১৪ ফেব্রুয়ারি : তারুণ্যের সেই এক উত্থানদিন

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিই ছিল এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন যেদিন সবগুলি ছাত্র সংগঠন প্রথম একসঙ্গে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী তারুণ্যের প্রথম সংঘবদ্ধ উত্থানদিন। সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক চেতনার এ দিবসটির তাৎপর্য প্রথম ক্ষুণ্ণ করার উদ্যোগ নেন শফিক রেহমান তাঁর যায়যায়দিন সাপ্তাহিক পত্রিকাটির মাধ্যমে। ভ্যালেন্টাইন দিবস-এর প্রচলন ঘটে বাংলাদেশে তার সূত্রে।

১৪ ফেব্রুয়ারি অবশ্যই বিশেষ একটি দিন, — বিশেষ করে তাঁদের কাছে, যাঁরা ১৯৮৩ সালে তরুণ ছিলেন। তখন দেশে সামরিক শাসন ছিল, সামরিক জান্তা ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, — যিনি এখন সুযোগ পেলেই নিজেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় ভাই হিসেবে দাবি করছেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেক ভাঙাগড়ার সঙ্গেই আমরা পরিচিতি। কিন্তু তারপরও আমি মাঝে মাঝে বিস্মিত হই এ কারণে, কেন ১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের রাজনৈতিক ও ছাত্রঅঙ্গনে আজও একটি বিশেষ দিন হয়ে উঠল না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিই ছিল এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন যেদিন সবগুলি ছাত্র সংগঠন প্রথম একসঙ্গে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধেও এরকম সংগঠিত ছাত্র-গণ আন্দোলন ঘটেনি, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এভাবে আন্দোলন চলেনি এবং চিরতরে সামরিক শাসন উৎখাতের জন্যে তরুণরা এত মরিয়াও হয়নি। সত্যি কথা বলতে গেলে, এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী তারুণ্যের প্রথম সংঘবদ্ধ উত্থানদিন। তারুণ্যে মুক্তিযুদ্ধকে না পাওয়ার সুপ্ত অতৃপ্তি কাটিয়ে উঠতে চেয়েছিল এই তারুণ্য সামরিক শাসনবিরোধী এ রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে।

এখন এ দিবসটি রাজনৈতিক অঙ্গনে সাড়ম্বরে দূরে থাক, কোনও কোনও বছর সংবাদপত্রের পাতাতেও চোখে পড়ে না।

সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক চেতনার এ দিবসটির তাৎপর্য প্রথম ক্ষুণ্ণ করার উদ্যোগ নেন শফিক রেহমান তাঁর যায়যায়দিন সাপ্তাহিক পত্রিকাটির মাধ্যমে। ভ্যালেন্টাইন দিবস-এর প্রচলন ঘটে বাংলাদেশে তার সূত্রে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক চেতনার রাজনৈতিক দলগুলি এতই মেরুদণ্ডহীন যে, ১৪ ফেব্রুয়ারিকে রাজনৈতিক চেতনার স্থান থেকে উদ্‌যাপন করার স্থান থেকে সরে আসে তারা এবং এদেরকেও এখন দেখা যায় জাফর, জয়নালের কথা ভুলে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ভালোবাসা দিবসের তাৎপর্য বয়ান করতে।

এরপর যেহেতু রাজনৈতিক কারণে এরশাদ এবং জাতীয় পার্টি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ, খালেদা জিয়া ও বিএনপি সকলের কাছেই প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে, সে-কারণে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের আর সব দিনের মতো ১৪ ফেব্রুয়ারিও মর্যাদা হারিয়ে ফেলে।

এসবই চর্বিত চর্বণ। আপনারা সবাই জানেন। আমিও আমার বক্তব্য বাড়াবো না। আমি খুবই নগণ্য মানুষ, রক্তমাংসের মানুষ, তাই জাফর জয়নালদের এখনও ভুলতে পারিনি, সেলিম দেলোয়ারদের ভুলিনি, তিতাস-তাজুলদের ভুলতে পারিনি, ময়েজউদ্দিনকে ভুলতে পারিনি, বসুনিয়া-শাহজাহান সিরাজদের ভুলতে পারিনি। নূর হোসেনকেও ভুলতে পারিনি। সেই সঙ্গে এও মনে আছে, খুব স্পষ্ট মনে আছে, আমাদের সামনে আমাদের গণতান্ত্রিক নেতারা কী কী দাবিদাওয়া ঘোষণা করেছিলেন, কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

আমি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ থেকে শুরু হয়ে নব্বইয়ের ডিসেম্বর অবধি শহীদ সবাইকে এই দিনটিতে স্মরণ করছি, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে আর্নেস্তো কার্দেনালের একটি কবিতার কথা। সেই কবিতার উচ্চারকের মতো আমিও শুধু হাহাকার করতে পারি এই বলে, কেন ওই সময় আমারও মৃত্যু হলো না সামরিক শাসকের গুলিতে। তা হলে প্রতিদিন এইভাবে গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকতে হতো না।

আমি জানি, কাল সকালে বাংলাদেশের প্রতিটি দৈনিক কাগজের পাতা জুড়ে থাকবে ভ্যালেন্টাইন, থাকবে না সেই সব শহীদদের কারও ছবি যারা আমাদের ভালোবাসার পথ অবারিত করে দেয়ার জন্যে জীবন দিয়েছিল সামরিক জান্তার বুলেটে।

তবু বিজয়ী বীর মুক্তি সেনা, তোমাদের এই ঋণ কোনওদিন শোধ হবে না…

অবিশ্রুত

সেইসব দিন স্মরণে,- যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাদের সাহসের অভাব ছিল, তারপরও তারা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তারা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকেও বিনয়-ভুষণে সজ্জিত করেছিলেন তারা। আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাকে কী চোখে দেখে... কাঙালের কথা বাসী হলে কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে করে!

১৫ comments

  1. নীড় সন্ধানী - ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১০:০৪ পূর্বাহ্ণ)

    এ আমাদের লজ্জা।

  2. দিনমজুর - ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৮:১৩ পূর্বাহ্ণ)

    @অবিশ্রুত
    ভালো লিখেছেন। এ প্রসঙ্গে আরও কিছু দিবসের কথা বলা যেতে পারে। যেমন ধরুন বাবা দিবস, মা দিবস, নারী দিবস ইত্যাদি। এই দিবসগুলো যেভাবে পালিত হয় কিংবা যেভাবে পালন করতে উতসাহিত করা হয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, মিডিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে, যে সব প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেশন এগুলোর স্পন্সর হয় তার মধ্য দিয়েই পেছনের ধান্দা বোঝা যায়। যেমন দেখুন বিশ্ব নারী অধিকার দিবসের অন্যতম স্পন্সর হচ্ছে ইউনিলিভার্সের মতো বহুজাতিক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান যারা ফেয়ার এন্ড লাভলির মতো অসংখ্য পণ্যের প্রমোশনের জন্য ক্রমাগত সারা বছর জুরে “সৌন্দর্যই শক্তি” কিংবা সৌন্দর্য্ই নারীর সব ইত্যাদি মতাদর্শ প্রচার করে। বোঝা শক্ত নয়, এদের কাছে এসব দিবস টিবস কিছু না, স্রেফ পণ্য বিক্রির সুযোগ। আমেরিকার বিভিন্ন দিবসের তালিকা যদি দেখেন দেখবেন প্রায় প্রতিটি দিনকেই এধরণের কর্পোরটগুলো একেকটি দিবসে পরিণত করে চুটিয়ে বাণিজ্য করছে।
    আচ্ছা এরা কি একসময় মে দিবসকে নিয়েও বাণিজ্য করতে শুরু করবে?

  3. রায়হান রশিদ - ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৮:১১ অপরাহ্ণ)

    ১৪ ই ফেব্রুয়ারীতে “সব” মিডিয়াতে কেবল প্রেম-ভালবাসাবাসির নিরন্তর কচলাকচলি দেখতে দেখতে বিবমিষা হচ্ছিল। শফিক রেহমানদের মত মানুষেরা একটা পুরো প্রজন্মের চেতনাকে মুছে দেয়ার শত চেষ্টার পরও কেউ কেউ ঠিকই স্মৃতিভ্রষ্ট হয়না, মনে রেখে দেয়। শহীদদের স্মৃতির প্রতি ভালবাসা জানানোর চেয়ে এই দিনটিতে আর কিইবা বেশী গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে?
    ধন্যবাদ, অবিশ্রুত। আপনি সবার পাপ কিছুটা হলেও মোচন করলেন।

  4. রেজাউল করিম সুমন - ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৬:০৯ পূর্বাহ্ণ)

    স্বৈরতন্ত্র-বিরোধী আন্দোলনের শহীদদের কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
    আপনি লিখেছেন,

    আমি জানি, কাল সকালে বাংলাদেশের প্রতিটি দৈনিক কাগজের পাতা জুড়ে থাকবে ভ্যালেন্টাইন, থাকবে না সেই সব শহীদদের কারও ছবি যারা আমাদের ভালোবাসার পথ অবারিত করে দেয়ার জন্যে জীবন দিয়েছিল সামরিক জান্তার বুলেটে।

    তাঁদের ছবিগুলো এই পোস্টটির সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া যায় না? কারো সংগ্রহে থাকলে এখানে মন্তব্যের সঙ্গে সরবরাহ করার জন্য অনুরোধ রইল।

  5. মাসুদ করিম - ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৬:৩৭ অপরাহ্ণ)

    যিনি এখন সুযোগ পেলেই নিজেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় ভাই হিসেবে দাবি করছেন।

    এরশাদ দাবি করছেন আর হাসিনা কি সেদাবি মেনে নিয়েছেন? এরশাদ ঠিক কোথায় শক্তিশালী, এরশাদের ক্ষমতা ঠিক কোথায়? তার কোনো হদিস দেয়া কি সম্ভব? এরশাদের জাতীয় পার্টি কি এতই গুরুত্বপূর্ণ? কতগুলো সিট তাদের দখলে, সামনে কতগুলো সিটই বা এই পার্টি পাবে? তারপরও হাসিনার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন এরশাদ? যেএরশাদ ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন — সেদিন হাসিনা প্রাণে বেঁচেছিলেন ঠিকই কিন্তু নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন নেতাকর্মী ও সাধারণ পথচারী। জানি না ক্ষমতার রাজনীতির কাছে এইসব এরকবারেই অবান্তর কথা কি না।

    • অবিশ্রুত - ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৮:৫২ অপরাহ্ণ)

      শেখ হাসিনা রাজনৈতিকভাবে যা করছেন, তা থেকে অস্বীকার করার উপায় কি আছে যে তিনি এরশাদের দাবি প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন? এই কিছুদিন আগে, গত ৮ জানুয়ারি তারা দু’জন একসঙ্গে রংপুরে মহাজোটের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। দৈনিক কালের কণ্ঠের সংবাদ অনুযায়ী:

      প্রধানমন্ত্রীর রংপুর সফর উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। এ জনসভায় শেখ হাসিনা ও এরশাদ একসঙ্গে বক্তব্য দেবেন।
      স্থানীয় জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, একই হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা ও এরশাদ ঢাকা থেকে রংপুর যাবেন এবং সেখানকার সব কর্মসূচিতেই তাঁরা দুজন একসঙ্গে অংশ নেবেন। সকাল ১১টায় হেলিকপ্টারটি রংপুর সেনানিবাসে অবতরণ করবে। মহাজোট সরকার গঠনের পর এই প্রথম রংপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এরশাদ একসঙ্গে কর্মসূচিতে যোগদান করছেন।
      সূত্র জানায়, হাসিনা-এরশাদের একসঙ্গে রংপুর সফর নিয়ে রংপুরে সাজসাজ রব বিরাজ করছে। তবে এ সফরকে ঘিরে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

      এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া কি শেখ হাসিনার চোখে পড়েনি? নিশ্চয়ই পড়েছে। কিন্তু তারপরও তিনি এক প্লেনে গেছেন এবং আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভার মঞ্চে এরশাদকে পাশে রেখেছেন। আপনি খুব সঙ্গত প্রশ্নই তুলেছেন, এরশাদের ক্ষমতার উৎস আসলে কোথায়? আগস্টের গ্রেনেড হামলার চেয়ে জানুয়ারির গুলিবর্ষণের দূরত্ব কতখানি?
      রাজনৈতিক দলগুলি যতই বলুক না কেন, দেশ গণতান্ত্রিক পর্বে প্রবেশ করেছে, এরশাদের অবস্থানই বলে দেয়, রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর নীতিনির্ধারকদের অদৃশ্য অথচ সরব উপস্থিতি। তিক্ত হলেও সত্য, গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে বিকাশের চেষ্টার বদলে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন অংশকে সপক্ষে রেখে রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখার খেলা এখনো চলছে এবং সে কারণেই এরশাদ হাসিনার কাছে এখনও গুরুত্বপূর্ণ।
      আর ওনাদের না হয় লজ্জা নেই, ওনারা ক্ষমতার রাজনীতি করেন! কিন্তু আমরা তো আমজনতা, আমরা কি এইদিনটিকে বিশেষভাবে মনেও করতে পারি না? হয়তো কণ্ঠস্বর আগের মতো উচ্চকিত হয় না, কিন্তু তারপরও কি পারি না, একটু পা চালিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তাদের কথা মনে করতে? মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে আমরাও কি এতই নির্লজ্জ হয়ে গেলাম যে, সব ভুলে ডুগডুগি বাজাবো?

      • মাসুদ করিম - ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১২:০৫ পূর্বাহ্ণ)

        আচ্ছা, এই আলোচনায় হাসিনাপুত্র ও রংপুরের ছেলে জয় কি প্রাসঙ্গিক? তিনি কি এরশাদকে রংপুরের শ্রেষ্ঠ সন্তান মনে করেন? আছে কোনো তথ্য এবিষয়ে? বিশেষত হাসিনার এই সএরশাদ হেলিকপ্টার ভ্রমণের স্টোরির মতো আর কোনো স্টোরি কি আছে জয়ের সাথে?

        • অবিশ্রুত - ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৫:৩২ অপরাহ্ণ)

          জয়ের প্রসঙ্গ আপনি কেন আনছেন, ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে এরশাদ-জয় সংক্রান্ত কোনও ঘটনা আমার চোখে পড়েনি। পর্দার আড়ালে অনেক কিছু হয়, কিন্তু আড়ালে হলেও তা নিয়ে কথাবার্তা ছড়ায়-সেরকম কোনও কথাও অন্তত আমি শুনিনি। তবে লন্ডনের ‘জাতীয়তাবাদী’-মৌলবাদপন্থী একটি সাপ্তাহিক ইউরোবাংলায় একবার সুন্দর একটি গল্প বেরিয়েছিল-জয়কে নাকি ভারতের কোন মন্ত্রীর বিশেষ চিঠি নিয়ে ত্বরিৎগতিতে ছদ্দবেশে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কাছে যেতে হয়েছিল! অদ্ভূত এক গল্প-জয় ছিলেন শিখযাত্রীর বেশে, যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে! কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনও এক কর্মকর্তা নাকি তাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে যাওয়ায় বিষয়টি সকলের চোখে ধরা পড়ে গেছে! জয় যে-চিঠিটি বহন করে নিয়ে গেছে, তাতে বাংলাদেশের ‘স্বার্থবিরোধী’ বিভিন্ন নির্দেশ রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল ওই গল্পটিতে। শুনেছি, ঢাকায়ও এই রিপোর্টের সুবাদে, কোনও কোনও পত্রিকায় গল্পটি ছাপা হয়েছিল। দেখলেন তো, কত বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট করতে পারে আমাদের জাতীয়তাবাদী মৌলবাদী সাংবাদিক ভাইরা!’লন্ডনের একটি সাপ্তাহিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে…’-বুঝুন, বাংলাদেশে কত বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারে তা হলে ওই গল্পটি! জয় কোনও লবিং-এ যুক্ত আছে কি না, সেটি অন্য ব্যাপার-কিন্তু গল্পটি কত সুস্বাদু দেখুন-জয়কে বাংলাদেশে ছদ্দবেশে যেতে হবে কেন? তাও শিখের বেশে-যে বেশ ধরলে বরং লোকজন তার দিকে ভালো করে তাকাবে? আর যদি এত গোপনীয়তাই থাকে, তা হলে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা অভ্যর্থনা জানাতে যাবে কেন? বরং এমন যদি হয়েই থাকে, তা হলে মায়ের সঙ্গে ছেলে দেখা করতে আসছে, এই প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েই তো জয়ের পক্ষে বাংলাদেশে যাওয়া সম্ভব। গাঁজা মারারও একটা সীমা থাকে, কিন্তু জাতীয়তাবাদী-মৌলবাদীরা সীমানা পেরুতে পারেন, এতই উদ্যমী, এতই সৃজনশীল! সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যাপার হলো, এই আষাঢ়ে গল্প বিশ্বাস করার মতো লোকজনও আছে আমাদের দেশে।
          যাই হোক, আমি বোধহয় মূল প্রসঙ্গ থেকে দূরে সরে এসেছি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘জয়’ ক্রমশ একটি ‘ঘটনা’ হয়ে উঠছে কি না, হলে কী প্রক্রিয়ায় হয়ে উঠছে তা অবশ্যই পর্যবেক্ষণের ব্যাপার। কেননা, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বাইরে থাকার সময়, পত্রিকার খবর অনুযায়ী, জয় শেখ হাসিনার একজন উপদেষ্টা ছিলেন; যিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় এরকম একটি দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকছেন-এটি বিশ্বাস করা একটু কঠিনই বটে।

          • মাসুদ করিম - ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৫:৪৫ অপরাহ্ণ)

            আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বাইরে থাকার সময়, পত্রিকার খবর অনুযায়ী, জয় শেখ হাসিনার একজন উপদেষ্টা ছিলেন; যিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় এরকম একটি দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকছেন-এটি বিশ্বাস করা একটু কঠিনই বটে।

            হ্যাঁ, আমিও একই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নটি করেছি। তবে তার সাথে যেগালগল্পের সমাহার পেলাম তাতে ‘বিশ্বাসী’দের অসীম ক্ষমতায় আতঙ্কিত হয়েছি। তবে বিশ্বাসীদের এই বিশ্বাসের গল্পে গাঁজাখোররা আতঙ্কিত হবেন — আমার গাঁজা নেয়ার অভ্যাস আছে, তবে খোর নই — আর বহু খোরের সাথে উঠিবসি, এরকম গালগল্প শুনলে তারা আমাকে নিশ্চিত প্রশ্ন করবে, আমি নামাজ কালাম পড়তে শুরু করেছি কি না।

  6. মোহাম্মদ মুনিম - ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১০:০৭ অপরাহ্ণ)

    ১৪ই ফেব্রুয়ারী গুগল সার্চ দিয়ে দেখা যাচ্ছে ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসাবে ব্লগোস্ফেয়ারে ভালই সাড়া জাগিয়েছে। সচলায়তন এই নিয়ে ব্যানার পর্যন্ত করেছে। অবশ্য প্রথম আলোতে ১৪ই ফেব্রুয়ারী নিয়ে কোন লেখা দেখিনি। সচলায়তনের একটি পোস্টে ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী অনেকগুলো ছবি দেয়া হয়েছে। একটা ছবিতে আছে গুলিতে নিহত এক ছাত্রের লাশ, চারপাশে তাঁর বন্ধুরা। সেই বন্ধুদের বয়স এখন পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই করছে। প্রায় তিরিশ বছর আগের এই রক্তক্ষয়ী দিনের কথা তাঁদেরই কি মনে পড়ে?

  7. অবিশ্রুত - ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১০:৩০ অপরাহ্ণ)

    রাজনৈতিক অঙ্গনে সামরিক জান্তা এরশাদকে আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনা এবং মহাজোটভুক্ত বাম সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে নানাভাবে স্বীকৃতি দেয়া হলেও এত অল্পে তুষ্ট নন এরশাদ। ঠিক দিনটিতেই (১৪ ফেব্রুয়ারি, স্বৈরতন্ত্রবিরোধী গণতন্ত্র দিবস) মুখ খুলেছেন তিনি-বলছেন,আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করা ভুল ছিল।

    মহাজোট সরকার দুই বছর পার করার পর শরিক জাতীয় পার্টির প্রধান মনে করেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করা ভুল হয়েছে। এখন সেই ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে।
    সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, “জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মানুষ বলে গণ্য করে না আওয়ামী লীগ। মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করার পর আওয়ামী লীগ যেসব ওয়াদা করেছিলো তার একটিরও প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি না।”
    সোমবার দুপুরে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা সদরের শাপলা চত্বরে উপজেলা জাতীয় পার্টির আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
    এরশাদ মনে করেন, আওয়ামী লীগের ‘একলা চলো’ নীতি আর মহাজোটকে অবমূল্যায়ন করার কারণে স¤প্রতি হয়ে যাওয়া পৌর নির্বাচনের ফল আশানুুরূপ হয়নি। এমনকি হবিগঞ্জ উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন।
    জাতীয় পার্টির সহায়তা ছাড়া কোনো নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন আর কোনো ষড়যন্ত্র করে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে হারানো যাবে না।
    জাপা প্রধান বলেন, সারা দেশ এখন জমি দখল, চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ‘লীলাভূমিতে’ পরিণত হয়েছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। এ অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। টেন্ডারবাজ, দলবাজ আর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।
    এরশাদের বক্তৃতার সময় নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টিকে মহাজোট থেকে বের হয়ে আসার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সে­াগান দেয়।
    উপজেলা জাপা সভাপতি এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পথসভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা প্রমুখ।
    এর আগে এরশাদ মিঠাপুকুর কলেজে তার মা মজিদা খাতুনের নামে করা ছাত্রাবাস পরিদর্শন করেন।

    জামায়াতে ইসলামী নামের সাপটিকে দুধকলা দিয়ে পুষে বড় করেছে বিএনপি, আর জাতীয় পার্টি নামের সাপটিকে দুধকলা দিয়ে বড় করছে আওয়ামী লীগ। মৌলবাদ আর স্বৈরবাদ কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না আমাদের।

    • মাসুদ করিম - ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ)

      জামায়াতে ইসলামী নামের সাপটিকে দুধকলা দিয়ে পুষে বড় করেছে বিএনপি, আর জাতীয় পার্টি নামের সাপটিকে দুধকলা দিয়ে বড় করছে আওয়ামী লীগ। মৌলবাদ আর স্বৈরবাদ কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না আমাদের।

      হ্যাঁ, এই ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক অবস্থানের মধ্যেই আমাদের দিন রাত ছুটছে। আমরা ছুটছি। খুব বিরল তারুণ্যের উত্থান দিনকে স্মরণ করছি। ক্ষমতার অনেক অনেক দূরে বসে ভাবছি, মানুষ চারিদিকে বলছে — যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবণ — সেরকমই কি হতে হয়! সত্যিই জানি না। আমরা তো গোল হয়ে শুধু সাপ খেলা দেখছি।

  8. অবিশ্রুত - ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৫:৩৫ অপরাহ্ণ)

    লঙ্কায় তো কেবল রাবণই যায় না-রামও যায়; কিন্তু আমরা রাজনীতিবিমুখ বলেই বার বার রাবণের কথা স্মরণ করি এবং নিরাপদ দূরত্বে থাকি, রামকে নিয়ে লঙ্কাযাত্রায় আমাদেরই প্রচণ্ড অনীহা!

  9. অবিশ্রুত - ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (১:২৪ পূর্বাহ্ণ)

    বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে এরশাদ না কি প্রথম বইমেলাতে এসেছিলেন। আর এবার এলেন মহাসমারোহে, একেবারে ঠিক সেই দিনটিতে-যেদিন জাফর, জয়নালরা শহীদ হয়েছিলেন!

    ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে বইমেলায় এসেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

    বইমেলায় এরশাদ প্রবেশ করলেই তরুণ-তরুণীদের কবলে পড়েন।বিশেষ করে এরশাদের অটোগ্রাফ নিতে ও তার সঙ্গে ছবি তুলতে মেলায় দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেক তরুণীই তার সঙ্গে ছবি তুলে রাখেন। এরশাদও ছবি তোলার সুযোগ দিয়েছেন আগ্রহীদের।

    বইমেলা প্রসঙ্গে এরশাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ বইমেলায় তারুণ্যের উপস্থিতি আমাকে উচ্ছসিত করেছে।’

    তিনি বলেন, ’মেলা ভালো লাগে। বইকে ভালোবাসি, কবিতাকে ভালোবাসি… তাই প্রতি বছরই মেলায় আসি।’

    ১৪ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় আসার বিশেষ কোনও কারণ আছে কি-না, এ প্রশ্নের উত্তরে এরশাদ হেসে বলেন, ‘আসলে তা নয়।আমি মূলত দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে মেলায় এসেছি।’

    মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন, ‘আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে’।

  10. অদিতি কবির - ৩০ মার্চ ২০১২ (৩:১৬ অপরাহ্ণ)

    ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসায় থাকি তখন। সকাল থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান শুনছি- মজিদ খানের শিক্ষানীতি মানি না, মানব না! ছাদে উঠে দেখি শামসুন্নাহার হল আর টিএসসির মাঝখানের রাস্তায় কিছু দেখা যায় না কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায়। আম্মা অফিস থেকে চলে এল। খবর পেলাম ৫ জন মারা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভবনের কাঁচ নাকি অবশিষ্ট নেই! বড়খালার ছেলে রাহুল ভাইয়া বের হল মজা দেখার জন্য, তাকে খুঁজতে গেল সুমন ভাইয়া(ইশতিয়াক সোবহান)। রাহুল ভাইয়া ফিরে এলেও সুমন ভাইয়ার দেখা নেই। কি দুশ্চিন্তা সবার। সুমন ভাইয়া অবশ্য শেষ বিকালে ফিরে এসেছিল।

    দেশকে ভালবেসে জীবন দেয়া মানে আমি যাকে ভালবাসি কালকে থেকে আর তাকে আর দেখব না। হায়রে ভ্যালেন্টাইন দিবস!

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.