ট্রাইবুনালে আসামি পক্ষের মিথ্যাচার – "১৯৭১ এর যুদ্ধ ছিল পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে"

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে দাঁড়িয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী ফকরুল ইসলাম বললেনঃ '৭১ এর যুদ্ধ ছিল পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে এবং তা আমাদের ভুখণ্ডে হয়েছিল [..]

তিনি জনাব ফকরুল ইসলাম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে আসামি পক্ষের একজন আইনজীবী। গতকাল ট্রাইবুনালে অভিযুক্ত ৪ জনের পক্ষে নিজের বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে তিনি বললেনঃ

ক) ‘৭১ সালের যুদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে।

খ) যদিও আমাদের এই ভুখণ্ডে ঐ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

এরপর তার বক্তব্যকে শাণিত করতে গিয়ে, তিনি উদাহরন টানেন এই বলে যে,

“একাত্তর সালের ১৭ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কোন কথা বলা হয়নি।” দেখুনঃ যুগান্তর ২২ সেপ্টেম্বর ২০১০

তিনি আরো বলেন, “স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ‘যুদ্ধ’ শব্দটি নেই।” দেখুনঃ প্রথম আলো, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১০

ট্রাইবুনালের অনেক খবরের ভিড়ে এই খবরটি ছিল অনেক গুরুত্ববহ। কিন্ত অনেক পত্রিকাই এই রিপোর্টটি করতে পারেনি। জানি না কেন? এটি কি অনেক গুরুত্বপূর্ন একটি সংবাদ নয়? আমরা কি জনাব ফকরুল ইসলামদের কাছ থেকে “স্বাধীনতার ঘোষনা পত্রের” নতুন পাঠ নেবো? তার কাছে আমরা কি জবাব চাইবো না?

সৈকত আচার্য

আইনজীবি। ব্লগার।

৫ comments

  1. মাসুদ করিম - ২২ সেপ্টেম্বর ২০১০ (৬:১৬ অপরাহ্ণ)

    জাতিগঠন আর হল না। এই দেশ এতই বিভক্ত, প্রাণপাত তো কম হল না, কিন্তু কিসের কী, সেই অপ্রয়োজনীয় অথবা ইচ্ছাকৃত ক্ষতি বা ত্রাসের দিকেই আমাদের মনোযোগ। এই করুণ,নির্দয়,অশিক্ষিত ও ভণ্ড সমাজে বসবাস চূড়ান্ত হতাশা ছাড়া কিছুই দিতে পারে না। আপনি প্রগতির পথে চলবেন, তা হবার নয় – তা হবার নয়! এরা আপনাকে টেনে নামাবেই, কখনো কখনো মনে হয়, পৃথিবীতে যত না অন্ধ ইতিহাস তার চেয়ে বেশি অন্ধ ধর্মের কল, এই কল পিষে মারবার কল, আমরা বড় বেশি এর পায়ের তলায় পিষ্ট হচ্ছি।

  2. অবিশ্রুত - ২২ সেপ্টেম্বর ২০১০ (৮:০২ অপরাহ্ণ)

    তো ব্যারিস্টার সাহেব কী বলতে চান? পাক-ভারত যুদ্ধের এইসব যুদ্ধাপরাধীদের এখন আমাদের ভারতের হাতে তুলে দেয়া উচিত, যাতে ভারত তাদের বিচার করতে পারে?
    আসলে তাদের পাক-ভারত যুদ্ধের এই তত্ত্ব তো নতুন নয়, বহু পুরাতন। এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত- কেননা এবার তারা তাদের ইতিহাসগত অবস্থানটি একেবারে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরলেন, ট্রাইব্যুনালের সামনে, আইনের মাঠে। যুদ্ধ নিয়েই একটি আইনী বিতর্ক তোলার ইচ্ছে তাদের, যে বোঝাপড়া সব অর্থেই ১৯৭১-এ সমাধা হয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক হিসেবে প্রচার করে; জিয়াউর রহমান কার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন, আশা করা যায় ব্যারিস্টার ফখরুল পরের বার তা আমাদের জানিয়ে দেবেন।
    যুদ্ধ সম্পর্কেই যেখানে দৃষ্টিভঙ্গি এই, সেখানে যুদ্ধাপরাধী সম্পর্কে ফখরুলের ধারণা যে কী হবে তা বলাই বাহুল্য। তবে আসামী পক্ষের আইনজীবীর এই দৃষ্টিভঙ্গিটা আন্তর্জাতিক আইনী বিশেষজ্ঞদের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেয়া দরকার- যারা যথেষ্ট স্বচ্ছতার মায়াকান্না জুড়েছেন, তারা আশা করি বুঝবেন, এই মায়াকান্না পুরোপুরিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মায়াকান্না।

  3. রায়হান রশিদ - ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ (১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ)

    আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে একটি মহল কেন সবসময় গৃহযুদ্ধ, অথবা পাক-ভারত যুদ্ধ হিসেবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করে এসেছে সেই বিষয়টি উম্মোচন হওয়া দরকার। পাশাপাশি দরকার বিষয়টির চূড়ান্ত তাত্ত্বিক নিষ্পত্তি। সম্প্রতি চালু করা ICSF-Blog এর জন্য এই বিষয়ে একটা লেখা তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে, সেটি অচিরেই এখানে শেয়ার করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। কিছু দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর করা দ্বিতীয় রিটটির মোকাবেলায় সাহায্য করার সময় ICSF এর পক্ষ থেকে বিষয়টির ওপর বিশদ গবেষণার কাজটুকু সম্পন্ন করা হয়েছিল। কৌশলগত কারণে তার সবটুকু এখনই মিডিয়ায় শেয়ার করা সম্ভব না হলেও যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবিদের তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের হয়তো আর বেশীদিন অপেক্ষা করতে হবে না!

  4. বিনয়ভূষণ ধর - ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ (৫:২১ অপরাহ্ণ)

    আমার কাছে এখনো ব্যাপারটা এই ভেবে আশ্চর্য লাগছে যে… একটা আইনের লোক কিভাবে তার মক্কেলের পক্ষ হয়ে আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্হাপনের সময় এই জাতীয় যুক্তি উপস্হাপন করেন!!! সেটা কি রাষ্ট্রদ্রোহীতার পর্যায়ে পড়ে না??? বিচিত্র এই দেশ আর বিচিত্র এই দেশের মানুষ!!!…

  5. সৈকত আচার্য - ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ (৫:০১ অপরাহ্ণ)

    গতকাল রাতে এটিএন বাংলা’র নিয়মিত একটি অনুষ্টানে মানস ঘোষের সাথে সেক্টর কমান্ডার’স ফোরামের সাধারন সম্পাদক জেনারেল হারুন সাহেবের একটি সাক্ষাতকার প্রচারিত হয়। সেখানে তিনি যুদ্ধাপরাধ সহ আন্তর্জাতিক অন্যান্য অপরাধসমূহ নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে সা কা চৌধুরীর বিষয়ে তদন্ত এবং আসামী পক্ষের আইনজীবী ফকরুল ইসলামের চরম ঔদ্ধত্যপূর্ন উক্তি নিয়ে কিছু কথা বলেন। হুবহু আমার মনে নেই, তবে মূল আলোচনাটির প্রশ্নোত্তরের অংশ বিশেষ অনেকটা এরকমঃ

    মানস ঘোষঃ মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্রগ্রামে কুণ্ডেশ্বরীর অধ্যক্ষ নতুন চন্দ্র সিং হত্যাকান্ড একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এবং আলোচিত ঘটনা। গত ৩৯ বছর ধরে, চট্রগ্রামের মানুষের মুখে মুখে এই বহুলালোচিত হত্যকান্ডের কথা শোনা যায়, সাথে সাথে তাঁর হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি যুক্ত সা কা চৌধুরীর নাম ও লোক মুখে শোনা যায়। কিন্ত তিনি আজকে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করলেন, এই ঘটনার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না এবং ‘৭১ এর এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে তিনি দেশ ত্যাগ করেছিলেন। আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখেন?

    জেঃ হারুনঃ দেখুন, দেশবাসি এই ঘটনা জানেন। এটা এত ব্যাপক আলোচিত একটি ঘটনা যে, এখানে লুকানোর কিছু নেই। তারপরেও বলি, এই সা কা চৌধুরীসহ তার বাবার বিরুদ্ধে দেশ স্বাধীনের পরে ‘৭২ সালেই হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এরপর পুলিশি তদন্ত হয়। ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। পুলিশ চার্জশীটও দাখিল করে। কিন্ত ওই সময় এই সা কা পলাতক ছিল। ফলে এটা অস্বীকার করা এত সহজ নয়।

    মানস ঘোষঃ কিন্ত এখন তাহলে কিভাবে তিনি এটা অস্বীকার করবেন?

    জেঃ হারুনঃ আপনি জানেন যে, সারা বাংলাদেশেই তখন দালাল আইন অনুযায়ী এদেশীয় সহযোগী দালালদের বিচার চলছিল। সেটাও একটা বিরাট কর্মযজ্ঞ ছিল বংগবন্ধু’র শাসনামলে। বংগবন্ধু সরকার তখন চরম এক প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করছিল দেশের ভিতর এবং বাইরে থেকে। এইভাবে দু’বছর যেতে না যেতেই ‘৭৫ এর বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটে যায়। ‘৭৫ এর পরের কাহিনী এ দেশবাসি জানেন। স্বাধীনতা বিরোধীরা একেবারে জেঁকে বসে এই বাংলায়। রাষ্ট্র ক্ষমতা কব্জা করে নেয় তারা। সা কা’ রা এই সুযোগে পলাতক অবস্থান থেকে এসে থানা থেকে সেই মামলার নথি, ফাইল-পত্র সব কিছু গায়েব করে ফেলে। ফলে, এখন সেই কারনে তার এই আস্ফালন।

    মানস ঘোষঃ তাহলে, কোন ভাবেই কি এই মামলার নথি-পত্র উদ্বার করা সম্ভব নয়?

    জেঃ হারুনঃ আমার বিশ্বাস সম্ভব। কোন না কোন জায়গাতে এই তথ্যাবলী থাকবেই। সব জায়গা থেকে এই ফাইল গায়েব করা সম্ভব নয় বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি জানি যে, এই মামলায় যে চার্জশীট দেয়া হয়েছিল, তার একটি কপি শহীদ নতুন চন্দ্র সিং এর পরিবারের কাছে রক্ষিত আছে। আমার ধারনা, তদন্তকারী দলের কাছে তারা হয়তো এটা নিশ্চয় দিয়ে থাকবেন।

    মানস ঘোষঃ অন্যদিকে, ট্রাইবুনালের আসামী পক্ষের একজন আইনজীবী জনাব ফকরুল ইসলাম বলছেন, এই যুদ্ধটা ছিল ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যেকার একটি যুদ্ধ। এটা বলার সাহস কিভাবে তিনি পান?

    জেঃ হারুনঃ দেখুন, এর আগেও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে জামাতের এক নেতা বলেছে, তাদের কাছে রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তত আছে। প্রয়োজন হলে তারা সেই ফোর্স কাজে লাগাবেন। কার বিরুদ্ধে এই ফোর্স? আমার দেশের মানুষের বিরুদ্ধে? এই কথায় সরকার কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় নি। ফলে এখন আরেকটা বলার সাহস পাচ্ছে। আমি বলবো, যে আইনজীবী এই কথা বলেছেন, তার এই দেশের প্রতি কোন আনুগত্য নেই। সরকার এই বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়ে তার নাগরিকত্ব বাতিলের ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে। এ জাতীয় বক্তব্যকে হালকাভাবে নেয়ার কোন সু্যোগ নেই। এই সব ঘটনাগুলো, একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কযুক্ত, বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। এই জাতীয় ব্যক্তিকে দেশ থেকে বহিস্কার করা উচিত বলে আমি মনে করি।

    মানস ঘোষঃ কিন্ত আইনমন্ত্রী বলছেন, এই বক্তব্য বিকৃত মস্তিস্কের পরিচয়। এ ব্যাপারে উনার কিছু করার নাই। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটা দেখবেন, এমনটাই বললেন আর কি, তিনি।

    জেঃ হারুনঃ আমি আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে বলবো, এটা একটা দায়িত্ব এড়ানোর মত কথাবার্তা বা মন্তব্য। যদি ওই আইনজীবী বিকৃত মস্তিস্কের হয়ে থাকেন তাহলে তাকে ট্রাইবুনালে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে দেয়া হলো কেন? তাকে আসামী পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করতে দেয়া হলো কেন? একজন বিকৃত মস্তিস্কের মানুষ কি এই দায়িত্বে থাকার কথা?

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.