টেলিভিশনে ওই দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন,- প্রবীণ রাজনীতিক আবদুল জলিল সংসদে বক্তৃতা দিতে গিয়ে কাঁদছেন। আমার টিভি দেখা হয় না, আমি শুনেছি এবং সংবাদ পড়েছি (বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর, ২৯ জানুয়ারি)। কাঁদতে কাঁদতে তিনি তার সদ্য কারানির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন, ডিজিএফআই-এর দোর্দণ্ড প্রতাপ সম্পর্কে আর তাঁর অবর্ণনীয় মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে কিছু কথা বলেছেন। এসব ঘটনা এমন যে তা কখনও পুরোপুরি বর্ণনা করা যায় না, শ্রোতাদের খানিকটা অনুমানও করে নিতে হয়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, আবদুল জলিল যখন কাঁদছিলেন তখন তাঁকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যে কোনও দলীয় নেতা এগিয়ে যাননি, সহানুভূতির কথা শোনাননি। স্পীকারের বাম দিকের আসন থেকে উঠে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন। বোধহয় আওয়ামী লীগ সাংসদদের কেউই ঝুঁকি নিতে চাননি।

ঝুঁকি,- হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি! যদিও শেখ হাসিনা নিজে ওই সময় ছিলেন না সংসদে।

সকলের কাছেই আমাদের অনুরোধ থাকবে, এ ঘটনাটি বিবেচনা করে দেখবার। সংসদীয় গণতন্ত্রে মন্ত্রিসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাই মুখ্য; সেদিক থেকে খুবই স্বাভাবিক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এমন ব্যক্তিদের মন্ত্রিসভায় রাখবেন। এ ব্যাপারে আমরা আপাতত এটুকুই বলতে পারি, শেখ হাসিনা তাঁর অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ, পরীক্ষিত, অনুগত প্রবীণ ও তরুণদের বেছে নিয়েছেন তাঁর মন্ত্রিপরিষদ গঠন করতে গিয়ে। এখনও অনেকে পাইপলাইনে, অপেক্ষা করছেন মন্ত্রিত্বের জন্যে। আবদুল জলিল অবশ্য সেই তালিকায় নেই, সেটা তিনি নিজেও জানেন। মজার ব্যাপার হলো, তিনি যে-সময়ে ডিজিএফআই-এর কর্মসীমানা নির্ধারণ করে দেয়ার কথা বলেছেন, সে-সময়েই সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল মইন উদ্দিন আহমেদ একটা মোটাসোটা বই লিখে তাঁর সামরিক জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন। প্রজাতন্ত্রের একজন সরকারি সামরিক কর্মকর্তা তাঁর চাকরি জীবনের স্পর্শকাতর বিষয়গুলি নিয়ে চাকরিরত অবস্থাতেই জনসমক্ষে লেখালেখি করতে পারেন কি না, সে প্রশ্নের উত্তর জানা আছে আমাদের। তাই রাজনীতিতে ডিজিএফআই-এর হস্তক্ষেপ বন্ধ করার জন্যে আবদুল জলিলের ওই কান্নাসিক্ত দাবি আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে যে পূরণ করা সম্ভব হবে না, সেটিও আমরা বুঝতে পারি।

আওয়ামী লীগ সরকার এর মধ্যে কৃষকদের জন্যে ইতিবাচক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্যেও চেষ্টা চালাচ্ছে, সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে একটি প্রস্তাবও গত ২৯ জানুয়ারি বৃহষ্পতিবার সংসদে অনুমোদন পেয়েছে এবং এ ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ নিতে চলেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন কয়েকদিন আগে বলেছেন – ‘যুদ্ধাপরাধীরা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে’ এবং ‘বর্তমান সরকারের মেয়াদকালের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পূর্ণ করা হবে’ (ইত্তেফাক, ৩১ জানুয়ারি)। কিন্তু এর পাশাপাশি এমন অনেক দৃষ্টান্তও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তৈরি করেছেন, যা মানুষকে শঙ্কিত করে তুলেছে।

একটু পেছন ফিরে তাকানো যাক। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে কোনও কোনও পর্যবেক্ষক মন্তব্য করেছিলেন, ‘সামনে যে-দলই সরকার গঠন করুক, তাকে বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদের তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে র প্রণীত কিছু এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারই মাঠ পর্যায়ের কাজ সম্পূর্ণ করেছেন। প্রথমে তারা এ কাজটির জন্যে বেছে নিয়েছিলেন ড. ইউনূস ও কোরেশীর মতো ব্যক্তিদের। কিন্তু তাতে কাজ হবে না বুঝতে পেরে অ্যাবাউট টার্ন করেছেন হাসিনা ও খালেদার কাছে।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেই মাঠ পর্যায়ের কাজ করতে তখন কি ডিজিএফআই কি সুশীল সমাজ উভয়েই পাল্লা দিয়েছিল। তার পরের কথাও জানা আমাদের। হাসিনা ও খালেদার, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ঘোড়দৌড়ে জয় হয়েছে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা আগে থেকেই বলে আসছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যক্রমকে তারা বৈধতা দেবেন। এখন তাদের বৈধতা দেয়ার পালা, এখন তাদের বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অপ্রকাশিত সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার পালা। কী আছে এরকম সব পরিকল্পনার মধ্যে? মনে হয় না, গলা তুলে বলার প্রয়োজন আছে। আমাদের সকলের চোখ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুর ওপর নিবদ্ধ, মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি তখন তৎপর হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের সঙ্গে “টিফা” চুক্তি সম্পাদন করতে।

সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী দেশগুলি আগেই বুর্জোয়া গণতন্ত্রের ধারণাকে অনেক কাটছাট করে ফেলেছে এবং এ কারণে ধর্মীয় রাজনীতি তাদের কাছে আর আপত্তিকর মনে হয় না। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কখনও তাই আপত্তিকর মনে হয় না। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশে সফররত মার্কিন কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা এবং মার্কিন কূটনীতিকরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-র পর যে দলটির সঙ্গে বৈঠক করে সে দলটি হলো জামায়াতে ইসলামীঁ। বিশ্বের দেশে দেশে মৌলবাদী দলগুলির উত্থানের পেছনে, তালেবান থেকে আল কায়েদা উত্থানের পেছনে এই দেশটির ভূমিকা কারও অজানা নেই।

কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যু চাঙ্গা হয়ে ওঠার পর জামায়াতে ইসলামীর এরকম নাজুক পরিস্থিতিতে তাদের পুরানো মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি না বলছে, ‘এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার!’ অন্য দেশের ব্যাপারে নাক গলাতে ওস্তাদ যুক্তরাষ্ট্রের এই বক্তব্যের চেয়ে সেরা কৌতূক আর কী হতে পারে! আর শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন, জামায়াতে ইসলামীর আরেক মিত্র সৌদী আরবকেও কোনও রকম আওয়াজ দিতে দেখা যাচ্ছে না; বরং সৌদী রাষ্ট্রদূত বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর (আমাদের সময়, ২৮ জানুয়ারি) বিএনপির মুখপাত্র মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, বিএনপিও চায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হোক! বেগম জিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র শমসের মোবিন চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, সৌদী রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে নাকি খালেদা জিয়ার জনশক্তি রপ্তানী নিয়ে কথা হয়েছে! দেশের এইরকম এক পরিস্থিতিতে সৌদী রাষ্ট্রদূত যে কেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দ্বি-রাষ্ট্রীয় স্বার্থ তথা জনশক্তি রপ্তানী নিয়ে কথা বলতে গেছেন, তা আমাদের পক্ষে বোঝা খুবই কঠিন। তবে দেখা যাচ্ছে তার পরপরই বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিকে আমরা নীতিগতভাবে সমর্থন করি। তবে রাজনৈতিকভাবে নয়, সত্যিকার অর্থে বিচার করা হলে আমরা এর বিরুদ্ধে নই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এখন কারো আপত্তি থাকারও কথা নয়। . . . রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ বিচার যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মোট কথা বিচার কী প্রক্রিয়ায় এবং কী পদ্ধতিতে হবে, তা আগে জানতে হবে। তারপর এ ব্যাপারে সঠিক মন্তব্য করা যাবে (ইত্তেফাক, ৩১ জানুয়ারি)।’ লক্ষ্য করুন, দেলোয়ার হোসেন বলছেন, ‘এখন কারো আপত্তি থাকার কথা নয়।’ তো গত কয়েকমাসের মধ্যে অবস্থার কী এমন পরিবর্তন ঘটেছে যে বিএনপি-র আর আপত্তি নেই? আবার বিচার প্রক্রিয়ার কথাই বা তারা বার বার জোর দিয়ে বলছে কেন? বিএনপি-র এই অবস্থান জামায়াতে ইসলামীকে হতভম্ব করেছে। অবশ্য তার আগে থেকেই জামায়াতে ইসলামীর গলার স্বর করুণ হয়ে আসছিলো। যেমন, নিজামী বলছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিরোধিতা করা জামায়াতের রাজনৈতিক ভুল ছিল’, আর এখন একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতের অবস্থান নিয়ে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে’। তবে জামায়াতে ইসলামী সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী হতভম্ব হয়ে গেলেও জোরেশোরে বলছে যে, ‘বিচারের জন্যে তারা প্রস্তুত এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিচার করা হোক।’ এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম তো বলা চলে দৈনিকই কোনও না কোনও প্রতিবেদন বা কলাম ছাপিয়ে চলেছে। একই সময়ে দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে জাতিসংঘের সাহায্য চাইছেন এবং একই ঢাক পেটাচ্ছেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা হারুনর রশিদ।

তা হলে কি আমাদের ধরে নিতে হবে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে ‘যুদ্ধাপরাধী গ্রহণযোগ্যকরণ প্রকল্প’ হাতে নিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ আসলে সেটিকেই বাস্তবায়ন করতে চলেছে জাতিসংঘের মধ্যস্থতাতে? কথিত ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ে তোলার জন্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সুশীল সমাজ যে বিরোধনিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তারই উপসংহার টানতে চলেছে আওয়ামী লীগ সরকার এ উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে?

আর এসব যখন ঘটছে, তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছেন এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে নাকি টিফাকে বেশ লাভজনক মনে হচ্ছে আজকাল!

আমরা জানি না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে, তার মন্ত্রিপরিষদের কাছে টিফা চুক্তি করার জন্যে কারা ওকালতি করছেন। ইতিমধ্যেই কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়োগ করার মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনা নিজের চারপাশে একটি ব্যুহ রচনা করে ফেলেছেন। গত পাঁচ বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে যেমন ছিলেন তার সন্তান তারেক রহমান, তেমনি বিরোধী দলীয় শেখ হাসিনার সঙ্গেও ছিলেন উপদেষ্টা হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়। যদিও শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী হওয়াতেই হয়তো তা আমাদের চোখে পড়েনি, তবে এখন এই উপদেষ্টা জয়কে অনেক সচল দেখা যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরও উপদেষ্টা আছেন। আছেন সাবেক আমলা এইচ টি ইমাম, ড. মশিয়ুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকি, ডা. মোদাচ্ছের আলী, ড. আলাউদ্দিন আহমদ। তা ছাড়া সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদের যেমন ড. তামিম ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর রয়েছেন তেমনি এক ড. তৌফিক-ই-এলাহীঁ। এরপর বোধকরি বলার আর অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের তেল-গ্যাস-সমুদ্র বন্দর নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে-এজেন্ডা ছিল, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সেটা থেকেও পিছপা হবে না, বরং এগিয়ে যাবে ফখরুদ্দীনের ওই ঝাণ্ডা হাতে।

এককালের মুক্তিযোদ্ধা তৌফিক-ই-এলাহী সামরিক জান্তা এরশাদের শাসনামলের ক্ষমতাধর সচিব ছিলেন এবং তাঁর ক্ষমতা চর্চা আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় শাসনপর্বেও (১৯৯৬-২০০১) অব্যাহত থাকে। মাগুরছড়া গ্যাস দুর্ঘটনার পর সরকারি তদন্ত কমিটির দেয়া রিপোর্টটি দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী মার্কিন তেল কোম্পানি অক্সিডেন্টালের বিপক্ষে যাওয়ায় তিনি তার আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার জোরে তা অকার্যকর করে রাখেন। গণ আন্দোলনের চাপে সংসদীয় কমিটি গঠিত হলে সে কমিটিকেও উপেক্ষা করেন তিনি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি তখন এ নিয়ে আলোচনার জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ওই রিপোর্ট চাইলে সে দাবি অগ্রাহ্য করেন তিনি। প্রতিবাদে সংসদীয় কমিটির কয়েক সদস্য ওয়াক আউট করলেও ড. তৌফিক তাঁর খুঁটির জোরে বুক চিতিয়ে জ্বালানি সচিবের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। প্রথমে অক্সিডেন্টাল এবং পরবর্তী সময়ে ইউনোকলের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে সব কিছুই করেছেন তিনি। একজন মানুষ মুক্তিযোদ্ধা হলেই যে তিনি সারা জীবন দেশের স্বার্থ রক্ষা করবেন, এ কথা দিব্যি দিয়ে বলা যায় না; এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই আমলা।

তৌফিক-ই-এলাহীর ওই সময়ের ভূমিকা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, মিটিংয়ে জ্বালানি সচিবের কাছে মাগুরছড়ার তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্ট চাইলে তিনি প্রথমে সেটি নিয়ে আসতে ভুলে গেছেন বলে জানান। এতে সংসদীয় কমিটির সবাই উত্তেজিত হয়ে তাকে রিপোর্টটি নিয়ে আসতে বললে তিনি জানান, ‘স্যরি, রিপোর্টটি গোপনীয় এবং তা কাউকে দেখানো সম্ভব নয়।’ বুঝুন অবস্থা! সংসদীয় কমিটিকে একজন আমলা বলছেন, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বজায় রাখার স্বার্থে তদন্ত রিপোর্ট দেখানো যাবে না!

অথচ জোট সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই খুঁজে পাওয়া যায় এ রিপোর্টটিকে। তখন জানা যায়, রিপোর্টটি ধামাচাপা দিয়েছিলেন জ্বালানি সচিব ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান দুজন মিলে। তারপর ড. হোসেন মনসুর পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলে রুমের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় রিপোর্টটিকে। সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের কাছে তখন সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেন তদন্ত রিপোর্টের কথা। ভদ্রলোকের আবার সাংবাদিকদের মতো জানা ছিল না যে রিপোর্টটি খুঁজে পাওয়া গেছে। তিনি তাই প্রথমে আকাশ থেকে পড়েন, নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করেন, তারপর তার রুম থেকেই ওটা পাওয়া গেছে জানালে বলে ওঠেন, ‘আমি দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পর রুম থেকে কী পাওয়া গেল না গেল সেটা তো আমার জানার কথা নয় (বিস্তারিত জানার জন্যে পড়ুন : ‘বাংলাদেশের খনিজসম্পদ ও জাতীয় স্বার্থ’ গ্রন্থের ‘মাগুরছড়া অগ্নিকাণ্ড, ক্ষতিপূরণ কি পাবে বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন)। তদন্ত রিপোর্টটি খুঁজে পাওয়াতে বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হয় চার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করা। এই সুযোগে আমরা ধন্যবাদ জানাই তখনকার যুগ্ম সচিব মাহাফুজুর রহমানকে, যার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটিটি গঠিত হয়েছিল এবং যিনি দেশের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছিলেন। কামনা করি, ভবিষ্যতেও তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে একই ভূমিকা রাখবেন এবং ড. তৌফিক-ই-এলাহী বীর বিক্রমের মতো একটা মুক্তিযুদ্ধ করেই ক্লান্ত হয়ে পড়বেন না।

শুধু এই মাগুরছড়া কেলেংকারীর সঙ্গে নয়, তৌফিক এলাহীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে নাইকোর স্বার্থ সংরক্ষণ করার। তার এক নিকটাত্মীয় নাইকোর ভাইস প্রেসিডেন্ট (দক্ষিণ এশিয়া) নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি চোখের পর্দা কেটে ফেলে নাইকোকে কাজ দেয়ার তৎপরতা শুরু করেন। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব হওয়ায় এ ব্যাপারে কোনও অসুবিধা হয়নি তাঁর। জোট সরকারও কোনও অসুবিধা করতে পারে নি তাঁর, কেননা ব্যারিস্টার মওদুদের মতো আইনপাপী ব্যক্তি তাঁর ভায়রা।

এ হেন তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীর জন্যে এখন সাফাই গাইতে শোনা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে। গত ২৮ জানুয়ারি বুধবার ওয়াশিংটন ডিসির জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (এসএআইএস) এবং যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল (ইউএসবিবিএসি)-এর এক সেমিনারের প্যানেলিস্ট হিসেবে কথা বলার সময় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তৌফিক-ই-এলাহীর মতো ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ায় কোনও ভুল হয়নি। জয় আরও বলেছেন, ‘কেউ কেউ বলতে পারেন যে তৌফিক-ই-এলাহী বিতর্কিত, কিন্তু আরো অনেকেই আছেন যারা তা মনে করেন না (বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম, ২৯ জানুয়ারি)।’ তৌফিক-ই-এলাহীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জয় মন্তব্য করেন, ‘বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রমাণ ছাড়াই তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকে জেলে পুরেছিল আর আমার মা তাদেরই একজন।’ তৌফিক-ই-এলাহীর খুঁটির জোর এখন কোথায়, আশা করি তা বোঝা তেমন কঠিন নয়। এ-ও বোঝা কঠিন নয়, এরকম উপদেষ্টা থাকলে ডিজিটাল বাংলাদেশ নয়, বরং ডিজিটাল দুর্নীতিই জুটবে বাংলাদেশের জনগণের কপালে।

আওয়ামী লীগ সরকার এর মধ্যেই বিরোধী দল বিএনপিকে ডেপুটি স্পিকারের পদটি না দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে একটি সংকট তৈরি করেছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে জ্বালানি ও বাণিজ্য ক্ষেত্রেও তারা এরকম আরও সংকট তৈরির জন্ম দেবেন। নির্বাচনের আগে কেন আওয়ামী লীগ আরও একটি ডেপুটি স্পিকারের পদ সৃষ্টি করে তা বিরোধী দলকে দেয়ার কথা বলেনি, এই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগের দেয়া উচিত। এরও একটি ব্যাখ্যা দেয়া উচিত, কেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিরোধী দলীয় সাংসদদের শপথ গ্রহণের সংবাদচিত্র প্রচার করা হয়নি। টিফা চুক্তির বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটি জানার পরও কেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টির সাথে কথা বলার পর অত উৎসাহ দেখিয়েছেন তারও ব্যাখ্যা প্রয়োজন।

টিফা চুক্তি করার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা চালাচ্ছে সেই ২০০৩ সাল থেকে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে বটে, টিফা কেবলই বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়; কিন্ত বাংলাদেশকে এই দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বড় ধরণের সব ছাড় দিতে হবে। রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকরা নন, বরং আমলাতন্ত্রের নীতিনির্ধারকরাই ক্ষমতাবান হয়ে উঠবেন এ চুক্তির মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশকে জ্বালানি সুবিধা দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে, কেননা পণ্য রফতানি নয়, বরং সেবা রফতানি করতে পারবে বাংলাদেশ আর এই ক্ষেত্রে জ্বালানিসেবা ছাড়া আর কিছুই দেয়ার নেই বাংলাদেশের।

আমরা দেখতে পাচ্ছি এর মধ্যেই উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী মিডিয়াতে তাঁর অনুগত সাংবাদিক বাহিনী তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন। জোট সরকারের আমলে যেমন এশিয়া এনার্জির অর্থানুকুল্যে একটি সাংবাদিক চক্র গড়ে উঠেছিল, তারা অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করছিল আর তাদের পত্রিকায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের পক্ষে সংবাদ ও প্রতিবেদন পরিবেশন করছিল, সোজা কথায় এশিয়া এনার্জির পক্ষে দালালি করছিল, তৌফিক-ই-এলাহীরও এখন দরকার সেরকম একটি রিপোর্টার বাহিনীঁর। এর মধ্যে তিনি গত ২৯ জানুয়ারি বৃহষ্পতিবার পিআইবি মিলনায়তনে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি)-এর একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধন করেছেন। অনুগত সাংবাদিক বানানোর লক্ষ্যে এটি তাঁর প্রথম পদক্ষেপ, যা হয়তো এই রিপোর্টারদেরও জানা নেই। আমরা সকল সাংবাদিককে অনুরোধ জানাচ্ছি এ-সম্পর্কে সতর্ক থাকতে এবং বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন না করতে।

এটি খুবই আশার ব্যাপার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্যে সরকার উদ্যোগ নিতে চলেছেন; কিন্তু এরকম এক শুভ উদ্যোগের পাশাপাশি সরকার যদি যুদ্ধাপরাধী ইস্যুটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিংবা জাতিসংঘের হাতে ছেড়ে দেন তা হলে তা হবে শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেয়ার মতো ঘটনা। একইভাবে যদি তারা যুদ্ধাপরাধী বিচারের আনন্দে দেশবাসীকে মাতিয়ে রেখে দেশের জ্বালানী ও খনিজ খাতে এরকম সর্বনাশ ডেকে আনেন, বাণিজ্যখাতে স্বার্থের জলাঞ্জলি দেন, মিডিয়াকে বশে রাখতে চান এবং সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে কূটকৌশল বেছে নেন তা হলে তা দেশের জন্যে একই পরিণাম ডেকে আনবে। কোনও কোনও অবস্থান বা পদ শূন্য থাকাই ভালো। যেমন, চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের তারুণ্যদীপ্ত দুর্নীতির জায়গাটি শূন্য থাকাই ভালো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়েরও (তাঁর নিজের বক্তব্য অনুযায়ী অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নন, বরং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা তিনি) সতর্ক হওয়া প্রয়োজন এরকম সব সাফাই গাওয়ার আগে। তিনি তারেক রহমানের চেয়ে বেশি শিক্ষিত, লোকজনের সামনে এই গৌরব প্রকাশ করাটা (যেমনটি তিনি সেমিনারে করেছেন) খুবই দীনতার লক্ষণ। তা ছাড়া তাঁর জানা দরকার, ড. তৌফিক-ই-এলাহীর মতো মানুষ জনের হাত ধরে চললে আওয়ামী লীগ সরকার বড়জোর ডিজিটাল দুর্নীতির জন্ম দিতে পারবে, ডিজিটাল বাংলাদেশের নয়। দিন বদলাতে পারবেন না, পারবেন পুরানো দিনই আরও বিকৃতাকারে ফিরিয়ে আনতে। যা কারও কাম্য নয়।

২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯।

অবিশ্রুত

সেইসব দিন স্মরণে,- যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাদের সাহসের অভাব ছিল, তারপরও তারা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তারা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকেও বিনয়-ভুষণে সজ্জিত করেছিলেন তারা। আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাকে কী চোখে দেখে... কাঙালের কথা বাসী হলে কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে করে!

১৮ comments

  1. আরমান রশিদ - ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৯:৪৬ অপরাহ্ণ)

    আমি আপনার লেখার একজন নিয়মিত পাঠক। চমৎকার আরেকটি লেখা উপহার দেয়ার জন্য সবার পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। টিফা প্রসঙ্গে আপনার কিছু মন্তব্য আমাকে কৌতুহলি করে তুলেছে তাই এই প্রসঙ্গে আরো কিছু জানতে আগ্রহী। যতদূর জানি টিফা চুক্তি কোন নির্দিষ্ট ব্যাপারে নীতি নির্ধারণ করে না বরং দ্বিপাক্ষিক একটি বানিজ্য কমিশন গঠনের অঙ্গিকার করে মাত্র। আমেরিকার সাথে অন্যান্য দেশের করা এই চুক্তির কিছু নমুনার জন্য এখানে দেখুন।
    আমলাতন্ত্রের নীতিনির্ধারণ ক্ষমতা এই চুক্তির মাধ্যমে বেড়ে যাবার যে আশঙ্কা আপনি করেছেন তার সাথে আমি একমত। তবে এরূপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিছু কিছু দেশ কমিশনের প্রধান হিসেবে নিজ দেশের পক্ষ থেকে সচিবের পরিবর্তে মন্ত্রীদের নিয়োগ দিয়েছে। তাছাড়া আমাদের মত দেশে যেখানে কয়েক বছর পর পরই সরকার পরিবর্তণের সাথে সাথে সব দীর্ঘমেয়াদি নীতি পালটে যায় সেখানে নীতির ধারাবাহীকতা রক্ষার স্বার্থে আমলাতন্ত্রের সম্প্রিক্ততারও কিছু ইতিবাচক দিক আছে।
    অন্যান্য দেশের সাথে করা এই চুক্তির বিভিন্ন সংস্করণ পড়ে নীতিগতভাবে আপত্তিকর কিছু না পেলেও মনে প্রশ্ন উঠতে পারে আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই চুক্তি সম্পাদনের যৌক্তিকতা টা কি। আমেরিকার সাথে বহু বছর ধরেই আমাদের বানিজ্য ঘাটতি রয়েছে এবং এই ঘাটতির পাল্লাটা আমাদের দিকেই বেশী ভারি অর্থাৎ আমরাই এর থেকে লাভবান হচ্ছি। তাই সেধে সেধে আমরা কেন এই বানিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য এতটা আগ্রহ প্রকাশ করবো যদি না এর আড়ালে কোন গোপণ হুমকি থাকে? জানার বিষয় অন্যান্য কিছু দেশের মত আমাদের চুক্তিতেও ‘ইন্টালেকচুয়াল প্রপার্টি সংরক্ষনের’ মত কোন অনুচ্ছেদ তারা জুড়ে দিয়েছে কিনা যা এই মুহুর্তে আমাদের কারিগরী উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে।
    সরকার বিষয়টি নিয়ে যেরকম গোপণীয়তার সাথে কাজ করছে এবং জনসাধারণকে যেভাবে অন্ধকারে রাখছে তা খুবই সন্দেহজনক। আমাদের বানিজ্য মন্ত্রী গতকাল বলেছেন চুক্তিটি চুড়ান্ত হলে তবেই তা সংসদে (যেখানে আজ পর্যন্ত বিরোধীদলের অংশগ্রহণ নেই) পেশ করা হবে। চুক্তিটি চুড়ান্ত করার প্রকৃয়ায় জনসাধারণের অংশগ্রহণ কি তবে একেবারেই কাম্য নয়! তদুপরি সংসদই কি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ!

    • অবিশ্রুত - ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১১:৪৫ অপরাহ্ণ)

      আপনি ঠিকই বলেছেন, টিফা একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অঙ্গীকার করে এবং এ কারণেও এটি বাংলাদেশের জন্যে আশঙ্কার ব্যাপার। কেননা এর ফলে অন্যান্য যে সমস্ত বাণিজ্যিক জোটের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে, তা ক্ষুণ্ন হবে। তা ছাড়া এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে যেমন সুবিধা, তেমনটি আদায় করে থাকে। এবং বিশেষজ্ঞদের অভিমত, একেকটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টিফা চুক্তির ধারা (একই বিষয়ে) একেক রকম। যেমন, আসিয়ানের দেশগুলির সঙ্গে টিফা চুক্তি করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনেক ছাড় দিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা দেবে না বলে শোনা যাচ্ছে।
      আপনি যুক্তরাষ্ট্র এতে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি সংরক্ষণের অনুচ্ছেদ জুড়ে দিয়েছে কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি যেসব সংবাদ পড়েছি, তাতে দেখেছি, এটি জুড়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে, অর্থাৎ এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির ফলে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বেধে দেয়া সময়ের আগেই (সম্ভবত ২০১৩ সাল) বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি সংরক্ষণের ঘেরটোপে পড়তে হবে।
      এইসব টেকনিক্যাল দিকগুলি অবশ্যই আমলাতন্ত্র ভাল বুঝবে এবং বিভিন্ন দেশে আমলাতন্ত্রের বিকাশকে কিন্তু মেনেও নেয়া হয় এই ইতিবাচক অর্থে। কিন্তু বাস্তবত দেখা যাচ্ছে, আমলাতন্ত্র এই টেকনিক্যাল দিকগুলি নিয়ে দেশের স্বার্থে যুক্তিতর্ক করছে না। রাজনীতিকরা যে এ চুক্তি করার জন্যে এত হন্যে হয়ে উঠেছে, তার পেছনে কি আমলাতন্ত্রের ভূমিকা নেই? আমার উদ্বেগটা সেখানেই।
      বস্তুত এ চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য হবে সেবা খাতকে ঘিরে। কিন্তু হবে অসমভাবে। কেননা বাংলাদেশের জ্বালানি সেবা ছাড়া দেয়ার মতো আর কোনও সেবাখাত নেই। যুক্তরাষ্ট্র সেপথেই পা বাড়াচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি বাণিজ্যচুক্তি হলেও এর সঙ্গে তাই খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিকিয়ে দেয়া বা না দেয়ার বিষয়গুলি জড়িত রয়েছে। সেবাখাতে এখন আমাদের বাংলাদেশের শ্রমশক্তির ২৯.৪০ শতাংশ নিয়োজিত। মোট দেশজ উৎপাদনে এ খাত থেকে আসে ৪০.৩৭ শতাংশ সম্পদ। টিফা যদি হয়, তা হলে এসবই হাতছাড়া হয়ে যাবে।
      তা ছাড়া যতদূর জানি, জোট সরকারের সময় টিফার ব্যাপারে আমলারাও শেষ পর্যন্ত দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে এ কারণে যে, এতে দুর্নীতি তদন্ত ও বিচারসংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করার জন্যে জোর চাপ সৃষ্টি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, এটি বাংলাদেশ করতে রাজি, তবে আলাদাভাবে, টিফার আওতায় নয়। যুক্তরাষ্ট্র তাতে সম্মত হয়নি।
      বিষয়টি আসলেই জটিল, কেননা আমরা তথ্যপ্রবাহের মধ্যে নেই। তাই বিরোধিতা করার লাগসই যুক্তি ও তথ্যও সব সময় উপস্থাপন করতে পারব না আমরা। কিন্তু যে কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে বিষয়টি করা হচ্ছে তা থেকে খুব সহজেই আমরা ধারণা করতে পারি, ডাল মে কুচ কালা হ্যায়!
      ধন্যবাদ আপনাকে, মতামত দেয়াতে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ লিংক আমাদের সবার জন্যে জুড়ে দেয়াতে।

  2. মুক্তাঙ্গন - ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১০:৪১ অপরাহ্ণ)

    গোপনীয়তার কারণে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বি-পাক্ষিক TIFA চুক্তির কোন সাম্প্রতিক ড্রাফট হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছেনা। থাকলে বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ আরো ভালভাবে করা যেত। চুক্তিটি যদি সংসদে আলোচনার জন্য ওঠে, তখন হয়তো একটি সুযোগ হবে তাতে নজর বোলানোর। আপাতত এই চুক্তিটিরই একটি পুরনো (২০০৫ এর) খসড়ায় নজর বোলানো যেতে পারে (লিন্ক এখানে/এম.এস.ওয়ার্ড ফাইল এখানে)।

    আলোচনার সুবিধার্থে চুক্তিটির কপি এখানে তুলে দিচ্ছি:

    US-Bangladesh TIFA (draft)

    Draft text of the US-Bangladesh Trade and Investment Framework Agreement as of 30 January 2005

    Sensitive But Unclassified

    Attachment B

    USG Counterproposal/January 30, 2005

    DRAFT TRADE AND INVESTMENT FRAMEWORK AGREEMENT BETWEEN THE UNITED STATES OF AMERICA AND The PEOPLE’S REPUBLIC OF BANGLADESH AGREEMENT BETWEEN THE GOVERNMENT OF THE UNITED STATES OF AMERICA AND THE GOVERNMENT OF THE PEOPLE’S REPUBLIC OF BANGLADESH CONCERNING THE DEVELOPMENT OF TRADE AND INVESTMENT RELATIONS

    The Government of the United States of America and the Government of The People’s Republic of Bangladesh (individually a “Party” and collectively the “Parties”)

    1. Desiring to enhance the bonds of friendship and spirit of cooperation between the two countries;

    2.
    Determined to work towards greater well-being for their peoples, through increased trade and investment;

    3. Desiring to promote further both countries’ international trade arid economic interrelationship;

    4. [Desiring to promote transparency and to in international trade and investment.]

    5. Recognizing the importance of fostering an open, [predictable and congenial] environment for international trade and investment;

    6. Recognizing the benefits to each Party resulting from increased international trade and measures and protectionist trade barriers wou1d deprive the Parties of such benefit.

    7. Taking into account the membership of the two countries in the World Trade Organization (WTO) and noting that this Agreement is without prejudice to each Party’s rights and obligations, where applicable, under tire Marrakesh Agreement Establishing the WTO and the agreements, understandings, and other instruments relating thereto or concluded under the auspices of the WTO;

    8. Recognizing the essential role of private investment, both domestic and foreign, in furthering growth, creating jobs, expanding trade, improving technology, and enhancing economic development;

    Recognizing that foreign direst investment may confer positive benefits on each Party;

    9. Desiring to encourage and facilitate private sector contacts between the two countries;

    10. Recognizing the desirability of resolving trade and investment problems as expeditiously as possible;

    11. [Acknowledging the Treaty between the United States of America and the Peop1e’s Republic of Bangladesh Concerning the Reciprocal Encouragement and Protection of Investment signed on March 12, 1986 (“Bilateral Investment Treaty”)]

    12. Noting that this Agreement is without prejudice to the rights and obligations of the Parties under the treaty cited in the preceding paragraph 11;

    13. Recognizing the increased importance of trade in services in their economies and in their bilateral relations;

    14. Taking into account the need to eliminate non-tariff barriers in order to facilitate greater access to the markets of both countries and the mutual benefits thereof;

    15. Recognizing the importance of providing adequate and effective protection and enforcement of intellectual property rights [obligations contained in the Agreement on Trade-Related Aspects of Intellectual Property Rights (TRIPS) and other intellectual Property rights conventions.] adherence

    16. Recognizing the importance of providing adequate and effective protection and enforcement of worker rights in accordance with each nation’s own labor laws and of improving the observance of internationally recognized core labor standards

    17. Desiring to ensure that trade and environmental policies are mutually supportive in the furtherance of sustainable development;

    18. Desiring that this Framework Agreement reinforce the multilateral trading system by strengthening cooperative efforts to complete successfully the Doha Development Agenda; and

    19.
    Considering that it would be in their mutual interest to establish bilateral mechanism between the Parties for encouraging the liberalization of trade and investment between them.

    To this end, the Parties agree as follows:

    ARTICLE ONE

    The Parties affirm their desire to promote an attractive investment climate and expand trade in goods and services, consistent with the terms of this Agreement. They shall take appropriate measures considering their economics and needs, to encourage and facilitate the exchange of goods and services and to secure favorable conditions for long-term development and diversification of trade between the two countries.

    ARTICLE TWO

    The Parties shall establish a United States-Bangladesh Council on Trade and Investment hereinafter referred to as “The Council,” which shall be composed of representatives of both Parties. The side of Bangladesh will be chaired by the Commerce Secretary of the Ministry of Commerce; and the U.S. side will be chaired by [the Office of the United States Trade Representative (USTR).] Both Parties may be assisted by officials of other government entities as circumstances require. The Council will meet at least once a year and at such times as agreed by the two Parties. Tire Council may establish Joint Working Groups that may meet concurrently or separately to facilitate its work.

    ARTICLE THREE

    The objectives of the Council are as follows:

    1. To monitor trade and investment relations, to identify opportunities for expanding trade that may be appropriate for negotiation in an appropriate forum.

    2. To hold consultations on specific trade matters, and those investment matters not arising under the relevant Bilateral Investment Treaty, of interest to the Parties.

    3. To identify and work toward the removal of impediments to trade and investment flows.

    4. To seek the advice of the private sector, where appropriate; in their respective countries on matters related to the work of the Council.

    ARTICLE FOUR

    The Council may meet at the request of either Party on u mutually convenient date and at an agreed location to consider any trade matter or investment issue not arising under the Bilateral Investment Treaty between them and to attempt to resolve differences through consultations before taking actions that could adversely affect trade or investment.

    ARTICLE FIVE

    This agreement shall be without prejudice to the domestic Jaw of either party or the rights and obligations of either party under any other agreement to which it is a party.

    ARTICLE SIX

    The Agreement shall enter into force on the date of its signature by both Parties.

    ARTICLE SEVEN

    This Agreement shall remain in force unless terminated by mutual consent of the Parties or by either Party upon six months written notice to the other Party.

    Sensitive But Unclassified

    Attachment B

    IN WITNESS WHEREOF, the undersigned, being duly authorized by their respective governments, have signed this Agreement.

    DONE at _________________ this ____________ day of 2005

    FOR THE GOVERNMENT OF THE UNITED STATES OF AMERICA

    FOR THE GOVERNMENT OF THE PEOPLE’S REPUBLIC OF BANGLADESH

  3. সুহৃদ সরকার - ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১:১৩ অপরাহ্ণ)

    চমৎকার! অনেক কিছু জানতে পারলাম। এই সব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সবাইকে সজাগ করতে হবে।

  4. সৈকত আচার্য - ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১:২৯ অপরাহ্ণ)

    TIFA চুক্তি’র বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়ে আসা হচ্ছিল। বিশেষ করে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে এই চুক্তি বাস্তবায়নের বিরোধীতা করা হচ্ছিল প্রবলভাবে। এই চুক্তির খসড়ার সর্বশেষ ভার্সন ২০০৫ সালের পর আর পাওয়া যায় না।

    এই চুক্তি’র বর্তমানে আরও একটি খসড়া রয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। যদিও তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হচ্ছেনা। এই চুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক অংগনে যে উত্তাপ রয়েছে, তার নিশ্চয়ই যুক্তিসংগত কারন রয়েছে। এই চুক্তির ফলে কোন ধরনের সেবা খাত এবং কি ধরনের জাতীয় শিলপ ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং তা কিভাবে হবে এই নিয়ে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দ্দিষ্ট ভাবে কোন পেপার ওয়ার্ক এখনও দেখতে পাইনি। মাঠে ময়দানে যে বক্তৃতা বা লিফলেট বিতরন করা হচ্ছে তাতে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কিছু সাধারন কথামালা থাকছে এবং চুক্তির বিষয়ে কিছু সাধারন অবজারভেশনস থাকছে। কিন্ত কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক ভাবে তুলে আনতে পারছে না বলে মনে হয়। যেমনঃ

    ক) এই চুক্তিতে কি আছে, কোন কোন ধারাগুলি আমাদের জাতীয় শিল্প বিকাশের এবং সেবাখাতের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, তার একটা ডাটা ঊপস্থাপন করা।

    খ) এ’কাজের সুবিধার জন্য সংশ্লিষ্ট সেক্টরের বিশেষজ্ঞ এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের মতামত নেয়া।

    গ) কিভাবে ক্ষতিকর হতে পারে এই চুক্তি, তা সুনির্দ্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরা।

    ঘ) চুক্তিতে দেশের স্বার্থের পক্ষে প্রয়োজনীয় কোন সংশোধনী আনা যায় কিনা এবং এ’কাজের জন্য নেগোশিয়েশন কৌশল ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে কোন সুনির্দ্দিষ্ট পরামর্শ দেয়া যায় কিনা, তা সক্রিয় বিবেচনায় রাখা।

    ঙ) নিজেদের ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পগুলো বিকাশের পথে এই চুক্তি প্রতিবন্ধকতা হয়ে থাকলে সেটা নিয়ে আমাদের পাল্টা প্রস্তাব কি, তা তুলে ধরা।

    চ) আমেরিকার বাজারে আমরা কিভাবে বাস্তবসম্মতভাবে ১০০ ভাগ ডিউটি ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা আদায় করতে পারি, সেই লক্ষ্যে সুনির্দ্দিষ্ট বিকল্প প্রস্তাবসমূহ সরকারকে দেয়া। এবং পরিশেষে,

    ছ) উপরোক্ত বিষয়সমূহ সরকার বিবেচনায় না নিলে, তার প্রেক্ষিতে ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলনের ডাক দেয়া।

    আমার মনে হয়েছে, দেশের স্বাধীতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে এই কথা সামনে নিয়ে এসে যদি এই চুক্তির ব্যাপারে প্রচারনা চালানো হয় তাহলে, তা সাময়িক রাজনৈতিক উত্তেজনা হয়তো তৈরী করবে, কিন্ত আমরা যারা সাধারণ মানুষ, আমরা অন্ধকারে থেকে যাবো। সরকার কূটকৌশলের আশ্রয় নিতে পারে এবং এই চুক্তি প্রকাশের ক্ষেত্রে গড়িমসি করতে পারে, কিন্ত জনগণের পক্ষে যারা আন্দোলন করছেন তাদেরকে বিষয়গুলো আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে, আরো নিবিড় এবং চুলচেরা বিশ্লেষনে যেতে হবে, এবং আমাদেরকে বোঝাতে হবে যে, আমার বাঁচার রাস্তা কিভাবে এই চুক্তি রুদ্ধ করে দিচ্ছে।

    কতগুলো গতবাঁধা বুলি এবং জনগণের সমস্যা নিয়ে ভাসাভাসা ধারনা নিয়ে জনগণের পক্ষে, আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা থাকলেও, কাজ করা যায় না।

    TIFA চুক্তি হলে তার কি নেতিবাচক প্রভাব আমাদের উপর পড়তে পারে তার সম্ভাব্য একটি ধারনা দিয়েছে OXFAM নামের এই সংগঠনটি, সেই সাথে তারা কিছু সুপারিশও করেছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে। এখানে দেখুন।

  5. রায়হান রশিদ - ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৫:৫৩ অপরাহ্ণ)

    @ অবিশ্রুত

    কেননা এর ফলে অন্যান্য যে সমস্ত বাণিজ্যিক জোটের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে, তা ক্ষুণ্ন হবে।

    চুক্তির পুরনো খসড়ায় তেমন কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা। একটু ব্যাখ্যা করবেন?

    • অবিশ্রুত - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৯:৩৩ অপরাহ্ণ)

      এ প্রসঙ্গে আমি যে লিংকটা দিতে পারতাম, সেটি প্রকাশ পেয়েছে দৈনিক সমকালে এবং তাতে বেশ খানিকটা জায়গা নিয়েই এ ব্যাপারে মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছিল। দুঃখজনক হলো, দৈনিক সমকালের আর্কাইভে ২০০৮ সাল পরবর্তী কোনও সংখ্যা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওই সংখ্যাটি ছিল ৩১ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখের। সংবাদ শিরোনাম ছিল যতদূর মনে পড়ছে, টিফা হচ্ছে, হিলারী আসছেন
      সংবাদটিতে আরও একটি তথ্য ছিল। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে টিফা করার ক্ষেত্রে নাকি বাহরাইনের সঙ্গে সম্পাদিত টিফাচুক্তির মডেলটি অনুসরণ করতে চাইছে।
      এ বিষয়ে পরে কিছু জানতে পারলে জানাবো।

      • রায়হান রশিদ - ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১২:২৭ পূর্বাহ্ণ)

        ধন্যবাদ। তাহলে তো দু’টোরই (সমকালের লেখা এবং বাহরাইনের চুক্তি) খোঁজ লাগানো দরকার। বিশেষত, চুক্তি পরবর্তী বাহরাইনের কিছু impact আপডেট যদি আমরা খুঁজে বের করতে পারি, তাহলে এ বিষয়টির আরো গভীরে যাওয়া সহজ হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেয়া যাবে।

        ভাল কথা, আপাতত ক’দিন মূলতুবি থাকলেও TIFA’র বিষয়টি খুব শিগগিরই আবার চাগা দিয়ে উঠবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তাই, আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে এ বিষয়ে মুক্তাঙ্গনের আরেকটি “বিশেষ ফোরাম” তৈরী করা যায় কি? মূল ফোরাম সাইটটি এখন যেভাবে তৈরী করা আছে, তাতে এধরণের যে কোন ইস্যুতে সহজেই নতুন নতুন ফোরাম খুলে উম্মুক্ত আলোচনাকে আরো বেশী কেন্দ্রীভূত এবং সুনির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক করা সম্ভব। নতুন ফোরামটি হতে পারে যাবতীয় bilateral agreement নিয়ে। TIFA, BIPA আক্ষরিক অর্থেই আমাদের ঘাড়ের উপর এসে পড়েছে। ভবিষ্যতে এমন আরও চুক্তি এসে ঘাড়ের ওপর পড়বে। তাই একটু আগে থেকে মনে হয় প্রস্তুতি নেয়াটা জরুরী। আর WTO’র ফ্রেমওয়ার্ক যখন সর্বশক্তিতে (পুরোপুরি এসে) আমাদের ওপর চেপে বসবে, তখন আলোচনা এবং বিরোধিতা আরও বহুগুণ sophisticated হতে হবে। তা করতে না পারলে তখন যথাযথ প্রস্তুতির অভাবের কারণে জাতীয় স্বার্থে বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে সর্বোত্তম (এবং বাস্তব) অবস্থান গ্রহণ কঠিনতর হয়ে পড়তে পারে। তাই সবাইকে বিষয়টি ভেবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। আগ্রহী কাউকে পাওয়া গেলে খুব ভাল হয় যিনি ফোরামটির কাঠামো ইত্যাদি বিষয়গুলোর ব্যাপারে এখন থেকেই ভাবতে এবং দায়িত্ব নিতে রাজী হবেন।

  6. রায়হান রশিদ - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৪:৪৬ অপরাহ্ণ)

    সচলায়তনে ব্লগার দিনমজুরের খসড়া TIFA চুক্তির অনুবাদ প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে পরিভাষাগত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি। এখানে দেখুন। মুক্তাঙ্গনের পাঠকদের সুবিধার্থে দিনমজুরের সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহের অনুবাদ, এবং এর জবাবে মন্তব্যটি এখানে উদ্ধৃত হল:

    মূল আলোচনায় ব্লগ লেখক TIFA প্রস্তাবনার ধারা#৭ এবং অনুচ্ছেদ#৫ অনুবাদ করেছেন এভাবে:

    প্রস্তাবনা ধারা#৭: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (WTO) উভয় দেশের সদস্য পদের বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে বলা হচ্ছে যে এই চুক্তি, WTO এর প্রতিষ্ঠাতা চুক্তি Marrakesh Agreement এবং অন্যান্য চুক্তি ও সমোঝতা এবং এর সাথে সম্পর্কিত ও এর পৃষ্ঠপোষকতার আওতায় থাকা অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্ট ইত্যাদির আওতার মাঝে প্রত্যেক পক্ষের নিজস্ব অধিকার ও বাধ্যবাধকতার বিষয়গুলো থেকে অগ্রাধিকার পাবে;
    অনুচ্ছেদ#৫: এই চুক্তি অভ্যন্তরীণ যে কোন অধিকার ও দায়বদ্ধতা সম্পর্কিত যে কোন এক পক্ষের পূর্বনির্ধারিত কোন আইনের কিংবা তৃতীয় কোন এক পক্ষের সাথে করা চুক্তির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিংবা সাংঘর্ষিক হলে TIFA’র শর্ত এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে ।
    এইটা একটু বিশ্লেষণ করলে এর মানে দাঁড়ায়- যেহেতু এই চুক্তিটা দ্বি-পাক্ষিক সেহেতু বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত অন্য কোন তৃতীয় পক্ষ কিংবা বহুজাতিক চুক্তিগুলোর সাথে যদি এই চুক্তির কোন ধারা অসঙ্গতিপূর্ণ হয় সেক্ষেত্রে TIFA’র শর্ত কার্য়কর হবে।

    এই অনুবাদটিতে বিভ্রান্তির সুযোগ রয়েছে। তাই মুক্তাঙ্গনের পাঠকদের জন্য নিচের মন্তব্যটি দ্রষ্টব্য:

    [@ দিনমজুর]: অনুবাদ প্রচেষ্টার জন্য সাধুবাদ। TIFA’র কিছু বিষয় (যেমন: মেধাস্বত্ত্ব) নিয়ে কমবেশী আশংকিত আমরা বেশীর ভাগ মানুষই তবে সেইসাথে এও মনে করি যে সুনির্দিষ্টভাবে সমালোচনার জন্য বিষয়টি এখনো বেশ প্রি-ম্যাচিউর। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চুক্তি আইনের আওতাধীন একটি বিষয় হওয়ায় TIFA’র ভাষাগত অনুবাদের (literary translation) চেয়েও আইনগত পরিভাষার “সঠিক” অনুবাদ মনে হয় বেশী জরুরী। তা নাহলে আলোচনাটা ভুল ভিত্তির ওপর গজিয়ে ওঠার আশংকা থেকে যায়। আর ভুল ভিত্তির উপর আলোচনা সবচাইতে বেশী ক্ষতি করে গ্রহণযোগ্যতার (credibility)। কারণ, সেটি যদি একবার ঘটে, তাহলে যাঁরা ভবিষ্যতে সত্যিকারের বিপদের দিনে এ বিষয়গুলো নিয়ে জনগণকে আন্দোলনে একত্রিত করার চেষ্টা করবেন, তখন তাদের সেই ডাক “বাঘ এলো, বাঘ এলো” গল্পের দায়িত্বহীন রাখালের চিৎকারের মতো শোনাবে। তাতে সবার চাইতে বেশী ক্ষতি হবে এ দেশের সাধারণ মানুষের। যাই হোক, অনুবাদের প্রসঙ্গে ফিরে আসি।

    প্রস্তাবনার ধারা#৭ এবং অনুচ্ছেদ#৫ এ “without prejudice” এর যে সংশোধিত অনুবাদ আপনি দিয়েছেন (আপনার মন্তব্য থ্রেড#৭, ৮: “অন্য কোন তৃতীয় পক্ষ কিংবা বহুজাতিক চুক্তিগুলোর সাথে যদি এই চুক্তির কোন ধারা অসঙ্গতিপূর্ণ হয় সেক্ষেত্রে TIFA’র শর্ত কার্য়কর হবে”), তাতে বিভ্রান্তির অবকাশ রয়েছে। এই ভুলটি মৌলিক। এখানে “without prejudice” পরিভাষাটির বঙ্গানুবাদকে “notwithstanding” (কিংবা saver clause) এর সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। বিধি নির্দেশিত “অগ্রাধিকার” নিশ্চিত করার কাজ দ্বিতীয়টির এবং প্রথমটির (without prejudice-“wp”) সাথে অগ্রাধিকারের বিষয়টির তেমন একটা সম্পর্ক নেই। আইনে “without prejudice” টার্মটি একটি বিশেষ অর্থ বহন করে এবং বিশেষ একধরণের চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ককেই নির্দেশ করে। বলাই বাহুল্য, এটি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত এবং বহুল ব্যবহৃত নীতি। নীতিটি মূলত: নোগোশিয়েশনে “গোপনীয়তা” (confidentiality) বিধান সংক্রান্ত। একটু ব্যাখ্যা করি। কোন নেগোশিয়েশন যখন পক্ষদ্বয়ের ভেতর Without Prejudice ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় হয়ে থাকে, তখন তার মানে হল:

    নেগোশিয়েশন চলাকালীন সময়ে পক্ষগণের ভেতর যে সব আলোচনা এবং তথ্য আদান প্রদান হচ্ছে, তা পরবর্তীতে কোন বিচারিক (adjudicatory) কর্মকান্ডে উত্থাপন করা যাবেনা (ie, indadmissible), যদি না:
    (ক) পক্ষগণ এ সংক্রান্ত বাধাটি স্বেচ্ছায় এবং প্রকাশ্যে (expressly) তুলে নেন (যেমন: waiver), কিংবা,
    (খ) পরবর্তীতে কোন এক পক্ষের চুক্তির শর্ত মানায় ব্যর্থতার ফলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
    এটিই হল সাধারণ নিয়ম, তবে এর ব্যতিক্রমের সুযোগও রয়েছে। ঠিক কোন্ কোন্ পরিস্থিতিতে “without prejudice” সংক্রান্ত চুক্তিবদ্ধ বাধানিষেধকে অতিক্রম/অগ্রাহ্য করা যাবে, তার বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছিল লর্ড হফম্যানের একটি মামলায় ১৯৯২ সালে (Forster v. Friedland, Court of Appeal)। লেক্সিস-নেক্সিস ডাটাবেজ থেকে দেখে নিতে পারেন।

    Without prejudice টার্মটির লক্ষ্যই হল নেগেশিয়েশনে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে পক্ষগণ তাদের যাবতীয় বিরোধ তৃতীয় কোন পক্ষকে না জড়িয়ে নিজেরাই নিজেদের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে অধিক উৎসাহী হন। আর এই confidentiality নীতির লক্ষ্য হল নেগোশিয়েশনকালীন আলাপ আলোচনাকে ভবিষ্যত মামলার ভয়-ভীতি থেকে মুক্ত রাখা, সেটিও পক্ষগণকে মুক্ত আলোচনায় এবং দরকষাকষিতে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই।

    তাই অনুচ্ছেদ ৫ (এবং প্রস্তাবনা#৭) এ যে “অগ্রাধিকার” এর কথা আপনি বলতে চাচ্ছেন সেটি কেবলই “without prejudice” টার্মের অগ্রাধিকার। এর সাথে বাংলাদেশের করা অন্যান্য চুক্তি বা আইনে সৃষ্ট substantive right এর কোন সম্পর্ক নেই, অগ্রাধিকারের তো নেই-ই। এটি কিছুটা কমনসেন্স এরও ব্যাপার। ভেবে দেখুন, কেবল TIFA স্বাক্ষর করলেই যদি অন্যান্য সব bilateral আর multilateral চুক্তি এবং প্রচলিত আইন অর্থহীন হয়ে যায়, তাহলে অন্যান্য সে সব পক্ষ-রাষ্ট্ররা কি করবে বলে মনে করেন? কিংবা সে সব চুক্তিসৃষ্ট অধিকার বা দায়দায়িত্বেরই বা কি হবে?

    আশা করি সঠিক পরিভাষা এবং সঠিক ব্যাখ্যার আলোকে আমরা এখানে TIFA কিংবা এধরণের চুক্তিগুলোর বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন করতে সমর্থ হব। এধরণের সিরিয়াস ইস্যু সেটি দাবী করে।

  7. dinmojur - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৯:০৪ অপরাহ্ণ)

    @অবিশ্রুত
    চমৎকার এই লেখাটির জন্য আপনাকে অভিনন্দন।

    @ রায়হান রশীদ
    আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য। তবে টিফা চুক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে সমালোচনা করার সময় এখনও আসেনি বলে যে কথাটি বললেন সে বিষয়ে একমত হতে পারলাম না। চুক্তির খসড়া নিয়ে ২০০৩ সাল থেকে আলোচনা চলছে, আরও বিভিন্ন দেশের সাথে এই চুক্তিটি আমেরিকা স্বাক্ষরও করেছে।ফলে এখানে প্রিম্যাচিউ এর কি দেখলেন বুঝলাম না। চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে তার ক্ষতিকর প্রভাব চোখে পড়া শুরু করলেই কি তবে তা ম্যাচিউর হবে?

    আর without prejudice নিয়ে আমরাও একটু ঘাটাঘাটি করেছি| আপনি without prejudice এর যে ব্যবহারের কথা বলেছেন তা হলো without prejudice এর একটা ব্যবহার যেটা negotiations এর সময় ব্যবহ্রত হয়। কিন্তু এখানে কোন নেগোসিয়েশন হচ্ছে না, এটা সরাসরি একটা চুক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে যেখানে বর্তমান চুক্তির সাথে অতীতের চুক্তিগুলোর সম্পর্ক নির্দেশ করা হচ্ছে। এই খানে বরং এর without prejudice এর নিম্নোক্ত ব্যাবহারটিই প্রযোজ্য বলে মনে হচ্ছে।

    Within legal civil procedure, prejudice refers to a loss or injury.Thus, in a civil case, dismissal without prejudice is a dismissal that allows for re-filing of the case in the future. The present action is dismissed but the possibility remains open that the claimant may file another suit on the same claim.
    সূত্র: উইকিপিডিয়া (http://en.wikipedia.org/wiki/Without_prejudice)

    সেই অর্থে এর মানে হলো – বর্তমান কোন অধিকার পূর্ব থেকে ক্ষুন্ন না করে(oxford advance learner dictionary)। এ হিসেবে সংশোধনী দেয়ার আগে আমরা প্রথমে যে অনুবাদটি করেছিলাম সেটিই ঠিক আছে বলে এখন মনে করছি। অর্থাৎ আমেরিকা বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করছে, এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তুমি ইতোমধ্যেই যেসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছ সেগুলো থেকে তোমাকে বঞ্চিত করছি না আমি।

    নেগোসিয়েশান এর সময় without prejudice এর ব্যবহার নিয়ে দেখুন কি বলা হচ্ছে:

    In many common law jurisdictions such as the United States, the U.K., Ireland, Canada, Australia, New Zealand and Singapore, the term “without prejudice” is also used in the course of negotiations to indicate that a particular conversation or letter is not to be tendered as evidence in court; it can be considered a form of privilege.
    সূত্র: উইকিপিডিয়া (http://en.wikipedia.org/wiki/Without_prejudice)

    আর আপনি কমনসেন্স এর প্রশ্ন তুলেছেন দেখছি। বিষয়টি শুধু কমনসেন্সের সাথে যুক্ত নয়। আমেরিকার রাজনীতির সাথে যারা পরিচিত তারা বুঝবেন আমেরিকার দ্বারা এধরনের একটি চুক্তির প্রস্তাব তোলা অসম্ভব কিছু নয়! তাছাড়া টিফা চুক্তি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত লেখালিখিতেও বিষয়টি এভাবেই এসেছিল।সেকারেণই আমরা সংশোধনী দিয়েছিলাম। এ প্রসঙ্গে আবু আহমেদের লেখাটি দেখুন যেখানে আবু আহমেদ বলছেন-

    অন্য কথায়, যেহেতু এই চুক্তি হবে দ্বিপক্ষীয়, বিনিয়োগ ও ট্রেডের ক্ষেত্রে বহুজাতিক বা আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর বিভিন্ন উপাদান যদি এই চুক্তির উপদানগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে টিফা’র শর্তই এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সূত্র: http://www.somewhereinblog.net/blog/adnanuk/28906765

    যাই হোক without prejudice এর মানে “বর্তমান কোন অধিকার পূর্ব থেকে ক্ষুন্ন না করে” এই অনুবাদের প্রায়োগিকতা বিষয়ে আপনার মতামত পেলে ভাল লাগবে।

  8. রায়হান রশিদ - ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১১:২২ অপরাহ্ণ)

    @ দিনমজুর

    আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

    প্রথমেই এটুকু জেনে রাখার অনুরোধ করবো – একথা কখনই ভাববেন না যেন – ইংরেজী টেক্সট (বিশেষত legal text) থেকে বঙ্গানুবাদ করা যে কি পরিমাণ পরিশ্রমসাধ্য একটি কাজ সেটি আমরা অনুধাবন করিনা এবং কেবলই খুঁত ধরার চেষ্টা করি। ভুক্তভোগীরা, এমনকি যারা আইনের পুরোনো ছাত্র এবং পেশাদার, তাদের কাছেও এটি একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। সে বিচারে আপনি একটি কঠিন কাজে হাত দিয়েছেন যেটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। আমার অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য (কিছুকাল আইন পড়ার সুবাদে), আপনাকে কোনভাবে সাহায্য করতে পারি কিনা সে চেষ্টা করা। এবং তার চাইতেও বড় উদ্দেশ্য এই দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিটি। কারণ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটির নির্ভুল মূল্যায়ন যদি আমরা করতে ব্যর্থ হই, তাহলে বড় কোন ক্ষতি হতে কতক্ষণ!

    চুক্তিটি প্রি-ম্যাচিউর মনে করি একারণে যে চূড়ান্ত ড্রাফটটি এখনো আমাদের হাতে নেই। সে অর্থে কাঁঠালটি এখনো গাছে ঝুলছে, তাই গোঁফে তেল ঘষার আগে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে চাচ্ছিলাম। গোঁফে না হয় তেল না‌-ই লাগালাম, তাই বলে কি সে তেল নাকে দিয়ে ঘুমোতে যাবার কথা ভাবছি? মোটেই না। এ বিষয়ে আপনার সাথে আমার যেটুকু দ্বিমত (হয়তো খুব সামান্যই) তা নিতান্তই কৌশলের এবং প্রকাশ ভঙ্গীর। জানিনা আপনি আমার সাথে একমত হবেন কিনা – তবে সবসময়ই লক্ষ্য করেছি – এ ধরণের ইস্যু নিয়ে (তেল, গ্যাস, বন্দর, মেধাস্বত্ত্ব, WTO) আপনার আমার মত সাধারণ মানুষেরা যখনই কথা বলার চেষ্টা করেছে, কিংবা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছে ‌- মূলধারার তথাকথিত সুশীল/এলিট নীতিনির্ধারক/বুদ্ধিজীবীরা তখনই আমাদের “ফালতু চিৎকার করা গলাবাজ শ্রেনী” হিসেবে লেবেল এঁটে দিয়ে তফাতে রাখার চেষ্টা করেছে। বিপরীতে তাঁরা যে খুব উচ্চমার্গের যুক্তিতর্ক নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তা কিন্তু না। বরং, “ফালতু চিৎকার চেঁচামেচি করা আম জনতা” হিসেবে একবার আমাদের চিহ্নিত করে দিতে পারলে আমাদের বক্তব্যের বিপরীতে এই সব সুশীলদের এমনকি প্রতিযুক্তি দেখানোর দায়ও আর তেমন একটা থাকেনা। তখন তারা খুব সহজেই নিজেদের সুবিধাজনক এবং নিরাপদ দুরত্বে গুটিয়ে নিতে পারেন। এত সহজে আমাদের বক্তব্যকে এক কথায় উড়িয়ে দেয়ার পথ বন্ধ করতেই কিন্তু প্রকাশভঙ্গীগত এই কৌশল পরিবর্তনের ব্যাপারটা ভাবা প্রয়োজন বলে মনে করি।

    এই কৌশলের অংশ হতে পারে –
    (১) সব বক্তব্যে পরিমিত সংযম (বক্তব্য যত গুরুতর, সংযম যেন তত বেশী হয়);
    (২) তোলা নিক্তি মেপে precisely কথা বলার অভ্যাস (অন্তত লেখার ক্ষেত্রে তো বটেই)।
    (৩) এক কথাকে আরও দশটা বিষয়ের দশটা কথার সাথে মিলিয়ে না বলা (তাতে প্রতিটির ধার এবং প্রাসঙ্গিকতা ব্যাহত হয়);

    এই বিষয়গুলো নিয়ে সহকর্মী এবং বন্ধুমহলে অনেক দিন ধরেই আলাপ আলোচনা (এবং সেইসাথে আত্ম‌-সমালোচনা) চলছে। এখানে আমাদের মধ্যে কৌশলগত মত পার্থক্য থাকতেই পারে। তবে ব্যাপারটি ভেবে দেখার আহ্বান থাকলো।

    কয়েকটি বিষয়:

    ক.

    আপনি ঠিকই বলেছেন যে without prejudice এর কয়েক রকম ব্যবহার থাকতে পারে; আমি অন্তত চারটি পৃথক পৃথক প্রয়োগের খোঁজ পেয়েছি। তবে আদালতের রায়ে “dismissal without prejudice” সংক্রান্ত ওয়াইকি থেকে যে লিন্কটি আপনি উদ্ধৃত করেছেন (এবং করার আগে বলেছেন: “এই খানে বরং এর without prejudice এর নিম্নোক্ত ব্যাবহারটিই প্রযোজ্য বলে মনে হচ্ছে“), সেটি আসলে পুরোপুরি ভিন্ন একটি বিষয় নিয়ে। এইটির লক্ষ্য res judicata নীতিকে (যার অর্থ: একই বিষয়ে একই পক্ষগণের মধ্যে পূনরায় মামলা অনুষ্ঠিত হতে পারবেনা) আদালতের রায়ের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করা। আপাতত এর গভীরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই এখানে। আপনার আলোচনা থেকে এই অংশটি বাদ দিয়ে দেখতে পারেন, তাতে কনফিউশন কিছু কমবে বলে মনে করি। (এ বিষয়ে আপনার লাইনগুলো আগে পরে হয়ে গিয়ে থাকতে পারে, যে কারণে হয়তো ভিন্ন অর্থ দাঁড়াচ্ছে)।

    খ.
    আর ওয়াইকি’র যে দ্বিতীয় লিন্কটি উল্লেখ করেছেন (ie, a form of privilege), সেটিই কিন্তু আমার প্রথম মন্তব্যে বিস্তারিত ব্যাখ্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আপনি সম্ভবত ভিন্ন একটি প্রয়োগের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করতে চেয়েছেন এখানে। নাকি অন্য কোন কারণে? ঠিক ধরতে পারছিনা।

    গ.

    সাধারণভাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষদ্বয়ের প্রতিনিধিরা চুক্তিটির চূড়ান্ত ড্রাফটে সই না করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত চুক্তিটি কিন্তু execute হচ্ছেনা, অর্থাৎ নেগোশিয়েশন পর্যায় বহাল থেকে যাচ্ছে। এই পর্যায়গুলোর সংজ্ঞাগত সীমারেখা নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্ব বানিজ্যে কয়েক ডজন মামলা/আরবিট্রেশন হয়েছে; সে জটিল তর্কে না গেলেও এই আলোচনার বোধ করি তেমন একটা ক্ষতি হবেনা। বলাই বাহুল্য, TIFA’র ক্ষেত্রে দু’টো পর্যায়ের without prejudice ই প্রযোজ্য, এ ধরণের চুক্তিগুলোর ক্ষেত্রে যেটি খুবই সাধারণ। জানি পত্র পত্রিকায় বেশ কিছু লেখা এসেছে এসব নিয়ে। সে সবে কিছু বিভ্রান্তিও চোখে পড়েছে। সে সব তো আর ব্লগ না, তাই লেখকরা লিখেই খালাস। আবু আহমেদ এর পুরো লেখাটা পড়ার সুযোগ হয়নি। তবে আপনার দেয়া উদ্ধৃতিটি পড়ে মনে হল, তিনি ঠিক উল্টো ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যেটি হয়তো খুবই স্বাভাবিক (পূর্বোক্ত কারণে), তবে সন্দেহাতীতভাবে বিপদজনক। সে সব দেখে যে কেউই বিভ্রান্ত হতে পারেন, আপনিও হয়তো কিছুটা হয়েছিলেন শুরুতে, যে কারণে পরবর্তীতে সংশোধনী দিয়েছিলেন। তবে আপনার প্রথম অনুবাদটি কিন্তু মূলের অনেকটাই কাছাকাছি ছিল। এই মন্তব্যগুলো লিখতে গিয়ে অনেক দিন পর কিছু বিখ্যাত WTO মামলা, কিছু কনটিনেন্টাল শেলফ মামলা, কিছু চার্টার পার্টি মামলায় আবারও চোখ বুলিয়ে নেয়ার সুযোগ হল। এখানে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে “without prejudice to” এর মত চুক্তির টার্ম প্রচলিত আইনকে (এবং অন্যান্য সমঝোতাজাত অধিকারকে) অপ্রযোজ্য তো করেই না বরং সে সবের সাথে বিরোধের সৃষ্টি হলে প্রচলিত আইনসৃষ্ট অধিকার-দায়বদ্ধতাকেই সাধারণত অগ্রাধিকার দেয়। প্রকৃত অর্থ নিরূপণের জন্য এখানে যে প্রশ্নটি জিজ্ঞাস্য, তা হল: without prejudice to “WHAT”? এই “what” প্রশ্নের উত্তরে যা পাবেন তা-ই সাধারণভাবে অগ্রাধিকার পাবে বা সংরক্ষিত হবে। আমার জানা মতে, এধরণের পরিস্থিতিতে “without prejudice” টার্মটিকে আদালত “without detriment” এর সমার্থক হিসেবেও ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছে (লক্ষ্য করুন: without prejudice to = without detriment to)। উপরোক্ত মামলাগুলো ছাড়াও অক্সফোর্ড ডিকশনারী, ব্ল্যাক’স ‘ল ডিকশনারী, হালসবেরীসহ – সব রেফারেন্সেও তা-ই দেখতে পাচ্ছি। “detriment” প্রতিশব্দটি প্রয়োগ করে দেখুন – অনুবাদ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে আশা করি।

    ঘ.

    “যাই হোক without prejudice এর মানে “বর্তমান কোন অধিকার পূর্ব থেকে ক্ষুন্ন না করে” এই অনুবাদের প্রায়োগিকতা বিষয়ে আপনার মতামত পেলে ভাল লাগবে।”

    এভাবে বললে কেমন হয়?

    অনুচ্ছেদ#৫: এই চুক্তিটি পক্ষরাষ্ট্রদ্বয়ের আভ্যন্তরীন প্রচলিত আইন অথবা পক্ষরাষ্ট্রদ্বয় কর্তৃক সম্পাদিত অন্য কোন চুক্তির দ্বারা সৃষ্ট অধিকার কিংবা দায়কে ব্যাহত করবেনা।

    ঙ.
    “কমনসেন্স” এর বিষয়টি আক্রমণ করার জন্য তোলা হয়নি। আমাদের মনে রাখতে হবে – উন্নত পূঁজির এই দেশগুলো যে বাকি পৃথিবীর ওপর আধিপত্য করে বেড়াচ্ছে এখন, তা কিন্তু কেবলই পেশী শক্তি দিয়ে নয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কয়েক শত বছরের মেধা এবং অভিজ্ঞতা। এই সব চুক্তি ও দলিলগুলোর ফ্রেমওয়ার্ক এবং কনটেন্ট প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সার্বক্ষণিকভাবে উন্নত (refine) করতে করতে এখন তারা সে সব অনেকটাই শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তাই যে চুক্তির ধারা পড়লেই সেটার অবান্তরতা (যেমন: “TIFA’র শর্ত বাকি সব আইন/চুক্তিসৃষ্ট অধিকার/দায় এর উপর অগ্রাধিকার পাবে” ধরণের অনুবাদ) দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে যায় তেমন স্থুল (unsophisticated) বিধান প্রণয়ন করার কথা না তাদের, ভেতরে ভেতরে উদ্দেশ্য যাই থাকুক না কেন। কারণ সেটি তাদের নিজেদের দেশেই ধোপে টিকবেনা, সমালোচিত তো হবেই। আর যে সব বিধান প্রণীত হচ্ছে, সে সব প্রণয়নের জন্য এবং সেগুলোকে নেগোশিয়েশনের টেবিল পার করিয়ে নেয়ার জন্য বিলিয়ন ডলারের পেশাদার ব্রেন-পাওয়ার রয়েছে পেছনে। এতখানি সহজসরলভাবে (পড়ুন: বোকা) তারা কোনো কথা বলবে এটা ভাবাটা প্রতিপক্ষকে আন্ডার এস্টিমেট করার মতই বিপদজনক। সে প্রসঙ্গেই ‘কমনসেন্স’ শব্দটির অবতারণা। তাই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির heavy handedness এর খতিয়ান মাথায় রেখেই আপনার সাথে এ বিষয়ে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ তেমন স্থুলভাবেই যদি উদ্দেশ্য হাসিল করবে পরাক্রমশালী এই রাষ্ট্রটি, তাহলে তার জন্য কি তাদের এমনকি TIFA’রও দরকার হয়? আমার তো মনে হয়না। যে মেধাশক্তির কথা উল্লেখ করলাম, তা কিভাবে পশ্চিমা পরিমন্ডলে কয়েক হাজার বিশ্ববিদ্যালয় (এবং থিন্ক ট্যান্ক গ্রুপ) এর তত্ত্বাবধানে সুপরিকল্পিত এবং সুসংগঠিতভাবে “চাষ” করা হয়, তার সামান্য নমুনা নিতান্ত ভাগ্যক্রমে দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছিল এক সময়। অন্য কোন দিনের জন্য সে আলোচনা তোলা থাকলো।

    সবশেষে – দরিদ্র এই দেশটিতে সাধারণ জনগণই হয়তো সত্যিকারের last line of defence; তাই জনতার একজন হিসেবে আমাদেরই দাঁড়িয়ে যেতে হবে। শাণিত করতে হবে চিন্তার আর যুক্তির তরবারী। সেখানে কোন ধরণের ভাণ, ভনিতা, হাততালিপ্রিয়তা, ইগো-বাজি, আলসেমী, শর্টকাট এর সুযোগ নেই। আমাদের পেছনে বিলিয়ন ডলার ব্রেনপাওয়ারের প্রোজেক্ট নেই, তাতে কি? কিন্তু আমরা নিজেরা তো আছি, এত কোটি মানুষ! শুনেছি কম্পিউটারে একটি প্রসেসরের সাথে আরেকটিকে সমান্তরালে জুড়ে জুড়ে নাকি কল্পনার অতীত প্রসেসিং পাওয়ারও তৈরী করা সম্ভব। আমরাও কিন্তু এতো অসহায় না।

    এধরণের আলোচনাগুলোকে আরও গভীরে নিয়ে চলুন। অপেক্ষা করছি শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি তার চূড়ান্ত রূপ এবং সরকারী ব্যাখ্যা নিয়ে কি চেহারায় দাঁড়ায় সেটি দেখার জন্য। ধন্যবাদ আপনাকে।

  9. Profile - ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৩:০০ পূর্বাহ্ণ)

    “(১) সব বক্তব্যে পরিমিত সংযম (বক্তব্য যত গুরুতর, সংযম যেন তত বেশী হয়);
    (২) তোলা নিক্তি মেপে precisely কথা বলার অভ্যাস (অন্তত লেখার ক্ষেত্রে তো বটেই)।
    (৩) এক কথাকে আরও দশটা বিষয়ের দশটা কথার সাথে মিলিয়ে না বলা (তাতে প্রতিটির ধার এবং প্রাসঙ্গিকতা ব্যাহত হয়)”

    কৌশল তিনটি গোল্ডেন, এতে সন্দেহ নেই। আমি নিজে এ তিনটি কৌশলের পক্ষে। অ্যানালিটিক্যালি সাউন্ড হবার দরকার বোধহয় শুরুতেই।

    • রায়হান রশিদ - ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৩:২৬ পূর্বাহ্ণ)

      অ্যানালিটিক্যালি সাউন্ড হবার দরকার বোধহয় শুরুতেই।

      একমত। ওটাই আসলে শুরুতে দেয়া উচিত ছিল। ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

      • অবিশ্রুত - ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১০:২০ অপরাহ্ণ)

        # দিনমজুর
        # রায়হান রশিদ
        # প্রোফাইল

        টিফা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অজানা অনেক কিছু জানা গেল আপনাদের সূত্রে, ধন্যবাদ এ জন্যে। আমার বাণিজ্য এবং অর্থনীতি ভালো বোঝেন, নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রগুলোর কাছাকাছিও আছেন এরকম এক বন্ধুর কাছে কয়েকদিন আগে টিফা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। লেখাবাহুল্য, তার মতামতকে আমি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তাঁর সততাপূর্ণ স্বীকারোক্তি : টিফার যে অধ্যাদেশ আমাদের সামনে আছে তাতে দেশের জন্যে ক্ষতিকর কিছু নেই। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের যে চিত্র তাতে বাংলাদেশের কোনও ক্ষতি হবারও সম্ভাবনা নেই। রাজনীতিকরা এটির কেউ বিরোধিতা করছেন, কেউ করছেন না রাজনৈতিক কারণে।
        তাকে বলেছিলাম, তা হলে কোনও কোনও অর্থনীতিবিদ কেন সমালোচনা করছেন? বন্ধুর উত্তর ছিল, অর্থনীতিবিদরাও তো এখন রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করেন।
        এই নিয়ে সংযত ও বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার সমস্যা কোনখানে বোধকরি এ থেকে একটু অনুমান করা যায়। কেউ ব্যাপারটিকে একেবারেই অ্যাপলিটিক্যালভাবে দেখেন, তাদের পক্ষে এ চুক্তির রাজনৈতিক দিকটি কাগজকলমের হিসেবে উদ্ধার করা কঠিনই বটে। আবার, যারা রাজনৈতিক দিক থেকে টিফা নিয়ে কথা বলছেন, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র,- এ বলেই বিদায় নিচ্ছেন; চুক্তিটির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দিকগুলি নিয়ে মাইক্রোলেবেল থেকে আলোচনার প্রয়োজনও বোধ করছেন না তারা। আমি কোনও কোনও রাজনীতিক-লেখক-কলামিস্টের লেখাতে এ ধরণের অ্যাটিচুড লক্ষ্য করেছি (তাদের ওপর আমার শ্রদ্ধা অবশ্য এই পর্যবেক্ষণের কারণে একটুও নষ্ট হয়নি। আমি বিশ্বাস করি তারা আন্তরিকভাবেই দেশের মঙ্গল চান, মানুষের মুক্তি চান এবং অন্য দশজন রাজনীতিক নেতার চেয়ে তারা অনেক আলাদা ও মোহমুক্ত)।
        কিন্তু ধরা যাক, বাংলাদেশে একটি সত্যিই দেশপ্রেমিক সরকার আছেন; তারা কি একটি চুক্তির প্রস্তাবনা এলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া প্রস্তাব,- এই যুক্তিতে নাকচ করে দেবেন? এইরকম পররাষ্ট্রীয় আচরণও দেশের জন্যে সুফল আনবে না।
        এই ক্ষেত্রে আপনারা যে-সংযত বিশ্লেষণের প্রশ্ন তুলেছেন, সেটি বিশেষভাবে প্রয়োজন (এই সংযমের সঙ্গে দয়া করে বাউচারের সংযমকে আবার গুলিয়ে ফেলবেন না কেউ)। বাণিজ্যের দিক থেকে এটি কী সুবিধা দিচ্ছে সেটি আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই চিহ্নিত করা প্রয়োজন। আবার এটিও মনে রাখা দরকার বাণিজ্যের দিক থেকে টিফা যদি সুবিধাজনকও মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের অন্যান্য চুক্তি মিলিয়ে এটি ক্ষতির জায়গা তৈরি করে কি না। যেমন, আমার মনে হয়, টিফা চুক্তির এ অধ্যাদেশ যত নিরীহই মনে হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সোফা-চুক্তির মতো একটি অস্ত্র থাকার কারণে এবং চীন-ভারত ও পাকিস্তানের আপেক্ষিকে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের (অন্যান্য অবস্থানকে আপাতত না হয় বিবেচনায় নাই নিলাম) কারণে তা শেষ বিচারে বিপজ্জনক।

  10. রায়হান রশিদ - ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১:০৭ পূর্বাহ্ণ)

    @ অবিশ্রুত

    কেউ ব্যাপারটিকে একেবারেই অ্যাপলিটিক্যালভাবে দেখেন, তাদের পক্ষে এ চুক্তির রাজনৈতিক দিকটি কাগজকলমের হিসেবে উদ্ধার করা কঠিনই বটে। আবার, যারা রাজনৈতিক দিক থেকে টিফা নিয়ে কথা বলছেন, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র – এ বলেই বিদায় নিচ্ছেন; চুক্তিটির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দিকগুলি নিয়ে মাইক্রোলেবেল থেকে আলোচনার প্রয়োজনও বোধ করছেন না তারা।

    এই ভারসাম্যটা আসলেই খুব দরকার। প্রকাশভঙ্গিতে সংযম দরকার, কিন্তু তা যেন “বাউচার এর সংযম” না হয়ে যায় – একেবারে খাঁটি কথা। ‘মাইক্রোলেভেল’ এসব আলোচনার কোন বিকল্প নেই। বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই চুক্তিগুলো হল বাস্তবতা। আমাদের দেশ, সরকার, সার্বভৌমত্ব এখনো সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি যেখানে থাকলে বৈশ্বিক ব্যবস্থায় আমাদের এসব চুক্তি ও বিদেশী চাপকে অগ্রাহ্য করা সম্ভব হোতো। একটু হয়তো বাড়িয়ে বলা শোনাবে, তবে সম্ভবত বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় কোনো দেশই সেই অবস্থানে নেই। এসব চুক্তি সেই বাস্তবতারই প্রতিফলন।

    এখন এই বাস্তবতাকে আমরা কয়েকভাবে মোকাবিলা করতে পারি। এক, প্রথমেই এ ধরণের সব চুক্তিকে মুখের ওপর নাকচ করে দিতে পারি। দুই, চোখ বন্ধ করে চুক্তির পক্ষে গুনগান চালিয়ে যেতে পারি। তিন, এসব চুক্তির প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ফলাফল বিচার করে (যেটি আপনি প্রস্থাব করেছেন) বাস্তব সম্মত একটা দরকষাকষির সিদ্ধান্ত নিতে পারি এবং সে অনুযায়ী সমস্ত চ্যানেলে সক্রিয় হতে পারি।

    প্রথমটা করার সিদ্ধান্ত নিলে আর কোন দায়িত্ব নিতে হয়না। দ্বিতীয় রাস্তা ধরতে গেলে আর কিছু না কেবল মেরুদন্ডটা বন্ধক দিতে হয় শুধু, তবে তাতে ব্যক্তিগত, আর্থিক কিংবা আবস্থানিকভাবে অনেক লাভবান হবার সম্ভাবনা থাকে। আর তৃতীয় রাস্তা হল playing the system, যেটি কুসুমাস্তীর্ণ তো নয়ই, বরঞ্চ অনেকটাই বন্ধুর। সেই রাস্তায় চলতে গেলে প্রস্তুতি যেমন প্রয়োজন, তেমনি দরকার প্রতিবাদে এবং response এ পেশাদারিত্ব।

    এখন কেউ হয়তো প্রতিযুক্তি দেখাবেন – শিকারের কি বাঘের (শিকারী) সাথে দরকষাকষি করা চলে? সেটি যদি মানতে হয় তাহলে এখন থেকেই নিজেদেরকে নিরিহ শিকার হিসেবে মেনে নিয়ে এক ধরণের ফ্যাটালিস্ট অন্ধকারে গুটিয়ে নিতে হবে। তাছাড়া, ‘শিকার’, ‘শিকারী’ এ অবস্থানগুলোর সবই তো কিছুটা পারসেপশন এরও ব্যাপার। তাই আমাদের মনে হয় চেষ্টা করা উচিত নেগোশিয়েশনে সেই তুলনামূলক এডভান্টেজগুলো খুঁজে নিয়ে জোরে শোরে বিদেশ দফতর, বানিজ্য দফতর নিয়ে মাঠে নামা। আপনার মন্তব্যেই এমন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে, যেসবের আদ্যপান্ত বিশ্লেষণ দরকার এখন থেকেই। আর তাছাড়া, এটি যদি শপিং এর যুগ হয়, “চুক্তি-শপিং” তো আমরাও করতে পারি, পারিনা? এই বিষয়গুলোতে যাঁরা বিশেষজ্ঞ, তাঁরা লিখলে আমরা নিশ্চয়ই আরও অনেক কিছু জানতে পারতাম। দয়া করে আপনার বন্ধুকেও কি অনুরোধ করবেন এখানে অংশগ্রহণ করার জন্য? খুব ভাল হোতো তাহলে।

    • অবিশ্রুত - ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৯:০১ অপরাহ্ণ)

      টিফা নিয়ে সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী একেকসময় একেক বক্তব্য রাখছেন। দৈনিক আজকের সময় ১৮ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে এ বিষয়ে।

  11. অবিশ্রুত - ২৩ অক্টোবর ২০০৯ (৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ)

    টিফা নিয়ে কথাবার্তা চলছে এবং আমাদের অজান্তে। আমরা যখন ঢাকায় যানজটে হিমশিম খাচ্ছি, দ্রব্যমূল্যের চাপে নাকানিচুবানি খাচ্ছি, যুদ্ধাপরাধীরা আমাদের হাত গলে ফস্কে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে, একজন রসু খাকে মিডিয়া আলোচনার বিষয়বস্তু করে তুলেছে, তখন প্রকৃত রসু খা-রা মেতে উঠেছে টিফা-র খেলায়। এই রসু খাঁরা আপাতদৃষ্টিতে কাউকে ধর্ষণ করে না, কোনও খুন করে না, কিন্তু যা করে তা ধর্ষণ ও খুনের চেয়ে বেশি।

    তিন বিষয় আগে নিষ্পত্তি চায় বাংলাদেশ
    এ বছরই টিফা চুক্তি স্বাড়্গরে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

    শফিকুল ইসলাম :
    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরেই টিফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট) চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের বাণিজ্য বিষয়ক সহকারী প্রতিনিধি মাইকেল জি জিলানী। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আপত্তির কারণেই চুক্তির অনেক কঠিন শর্ত ও শব্দ ইতোমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া চুক্তির খুটিনাটি অনেক বিষয় সম্পর্কে আগে দ্বিমত থাকলেও এখন উভয়দেশ একমত হয়েছে। গতকাল সকালে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের সঙ্গে তার সচিবালয়ের দফতরে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স নিকোলাস ডিন উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে মাইকেল জি জিলানী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসের সঙ্গে একঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন- টিফা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ বিবেচনা করবে বলে তিনি আশাবাদী।
    অপরদিকে বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লেবার স্ট্যান্ডার্ড, পরিবেশ ও ট্রিপস (ট্রেড রিলেটেড ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি রাইটস) বিষয়ে আমদের গভীর অবজারভেশন রয়েছে। এ তিনটি বিষয় আগে নিষ্পত্তি হতে হবে। এ বিষয়গুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ টিফা চুক্তিতে সই করবে না। তিনি জানান, মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে টিফা ছাড়াও সেদেশের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য যাতে কোটা ও ডিউটি ফ্রি প্রবেশাধিকার পায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্বমন্দা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি পোষাতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের কোটা ও ডিউটি ফ্রি প্রবেশাধিকার প্রয়োজন। বাণিজ্যমন্ত্রী মার্কিন কর্মকর্তাদের বলেছেন, বাংলাদেশে এখন কোনো শিশুশ্রম নেই। ইপিজেডগুলোতে প্রতিষ্ঠিত কারখানাসমূহে শ্রমিক কল্যাণ কমিটি গঠিত হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের কংগ্রেস ও সরকারের কাছে বাংলাদেশের বিষয়গুলো উপস্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ।
    জানা গেছে, টিফার খুটিনাটি বিষয়ে আলোচনা এবং বাংলাদেশ সরকারকে চুক্তিতে সই করানোর ক্ষেত্রে সম্মত করাতেই মার্কিন এই কর্মকর্তা বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। চলতি বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টিফা সই করতে চায়। বিশ্বের ৫৬টি দেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টিফা রয়েছে। দড়্গিণ এশিয়ায় পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে টিফা রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবকটি দেশের সঙ্গেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিফা রয়েছে বলেও জানা গেছে।

    সংবাদসূত্র : আমাদের সময়, ২০ অক্টোবর ২০০৯।

    পরদিন আমাদের সময় পত্রিকাতেই এ সংক্রান্ত আরেকটি সংবাদ :
    যুক্তরাষ্ট্র চায় যত দ্রুত সম্ভব চুক্তি সই হোক

    খুররম জামান :
    বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডব্লিউটিও’র শর্ত অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলো বাণিজ্য সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ত্ব আইন মেনে তাদের পণ্য বিদেশে রফতানি করতে বাধ্য নয়। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তারা মেধাস্বত্ত্ব আইন না মেনেই তৈরি করা পণ্য রফতানি করতে পারবে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স ছাড়াই ওষুধ তৈরি করে সরাসরি বিদেশে রফতানি করার সুযোগ পাবে। কিন্তু টিফা চুক্তি হলে এখনই এই আইন মেনে চলতে বাধ্য হবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওষুধ তৈরির লাইসেন্স অবশ্যই থাকতে হবে।
    নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, এসব বিবেচনা করেই সরকার এখনই টিফা চুক্তি সই করতে চাচ্ছে না। তাছাড়া ২০১৬ সালের আগে এ চুক্তিতে সই করলে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে না। তিনি বলেন, কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকলে ৩০ দিনের মধ্যে তার নিষ্পত্তি করতে হবে। এটা খোদ যুক্তরাষ্ট্রের পড়্গেও মেনে চলা সম্ভব হবে না।
    এদিকে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যবিষয়ক সহকারী প্রতিনিধি মাইকেল ডিলেন আশাপ্রকাশ করে বলেছেন, তার দেশ যতদ্রুত সম্ভব বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি (টিফা) স্বাড়্গর করতে চায়। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। মাইকেল ডিলেন গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে সাড়্গাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
    তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিফা নিয়ে বাংলাদেশে যে বিতর্ক হচ্ছে তা স্বাভাবিক। চুক্তি নিয়ে বাধ্যবাধকতার কিছু নেই। চুক্তি হবে কি না তা বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের ওপর নির্ভর করছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনার জন্য আনুষ্ঠানিক মেকানিজম থাকা খুবই প্রয়োজন। তাই যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্রুত টিফা চুক্তি স্বাড়্গর করতে।
    ডিলেন বলেন, ইতোমধ্যে বিশ্বের ৩২ দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র টিফা চুক্তি সই করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে তিনি বলেন, এই ইসুটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দোহা রাউন্ড আলোচনার ওপর নির্ভর করছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের মূল বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি‘র মেয়াদ চলতি বছরই শেষ হয়ে যাচ্ছে।
    পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে শিশু শ্রমিক রয়েছে। টিফা হলে শ্রমআইন মানতে হবে। এটা বাংলাদেশ চায়। কিন্তু এই শিশুদের বিকল্প উন্নত জীবন প্রক্রিয়ায় নেওয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। ফলে তারা কোথাও কাজ করতে না পারলে আরো মানবেতর জীবন যাপন করবে। টিফা হলে হাজার হাজার শিশুশ্রমিক বেকার হয়ে যাবে।
    যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে একবার টিফা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছিলো। ২০০৫ সালে আরেকটি এবং ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আরো একটি খসড়া পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
    বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আসিয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সই হওয়া টিফা চুক্তিটি অনেকটা উদার। এরকম চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে হতে পারে। কিন্তু বাহরাইনের সঙ্গে যে টিফা চুক্তি হয়েছে অনুরূপ বাংলাদেশের সঙ্গে হলে তা স্বার্থবিরোধী চুক্তি হবে। বাহরাইনের চুক্তিতে অনেক বৈষম্যমূলক ধারা রয়েছে। টিফার মধ্যে মেধাস্বত্ত্ব আইন যুক্ত করে দেয়ায় অনেক ড়্গেত্রে বাংলাদেশ সুবিধা পাবে না। স্বার্থের বিষয় চিন্ত করলে টিফা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই যাবে। কারণ যে কোনো বাণিজ্যচুক্তির স্বার্থ হচ্ছে পণ্য রফতানি ও সেবা রফতানি করা। টিফা চুক্তিতে পণ্য বিষয়টি নেই। আছে সেবা রফতানি। সেবা রফতানির মধ্যে রয়েছে জ্বালানি, আইটি, টেলিযোগাযোগ, পরিবহন, মিডিয়া ইত্যাদি। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি হচ্ছে জ্বালানির দিকে।

    • রায়হান রশিদ - ২৩ অক্টোবর ২০০৯ (৬:০৫ পূর্বাহ্ণ)

      আসলেই আঙ্গুলের ফাঁক গলে গড়িয়ে যাচ্ছে জল! বানিজ্যমন্ত্রীর কি ‘অসাধারণ’ এই দাবী:

      বাণিজ্যমন্ত্রী মার্কিন কর্মকর্তাদের বলেছেন, বাংলাদেশে এখন কোনো শিশুশ্রম নেই। ইপিজেডগুলোতে প্রতিষ্ঠিত কারখানাসমূহে শ্রমিক কল্যাণ কমিটি গঠিত হয়েছে।

      মন্ত্রী হতে হলে বুঝি এমনই ঠোঁট কাটা নির্লজ্জ হওয়া লাগে প্রথমে!!

Reply to রায়হান রশিদ

Cancel reply
  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.