্ত মোট গণমাধ্যমের সংখ্যা ৬৩৪টি।

    এ সব পত্রিকা বিভিন্ন মূল্যে সরকার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকে। তালিকায় ঢাকার ৪৪টি বাংলা দৈনিক, ১৫টি ইংরেজি দৈনিক, মফস্বলের ৩২টি বাংলা দৈনিক ৮ম বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করেছে বলে দাবি করা হয়।

    সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে প্রকাশিত সংবাদপত্রের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুহিত।

    তালিকায় ‘ডেইলি ইন্ডাস্ট্রি’ নামে একটি পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ৬ হাজার ৯০ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যারা সাংবাদিকদের অষ্টম বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করে বলেও উল্লেখ করা হয়।

    অষ্টম বেতন কাঠামো অনুসরণ করলে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ক শ্রেণীর একটি সংবাদপত্রের একজন স্টাফ রিপোর্টারের পূর্ণকালীন চাকরি নিশ্চিত হওয়ার পর বেতন ও সব ভাতা মিলিয়ে মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা।

    নওরোজ, খবরপত্র, ঢাকার ডাক, বাংলার দূত, সোনালী খবর, প্রথম কথা প্রভৃতি বাংলা দৈনিকও ৮ম বেতন কাঠামো অনুসরণ করে কর্মীদের বেতন দেয় বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়।

    তালিকায় অষ্টম রোয়েদাদ বোর্ড বাস্তবায়ন করেছে উল্লেখ করা একটি দৈনিকে কাজ করা এক সাংবাদিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের অফিস অষ্টম ওয়েজ বোর্ড তো বাস্তবায়ন করেইনি। যে বেতন ধরা হয়েছে, সেটাও অনেকের ক্ষেত্রে বছরের বেশি সময় বাকি পড়ে আছে।”

  5. মাসুদ করিম - ২২ আগস্ট ২০১৭ (৯:২৩ পূর্বাহ্ণ)

    নীল আকাশে নায়করাজ

    নীল আকাশের নিচে আমি/ রাস্তা চলেছি একা/ এই সবুজ শ্যামল মায়ায়/ দৃষ্টি পড়েছে ঢাকা…।’ ষাটের দশক থেকে শুরু করে পরবর্তী চার দশক এ দেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক। তিনি সেলুলয়েডের ফিতায় আবহমান বাঙালির আনন্দ-বেদনা-ভালোবাসার অনন্য রূপকার; অনন্ত আকাশের হাতছানিকে আলিঙ্গন করে জীবনের সব গান শেষ করে নায়করাজ রাজ্জাক নীল আকাশে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেলেন। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

    গতকাল বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে রাজ্জাককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে তিনি প্রাণ হারান। রাজ্জাকের মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এদিকে আজ মঙ্গলবার নায়করাজ রাজ্জাকের প্রতি নাগরিক শ্রদ্ধা জানানোর পর বাদ আসর বনানী কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হবে।

    স্বাধীনতা-পূর্ববতী সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের প্রবল দাপটের সময় অভিনেতা রাজ্জাক অমিত মেধা ও পরিশ্রম নিয়ে স্বকীয় অবস্থান তৈরির পাশাপাশি অতুলনীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একই সঙ্গে এদেশীয় ছবির ভিত্তিমূল তৈরিতে অনন্য ভূমিকা রাখেন। রাজ্জাকের মার্জিত চেহারা, স্মিত হাসি, অসামান্য বাঁকভঙ্গি ষাট-সত্তর দশকে উত্তম কুমারের জনপ্রিয়তার বিপরীতে এ দেশে তাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। রাজ্জাক তার অনবদ্য অভিনয়গুণে ‘নায়করাজ’ অর্জন করেন।

    ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাজ্জাক। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। আট বছর বয়সে মা-বাবাকে হারান।

    গতকাল সন্ধ্যায় রাজ্জাকের মৃত্যু সংবাদ প্রচারের পরপরই দেশের শীর্ষ অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক-প্রযোজক-কলাকুশলী হাসপাতালে ভিড় জমাতে থাকেন। সেখানে সৃষ্টি হয় বেদনাবিধুর দৃশ্যের। পরিচালক আমজাদ হোসেন সমকালকে বলেন, ‘রাজ্জাক এ দেশের চলচ্চিত্রে এক ইতিহাসের নাম। শূন্য থেকে এ দেশের চলচ্চিত্র যাত্রা করেছিল পাকিস্তান আমলে, সেখানে উর্দু ছবির ভিড়ে রাজ্জাকই প্রথম বাংলা ভাষায় এ দেশের ছবিকে সামনে নিয়ে আসেন। তিনি অনন্য এক ব্যক্তিত্ব।’ ববিতা বলেন, ‘রাজ্জাক আমাদের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় নাম। এ দেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় শিল্পী তিনি। আমার সৌভাগ্য, তার মতো অভিনেতার সঙ্গে আমি কাজ করেছি।’ মৌসুমী বলেন, ‘আমরা অভিভাবক হারালাম। নায়করাজ রাজ্জাককে দেখেই অভিনয় শিখেছি। কয়েক প্রজন্মের অভিনয়ে আগ্রহ তৈরি করেছেন তিনি।’

    অভিনয়-জীবন: কলকাতার খানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় তার অভিনয়ে হাতেখড়ি। সে সময় স্কুলে প্রতিবছর সরস্বতী পূজার সময় নাটক মঞ্চস্থ হতো। স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক নাটকে নায়কের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তাকে নির্বাচন করেন। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা ওই নাটকটির নাম ছিল ‘বিদ্রোহী’। এতে তার অভিনয় প্রশংসিত হওয়ায় নাট্যগুরু পীযূষ ঘোষ তার শিশুরঙ্গ সভায় রাজ্জাককে সদস্য করে নেন। তখন থেকেই অভিনয়ের প্রতি রাজ্জাকের আগ্রহ জন্মায়। এর পর কলকাতার ‘রতন লাল বাঙ্গালী’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৫৯ সালে মুম্বাই গিয়ে ভর্তি হন ফিল্মালয়ে। সে সময় কলকাতায় আরও দুটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ হয় তার। এগুলো হলো ‘পংকতিলক’ ও ‘শিলালিপি’। ১৯৬৪ সালে কলকাতায় দাঙ্গা শুরু হয়। ওই পরিস্থিতিতে পরিবারের সবার সঙ্গে আট মাসের ছেলে বাপ্পাকে নিয়ে রাজ্জাক পাড়ি জমান ঢাকায়। ঢাকায় এসে প্রথম অভিনয় করেন টিভি নাটকে। জহিরুল হক, খান জয়নুল, খসরু, নোমান আলী ইমাম, আলতাফ হোসেন, রহমান প্রমুখের পরিচালনায় ৫০টির মতো নাটকে অভিনয় করেন তিনি। এরপর পরিচালক আবদুল জব্বার খানের সহায়তায় যোগ দেন ইকবাল ফিল্মস লিমিটেডে। কামাল আহমেদের ‘উজালা’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। সুচন্দার বিপরীতে ‘বেহুলা’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকার চলচ্চিত্রে রাজ্জাকের রাজসিক অভিষেক। জহির রায়হান পরিচালিত এ ছবি অসামান্য ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়ায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রাজ্জাক তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এরপর সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘আবির্ভাব’ ছবিতে কবরীর বিপরীতে অভিনয় করেন রাজ্জাক; আত্মপ্রকাশ করে অমর রোমান্টিক জুটি ‘রাজ্জাক-কবরী’। এরপর এই জুটি নিয়ে নির্মাতারা অসংখ্য ছবি নির্মাণ করেন। তাই আট বছরে শত ছবির মাইলফলক ছুঁতে তাকে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। ১৯৭২ সালে ‘প্রতিনিধি’ নামে একটি ছবি মুক্তি পায়। এটি ছিল রাজ্জাকের ক্যারিয়ারের ১০১তম চলচ্চিত্র। তখন থেকেই তিনি নায়করাজ।

    বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রযোজক, পরিচালক ও পরিবেশক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন রাজ্জাক।

    ‘হে নায়করাজ, শতচিত্রের নাও আমাদের অভিনন্দন। শতাধিক হোক তোমার আয়ুর সুরভিত চন্দন, সাধনা তোমার নন্দিত আজ আনন্দ সন্ধানে। শিল্পীর সেরা আসনে বসেছ শিল্পরসিক সৃজনের প্রিয় প্রাণে, ওই দুর্লভ সম্মান চিরঅম্লান বন্ধন। তুমি আমাদের গর্ব এবং প্রেরণার প্রিয় উৎস, তোমার স্বপ্ন অঞ্জন চোখে খুঁজি নব উৎসর্গ, অগ্রজ নাও অনুজের ধ্যানে পুষ্পিত স্পন্দন।’ রাজ্জাকের ১০০তম ছবি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আলোকচিত্রসহ ফ্রেমবন্দি এ লেখা উপহার দেন সোহেল রানা, আলমগীর, ফারুক, উজ্জল, বুলবুল আহমেদসহ রাজ্জাকের সহশিল্পীরা। কবরী ছাড়াও শাবানা ও ববিতার সঙ্গে রাজ্জাকের ভিন্ন দুটি জুটি গড়ে ওঠে। বাংলা চলচ্চিত্রে রাজ্জাক-কবরী, রাজ্জাক-শাবানা ও রাজ্জাক-ববিতা জুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

    নায়ক হিসেবে নায়করাজ প্রথম অভিনয় করেন জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ ছবিতে। এতে তার বিপরীতে ছিলেন সুচন্দা। রাজ্জাক অভিনীত সাড়ে তিনশ’ চলচ্চিত্রের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য : ‘আখেরি স্টেশন’, ‘বেহুলা’, ‘কাগজের নৌকা’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘এতটুকু আশা, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘নাচের পুতুল’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘অবুঝ মন’, ‘রংবাজ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘কি যে করি’, ‘গুণ্ডা’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘অশিক্ষিত’, ‘অগি্নশিখা’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘মহানগর’, ‘বড় ভাল লোক ছিল’, ‘নাজমা’, ‘নাদিম রহমান’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘অভিযান’, ‘শুভদা’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘যোগাযোগ’, ‘অন্ধ বিশ্বাস’, ‘বাবা কেন চাকর’ ইত্যাদি। রাজ্জাক সর্বশেষ অভিনয় করেন ছেলে বাপ্পারাজ পরিচালিত ‘কার্তুজ’ ছবিতে।

    তিন যুগেরও বেশি সময় তিনি নায়ক হিসেবে প্রায় তিনশ’র মতো ছবিতে অভিনয় করেন। এরপর পাঁচ বছর অভিনয়ে বিরতি টেনেছিলেন তিনি। এর পেছনেও দুটি কারণ ছিল। প্রথমত, ঢাকার ছবিতে অশ্লীলতা; দ্বিতীয়ত, নায়ক থেকে নিজেকে বাবার চরিত্রে তৈরি করা। এরপর ১৯৯৫ সালে আবার দর্শকের সামনে হাজির হন তিনি।

    প্রযোজনা ও পরিচালনা: ১৯৭২ সালে রাজলক্ষ্মী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ‘রংবাজ’ নামে অ্যাকশন ছবি প্রযোজনা করেন। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম অ্যাকশন ছবি। এ ছবির পর একে একে বেশ কয়েকটি ছবি প্রযোজনা করেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে নিজের প্রযোজনায় ২২তম ছবি ‘কোটি টাকার ফকির’ করেন তিনি। প্রযোজনার পাশাপাশি রাজ্জাক পরিচালনায় আসেন ১৯৭৫ সালে। তার পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘অনন্ত প্রেম’। ১৮টি ছবি পরিচালনা করেন রাজ্জাক। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবি – ‘মৌচোর’, ‘বদনাম’, ‘অভিযান’, ‘সৎভাই’, ‘চাপাডাঙ্গার বউ’ প্রভৃতি।

    প্রেম আর ভালোবাসা: রাজ্জাক জীবনে দুটি প্রেম অনেক মনোযোগ দিয়ে করেছেন। একটুও ভাটা পড়েনি এ প্রেমে। তার প্রথম প্রেম অভিনয় ও দ্বিতীয় প্রেম ছিল লক্ষ্মীর সংসার। শৈশবেই প্রেমে পড়েন অভিনয়ের। এরপর দ্বিতীয় প্রেমে পড়েন ১৯ বছর বয়সে। পরিবারের সম্মতিতে খায়রুন্নেসা লক্ষ্মীর সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬২ সালে বিয়ের পর থেকে আমৃত্যু সংসার গুছিয়ে রাজ্জাকের সব কাজের নীরব সঙ্গী হয়ে থাকেন স্ত্রী লক্ষ্মী। রাজ্জাকের ছয় সন্তান- তিন ছেলে, তিন মেয়ে। এরমধ্যে বড় ছেলে বাপ্পারাজ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ছোট ছেলে সম্রাটও অভিনেতা। বড় মেয়ে ময়না শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন।

    কাজের স্বীকৃতি: পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। প্রথমবার ১৯৭৬ সালে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য। ১৯৭৮ সালে ‘অশিক্ষিত’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান রাজ্জাক। ১৯৮২ সালে ‘বড় ভাল লোক ছিল’, ১৯৮৪ সালে ‘চন্দ্রনাথ’ ও ১৯৮৮ সালে ‘যোগাযোগ’ ছবির জন্য রাজ্জাক সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির (বাচসাস) পুরস্কার পেয়েছেন অনেকবার। রাজ্জাক দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন।

    আজ নাগরিক শ্রদ্ধা ও দাফন

    নায়করাজ রাজ্জাককে নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এর আগে সকালে ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘর থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার দীর্ঘদিনে কর্মস্থল এফডিসিতে। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন চলচ্চিত্র অঙ্গনের শিল্পী, কলাকুশলীসহ সর্বস্তরের মানুষ। সেখানকার শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুর ১২টায় তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে নাগরিক শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গুলশানের আজাদ মসজিদে। বাদ আসর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।

    এর আগে দাফন-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গতকাল রাতে রাজ্জাকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ববিতা, রোজিনা, চম্পা, সুচরিতা, সায়মন সাদিক, চলচ্চিত্র পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, বদরুল আলম খোকনসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

  6. মাসুদ করিম - ২৬ আগস্ট ২০১৭ (১২:২৯ অপরাহ্ণ)

    যা আছে কপিরাইট আইনের খসড়ায়

    আইন ভঙ্গের শাস্তি বাড়ানোর পাশাপাশি লোকজ্ঞান ও লোকসংস্কৃতির অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি যুক্ত করে কপিরাইট আইন সংশোধনের একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে কপিরাইট অফিস।

    সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কপিরাইট বোর্ডের প্রধান মসিউর রহমান জানিয়েছেন, শিগগিরই এই খসড়া ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছেন তারা। আইন মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত পেলেই তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় তোলা হবে।

    ২০০০ সালে প্রণীত কপিরাইট আইন ২০০৫ সালে এক দফা সংশোধনের পর এক যুগ পেরিয়ে যাওয়ায় সরকার সম্প্রতি আইনটি যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেয়।

    সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ যেসব সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই সংশোধিত খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে বলে মসিউর রহমান জানান।

    তিনি বলেন, লোকজ্ঞান ও লোকসংস্কৃতির অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি নতুন করে খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংগীত বিষয়ক কপিরাইটের ক্ষেত্রেও কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

    এছাড়া কপিরাইট ও অন্যান্য অধিকার লঙ্ঘনে পুনঃঅপরাধের শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়। চলচ্চিত্রে কপিরাইট লঙ্ঘনের অপরাধকে আপসযোগ্য করার সুপারিশ রাখা হয়েছে।

    এছাড়া পাইরেসি প্রতিরোধে টাস্কফোর্স গঠন ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিধান যুক্ত করারও প্রস্তাব রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায়।

    সংজ্ঞায় পরিবর্তন

    প্রস্তাবিত এই খসড়া আইনে পরিণত হলে ‘কপিরাইট আইন ২০১০’ এর নাম বদলে হবে ‘কপিরাইট আইন ২০১৭’।

    এ খসড়ায় অর্থনৈতিক অধিকার, নৈতিক অধিকার, রিলেটেড রাইটস, সম্পাদক, পাবলিক ডোমেইন, লোকজ্ঞান, লোকসংস্কৃতি ও কম্পিউটার কর্ম (ডিজিটাল ওয়ার্ক) এর অধিকার সম্পর্কিত সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে নতুন করে।

    সেখানে বলা হয়েছে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ধারাবাহিকভাবে মৌখিক, লিখিত বা অনুরূপভাবে প্রচলিত লোক-মেধা, লোক- তথ্য, লোক-কৃষ্টিকে ‘লোকজ্ঞান’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পাশাপাশি মূর্ত ও বিমূর্ত লোক উপাদান ও লোক অভিব্যক্তিকে ‘লোক সংস্কৃতি’ হিসেবে দেখা হবে। বাংলাদেশে বসবাসকারী সব ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতিও এর অন্তর্ভুক্ত হবে।

    ডিজিটাল সৃষ্টিকর্মের ক্ষেত্রে কপিরাইট আইনে এবার ‘প্রণেতা’ হিসেবে এর সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে। কম্পিউটার প্রোগ্রামের নতুন সংজ্ঞায় এর অন্তর্ভুক্ত তথ্য-উপাত্ত, সোর্স কোড, সারণি, চার্ট, গ্রাফ, শব্দ-ধ্বনি, চিত্র, চলমান চিত্র, নকশা, টেক্সট, নির্দেশনা, সংকেত এবং এ ধরনের প্রোগ্রাম ব্যবহার করার ম্যানুয়ালকেও বোঝাবে।

    কপিরাইট বোর্ডের সদস্য বেসিস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, “ডিজিটাল সৃষ্টিকর্মের ক্ষেত্রে প্রণেতা কে হবেন, এ নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যাই এতদিন ছিল না, এবার সেই ব্যাখ্যায় সফটওয়্যার সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সহজেই সমাধান করতে পারবে বোর্ড।”

    কপিরাইটের স্বত্ব এবং মালিকদের অধিকার

    কপিরাইটের স্বত্ব এবং মালিকদের অধিকার বিষয়ে কম্পিউটার-ডিজিটাল কর্ম, চলচ্চিত্র, সংগীত সম্পর্কে নতুন নির্দেশনা এসেছে এবারের খসড়ায়।

    সেখানে বলা হয়েছে. জাতীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক ও ধর্মীয় সংগীত (হামদ, নাত, গজল, কীর্তন, ক্যারল ইত্যাদি) এর কথা, সুর ও মিউজিকের প্যারোডি ব্যবহার করা যাবে না।

    কম্পিউটার-ডিজিটাল কর্মের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে কোনো চুক্তি ছাড়া এই কর্ম সম্পাদনকারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কপিরাইট দাবি করতে পারবেন না।

    চলচ্চিত্র প্রযোজককে স্বত্বাধিকারী বিবেচনা করে প্রদর্শিত চলচ্চিত্র বা চলচ্চিত্রের কোনো দৃশ্য ও গল্প ব্যবহার করতে হলে তার অনুমতি নিতে হবে।

    কপিরাইট বোর্ড

    ছয় সদস্যের কপিরাইট বোর্ড গঠনের নিয়ম বহাল থাকলেও এবারের খসড়ায় ওই কমিটিতে একজন কপিরাইট বিশেষজ্ঞ রাখার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে।

    সুপারিশ অনুযায়ী, এবারও বোর্ডের প্রধান হবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। আর রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইট হবেন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কেউ। ২০১৬ সাল থেকে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন উপসচিব জাফর রাজা চৌধুরী।

    বোর্ডের বৈঠকে ছয় সদস্য উপস্থিত না থাকলে কোরাম পূর্ণ হবে না বলে যে বিধান এতদিন ধরে চলে আসছে, সংশোধিত আইনের খসড়ায় তা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

    সেখানে বলা হয়েছে, কপিরাইট বোর্ডের সভাপতির উপস্থিতিতে ন্যূনতম দুই জন সদস্য উপস্থিত থাকলেই কোরাম পূর্ণ হবে।

    আইনের ১২ নম্বর ধারায় নতুন উপধারা যুক্ত করে কপিরাইট বোর্ডের ক্ষমতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যে কোনো ক্ষেত্রে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন দেখা গেলে বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে।

    এর আগে বোর্ডকে ফৌজদারি ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হলেও চূড়ান্ত খসড়ায় কপিরাইট অফিসকে দেওয়ানি আদালতের মত কাজ করতে বলা হয়েছে।

    অপরাধ ও শাস্তি

    কপিরাইট বা অন্যান্য অধিকার লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে খসড়ায়।

    চলচ্চিত্র ছাড়া অন্য যে কোনো সৃজনকর্মের কপিরাইট লঙ্ঘন করলে বা করতে সহায়তা করলে আগের মতই ছয় মাস থেকে চার বছরের কারাদণ্ড এবং পঞ্চাশ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়।

    প্রথমবার শাস্তি পাওয়ার পর আবারও আইন ভাঙলে দ্বিতীয় এবং পরবর্তী প্রত্যেক বারের অপরাধের জন্য এক থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং এক লাখ থেকে তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান করার কথা বলা হয়েছে। আগে এই শাস্তি ছিল ছয় মাসের কারাদণ্ড।

    খসড়ায় বলা হয়েছে, কপিরাইট লঙ্ঘনের ঘটনা ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হয়নি বলে আদালতে প্রমাণিত হলে সেক্ষেত্রে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবে।

    আর চলচ্চিত্রের কপিরাইট লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আগের মতই এক থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখতে বলেছে কপিরাইট বোর্ড।

    এছাড়া রেজিস্ট্রারে মিথ্যা তথ্য দেওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য উপস্থাপন, প্রতারিত বা প্রভাবিত করার জন্য মিথ্যা বিবৃতি দেওয়াসহ অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে খসড়ায়।

    কোনো প্রকাশক বিধি লঙ্ঘন করলে খসড়ায় ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে, যা আগে এক হাজার টাকা ছিল। কোনো বই বা সাময়িকীর ক্ষেত্রে কপিরাইট লঙ্ঘন হলে ওই বই বা সাময়িকীর মূল্যের সমপরিমাণ অর্থদণ্ডও আদালত দিতে পারবে।

    খসড়ায় বলা হয়েছে, কপিরাইট অফিস লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে যে কোনো অবৈধ সম্প্রচার বন্ধ করার ক্ষমতা রাখবে। কপিরাইট লঙ্ঘন বন্ধে সরকার ‘উপযুক্ত সংখ্যক’ সদস্য নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবে।

    কপিরাইট সমিতি

    কপিরাইট অফিসে নিবন্ধিত সমিতির মেয়াদ বিদ্যমান আইনের মতই পাঁচ বছর করার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। এই মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে নির্ধারিত ফরমে নির্ধারিত ফিসহ পুনঃনিবন্ধনের আবেদন করতে হবে।

    কোনো নির্দিষ্ট খাতে কপিরাইট সমিতি গঠিত না হলে বা কোনো সমিতির কার্যক্রম স্থগিত থাকলে সরকার নির্ধারিত পদ্ধতিতে কপিরাইট সমিতির কার্যক্রম কপিরাইট অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হইবে।

    কপিরাইট আইনের অংশীজন ও বাংলাদেশের একমাত্র কালেকটিভ ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন (সিএমও) বিএলসিপিএস-এর প্রধান নির্বাহী সুজিত মোস্তফা বলেন, “এই আইনটি সংশোধনের পর আইনটি সঠিকভাবে কার্যকর করা গেলে পাইরেসির হার কমতে শুরু করবে। তখন আমরাও রয়্যালিটি মানির জন্য লড়াই করতে পারব।”

  7. মাসুদ করিম - ৩০ আগস্ট ২০১৭ (৭:০৭ অপরাহ্ণ)

    সংগীতশিল্পী আবদুল জব্বারের চিরবিদায়

    সালাম সালাম হাজার সালাম, জয় বাংলা বাংলার জয়, ওরে নীল দরিয়া, তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়-এর মত অসংখ্য উজ্জয়নী আর আবেগসান্দ্র গানের শিল্পী স্বাধীনতাযুদ্ধের কণ্ঠসৈনিক আবদুল জব্বার আর নেই

    তার ছেলে বাবু জব্বার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে মারা যান তার বাবা। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

    পাঁচ দশকের বেশি সময় বাংলাদেশের গানের ভূবনে আলো ছড়ানো দরাজ কণ্ঠের এই শিল্পীর দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি তিনি হৃদযন্ত্র ও প্রোস্টেটের সমস্যায় ভুগছিলেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

    চলতি বছর মে মাসে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হলে প্রথমে আইসিইউ ও পরে কেবিন ব্লকে স্থানান্তর করা হয়।

    অবস্থার অবনতির খবর পেয়ে গত কয়েক দিন ধরেই শিল্পীর আত্মীয়-স্বজন ও সহকর্মীরা হাসপাতালে ভিড় করছিলেন।বুধবার তার মৃত্যুর খবর এলে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। আরও অনেকের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও হাসপাতালে ছুটে যান।

    স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শিল্পী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
    তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আবদুল জব্বাবের গান মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের তরুণ সমাজকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই শিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

    আবদুল জব্বারের বড় ছেলে মিথুন জব্বার বলেন, “বাবা আসলে অনেক বড় ফাইটার ছিলেন। তিনি বীরের মত লড়াই করতে করতে চলে গেছেন। কাল রাতে যখন শেষ কথা হল, আমি বলেছিলাম- বাবা, তুমি ভেঙে পড়ো না। বাবা বলেছিলেন, ‘আমি এত তাড়াতাড়ি মরব না ব্যাটা’। আমি তাকে অনেকক্ষণ গান শুনিয়েছিলাম রাতে।”

    তথ্যমন্ত্রী হাসনুল হক ইনু বলেন, “আবদুল জব্বারের মত জাতীয় ব্যক্তিত্ব আজ সমস্ত ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে চলে গেলেন। রাষ্ট্র ও সরকারের আহ্বানে পাশে দাঁড়িয়ে তিনি আমৃত্যু জনগণের সেবা করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে শিল্প-সাহিত্যের ধারাকে তিনি সমৃদ্ধ করে গেছেন।”

    আবদুল জব্বারের গান সংকলিত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।

    সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “আবদুল জব্বার ছিলেন আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সৈনিক। যুদ্ধ এবং যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের সংগীত জগতে তার অবদান অনেক। তার চলে যাওয়াটা আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”

    হাসপাতাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবদুল জব্বারের মরদেহ মোহাম্মদপুরের মারকাজুল ইসলাম মসজিদে নেওয়া হয় গোসলের জন্য। এরপর কফিন নেওয়া হবে ভুতের গলিতে তার বাসায়। রাতে মরদেহ রাখা হবে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে।

    সংস্কৃতিমন্ত্রী নূর জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ বেতারে আবদুল জব্বারের জানাজা হবে। এরপর সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বেলা ১১টায় কফিন নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

    জোহরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আবার জানাজা হবে। বিকালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের জন্য নির্ধারিত স্থানে দাফন করা হবে একাত্তরের এই কণ্ঠযোদ্ধাকে।

    ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল জব্বার। মায়ের প্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই সংগীতের সঙ্গে গড়ে ওঠে তার সখ্যতা।
    কুষ্টিয়ায় মহম্মদ ওসমানের কাছে যখন গান শিখতে শুরু করেন, জব্বার তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। পরে মকসেদ আলী সাঁই ও লুৎফেল হক ও কলকাতায় শিবুকুমার চ্যাটার্জীর কাছেও তালিম নেন।

    ১৯৫৭ সালে একটি বিচিত্রানুষ্ঠানে জব্বারের কণ্ঠে নজরুলের গান ‘ঘুমিয়ে আছো বুলবুলি গো মদিনার গুলবাগে’ শুনে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন গীতিকার আজিজুর রহমান। পরের বছর নিয়মিত শিল্পী হিসেবে বেতারে গাইতে শুরু করেন আবদুল জব্বার। সেখানেই নজরে পড়েন সংগীত পরিচালক রবীন ঘোষের।

    ১৯৬২ সালে রবীন ঘোষের সংগীত পরিচালনায় নির্মাতা এহতেশামের সিনেমা ‘নতুন সুর’ দিয়ে আবদুল জব্বারের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের সূচনা। দুই বছর পরে বিটিভিতেও নিয়মিত শুরু করেন তিনি।

    স্বাধীনতার আগে জহির রায়হানের ‘সঙ্গম’, ‘জীবন থেকে নেওয়া’, সুভাষ দত্তের ‘আলিঙ্গন’, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘দীপ নেভে নাই’, ‘ঢেউয়ের পরে ঢেউ’, ‘বিনিময়’, ‘নাচের পুতুল’, ‘ছদ্মবেশী’, ‘সিরাজুদ্দৌলা’, ‘আপনপর’, ‘এতটুকু আশা’র মতো সিনেমায় গান গেয়ে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

    এর মধ্যে ‘এতটুকু আশা’ সিনেমায় আবদুল জব্বারের কণ্ঠের ‘তুমি কি দেখেছো কভু’; পীচ ঢালা পথ সিনেমার ‘পীচঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি’; ঢেউয়ের পরে ঢেউ সিনেমায় ‘সুচরিতা যেওনাকো’ গানগুলো মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে দীর্ঘদিন।

    ষাটের দশকের শেষ দিকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীরা গ্রেপ্তার হওয়ার সময় থেকে প্রতিবাদী গণসংগীতে কণ্ঠ দিতে শুরু করেন আব্দুল জব্বার। ‘তুমি কি দেখেছো বন্ধু আইয়ুবের পরাজয়’, ‘শহরবাসী শোন’, ‘তোমরা যাদের মানুষ বলনা’র মতো গানগুলো গাইতে গাইতেই স্বাধীনতার আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
    ১৯৬৯ সালে ‘বিমূর্ত’ নামের একটি সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন আবদুল জব্বার; গঠন করেন ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী’, যার সভানেত্রী ছিলেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজীব।

    একাত্তরের ২৫ মার্চের পর স্ত্রীকে নিয়ে আগরতলায় চলে যান আব্দুল জব্বার, সেখানে দেখা হয় আপেল মাহমুদের সঙ্গে। পরে তারা মুজীবনগরে পৌঁছে যোগ দেন স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে।

    মুক্তিযুদ্ধের নয়টি মাস ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘অনেক রক্ত দিয়েছি মোরা’, ‘আমি এক বাংলার মুক্তিসেনা’, ‘বাংলার স্বাধীনতা আনলো কে- মুজিব মুজিব’ গানগুলো স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে নতুন সূর্যের জন্য অপেক্ষার প্রেরণা যুগিয়ে গেছে।

    স্বাধীন বাংলাদেশে ‘মানুষের মন’, ‘স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা’, ‘ঝড়ের পাখি’, ‘আলোর মিছিল’, ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘তুফান’, ‘অঙ্গার’, ‘সারেং বৌ’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কলমিলতা’ সিনেমায় আবদুল জব্বারের গাওয়া গানগুলো জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ১৯৭৮ সালের ‘সারেং বৌ’ সিনেমার ‘ও রে নীল দরিয়া’ গানটি তাকে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে যায়।

    আবদুল জব্বারের প্রথম মৌলিক গানের অ্যালবাম ‘কোথায় আমার নীল দরিয়া’ প্রকাশিত হয় জীবনের একেবারে শেষবেলায় এসে, চলতি বছর।যদিও এর কাজ তিনি শুরু করেছিলেন ২০০৮ সালে।

    সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৮০ সালে আবদুল জব্বারকে একুশে পদক এবং ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলার শ্রোতা জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় আসে তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান তিনটি।
    আবদুল জব্বারের প্রথম স্ত্রী শাহীন জব্বার শাহীন একজন গীতিকার, দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া জব্বার মিতা, তৃতীয় স্ত্রী হালিমা জব্বার। দুই ছেলে দুই মেয়ে রেখে গেছেন তিনি।

    এই শিল্পীর হৃদয়ছোঁয়া বহু গানের মধ্যে একটি গান তার মৃত্যুর সময় ফিরে ফিরে আসছে ভক্ত-শ্রোতাদের মনে। সত্তরের দশকে ‘মা’ অ্যালবামের সেই গান সিনেমাতেও ব্যবহার করা হয়েছিল।

    ‘বিদায় দাও গো বন্ধু তোমরা, এবার দাও বিদায়’ শিরোনামের ওই গানে আবদুল জব্বার গেয়েছিলেন- এই বুঝেছি সার, মিছে এ সংসার/ হেথা আপন বলে মানতে পারি, এমন কেহ নাই রে…, এমন কেহ নাই….।”

    যোদ্ধার বিদায়…

    ১৯৭১-এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। তিনি কাঁধে তুলে নিলেন হারমোনিয়াম, কণ্ঠে স্বাধীনতার গান। তার গানের সুরে সাধারণ মানুষ দেশকে স্বাধীন করতে উদ্দীপ্ত হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের এত বছর পরও তার গাওয়া গান এখনো তরুণদের প্রেরণা দেয়। গান গেয়ে উপার্জিত অর্থ তিনি নিঃশর্তে দান করেছেন যুদ্ধাক্রান্ত মানুষের সেবায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিংবদন্তি শিল্পী আবদুল জব্বার পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গুণী এই শিল্পী (ইন্না লিল্লাহি … রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন এ শিল্পী। এদিকে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ বেতারে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ রাখা হবে। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দ্বিতীয় জানাজার পর বিকালে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
    ১৯৩৮ সালে ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্ম আবদুল জব্বারের। ১৯৫৮ সাল থেকে তত্কালীন পাকিস্তান বেতারে গান গাইতে শুরু করেন। ১৯৬২ সালে চলচ্চিত্রে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ পান। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হান পরিচালিত পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সংগম’-এর গানে কণ্ঠ দেন। সংগীতজীবনে ছয় হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন আবদুল জব্বার। এর মধ্যে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’, ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি’, ‘পীচঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি’।

    দীর্ঘ ছয় দশকের সংগীতজীবনে আবদুল জব্বারের সঙ্গে অসংখ্য মানুষের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত যা ছিল অটুট। গানের জগত্ ছাড়িয়ে কবিতার জগতের মানুষের সঙ্গেও আত্মার সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন আবদুল জব্বার। কবি নির্মলেন্দু গুণ, সংগীতশিল্পী গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুবীর নন্দী ও ফাতেমা-তুজ-জোহরা আবদুল জব্বারের মৃত্যুর পর টকিজকে জানিয়েছেন তাদের অনুভূতি—

    বঙ্গবন্ধু আবদুল জব্বারকে বিশেষ পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন
    নির্মলেন্দু গুণ

    আবদুল জব্বার আমার খুব কাছের বন্ধু মানুষ ছিলেন। আমার চেয়ে বয়সে বড়, কিন্তু তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কটা অন্য রকম ছিল। আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পে তার গান ব্যবহূত হয়েছে। সেই গান এখনো মানুষের মুখে মুখে। রাজ্জাকের মৃত্যুর পর যে গানগুলো প্রচারিত হয়েছিল, সেগুলোর বেশির ভাগেরই কণ্ঠ ছিল জব্বারের। আশ্চর্যের ব্যাপার, আবদুল জব্বারের গানে রাজ্জাক সুন্দর ঠোঁট মেলাতে পারতেন। সেই গানগুলোই রাজ্জাককে বিখ্যাত করে তুলেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার গাওয়া গান জনগণকে উজ্জীবিত করেছিল, এখনো করে।
    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবদুল জব্বারকে বিশেষ পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন। তিনিও বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করতেন। আমরা বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক বলি, কিন্তু তিনি বঙ্গবন্ধুকে বাবা বলে ডাকতেন। একজন বড় মাপের শিল্পী হিসেবে তিনি আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। তিনি চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে, দেশ গঠনে বড় অবদান রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের আগেই তার গণসংগীতের চেতনাগুলো জাগ্রত করেছে আমাদের। কিছু দিন আগে রাজ্জাককে হারিয়েছি। আজ (গতকাল) হারিয়েছি সংগীতজগতের এ মানুষটিকে। আবদুল জব্বার ছিলেন সংগীতজগতের রাজা। কয়েক দিনের ব্যবধানে এ রকম দুজন মানুষের প্রস্থান আমাদের জন্য বড় ক্ষতি।

    এই অঞ্চলের গানের জগতকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন
    গাজী মাজহারুল আনোয়ার
    আবদুল জব্বার একজন সাবলীল কণ্ঠশিল্পী। আমাদের এই অঞ্চলের গানের জগেক তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। আবদুল জব্বারকে নিয়ে আমার বহু স্মৃতি, বহু কথা আছে। এক কথায় বলব, যখন থেকে তার গানের শুরু, তখন থেকে আমাদেরও শুরু। শুরু থেকে শেষ অবধি আমরা এক মুহূর্তের জন্য বিচ্ছিন্ন হইনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি আমার বন্ধু। ব্যবহারিক জীবনে একজন ভালো মানুষ। আন্দোলনের বা বিরহের গান যেটার কথাই বলি না কেন, জব্বারের গলাতেই যেন তা বেশি মানানসই ছিল। যে কারণে আমার লেখা ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি তাকে দিয়েই গাইয়েছি। জব্বারের মতো এমন একজন প্রতিভাধর শিল্পী যাকে আমরা বাংলাদেশের গৌরবময় কণ্ঠশিল্পী ভাবতে পারি।

    জব্বার ভাই আপামর মানুষের গায়ক
    সুবীর নন্দী
    জব্বার ভাই এত বড় মাপের শিল্পী যে, তাকে নিয়ে কথা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, গান করেছেন। কণ্ঠযুদ্ধকে তিনি সংগঠিত করেছেন। তিনি যুদ্ধের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি, যিনি গানে গানে মানুষকে একত্রিত করেছেন। তিনি দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে গান করার জন্য তরুণদের উত্সাহিত করতেন। গান শোনানোর জন্য জব্বার ভাই সবসময় উদ্গ্রীব হয়ে থাকতেন। আমরা শিল্পীরা গান করার জন্য যে দরকষাকষি করি, তা তিনি কখনই করেননি। তিনি কখনো টাকা-পয়সা নিয়ে ভাবেননি। কৃষকের কাছেও তার গান সমাদৃত ছিল আবার বোদ্ধাদের কাছে। সর্বজনীন এই গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের বিরল ভাগ্য খুব কম শিল্পীর বেলায় ঘটে। জব্বার ভাই, আপামর মানুষের গায়ক।

    তার গান গাইতে ইচ্ছে করত
    ফাতেমা-তুজ-জোহরা
    আবদুল জব্বার আমাকে স্নেহ করতেন, সম্মান দিতেন। ওনার গলায় কিছু একটা ছিল, যেটা মানুষকে খুব টানত। তার গাওয়া অনেক গান আমার গাইতে ইচ্ছে করত। ’৭১-এর যুদ্ধের পর আমি যখন কলেজে পড়ি, তখন অসংখ্য অনুষ্ঠানে ওনার গাওয়া গান গাইতাম। আমি তার গানের ভক্ত ছিলাম। এই তো কয়েক দিন আগেও যখন তাকে দেখতে গিয়েছি তখন বলেছিলাম, ‘আমি আপনাকে একটা পাউডার কিনে দেব, আপনি মুখে দেবেন। তখন হাসতে হাসতে তিনি তার স্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘দেখো, ফাতেমা বোনটা আমার কী বলে।’

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.