ফেইসবুকের কল্যাণে গত জানুয়ারির মাঝামাঝি এক কল্পিত কেচ্ছা ছড়িয়ে পড়ে নেটজগতে। সেই কল্পিত কেচ্ছার সারসংক্ষেপ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ‘নিরপেক্ষ’ করবার জন্যে খুব করে শাসিয়েছেন। তখন হিলারী ক্লিনটনের জেরার মুখে বেরিয়ে এসেছে যে, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচারের বর্তমান উদ্যোগ নেহাৎই ভারতের চাপে নেয়া হয়েছে।...

মিথ্যুকদের রান্নাবান্না

ফেইসবুকের কল্যাণে গত জানুয়ারির মাঝামাঝি এক কল্পিত কেচ্ছা ছড়িয়ে পড়ে নেটজগতে। সেই কল্পিত কেচ্ছার সারসংক্ষেপ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ‘নিরপেক্ষ’ করবার জন্যে খুব করে শাসিয়েছেন। তখন হিলারী ক্লিনটনের জেরার মুখে বেরিয়ে এসেছে যে, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচারের বর্তমান উদ্যোগ নেহাৎই ভারতের চাপে নেয়া হয়েছে।
এখন পরিষ্কার, পরিকল্পিতভাবেই ফেইসববুকে ওই কাহিনী ছাড়া হয়েছিল, মানুষ যাতে সত্যি মনে করে সংলাপগুলোও সেভাবে সাজানো হয়েছিল-এবং পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে সেই কাহিনীকে সংবাদ হিসেবে লুফে নিতে দেরি করেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনা। বিএনপির প্রবাসী নেতাকর্মীদের পরিচালিত ওয়েবসাইট প্রবাসীভয়েস ডট কমেও সংবাদটি প্রচার করা হয়েছে ফলাও করে। এরকম কল্পিত সাক্ষাৎকার বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলির প্রিন্ট মিডিয়াতে অহরহ ছাপা হয়, কিন্তু সেটিকে কেউ উদ্ধৃত করে না, সংবাদের উৎস হিসেবে গণ্য করে না, ফলাও করে সেটির ভিত্তিতে কেউ দেশ-বিদেশের পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষণ করতে বসে না। কিন্তু এই গুজবকেচ্ছাকেই ২১ জানুয়ারি নিবন্ধের তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করলেন ঢাকার ইংরেজি সাপ্তাহিক হলিডে’র প্রতিবেদক শহীদুল ইসলাম। বাজারে লিফলেটও এলো একইদিনে। পরদিন ২২ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর দৈনিক সংগ্রাম তাদের পত্রিকার প্রথম পাতায় সংবাদ ছাপলো : হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে গেল/ যুদ্ধাপরাধ ইস্যু ভারতের এজেন্ডা। অবশ্য খানিকটা বিশ্বস্ত থাকার ভাবও দেখানো হলো-লেখা হলো, সরকারিভাবে এ ধরণের কথোপকথনের ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে। তবে এই বাক্যগুলির মধ্যে এমন একটি হালকা ভাব রাখা হলো, পাঠকদের যাতে মনে হয়, ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা তো অস্বীকারই করবে।
এই অপপ্রচার যে কত সংগঠিত উপায়ে করা হয়েছে, তা বোঝা যায় সাপ্তাহিক হলিডে-তে নিবন্ধটি প্রকাশের তারিখ ২১ জানুয়ারিতেই ‘বেরিয়ে পড়েছে থলের বিড়াল : প্রধানমন্ত্রী বলে ফেলেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আসল মদদদাতা কে’ শিরোনামের একটি লিফলেট উদ্ধার করার ঘটনা থেকে। যে-খবর কোনও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আসেনি, দেশের দৈনিক-সাপ্তাহিকে আসেনি, কোনও গ্রহণযোগ্য বিকল্পধারার ব্লগেও ছাপা হয়নি, যে-খবর কল্পিত সাক্ষাৎকার হিসেবে সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেইসবুকে ঘুরপাক খাচ্ছে তাকে ভিত্তি করে সাপ্তাহিক হলিডে যেদিন এশিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের আলামত খুঁজে পেল, সেইদিনই সে গুজব বাজারে ছড়ানোর জন্যে লিফলেট আকারে নিয়ে আসা হলো। কেননা, বিদেশি দূতাবাসগুলি আর বিশেষ কিছু ব্যক্তির কাছে বিনা পয়সায় সাপ্তাহিক হলিডে পাঠানো গেলেও সব মানুষের কাছে তো আর ওভাবে পাঠানো সম্ভব নয়। অতএব যুদ্ধাপরাধীদের পরিচালিত আখড়া জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের নৈতিক দায়িত্ব দাঁড়ালো ‘হাটে ভাঙা হাঁড়ি’র খোলামকুচি লিফলেট দিয়ে মুড়িয়ে সারা দেশের মানুষের চোখেমুখে ছুঁড়তে থাকা। তারা এখন সেই কাজটিই করে চলেছেন।
পাঠক, লক্ষ্য করুন, এই হলো একদল ‘মডারেট’ অথবা ‘ধর্মঅন্তপ্রাণ’ নেতাকর্মীদের কাণ্ড-ফেইসবুকে প্রচারিত একটি কল্পিত সাক্ষাৎকারকে সত্য খবর হিসেবে সংবাদপত্রে ছাপিয়েছে তারা, লিফলেট হিসেবে প্রচার করেছে সারা দেশে। জামায়াত-বিএনপি মনস্ক রিপোর্টাররা যে যে-পত্রিকায় কর্মরত রয়েছেন, সকলেই উঠে-পড়ে চেষ্টা করেছেন সংবাদটি যেহেতু ‘পাবলিক খাবে’ সেহেতু পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশের জন্যে। কেননা তারা জানেন, ব্যক্তিবিশ্বাসে প্রলেপ বা মলম দিতে পারে, এরকম মিথ্যা কথা বিশ্বাস করার মনোস্তত্ব অনেকেরই আছে-তারা তাই সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করেছেন এরকম মানুষদের কাছে মিথ্যা কাহিনীটি গছিয়ে দিতে। মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে মরিয়া এখন জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারই একটি সামান্য উদাহরণ এ ঘটনা। একইভাবে নানা অপপ্রচার ছড়ানো হয়েছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর-যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কেউ যদি এ ধরণের সংবাদে কান না দিয়ে নিজে থেকেই একটু অনুসন্ধান করেন, তা হলেই খুঁজে পাবেন এসব গুজবের মূল উৎস, মূল লক্ষ্য। মিথ্যাবাদীরা এখন তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে এরকম অজস্র মিথ্যা কাহিনী-অন্যদিকে সে-কাহিনী যে মিথ্যা তা জানার পরও প্রচার করে চলেছে আরেক স্তরের ভণ্ডের দল।
নৃশংস ঘটনা ঘটানোর আগে এভাবেই অপপ্রচার চালানো হয়। নৃশংস ঘটনাটিকে মানুষ যাতে ‘স্বাভাবিক পরিণতি’ হিসেবে চিন্তা করে তার ভিত্তি প্রস্তুত করা হয়। বিশ্বে এরকম ঘটনা অসংখ্য। প্রবাদও আছে, প্রথমে একটি বদনাম দাও-তারপর গুলি করে মারো। বাংলাদেশে, সংশয় ও সন্দেহ নেই, এখন প্রস্তুতি চলছে সেই প্রবাদ বাস্তবায়নের ভিত্তি তৈরির কাজ। নৃশংস ঘটনাটি ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে এই মিথ্যাবাদী ও ভণ্ডের দল পরম পরিতৃপ্তির সঙ্গে উচ্চকণ্ঠে আমাদের তো বটেই, তাদের সৃষ্টিকর্তাকেও আরেকটি মিথ্যা কথা শোনাবে : ‘আলহামদুলিল্লাহ, দেশ ভারতের অঙ্গরাজ্য হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আলেমদের ওপর জালিমের অত্যাচারের দিন শেষ হয়েছে।’ তারা বলবে না, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর শাসনামলে বাংলাদেশ ভারতের বাণিজ্যিক উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল; বলবে না, চারদলীয় শাসনের অবসান ঘটার পর দু দেশের বাণিজ্যিক অসমতা কমিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল; বলবে না, নিজামী-মুজাহিদ-কামারুজ্জামান-কাদের-সাঈদী-সাকা চৌধুরীর মতো মানুষ যদি আলেম হয়, তা হলে তাদের জন্যে নতুন একটি বেহেশত করতে হবে সৃষ্টিকর্তাকে-কেননা সাত বেহেশতে ঠাঁই নেয়া কেউই রাজি হবে না এসব কথিত আলেমদের সঙ্গে স্বর্গবাস করতে।
জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের ‘ঐতিহ্য’ সকলেরই জানা আছে-যুগের পর যুগ অপপ্রচার চালিয়ে আসছে তারা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হলে তারা উল্লাস করেছে ‘দুষ্কৃতিকারী নিহত হয়েছে’। তাদের পত্রিকায় দিনের পর দিন ছাপা হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের আস্ফালন। আর সাপ্তাহিক হলিডে, যদিও অনেকে সমীহ করেন এর প্রতিষ্ঠাতা এনায়েতুল্লাহ খানের নামের ভারে, মনে করেন ‘চৈনিক বাম-তার একটি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি আছে’, কিন্তু কার্যত এ পত্রিকাটিও পরোক্ষে বিভিন্ন বিতর্কের ধুম্রজালে প্রকৃত সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে আসছে। ১৯৭২ সালে এনায়েতুল্লাহ খান সাপ্তাহিক হলিডে-তে লিখেছিলেন, ‘সিক্সটি-ফাইভ মিলিয়নস কোলাবরেটরস?’ শীর্ষক এক কলাম-যেটি এখনও স্বাধীনতাবিরোধী ও কথিত জাতীয়তবাদীদের মনোবল যুগিয়ে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে ওই কলাম পড়ে মনে হবে, এনায়েতুল্লাহ খান তাদের পাশে দাড়িয়েছেন-যারা যুদ্ধের সময় দেশের মধ্যেই ছিলেন এবং নানা নিপীড়ন-অত্যাচার সহ্য করেছেন; ‘ভারতফেরতা’রা তাদের বিরুদ্ধে অহেতুক স্বাধীনতাবিরোধিতার অভিযোগ আনছেন বলে তিনি তাদেরই হয়ে প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু লেখাটির আদ্যোপান্ত খুঁটিয়ে পড়লে বুঝতে অসুবিধা হয় না, চৈনিক বাম সম্পাদক চেয়েছেন সদ্য স্বাধীন দেশটির জনগণকে উস্কে দিতে এবং সেই উস্কানির কাজে আত্মগোপনরত দিশেহারা পাকিস্তানিদের সহযোগীদেরও কাছে পেতে। এরকম বিভিন্ন অপপ্রচার ১৯৭২ সাল থেকেই যুদ্ধাপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে এবং এখনও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
সাপ্তাহিক হলিডে-র সাম্প্রতিক নিবন্ধ ‘‘জিও-পলিটিক্স আন্ডার ট্রান্সফরমেশন : ওয়াশিংটন এক্সপ্রেসেস ‘গ্রেভ কনসার্ন’ ওভার ওয়ার ক্রাইম ট্রায়াল’’-এও সূ²ভাবে ওয়াশিংটনের উদ্বেগ প্রকাশের নামে যুদ্ধাপরাধী চক্রের উদ্বেগই প্রকাশ করেছেন নিবন্ধকার শহীদুল ইসলাম। বলেছেন তিনি, সাম্প্রতিক সময়ে বারাক ওবামার দক্ষিণ এশিয় নীতিতে পরিবর্তন এসেছে-চীনসংক্রান্ত পররাষ্ট্রনীতি পাল্টে গেছে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে উত্তর কোরিয়া ও ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে চীন। তা ছাড়া সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে চীনের বাণিজ্যসম্পর্কে অগ্রগতি ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন, তারা মনে করছে এতে তাদের ডলারসঙ্কট আরও তীব্রতর হবে। অতএব যুক্তরাষ্ট্র পড়িমড়ি চীনের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভাগ্য ভালো, শহীদুল ইসলাম ফেইসবুকে প্রচারিত কল্পিত কাহিনীটির পাশাপাশি নিজেও একটি নতুন কাহিনী রচনা করেননি, বলে বসেননি বাংলাদেশের বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এবং এই ভূমিকার অংশ হিসেবেই তিনি সম্প্রতি চীন দেশ সফর করেছেন, আর তাম দাম এতই বেড়ে গেছে যে এখন বাংলাদেশেও চীনের রাষ্ট্রদূত তাকে দাওয়াত করে খাওয়াতে শুরু করেছেন। তবে এসব না বললেও পরিপূরক এক কাহিনীরই ইঙ্গিত রয়েছে এতে : চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়াসংক্রান্ত পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনেছে এবং তাই ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র আর সমর্থন যোগাবে না। আর যুদ্ধাপরাধী বিচারের এজেন্ডা যেহেতু, শহীদুল ইসলামের উদ্ধার করা যুক্তরাষ্ট্রের গোপন দলিলের তথ্যানুযায়ী, ‘ভারতেরই এজেন্ডা’ ছিল, সেহেতু এটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে; আর যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু ‘উদ্বিগ্ন’ সেহেতু যুদ্ধাপরাধী ও তার সমর্থকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই-তাদের সমস্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এখন যুক্তরাষ্ট্রই দূর করবে। তারা এমন তাফালিং শুরু করবে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে আর সম্ভব হবে না এ বিচারকাজ পরিচালনা করা।
কিন্তু, সত্যিই কি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এসেছে? বিশ্বঅর্থনীতিতে চীনের এই উত্থানের ঘটনা আজকের নয়, উত্তর কোরিয়া আর ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই পররাষ্ট্রীয় লুকোচুরিও আজকের নয়। তা ছাড়া এটিও একটি পররাষ্ট্রীয় কৌশল যে বিশ্বের যে-কোনো দুটি দেশের প্রতিনিধিরা যখন মুখোমুখি বসেন, তখন সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলে থাকেন। তৃতীয় বিশ্বের ছোটখাটো দেশের কথা আলাদা, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, চীন অথবা ভারতের মতো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলা মানেই পররাষ্ট্রনীতি পাল্টে যাওয়া নয়। সাপ্তাহিক হলিডে এমন ভাষায় কথা বলছেন যে মনে হচ্ছে তাদের সাংবাদিকরা উইকিলিকস-এর অ্যাসাঞ্জ-এর চেয়েও প্রতিভাধর; অ্যাসাঞ্জ তো কয়েক বছর আগেকার পুরানো দলিলপত্র উদ্ধার করেছে, কিন্তু শহীদুল ইসলামরা যুক্তরাষ্ট্রের একেবারে টাটকা, সর্বসাম্প্রতিকতম পররাষ্ট্রীয় ঘটনাগুলির দলিলও নিজেদের ট্যাকে গুঁজে বসে আছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের অ্যাসাঞ্জ-এর চেয়েও ভয়াবহ প্রতিপক্ষ বলে মনে করছে!
আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে যারা ঠেকিয়ে দিতে চাইছেন, তাদের মূল দুর্বলতাই হলো, তারা এটিকে নিছক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এজেন্ডা হিসেবে দেখাচ্ছেন, কেবল আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা মনে করছেন। বাস্তবতা হলো, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে বছরের পর বছর আন্দোলন করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র বা আওয়ামী লীগের ভূমিকা যাই হোক না কেন, তারা সে দাবি থেকে সরে দাড়াবেন না। আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে, আন্দোলনের দাবিকে বাস্তবায়নের জন্যে একটি রাজনৈতিক পরিকেন্দ্রের প্রয়োজন হয়, কালক্রমে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সেই রাজনৈতিক পরিকেন্দ্রে রয়েছে এবং এ দাবি বাস্তবায়নের নির্বাচনী অঙ্গীকার করার মাধ্যমে তারা আন্দোলনকারীদের নৈকট্যে চলে এসেছে। এই আন্দোলনকারীরা এ-ও জানেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে নছিয়ত অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের মুখে শোভা পায় না। ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে এবং তখন যিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সেই হেনরি কিসিঞ্জার বিশ্বের অনেক বরেণ্য ব্যক্তির মতে, যুদ্ধাপরাধী। এখন আফগানিস্তান ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র যা করছে, সেসবও আইনি বিবেচনাতে যুদ্ধাপরাধÑসেসব দেশের ভুক্তভোগী মানুষের আবেগের কারণে ব্যবহৃত প্রত্যয়গুলি না হয় বাদই দিলাম। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা স্টিফেন র‌্যাপ কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন, তাঁকে সবাই যুদ্ধাপরাধ বিচার বিশেষজ্ঞ ভেবে বসে আছেন-কিন্তু র‌্যাপের নিজেরও জানা আছে, তিনি যে-সব যুদ্ধাপরাধ বিচারের ট্রাইব্যুনালে ছিলেন, সেসব দেশকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী টহল দিয়ে-দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে; ওইসব দেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের পরিপ্রেক্ষিত আর বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের পরিপ্রেক্ষিত এক নয়। আর আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন আন্তর্জাতিক মানসম্মত করার অর্থ এই নয় যে, একটি দেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের আইন আরেকটি দেশের আইনের হুবহু অনুলিপি হবে; আন্তর্জাতিক মানসম্মত হওয়ার অর্থ ইতিমধ্যেই সম্পাদিত আন্তর্জাতিক অপরাধের আইনগুলিকে বিবেচনায় নেয়া, সেগুলির আলোকে যথাসম্ভব আইন প্রয়োগ করা, সেটিও রাষ্ট্রীয় আইন এবং এর প্রয়োগব্যবস্থার সাথে সার্বিক সঙ্গতি রেখে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনটি সংশোধন করে ২০০৯ সালে সেখানে ট্রাইব্যুনালে বিচারের পরও সাজাপ্রাপ্ত অভিযুক্তের সুপ্রিম কোর্টে আপীল করার অধিকার দেয়া হয়েছে, যা পূর্বতন বহু আন্তর্জাতিক বিচারের ক্ষেত্রেও ছিল না (যেমন: ন্যুরেমবার্গ এবং টোকিও)।
এরপরও যারা বাংলাদেশের ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইন’-টিকে (১৯৭৩) ‘আন্তর্জাতিক মানসম্মত’ নয় বলে মনে করেন এবং দেশে-দেশে ঘুরে মায়াকান্না ফাঁদেন, অপপ্রচার করেন, তারা বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তা করে বেড়াচ্ছেন-যুদ্ধাপরাধী বিচারের রাজনীতিকরণ তারাই ঘটাচ্ছেন। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যতই ‘ওয়ার অন টেরর’ করুক, ‘ওয়ার এগেইনস্ট টেরর’ করুক, বিভিন্ন দেশে ‘মডারেট মুসলিম দল’ টিকিয়ে রাখাও তাদের অন্যতম এজেন্ডা-অনেক আগে থেকেই তারা জামায়াতে ইসলামীর মতো রক্ত-হাতে-লেগে-থাকা দলগুলির মাথায় তাদের সহানুভূতির হাত প্রসারিত করে রেখেছে। এরকম এক বিএনপি, এরকম এক জামায়াতে ইসলামী যাতে জনগণের কাছে ‘যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়দাতা সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত না হয়, সেজন্যে যে যুক্তরাষ্ট্র তৎপর থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সরাসরি আরেকটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করে অকূটনৈতিক ভাষায় কথা বলতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে অনেক নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, রাষ্ট্রীয় পটপরিবর্তন করতে হয়েছে, কিন্তু কোথাও তারা এরকম অকূটনৈতিক ভাষায় তাদের আপত্তির কথা জানায়নি, জানায়ও না; আপত্তি থাকলে, দ্বিমত থাকলে তা জানানোর মতো তাদের অনেক কূটনৈতিক পথ আছে- সেরকম পথই তারা ব্যবহার করে থাকে।
এই কল্পিত কেচ্ছা ক্রমশই ডালপালা ছড়াচ্ছে-যার আরেকটি নজির, একটি অনলাইন নিউজসার্ভিসে কলামিস্ট শফিক রেহমানও এই কেচ্ছা নিয়ে মুখ খুলেছেন। সব শিয়ালের এক রা-শফিক রেহমানই বা তার বাইরে যাবেন কেন? তিনি আরও একধাপ এগিয়ে হিলারী ক্লিনটন কী ভাষায় কথা বলেন, কোন ব্যাকরণে কথা বলেন ইত্যাদি দিকগুলি টেনে এনে আমাদের বুঝানোর চেষ্টা করেছেন, এরকম কথোপকথন সত্যিই ঘটেছে। শুরুতেই বলেছি, এই কেচ্ছা যিনি ফেঁদেছেন তিনি অনেক বুদ্ধি খরচ করেই ফেঁদেছেন-শফিক রেহমানের লেখাটি থেকে এখন আমরা বুঝতে পারছি, বুদ্ধিদাতারা কত উচ্চমার্গীয়, কল্পিত গল্পের উৎস কোনখানে। ফেইসবুকের সেই হিডেন ট্রুথ সম্ভবত আমেরিকায় থাকেন, হিলারী ক্লিনটন শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার কত ঘন্টা পরে তিনি ফেইসবুকে তার কেচ্ছা আপলোড করেছেন, তাও শফিক রেহমান হিশেব করে বের করেছেন, অথবা হিশেব তার আগে থেকেই জানা ছিল। যেটা শফিক রেহমান এখনও বুঝাতে পারছেন না, খোদ হিলারী ক্লিনটনের টেলিফোনের কাছে এমন কে বসে ছিল, যার রেকর্ডকৃত কথোপকথন এত দ্রুত প্রকাশ করে দেয়ার ইচ্ছে হলো, কোন আমেরিকানের বাংলাদেশের জন্যে এত মায়া যে সঙ্গে সঙ্গে সেই কথোপকথন ফাঁস করে দিলো। আশা করছি, আগামী লেখায় শফিক রেহমান আমাদের সেই গল্পও শোনাবেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যে কোনও কালেই হবে না, বাংলাদেশের বিভিন্ন নির্বাচন যে আমেরিকা আর ভারত বসে বসে ঠিক করে দেবে তাও আবার প্রমাণ করবেন। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী খুব সহজেই যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সেটি না করে তারা চাইছে, প্রজন্মান্তরে যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ-চেতনা ক্রমপ্রসারিত করতে। আর তারই অংশ হিসেবে একেকবার একেক মিথ্যার জন্ম দিয়ে চলেছে। তারা একেকবেলা একেকরকম মিথ্যার রান্নাবান্না শুরু করেছেন, কিন্তু কোনও রান্নাই যুৎসই হচ্ছে না, কোনও রান্নাই মানুষকে প্রলুব্ধ করতে পারছে না-বরং নিজেদের রান্না করা মিথ্যা যে কত সুস্বাদু তা প্রমাণ করার জন্যে নিজেরাই তা বার বার খাচ্ছেন, তিনবেলার বদলে চার বেলা খাচ্ছেন, খেয়েদেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। মিথ্যার জালে তারা নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছেন, অচল ও অথর্ব হয়ে পড়ছেন।

অবিশ্রুত

সেইসব দিন স্মরণে,- যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাদের সাহসের অভাব ছিল, তারপরও তারা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তারা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকেও বিনয়-ভুষণে সজ্জিত করেছিলেন তারা। আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাকে কী চোখে দেখে... কাঙালের কথা বাসী হলে কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে করে!

৪ comments

  1. মাসুদ করিম - ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ)

    সাপ্তাহিক হলিডে এমন ভাষায় কথা বলছেন যে মনে হচ্ছে তাদের সাংবাদিকরা উইকিলিকস-এর অ্যাসাঞ্জ-এর চেয়েও প্রতিভাধর; অ্যাসাঞ্জ তো কয়েক বছর আগেকার পুরানো দলিলপত্র উদ্ধার করেছে, কিন্তু শহীদুল ইসলামরা যুক্তরাষ্ট্রের একেবারে টাটকা, সর্বসা¤প্রতিকতম পররাষ্ট্রীয় ঘটনাগুলির দলিলও নিজেদের ট্যাকে গুঁজে বসে আছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের অ্যাসাঞ্জ-এর চেয়েও ভয়াবহ প্রতিপক্ষ বলে মনে করছে!

    ওরা আমেরিকার বর্তমানের নয় ভবিষ্যতের সব কাগজপত্রও ফাঁস করে দিতে পারে, এমনই অসীম তাদের ক্ষমতা।

    আর ‘গোলাপ ফুল’কে নিয়ে তো বিশাল সমস্যা। ‘লাভ রোড’এর এই সাংবাদিক তো মনে করেন ইয়ান্কি ও ইংরেজ অভিজাতরা ছাড়া পৃথিবীতে আর দুজন মাত্র ছহি হাদিছের মতো ছহি ইংরেজি জানেন: তাদের একজন তালেয়া ও আরেকজন শফিক। তাই কারো ঠোঁট নাড়া দেখেই ওরা বলে দিতে পারেন ঠিক ঠিক ওই লোকের সংলাপে শব্দ ও টানের কোন কোন বৈশিষ্ট প্রকট হয়ে উঠবে।

  2. মাসুদ করিম - ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১১:২৩ পূর্বাহ্ণ)

    ‘গোলাপ ফুল’এর যখন তুলকালাম খ্যাতি, বন্ধুরা যখন প্রতিনিয়ত ওর প্রশংসা করছে তখনো আমি তার কোনো লেখা পড়িনি — সিদ্ধান্ত নিয়েই পড়িনি — এমনকি সেইসময়টায় গাফফার চৌধুরীর ‘গোলাপ ফুল’ প্রীতি দেখে তার লেখা কলাম পড়াও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এই পোস্টটির গুরুত্ব বিবেচনায় গতকালই আমি প্রথম ‘গোলাপ ফুল’এর কোনো লেখা পড়লাম — বিডিনিউজে এই লিক বিশ্লেষণ পড়ে এটাই শুধু মনে হল, এই লিক সংলাপ প্রণেতা হিসেবে সন্দেহের আঙুল ‘গোলাপ ফুল’এর দিকে তোলা যায়।

    বাংলাদেশের দুজন আবর্জনাকে কাকতালীয় ভাবে ‘গোলাপ’ নাম দিয়ে ডাকি আমি। একজন শফিক রেহমান : ‘গোলাপ ফুল’ আরেকজন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন : ‘গোলাপ হোসেন’। জানি না কেন এমন নামে ডাকি, তবে মনে হয় রেহমানের প্লাস্টিকের গোলাপ মার্কা কাপড়চোপড় থেকে ‘গোলাপ ফুল’ এবং উপায় নাইরে গোলাম হোসেন এই সংলাপ থেকে ‘গোলাপ হোসেন’এর উৎপত্তি।

    • অবিশ্রুত - ১৩ মার্চ ২০১১ (৬:১৪ অপরাহ্ণ)

      আজ ১৩ মার্চ ২০১১-তে দৈনিক আমাদের সময় একটি সংবাদ দিয়েছে। হাসিনা-হিলারীর সেই কথিত টেলিসংলাপের লিফলেট আবারও গোপনে প্রচার করা হচ্ছে।

      হাসিনা-হিলারির টেলিফোন সংলাপের লিফলেট
      মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোনে যে কথাবার্তা বলেছেন তার একটি লিফলেট বের করেছে একটি মহল। ওই লিফলেট গোপনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হচ্ছে। মহাজোটের ক্ষমতাসীন হওয়া, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নোবেল পদকপ্রাপ্ত ড· ইউনূস প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে কী আলাপ করেছেন তা লিফলেটে তুলে ধরা হয়েছে। তবে লিফলেটে দু’জনের আলাপচারিতার যেসব কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

      এই লিফলেট-এর উৎস কোথায়? দেখা যাচ্ছে, সরকারও এবারে প্রায় নীরব। সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কথা বলেন, কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলছেন না। এখন যখন ইউনূস-প্রসঙ্গ আবারও তুঙ্গে, তখন দেখা যাচ্ছে, লিফলেটটি পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
      ইউনূসের যে ভাগ্যবিপর্যয় ঘটল, তার সঙ্গে কি এ লিফলেটের কোনও যোগ আছে? এরকম একটি বিভ্রান্তিকর লিফলেট আসার কারণেই সরকারকে চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের দিকে এগিয়ে যেতে হয়েছে? ড. ইউনূসও এ লিফলেটের সুবিধাভোগী,যেমন সুবিধাভোগী যুদ্ধাপরাধীরা, ২০০৮-এর নির্বাচনে পরাজিতরা। প্রশ্ন হলো, এ তিন শক্তি এখন পরস্পর পরস্পরের কতটুকু নৈকট্যে চলে এসেছে, তাদের মধ্যে কতটুকু সমঝোতা হয়েছে? এ লিফলেট কি সেই নৈকট্য ও সমঝোতার ফসল?

  3. Pingback: যুদ্ধাপরাধী বিচারের রাজনীতি ৩ » International Crimes Strategy Forums

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.