পিলখানা হত্যাযজ্ঞ: চিন্তাঝড় ৩ — গুজবের ময়না তদন্ত

ঢাকা এখন গুজবের শহর। অনেক ধরণের আকাশকুসুম গুজব উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে বাতাসে। তারই একটি হল কথিত এক সেনা জেনারেলের একটি প্রচারণা যেটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ব্লগে এটিকে জনৈক সেনা জেনারেলের ইমেইল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তাই আলোচনার সুবিধার্থে প্রচারণার লেখককে 'জেনারেল' হিসেবেই সম্বোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। ইমেইলটি আমার নজরে এসেছে বেশ কয়েকদিন আগেই। এক বন্ধু পাঠিয়েছিল। এ ধরণের 'অসাধারণ' প্রচারণাকে আমি সাধারণত গুরুত্বের সাথে নিইনা। পড়াটাকেও এমনকি মনে করি মূল্যবান সময়ের অপচয়। ধরেই নিয়েছিলাম এমন আকাশকুসুম তত্ত্বে অন্তত শিক্ষিত কোন মানুষের ভাবান্তর হবে না ...

 

সিরিজের অন্যান্য পোস্ট:
চিন্তাঝড় ১: বিডিআর বিদ্রোহ — প্রথম প্রহর‌‌ — কী কারণে? কারা? ঠিক এখনই কেন?
চিন্তাঝড় ২ : পিলখানা হত্যাযজ্ঞ — কারা, কেন, কীভাবে?

ঢাকা এখন গুজবের শহর। অনেক ধরণের আকাশকুসুম গুজব উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে বাতাসে। তারই একটি হলো কথিত এক সেনা জেনারেলের একটি প্রচারণা যেটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ব্লগে এটিকে জনৈক সেনা জেনারেলের ইমেইল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তাই আলোচনার সুবিধার্থে প্রচারণার লেখককে ‘জেনারেল’ হিসেবেই সম্বোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। ইমেইলটি আমার নজরে এসেছে বেশ কয়েকদিন আগেই। এক বন্ধু পাঠিয়েছিল। এ ধরণের ‘অসাধারণ’ প্রচারণাকে আমি সাধারণত গুরুত্বের সাথে নিই না। পড়াটাকেও এমনকী মনে করি মূল্যবান সময়ের অপচয়। ধরেই নিয়েছিলাম এমন আকাশকুসুম তত্ত্বে অন্তত শিক্ষিত কোনো মানুষের ভাবান্তর হবে না। কারণ, ইতিপূর্বে এমনই উদ্ভট থিওরি প্রচার করা হয়েছে ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার পর। বলা হয়েছিল শেখ হাসিনা নাকি নিজেই নাটকটি সাজিয়েছিলেন; নিজের চার পাশে ডজনখানেক বিধ্বংসী গ্রেনেড ফাটানো ছিল সে-নাটকের অংশ! সারা দেশব্যাপী যখন জঙ্গিরা সিরিজ বোমা হামলা করেছিল, তখন জোট সরকারের ক্ষমতাসীন শ্রেণীটি প্রচার চালিয়েছিল এটা নাকি ‘ভারতীয় হিন্দু জঙ্গিদের কাজ’! বাংলা ভাই যখন উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় জীবন্ত মানুষদের কেটে পুড়িয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখছিল, জোট সরকারের মহাক্ষমতাধর খালেদা-নিজামীরা প্রায় দু’বছর ধরে দেশবাসীকে বোঝানোর চেষ্টা করে গেছেন ‘বাংলা ভাই এর আসলে কোনো অস্তিত্বই নেই, তিনি মিডিয়ার সৃষ্টি’! জেনারেল সাহেবের এই প্রচারণাটি পড়েও আমার তেমনই মনে হয়েছে প্রথমটায়। আমার বিশ্বাস ছিল, এত বেশী দুঃখ কষ্টের ঝড় এই জাতির ওপর দিয়ে বয়ে গেছে যে আমরা ঠেকে না হলেও ঠকে নিশ্চয়ই কিছু-না-কিছু শিখেছি অতীত থেকে। তাই আমার বিশ্বাস ছিল, বাঙালির কাছে অন্তত এ ধরণের উদ্ভট প্রচারণা হালে পানি পাবে না। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে এই উদ্ভট তত্ত্বটিই এখন শেকড় গেড়ে বসতে শুরু করেছে কারো কারো মনে। এমনকী, আপাত দৃষ্টিতে বুদ্ধিমান যুক্তিবাদী কিছু মানুষও তত্ত্বটি খানিকটা যেন বিশ্বাসও করে ফেলেছেন এর মধ্যে।

আসলে যে-কোনো মিথ্যা প্রচারণার সুবিধাটি বোধহয় এই জায়গায়। আপনি এক চিমটি সত্যের সাথে এক মুঠো মিথ্যে মিশিয়ে তাকে প্রচারণার জোয়ারে ভাসিয়ে দিন, বারবার বলতে থাকুন, তত্ত্বের বিরুদ্ধে তত্ত্ব দাঁড় করান, এবং আরেকটু বুদ্ধিমান হলে সেটি ইংরেজি ভাষায় এবং ছাপার অক্ষরে লিখুন। আর তার সাথে যদি কিছু সাধারণ তথ্য যোগ করে তাকে ক্রমিক নম্বর দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই! ইংরেজিতে কি কেউ আর মিথ্যে বলে? তাও আবার সামরিক উর্দি পরে? এতেও যদি ব্যর্থ হন, তাহলে শেষ চেষ্টা হিসেবে এটিকে দু’টি রাজনৈতিক শক্তির লড়াই অথবা দুই নারীর চিরন্তন বিবাদ হিসেবে তুলে ধরুন। ভরসা রাখতে পারেন যে বেশির ভাগ মানুষই তিতিবিরক্ত হয়ে তখন বলবে ‘যা হয় হোক, এটা দু’জনের কামড়াকামড়ি, আমরা বাপু অতো রাজনীতি বুঝি না, বুঝতেও চাই না’। ফলতঃ যা হওয়ার তা‌ই হবে, সত্য চাপা পড়ে থাকবে, যেমনটি চাপা পড়ে থেকেছে ৩৮টি বছর ধরে। আর কবরের নিস্তব্ধতায় মৃত্যুর ওপার থেকে সুবিচার-বঞ্চিত শহীদদের আত্মা গুমরে কেঁদে যাবে, আমাদের তা শোনা হবে না কখনই; আমরাও জম্বি কিংবা পাপেট হয়ে জীবনের বাকি দিনগুলো পার করে দেবো। অনেক ব্যস্ততার মাঝেও তাই অনুভব করছি এই প্রচারণাটির একটি ময়না তদন্ত হওয়া দরকার।

এই মুহূর্তে কয়েকটি বিষয়ই মূলতঃ সব আলোচনা ফোরামগুলোর বিতর্কের বিষয়:

(১) প্রধানমন্ত্রীর শক্তি প্রয়োগ না করার সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল কিনা
(২) সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা হত্যাকারীদের সাহসী করেছে কিনা এবং এর সুযোগ নিয়ে তারা আরও বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কিনা
(৩) ঘটনার মোকাবেলায় অত্যধিক সময় নেয়া হয়েছে কিনা
(৪) সেনাবাহিনীর পিলখানায় ঢোকার জন্য সরকারের অনুমতির দরকার ছিল কিনা
(৫) সরকার নিজেই উদ্যোগ নিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে কিনা; অথবা ঘটনার মূল অপরাধীদের পালানোর সুযোগ করে দিয়েছে কিনা [জেনারেল সাহেবের প্রচারণাটি সেই লাইনেই, যেটির প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি]

মাঠ-গরম-করা প্রশ্নগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করবো পরের কোনো পোস্টে সময় পেলে। কিন্তু তার আগে বর্তমান পোস্টে আমি শুধু উপরের ৫ নম্বর বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করবো, উদ্দেশ্য-প্রণোদিত এ ইমেইল প্রচারণাটির সম্ভাব্য ক্ষতিকারক প্রভাব বিবেচনায়।

ক.
জেনারেল সাহেবের এই ইমেইলটির (প্রচারণাটির) কনটেন্টে যাওয়ার আগে এটির কিছু উপরি-বৈশিষ্ট্যে দ্রুত একটু নজর বুলিয়ে নেয়া যাক। প্রথমেই যেটি চোখে পড়ে তা হলো ইংরেজি ভাষার ব্যবহার। প্রচারণাটির শুরুর কয়েক অনুচ্ছেদের সাথে মাঝখানের অনুচ্ছেদের ইংরেজির মান এবং স্টাইলে কিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়। প্রথম অংশটি, হতাশাব্যঞ্জক হলেও সত্যি, ভুল ইংরেজিতে লেখা! অনেকটা যেন অভিধান সামনে নিয়ে বাংলা থেকে ইংরেজিতে আক্ষরিক অনুবাদ করা, ভাষার মূল টোন বা coherence-এর ব্যাপারে কোনো ধরণের সচেতনতা ছাড়াই। মধ্যভাগের ইংরেজি তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভিন্ন, অন্তত স্টাইলের দিক থেকে। শেষভাগে বেশ জোরে শোরে আল্লাহ্‌র নামে কিরা-কসম কাটার প্রবণতা (‘what were said in this mail in the name of Allah are true’!) লক্ষ করা যায়, অনেকটা জামাত শিবির হিজবুত তাহরীরের লিফলেটের মতো। উপসংহারে আমার অনুমান, প্রচারণা ইমেইলটি সম্ভবত একাধিক মানুষের মিলিত প্রচেষ্টার ফল।

খ.
জেনারেল সাহেব বলেছেন:

ক্রম#১: Before 2002, only very average army officers were posted to BDR. Those officers used to pass time and wait for retirement. The scenario was changed in late 2002, when army started to pump in outstanding officers to BDR to shape up the national border and curb cross-border crime and smuggling.

জেনারেল সাহেবের ভাষায় ব্যাপারটি দাঁড়াল এরকম যে ২০০২-এর আগে (সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়) শুধুমাত্র অযোগ্য অফিসারদেরই বিডিআর-এ পোস্টিং দেয়া হতো। এবং, ২০০২-এর পরে (অর্থাৎ জোট সরকারের সময়) ভালো অফিসারদের সীমান্তে পোস্টিং দেয়া শুরু হয়। জানতে ইচ্ছে করে, এই তথ্যের উৎস কী? বাস্তবে কি সত্যিই তাই ঘটেছে? শেখ হাসিনা যখন সামরিক অফিসারদের সাথে সেনাকুঞ্জে বৈঠক করলেন, তখন প্রায় সব অফিসারই দুঃখ করেছিলেন কীভাবে দুই সরকারের আমলেই পোস্টিং প্রোমোশন বদলি রিক্রুটিং ইত্যাদি বিষয়ে দলীয়করণ হয়েছে (এখানে দেখুন সেনাকুঞ্জের সেই সভার অডিও রেকর্ড: ফাইল#৬)। অথচ, আমাদের জেনারেল সাহেব বোঝাতে চাইলেন জোট সরকারের আমলের সব নিয়োগই নাকি ভালো/যথার্থ হয়েছে। এর থেকে এই জেনারেলটি রাজনৈতিকভাবে কোন্ জোটের মুখপাত্র, সেটি বুঝতে বুদ্ধিমান পাঠকের কোনো অসুবিধা হয় কি? প্রসঙ্গত, এই সভাটিতে বেসামরিকদের মধ্যে কেবল শেখ হাসিনা এবং বেগম মতিয়া চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন; তারপরও গোপনীয় এই সভাটির অডিও রেকর্ড কারা প্রকাশ করলো (এবং কী উদ্দেশ্যে) এবং কেন বেছে বেছে কিছু খণ্ডিত অংশ প্রকাশ করলো সে বিষয়ে প্রশ্ন করার মতো যথেষ্ট যৌক্তিক বোধ কি আমাদের আছে? পাঠকই মনস্থির করুন। সে প্রসঙ্গে এক ব্লগার মন্তব্য করেছেন:

How can the PM trust the army again with national security when her confidential conversations with the best and brightest of the army are being leaked out to the public causing serious breach of national security by letting our enemies know about the discord and showing a perception of vulnerability in the national army currently? (এখানে)

গ.
জেনারেল সাহেব দাবি করেছেন (আবারও কোনো সূত্রের উল্লেখ ছাড়া):

ক্রম#১: So, to guard our beloved land, army started pumping very good officers into BDR. Before 2002, the BDR jawans were very rich through the earning of smuggling. Their sepoys and naiks and havilders had buildings and house that even officers can only dream of. After 2002, smuggling and its sharing by BDR jawans started coming down.

অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন: জোট সরকারের সময় সীমান্তে চোরাচালান ইত্যাদি কমে গিয়েছিল। এই ‘অসাধারণ’ তত্ত্বের পক্ষে কী প্রমাণ তিনি দাখিল করলেন? তাঁর ভাষায় ‘Capture of smuggling figures, if you can manage, will rightly prove that’। এখানে ভুল ইংরেজিতে অস্পষ্ট ভাষায় জেনারেল সাহেব যেটি বোঝাতে চেয়েছেন সেটি সম্ভবত এই যে, ধরা-পড়া চোরাকারবারীর সংখ্যা (যদি কেউ খুঁজে বের করতে পারে!) তার উপরোক্ত দাবিকে সমর্থন করে! প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে — সংখ্যাগুলো তিনি নিজে খুঁজে পেয়েছেন তো? পেলে জনগণকে সেটি কবে জানাবেন?

যেটা উল্লেখ করা জরুরি এখানে, তা হলো, ষড়যন্ত্রকারীদের দলীয় এজেন্ডার গড্ডলিকা প্রবাহে ভাসতে ভাসতে জেনারেল সাহেব একটি অদ্ভুত কাণ্ড করে বসেছেন। তিনি বুঝে কিংবা না বুঝেই জনগণকে জানানোর চেষ্টা করেছেন যে, বিডিআর-এ সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে পাঠানো অফিসাররা অত্যন্ত দুর্নীতিপরায়ণ এবং অযোগ্য। (যদিও তিনি ২০০২-এর আগের এবং পরের অফিসারদের মধ্যে একটি ক্ষীণ পার্থক্য টানার চেষ্টা করেছেন)। একটু ব্যাখ্যা করে বলি। আমরা জানি, বিডিআর এর জওয়ান এবং তাদের ডিএডি-রা সেনা অফিসারদের সরাসরি কমান্ডে কাজ করেন। সুতরাং, বিডিআর সদস্যরা যদি দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকে, তার মানে দাঁড়ায় — সে দুর্নীতিতে সেনা কর্মকর্তারাও দোসর। আর ঘুষ ও দুর্নীতির সাধারণ নিয়ম হলো যে যত বড় অফিসার তার বখরা ততো বেশি। সেই হিসেবে, জেনারেল সাহেবের বক্তব্য অনুযায়ী জওয়ানরা যদি একটি বাড়ি বানায়, তাহলে অফিসারদের একাধিক বাড়ি বানানোর কথা। তাঁর আরেকটি অভিযোগও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। জেনারেল সাহেবের কথা সত্যি হয়ে থাকলে সেনাবাহিনীতে অযোগ্য এবং অদক্ষ অফিসারেরও তাহলে কমতি নেই। এটি আমাদের জন্যও ‘নতুন খবর’। তাহলে কি এটাই ধরে নিতে হবে যে মিলিটারি একাডেমি থেকে নিম্ন যোগ্যতাসম্পন্ন অফিসাররাও কমিশন পাচ্ছেন বা পেয়েছেন? কিংবা, সরকারী খরচে পরবর্তীকালে গরীব এই রাষ্ট্রটির পক্ষ থেকে যেসব ব্যয়বহুল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, তারও একাংশ কি তাহলে অপচয় করা হচ্ছে অযোগ্য এইসব অফিসারদের পেছনে?

জেনারেল সাহেবের উত্থাপনকৃত অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুতর। তাই আমার জানার আগ্রহ হচ্ছে, জোট সরকারের আমলে (যখন নাকি তার ভাষায় সবকিছু ঠিকঠাক ছিল) ‘২০০২ এর আগ পর্যন্ত সীমান্তে নিয়োগকৃত অফিসারদের’ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ভেতর কী কী আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল? আমার ধারণা, জনস্বার্থ এবং স্বচ্ছতার লক্ষ্যে দেশবাসীও সেটি জানতে চায় এখন। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে তেমন পদক্ষেপ না নেয়া হয়ে থাকে জোট শাসনামলে, তাহলে তা বিএনপি-জামায়াতের দুর্নীতি-লালন সম্বন্ধে কি অনুসিদ্ধান্ত দাঁড় করায় জনগণের সামনে? কিংবা এই কথিত জেনারেলের রাজনৈতিক সম্পৃক্তি সম্বন্ধেই-বা কী সত্য উম্মোচিত হয় আমাদের সামনে?

আমার এও জানার কৌতুহল হচ্ছে: জেনারেল সাহেব যে ঢালাওভাবে সেনাবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অফিসারদের (২০০২-পূর্ববর্তী অফিসারদের) দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে কালিমা লেপনের চেষ্টা করলেন, সেটাকে আমাদের প্রফেশনাল এবং দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন অন্যান্য অফিসাররা কীভাবে দেখবেন? এসব অভিযোগ তো আমার না, কিংবা মিডিয়ারও না, স্বয়ং জেনারেল সাহেবের। তিনিই সেনাবাহিনীর অফিসারদের বিরুদ্ধে গুরুতর এই সব রটনা করছেন হঠাৎ জনপ্রিয়তা লাভকারী ইমেইলটির মাধ্যমে। এবং সেনাবাহিনীর অনেককে দেখছি সেটি (বুঝে বা না বুঝে) স্বতোপ্রণোদিত হয়ে সর্বত্র বিলি করে বেড়াতে। আমাকে কেন এটি খণ্ডন করতে হচ্ছে আজ? তারাই বরং খণ্ডন করুক এসব অভিযোগ এবং আমাদের জানাক এই বস্তাপচা প্রচারণাটি আসলে কতটা আমলযোগ্য!

ঘ.
তিনি আরও বলেছেন:

ক্রম#২: Whenever there is an encounter with BSF, always we are the winner . . . as long as army officers lead BDR, BSF will never win any single battle, they will always be in the loser’s end and India will not be able to pump in drugs, fake currency and other harmful things into Bangladesh. The DADs of BDR are the worst losers. They are educated officers but can’t do anything because of army officers.

এখানে তিনি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যে ইঙ্গিতটি দিতে চেয়েছেন তা হলো এই: পিলখানা ঘটনার পেছনে ‘ভারত দায়ী’। বিএনপি-জামাতী-রাজাকার-আলবদরদের বহু ব্যবহারে জীর্ণ অনেক পুরনো একটি কায়দা এটি। এক্ষেত্রে (তাঁর উল্লেখ-কৃত) চোরাচালান প্রসঙ্গে একটি বিষয় আমাদের বোধহয় মনে রাখা দরকার। তা হলো, চোরাচালানীতে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্র নিজে। কারণ, এর ফলে রাষ্ট্র বঞ্চিত হয় কোটি কোটি টাকার ট্যারিফ (tariff) থেকে। এই কথাটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, ভারতের ক্ষেত্রেও তেমনি সত্য। কাজেই, সীমান্তে চোরাচালানকে নিষ্কণ্টক করতে গণতান্ত্রিক ভারত সরকারের এত বেশি উৎসাহী হওয়ার কোনো কারণ তো দেখি না। ভারী ভারী তত্ত্ব না আউড়েও শুধু কাণ্ডজ্ঞান দিয়েও যে কেউ এই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন। এক্ষেত্রে এমনটিও হতে পারে যে তিনি শুধু BSF কে দায়ী করতে চেয়েছেন (বিডিআর এর ডিএডি-দের সহযোগী দেখিয়ে), পুরো ভারত সরকারকে নয়। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়। ভিন্ন দেশের মাটিতে এসে বিএসএফ এতো বড় একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললো? আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করছিল তখন?

ভারতকে জড়িত করার এই অপচেষ্টার সবচাইতে দুর্বল অংশটি হলো:

১) রাজনৈতিকভাবে ভারতের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন একটি সরকার এখন বাংলাদেশের ক্ষমতায়। এই সরকারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ট্রানজিট ইত্যাদির মাধ্যমে বৈধ ভাবেই কয়েক হাজার গুণ বেশি অর্থ পুরো পাঁচ বছর ধরে তারা উপার্জন করতে পারবেন, যদি সেটাই তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে। সেখানে নিজেদের মূল্যবান ট্যারিফ বিসর্জন দিয়ে বিডিআর এবং তাদের নিজেদের বিএসএফ জওয়ানদের বাড়ি গাড়ি করে দেয়ার জন্য তারা হঠাৎ এত উতলা হয়ে উঠবেন কেন যে তার জন্য তারা এমনকি এতো বড় মাপের একটি হত্যাকাণ্ড ঘটাতেও পিছপা হবেন না? আমরা সবাই জানি ভারত সরকার এখন ট্রানজিটের পক্ষে। বিডিআর এর প্রয়াত ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ নিজেও ট্রানজিট এবং ট্রানশিপমেন্টের পক্ষে ছিলেন (ডিফেন্স স্টাফ কলেজে দেয়া তাঁর এই প্রবন্ধটি পড়ুন)। আমাদের বর্তমান সরকারও এমন পদক্ষেপের বিরোধী নয়। সকল পক্ষ যেখানে রাজি, সেখানে ভারত সরকার বৈধ পথে না এগিয়ে এমন একটি আন্তর্জাতিক কেলেঙ্কারির ঝুঁকি নেবে কেন? আমার পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন যে সেনাবাহিনীর বুদ্ধিমান অফিসারদের এবং দেশবাসীকে এসব ছেলে-ভুলানো গল্প বলে ভোলানো সম্ভব আজকাল!

২) এই গোষ্ঠীটি কেন দেশবাসীকে বারবার ভারতীয় জুজু দেখানোর চেষ্টা করেন, সে বিষয়ে আমার একটি থিওরি আছে। শক্তিশালী ভারত রাষ্ট্রকে দায়ী করার সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হলো, আমরা চাইলেও তাদের বিচার করতে পারবো না। কারণ, এভাবে যদি কোনো রাষ্ট্রের বিচারই করা যেত তাহলে আজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের সরকার প্রধানরা থাকতেন আফগানিস্তান এবং ইরাকের কাঠগড়ায়। আর ভারত জুজুকে সামনে নিয়ে আসার আরেকটি বড় সুবিধা হলো: এক সময় অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের ভিড়ে পুরো বিষয়টিই হারিয়ে যাবে, আর মূল অপরাধীরা চিরদিনই থেকে যাবেন আড়ালে। কী চমৎকার! ভারত-বিদ্বেষও ছড়ানো গেল, নিজেদেরও রক্ষা করা গেল অপকর্মের দায়ে দণ্ডিত হবার হাত থেকে।

৩) এই গোষ্ঠীটির নাড়ীর টান যেই দিকে সেই পাকিস্তানের ব্যাপারটিই লক্ষ করুন। আমাদের দেশের এই গোষ্ঠীটি (এই জেনারেল যার অনুসারী বলে সন্দেহ হচ্ছে এখন) কিন্তু কখনো কোনো অপকর্মের জন্যই এমনকি ভুল করেও কখনো পাকিস্তান, ISI বা ধর্মীয় মৌলবাদী কোনো গোষ্ঠীর দিকে আঙুল তোলেন না, যাদের কিনা সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল ‘৭১ আর ‘৭৫-এ বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে চক্রান্তমূলক প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পেছনে (এখানে, এখানে এবং এখানে দেখুন)। আমাদের জেনারেল সাহেবও, তাঁর এই দীর্ঘ ইমেইলটির এক জায়গাতেও, অন্তত সম্ভাবনার খাতিরে হলেও, সে প্রশ্নটি একটি বারের জন্যেও তোলেননি। কেন? এই দেশে নিরীহ নিরস্ত্র নারী পুরুষদের গণ হারে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের ইতিহাসটি (১৯৭১) কোন্ গোষ্ঠীটি ধারণ করে? ভারত? নাকি পাকিস্তান আর তাদের দোসর রাজাকার আল‌-বদর জঙ্গিরা?

ঙ.
জেনারেল সাহেব দাবি করেছেন:

ক্রম#৫: RAB arrives at Pilkhana gate at about 10am and ready to move in. Home Ministry said a stubborn “No”.
Troops of Mirpur Cantt and Dhaka Cantt arrives at Pilkhana by 11:30am. They seek permission to go in. Again a big “No”

শুনতে চটকদার “No” এবং “big NO” দিয়ে প্রচারক সাহেব ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন বোঝা গেল না। সিদ্ধান্তগত একটি “yes” কিংবা একটি “no”-এর পেছনে সময় এবং পরিস্থিতি ভেদে অনেক রকম কারণ থাকতে পারে, ব্যাখ্যা থাকতে পারে। সেসব হতে পারে ‘যৌক্তিক’, ‘সম্ভাব্য’ থেকে শুরু করে পুরোপুরি ‘অযৌক্তিক’ ‘অসম্ভাব্য’, ‘উদ্ভট’, এবং ‘মতলবী’। মানুষ ভেদে এবং তাদের যৌক্তিক বিচারের ক্ষমতা ভেদে একেকজন তার একেকটি পছন্দ করে নেন। কেউ গ্রহণ করেন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাটিকে, আবার কেউ করেন সবচেয়ে উদ্ভটটিকে। কে কেমন ব্যাখ্যায় ভর দিতে চাইছেন তা থেকে সে মানুষটির সম্বন্ধেও অনেক বিষয়ই স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন: তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ (কিংবা সেটির অভাব), বহুদিনের লালন করা অন্তর্গত গোঁড়ামি (prejudice), সুযোগসন্ধানী মনোভাব, ছিদ্রান্বেষণের প্রবণতা, ক্ষোভকে পুঁজি-করা ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয় ভাগের প্রতি vulnerability/susceptibility, নিজেদের বিচার বুদ্ধি বিষয়ে অত্যন্ত উঁচু ধারণা (‘আমরাই সবচেয়ে ভাল বুঝি’ ধরণের সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স), একইসাথে জনপ্রতিনিধিদের ইনফেরিওর মনে করা (সেনাকুঞ্জের সভায় ১৫ কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কিছু সেনা কর্মকর্তার সংযমহীন আচরণ যার প্রত্যক্ষ প্রমাণ) ইত্যাদি। এটি তেমনই একটি ঘটনা যা থেকে প্রচারক জেনারেল মহোদয় সম্বন্ধে আমরাও অনেক কিছু জানতে পারছি!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন সামরিক আক্রমণের প্রশ্নে বারেবারেই ‘না’ বলেছেন সেই বিষয়ে তিনি বেশ কয়েকবারই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত সেনা অফিসার থেকে শুরু করে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের অনেকেই পরিস্থিতির আলোকে সে সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেছেন। সব পন্থার সাথে সব সমর বিশেষজ্ঞরা যে একমত হবেন, এমনটা আশা করাও বোধ হয় বালকসুলভ। তার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে এইটুকু বলবো যে এটি এদেশের সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবী, বিদেশী কূটনৈতিক মহল সহ সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। এমনকি জামাতে ইসলামীও প্রথম ক’দিন এই সিদ্ধান্তকে সমর্থনই জানিয়েছিল (লিন্ক) পরে হাওয়া বুঝে মত পাল্টানোর আগে! এ বিষয়ে RAB এবং সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক tactical capability, তাদের প্রস্তুতি এবং রিসোর্স এর অভাব, এই মাপের পরিস্থিতি মোকাবেলায় পূর্ব অভিজ্ঞতার অভাব, viable ট্যাকটিকেল অপারেশন পরিকল্পনার জন্য যথেষ্ট সময়ের অভাব, অবশিষ্ট জিম্মি অফিসারদের প্রাণহানির সম্ভাবনা, মানব-ঢাল হিসেবে তাদের পরিবার এবং সাধারণ বিডিআর জওয়ানদের ঢাল হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা, আশে পাশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক প্রাণহানির সম্ভাবনা, সশস্ত্র বিদ্রোহকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে না চাওয়ার সিদ্ধান্ত — ইত্যাদি অনেক কারণ থাকতে পারে, এবং ছিল। সমর অভিজ্ঞ জেনারেল সাহেবকে সেটা বুঝিয়ে বলতে হচ্ছে বলে কিছুটা অস্বস্তিই বোধ করছি। যে সেনাবাহিনীর এতগুলো গোয়েন্দা সংস্থা থাকার পরও এই মাপের ইন্টেলিজেন্স ফেইলিওর হয়, সেই সেনাবাহিনীকে শহরময় ট্যান্ক, এপিসি (যেসব এমনকী তাদের হাতের কাছেও ছিলনা) ট্রুপ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে দেয়ার আগে যে-কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকার দু’বার ভাববেন, এটাই তো যৌক্তিক। আমরা জনগণও সরকারের কাছে সেই প্রজ্ঞাই প্রত্যাশা করি। পিলখানার ভেতর ও বাইরের নাগরিকদের জীবন রক্ষার দায়িত্ব যেমন সরকারের রয়েছে, তেমনি সরকারের ওপর ১৫ কোটি মানুষের পক্ষে গণতন্ত্র রক্ষারও গুরু দায়িত্ব (আমানত) রয়েছে। অত্যন্ত ঘোলাটে পরিস্থিতির মাঝে (এত বড় ইন্টেলিজেন্স ফেইলিওর যার সাক্ষাৎ প্রমাণ) গণতান্ত্রিক সরকার যদি আরেকটি ‘৭৫ সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি উম্মোচন করতো নিজেদের অর্বাচীনতা দিয়ে, আমরা জনগণ কি তাদের কোন দিন ক্ষমা করতাম? তেমনি, সেনা অভিযানের ফলে ব্যাপক প্রাণহানি হলে সেটিও কি ক্ষমাযোগ্য হতো? এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আমার পরবর্তী পোস্ট “পিলখানা হত্যাযজ্ঞ: চিন্তাঝড় ৪ ‌‌– বিতর্কের ময়না তদন্ত” এর জন্য তোলা থাকলো। তাই পুনরাবৃত্তি এড়াতে সেই দিকে এখন যাচ্ছি না।

সাধারণ ক্ষমা ঘোষণায় এবং সময় ক্ষেপনের ফলে বিডিআর বিদ্রোহীরা যদি বেপরোয়া হয়ে আরো বেশী সংখ্যক খুন খারাবি করেই থাকতো (জেনারেল সাহেবের ভাষ্য অনুযায়ী), তাহলে এত জন অফিসার এবং নারী পুরুষ ও শিশু সেখান থেকে জীবিত বের হলেন কিভাবে? এঁরা তো এই জওয়ানদের হাতের নাগালেই ছিলেন! অন্যদেরকে খুঁজে খুঁজে মারা হল, এঁদের কেন মারা হলো না? বুলেট ফুরিয়ে গিয়েছিল বলে? নাকি হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল এঁদের বাঁচিয়ে রেখে এখনকার তদন্ত প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা যাতে করে জীবিত অফিসারদের সাহায্য নিয়ে হত্যাকারীদের এবং তাদের কর্মকান্ডের বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করতে সুবিধে হয়!! জেনারেল সাহেব কি তাই বোঝাতে চাইলেন?

উপরে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করলাম, আমার বিশ্বাস জেনারেল সাহেব নিজেও তা বিলক্ষণ জানেন। তবুও জেনে বুঝে তিনি সরকারের “না” সিদ্ধান্তটিতে ঠিক কি ধরণের রং চড়াতে চাচ্ছেন, সেটিই আসলে মূল প্রশ্ন। প্রচারণাটিতে এই পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের সাথে নব নির্বাচিত সরকারকে জড়িত করার একটি সুষ্পষ্ট প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। সরকারের বিরুদ্ধে অপবাদমূলক এই থিওরীতে তিনটি বড় বড় ফাঁক রয়ে গেছে:

১) যখন এই ঘটনা ঘটে তখন এই সরকার তার দু’মাসও পুরো করেনি। এখনো এই সরকার বিভিন্ন দফতর এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বগুলো বুঝে নিতেই ব্যস্ত। এমন এক অবস্থায়, সরকারের যখন নিজেরই পায়ের নিচের মাটি শক্ত হয়নি, তখন তারা কেন এমন একটি ভয়াবহ জাতীয় সংকট সৃষ্টি করার ঝুঁকি নেবে? তাও কিনা সেনাবাহিনীর এতগুলো অফিসারকে হত্যার মাধ্যমে পুরো প্রতিরক্ষা বাহিনীকে চরমভাবে উত্তেজিত করার ঝুঁকি নিয়ে? আর সরকারের কি কোনভাবে জানার সুযোগ ছিল যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের আত্মীয় পরিজনদের হত্যা এবং নিপীড়নের খবর পেয়ে হঠকারী কোন অভ্যুত্থানের পথে পা বাড়াবে না?

২) সেনা বাহিনী এবং সীমান্ত রক্ষী বিডিআর-কে ছেঁটে ফেলা বা দুর্বল করাই যদি এই হত্যাযজ্ঞ নাটকের মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে (যে থিওরিটি কিছু কিছু অতি বুদ্ধিমান বর্তমানে প্রচার করছে), তবে সেই ষড়যন্ত্র কি সরকারের এভাবেই বাস্তবায়ন করার দরকার হয়? মনে রাখতে হবে বর্তমান সরকার নিরন্কুশ জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছে। আইনগতভাবে তার হাতে এখন এমন ক্ষমতা রয়েছে যার বলে এই সরকারের জনপ্রতিনিধিরাই চাইলে খোদ সংবিধানও পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন, কোন ধরণের আইনী বাধা ছাড়াই। বিডিআর আর সেনাবাহিনীকে কিংবা দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে যদি দুর্বল করাই সরকারের উদ্দেশ্য হয় তবে তা বাস্তবায়নের জন্য বৈধ আরও হাজারটা উপায় আছে। বরাদ্দ কমিয়ে দিয়ে, অফিসার ছাটাই করে, বদলী করে ইত্যাদি উপায়ে তা খুব সহজেই কোন ধরণের সন্দেহের জন্ম না দিয়েই করা যেতে পারে। এবং সেভাবে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সরকারের হাতে এখনো রয়েছে পুরো পাঁচটি বছর। এত উপায় হাতে থাকতে সরকার কেন নিজেদের জন্য এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং স্থুল পথে পা বাড়াবে?

৩) যত সতর্কভাবেই করা হোক না কেন সব অপরাধই কোন না কোন সূত্র রেখে যায়। সঠিক তদন্তে সে সব বেরিয়ে আসে। আর এত বড় মাপের একটি অপরাধ, যেটি দিনের আলোতে পনের কোটি মানুষ এবং মিডিয়ার সামনে কয়েক ডজন (এমনকি কয়েক হাজারও বলা যেতে পারে) অপরাধীর যোগসাজশে করা হয়ে থাকে, তার সব সূত্র কি কারও পক্ষেই মুছে ফেলা সম্ভব? আমরা সবাই জানি, তা সম্ভব না। তদন্তে এর সমস্ত সূত্র ধরা পড়তে বাধ্য। যেটি উল্লেখ্য এখানে তা হল, গত মাত্র ৫০ দিন ছাড়া আইন শৃঙ্খলা এবং বিভিন্ন তদন্ত সংস্থাগুলো গত ৭ (সাত) বছর ছিল অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির নিয়ন্ত্রণে যাঁরা একে নিজেদের পছন্দের লোকজন দিয়ে ঢেলে সাজিয়েছিলেন একেবারে উপর থেকে নীচ পর্যন্ত। ৭ বছরের মধ্যে প্রথম ৫ বছর এই সংস্থাগুলো সাজানো হয়েছে জোট (বিএনপি) সরকারের নির্দেশে, আর শেষ ২ বছর হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্দেশে। তদন্তকারী সমস্ত সংগঠনের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত যেখানে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক শক্তির দ্বারা সাজানো, সেখানে এমন একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অপরাধে এই সরকার নিজেকে কেন জড়িত করতে চাইবে যেখানে তদন্ত প্রক্রিয়ার সব স্তরের ওপর তাদের নিরন্কুশ নিয়ন্ত্রণের অভাব রয়েছে?

চ.
তিনি বলেছেন:

ক্রম#৫:Govt sends nanok and others and they enter courageously into BDR Pilkhana and safely come back and they are not held hostage. Night comes. sahara and nanok enter BDR and all lights are off. sahara visits families of army officers without nanok as seen on TV channels through BTV footage. She does not, we repeat DOES NOT meet any army officer of BDR.

অস্ত্রধারী জওয়ানদের সাথে আলোচনা করতে সাহারা খাতুন নিরস্ত্রভাবে ঢুকেছিলেন। যখন টানটান উত্তেজিত সশস্ত্র এই বাহিনীটির সাথে দর কষাকষি চলছে (যাদের কব্জায় রয়েছে কয়েক’শ নারী পুরুষ), তখন সাহারা খাতুনের কি উচিত হতো অফিসারদের দেখতে যাওয়ার আবদার ধরা? জেনারেল সাহেব কি এটাই বলতে চাইছেন? তার পরেও তিনি যত জনকে পেরেছেন বাড়ী বাড়ী গিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন ভোর রাত পর্যন্ত।

ছ.
তিনি আরও বলেছেন:

ক্রম#৫: THIS WAS BECAUSE AT THAT TIME BDR WAS COMPLETING THE TOTAL KILLING OF ALIVE OFFICERS AND THIER FAMILIES UNDER THE EYES OF NANOK AND MASS GRAVES WERE BEING PREPARED. Please refer to the Ntv exclusive with major Mokarram on 28th evening. He said that he heard the voice of home minister entering into the kote when he was surrounded by BDR gunmen.

তাই যদি সত্যি হবে, তাহলে মেজর মোকাররম নিজে বেঁচে ফিরলেন কিভাবে? কি উদ্ভট এই জেনারেলের প্রচারণা! এ বিষয়ে এখানে এবং এখানে দেখুন। জেনারেল সাহেব বলছেন হত্যা, কবর খোদাই ইত্যাদি নাকি ঘটেছে নানক আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর চোখের সামনে! কি হাস্যকর কথা! যদি তাঁরা অপরাধীই হবেন, তবে যত দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থল ত্যাগ না করে তারা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন কেন? গণহত্যা এবং কবর খোঁড়া তদারকীর জন্য? সেটি করার জন্য বিদ্রোহীদের মধ্যে কি লোকের অভাব পড়েছিল? ঘটনার হোতা হিসেবে নিজেরা জড়িত হয়েও (জেনারেল সাহেবের ভাষ্য অনুযায়ী) scene এ থাকতে চাইবেন কেন? প্রবল ক্ষমতাধর একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রী (পাঁচ বছরে ক্ষমতায় থেকে যাঁরা অনেক কিছুই পেতে পারেন) তাদের মন্ত্রীত্ব, জীবন এবং স্বাধীনতা বিপন্ন করে এমন একটি কাজ কেন করবেন বোকার মতো? বিডিআর বিএসএফ জওয়ানদের (জেনারেল সাহেবের উপরোক্ত যুক্তি অনুযায়ী) বাড়ী গাড়ি করে দেয়ার জন্য? আইজি নূর মোহাম্মদ সাহেবও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন ঘটনাস্থলে। তাহলে জেনারেল সাহেব কি বোঝাতে চাইছেন আইজি সাহেবও এই হত্যাকান্ড, কবর খোদাই এবং হত্যাকারীদের পলায়ন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত, অথবা নিদেন পক্ষে এতে তাঁর মৌন সমর্থন ছিল! (যদিও আমরা জানি তার নিজের কন্যার স্বামী এই হত্যাকান্ডের প্রথম শিকারদের একজন)!

জ.
তিনি বলেছেন (আবারও, কোন সূত্র বা তথ্য প্রমাণ ছাড়াই):

ক্রম#৫: NON-MILITARY AMBULANCES ENTER AND LEAVE PILKHANA A NUMBER OF TIMES AND TAKES AWAY SO MANY DEAD BODIES…BUT THE TOTAL STILL REMAINS 7. Only 5-7 other bodies appear from canal behind BDR naturally floating. IT WAS BECAUSE ABOUT 32 KILLERS WERE TAKEN AWAY BY THOSE AMBULANCES.

জেনারেল সাহেব নিজেই অভিযোগ করেছেন উপরের একটি পয়েন্টে যে হাজার হাজার বিডিআর সদস্য এরই মধ্যে পালিয়ে গেছে। রেকর্ডকৃত সেনাকুঞ্জ টেপের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০০০-৯০০০ বিডিআর জওয়ান উপস্থিত ছিলেন পিলখানায়। ৫ নম্বর গেট এবং বিভিন্ন স্থানের কাঁটাতার টপকে হত্যাকারীরা এবং বেশীর ভাগ বিডিআর জওয়ানের নির্বিঘ্নে পালানোর অভিযোগ উঠেছে। যেখানে হাজার হাজার বিডিআর সদস্য কোন রকম ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে সপরিবারে নির্বিঘ্নে সহজেই পালিয়ে যেতে পারেন অন্যান্য পথ দিয়ে, সেখানে নন-মিলিটারী এ্যাম্বুলেন্সে চড়ে সমস্ত মিডিয়ার তীক্ষ্ণ নজরদারীর ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার মানুষের সামনে দিয়ে ৩২ জন মূল হত্যাকারীকে পালিয়ে যেতে হবে কেন? তাও আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সক্রিয় তত্ত্বাবধানে? অন্যান্যদের সাথে মিলে গিয়ে ৫ নম্বর গেট দিয়ে পালাতে কোন অসুবিধে ছিল কি? আর ‘৩২ জন হত্যাকারী’ – এই সংখ্যাটি জেনারেল সাহেব কোথা থেকে জানলেন? কেমন করে জানলেন? হত্যাকারীরা পালিয়েছিল কিনা, তাদের পালাতে দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল কিনা, অপরাধী আটক মূল উদ্দেশ্য ছিল নাকি রক্তপাত এড়ানো মূল উদ্দেশ্য ছিল, সেনা অভিযান চালালে আসল হত্যাকারীদের আদৌ জীবিত ধরতে পারার কোন সম্ভাবনা ছিল কিনা – সে সব বিষয় নিয়ে হাজারটা বিতর্ক হতে পারে। তদন্তের ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের পক্ষে কোন সিদ্ধান্তে আসাই কঠিন। প্রসঙ্গত প্রশ্ন করা যেতে পারে, হত্যাকারীদের জীবিত পালাতে দিয়েও (জেনারেল সাহেবের অভিযোগ অনুযায়ী) তদন্তের কি তেমন একটা ক্ষতি হয়েছে এখন পর্যন্ত? এ ক’দিনে তদন্ত এবং গ্রেফতারের যে সব দ্রুত অগ্রগতির খবর আমরা পাচ্ছি তাতে কি মনে হচ্ছে যে হত্যাকারীরা পালিয়েও বেঁচেছে? কিংবা, মূল ষড়যন্ত্রকারীদের ধরা কি এখনো অসম্ভব? এখানে, এখানে এবং এখানে দেখুন।

ঝ.
এর পর তিনি বলেছেন:

ক্রম#৫: Nanok in a media briefing in front of Pilkhana declares that “It was a big conspiracy” and lac lac crore taka were distributed in Pilkhana.” DEAR MEDIA, HE WAS RIGHT. BECAUSE EACH DAD WORKING AT PILKHANA GOT TK 25 LAC between 22 and 24th February, distributed by nanok’s men.

মনে রাখতে হবে জেনারেল সাহেব তার এই ইমেইলটি লিখেছিলেন বেশ কিছুদিন আগে। তখনো বিষয়টির প্রাথমিক তদন্তও তেমনভাবে শুরু হয়নি। সেইরকম এক সময়ে ২৫ লাখ টাকার এই সুনির্দিষ্ট অংকটির কথা জেনারেল সাহেব কোথা থেকে জানলেন? কিভাবে জানলেন? যেভাবেই জেনে থাকুন, দেরী না করে তার উচিত ছিল এসব তথ্য ইন্টারনেটে দেয়ার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাদের দেয়া। তাতে উপকার হতো তদন্তের, যদি তিনি আদৌ তা চেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে মূল তদন্তে ভরসা না থাকলে তিনি অন্তত সেনাবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত কমিটির কাছে হলেও তো এই ‘অসাধারণ’ তথ্যটি দিতে পারতেন!

ঞ.
তিনি শেষের দিকে বলেছেন:

ক্রম#৭: BCS officers in BDR, and no officer from army, would ensure that another Rakhkhi Bahini could be in the making.

জেনারেল সাহেব, দয়া করে নতুন কিছু ভেবে বের করুন প্লীজ। মনে করবেন না দেশের সব মানুষের বুদ্ধি হাঁটুতে থাকে। উপরের ঙ দেখুন।

উপসংহার:
এই সিরিজে আমার আগের পোস্টটিতে ঘটনার সন্দেহভাজন কারা হতে পারেন সেটি তদন্তের একটি সূত্র হিসেবে অগ্রীম ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম এই বলে:

ঘটনার জন্য দায়ী মূল ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবেই এখন দুশ্চিন্তার প্রহর গুনছেন। কারণ, তাদের পরিকল্পনা মত ঘটনা এগোয়নি, অন্তত এখনো তাই মনে হচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করার আরেকটি আপাত সহজ উপায় আছে। তারা হয়তো এখন জোর চেষ্টা করবেন এ ঘটনার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট তৃতীয় শক্তির দিকে জাতির নজর ফেরানোর . . . অবান্তর গুজব ছড়িয়ে।

কখনো ভাবিনি সে সন্দেহ এত দ্রুত বাস্তবতায় রূপ নেবে।

সাধারণ মানুষ হিসেবে সেনাবাহিনীর এত সব জটিল বিষয় আশয় বুঝি না। তবে গবেষণার পদ্ধতিশাস্ত্রের একটি cardinal rule এর কথা জানি। তা হল: উপস্থাপিত কোনো তথ্যমালায় এবং সেই সবের ভিত্তিতে সাজানো বিশ্লেষণে যদি কোন সুস্পষ্ট মিথ্যাচার ধরা পড়ে তবে তা পুরো থিসিটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। সে অর্থে, কথিত জেনারেল সাহেবের প্রচারিত ইমেইলটির ব্যাপারে এত কিছু তুলে ধরবার পরও কেউ যদি তাতেই বিশ্বাস স্থাপন করতে চায় এবং তাকে “নিখাদ সত্য” (হ্যাঁ পাঠক, বিচিত্র হলেও সত্যি, এমন অভিধাও কেউ কেউ যুক্ত করেছেন বস্তাপচা এই প্রচারণাটির পক্ষে) বলতে চান, তবে সেটি তাদের অভিরুচি। আমি কেবল দুঃখিত হবো তাদের অযৌক্তিকতা, prejudice, চিন্তার অস্বচ্ছতা এবং আষাঢ়ে গল্পে বিশ্বাস স্থাপনের অসীম ক্ষমতা এবং আগ্রহ দেখে।

শেষ করার আগে, কথিত এই জেনারেল সাহেবকে কয়েকটি উপদেশ দেবার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। প্রথমত: মিথ্যাচার যদি করতেই হয়, তবে তাকে অনুরোধ করবো আল্লাহ-খোদার নাম টেনে এনে কিরা-কসম কেটে তিনি যেন দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে আর অপমানিত না করেন। শুনেছি ধর্মে আছে যে – মোনাফেক চেনার অন্যতম উপায় হচ্ছে সে কথায় কথায় আল্লাহর নামে কসম কাটে। এমনকি খ্রীষ্ট ধর্মেও নাকি বলা আছে যে – Thou shalt not take the Lord’s name in vainদ্বিতীয়ত: জেনারেল সাহেব যেহেতু তার এই অসাধারণ তত্ত্বটি দেশের সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, সেহেতু এটি ইংরেজীর পরিবর্তে বাংলায় লিখলে মনে হয় অনেক বেশী কার্যকর হতো। অন্তত তাতে ভিন্ন ভাষায় লিখতে গিয়ে তিনি ভাষাগত যে লজ্জাজনক ভুলগুলো করেছেন, তা দেখে আমাদের হয়তো (একজন জেনারেলের ভাষা এবং intellect এর মান দেখে) এমন বিব্রত হতে হতো না। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষকের কথাটি মনে পড়ে যাচ্ছে – আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনী, তার পর ইংরেজী শিক্ষার পত্তন! আশা করি জেনারেল সাহেব তার পরবর্তী প্রচার-প্রচারণার সময় বিষয়টি মনে রাখবেন।

===========

(এই পোস্টটি “ক্যাডেট কলেজ ব্লগ”-এও প্রকাশিত হয়েছে)

রায়হান রশিদ

জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম, নটিংহ্যাম, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান আবাস যুক্তরাজ্য। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদান, এবং ১৯৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দাবীতে সক্রিয় নেটওয়ার্ক 'ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' (ICSF) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি।

৭৯ comments

  1. তনয় হাসান - ৬ মার্চ ২০০৯ (৩:৪১ পূর্বাহ্ণ)

    এটার পিছনে পাকিস্তানের আই এস আই এর হাত থাকার সম্ভাবনা আছে।

    • মাসুদ করিম - ৬ মার্চ ২০০৯ (৬:২১ পূর্বাহ্ণ)

      আইএসআই, র, আরো কিছু থাকলে আরো কিছু, সবতো হলো, কিন্তু দেশের কারা, তা জানাই আজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাঙালিরা অসম্ভব বর্হিমুখী, সবসময় বাহিরের শক্তির প্রভাব খুঁজতে এতই ব্যস্ত থাকি, দেশের অপরাধীদের অপরাধীই মনে হয় না, দেশের অপরাধীদের দিকে কখনো আঙ্গুল তুলি না। এই করে করে আজ আমাদের দেশে ঠিক কত জঙ্গি আছে তাই আমরা জানি না। বাঙালি নিরীহ, ইসলাম শান্তির ধর্ম— এই বলে বলে বাঙালি জাতির উপর বাঙালি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো না আজ কয় বছর? সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, কখনো ভারতীয় কখনো পাকিস্তানি চক্রান্ত এই করে করেই কি বাঙালির ইহজীবন শেষ হবে? এমন আত্মমুগ্ধ এবং অলস মধ্যবিত্ত সমাজ পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই।

  2. শিক্ষানবিস - ৬ মার্চ ২০০৯ (৭:৫১ পূর্বাহ্ণ)

    একেবারে পয়েন্ট আউট করে কথিত জেনারেল সাহেবের সব জারিজুরি ফাঁস করে দিয়েছেন। এমনকি কাহিনী দেখে আমার মনে হচ্ছে:
    এটা বিএনপি-জামাত পন্থী কেউ লিখে কোন এক জেনারেলের নামে চালিয়ে দিয়েছে। হতেও পারে। 😀

    আর একজন আর্মি অফিসার কিভাবে তদন্ত কার্যক্রমে কোন সহায়তা না করে সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন গুজব ছড়িয়ে বেড়ায় সেটা বোধগম্য হচ্ছে না। এজন্যই বোধহয় মেনেও নিতে পারছি না।

    আমার মতে এ ধরণের উদ্দেশ্যমূলক এবং উস্কানিমূলক মেইল যারা করছেন তাদের খুঁজে বের করেও তদন্ত প্রক্রিয়ায় সোপর্দ করা উচিত। যারা দায়িত্ব নিয়ে এগুলো করছেন তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত।

  3. Md. Shahriar Karim - ৬ মার্চ ২০০৯ (৯:২৯ পূর্বাহ্ণ)

    Dear Mr. Rashid,

    Firstly, I am sorry as I write here in English.

    We have been taught in our early days that the pen is mighter than the sword. I think in modern era, we can restructure the preeding sentence; we should be using from now onwards that the Keyboard is mighter than the sword…Thanks for being logical.

    Waiting to see your “Chinta-jhor:4”

    Shahriar

  4. jaamil - ৬ মার্চ ২০০৯ (৯:৫০ অপরাহ্ণ)

    besh guchhiye likhechhen. apnar darai hobe. chaliye jaan…

  5. NAGORIC - ৭ মার্চ ২০০৯ (২:১০ পূর্বাহ্ণ)

    Apni to bhai lomba lecture dilen Awami League er side nie. Nijeke age rajniti mukto koren tarpor arek jon ke justify korben. Apnader moto politician ra desh ta ke dubabe. Please lecture diben na. Amar mone hochche apni nijeke budhdhi jibi type er kisu vaben. Amar kase apnar analysis khub cheap mone hoyeche.

    • রিয়াদ - ৭ মার্চ ২০০৯ (৩:৩৫ পূর্বাহ্ণ)

      NAGORIC ভাই,

      তাই? লেকচার দিয়েছে? শুনতে এলেন কেন? কেউ কি জোর করে ধরে এনেছিল? এসেই যখন পড়লেন তখন আরেকটু সাহস করে না হয় আপনার যুক্তিগুলাও াজানিয়ে দিেতন, যদি বলার মত কোন যুক্তি সত্যিই থাকে। মনে তো হয়না আছে। থাকলে কি আর না দিতেন? আহারে।

      বেশী লেগেেছ? জেনারেলের বা আপনার জামাতি ভাইয়েদের জন্য মনে বেশী বেদনা হলে তা মনের মধ্যে পুষে রাখবেন না। এ থেকে বড় ধরনের মানসিক বেরাম হয়ে যেতে পারে। আলোচনা করতে তো ক্ষতি নাই, তাইনা? আপনি যেহেতু নিরপেক্ষতা র দোকান খুলে বসেছেন, সেখান থেকে অনেক “দামী দামী” কথা আমরাও শুনতে পারতাম। লজ্জা করবেন না, স্বনামে লিখতে ভয় লাগলে েবনামে যেরকম চালিয়ে যাচ্ছেন সেভাবেই না হয় চালিয়ে যাবেন।

      • নাগরিক - ২০ মার্চ ২০০৯ (৫:১৮ পূর্বাহ্ণ)

        রিয়াদ আপনি লিখেছেনঃ

        বেশী লেগেছ? জেনারেলের বা আপনার জামাতি ভাইয়েদের জন্য মনে বেশী বেদনা হলে তা মনের মধ্যে পুষে রাখবেন না। এ থেকে বড় ধরনের মানসিক বেরাম হয়ে যেতে পারে।

        আপনি সত্যিই বলেছেন। আমার মানসিক বেরাম হয়েই গেছে এই ভেবে যে স্বাধীনতার ৩৭ বছর পরেও আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের আগলে রেখেছেন নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের জন্য। আপনার ইঙ্গিত থেকে ধরে নিলাম জামাতিদের সবাই যুদ্ধাপরাধী (যদিও আমার জানা মতে এমন কোন রাজনৈতিক দল নেই যাদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী নেই)। এটা সগৌরবে প্রচার করা সত্ত্বেও আপনারা সাধু রাজনীতিবিদরা নির্লজ্জের মত জামাতকে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করেছেন ক্ষমতায় আসীন হবার জন্য এবং জামাতের অপরাধগুলোকে একটি বিশেষ আকৃতি দিয়ে ঐ একই আকৃতিতে নিজেরা অপরাধ করে জামাতকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেবার জন্য। এসব রাজনীতি এখন কারো অজানা নয়। আপনাদের সদিচ্ছা থাকলে অনেক আগেই যুদ্ধাপরাধীদের নির্মূল করা সম্ভব হত। কারন সবসময় আপনাদের মত সাধুরাই ক্ষমতায় ছিল। এই ৩৭ বছর জাতিকে দুর্বিসহ সময় কাটাতে হত না। সুতরাং দয়া করে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাবার চেষ্টা করবেন না। আমি এখনকার রাজনীতিকে ঘৃণা করি।

    • জিজ্ঞাসু - ৭ মার্চ ২০০৯ (৪:২৬ পূর্বাহ্ণ)

      NAGORIK, U SAID:
      Apnader moto politician ra desh ta ke dubabe.

      KINTU AMAR MONE HOI
      apnake dhore eI desher manush panite chubabe.

      • নাগরিক - ১৯ মার্চ ২০০৯ (২:৩৬ পূর্বাহ্ণ)

        জিজ্ঞাসুঃ আপনার মত রাজনীতিবিদের মুখে দেশের মানুষের কথা শোভা পায় না। দেশের মানুষের দোহাই দিয়ে আপনারা পালাক্রমে দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করছেন। আপনাদের স্বেচ্ছাচারিতায় দেশের মানুষের আজ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই এখন সময় এসেছে আপনাদের ধরে পানিতে চুবানোর।

  6. সৈকত আচার্য - ৭ মার্চ ২০০৯ (৪:০২ পূর্বাহ্ণ)

    @ নাগরিকঃ

    আপনি লিখেছেন যে, এই পোষ্টের আলোচনা আপনার কাছে CHEAP মনে হয়েছে। তার মানে দাঁড়াতে পারে এই যে আপনার ঝুলিতে এর চাইতে ওজনদার (ভারী) বা কোন সিরিয়াস লিখা থাকতে পারে যা আপনি কোথাও হয়তো লিখেছেন বা আপনার উর্বর মাথায় ঘুরঘুর করছে, অথবা ভারী ভারী লেখা পড়তে গিয়ে আপনি মাথাভারী হয়ে পড়েছেন।

    লিখুন না তেমন সিরিয়াস একটা লেখা যা কিনা দেশ ও জাতির মনশ্চক্ষু খুলে দেবে, দিন না তেমন একটা লেখা যা অত্যন্ত মূল্যবান ও দল নিরপেক্ষ বলে বিবেচিত হবে। আপনার মতো একজন দুরদর্শী এবং সিরিয়াস চিন্তাবিদ লেখকের অভাব বোধ করছি।

    আর হ্যাঁ, নাগরিক নামটার মধ্যে একটা বিনয় আছে, নিবেদন আছে, একটা সুরুচির ছাপ-গন্ধ আছে, একটা দায়িত্বশীলতার বোধ আছে এবং সর্বোপরি দেশাত্নবোধের প্রতীকী ঐক্যের একটা ইংগিত আছে।

    দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আপনার মন্তব্যের সাথে ঐ নামের কোন সাযুজ্য খুঁজে পাইনি। মনে প্রশ্ন জাগছে, আপনি সুনাগরিকের দলে পড়েন কিনা! সবশেষে অনুরোধ থাকলো, কোন কোন বিষয় আপনার কাছে cheap মনে হয়েছে তা আপনি উল্লেখ করেননি, কেন মনে হয়েছে তাও বলেননি। একটু বলে দিয়ে আমাদেরকে আলোকিত করবেন প্লিজ। আর মন্তব্য দিতে গিয়ে আপনি কার সাইড নিলেন তাও পরিস্কার করে বলে দিয়েন! এক্ষেত্রে ঘোমটা খুলে লিখাই ভালো।

  7. tawheed - ৭ মার্চ ২০০৯ (৫:১৭ অপরাহ্ণ)

    jonoiko GENERAL SHAHEB er propaganda ke eto shundor bhabe moyna todonto korar jonno Rayhan Rashid ke dhonnobad janai….

    landslide victory dekhe oneker ekhon mathar thik nei…bishotgar kaurar kaj ti besh ayesher shathe korchhe alla khodar naam niye…ekattor e islam rokkhar naam kore, allar nam niye mukti kami manush ke hotta korar nozir to ei desh bashir morme morme jana royechhe…

    nuton nuton nana shorjontro o chokranto jara korchhe tader bishoye khub shojag thakte hobe……

  8. NAGORIC - ৭ মার্চ ২০০৯ (৬:২৬ অপরাহ্ণ)

    Apnara oneke amar kach theke shu-chintito motamot jante cheyechen. Amar problem shekhanei. Ami to CID ba intelligence e job kori na je eta amar duty hoye jabe and ami imaginary kono lecture o dite interested noi. I like to keep my patience until the investigation is completed by the law enforcing officers. Ami jodi ekhoni lomba lecture die feli tahole to ami apnader motoi budhdhi jibider ek jon hoye jabo. Eta amader nature pointing fingers to each other and by that time the criminals get chance to go behind the scene. Tai bolchi, please keep your patience.

  9. মুক্তাঙ্গন - ৭ মার্চ ২০০৯ (৮:১৩ অপরাহ্ণ)

    জরুরি নোটিশ:
    (১)
    সবাইকে বাংলা ভাষায় বাংলা হরফে মন্তব্য করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। মুক্তাঙ্গন সৃষ্টির অনেকগুলো উদ্দেশ্যের একটি হচ্ছে বাংলা ভাষায় বিশ্লেষণধর্মী চিন্তার চর্চাকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া। তাই, অন্য ভাষায়/হরফে লিখিত মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ “বক্তব্য সমৃদ্ধ” (বা substance সমৃদ্ধ) না হলে সেটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে আমরা এই সাধারণ নিয়মটির ব্যতিক্রমের পক্ষপাতী নই। বাংলা লেখার সুবিধার্থে সাইটের সাথে ৫টি সহজ কীবোর্ড সংযুক্ত রয়েছে। সেইসাথে সুবিধা রয়েছে এমনকী মাউস দিয়ে ক্লিক করে বাংলা লেখার। এর পরও সমস্যা হলে ব্লগ এডমিন-কে লিখুন সাহায্যের জন্য।

    (২)
    এখানকার পূর্ববর্তী বিভিন্ন পোস্টের আলোচনাগুলো পড়লে পাঠকরা লক্ষ করবেন যে মুক্তাঙ্গনে বিস্তারিত, বিশ্লেষণমূলক এবং বক্তব্য/তথ্য সমৃদ্ধ মন্তব্য উৎসাহিত করা হয়। যে কারণে এই ব্লগের একটি অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী পোস্ট এবং মন্তব্যের কাছ থেকে সমান সিরিয়াসনেস ও গুরুত্ব আমরা আশা করি। জরুরি এই জাতীয় সংকটের সময় লেখক‌-পাঠক-আলোচকদের কাছে আমাদের সেই প্রত্যাশা আরও বাড়ে বই কমে না।

    তাই এখানকার আলোচকদের কাছে অনুরোধ থাকবে মৌলিক এই বিষয় দুটো বিবেচনায় রেখে অংশগ্রহণ করার।

    ধন্যবাদ।

  10. NAGORIC - ৭ মার্চ ২০০৯ (৯:০২ অপরাহ্ণ)

    আমি দুঃখতি যে আগে ইংলিশে লিখেছি। বাংলা কীবোর্ড ব্যবহার করা আসলেই বেশ সহজ।

  11. anti-moulobadi - ৮ মার্চ ২০০৯ (৪:২৬ অপরাহ্ণ)

    আপনার লেখার মান বেশ ভালো।
    আরো কিছু লেখা আশা করছি।

  12. রায়হান রশিদ - ৮ মার্চ ২০০৯ (৪:৪৩ অপরাহ্ণ)

    মূল পোস্টটির প্রত্যুত্তরে জেনারেলের ইমেইলটির পক্ষে কিছু যুক্তি উঠে এসেছে। সেগুলোর প্রত্যুত্তর রয়েছে এখানে:
    http://www.cadetcollegeblog.com/shan/5263#comment-56001

  13. অবিশ্রুত - ৮ মার্চ ২০০৯ (১১:৪৭ অপরাহ্ণ)

    গুজব, পরিকল্পিত অপপ্রচার আর আলামত এখন এক হয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সুস্থ চিন্তার পথ। শুধু নামহীন জেনারেল নয়, এই লিংকটিতে দেখুন, বিভিন্ন তদন্তকারীর দোহাই দিয়ে সুপরিকল্পিত গুজব সৃষ্টির একটি ১১-ঘটনার নমুনা। বলাই বাহুল্য, এই ১১টি ঘটনাও ইংরেজি ভাষার ই-মেইল হয়ে এখন বিভিন্নজনের ইনবক্সে গিয়ে হাজির হচ্ছে।
    গুজব একসময় মিইয়ে আসে, কিন্তু পরিকল্পিত অপপ্রচার ঠেকানো যাবে কেমন করে! দিন দিন তা পল্লবিত হয়, বিশেষ করে কারও কারও কান দুটোও যখন তৈরি হয়ে থাকে ওইসব বিশ্বাস করতে! এরকম কান তৈরির আয়োজনও তো কম নেই বাংলাদেশে…

  14. Ferdous - ৯ মার্চ ২০০৯ (৩:০৯ অপরাহ্ণ)

    amader sob chaite boro somossha holo keo kichu bolte chaile amra songkirnotar urdhe na uthe take soja vashai gala gal korte thaki. ei blog-e ja bolechen raihan rashid ta chintar khorak jogai. amader chinta korte hobe ar ta hote nijeder bichare sothik tukui onnoder jonno poribeshon korte hobe. ami mone kori sob kichui surute elo-melo thake. tai sobar kache abedon, aage nijer juktigulo barbar porikhkha kore tarpor post korun, tate sobai lavoban hobe. amar ei ATLAMI-r jonno aagei dukhkho prokash kore rakhchi. sobai valo thakben.

  15. জহির - ৯ মার্চ ২০০৯ (৬:২৪ অপরাহ্ণ)

    রায়হান, খুবই গোছানো যুক্তি আপনার পুরো লেখাটায়। তবে আমি মনে করি বেশিরভাগ পাঠকই জেনারেল-এর এই email টাকে ওতটা গুরুত্ব দিবে না।

  16. আরমান রশিদ - ১০ মার্চ ২০০৯ (২:০৮ পূর্বাহ্ণ)

    রাষ্ট্রদোহিতা, হত্যা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, নিরস্ত্র ও বন্দী নারী অর শিশুদের উপর নির্যাতন – সাধারণ ভাবে বলতে গেলে আমরা ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলতে এই সকল কর্মকাণ্ডকে বুঝি যার প্রতিটি পিলখানায় সংঘটিত হয়েছে, তাও আবার মাত্র এক দিনের মধ্যে।
    স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর আজ যখন আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এত কাছাকাছি ঠিক তখনই আমাদেরই নিরাপত্তা বাহিনীর একাংশ দ্বারা এই সব অপরাধ মাত্র ৩০/৩৫ ঘন্টার মধ্যে সংঘটিত হওয়া কি নেহাত কাকতালীয়? কেউ কি জানাবেন সংজ্ঞায় পড়ে এমন কোন্‌ অপরাধটি বাদ পড়েছে এই ঘটনায়?

  17. Deshi - ১০ মার্চ ২০০৯ (৩:৪৪ অপরাহ্ণ)

    Just ask two questions if you want to solve this puzzle:

    1) Who gains from this?
    2) Who are the most ‘unusual’ suspects?

    The current Al govt. has nothing to gain from this chaos. AL already has absolute majority in the parliament, so it can pass any law it wants without any chaos and bloodshed. Why would AL want to shoot on its own feet? Besides, some of the unfortunate army officers were fighting against corruption of the previous BNP/JI admin, and against militant JMB.

    Jamat is an easy suspect. It lost big in the elections, and some of its leaders are facing possible trial for war crimes. It is politically weakened. They know it, and people know it. Will they take such a risk, especially when all eyes are on them? Possible, but not probable.

    India and RAW are easy targets for Jamat and BNP. How would India benefit from destabilizing and possibly overthrowing a friendly government? Some BNP/Jamat minded analysts claim that it may be a revenge for Padua/Berubari BFS killing incident. If that was the case, why would an aspiring superpower risk sabotaging a friendly government and killing a DG who was in fact in favor of transit with India? Why did they have to wait for AL to come to power? Why would they kill Col Gulzar who successfully captured and prosecuted JMB militants (India’s enemies)? Possible, but not probable.

    Smugglers and drug lords (on both side of the border), corrupt people in the administration, corrupt politicians and businessmen in cahoots with corrupt BDR jawans: more likely. These people are like mafia. They do not care about sovereignty of Bangladesh and the lives of innocent officers. All they care about is money and power. They may very well be in this. Just look at Mexico, Columbia, and Afghanistan. Possible and probable. However, they alone cannot make something like this happen. There has to be a bigger hand at play.

    JMB, HuJI and other militant outfits definitely gain from this unfortunate incident. They are just terrorists and they do not care about any consequences. However, can they do it alone? It’s hard to speculate.

    Lastly, I have a keen suspicion on some of the figures directly affected by the reign of the last caretaker government backed by the army. Who lost all his princely powers? Who was disgraced and imprisoned by the same army that was supposed to take orders from him? Gentlemen, please think with an open mind. Fakhruddin Ahmed’s interim govt. with the help of Moinuddin Ahmed’s army destroyed all the plans of an unelected prince who was preparing to become the next PM of Bangladesh. Naturally, the prince has some grudge against the army and the present government. Besides, he inherited the killer instinct from his father. Who knows, there could be an element of army involvement in this. Incident like this requires funds, careful planning, and execution. Although the top army leadership went against the prince’ commands, he still has a lot of sympathizers in it. Lt. Gen. Ershad was a beneficiary of his father’s death, and, Ershad’s own nephew was killed in this incident. Strange coincidence! So the prince gains both ways from this incident. Probably the bigger plan didn’t come into fruition, but still the army is weakened and the present government is in chaos. Lastly, he is possibly off the hook because he is nowhere near the scene.

    These are speculations, but not without merit.

  18. NAGORIC - ১১ মার্চ ২০০৯ (১:৪২ পূর্বাহ্ণ)

    Can you please show english keyboard layout against bengali keyboard so that we can type faster using laptop key pad. Thanks.

  19. Mansur (92-98) - ১১ মার্চ ২০০৯ (১১:০৭ পূর্বাহ্ণ)

    [সিসিবি‌তে প্রকাশিত এই মন্তব্যটি আলোচনার সুবিধার্থে এখানেও কপি করে দেয়া হল – ব্লগ এডমিন]

    Rayhan vai, excellent write up in very good bangla. But I have to say that your writing is not impartial. The way the writer of the e-mail tried to show some logics with out any valid references, in the same way you also tried to counter those logics without any valid references. The difference between two writings are only the use of language, nothing else.

    In your writing very cleverly you tried to undermine the ARMY officers mentioning various bad languages about their qualifications, which is not at all correct.

    “জেনারেল সাহেব, দয়া করে নতুন কিছু ভেবে বের করুন প্লীজ। মনে করবেন না দেশের সব মানুষের বুদ্ধি হাঁটুতে থাকে”

    I took only two lines from your writing.

    The JMB and the other Islamic militants follow a shrewd technique which is found in your writing. They capture some part of the lines from Quran and misguide others. You also did the same thing. You took few lines from the e-mail and shown in a wrong pattern. No where on that mail that officer (or anyone else) mentioned the officers till 2002 in BDR were corrupted.

    “Before 2002, only very average army officers were posted to BDR. Those officers used to pass time and wait for retirement. the scenario was changed in late 2002, when army started to pump in outstanding oficers to BDR to shape up the national border and curb cross-border crime and smuggling.”

    This was his writing in his mail, where he clearly stated that officers who are very average and waiting for retirement were posted earlier. As they are serving for the last few periods of their service, therefore they were not much energetic like the young and brilliant officers. He never mentioned during Awami League period BDR was corrupted more, or during BNP period BDR was less corrupted. He gave a time phrase before 2002. It not only indicates Awami period from 96-01. It also includes 91-96 BNP period. That e-mail writer never tried to blame any political party in his mail, which you have done.

    He has shown some logics against Nanok, Mirza Azom, PM mentioning some incidents. You have given counter logics from your mind with good language which are very good to hear. But you could not prove those logics as fake basing on those mentioned incidents.

    It is obvious that no body knows which is the real reason for this incident accept the persons behind this conspiracy. Everyone is giving his own ideas. Here we are our own judge. As an educated person this is our responsibility to grab the correct thing from various informations. But to prove someone wrong if I show some wrong logics, may be with very good language but without correct/valid references, then I am also wrong and misguiding others. This is completely my personal opinion, others may not agree with me.

    The audio clips you received in facebook or in other links are obviously posted by the officers of ARMY. They have not done anything wrong. That meeting/address was not a confidential meeting. It was PM’s open address to all the ARMY officers. PM and Motia chy were not only civilians present in that address. Numbers of media personnel were present there, both from electronic and print media. They captured the whole address but highlighted only few portions in the media. Very few newspapers only highlighted in short that officers were angry and asked various questions to the PM. No media has shown the real expressions of the officers. That is why officers posted the audio clips taken in their mobile phone. Those are short and in various part this is true. But those are not tempered/changed. Whatever the officers asked to the PM are posted there. No body I believe tried to undermine Government or any political party with those clips. But you tried to bring out a wrong expression out of those clips and tried to undermine the officers.

    The behaviour shown by the ARMY officers to PM was obviously out of discipline and ARMY customs. But you should understand in which condition they have done like this. We need to breach the discipline in some occasions for the betterment of the nation, for the betterment of people of the nation; the way we broke the discipline/rule against Pakistani government in 1971. If we would have considered maintaining discipline/rules in 1971 to be loyal citizens as per your writing, then we would not be a citizen of independent Bangladesh now.
    In your writing various times you tried to highlight about the language of the mail. Remember it was a mail, not a story for a newspaper or for a writing competition. Here the writer tried to express his mind. If he can do it with grammatically wrong English even there is no problem I believe. But several times you tried to undermine him mentioning he has used wrong English. Was it a clever way to bring the readers of your blog in your support?

    The writer of the e-mail mentioned in his mail that:

    “We are not asking you to believe this email. We are requesting you to use your judgement.

    Please let the People of Bangladesh know what your judgement say. Do something for the nation…in exchange of 140+ lives of your families…. your officers…your sisters…martyred at Pilkhana by …….

    If your judgement concludes that what were said in this mail in the name of Allah are true, please forward to all possible contacts. Let the world know what you understand to be the truth.. it is your responsibility as a human being. is not it?”

    He requested to use your judgement on this mail. He never told to believe him or that mail blindly. If you do not believe you can show your logics. But, is it necessary to attack him personally? Moreover mentioning him as a General of ARMY, where as you are not sure about his identity.

    Last but not the least, no where in that mail we have found it is written by a General. The salutation on the e-mail was:

    “From an Army Officer: Our beloved People of Bangladesh”

    But You mentioned it is a writing of a general. Was not it an intentional mistake just to humiliate the ARMY officers proving the standard of a General (one of the most high rank) so bad?

    I do not know whether you have some enmity with ARMY or not, but in your writing several times you tried to humiliate ARMY. So far my knowledge goes, in every organisations there are good & bad people. But for few bad people we can never blame the whole organisation. Moreover an organisation like ARMY which is always extending his hands to help the nation in any kind of crisis, should not be humiliated in this manner. Remember ARMY is a part of this nation. If we humiliate any part of our country, it is a humiliation to the whole nation. Please do not humiliate the country just to express yourself as a big scholar/intellectual.
    I

  20. রায়হান রশিদ - ১১ মার্চ ২০০৯ (১১:০৯ পূর্বাহ্ণ)

    [সিসিবি‌তে প্রকাশিত এই মন্তব্যটি আলোচনার সুবিধার্থে এখানেও কপি করে দেয়া হল – ব্লগ এডমিন]

    মনসুর,

    তুমি লিখেছো:

    In your writing very cleverly you tried to undermine the ARMY officers mentioning various bad languages about their qualifications, which is not at all correct.
    “জেনারেল সাহেব, দয়া করে নতুন কিছু ভেবে বের করুন প্লীজ। মনে করবেন না দেশের সব মানুষের বুদ্ধি হাঁটুতে থাকে”

    আরো বলেছো:

    I do not know whether you have some enmity with ARMY or not, but in your writing several times you tried to humiliate ARMY. So far my knowledge goes, in every organisations there are good & bad people. But for few bad people we can never blame the whole organisation.

    হাঁটুতে বুদ্ধির বিষয়টিতে সকল সামরিক অফিসার আক্রান্ত হয়েছেন এরকম তোমার মনে হল কেন বলো তো? এটি সুনির্দিষ্টভাবে জেনারেল সাহেবকে উল্লেখ করে বলা। তাতে তোমার মাথায় “সমস্ত সেনাবাহিনীর বুদ্ধি হাঁটুতে থাকে” এই জাতীয় চিত্রকল্প যদি তেরী হয়ে থাকে, তবে সেটা তোমার নিজের perception এর সমস্যা, আমার নয়। এক্ষেত্রে তোমার কথাটাই তোমাকে ফিরিয়ে দিই – “সব প্রতিষ্ঠানেই নির্বোধ এবং বুদ্ধিমান থাকে”। সেক্ষেত্রে একজনকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করলে তাতে বাকি সবার আক্রান্ত বোধ করার কোন যৌক্তিক কারণ আছে কি?

    তুমি বলেছো:

    He never mentioned during Awami League period BDR was corrupted more, or during BNP period BDR was less corrupted. He gave a time phrase before 2002.

    আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির কথা কি মুখ ফুটে জেনারেল সাহেবকে বলতে হবে? ২০০২ এর পরে বাংলাদেশে ক্ষমতায় কে ছিল? জর্জ বুশ? ২০০২ এর আগে ক্ষমতায় কে ছিল? টনি ব্লেয়ার?
    জেনারেল সাহেব বলেছেন ২০০২ এর আগে (এমনকি তোমারও ভাষায়) ‘average and not much energetic’ অফিসারদের বিডিআর এ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই যে ঢালাওভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অফিসারকে ‘average’, ‘not much energetic’ হিসেবে তোমার জেনারেল আর তার সপক্ষে তুমিও প্রচার করলে – তাতে কি সেনাবাহিনীর সম্মান কিছু বাড়লো? নাকি ঢালাওভাবে একটি নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেমের কিছু অফিসারদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করে তুমি নিজের fairness এবং দায়িত্বশীল মন মানসিকতার পরিচয় দিলে? জেনারেল সাহেব যখন বলেন যে ২০০২ এর আগে বিডিআর জওয়ানেরা যথেচ্ছ দুর্নীতি করে বাড়ীগাড়ি করতো তখন তা তাদের কমান্ডিং সেনা অফিসারদের ভূমিকা, সততা, কিংবা নিদেন পক্ষে দুর্নীতি লালন সম্বন্ধে কি ইঙ্গিত দেয়, যদি জেনারেলের যুক্তিকে সত্য ধরে নিই? এর পরেও কি তুমি বলবে যে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছি আমি, তোমার এই জেনারেল নয়? তাছাড়া প্রশ্ন হল, এই অফিসাররা average কিনা সেই রায় দেয়ার এখতিয়ার কার? জেনারেলের? নাকি তোমার?

    বলেছো:

    He has shown some logics against Nanok, Mirza Azom, PM mentioning some incidents. You have given counter logics from your mind with good language which are very good to hear. But you could not prove those logics as fake basing on those mentioned incidents.

    জানতে ইচ্ছে করছে fact এবং logic এই শব্দগুলোর মানে তোমার কাছে কি? হত্যাকান্ড, কবর খোঁড়াখুড়ি চলেছে নানক-সাহারার চোখের সামনে (!) – এটা fact? ৩২ জন (!) হত্যাকারীকে পরিকল্পিতভাবে পালিয়ে যেতে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী – এটা fact? হত্যাকারীরা ২৫ লাখ করে টাকা পেয়েছে – এটা fact? যদি এগুলো factই (! )হয় তবে সেই ফ্যাক্ট এর উৎস কি? এমনকি একটি সূত্রও কি জেনারেল সাহেব উল্লেখ করেছেন? হ্যাঁ, তিনি এর সত্যতার পক্ষে কিরা-কসম কেটেছেন, এটা অবশ্য ঠিক! এবং মনে হচ্ছে তোমার মত একটি শিক্ষিত ছেলের কাছে কিরা-কসম কেটে যে কেউ (এমনকি নাম পদবী পর্যন্ত না জানিয়ে) কোন কিছু বললেই তা সত্য হয়ে যায়!
    আর, পেছন দিয়ে দিনের আলো এবং রাতের অন্ধকারের মধ্যেও পরিবার পরিজন নিয়ে হাজার হাজার মানুষের পালানোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হত্যাকারীরা “এম্বুলেন্সে চড়ে” (!) মিডিয়ার সামনে (!) দিয়ে পালিয়েছে – এইটা তোমার কাছে “logic” মনে হল? এটা লজিক হলে তা কোন্ মানের লজিক? সুকুমার রায়ের শ্রী কাক্কেশ্বর কুচকুচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে – “সাত দুগুণে চৌদ্দের চার আর হাতে রইলো পেন্সিল”!!!

    শুনেছি যে সত্যবাদী মানুষ কোন কিছুকে ভয় করেনা। একজন honourable officer যিনি দেশ রক্ষার জন্য এমনকি জীবন দেয়ারও শপথ নিয়েছেন, তিনি এই ইমেইলটি বেনামে লিখলেন কেন বলো তো? একবারও কি প্রশ্ন করেছো – তার উল্লেখিত “facts” (!) এর কোন source যদি সত্যিই তার হাতে থেকে থাকতো, তবে একজন দায়িত্বশীল অফিসার হিসেবে তিনি সেগুলো তদন্ত কমিটির কাছে না দিয়ে ইন্টারনেটে প্রচার করছেন কেন? এক্ষেত্রে আবারও মনে করিয়ে দিই সরকারী তদন্তের উপর যদি ভরসা না থাকে, তিনি অন্তত সে সব source এর খবর (যদি আদৌ থেকে থাকে কিছু) সরাসরি সেনাবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত কমিটির কাছেও তো দিতে পারতেন। যে জনগণের ওপর উনার এত ভরসা (!) সেই জনগণকে তিনি এই source গুলোর ব্যাপারে অন্ধকারে রাখছেন কেন? এমনকি নিজের নামটিও জানানোর মত সৎসাহস নেই কেন তার?

    বলেছো:

    The audio clips you received in facebook or in other links are obviously posted by the officers of ARMY. They have not done anything wrong.

    আমি অত্যন্ত শংকিত হলাম দেখে যে তুমি এভাবে চিন্তা করো।

    বিডিআর এর কথিত বিদ্রোহটিকে দল মত নির্বিশেষে সকলেই ষড়যন্ত্র বলেছে। কেন? এর একটি প্রধান কারণ ছিল যে দরবার হলে অভিযোগ প্রকাশের সুযোগ থাকতেও বিডিআর জওয়ানেরা তাদের সমস্ত নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছিল বলে। আমাদের সামরিক বাহিনী বা রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনগণ কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারেনি যে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর মধ্যে (অভিযোগ প্রকাশের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও) শুধু ‘কিছু ক্ষোভের’ কারণে তারা আইন ভঙ্গ করতে ‘বাধ্য’ হয়েছে। দল মত নির্বিশেষে প্রায় সকলেই একারণে বলেছেন যে এভাবে আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে “তথাকথিত ক্ষোভপ্রকাশ” এর উদ্দেশ্য ছিল সুপরিকল্পিতভাবে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সমস্ত চেইন অব কমান্ডকে ধ্বংস করে একে শেষ করে দেওয়া। এবার, এই একই আলোকে প্রধান মন্ত্রীর সাথে সভায় গুটিকয় অফিসারের আচরণ এবং এই টেপ বাজারে ছাড়ার উদ্দেশ্যটি ব্যাখ্যা করো তো?

    প্রধানমন্ত্রী সেনাকুঞ্জে গিয়েছিলেন কথা বলতেই, কথা শুনতেই। হল ভর্তি হাজারখানেক শোক বিহ্বল বিক্ষুব্ধ অফিসারের মুখোমুখি হয়েছেন, একা। একে বলে courage, একে বলে leadership। সেটাও যদি আমরা recognise করতে না পারি, তবে বলতে হবে আমাদের decency এবং honour এ কোন বড় ধরণের ঘাটতি আছে। প্রধানমন্ত্রী কি একবারের জন্যও বলেছেন যে তিনি তাদের কথা/দাবী শুনতে চাননা? কিংবা তিনি কি অভিযোগ শুনতে শুনতে উঠে চলে গিয়েছিলেন? নাকি বলেছেন এসব দাবীর কিছুই তিনি মানবেন না, যে, সমস্ত আভ্যন্তরীন নিয়ম কানুনকে কাঁচ কলা দেখিয়ে এই টেপটি প্রকাশ করা জরুরী হয়ে পড়লো?

    একথা অনেকেই মানবেন যে সেনাবাহিনীর ভেতরেও কমান্ডিং অফিসারদের বিরুদ্ধে অন্য অফিসারদের/সেনাদের ন্যায় অন্যায় অনেক অভিযোগ থাকতেই পারে। এই সব সদস্যদের কি তাহলে উচিত হবে এসমস্ত অভিযোগ এখন থেকে জনসমক্ষে হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে প্রকাশ করা? তাহলে বরং এক কাজ করো। আজ থেকে এই সব দরবার করার ট্রেডিশন তুলে দাও। অফিসারদের একের বিরুদ্ধে অপরের ক্ষোভ, প্রতিষ্ঠানের ভেতরের ক্ষোভ, সেনা সদস্যদের একজনের অন্যদের বিরুদ্ধে যত ক্ষোভ অভিযোগ (যে সবের কথা টেপটিতেও কিছুটা উঠে এসেছে) – সব না হয় এখন থেকে প্রেস কনফারেন্স করেই দেয়া শুরু হোক। সরকার প্রধানরা সে সব খবরের কাগজ পড়েই না হয় জেনে নেবেন। দেশের শত্রুরাও সে সব পড়ে ড্রইং রুমে বসে হাততালি দিক। দরবার করে আর সময় নষ্ট করা কেন? রুলস রেগুলেশন, কোড, ডিসিপ্লিন এসবের তো তাহলে কোন দরকার নেই, এমনকি সেনাবাহিনীতেও! এই টেপটির উদ্দেশ্য কি দেশের ভেতর/বাইরের শত্রুদের কাছে এই message দেয়া যে এই দেশের সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে, vulnerability রয়েছে? যাতে করে শত্রুরা এখন নতুন মতলব ভাজতে পারে? চমৎকার দায়িত্বশীলতা ও দেশপ্রেম! দেশ যখন থমথমে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মত নিরাপত্তা হুমকীর সম্মূখীন আর severe এই সংকটে ছড়িয়ে দেয়া টেপটিকে তুমি বসে বসে defend করছো? তাও সেটা কেমন আঙ্গিকে ছড়ানো হল সেটা একবারও প্রশ্ন করছো না? প্রায় তিন ঘন্টার এই মিটিংয়ের ঠিক কতটুকু cover করা হয়েছে এই টেপটিতে সেটাও কি লক্ষ করোনি? এডিট করে বেছে বেছে সেনা কর্মকর্তাদের (who are supposed to be officers and gentlemen) কোন্ অংশগুলো ছড়ানো হয়েছে বলো তো? তাতে সেনাবাহিনীর সম্মান আর ইমেজ খুব বৃদ্ধি পেয়েছে কি? সেনাবাহিনীকে কে বা কারা কি প্রক্রিয়ায় ডোবাচ্ছে এবং কিভাবে ডোবাচ্ছে সেটাও না বুঝে লেগে পড়েছো তাদেরই হয়ে ওকালতি করতে? আমাকে বলছো আমি নাকি ভাবমূর্তি নষ্ট করছি? টেপ রিলিজকারীরা কি ভাবমূর্তির আর কিছু আস্ত রেখেছে যে নতুন কারও দরকার হবে সেটা নষ্ট করার জন্য? সত্যিই কি সবাই এত অন্ধ হয়ে গেছে?

    লিখেছো:

    That meeting/address was not a confidential meeting. It was PM’s open address to all the ARMY officers. PM and Motia chy were not only civilians present in that address. Numbers of media personnel were present there, both from electronic and print media.

    এটা কি সত্যি বললে তুমি? পত্র পত্রিকার মাধ্যমে যা আমরা জানি – তা হল কেবলমাত্র গুটিকয়েক ক্যামেরাম্যান এবং আর্মির একজন প্রেস ফটোগ্রাফার উপস্থিত ছিল অনুষ্ঠানটির প্রথম কয়েক মিনিটের ফুটেজ সংগ্রহ করার জন্য। এই ফুটেজগুলোই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমরা দেখেছি। তুমি কি বলতে চাচ্ছো যে মিডিয়াকে সেখানে সার্বক্ষণিকভাবে উপস্থিত থাকার এবং রেকর্ড করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল? তাই? তাহলে একটু বোঝাও তো আমাদের – কেন কতিপয় অফিসারের মোবাইল ফোনে গোপনে ধারণকৃত রেকর্ডগুলোই আমাদের শুনতে হচ্ছে? কোন মিডিয়ার কাছে এর বিস্তারিত ফুটেজ বা রেকর্ডকৃত অডিও নেই কেন? এই বিষয়গুলো কি তুমি জানোনা? নাকি জানতে চাওনা? এর পরেও যদি তোমার হাতে কোন তথ্য থেকে থাকে (যেমন: কোন্ কোন সম্পাদক/সাংবাদিকের অনুমতি ছিল সেখানে উপস্থিত থাকার এবং রেকর্ড করার, তাদের নাম ধাম ইত্যাদি) তবে অবশ্যই সে সব জানাবে আশা করি। যাতে, পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে আমাদের ভুল থাকলে সেটা আমরা সংশোধন করার সুযোগ পাই।

    লিখেছো:

    They (the electronic and print media) captured the whole address but highlighted only few portions in the media.

    এভাবে সমস্ত মিডিয়াকে এক পাল্লায় ফেলে তাকে সেনাবাহিনীর বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেয়াটা কি ঠিক হল? তুমি কি বলতে চাচ্ছো পুরো মিডিয়া এখন আওয়ামী লীগের পকেটে! বলতে চাচ্ছো দেশে এখন আর একটিও free media নেই! আর সেগুলোর সবই সেনাবাহিনীর পেছনে উঠে পড়ে লেগেছে! জোট সরকারের সময় যে এক গুচ্ছ ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া গজিয়ে উঠলো সেগুলোর কথা কি তুমি ভুলে গেলে? এভাবে একটি বাহিনীকে তুমি সারা দেশের পপুলার মিডিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কি দায়িত্বশীলতা এবং যৌক্তিক মানসিকতার পরিচয় দিলে? আর মিডিয়া যে সেনা কর্মকর্তাদের ন্যায্য ক্ষোভের কথা পরবর্তীতে তুলে ধরেনি, সেটাও কি সত্য? সেনাকুঞ্জ সভার পরদিনই প্রকাশিত এই রিপোর্টটি দেখো: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2009-03-02 )

    তুমি আরও লিখেছো:

    But You mentioned it is a writing of a general. Was not it an intentional mistake just to humiliate the ARMY officers proving the standard of a General (one of the most high rank) so bad?

    এ বিষয়ে আমি আমার মূল পোস্টের শুরুতেই ব্যাখ্যা করেছি। আবার পড়ে দেখো। এই প্রচারক ব্যক্তিটির Rank নিয়ে কিছু confusion অন্তত আমার দিক থেকে (নানা কারণেই) ছিল, সে কথা সত্যি। আমার কাছে আসা কিছু কিছু সূত্রে তাকে “জেনারেল” হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছিল (পোস্টে লিন্ক দিয়েছি)। তার ইন্টেলেক্ট বা ভাষার মান নিয়ে প্রশ্ন জাগলেও তাকে তার প্রাপ্য সম্বোধনগত সর্বোচ্চ সম্মান জানাতে আমার দ্বিধান্বিত হওয়ার কোন কারণ ছিলনা। বলতে পারো অনেকটা erring on the side of caution থেকেই। তাছাড়া তিনি সত্যিই “জেনারেল” হয়ে থাকলে, এই সম্মানটুকু তাকে না দিয়ে ‘জনৈক অফিসার’ বলে সম্বোধন করলে এই তুমিই হয়তো প্রশ্ন করতে তাকে তার প্রাপ্য সৌজন্যটুকু দেখাইনি বলে। আর তিনি একজন সাধারন অফিসারও যদি হয়ে থাকেন, তার পরও প্রশ্ন থেকে যায় – যে অফিসারকে তৈরী করতে প্রশিক্ষণ দিতে এই দরিদ্র রাষ্ট্রটির এত অর্থ এবং সময় ব্যয় হয়, সেই ‘অফিসার’ এর কাছ থেকে ন্যুনতম শুদ্ধ ভাষায় (এমনকি নিদেন পক্ষে শুদ্ধ বাংলায়) একটি ইমেইল (যেটি কিনা জনসাধারণের কাছে প্রচার করার জন্য লিখিত) কি আমরা আশা করতে পারিনা? দেশে এমন বহু মেধাবী তরুণ আছেন যারা আর্মিতে অফিসার হওয়া তো দূরের কথা, এমনকি ঢোকার সুযোগটি পর্যন্ত পায়না। সেখানে একজন অফিসারের কাছে ন্যুনতম যৌক্তিক মানের একটি প্রচারণা আশা করা কি খুব বেশী চাওয়া? যাঁদের হাতে কিনা দেশ তার সার্বভৌমত্ব, প্রতিরক্ষা এবং হাজার হাজার তরুণ মেধাবী অফিসারদের মেধা ও মনন গড়ার দায়িত্ব দিয়েছে? আমার কাছে এখনো বিস্ময়কর ঠেকছে যে প্রচার পত্রটি তিনি ইংরেজীতে লিখলেন কেন! এই জেনারেলটিকে সামরিক বাহিনীর একজন সাধারণ অফিসার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেও তাতে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি কি কিছু বাড়ে?

    এ প্রসঙ্গে আরেকটি প্রশ্ন মনে এসেছে; আশা করি তার ব্যাখ্যা পাবো। এই অফিসারটি ‘জেনারেল’ নয়, এ বিষয়ে তুমি দেখা যাচ্ছে খুবই নিশ্চিত। এর মানে কি এই যে তুমি এই অফিসারকে চেনো অথবা তার সঠিক rank সম্বন্ধে জানো? জানলে সেটা আমাদেরও জানাবে কি যাতে আমরা ভবিষ্যতে শুদ্ধভাবে তাকে সম্বোধন করতে পারি?

    অনেকদিন আগে শোনা একটা কথা মনে পড়ে যাচ্ছে: “you do not need to wear a uniform to be a man of honour”. তেমনিভাবে ইউনিফর্ম গায়ে চড়ালেই সম্ভবত কেউ man of honour হয়ে যায়না। কোন মানুষ সত্যিকারের honourable কিনা তা প্রকাশ পায় তার আচরণে, কথাবার্তায় আর তার কার্যক্রমে।

    তোমার মঙ্গল কামনা করছি। যেখানেই থাকো ভালো থাকো।
    রায়হান

    • Mansur (92-98) - ১২ মার্চ ২০০৯ (১:৪২ পূর্বাহ্ণ)

      [সিসিবি‌তে প্রকাশিত এই মন্তব্যটি আলোচনার সুবিধার্থে এখানেও কপি করে দেয়া হল – ব্লগ এডমিন]

      মার্চ ৯, ২০০৯ ‌, ৫:০৯ পূর্বাহ্ন

      Rayhan Vai, as you asked for the answer, I am writing. I am not in a mood to discuss or write so many things which has no value in the judgement of those criminals. I have lost my friend, my colleagues in this incident. What my mental condition is that can be understood by the ARMY officers only. I was not interested to reply on your writing also. But as I felt humiliated being an ARMY officer that is why I replied.

      Yes I am confirm that the writer of that mail is not a General. Because a general of our ARMY will never give such a mail without his name and identity. Moreover I am confused whether he is an officer of ARMY or not. Because ARMY officers will never submit a mail without his identity. If we do some mistake even, we have the guts to admit our fault. We are always ready to accept punishment for our mistakes. As you are not also confirm about his identity therefore you could very well criticise him mentioning as the writer. In that case you would have criticised a person not an organisation.

      “In the post atrocity spin war, one letter that has been circulated very consistently around blogs and forums was this letter from a supposed general. This letter makes some very serious accusations against the government with an aura of authenticity.

      While conspiracy theorists and arm chair investigators are having a field day, blogger shadakalo got into action and debunked some of these myths and speculation.

      Here is the original letter from the ‘general’:

      Here is how Shadakalo debunks it.

      Another line of argument that is making round is it is in India’s interest to have Gen Shakil killed because he was against Transit to India.

      But facts point otherwise. Gen Shakil is on record supporting transit facilities to India. Here is an article written by Gen Shakil for National Defence College arguing why transit facilities should be allowed to India.”

      I pasted the copy of writing following your given link. These are not the writings of that e-mail writer. Here the blogger mentioned the e-mail writer as general. But the link he provided as original letter from the general is same as we all have seen. Where the salutation is an officer not mentioning the rank. The link you provided in your blog for the original mail it is also same. In your writing also you stated that he was mentioned as general in various blogs, that is why you want like to call him as a general. But did you not see the original mail? Then how can you call him a general?

      You should agree with me that when I say “Mr X” is a corrupted man, the blame goes on his shoulder only. Here Mr X is a serviceman of “Y” organisation. Now if I say “Mr X” of “Y” organisation is a corrupted man then the blame come to the organisation also. If it is proved that “Mr X” is corrupted, then you can say either of the above sentences. But If it is not proved then you should not mention the organisation for the sake of that organisation. Here about your writing, the identity of that e-mail writer is not confirmed. Do not you think you could to omit the general salutation here as in no where of that mail the writer mentioned him as a general?

      I always expect whole hearted support from any ex cadets in any of the occasions, may be as an ARMY officer, may be just as an ex-cadet. More than 50% ARMY officers are ex-cadets. So when we see some writing in Cadet College Blog little bit against ARMY, I personally get hurt more. Which will not happen if I see same or worse writing against ARMY in any other blogs. I agree that in your writing you never humiliated ARMY as a whole. But you humiliated a general of the ARMY which is a humiliation to the ARMY. If it would be really a general then I could not blame you. But none of us is confirm about his so, I get the scope to blame you.

      Now about the audio tapes. Yes we the officers have broken the rule/discipline posting the tapes. But the fact here is, no officer has done it to humiliate government or any political party. These are the small clips recorded by mobile phone. This are circulated so that we get the justice. So that we get the people’s support. You all know that on 25-26 feb 09 media only highlighted the sayings of the BDR’s. Which took all the citizens against ARMY. But from 27 feb 09 when everyone came to know the real story, then the all the people understood that this incident was a big conspiracy. But all the citizen do not think it is a conspiracy. Many of us still believe that it happened for the misbehave of ARMY officers.

      Zeyt বলেছেনঃ
      মার্চ ৭, ২০০৯ @ ৭:৪৮ অপরাহ্ন
      আমার ধারনা বিডিআর এর ঘটনায় কোন ষড়যনত্র ছিলনা। আ‌‍র্মি অফিসার আর তাদের বউদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে সাধারন সৈনিকরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। বাঙালীরা এমনিতেই বর্বর হয়ে গেছে, তারা এখন শুধু মানুষ মারেনা, মানুষ জবাই করে। সর্বক্ষেত্রে একই অবস্হা, বিডিআরতো কোন এক্সেপশন নয়।

      When an ex-cadet can think like this, then you should consider how many people of our country can have the same feelings like Zeyt. This is the reason for which young officers posted those clips, just to inform everyone the real incident. Here in most of the clips the saved officers from Pilkhana stated the incident what happened on 25 & 26 feb 09. Then they asked some questions. In few questions PM answered nicely which is totally supporting the present government. If someone with a bad intention manipulated the clips and posted, then why they have left those portions which supports the government? Again I agree this is a breach of military discipline posting the audio tapes. But when your brothers are killed in this manner, your vabi’s are tortured, your children are tortured then you can not expect discipline. Our claim was, we could save them if we were allowed to operate in Military manner. Yes I agree in that case the no of dead people could be more. But if we were allowed to operate then no of dead would be more from the conspirators, not from the innocents. BDR and ARMY these are two forces. Both the force has their separate rules and regulations. no where it is written that in any kind of crisis we should wait for the political solution. We have clear cut rule, when you are attacked, save yourself. When a part of your force is attacked, help them and save them. Our objection was on that issue. why we were not allowed to save our brothers?

      You may tell that if ARMY would have attacked then many innocent BDR would have lost their life’s. But to me no body inside PILKHANA was innocent. Only few (max 50, as per the statements of rescued officers in media) started the conspiracy. Rest around 9000 BDR just observed and later many of them joined the conspirators. In a force if you support a mutiny even, you are at fault. So those who were innocent they did not save others and try to stop the mutiny. So they are also defaulter. I agree there were many BDR who saved officers/their family’s life. They are only the innocents, including few shaheed BDR’s sacrificed their life even. But these no are not a big no. For the sake of conspirators life we could save many life. At least we could save the honour of our ladies which are much more costlier than the life’s.

      These are the few reasons for for which officers went against senior officers including CAS, PM, and government. This is breach of discipline, but you should understand when you have question about your own security, your family’s security, your child’s security, how much discipline can you expect? Moreover do not forget “necessity knows no law”. But do not try to mishap this necessity with the BDR jowans necessity. Here the officers necessity is for their life, for their honour. But the BDR’s necessity was for comfort. We the ARMY personnel know how much effort we give for the soldiers comfort. We do not take food unless we can ensure their food. Now again I know few of us will raise question about the standard of food we have, and the standard they have. But you should know the standard provided for troops are free, but the standard we the officers maintain are from our own salary, not free. Only dry ration is provided to officers in low price where the standard is same as the troops ration. So if a soldier is telling officers are not considering their requirements, then that may be believed by a person out of force, but not by us.

      Sorry i have written many things replying your question. I could not not write it in Bangla or even in a good English. This is my limitation. Still I can not console myself for that incident. I always think my brothers were dying and asking help from me, but I could not go, my ARMY could not go to save them. i do not know whether I/my ARMY could save them or not, but we could have the satisfaction that we have tried.

  21. সৈকত আচার্য - ১১ মার্চ ২০০৯ (১১:১২ পূর্বাহ্ণ)

    [সিসিবি‌তে প্রকাশিত এই মন্তব্যটি আলোচনার সুবিধার্থে এখানেও কপি করে দেয়া হল – ব্লগ এডমিন]

    @ মনসুরঃ

    নিরপেক্ষ থেকেই লিখতে হবে এ ধারনার সাথে সহমত পোষন করা মুশকিল। নি্রপেক্ষ মানে কোন পক্ষ না নেয়াকে বুঝায় হয়তো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় কেউ যদি বলতেন, ভাই আমি নিরপেক্ষ তাহলে, তাকে লোকে সন্দেহের চোখে দেখতো। জাতীয় জীবনে এমন কিছু সংকটকাল আসে মাঝে মাঝে যেগুলিতে নিরপেক্ষ থাকার কথা বলা মানে, সুবিধাবাদের চর্চা করা।

    জনাব মনসুর সাহেবের মন্তব্যের বিষয়ে আমার প্রতিমন্তব্য দেয়ার পূর্বে বলতে চাই, রায়হান রশিদের পোষ্টটি একটি বিশ্লেষন মাত্র। এখানে অনেক দূর্বলতা থাকতে পারে, চিন্তার অস্পষ্টতা থাকতে পারে, ঘটনার পরম্পরাকে ঠিক ঠিক ভাবে বোঝার ক্ষেত্রে, একটা তথ্যকে আরেকটা তথ্যের সাথে লিংক করার ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকতে পারে কিংবা তথ্য উপাত্তের সূত্রগত বিভ্রান্তিও হয়তো থাকতে পারে।

    কিন্ত যেটা তিনি করেছেন তা হলো, নিজ দায়িত্বে এবং স্বনামে একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক নারকীয় ঘটনার পরম্পরাকে ধরতে চেয়েছেন। আমরা মনযোগ নিবদ্ধ করে সেই ই-মেইল এবং তার এই সমালোচনাটা পড়েছি। অপরদিকে ই-মেইলকারী/গণ বেনামে থেকেছেন এবং কোনরূপ তথ্য উপাত্তের ধারে কাছেও না ঘেঁষে একটা বক্তব্য মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন। একারনে বিষয়টিকে অনেকে গুজবের তালিকায় রেখেছেন।

    নিরপেক্ষতা এখানে পোষ্টের লেখকের ছিল না, নিরপেক্ষতা এখানে ই-মেইল প্রদানকারীর ছিল না, নিরপেক্ষতা মনসুর সাহেবের মন্তব্যে নেই এবং আমার মন্তব্যেও নিরপেক্ষতা থাকবে না।

    প্রথমেই আপনি বলছেন যে, রেফারেন্সিং এর কথা। সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে যা কিছু তথ্য উপাত্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে এই পোষ্টে লেখক তার লিংকগুলো দেয়ার চেষ্টা করেছেন বক্তব্যের স্বপক্ষে সূত্র হিসেবে। সেক্ষেত্রে একটি ই-মেইলের সাথে ঠিক এই ধরনের বিশ্লষনমূলক একটি লেখার কিছু পার্থক্য থাকবেই এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত এটা কি শুধুই একটি ই-মেইল ছিল, নাকি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ঘটনার একটি নিম্নমানের বিশ্লেষন ছিল, যা খুব দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছিল দুনিয়াব্যাপী। তাই দু’টি লেখাকে নিয়ে আপনার তুলনামূলক মন্তব্যটা বোধগম্য হল না। কারন এই পোষ্টেই বেশ কিছু রেফারেন্স দেয়া হয়েছে যা ই-মেইলটিতে একেবারেই নেই।

    দেখলাম, আপনি এই পোষ্টের লেখকের একটিমাত্র লাইন নিয়ে বেশ চিন্তিত। যদিও আমি স্বীকার করি যে এই লাইনটাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে অনেকেই ভুল মেসেজ পাবেন। কিন্ত লেখকের এই পোষ্টটি একটি ধারাবাহিক সিরিজ যা এখনো চলমান। ঘটনার নানা ডাইমেনশন তিনি নিজের মত অনুযায়ী ব্যাখ্যা করে যাচ্ছেন এবং অনেকেই তা মনোঃসংযোগ করে পড়ছেন। ফলে আপনার মন্তব্য লেখকের সামগ্রিক বিশ্লেষনের আলোকে করা হলে আমরা উপকৃত হতাম। কারন ই-মেইলটির অন্ততঃ দশটা প্যারাগ্রাফ ধরে ধরে লেখক সমালোচনা করেছেন। অপরদিকে আপনি কিন্ত খুঁজে পেয়েছেন কেবল একটি লাইন।

    যা হোক, মনে হয়েছে, আপনার পুরো মন্তব্যের ফোকাসটা ছিল এই যে, তোমরা দেখ, লেখক আর্মিকে আন্ডারমাইন করে এই লিখাটা লিখেছেন, এই কথাটা বেশ কৌশলে আপনিও ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। আমার মনে হয় নিজের নাম ধাম ব্যবহার করে কেউ এ কাজ করতে চাইবেন না যেক্ষেত্রে বেনামে লিখার সুযোগ রয়ে গেছে। ফলে আপনার এই যুক্তিটা কি খোঁড়া নয়? আপনার ভাষায় JMB and the other Islamic militant দের সেই “shrewd technique” এর আশ্রয় আপনি কি নেননি? তা না হলে ধরে ধরে আপনি পোষ্ট লেখকের যুক্তি খন্ডন করতে পারতেন বা অসাড়তা প্রমান করতে পারতেন। কিন্ত তার কোন চেষ্টা করেছেন এমনটা মনে হয়নি। বরং পোষ্ট লেখককে ব্র্যান্ড করার চেষ্টা করেছেন যা উদ্বেগের কারন হতে পারে।

    আলোচনা চলতে থাকুক, কারন আমরা বিশ্বাস করি মতামতের এ ধরনের পারস্পরিক আদান প্রদান ও সংঘর্ষ সত্যের কাছাকাছি আমাদের একদিন নিয়ে যাবে।

    আপনাকে ধন্যবাদ।

  22. রেজাউল করিম সুমন - ১১ মার্চ ২০০৯ (১১:১৫ পূর্বাহ্ণ)

    [সিসিবি‌তে প্রকাশিত এই মন্তব্যটি আলোচনার সুবিধার্থে এখানেও কপি করে দেয়া হল – ব্লগ এডমিন]

    মনসুরের মন্তব্যের যাথার্থ্য অনুধাবনের জন্য রায়হান রশিদের লেখাটা আরো একবার ভালো করে পড়লাম। না, এরকম মনে করার কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না যে, সেনাবাহিনীকে খাটো করার কোনো চেষ্টা এই পোস্টে আছে। বরং মনসুরের মন্তব্যের একটা অংশ পড়েই কিঞ্চিৎ চমকে উঠতে হলো, যেখানে বলা হয়েছে:

    The behaviour shown by the ARMY officers to PM was obviously out of discipline and ARMY customs. But you should understand in which condition they have done like this. We need to breach the discipline in some occasions for the betterment of the nation, for the betterment of people of the nation; the way we broke the discipline/rule against Pakistani government in 1971. If we would have considered maintaining discipline/rules in 1971 to be loyal citizens as per your writing, then we would not be a citizen of independent Bangladesh now.

    এখানে (নজরটান বর্তমান মন্তব্যকারীর) শৃঙ্খলাভঙ্গের পরিপ্রেক্ষিত বোঝাতে গিয়ে একই বাক্যের মধ্যে যেভাবে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান গ্রহণের উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে একটু ধন্দে পড়তে হয়। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আর এখনকার সরকার কি তেমনি দুই প্রতিপক্ষ? মনসুর নিশ্চয়ই সে-কথা বোঝাতে চায়নি।

    মন্তব্যের উপসংহার টানা হয়েছে এভাবে :

    Remember ARMY is a part of this nation. If we humiliate any part of our country, it is a humiliation to the whole nation. Please do not humiliate the country just to express yourself as a big scholar/intellectual.

    সেনাবাহিনী যে দেশ আর দশেরই অংশ, সে-কথা কে না জানে! সবাই তা মানেও। বরং সেনাবাহিনীর লোকজনই নিজেদের আর-সব নাগরিক থেকে আলাদা ভাবে — এরকম একটা অভিযোগ সাধারণ্যে উচ্চারিত হতে শুনেছি।

    পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে রায়হান রশিদের তিন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ে তাকে বড়ো পণ্ডিত/বুদ্ধিজীবী মনে হয়নি আমাদের; নিজেকে সেভাবে উপস্থাপনের কোনো চেষ্টাও তার এই লেখাগুলিতে নেই। বিশেষ করে আলোচ্য পোস্টটি লেখার মধ্য দিয়ে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে রায়হানের দায়িত্বশীলতারই পরিচয় পাওয়া গেল। স্বীকার করতেই হবে, মনসুরের কল্পনাপ্রতিভা আছে।

    সে যাই হোক, মন্তব্যের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। ব্লগ তো দ্বিধাহীন মতপ্রকাশেরই জায়গা। তার মন্তব্যের উত্তরে রায়হানের বক্তব্য আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে।

  23. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০) - ১১ মার্চ ২০০৯ (১১:১৬ পূর্বাহ্ণ)

    [সিসিবি‌তে প্রকাশিত এই মন্তব্যটি আলোচনার সুবিধার্থে এখানেও কপি করে দেয়া হল – ব্লগ এডমিন]

    মনসুর : তোমার মন্তব্যেও কিন্তু ওই নাম-ঠিকানাহীন ই-মেইল লেখকের পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে পক্ষপাত প্রকাশ পেয়েছে। আসলে প্রতিটি ঘটনাকে নানা দিক দিয়ে বিশ্লেষণ করা যায়। ই-মেইল লেখক একভাবে বিষয়টাকে উপস্থাপন করেছেন। সময় ধরে ধরে, যেন প্রতিটি ঘটনা তিনি যেভাবে বলছেন সেভাবে ঘটেছে। আর ওই মেইলের তথ্যকে রায়হান তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গীতে কাটাছেড়া করেছে। আমি বা তুমি কোনটা গ্রহণ করবো সেটা যার যার দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর নির্ভর করে।

    তবে আমি তোমার দেয়া একটা তথ্যের বিষয়ে সঠিক বলতে পারি। সেনাকুঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেনা কর্মকর্তাদের দরবার কাভার করা নিয়ে মিডিয়া সম্পর্কে তোমার তথ্যটি পুরোপুরি অসত্য। সভা শুরুর আগে টিভি চ্যানেলগুলো শুধু কিছু ফুটেজ নিয়েছে। ওই কয়েক মিনিট ছাড়া মিডিয়ার কোনোরকম উপস্থিতি সেনাকুঞ্জের ধারেকাছে সেখানে ছিল না। দরবার চলাকালে সেনাকুঞ্জের কয়েকশ মিটার দূরে মসজিদের কাছে মিডিয়ার লোকজন অপেক্ষা করেছে। আর ওই দরবার নিয়ে সংবাদপত্রে যতোটুকু খবর ছাপা হয়েছে, সেটা সভায় অংশ নেয়া লোকজনের কাছ থেকে সেকেন্ডারি সোর্সে সংগ্রহ করা। ই-মেইলে, ই-মেইলে ছড়িয়ে দেয়া অডিও ক্লিপগুলোকে ওই সভার একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য কার্যবিবরণী হিসাবে ধরে নেয়া যায়। আমি বরং অবাক হয়েছি, রায়হান মিডিয়ার লোক না হয়েও মিডিয়ার ওইদিনের কাজটা তার জবাবে এতোটা যথার্থভাবে তুলে ধরলো কিভাবে?

    তাই মিডিয়ার ওইদিনের কাজ সম্পর্কে অসত্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে তোমার পরবর্তী পর্যবেক্ষণ :

    They captured the whole address but highlighted only few portions in the media. Very few newspapers only highlighted in short that officers were angry and asked various questions to the PM. No media has shown the real expressions of the officers. That is why officers posted the audio clips taken in their mobile phone. Those are short and in various part this is true.

    নিয়ে এবার কি বলবে তুমি নিজেই সে সিদ্ধান্ত নাও।

  24. আরমান - ১২ মার্চ ২০০৯ (৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ)

    [সিসিবি‌তে প্রকাশিত এই মন্তব্যটি আলোচনার সুবিধার্থে এখানেও কপি করে দেয়া হল – ব্লগ এডমিন]

    @মাহমুদ,
    প্রধানমন্ত্রীর শক্তি প্রয়োগ না করার সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল কিনা সেই প্রশ্ন আমাদের বহুকাল তাড়িয়ে বেড়াবে। তবে আপনার ভাষায় বিদ্রোহ দমনের পন্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে কিনা সেই প্রশ্নে আমি আপনার সাথে একমত নই। সন্দেহাতিত ভাবে বলা যায় আমরা যে মাপের সাফল্য আশা করেছিলাম তা পুরোপুরি পাইনি তবে আমাদের মনে রাখতে হবে আলোচনার ভিত্তিতে এত বড় মাপের একটি জিম্মি পরিস্থিতির অবসানের জন্য ৩০/৩৫ ঘন্টা কিন্তু খুব বেশি সময় নয়। বিশ্বের নানা কোনে উদ্ভুত জিম্মি পরিস্থিতির আলোকে কথাটি বললাম(দুক্ষিত এই মুহুর্তে হাতের কাছে কোন reff নেই তবে পেলে জানাব)। তাছাড়া আমাদের মনে রাখতে হবে যে এই ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা, পূর্ব পরিকল্পনা বা ট্রেইনিং এই সরকারের ছিলনা। পত্রপত্রিকায় যতটুকু দেখেছি তাতেও ঘটনাস্থলে সাধারন ফোর্স বাদে কোন স্পেশাল এন্টি টেরোরিজম ফোর্স এর বা (সুনিদৃষ্ট পরিকল্পনা সহ)কোন কমান্ডো বাহিনীর উপস্থিতির উল্লেখ নেই। নিম্নবর্ণীত ঘটনাগুলি তাই পুরো জাতীর এক বেসামাল(off gaurd) অবস্থার ইঙ্গিত দেয়।

    ১। সেনাকুঞ্জ থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডিং থেকে জেনেছি প্রাথমিক অবস্থায় সকল বাহিনী প্রধানদের পরামর্শ সত্যেও প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র ভয় দেখাবার খাতিরে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার মোতায়েনের মত (আমার দৃষ্টিতে) একটি অকার্যকর পদক্ষেপের কথা ভেবেছেন। এসব ঘটনা থেকে আমাদের সরকার এমনকি এর সামরিক উপদেষ্টা মন্ডলির এরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দিশেহারা ভাবই প্রকাশ পায়। তবে একই সাথে তাদের তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নেয়ার সদিচ্ছাও সুস্পষ্ট হয়।

    ২। সেনাকুঞ্জের রেকর্ডিং থেকে আরো জেনেছি কোন পরিকল্পিত সেনা অভিযান ছাড়াই (সম্ভবত) প্রধান ফোটকের খুব কাছাকাছি অবস্থান নেয়ার কারনে দুই জন সেনাসদস্য আহত হন এবং একজন মাথায় বুলেটবিদ্ধ হয়ে প্রাণ দেন।

    ৩। যতদূর জানি সেনাবাহিনী ও RAB এর উপর পিলখানা ঘেরাও করে রাখার দ্বায়িত্ব থাকা সত্যেও ৫ নম্বর গেট দুদিন ধরেই সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় ছিল।সেনাবাহিনীর সকল সাজোয়া বহর রাইফেল স্কয়ার আর নিলক্ষেতেই মোতায়েন ছিল। ৫ নম্বর গেট সংলগ্ন সরু রাস্তায় কোন বাহিনীরই চোখ ছিল না যদিও এই গেটটি দরবার হল থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে। সামরিক অভিযানের এই বিশাল ফাকটি ইচ্ছাকৃত বা সরকারের আদেশক্রমে কিনা তা আশা করি তদন্তে বেরিয়ে পড়বে তবে যদি ধরে নেই এটি ইচ্ছাকৃত নয় তবে আবারো সামরিক অভিযানে সমন্বয়হীনতা আর পরিকল্পনাহীনতারই আভাস পাই।

    তাই সার্বিক বিচারে আমার বিশ্বাস রাজনৈতিক সমাধানের মাধমে আমরা একটি বড় রকমের রক্তগঙ্গা এড়াতে পেরেছি।

    @মনসুর
    আপনি লিখেছেন

    “You may tell that if ARMY would have attacked then many innocent BDR would have lost their life’s. But to me no body inside PILKHANA was innocent. Only few (max 50, as per the statements of rescued officers in media) started the conspiracy. Rest around 9000 BDR just observed and later many of them joined the conspirators. In a force if you support a mutiny even, you are at fault. So those who were innocent they did not save others and try to stop the mutiny. So they are also defaulter.”

    ঠিক এই কারনেই শক্তি প্রয়োগ না করার প্রধানমন্ত্রীর সেই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। আজ এই হৃদয় বিদারক ঘটনা আমাদের দেশের দুটি বাহিনীকে মুখোমুখি করেছে ঠিকই তবে পিলখানায় আটকা পড়া অফিসারগ্ণ যেমনি আমাদের দেশের অমুল্য সম্পদ তেমনি এই ৯০০০ (কিছু পত্রিকার রিপোর্টে ৬০০০) সিমান্ত রক্ষিও আমাদের দেশেরই সন্তান। তাই এক বাক্যে তাদের সবার মৃত্যুদন্ড ঘোষনা আমাদের কারোই কাম্য হত না। এমনকি সামরিক বাহিনীর চাপের মুখেও না। শান্তিপূর্ণ মিমাংশার বদলে প্রধানমন্ত্রী যদি সেদিন তড়িঘড়ি কোন সিদ্ধান্ত নিতেন তবে আজ তিনি সেনাকুঞ্জে উত্তেজিত অফিসারদের পরিবর্তে হয়তো রাজপথে উত্তেজিত জনতার মুখোমুখি হতেন। জনগন অবশ্যই প্রকৃত অপরাধিদের এবং ইন্ধন দাতাদের বিচার চায় তবে বাহিনীর আইনে যাই থাকুক শুধুমাত্র বিদ্রোহের অপরাধে এক সাথে ৮৯৫০ (আপ্নারই ভাষায় ৯০০০-৫০) সন্তান হত্যা করাটা সমিচিন হত কি?

    ২৫শে ফেব্রুয়ারির পর থেকে আমাদের সবার দিনগুলি এক উৎকন্ঠার মধ্যে কাটছে। সীমান্ত রক্ষিরা অস্ত্র সমর্পনের পরেও সেই উৎকন্ঠা কিছুমাত্র কমেনি বরং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উৎকন্ঠা অতি কষ্টে অর্জিত আমাদের এই গণতন্ত্র হারাবার ভয় থেকে। সেই ভয় আরো বাড়ে যখন আমরা সেনাবাহিনীর মধ্যে এরুপ অযৌক্তিক উষ্কানিমূলক ই-মেইল সমর্থনের প্রবনতা লক্ষ্য করি।এমনিতেই (কোন অজ্ঞাত কারণে) সেনাবাহিনীর এই আগুনে ঘি ঢালার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উষ্কানির অভাব নেই। জামাতের কিছু নেতার ২৫/২৬ তারিখে শান্তিপূর্ণ মিমাংসার সমর্থনে বিবৃতি পেশ করা সত্যেও দুদিন পর ১৮০ ডিগ্রি মোড় নেয়া তারি প্রমাণ। তার উপর এই ভয়টি রীতিমত আতঙ্কের আকার ধারণ করে যখন শুনি আমাদেরই সেনা অফিসারেরা সকল code of decipline ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রীর সাথে অসংযত আচরন করেন এবং তা জানানোর জন্য ইন্টারনেটে এসব রেকর্ডিং ছেড়ে দেন। আতঙ্কিত হই সেই রেকর্ডিংএ দায়িত্বশীল উচ্চপদস্থ কোন সেনা কর্মকর্তার কথায় যখন প্রতিশোধের সুর শুনতে পাই।

    জনগন সব সময়ই আশা করে জাতীর সবচেয়ে কঠিন-ক্রান্তিলগ্নেও আমাদের সেনাবাহিনীর চিত্ত থাকবে পর্বতের মত অটল। তাই তাদেরই এভাবে সকল নিয়ম অগ্রাহ্য করে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখলে সমগ্র জাতীর আত্মবিশ্বাসেই যেন কিছুটা ভাটা পড়ে।

  25. অস্মিতা - ১২ মার্চ ২০০৯ (২:১৯ অপরাহ্ণ)

    [সিসিবি‌তে প্রকাশিত এই মন্তব্যটি আলোচনার সুবিধার্থে এখানেও কপি করে দেয়া হল – ব্লগ এডমিন]

    @ মনসুর, মাহমুদ, এম.এইচ.কবির, মাহরাব, মেহদি হাসান রাহি, বুলবুল, ফুয়াদ

    আপনাদের মন্তব্য থেকে এটুকু স্পষ্ট যে আপনারা একটি রাজনৈতিক সমাধানের বিপরীতে একটি সামরিক সমাধানের পক্ষপাতি ছিলেন বা আছেন। আপনাদের কয়েকজনের লেখা পড়তে পড়তে আমার মনে একটি প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। আশা করি তার সুস্পষ্ট উত্তর পাবো।

    পিলখানা পরিস্থিতি নিরসনে রাজনৈতিক সমাধানের বিপরীতে একটি সেনা অভিযানের সাফল্যের (সফলতার মাপকাঠি?) সম্ভাবনা কতটুকু ছিল সেটি বিতর্কের বিষয়। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে অন্তত ৬০‌-৭০ ভাগ সম্ভাবনাও ছিল সেনা অভিযান সফল হওয়ার, তার মানে দাঁড়ায় এই যে অন্তত ৩০-৪০ ভাগ সম্ভাবনা ছিল সেনা অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক প্রাণহানি হওয়ার। সে ক্ষেত্রে প্রাণ হারাতেন:

    ১) জিম্মি নারী এবং পুরুষেরা। একথা নিশ্চয়ই ধরেই নেওয়া যায় যে অস্ত্রে সজ্জিত বিডিআর জওয়ানেরা নিশ্চয়ই তাদের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে চেষ্টা করতেন নিজেদের রক্ষা করতে এবং একমাত্র অর্বাচীন ছাড়া যে কেউই মানবে যে সেরকম পরিস্থিতিতে তারা শেষ পর্যন্ত ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতো এই সব জিম্মি নারী পুরুষ শিশুদের। যে নিষ্ঠুরতার সাথে তারা সেনা অফিসারদের হত্যা করেছে, তাতে শত ভাগ নিশ্চয়তার সাথেই বলা যায় যে জিম্মি নারী পুরুষেরা সেখান থেকে জীবিত বেরিয়ে আসতে পারতো না।

    ২) প্রায় নিশ্চিত ভাবেই প্রাণ হারাতেন অন্তত হাজার খানেক বিডিআর জওয়ান, যাদের অনেকেরই এই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এমনকি তাদের কয়েকজন সেনা অফিসারদের এবং তাদের পরিবারদের সাধ্যমত বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন বলেও আমরা জানি।

    ৩) প্রাণ হারাতেন পিলখানার আশে পাশের সাধারণ মানুষ। ঠিক কত জন, সেটা সম্ভবত কল্পনারও বাইরে। সেই সঙ্গে আশেপাশের মানুষদের (যারা বেশীর ভাগই নিম্ন বিত্তের) ঘরবাড়ীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতো সে কথাও বোধ হয় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

    আমার বিনীত প্রশ্ন হল – আপনাদের সেনা অভিযানের পক্ষে যুক্তি দেয়ার অর্থ কি এই দাঁড়াচ্ছে না যে উপরে উল্লেখিত এই তিন শ্রেনীর মানুষদের জীবন আপনাদের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়? এই জীবনগুলোর ব্যাপারে কোন রকম ঝুঁকি (সেটার সম্ভাবনা ৩০ ভাগ হলেও) নেওয়ার অধিকার কি আপনাদের আছে? একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে যতটুকু বুঝি, সেনা বাহিনীর দায়িত্ব দুর্বলকে রক্ষা করা, দেশের মানুষকে রক্ষা করা। সেক্ষেত্রে আপনাদের সহযোদ্ধাদের জীবনের মূল্য কি দেশের আর জনগণের চাইতে বেশী?

    এক্ষেত্রে একটি কথা না বলে পারছিনা। আমরা সাধারণ জনগণ কিন্তু আজকে সেনা বাহিনীর এই দুর্দিনে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। দরিদ্র এই দেশের সাধারণ মানুষগুলো, যাদের অনেকেই হয়তো অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটান, সেই সব খেটে খাওয়া মানুষেরাও তাদের শীর্ণ হাতটি প্রসারিত করেছে এই সব স্বজন হারানো সেনা সদস্যের পরিবারের প্রতি গভীর ভালবাসায়। তাদের এই ভালবাসা এবং মমতায় কোন ফাঁক নেই। তারা একবারের জন্যও এই প্রশ্নটি করেনি যে – কেন তাদের সন্তানদেরকে স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে দু’বেলা লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হয় দু’মুঠো চালের জন্য। বিডিআর শব্দটির সাথে এদের বেশীর ভাগেরই পরিচয় সম্ভবত এই সূত্রে যে তাদের চালানো দোকান থেকে অল্প মূল্যে তারা চাল সংগ্রহ করতো এক সময়। আমরা এই তুলনা একবারও করিনা যে আমাদের কারো মৃত্যু হলে রাষ্ট্রীয় সম্মানের সাথে সমাহিত করা হবে কিনা, সরকার আমাদের বাড়ী দেবে কিনা, আজীবন ক্ষতিপূরণ দেবে কিনা, আমাদের পুত্র কন্যাদের পড়াশোনার খরচও বহন করবে কিনা। আমরা একথা মনে রাখি না যে, আমাদের সন্তানদের মৃত্যুর তদন্ত হয়না, বিচার হয়না, এমনকি পত্রিকাতেও স্থান পায়না আমাদের খবর। আমরা আমাদের সকল অপ্রাপ্তি আর পার্থক্যের চিত্রটি ভুলে গিয়ে আমাদের সমবেদনার হাতটি প্রসারিত করি। সেখানে ইউনিফর্ম আর ক্যান্টনমেন্টের উঁচু দেয়ালগুলো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। আমরা বিশ্বাস করি, সেনাবাহিনীতে যারা কাজ করেন, তারা আমাদেরই ভাই, আমাদেরই সন্তান। আজকে সেনা পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের খবর শুনলে তাই আমাদের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হয়।

    আমার প্রশ্নটি খুব সহজ। আশা করি তার উত্তর পাবো। আমরা আপনাদের নিজেদের অংশ বলে মনে করি। মনের কোন কোণায় এই ভাবনাটুকুর স্থান দেইনা যে আমাদের জীবনের মূল্য আপনাদের স্ত্রী পুত্র কন্যাদের জীবনের চেয়ে কিছুমাত্র বেশী মূল্যবান। আপনারাও কি আমাদের জীবনকে সমান মূল্যবান মনে করেন? মূল্যবান মনে করলে আমাদের জীবনের উপর ঝুঁকি নেওয়ার কথা এত সহজেই বলে ফেলেন কিভাবে?

    আপনাদের হাতে বিশ্বাস করে আমাদের জীবন রক্ষার ভার আমরা দিয়েছি। তাই উত্তরটি জানতে ইচ্ছে করে।

    • এম.এইচ.কবির - ১৩ মার্চ ২০০৯ (১:০৬ অপরাহ্ণ)

      [সিসিবি‌তে প্রকাশিত এই মন্তব্যটি আলোচনার সুবিধার্থে এখানেও কপি করে দেয়া হল – ব্লগ এডমিন]

      @অস্মিতা

      আপনার লেখায় মানুষের জন্য প্রচুর মমতা, নাইটি;গেল, মাদার তেরেসাদের কথা মনে পড়ে যায়|
      পিলখনায় জিম্মি,হত্যা,কমান্ডো,কালাসনিকভ,এএমসি, ট্যা;ক এসব যুদ্ব যুদ্ব ঘটনার পাশেই আপনার মতো মমতাময়ী কারো উপস্হিতি, আহা ভাবতেই ভাল লাগে|মরতে মন চায় না| আপনার প্রশ্নের উওর আছে তবে সেগুলো কখনো আপনার মনে ধরবে না, চলুন চেষ্টা করি..

      ১। রোগী মারা যেতে পারে,তার আপনজনরা পথে বসবে,পড়শীরা কষ্ট পাবে এই ভয়ে কী জীবন
      রক্খাকারী সার্জারী থেকে বিরত থাকা উচিত? আপনার মতে বিপদজনক সার্জারী নয়
      কবিরাজ ডেকে ঝার-ফুকেইতো হবে| হয় অস্মিতা..???

      ২| ৩০ লাখ সাধারন মানুষের জীবন ও হাজারো নারীর ইজ্জত যেতে পারে জেনেও অনেকে যুদ্ব
      করে| করে না অস্মিতা..??? করে..|রাজনৈতিক সমাধানের কথা কেউ ভাবেনি|ভাবলে
      আমরা স্বাধীন হতাম না|অনেক জাতি স্বাধীন হতে পারতো না|
      সে দিন আমরা কোন জুট মিল বা গার্মেন্ট শ্রমিকের দাবী নয়, একটি বর্বর হামলার মুখে
      পরেছিলাম|পল্টন ময়দানে ভাষন দানকারী পলিটিশিয়ান নয়, দুর্দান্ত সাহসী সেনাপতির কাজ
      ছিল এটা|

      অস্মিতা, আমার কোন যুক্তিই আপনার মনে ধরবে না|কষ্ট আমার.. বি.এম.এ’র পাহার কেটে যেখানে লেখা আছে “চির উন্নত মম শির” সেখানে আপনার প্রিয় সাদা গোলাপ রোপন করার সাথে আমি একমত নই|
      ভাল থাকুন…কথা হবে..

      • অলকেশ - ১৪ মার্চ ২০০৯ (৩:০২ পূর্বাহ্ণ)

        কবির ভাইঃ লিখেছেন,

        |রাজনৈতিক সমাধানের কথা কেউ ভাবেনি|ভাবলে
        আমরা স্বাধীন হতাম না|অনেক জাতি স্বাধীন হতে পারতো না|

        আমার ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন এমন একটা ভুলের মহাসমুদ্রে যেখান থেকে কাউকে উদ্ধার করা যায় না, আবার সারা জীবন সাঁতার কাটলেও এই সমুদ্র থেকে তীরে ওঠা যায় না।

    • অলকেশ - ১৪ মার্চ ২০০৯ (২:৪৭ পূর্বাহ্ণ)

      অস্মিতা যে তিনটি সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন তার সাথে চতুর্থ নম্বর সম্ভাবনা যোগ করতে চাই আমি। সেটি হতে পারতোঃ

      ৪। সারা দেশের বিডিআর ক্যাম্পগুলোর মধ্যে অস্থিরতা তৈরী হতো। (কিছু আলামত তো আমরা দেখেছি।) তাদেরকে পাহারা দেয়ার জন্য রেগুলার আর্মি মুভ করাতে হতো। যদি পিলখানায় অভিযান চালানো হতো এবং সেই সাথে অস্মিতার ধারনা অনুযায়ী যদি হাজারখানেক না ও হয় তাহলেও এমন একটা সংখ্যায় বিডিআর এবং সামরিক বাহিনীর আরো অনেক সদস্য মারা পড়তো যে, এক সাথে অল্প সময়ে অনেক বড় হত্যাযজ্ঞ ঘটা অসম্ভব কিছু ছিল না। বিশ্ব ইতিহাসে একমাত্র ঘটনা হয়ে যেতে পারতো। সারা দেশের মানুষ কনফিউজড ছিল এমনিতেই আরো বেশী কনফিউজড হতো।

      সে ক্ষেত্রে আজকে আর্মিরা সাধারন মানুষের যে সহানুভূতি ও ভালোবাসা পাচ্ছে, তার পরিবর্তে এমনকি সম্পূর্ন ভিন্ন ট্রিটমেন্ট হয়তো পেতো। মানুষের প্রতি সেনাবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থার সংকট তৈরী হয়ে আছে গত ৩৫ বছর ধরে। মানুষ সেই কারনে সেনা অভিযানকে সন্দেহের চোখেই দেখতো বলে আমার ধারনা। এতে দেশে আভ্যন্তরীন গোলযোগের সম্ভাবনাই কেবল তৈরী হতো না, তাকে মোকাবেলা করার শক্তি তখন কারোই একক ভাবে থাকতো না।

  26. অস্মিতা - ১৩ মার্চ ২০০৯ (১:৫২ অপরাহ্ণ)

    @ এম এইচ কবির,

    নিচের উদ্ধৃতিগুলোতে আপনার মন্তব্য তুলে দেয়া হল (বিপরীতে আমার বক্তব্য):

    আপনার লেখায় মানুষের জন্য প্রচুর মমতা, নাইটি;গেল, মাদার তেরেসাদের কথা মনে পড়ে যায়|

    মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল! মন ভাল করে দিলেন। যাই হোক, দুঃখজনক হলেও সত্যি, এর বিপরীতে আপনার দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে তুলনীয় একটি উদাহরণই খুঁজে পেলাম। সারভান্তের ডন কিহোতে (Don Quixote) এর কথাই কেবল মনে পড়ছে। জীর্ণশীর্ণ একটি ঘোড়ার পিঠে চড়ে যিনি ভেড়ার পাল দেখলেই ছুটে যেতেন রণ হুন্কার দিয়ে। যাই হোক এই বেলা পরিষ্কার করে নিই যে, কিহোতের উদাহরণটি আপনাদের মত কয়েকজনের জন্যই ব্যবহার করা হল, পুরো সেনাবাহিনীর (এই মর্মন্তুদ ঘটনার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যারা পনের কোটি মানুষের গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে ধৈর্য্যের সাথে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করে গেছে এবং যাচ্ছে) উদ্দেশ্যে নয়।

    রোগী মারা যেতে পারে,তার আপনজনরা পথে বসবে,পড়শীরা কষ্ট পাবে এই ভয়ে কী জীবন রক্খাকারী সার্জারী থেকে বিরত থাকা উচিত? আপনার মতে বিপদজনক সার্জারী নয় কবিরাজ ডেকে ঝার-ফুকেইতো হবে| হয় অস্মিতা..???

    রোগীটি কে সে বিষয়ে আপনার আদৌ কোন সুষ্পষ্ট ধারণা আছে কিনা, হুটহাট সেনা অভিযানকে “সার্জারী” বলা যায় কিনা, তাতে “আদৌ কারো” জীবন রক্ষা পেত কিনা সেটি নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন আছে, কিন্তু সেগুলো আপনি নিজেকে করেছেন বলে মনে হচ্ছে না। এখানে ক্রিটিক্যাল “রোগীটি” কি কয়েকজন সেনা অফিসার? আটকে পড়া জিম্মি নারী পুরুষ, আশেপাশের সাধারণ মানুষ? নাকি বৃহত্তর গণতন্ত্র এবং দেশের ভবিষ্যত? রাজনৈতিক সমাধানকে ঝাড়ফুঁক আপনি ভাবতেই পারেন। তাতে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি আপনার মনভাবই আরেকবার স্পষ্ট হয়। ভাবতে অবাক লাগে পনের কোটি মানুষের এই দেশে এইভাবে জনবিচ্ছিন্ন থেকে দেয়াল ঘেরা একটা জায়গায় বসে মনের মধ্যে ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ কয়দিন খেলবেন!!

    তবে একটি কথা বোধ হয় মনে করিয়ে দিলে ভাল হয়। এই ঝাড়ফুঁক দিয়েই বিশ্বব্যাপী বহু সামরিক উর্দিধারী বীর পুঙ্গবদের ভাগ্য ইতিপূর্বে জনগণকর্তৃক নির্ধারিত হয়েছে। গত শতাব্দীর পৃথিবীর ইতিহাসটা একটু দেখে নেবেন। কোন সভ্য দেশেই ডন কিহোতের ছেলেমানুষী ‘রণ হুন্কার মানসিকতা’ দিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর (গণতন্ত্রের) ভাগ্য নির্ধারিত হয়না। সশস্ত্র সংগ্রাম হলেও তা হয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনকে মাথায় রেখেই।

    তবে আপনার মনকষ্টের জায়গাটি বোধ হয় কিছুটা বুঝতে পারি। যুদ্ধ না হলে “বীরত্ব” দেখাবার সুযোগ কই? বীরত্বের প্রকৃত সংজ্ঞা আপনার কাছ থেকে জানতে ইচ্ছে করছে। এটা আমরা বুঝতে পারি যে সহকর্মী/বন্ধুর সাহায্যের ডাক পেলে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে, অগ্র পশ্চাত বিবেচনা না করে দু’রাউন্ড গুলি ছোড়াছুড়ি করতে পারলে মনের মধ্যে এক ধরণের সান্ত্বনা হয়। নিজের কাছে অন্তত এই স্বস্তিটুকু পাওয়া যায় যে ‘যা হোক কিছুটা অন্তত করার চেষ্টা করেছি’। কিন্তু আপনাদের সেই সান্ত্বনাটুকু দিতে (so that you can feel good about yourself!!) সাধারণ নারী পুরুষের এবং দেশের গণতন্ত্রের ওপর এত বড় ঝুঁকি নিতে হবে সেই ‘আবদারটুকু’ মানতে পারছিনা।

    ২| ৩০ লাখ সাধারন মানুষের জীবন ও হাজারো নারীর ইজ্জত যেতে পারে জেনেও অনেকে যুদ্ব করে| করে না অস্মিতা..??? করে..|রাজনৈতিক সমাধানের কথা কেউ ভাবেনি|ভাবলে আমরা স্বাধীন হতাম না|অনেক জাতি স্বাধীন হতে পারতো না| সে দিন আমরা কোন জুট মিল বা গার্মেন্ট শ্রমিকের দাবী নয়, একটি বর্বর হামলার মুখে পরেছিলাম|পল্টন ময়দানে ভাষন দানকারী পলিটিশিয়ান নয়, দুর্দান্ত সাহসী সেনাপতির কাজ ছিল এটা|

    তাই? দেশ স্বাধীন হয়েছিলো ‘অসম সাহসী কোন সেনাপতির’ নেতৃত্বে? নাকি রাজনৈতিক নেতৃত্বে? নিজের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে এ-ই শিখলেন? ১৯৭১ এর সশস্ত্র সংগ্রাম কি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার (‘৫২, নির্বাচন, বৈঠক, ৭ই মার্চ) আগে হয়েছিল? নাকি পরে? আর সশস্ত্র সেই সংগ্রামও কি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে হয়নি (যা সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের দাবীটিকে বৈধতা দিয়েছিল)? নাকি আপনি এখনো ভেবে বসে আছেন যে কয়েকজন সেনাপতি ‘আচানক’ আকাশ থেকে পড়ে দেশ স্বাধীন করে ফেলেছিল? এই জাতীয় ইতিহাস আপনাদের কে পড়ায়?

    বি.এম.এ’র পাহার কেটে যেখানে লেখা আছে “চির উন্নত মম শির” সেখানে আপনার প্রিয় সাদা গোলাপ রোপন করার সাথে আমি একমত নই|

    এক কাজ করুন, সাদা গোলাপের দরকার নেই। বড় সড় একটি ট্যান্ক সাজিয়ে রাখুন। অথবা নিদেন পক্ষে কয়েকটি গাদা বন্দুক রোপন করুন, সেখান থেকে বড় বড় বন্দুকের গাছ হবে। মাঝে মাঝে সেখানে গিয়ে বেশ ‘ঢিসুম ঢিসুম ঠা ঠা ঠা’, ‘সোলজার-সোলজার’ খেলতে পারবেন। বলা যায়না জর্জ ডব্লিউ এর মত (বম্বার জ্যাকেট পরা) কাউকে হয়তো পেয়ে যেতে পারেন সেই খেলায় (যেমনটি তিনি করেছিলেন ইরাক ক্যাম্পেইনের পর এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে সেজেগুজে হাজির হয়ে)!

    ‘চির উন্নত মম শির’ কথাটির অর্থ আপনার কাছে কি – সেটি জিজ্ঞেস করতেও ভয় হচ্ছে এখন। তবে আমার বিনীত নিবেদন এই যে – রাজনৈতিক প্রজ্ঞাহীন খালি মাথার “শির”কে আপনার মত কয়েকজন “উন্নত” ভেবে নিয়ে প্রবল আত্মতুষ্টির সরোবরে (বন্দুক নিয়ে) ভেসে বেড়াতে পারেন। তবে দেশের সাধারণ মানুষ তাকে কতখানি “উন্নত” ভাববে সে বিষয়ে হলফ করে কিছুই বোধ হয় বলা যায়না। তবে এইটুকু বলতে পারি যে, আপনাদের সেই “উন্নত শির” এর কাছে গণতন্ত্রের এবং দেশের নিরীহ সাধারণ নারী পুরুষের ‘শিরচ্ছেদ’ হয়ে যাক, সেটা বোধ হয় কারোই কাম্য হবে না।

    ভাল থাকুন। “উন্নত” থাকুন।

    • আরিফুর রহমান - ১৩ মার্চ ২০০৯ (২:০৩ অপরাহ্ণ)

      উত্তম জাঝা!

      ইহার বেশি কিছু বলিতে খুঁজিয়া পাইলাম না!

  27. নাগরিক - ১৪ মার্চ ২০০৯ (১২:৫২ পূর্বাহ্ণ)

    রায়হান ভাই, আপনার কাছে একটা‍ অনুরোধ রাখবো। আপনি কি দয়া করে এমন একটা লেখা উপহার দিবেন যা পড়ে আমাদের মধ্যে শুধুই দেশপ্রেম জাগবে এবং লেখাতে কোন দল, সংস্থা কিংবা সংগঠণের কথা থাকবে না। থাকবে শুধু সাধারণ মানুষের কথা আর দেশের কথা।

    এটা শুধুই আমার চাওয়া এবং এতে কোন উদ্দেশ্য নেই। ধন্যবাদ

    • জিজ্ঞাসু - ১৪ মার্চ ২০০৯ (২:১২ পূর্বাহ্ণ)

      রায়হান ভাইকে আপনি বললেন যে দেশ প্রেম জাগানিয়া একটি লেখা লেখতে। প্রথমে ভাবছিলাম ভালই বলেছেন। হয়তো আপনার মধ্যে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। কিন্ত যখনই নিচের লাইনটি চোখে পড়লোঃ

      এটা শুধুই আমার চাওয়া এবং এতে কোন উদ্দেশ্য নেই।

      তখন সেই বিখ্যাত বাংলা প্রবাদখানি আপনার কানের কাছে জোরে জোরে বলতে ইচ্ছে হলোঃ ঠাকুর ঘরে কে– রে, আমি কলা খাই নি।

      • নাগরিক - ১৫ মার্চ ২০০৯ (৮:৩২ অপরাহ্ণ)

        আপনার কথা শুনে আমার মনে হয় আপনার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা একেবারেই নেই এবং আপনি সর্বদাই মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে ব্যস্ত যা কিনা রাজনীতিরই একটি সুকৌশল। এই বিভেদ মানুষকে উন্নত চিন্তা করতে ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাধাগ্রস্ত করে। আপনার প্রত্তুত্তরগুলো দেখে আমার মনে হয়েছে আপনি বর্তমান বাংলাদেশের অন্যান্য অযোগ্য, অশিক্ষিত এবং সন্ত্রাসী রাজনীতিবিদদের থেকে আলাদা কেউ নন। তাই আপনার মত লোকদের প্ররোচনায় সাধারন মানুষের উৎসাহিত হবার কিছু নেই বরং সাবধান হওয়াই শ্রেয়।

    • জিজ্ঞাসু - ১৫ মার্চ ২০০৯ (৯:৫০ অপরাহ্ণ)

      @নাগরিকঃ
      আমার প্রতি বিষেদাগার করে আপনি লিখেছেনঃ

      আপনার প্রত্তুত্তরগুলো দেখে আমার মনে হয়েছে আপনি বর্তমান বাংলাদেশের অন্যান্য অযোগ্য, অশিক্ষিত এবং সন্ত্রাসী রাজনীতিবিদদের থেকে আলাদা কেউ নন।

      বিশ্বাস করুন, আপনাকে নিয়ে যা সত্য বলে মনে হয়েছে, তাই-ই লিখেছি। সেই সত্য থেকে একচুলও এখনও সরে আসিনি। অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্ত নিজেকে এখনো আড়াল করতে পারলেন কই?

      • নাগরিক - ১৬ মার্চ ২০০৯ (১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ)

        আপনি লিখেছেনঃ

        অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্ত নিজেকে এখনো আড়াল করতে পারলেন কই?

        আপনার সম্পর্কে আমার ধারণাটাকেই আপনি সমর্থন করেছেন আবার এবং তা হলো আপনার দেখবার ক্ষমতা নেই। আমি নিজেকে কখনই আড়াল করবার চেষ্টা করিনি বরং বেশ পরিস্কার ভাবেই বোঝাচ্ছি যে আমি সমসাময়িক রাজনীতি বিরোধী। আপনি যদি আপনার চোখের বিশেষ পর্দাটি সরিয়ে আমার লেখা আবার পড়েন, তাহলেই বুঝতে পারবেন। এর জন্য খুব বেশী শিক্ষারও প্রয়োজন পরবে না। ধন্যবাদ

    • রায়হান রশিদ - ১৫ মার্চ ২০০৯ (১০:৩৬ অপরাহ্ণ)

      @ নাগরিক,

      একটা লেখা উপহার দিবেন যা পড়ে আমাদের মধ্যে শুধুই দেশপ্রেম জাগবে এবং লেখাতে কোন দল, সংস্থা কিংবা সংগঠণের কথা থাকবে না। থাকবে শুধু সাধারণ মানুষের কথা আর দেশের কথা।

      দেশের এমন একটা সংকটের বিশ্লেষণ কিভাবে কোন ‘দল, সংস্থা কিংবা সংগঠনের’ উল্লেখ ছাড়া সম্ভব হতে পারে, সেটা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। ব্যাখ্যা করলে বাধিত হব।
      ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

      • নাগরিক - ১৬ মার্চ ২০০৯ (১২:১৬ পূর্বাহ্ণ)

        এই পরিস্থিতিতে সম্ভব না হলে না হয় অন্য সময়ে উপহার দিবেন। আমি প্রাধান্য দিচ্ছি এমন একটি ইতিবাচক বিষয়কে যাতে সমস্ত শ্রেণীর মানুষ কোন দ্বিমত পোষণ না করে এক বাক্যে বলবে- “ঠিক! এই মুহূর্তে দেশের উন্নতির জন্য এরকম পদক্ষেপ প্রয়োজন”। ধন্যবাদ

  28. অবিশ্রুত - ১৪ মার্চ ২০০৯ (১:২৭ পূর্বাহ্ণ)

    রায়হান রশিদের চিন্তাঝড় নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। নিরুপদ্রবে তা উপভোগ করতেও বাধা ছিল না। কিন্তু আলোচনা এমন এক দিকে মোড় নিচ্ছে যে মনে হয়, কয়েকটি কথা না বললেই নয়।
    যারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তাদের একজনের ক্ষেদোক্তির একটি দিক হলো, যখন একজন এক্স-ক্যাডেট (রায়হান রশিদ?) সামরিক বাহিনীকে নিয়ে ‘নেতিবাচক ধারণা’ দেন, তখন তার কষ্ট জাগে, কেননা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অর্ধাংশ এই ক্যাডেট কলেজ থেকেই নেয়া হয়।
    রায়হান রশিদ বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন জানি না, তবে আমার মনে হয়, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব এ দেশের একটি অংশের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং তার যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে। সামরিক কর্মকর্তাদের এখন একটি বিষয় একেবারে সাধারণ মানুষের মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে বুঝে নেয়ার সময় এসেছে,- কেন তাদের সম্পর্কে চারপাশে নানা নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে।
    খুব স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের আমাদের সমাজের মানুষজন ভয় ও ঘৃণামিশ্রিত চোখে সমীহ করে। কেননা সামরিক বাহিনী কেবল সবচেয়ে সংগঠিত (যার সাদৃশ্য রয়েছে অনেকটা যান্ত্রিকতার সঙ্গে) প্রতিষ্ঠানই নয়, সবচেয়ে সশস্ত্র প্রতিষ্ঠানও বটে। আর এই সংঘবদ্ধতা ও সশস্ত্রসজ্জাকে অতীতে অপেক্ষাকৃত কম সংগঠিত নিরস্ত্রদের ওপর নানাভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে। এমন এক অপব্যবহৃত প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের দেখলে যত সমীহই জাগুক, ভয় ও ঘৃণা জাগে তারও বেশি। এরা আমাদের সমাজ ও পরিবারের, আমাদেরই আত্মীয়স্বজন, কিন্তু তাদের কর্মযজ্ঞের প্রাতিষ্ঠানিক ধরণটি তাই কখনোই তেমন সুখকর হয়ে ওঠেনি। এ অবস্থা আমাদের কাঙ্ক্ষিত নয়।
    কিন্তু এটিও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, কেন সামরিক বাহিনীকে সাধারণ সচেতন মানুষ শ্রদ্ধা করবে? কেবল ওই সশস্ত্রতার কারণে? প্রাকৃতিক দর্যোগের সময় তারা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তার কারণে? একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে যখন আমি দেখি, যে-সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রায় পুরো পাকিস্তানি আমল এদেশের মানুষ সংগ্রাম আন্দোলন করেছে, সেই সামরিক শাসনকে আমাদের দেশের সামরিক বাহিনী প্রথম সুযোগেই ফিরিয়ে এনেছে, তখন এসব কারণ যত ভালোই হোক না কেন, একটানে ছিটকে পড়ে এবং ইতিবাচক মনোভাবের সঙ্গে ঘৃণা আর ভয় মিশে ওই মনোভাবকে দূরে ঠেলে দেয়।
    এবং আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা বেশির ভাগ সময় পরিচালনা করেছে সামরিকতন্ত্র। বাংলাদেশে দুর্নীতি-অনিয়মের প্রাতিষ্ঠানিকতার জন্যে দায়ী মূলত সামরিক বাহিনীর শাসনামলগুলো। সামরিকতন্ত্র সাধারণ দুর্নীতি-অনিয়মগুলিকেই কেবল অব্যাহত রাখেনি, একই সঙ্গে নিজেদের শাসনামলের শাসনতান্ত্রিক বৈধতা আদায়ের স্বার্থে রাজনীতিকেও দুর্নীতিযুক্ত করেছেন। এটিও এক পরিহাস যে, এখন এসবের জন্যে তারা কেবল রাজনৈতিক দল আর তাদের শাসনামলগুলিকেই দায়ী করছেন।
    একজন দাবি করেছেন, রাজনৈতিক সমাধানের পথে নয় বরং দুর্দান্ত কোনও সেনাপতিই এ দেশের স্বাধীনতা এনেছেন! চারদলীয় জোটের শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সেক্টরভিত্তক করে লিখে ইতিহাসকে সামরিকীকরণের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, এসব ধারণা হচ্ছে তারই মূল ভিত্তি। আওয়ামী লীগ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে যাদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসতো আর যারা তড়বড় করে বলার চেষ্টা করতেন, এদেশের সাধারণ মানুষই যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছেন,- তাদের সেই একদর্শী ইতিহাস নির্মাণ প্রক্রিয়ার ফসল হলো নতুন এই ইতিহাস নির্মাণ প্রক্রিয়া,- একটি সামরিক যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে! একটি দেশ যখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, সামরিক ব্যক্তিত্বরা বিভিন্ন কারণেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন, যুদ্ধের জন্যে রণনীতি রণকৌশল ইত্যাদিও আলাদাভাবে প্রণীত হয়, কিন্তু তার মানে কি এই, সে যুদ্ধ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয় না? তা হলে শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল, তাজউদ্দিনদের কি প্রয়োজন ছিল? আর এই জন্যেই কি পরে সামরিক তত্ত্বাবধানে তাদের হত্যা করা হয়েছে?
    আমি জানি, আমার এ কথায় অনেকে রুষ্ঠ হবেন। বলবেন, এটির জন্যে পুরো সামরিক বাহিনী দায়ী নয়। এক শ্রেণীর সামরিক কর্মকর্তা দায়ী। তাই যদি হয়, তা হলে পুরো সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে উচিত আনুষ্ঠানিকভাবে একথা বলা,- যেসব সামরিক শাসন আমাদের সহ্য করতে হয়েছে, তার জন্যে দায়ী নেহাৎই জিয়াউর রহমান আর এরশাদ এবং তাদের সহযোগীরা। তাদের বলা উচিত, ১৫ আগস্টের বর্বরতম ঘটনার দায় তাদের নয়। কিন্তু না, তারা অনেক কিছুরই ঘোষণা দিতে পারেন, অথচ এই ব্যাপারে তাদের ভূমিকা গোলাম আযম-নিজামী-কামরুজ্জামানদের মতোই সলাজ,- তারা বলতে রাজি নন, ওই সব করার ফলে গোটা সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে কিংবা ওসব যারা করেছে তারা সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে এবং ওইসময় সামরিক শাসনে সমর্থন যোগানো সামরিক বাহিনীর ভুল ছিল।
    এসবই চর্বিত চর্বন, এরকম একটি সময়ে তা মনে করিয়ে দিতে হলো বলে আমি খুবই দুঃখিত।
    দাবি করা হয়েছে, কোন সামরিক জেনারেল এরকম একটি মেইল বেনামে পোস্ট করতে পারেন না। তাই? অডিও ক্লিপ কে ছেড়েছে? প্রধানমন্ত্রী নিজে? মতিয়া চৌধুরী? ‘সিভিলিয়ান’ তো কেবল এ দুজনই ছিলেন ওইখানে। নাকি কোনও সামরিক অফিসার বা অফিসারগণ? হয়তো তিনি বা তারা জেনারেল নন, কিন্তু তিনি বা তারাই তো জেনারেল হবেন একদিন, না কি? এরকম যারা জেনারেল হবেন, তারা তো টেপ ছাড়ার চেয়েও ভয়ঙ্কর কাজ করবেন মনে হয়।
    সেদিন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এগুনো সঠিক ছিল কি না সে আলোচনা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ক্রমশই আমরা সিভিলদের জীবনের মূল্য সম্পর্কে অবজ্ঞা দেখাচ্ছি এবং এটি অব্যাহত থাকলে সেদিন সামরিক ও বেসামরিক যেসব মানুষরা আমাদের জন্যে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, তাদের সম্পর্কেও হয়তো কেউ অবচেতনভাবে সমালোচনামুখর হয়ে উঠবেন,- যা আমাদের কারও কাম্য নয়।
    আমরা সাধারণরা এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর সবাইও জানি, যুদ্ধ হলে আমাদের যে সমরপ্রস্তুতি, আমাদের যে ভৌগলিক অবস্থান, আমাদের যে বাজেটশক্তি, তার কোনওটাই আমাদের পক্ষে দাঁড়াবে না। এখানকার প্রতিরক্ষায় মূল ভূমিকা রাখবে আমাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, একটি স্থিতিশীল পররাষ্ট্রনীতি এবং জনগণের প্রতিরক্ষা বাহিনীর পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর মনোভাব। পিলখানার হত্যাযজ্ঞ এ দেশের দীর্ঘ সামরিক শাসনের যন্ত্রণাকে দূরে সরিয়ে জনগণ ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে ইতিবাচক নৈকট্য প্রতিষ্ঠার একটি দিক তুলে ধরেছে। কিন্তু মনে হচ্ছে, একটি পক্ষ এ ঘটনাকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার না করে বরং প্রতিপক্ষ দমনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারেই বেশি উৎসাহী।
    স্কুলে পড়ার সময় আলফ্রেড টেনিসনের একটি কবিতা পড়েছিলাম, ‘দ্য চার্জ অব দ্য লাইট বিগ্রেড’। আরও একটু বড় হয়ে মাসুদ রানায় মাসুদ রানা ও সোহানার প্রথম মিশনেও দেখা পেয়েছিলাম ওই কবিতায়,- মাসুদ রানা সোহানাকে প্রশ্ন করছিল, ‘চার্জ অব দ্য লাইট বিগ্রেড’ কবিতাটা পড়েছো?
    পড়েছি। -জবাব দিয়েছিল সোহানা।
    এ মিশনের কমান্ডার কে তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রানা সোহানাকে পরামর্শ দিয়েছিল ঘুমাতে যাওয়ার।
    ফ্রেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে যে-বিপর্যয় নেমে এসেছে, সেই বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ওই কবিতাটির কথা খুব বেশি করে মনে পড়ছে। শুধু তাই নয়, সেনাকুঞ্জের বৈঠকের অডিও শোনার পর এও মনে হয়েছিল, এ কবিতাটির সারবস্তু কি আমাদের সামরিক কর্মকর্তারা ওই সময় ভুলে বসেছিলেন? পাঠ্যপুস্তকে তাদেরও তো কবিতাটি পড়ার কথা। অথবা ঘটনাটির কথাও তাদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে শুনে থাকার কথা। ওইদিনের ঘটনা থেকে যদি একজন সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে যে, সামরিক বাহিনীতে যদি শৃঙ্ক্ষলাই থাকতো, সামরিক শৃঙ্ক্ষলাই যদি পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্যে যথেষ্ট হতো, তা হলে ওই পরিস্থিতি সামাল দিতে তো সামরিক বাহিনীর প্রধানই যথেষ্ট ছিলেন; কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই কেন যেতে হলো? সামরিক বাহিনীর প্রধান বলে যে পদটির কথা আমরা শুনি, সেটি কি সেদিনের ওই সভাতে ছিল? সেদিন শোকবিহ্বল হয়ে তারা যে শৃঙ্ক্ষলাহীনতা দেখালেন, তাতে যুদ্ধদিনে আরও বিপর্যয়ের মুখে তারা কী শৃঙ্ক্ষলা দেখাবেন, বলুন?

  29. নাগরিক - ১৪ মার্চ ২০০৯ (৪:৩২ পূর্বাহ্ণ)

    আপনাদের একটা মজার কথা বলি। এই ব্লগে লক্ষ করলাম সবাই প্রচুর ব্যক্তিগত সময় নষ্ট করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বিপক্ষে নানাবিধ যুক্তি ও ঘটনার অবতারনা করছেন। কেউ কেউ আবার উত্তেজিতও হয়ে যাচ্ছেন। মজার ব্যাপারটি হলো যাদের জন্য আপনাদের এই যুদ্ধ তাদের মধ্যে কিন্তু ভিতরে ভিতরে তার ছিটে ফোঁটাও দন্দ্ব নেই। বরং তাদের মধ্যে রয়েছে অভাবনীয় সমঝোতা এবং সুনিবিড় আত্ত্বীয়তা। তারা সাধারণ মানুষদের মধ্যেকার এই বিষোদগারকে প্রচন্ড রকম উপভোগ করে এবং হাসতে হাসতে বলে জনগন কি বোকার স্বর্গেই না বসবাস করে। এর প্রমাণ পত্র পত্রিকার প্রতিবেদনে ছবি সহ উঠে এসেছে তা আপনারা সবাই দেখেছেন। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ দেশের রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোকে বিংশ শতাব্দীর উপযুক্ত করে গড়ে তোলার আন্দোলন করুন। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো দেশের প্রতিটি মানুষের ব্যাক্তিগত ডাটাবেজ প্রতিষ্ঠা করলে এবং তা রাষ্ট্রীয় স্বর্ব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে এমনিতেই অতীতে সংঘঠিত এবং বর্তমানের অনেক অপরাধ বন্ধ করা সহজ হবে। মোদ্দাকথা হচ্ছে আপনারা আপনাদের বুদ্ধি ও সময় গঠণমূলক কাজে ব্যায় করুন যাতে রাজনীতিবিদদের পরিবর্তে দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণ হয়। সবাইকে সশ্রদ্ধ সালাম।

    • জিজ্ঞাসু - ১৪ মার্চ ২০০৯ (১:৫৮ অপরাহ্ণ)

      @ NAGORIK:
      আপনার সাম্প্রতিক আবিস্কারে মুগ্ধ হলাম; আপনি বলেছেনঃ

      আপনাদের একটা মজার কথা বলি। এই ব্লগে লক্ষ করলাম সবাই প্রচুর ব্যক্তিগত সময় নষ্ট করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বিপক্ষে নানাবিধ যুক্তি ও ঘটনার অবতারনা করছেন।

      সত্যিই তো! এ ব্লগের সবাই কি যে বোকা! আর ‘নাগরিক’ আপনি কি যে চালাক!

      • নাগরিক - ১৪ মার্চ ২০০৯ (৪:০১ অপরাহ্ণ)

        জিজ্ঞাসু, আমাকে কি বলবেন নীচের কোথায় লেখা আছে, “এই ব্লগের সবাই বোকা”?

        আপনাদের একটা মজার কথা বলি। এই ব্লগে লক্ষ করলাম সবাই প্রচুর ব্যক্তিগত সময় নষ্ট করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বিপক্ষে নানাবিধ যুক্তি ও ঘটনার অবতারনা করছেন।

        দয়া করে আগে বোঝার চেষ্টা করবেন লেখক কি লিখেছেন, তারপর সমালোচনা করবেন। ধন্যবাদ

      • জিজ্ঞাসু - ১৪ মার্চ ২০০৯ (১০:৩০ অপরাহ্ণ)

        @ নাগরিকঃ
        রেগে গেলে মাথা ঠিক মত কাজ করে না। মাথা ঠান্ডা করে নিজের লেখাটা আবার পড়ুন। ঠিকই দেখবেন নিজের ভুলটা নিজেই ধরেছেন। ভাল থাকুন। ধন্যবাদ।

  30. নাগরিক - ১৪ মার্চ ২০০৯ (৬:২৮ পূর্বাহ্ণ)

    তাহলে এখানেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। আমার লেখাটি সাধারণ মানুষের পক্ষে ছিল। তবে ব্লগের সমসাময়িক আলোচনা থেকে কিছুটা ব্যতীক্রমধর্মীয় বটে। যাই হোক আর লিখব না।

    • জিজ্ঞাসু - ১৪ মার্চ ২০০৯ (২:০১ অপরাহ্ণ)

      যাই হোক আর লিখব না।

      কথাটা বোধ হয় মন থেকে বলেন নাই।

  31. নাগরিক - ১৪ মার্চ ২০০৯ (৬:৩২ পূর্বাহ্ণ)

    দুঃক্ষিত এবং ধন্যবাদ আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করবার জন্য।

  32. এম.এইচ.কবির - ১৪ মার্চ ২০০৯ (১১:১৬ পূর্বাহ্ণ)

    [সিসিবি‌তে প্রকাশিত এই মন্তব্যটি আলোচনার সুবিধার্থে এখানেও কপি করে দেয়া হল – ব্লগ এডমিন]

    @অস্মিতা,

    সে দিন আমরা কোন জুট মিল বা গার্মেন্ট শ্রমিকের দাবী নয়, একটি বর্বর হামলার মুখে পরেছিলাম|পল্টন ময়দানে ভাষন দানকারী পলিটিশিয়ান নয়, দুর্দান্ত সাহসী সেনাপতির কাজ ছিল এটা|

    ” সে দিন” বলতে আমি পিলখানা ম্যাসাকারের দিনটির কথা বলেছিনাম| আপনি ধরে নিয়েছেন আমি ১৯৭১ এর কথা বলছি|বাক্য গঠনের আসাবধানতার সুযোগ নিয়ে আপনি লিখছেন…

    তাই? দেশ স্বাধীন হয়েছিলো ‘অসম সাহসী কোন সেনাপতির’ নেতৃত্বে? নাকি রাজনৈতিক নেতৃত্বে? নিজের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে এ-ই শিখলেন? ১৯৭১ এর সশস্ত্র সংগ্রাম কি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার (’৫২, নির্বাচন, বৈঠক, ৭ই মার্চ) আগে হয়েছিল? নাকি পরে? আর সশস্ত্র সেই সংগ্রামও কি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে হয়নি (যা সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের দাবীটিকে বৈধতা দিয়েছিল)? নাকি আপনি এখনো ভেবে বসে আছেন যে কয়েকজন সেনাপতি ‘আচানক’ আকাশ থেকে পড়ে দেশ স্বাধীন করে ফেলেছিল? এই জাতীয় ইতিহাস আপনাদের কে পড়ায়?

    দেশ স্বাধীন হয়েছিলো ‘অসম সাহসী কোন সেনাপতির’ নেতৃত্বে? নাকি রাজনৈতিক নেতৃত্বে? নিজের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে এ-ই শিখলেন?

    —–মুক্তি যুদ্বের সর্বাধিনায়কের নাম কি জেনারেল ওসমানী নয়..? এর মধ্যে কী এই পদটিও দলীয় কাউকে দান করে ফেলেছেন? রাজনৈতিক নেতারাতো একলাফে পগাড় পার,পাশের দেশে বসে কোল বালিশে হেলান দিয়ে বি.বি.সি আর স্বাধীন বা;লা বেতারে কখন দেশটা স্বাধীন হবে আর দেশে গিয়ে কোন পদটা তাকে দেওয়া হবে সেই খবর নিতে ব্যাস্ত ছিলেন|আর নিজ দেশের ইতিহাসটা আমি নিজেই খুজে বের করেছি, ভারত/পাকিস্তানের দুতাবাসের পয়সায় যাদের স;সার চলে, সে রকম কারো লেখা ইতিহাসে মন বসে নাই|

    নাকি আপনি এখনো ভেবে বসে আছেন যে কয়েকজন সেনাপতি ‘আচানক’ আকাশ থেকে পড়ে দেশ স্বাধীন করে ফেলেছিল? এই জাতীয় ইতিহাস আপনাদের কে পড়ায়?

    —–বীর শ্রেষ্ঠরাই কিন্ত আচানক আকাশ থেকে পরার জন্য হাজার মাইল পাড়ি দিয়েছিল|আপনার প্রিয় রাজনৈতিক নেতারা দেশ ছেড়ে হাজার মাইল দুরে চলে গিয়েছিল|বীর শ্রেষ্ঠদের কতজন আপনার প্রিয় রাজনৈতিক নেতা…??? কতজন সেক্টর কমান্ডার আপনার রাজনৈতিক নেতারা..? ভাগ্য আমার ভাল, আপনার ইতিহাসের গুরুদের ছাএ ছিলাম না|

    ১৯৭১ এর সশস্ত্র সংগ্রাম কি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার (’৫২, নির্বাচন, বৈঠক, ৭ই মার্চ) আগে হয়েছিল? নাকি পরে?

    —বা;গালী জাতির স্বাধীনতার ইতিহাস বলতে গিয়ে শুরু করেছেন ‘৫২ থেকে, আপনার ইতিহাসের গুরুদেরকে বলবেন নতুন করে ১৭৫৭ সাল থেকে যেন পাঠদান শুরু করেন| আপনি নিজেকে স্বাধীনতার ইতিহাসের মহাসমুদ্র ভেবেছেন? নেমে দেখলাম-মাএ হাটুজল…!!!

    ভাবতে অবাক লাগে পনের কোটি মানুষের এই দেশে এইভাবে জনবিচ্ছিন্ন থেকে দেয়াল ঘেরা একটা জায়গায় বসে মনের মধ্যে ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ কয়দিন খেলবেন!!

    —আমি জনবিচ্ছিন্ন…!!!!আটলান্টিকের অপর পাড়ে থেকেও দেশ আমার বুকে, স্বপ্নে, মন ও মননে…|চার দেয়াল..? আমার দেয়াল অনেক স্বচ্ছ|আমার আকাশ অনেক বড়| আপনি খুবই জনযুক্ত অস্মিতা…?? কিভাবে…? জানতে ইচ্ছে করে|

    • অস্মিতা - ১৪ মার্চ ২০০৯ (২:৩১ অপরাহ্ণ)

      @ এম.এইচ.কবির

      মুক্তি যুদ্বের সর্বাধিনায়কের নাম কি জেনারেল ওসমানী নয়..? এর মধ্যে কী এই পদটিও দলীয় কাউকে দান করে ফেলেছেন?

      মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী, এটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইলেন? জেনারেল ওসমানী কি সে অগ্নিগর্ভ দিনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং নেতৃত্ব – যা তিলতিল করে দেশের মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল (যার অংশ জনগণ, রাজনীতিবিদ, ছাত্র শ্রমিক সকলে) – তার বাইরে থেকে হঠাত উদয় হওয়া কোন ব্যক্তিত্ব? ১৯৭১ এর পটভূমিতে জেনারেল ওসমানীর দায়িত্বের উৎস কি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার নয়? নাকি এটি জেনারেল ওসমানীর পক্ষ থেকে মুজিবনগর সরকার-বিচ্ছিন্ন কোন স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যোগ? তিনি কি প্রবাসী সরকারের অধীনস্থ ছিলেন না? সেটিই যদি আপনি বোঝানোর চেষ্টা করে থাকেন, তাহলে বিনীতভাবে জানতে চাইবো: ১৯৭১ পূর্ববর্তী সারা বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক গণ জাগরণ (যা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরী করেছে), সেই জাগরণকে এগিয়ে নিয়ে যেতে জেনারেল ওসমানী ঠিক কোন্ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছিলেন?

      আর স্বাধীন বাংলার প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বকে সম্মান জানালে সেটি “দলাদলি” কেমন করে হয় বলুন তো? নাকি আপনিও সেই গোষ্ঠীরই অংশ যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বকে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বলে প্রচার করে একে ছোট করার চেষ্টা করেন? বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দিনের সেই সব দিনগুলোর নেতৃত্ব কি কেবলই আওয়ামী লীগ নামের একটি দলের? তাঁরা কি আপনার আমার স্বাধীনতার নেতা নন?

      রাজনৈতিক নেতারাতো একলাফে পগাড় পার,পাশের দেশে বসে কোল বালিশে হেলান দিয়ে বি.বি.সি আর স্বাধীন বা;লা বেতারে কখন দেশটা স্বাধীন হবে আর দেশে গিয়ে কোন পদটা তাকে দেওয়া হবে সেই খবর নিতে ব্যাস্ত ছিলেন

      শহীদ তাজউদ্দীন, শহীদ নজরুল ইসলামের মতো মানুষেরা যাঁরা সর্ব অর্থেই দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তারা পাশের দেশে বসে বালিশে হেলান দিয়ে বিবিসি আর স্বাধীন বাংলা বেতার শুনছিলেন? আর দেশটা তাদের যুদ্ধকালীন নেতৃত্ব ছাড়াই আপনা আপনি স্বাধীন হয়ে গেল? বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দিনের মাপের নেতা একটি জাতির বহু বছরের পূন্যের ফল। আজকে জেনারেল ওসমানীর ভূমিকাকে বড় করতে এই মানুষগুলোকে ছোটো করতে চাচ্ছেন! ভাবি, ওসমানী সাহেব নিজে বেঁচে থাকলে না জানি কি বলতেন। হয়তো বলতেন, এই লজ্জা কোথায় রাখি! আর, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন বা নজরুল ইসলামদের মত মানুষদের স্বাধীন দেশে পদ লাভের জন্য চিন্তিত হতে হবে কেন‌ যেখানে তাঁদের একজন সারা বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, আরেকজন প্রধানমন্ত্রী, আরেকজন (ভারপ্রাপ্ত) রাষ্ট্রপতি!

      বীর শ্রেষ্ঠরাই কিন্ত আচানক আকাশ থেকে পরার জন্য হাজার মাইল পাড়ি দিয়েছিল|আপনার প্রিয় রাজনৈতিক নেতারা দেশ ছেড়ে হাজার মাইল দুরে চলে গিয়েছিল|বীর শ্রেষ্ঠদের কতজন আপনার প্রিয় রাজনৈতিক নেতা…??? কতজন সেক্টর কমান্ডার আপনার রাজনৈতিক নেতারা..? ভাগ্য আমার ভাল, আপনার ইতিহাসের গুরুদের ছাএ ছিলাম না|

      বহু বছর ধরেই সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি “সামরিকায়িত ইতিহাস” লেখার আয়োজন চলছে। আপনার মন্তব্যটি বোধ হয় তারই ফলাফল। এই বিষয়ে অবিশ্রুতের বিশ্লেষণটি পড়ে দেখতে পারেন।

      বীর শ্রেষ্ঠদের মাঝে রাজনৈতিক নেতা নেই, একথা সত্যি। সাধারণ ছাত্র, কৃষক বা বীরাঙ্গনা নারীদেরও নাম নেই। তাতে কি কোনভাবে প্রমাণিত হয় যে এঁদের বীরত্বও কিছু কম ছিল? আবারও জিজ্ঞাসা করি – ‘বীরত্ব’ শব্দটির মানে আপনার কাছে কি? আনিসুল হকের ‘মা’ পড়ুন, নীলিমা ইব্রাহীমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ পড়ুন, জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলো’ পড়ুন। হয়তো বুঝবেন ‘বীরত্ব’, ‘ত্যাগ’ এই ধারণাগুলো ইউনিফর্ম এবং ব্যাজধারীদের একক সম্পত্তি নয়।

      আমার মন্তব্যগুলোতে বার বার চেষ্টা করেছি – সেনাবাহিনীকে জনগণ থেকে আলাদা করে দেখাবার, তাদেরকে সাধারণ জনগণ থেকে শ্রেষ্ঠ প্রচার করবার যে সুপরিকল্পিত আয়োজনটি চলে আসছে বহু বছর ধরে এবং সাম্প্রতিক পিলখানা ঘটনায় কয়েকজন অতি উৎসাহী যে শ্রেষ্ঠম্মন্য বিচ্ছিন্নতাকে আরেকটু উসকে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ‌ – সেই প্রক্রিয়াটিকে প্রশ্ন করতে। আমার মন্তব্যের বিপরীতে বার বারই আপনাকে দেখছি এমন একটি কোণা বেছে নিতে যেখানে সাধারণ জনগণ এবং তাদের নেতৃত্বের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাওয়াই একমাত্র খোলা পথ। আপনি কোনভাবেই এদের পাশে এসে দাঁড়াতে পারছেন না কেন? আপনার উপরের কয়েকটি মন্তব্যের কোথাও দেশের বেসামরিক নাগরিক, তাদের গণতান্ত্রিক চেতনার সপক্ষে একটি শব্দও নেই কেন? সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার প্রতি কোন ধরণের আমল কিংবা তাদের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব প্রক্রিয়াটির প্রতি বিন্দুমাত্র আস্থা বা শ্রদ্ধা প্রকাশ পায় না কেন? আপনার মন্তব্যে সেনা বাহিনী এবং জনগণ সবসময়ই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায় কেন? কিংবা আমাদেরকেও একইভাবে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে বাধ্য করতে চান কেন? এই প্রবণতার উৎস কি জানতে ইচ্ছে করে।

      বা;গালী জাতির স্বাধীনতার ইতিহাস বলতে গিয়ে শুরু করেছেন ‘৫২ থেকে, আপনার ইতিহাসের গুরুদেরকে বলবেন নতুন করে ১৭৫৭ সাল থেকে যেন পাঠদান শুরু করেন| আপনি নিজেকে স্বাধীনতার ইতিহাসের মহাসমুদ্র ভেবেছেন? নেমে দেখলাম-মাএ হাটুজল…!!!

      ‘৫২, নির্বাচন ইত্যাদি ঘটনাগুলো উঠে এসেছিল আপনার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭১ এর সশস্ত্র সংগ্রামের পূর্বে রাজনৈতিক নেতৃত্বের নিকট-অতীত প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে। বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসের পূর্ণাঙ্গ ক্রম রচনা করতে তারিখগুলো দেয়া হয়নি। তবে আপনি ১৭৫৭ কে বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রথম ক্রম বলে ভাবেন দেখে বেশ কৌতুক বোধ হল। বাঙ্গালী জাতির সংগ্রামের ইতিহাসটি কি আসলে এতই নতুন? নাকি ইংরেজরাই এই ছোট্ট বদ্বীপটির প্রথম আধিপত্যকারী শক্তি? যদি বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসের ক্রম সন্ধানই করতে হয়, তাহলে আসুন আরেকটি পৃথক পোস্টে তা শুরু করি। ‘৭১ এর সশস্ত্র সংগ্রামের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে এই মুহুর্তে ১৭৫৭ কে টেনে না আনলেও বোধ হয় চলে। আর, ১৭৫৭ এর জুন মাসে পলাশীর আম্র কাননে অস্ত্রের ঝনঝনাটিই কেবল শুনলেন, পেছনের দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটি আর দেখলেন না! কিংবা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেয়া যে বিপ্লবী “অগ্নিযুগ”, সেটাও কি সামরিক সেনাপতির নেতৃত্বে হয়েছে বলবেন? জানা ছিল না যে ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন, প্রীতিলতারা আসলে একেকজন rank প্রাপ্ত সামরিক অফিসার ছিলেন!!

      আমি জনবিচ্ছিন্ন…!!!!আটলান্টিকের অপর পাড়ে থেকেও দেশ আমার বুকে, স্বপ্নে, মন ও মননে…|চার দেয়াল..?

      এবার আপনাকে সত্যিই ধন্যবাদ আমার মনে খানিকটা স্বস্তি এনে দেওয়ার জন্য। আপনি আপনার আগের মন্তব্যে “মরতে মন চায়না” বলে যেভাবে আহাজারী করেছিলেন, তাতে খানিকটা মনকষ্টেই পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম যে আপনি হয়তো পিলখানার আশেপাশেই জীবন বাজি রেখে আপনার সহযোদ্ধাদের সাথে কাজ করে যাচ্ছিলেন। আপনি কয়েক হাজার মাইল দূরে, আটলান্টিকের ওপারে, শারিরিকভাবে নিরাপদে আছেন জেনে বেশ স্বস্তি বোধ করছি। অবশ্য, নিন্দুকেরা বলতেই পারেন যে কয়েক হাজার মাইল দুরে বসে নির্বিচারে দেশের সাধারণ নারী পুরুষদের ‘জান কোরবান’ করে দেয়ার আহবানটি খুব সুবিধাজনক বীরত্ব প্রদর্শনের একটি সুযোগ (যেমনটি আপনি অভিযোগ এনেছেন ‘৭১ সালে পাশের দেশে বসে থেকে বিবিসি শোনা ‘সুবিধাবাদী’ রাজনৈতিক নেতৃবর্গের প্রতি)। যাই হোক, আমি সেই সব নিন্দুকদের আবেদন করবো আপনাকে যাতে তারা ভুল না বোঝে। কয়েক হাজার মাইল দুরে থেকেও দেশ আপনার ‘বুকে, স্বপ্নে, মন ও মননে’ পড়ে সত্যিই ভাল লাগলো। আটলান্টিকের ওপারে বসে যেই দেশটির স্বপ্ন আপনি দেখেন, সে দেশটির স্বপ্ন দেখতে হলে ইউনিফর্ম পরার প্রয়োজন হয়তো হয়না। তেমনিভাবে, কেবল ইউনিফর্ম পরলেই কেউ সেই স্বপ্ন দেখার অধিকার থেকে বঞ্চিত হননা। এটাই বোঝাবার চেষ্টা করেছি আমার মন্তব্যগুলোতে। যদি ব্যর্থ হয়ে থাকি, তবে নিশ্চয়ই সেটি আমারই ব্যর্থতা, ঐক্যের স্বপ্ন দেখা মানুষদের নয়।

      ধন্যবাদ।

      • অবিশ্রুত - ১৪ মার্চ ২০০৯ (৯:৫২ অপরাহ্ণ)

        আপনাদের দু’জনের মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়ার সূত্র ধরে লিখছি :

        এক. মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় ১৭ এপ্রিল। এই সরকারে কোনও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন না। মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী ছিলেন মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ। এই কমান্ডার ইন চিফ-এর বাংলা প্রতিশব্দ কখনোই সর্বাধিনায়ক নয়। আমরা বাঙালিরা অনেক সময়ই বিশেষণের পর বিশেষণ লাগিয়ে চলি, আতাউল গণি ওসমানীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে, তাকে আমরা সাধারণভাবে অনেকেই সর্বাধিনায়ক বলে থাকি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি সরকারের প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। যখন যুদ্ধ চলে তখন রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানরাই যুদ্ধরত দেশটির সর্বাধিনায়ক হয়ে থাকেন, এটি মুক্তিযুদ্ধরত দেশগুলির ক্ষেত্রে আরও বেশি সত্য। প্রধান সেনাপতি হিসেবে ওসমানী কেবল নিয়মিত বাহিনীগুলিরই প্রধান ছিলেন না, গেরিলা বাহিনীগুলিরও প্রধান ছিলেন, তাকে সর্বাধিনায়ক হিসেবে বিশেষায়িত করার ভুলটি সম্ভবত এখান থেকেই ঘটেছে এবং পরে তা আরও পল্লবিত হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আতাউল গণি ওসমানী নাগরিক কমিটির প্রার্থী হলে বিষয়টি আরও প্রচারণা পায়। কেননা তখন নাগরিক কমিটি ও ওসমানীকে সমর্থনকারী বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ তাদের সব প্রচারপত্রে ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে প্রচার করে। আমার জানা মতে, মুক্তিযুদ্ধের যে-সব দলিলপত্র রয়েছে, তাতে তাকে এভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এবং আমার মতে, করা সঠিকও নয়।

        দ্বিতীয়ত. পাকিস্তান থেকে যে-সব সামরিক কর্মকর্তা নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এসে যুদ্ধে যোগ দেন তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা লক্ষ্যণীয়ভাবে তীব্র। কিন্তু এদের সংখ্যা খুবই কম। আর যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে যারা যোগ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে কারও কারও পাকিস্তানের ইনটেলিজেন্ট-এর হয়ে যোগ দেয়াটা অস্বাভাবিক নয়। প্রত্যক্ষ যুদ্ধে সামরিক না বেসামরিক গেরিলারা কারা বেশি সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন, তা নিয়ে যদি আমরা কূটতর্কের সূচনা করি, তা হবে খুবই দুঃখজনক। এই মুহূর্তে আমার পাবনার নওগাঁর যুদ্ধের কথা মনে পড়ছে, ওই যুদ্ধে পলাশডাঙা যুব শিবিরের নেতৃত্বে পাকিস্তানীদের একটি পুরো রেজিমেন্টের সবাইকে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে নিহত করা হয়। এটি ছিল একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে আবদুল লতিফ মির্জা কিন্তু কোনও পুরষ্কার বা পদক পাননি।

        তৃতীয়ত. ইতিহাস নতুন করে মোড় নেয়ার সময় সব সময়েই একটি নতুন তারিখ বা সাল বেছে নেয়, এর মধ্যে দিয়ে সে আগের পর্বের সঙ্গে নতুন পর্বের উত্তরণ বলি আর পৃথকীকরণ বলি, তার সূচনা করে। সেই হিসেবে, আমাদের ইতিহাসের নতুন পর্বের তাৎক্ষণিক আলোচনার জন্যে পলাশীর প্রান্তর কোনও অতি জরুরি পর্ব নয়, যদিও ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের জন্যে তা খুবই প্রয়োজনীয় একটি উদাহরণ ছিল। পলাশীর প্রসঙ্গই যখন উঠেছে তখন দ্রষ্টব্য হিসেবে বলি, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে মুসলমানিত্বকে বড় করে তোলার জন্যে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে আমরা টেনে আনি; কিন্তু পরিহাসের ব্যাপার হলো, ওই যুদ্ধে সিরাজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন মুসলিম সেনাপতি মীরজাফর আর দেশের জন্যে জীবন দিয়েছিল মীর মদন, মোহনলালরা। তার মানে যারা পলাশীর প্রান্তরের কথা জোর গলায় বলার চেষ্টা করে, তারা নিজেরাও পলাশীর চেতনা সত্যিকার অর্থে অনুভব করে না অথবা ধামাচাপা দিতে চায়। যারা সিরাজের পাশে মোহনলালকে দেখতে পায় না, তাদের পক্ষে কি সম্ভব অগ্নিযুগের বিপ্লবী মুক্তির চেতনা অনুভব করা? সম্ভব নয়। তাই তারা পলাশীর কথা বলেন, তারপর চলে আসেন একেবার পাকিস্তান আন্দোলনে!

  33. রায়হান রশিদ - ১৬ মার্চ ২০০৯ (১:৩২ অপরাহ্ণ)

    @ অস্মিতা এবং এম.এইচ.কবির

    ধন্যবাদ আপনাদের আলোচনার জন্য। খুবই উপভোগ্য এই আলোচনা থেকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তার সূত্র বেরিয়ে আসছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও গভীর বিশ্লেষণের সময় এসেছে হয়তো। সেনাবাহিনী এবং জনগণ, যারা এক সয়ম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই দেশটি স্বাধীন করেছিল জীবন বাজি রেখে, তারা কিভাবে সময়ের ফেরে পরস্পরের কাছ থেকে এত দূরে ছিটকে পড়লো সেটা আসলেই আমাদের ইতিহাসের জরুরী প্রশ্নগুলোর একটি। একটি মহল হয়তো সবসময়ই ছিল, হয়তো দু’পক্ষেই, যারা সবসময় সক্রিয় থেকেছে এই দুরত্বকে তৈরী করতে এবং জিইয়ে রাখতে। পারস্পরিক অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা এবং দ্বন্দ্বের এই অমোঘ চক্রটিকে না ভেঙ্গে মনে হয়না সামনে এগিয়ে যেতে পারবো আমরা।

    জেনারেল ওসমানীর বিষয়টি উঠে এসেছে আপনাদের আলোচনায়। উপরে অবিশ্রুতের মন্তব্যেও তিনি স্পষ্টভাবে জেনারেল ওসমানীর ভূমিকা ব্যাখ্যা করেছেন। এখানে ছোট্ট একটি পাদটীকা যোগ করছি:

    জেনারেল ওসমানী কেবল একজন মেধাবী সমরনায়কই ছিলেন না, তাঁর একটি রাজনৈতিক জীবনও ছিল। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কম্যান্ডিং অফিসার থাকাকালে তিনি বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে (যেটি তখন একটি নাজুক রাজনৈতিক ইস্যু, অন্তত পশ্চিম পাকিস্তানীদের চোখে) সমুন্নত করার লক্ষ্যে এমন অনেক আভ্যন্তরীন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যা তৎকালীন উম্মাতাল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্বন্ধে তাঁর সচেতন বোধকেই প্রমাণ করে। এই তথ্যটি হয়তো অনেকেরই অজানা যে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর জেনারেল ওসমানী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন এবং ১৯৭০ এর নির্বাচনে দলটির পক্ষ হয়ে লড়ে পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেম্বলীতে আসনও জয় করেছিলেন। মুজিবনগর সরকার যখন গঠিত হয়, সেই সরকারের সি-ইন-সি হিসেবে নিযুক্ত হন জেনারেল ওসমানী, যে দায়িত্ববলে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সামরিক দিকটি তদারক করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টিতে।


    @ এম.এইচ.কবির

    আপনি লিখেছেন:

    আপনার ইতিহাসের গুরুদেরকে বলবেন নতুন করে ১৭৫৭ সাল থেকে যেন পাঠদান শুরু করেন

    আমি জানিনা আপনি কোন্ মতাদর্শের অনুসারী তবে আপনার আলোচনায় স্বাধীনতার ইতিহাস ১৭৫৭ থেকে শুরু করার ব্যপারটি বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে আমার কাছে। আপনি এই বিষয়টির ব্যাপারে কতটুকু সচেতন জানিনা, জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ১৭৫৭ সনটার উপর বিশেষ জোর দেয়ার চেষ্টা করে। কেন এমনটা করে সেই আলোচনায় এখন বরং না যাই। এ বিষয়ে গোলাম আযমের একটি বই আছে, যেটার নাম পলাশী থেকে বাংলাদেশ (প্রকাশক: জামায়াতে ইসলামী) (এখানে দেখুন)। তার মানে এই নয় যে আমি বলছি যে আপনি জামায়াতের সমর্থক, কিংবা ১৭৫৭ নিয়ে আলোচনা করলেই কেউ জামায়াত হয়ে যায়। তবে ১৭৫৭‌-কেন্দ্রিকতার যে অনেক ব্যাখ্যা হতে পারে, এবং ইতিহাসবোধের একটি রাজনৈতিক ডাইমেনশনের প্রতি এটি ইঙ্গিত করে – সেটা তুলে ধরাই আমার এ মন্তব্যের উদ্দেশ্য।

    ভাল থাকুন।

    • এম.এইচ.কবির - ১৭ মার্চ ২০০৯ (১২:২৬ অপরাহ্ণ)

      @রায়হান রশিদ

      আমি জানিনা আপনি কোন্ মতাদর্শের অনুসারী তবে আপনার আলোচনায় স্বাধীনতার ইতিহাস ১৭৫৭ থেকে শুরু করার ব্যপারটি বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে আমার কাছে। আপনি এই বিষয়টির ব্যাপারে কতটুকু সচেতন জানিনা, জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ১৭৫৭ সনটার উপর বিশেষ জোর দেয়ার চেষ্টা করে। কেন এমনটা করে সেই আলোচনায় এখন বরং না যাই। এ বিষয়ে গোলাম আযমের একটি বই আছে, যেটার নাম পলাশী থেকে বাংলাদেশ (প্রকাশক: জামায়াতে ইসলামী) (এখানে দেখুন)। তার মানে এই নয় যে আমি বলছি যে আপনি জামায়াতের সমর্থক, কিংবা ১৭৫৭ নিয়ে আলোচনা করলেই কেউ জামায়াত হয়ে যায়। তবে ১৭৫৭‌-কেন্দ্রিকতার যে অনেক ব্যাখ্যা হতে পারে, এবং ইতিহাসবোধের একটি রাজনৈতিক ডাইমেনশনের প্রতি এটি ইঙ্গিত করে – সেটা তুলে ধরাই আমার এ মন্তব্যের উদ্দেশ্য।

      —–আবদুল গাফফারও কিন্ত “পলাশী থেকে ধানমন্ডি” নাটক লিখেছেন| এটা উল্লেখ না করে গোলাম আযম-জামাতকে টেনে আনার উদ্দেশ্যটা কী জানতে পারি…??? এখনতো দেখছি মানবাধিকার কর্মীর আড়ালে আপনার নিজের রাজনৈতিক মুখোশটাই খসে পড়ার যোগাড় হয়েছে..!!
      ** গোলাম আজম,গাফফারদের দল-নেতা-আদর্শ সবগুলোই আমার দারুন অপছন্দ, বলতে হয় দেশের কোন নেতার সততা বা দলীয় আদর্শ আমাকে আকর্ষন করতে পারেনি, সরি…**

      [আলোচনার সুবিধার্থে প্রত্যুত্তরটি সিসিবি থেকে কপিকৃত – ব্লগ প্রশাসক]

      • রায়হান রশিদ - ১৭ মার্চ ২০০৯ (১২:২৯ অপরাহ্ণ)

        @ এম.এইচ.কবির

        ১৭৫৭ সালের ব্যাপারে আপনার উৎসাহ (সজ্ঞান কিংবা অজ্ঞান), এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকেও সেখান থেকে শুরু করার সমস্যা বিষয়ে উপরে অস্মিতা এবং অবিশ্রুতের মন্তব্যেই যথেষ্ট বলা রয়েছে বলে মনে করি। পড়ে নেবেন। আমার মন্তব্যের উদ্দেশ্যও স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা রয়েছে উপরে। সেটা পড়েও না বুঝে থাকলে জানতে চাইবেন; চেষ্টা করবো বুঝিয়ে বলতে। ১৭৫৭ নিয়ে অতি-অবসেশন যারা প্রদর্শন করেন, গোলাম আযমেরা তাদের একাংশ। কৌতুহলোদ্দীপক সেই অবসেশন আপনার মধ্যেও কিছুটা লক্ষ্য করেছি, তাই সে বিষয়ে সচেতন করে দিতে চেয়েছিলাম আপনাকে। তাতে আপনার আক্রান্ত বোধ করার কারণটা তাই সত্যিই অস্পষ্ট যেখানে আপনি নিজেই দাবী করেছেন গোলাম আযমদের রাজনীতির সাথে আপনি একমত নন। আপনি সম্ভবত “পলাশী থেকে ধানমন্ডী” শিরোনামে “পলাশী” শব্দটি দেখেই লাফিয়ে উঠে থাকবেন। নাটকটি দেখা থাকলে এই হাস্যকর তুলনাটি করতেন না বলে আমার ধারণা। গাফ্ফার চৌধুরীর “পলাশী থেকে ধানমন্ডি” আর গোলাম আযমের “পলাশী থেকে বাংলাদেশ” দু’টির মধ্যে কি আসলেই কোন তুলনা চলে? প্রথমটি বঙ্গবন্ধুর জীবনীধর্মী নাটক যেখানে “পলাশী” উঠে এসেছে মূলতঃ একটা metonym হিসেবে জাতির ইতিহাসে নেতৃত্ব আর বিশ্বাসঘাতকতার প্যাটার্ণটি তুলনা করতে; আর পরেরটি বাংলার ইতিহাস রচনার ছলে মনগড়া মতলবী (জামাত-ফ্রেন্ডলি) ইতিহাসতত্ত্ব!

        গাফফার চৌধুরী আমার পছন্দের লেখকদের তালিকায় পড়েন না, কিন্তু তাকে ঘাতক দালালদের নেতা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের সাথে তুলনা করার আগে সম্ভবত দু’বার ভাববো। আর যারা এই দুই শ্রেনীর মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পান না (বা পেতে চান না), তাদের সাথে কোনও আলোচনায় যাওয়াটাও মনে হয় সময়ের অপচয়। আমার কল্পিত “রাজনৈতিক মুখোশ” উম্মোচনে আপনার উল্লাস দেখে এই দুঃসময়েও হাস্যরসের খোরাক জোগানোর আপনার এই মহৎ প্রচেষ্টাটুকুর জন্য অন্তত সাধুবাদ। সেই সাথে মুখোশবিদ্যায় আপনার মত একজন বিশেষজ্ঞ পারদর্শীর কাছ থেকে নিশ্চয়ই আমরা সবাই অনেক কিছু শিখতে পারবো, সেই প্রত্যাশাও থাকলো। এই পোস্টটি লেখার সময়ই অনুমান করেছিলাম যে এক শ্রেনীর পাঠক থাকবে যারা বেতিব্যস্ত হয়ে উঠবে – এর “রং” কিংবা “দল” নিরূপণে, এবং সে অনুযায়ী একে ব্র্যান্ডেড করে প্রচার করতে – তাই অবাক হচ্ছি না ততোটা। এই পোস্টটিকে দলীয় মতাদর্শী পোস্ট হিসেবে label করে দেয়ার যে কিছু স্ট্র্যাটেজিক সুবিধা আছে কারও কারও পক্ষ থেকে, সেটা বুঝি। কিন্তু সেই সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে যে কথাগুলি সত্য মনে করি তা বলতে কোন দ্বিধা বোধ করিনা, অন্তত নিজের দিক থেকে। আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে – গোলাম আযম বা যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গী, তাদের সহচর পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করতে গিয়ে সেটি কোন্ দলের পক্ষে বা বিপক্ষে গেল তা নিয়ে মোটেই ভাবিত নই। আর আপাত balance (!) রক্ষা করতে গিয়ে একটি জীবনীধর্মী নাটক আর মতলবী ইতিহাসতত্ত্বের মধ্যে তুলনা করতেও রাজী নই।

  34. iqbal - ২০ মার্চ ২০০৯ (৬:২৮ অপরাহ্ণ)

    Raihan vai, sob motamot porlam.Apnar logic gulo political. Apni banglai golpo likhai valo. Mr general er logic gulo ekhono promanito hoini. Tobe sotti kotha holo amar apon vai mara gelo BDR er gulitey.Ami ekhon ki korbo? Apnara politics korchen lash nie? R kotokal politics korben apni? Amader tax er taka die Army chole r army officer toiri hoi.Jonogoner tax er takai toiri manush ke mere fele tarpor ta die political golpo korar odhikar apnake ke dilo? Ami janina apnar boyosh koto?tarpor o onurodh korchi keyamot er kotha vabun! Dirty politics cherey dui ek ta ki valo kaaj ki kora jai na?Ei durvaga desh takey ki gothonmulok kichu deya jai na? Apni ki nijer vai er mirttue porjonto valo hoa er jonno wait korben naki apnar ei page e valo kichu korar ongikar korben. Opekhkhai thaklam apnar motamoter jonno.Tobe apnar kach theke somobedona asha korchi na. Shudhu chai jantey political golpo likha chara so far apni desher jonno ki ki gothon mulok kaaj korechen. jodi kichu emotional kotha likhey thaki tahole maaf korey diben. Tachara emotional boktobbo jodi karo mone kichuta onushochona toiri kortey parey tahole ami shartok

    • নাগরিক - ২১ মার্চ ২০০৯ (৫:২৯ পূর্বাহ্ণ)

      ইকবাল ভাই, আপনার ভ্রাতৃবিয়োগে আপনাকে সান্ত্বনা জানাবার ভাষা আমার জানা নেই। তবে আপনাকে আমি বাহবা না দিয়ে পারছি না। আপনার এই অভাবনীয় মানসিক অবস্থায়ও আপনি কাউকে দোষারোপ না করে বরং দেশের উন্নয়নের জন্য গঠণমূলক কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন। একেই বলে দেশপ্রেম। এটা সবার জন্য দৃষ্টান্ত। আমি জানি বাংলাদেশের বেশীর ভাগ সাধারণ মানুষ আপনার মতই চিন্তা করে। অথচ রাজনীতিবিদরা জনগণের অনুভূতিকে ব্যবহার করে নিজেদের উদোর পূর্তির মহা উৎসবে ব্যস্ত। জনগণ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি উপলব্ধি না করে নিজেদের স্বার্থ ও ক্ষমতাকে অটুট রাখতেই ব্যস্ত। আপনাকে ধন্যবাদ আপনার দুঃসময়েও কিছু বাস্তব কথা বলে আমাদের চোখ খুলে দেবার জন্য।

  35. রেজাউল করিম সুমন - ২১ মার্চ ২০০৯ (১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ)

    @ ইকবাল

    এই পোস্টের নাম : ‘পিলখানা গণহত্যা: চিন্তাঝড় ৩ — গুজবের ময়না তদন্ত’। ‘চিন্তাঝড়’ শব্দটা ইংরেজি brainstorm-এর অনুবাদ। কাকে বলে brainstorming? আপনার অজানা থাকার কথা নয়, তারপরও আসুন একসঙ্গে আরো একবার পড়ে নিই :

    1. A method of shared problem solving in which all members of a group spontaneously contribute ideas.

    2. A similar process undertaken by a person to solve a problem by rapidly generating a variety of possible solutions.

    বেনামে প্রকাশিত ও প্রচারিত একটি চিঠির সূত্র ধরেই এখানে চিন্তাঝড় উঠেছে। ওই চিঠিকে গুজব বলে পাত্তা না দেয়া যে ঠিক হতো না, এর ময়না তদন্ত যে আশু কর্তব্য ছিল, তার প্রমাণ আপনার এই মন্তব্য। আপনি লিখেছেন,

    মিস্টার জেনারেলের লজিকগুলো এখনো প্রমাণিত হয়নি।

    অবশ্য তার আগে লিখেছেন,

    রায়হান ভাই, […] আপনার লজিকগুলো পলিটিকাল। আপনি বাংলায় গল্প লিখাই ভালো।

    রায়হান ভালো বাংলা লেখেন, বাংলা হরফেই তিনি বাংলা লিখতে পারেন; ওই বেনামী পত্রলেখক বাংলায় লেখেননি, আপনি ইউনিকোডে বাংলা লিখতে পারেন না এখনো — সেজন্যই কি রায়হানকে বাংলায় গল্প লেখার পরামর্শ দিয়েছেন?

    আপনার মন্তব্যের প্রথম অংশে আবার চোখ বোলানে যাক (আমি বাংলা হরফে উদ্ধৃতি দিচ্ছি, আপনাকে ইউনিকোডে বাংলা লেখা শিখে নিতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য) :

    রায়হান ভাই, সব মতামত পড়লাম। আপনার লজিকগুলো পলিটিকাল। আপনি বাংলায় গল্প লিখাই ভালো। মিস্টার জেনারেলের লজিকগুলো এখনো প্রমাণিত হয়নি। তবে সত্যি কথা হলো আমার আপন ভাই মারা গেল বিডিআর-এর গুলিতে। আমি এখন কী করব?

    “মিস্টার জেনারেলের লজিকগুলো এখনো প্রমাণিত হয়নি।” — ভালো কথা; কিন্তু এর পরের বাক্যেই আপনি জানেচ্ছেন “তবে সত্যি কথা হলো আমার আপন ভাই মারা গেল বিডিআর-এর গুলিতে।” এই দুটি বিবরণের মাঝখানে একটা “তবে” ঢুকল কী করে?! আপনার লজিক বুঝতে পারা সহজ নয় দেখছি। আপনার “আপন ভাই” যদি বিডিআর-এর গুলিতে মারা গিয়ে থাকেন, আর সেটা যদি “সত্যি কথা” (আপনি নিজেই জোর দিয়ে বলেছেন) হয়, তাহলে তাঁর শেষকৃত্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ইতিমধ্যেই সুসম্পন্ন হয়ে থাকবে। কী নাম আপনার ভাইয়ের? তিনি কি বিবাহিত ছিলেন? তাঁর ছেলেমেয়ে আছে?

    আপনি জানতে চেয়েছেন, “আমি এখন কী করব?” আপনার ভাবীর ও ভাইয়ের ছেলেমেয়ের (যদি থাকে) সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য আপনার অনেক কিছু করণীয় আছে। সে-দায়িত্বগুলো আশা করি আপনারা পরিবারের সদস্যরাই নির্ধারণ করে নিতে পারবেন।


    আপনার মন্তব্যে আরো লিখেছেন:

    আপনারা পলিটিক্স করছেন লাশ নিয়ে? আর কতকাল পলিটিক্স করবেন আপনি? আমাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে আর্মি চলে আর আর্মি অফিসার তৈরি হয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে তৈরি মানুষকে মেরে ফেলে তারপর তা দিয়ে পলিটিকাল গল্প করার অধিকার আপনাকে কে দিল?

    অভিযোগ যারপরনাই গুরুতর। বিশেষ করে শেষ বাক্যটা। প্রথমত “জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে তৈরি মানুষকে মেরে” ফেলা হয়েছে এবং “তারপর” “তা দিয়ে পলিটিকাল গল্প করা” হচ্ছে। আপনি সংগত কারণেই পোস্টলেখকের কাছে জানতে চেয়েছেন, এসব করার অধিকার তাঁকে কে দিল। বলা বাহুল্য, এ অধিকার কেউই তাঁকে দেয়নি। আর এ কথাও তো বলে দেয়ার দরকার নেই যে, আপনার নির্দেশিত ওই দুটি অপকর্মের কোনোটিই রায়হান রশিদ বা এই ব্লগের কোনো লেখক/পাঠক করেননি!


    আপনি পোস্টলখকের বয়স সম্পর্কে আপনার কাছে কোনো তথ্য না থাকার কথা স্বীকার করে তাঁর উদ্দেশে আরো লিখেছেন :

    তারপরও অনুরোধ করছি কেয়ামতের কথা ভাবুন! ডার্টি পলিটিক্স ছেড়ে দুই-একটা ভালো কাজ কি করা যায় না? এই দুর্ভাগা দেশটাকে কি গঠনমূলক কিছু দেয়া যায় না? আপনি কি নিজের ভাইয়ের মৃত্যু পর্যন্ত ভালো হওয়ার জন্য ওয়েট করবেন নাকি আপনার এই পেজ-এ ভালো কিছু করার অঙ্গীকার করবেন।

    ভাই ইকবাল, কেয়ামতের কথা ভাবতে হবে কেন? কেবল পরকালে শাস্তির ভয়ে কিংবা পুরস্কারের আকর্ষণেই কি মানুষ গঠনমূলক কাজ করে? নীতিবান নাগরিক হিসেবে আত্ম-নির্মাণের আর কোনো রাস্তা নেই? (বেনামী পত্রলেখকের — তথাকথিত সেই জেনারেলের — সঙ্গে এখানে আপনার একটা মিল দেখতে পাচ্ছি।)

    “ডার্টি পলিটিক্স ছেড়ে দুই-একটা ভালো কাজ কি করা যায় না?” — এই অতি মূল্যবান প্রশ্নটা (সেই সঙ্গে পরামর্শও বটে) কোনো পলিটিকাল পার্টির উদ্দেশে করাই কি ভালো হতো না, ধরা যাক জামাতের উদ্দেশেই (যারা ধর্মের নামে ডার্টি পলিটিক্স করে)? আপনার প্রত্যাশামতো “এই পেজ-এ ভালো কিছু করার অঙ্গীকার” রায়হান রশিদ ও অন্য ব্লগাররা অনেকবারই ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু সে-সব অঙ্গীকার বা কাজ আপনার অনুমোদন পাবে কি না বলা মুশকিল। তবে তার আগে জেনে নেয়ে দরকার, আপনি “ভালো কিছু করা” বলতে ঠিক কী বোঝেন। রায়হান রশিদের গঠনমূলক কাজের বিবরণ জানতে চাইবার আগে আপনার কি উচিত ছিল না আমাদের জানানো — আপনি আসলে কে?

    রায়হান রশিদের কর্মকাণ্ডের কিছু বিবরণ অনলাইনেও হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু ইকবাল নামের আরো অনেক লোকের মধ্যে আপনাকে চেনা যাবে কী করে? কী করেই-বা জানা যাবে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত কোন্ সেনাকর্মকর্তা আপনার ভাই?


    আপনি মন্তব্যের উপসংহার টেনেছেন এভাবে :

    যদি কিছু ইমোশনাল কথা লিখে থাকি তাহলে মাফ করে দিবেন। তাছাড়া ইমোশনাল বক্তব্য যদি কারো মনে কিছুটা অনুশোচনা তৈরি করতে পারে তাহলে আমি সার্থক।

    ক্ষমা চাইবার প্রয়োজন ছিল না। কারণ, এক মহূর্তের জন্যও আপনাকে “ইমোশনাল” মনে হয়নি! ফলে আপনার বক্তব্য কারো মনে অনুশোচনা তৈরি করে থাকতে পারে — এমন আশাও নিতান্তই দুরাশা। ভাই রে, আপনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। বোকার মতো আবার জিজ্ঞস করে বসবেন হয়তো — “আমি এখন কী করব?” আগাম জানিয়ে রাখি: ব্যর্থ মানুষেরা অনেক সময়ে নিজেদের শোধরানোর চেষ্টা করে, তাতেও ব্যর্থ হলে দু-একজন উদ্বন্ধনেও ঝুলে পড়ে …

  36. iqbal - ২১ মার্চ ২০০৯ (১:১৯ অপরাহ্ণ)

    Mr Rezaul Kabir Sumon, apnar uttor theke apnar manoshik oporipokkota dekhtey pelam. Bekti sharther urdhey ki amra jete pari na ? Ei shomaj r amader eto shikhkha ki bertho? Boro moner manushder internet e dhoroner site e alochonai ongshogrohoner jonno r koto din opekhkha kortey hobe jati ke ? Apnader sobaike onurodh ” BDR er ghotona theke desher jonno ki shikhkha o ki ki gothonmulok o protirodhmulok kaaj kora jai/uchit” ei bishoy nie motamot/alochona kori

  37. রেজাউল করিম সুমন - ২১ মার্চ ২০০৯ (৮:১৫ অপরাহ্ণ)

    ভাই ইকবাল,

    আপনার মন্তব্যের উত্তর থেকে আমার “মানসিক অপরিপক্বতা” দেখতে পেয়েছেন। ভালোই হলো। আরেকটু খেয়াল করলে আমার নামটাও হয়তো ঠিকঠাক দেখতে পেতেন। যাই হোক, নিজের নাম/দুর্নাম নিয়ে আপাতত ভাবছি না। ভাবছি আপনার প্রয়াত ভাইয়ের নাম নিয়ে। আপনি না জানালে কী করে জানব, বলুন?

    আপনি লিখেছেন :

    Apnader sobaike onurodh ” BDR er ghotona theke desher jonno ki shikhkha o ki ki gothonmulok o protirodhmulok kaaj kora jai/uchit” ei bishoy nie motamot/alochona kori.

    অত্যন্ত সময়োচিত প্রস্তাব। রায়হান রশিদ যে-আলোচনার সূত্রপাত করেছিলেন তা আপনার মনঃপূত হয়নি। এবার প্রস্তাবিত বিষয়ে আপনিই আলোচনার সূত্রপাত করুন না।

    অপেক্ষায় রইলাম —
    প্রথমত, আপনার ভাইয়ের নাম জানার জন্য
    দ্বিতীয়ত, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আপনার আলোচনা শোনার জন্য।

  38. শামীম ইফতেখার - ২১ মার্চ ২০০৯ (৮:১৭ অপরাহ্ণ)

    @ নাগরিক,
    এগুলো আপনার ঢালাও মন্তব্যের কিছু উদাহরন:

    Apnader moto politician”, “আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের আগলে রেখেছেন”, “আপনাদের সদিচ্ছা থাকলে”, “আপনাদের মত সাধুরাই ক্ষমতায় ছিল”, “তাহলে বলুনতো দেশের সমস্ত অরাজকতাগুলো কি আপনাদের এ সুপ্ত পরিকল্পনার অংশ?”

    গত কয়েক দিন ধরেই নিয়মিতভাবে এই ব্লগের আলোচনাগুলো পড়ে যাচ্ছি। অংশগ্রহণ করা হয়ে ওঠেনি। এই ব্লগের পোস্ট এবং মন্তব্যের একটা সাধারণ মান বজায় রাখার চেষ্টা দেখেছি সব সময়। সে জন্যই অনেক আগ্রহ নিয়ে এখানে পড়তে আসি। কিন্তু রায়হান রশিদের “পিলখানা চিন্তাঝড়” সিরিজের পোস্টগুলো ছাপার পর থেকেই লক্ষ্য করছি কিছু নতুন মন্তব্যকারীর উদয় হয়েছে, যারা হয় এই ব্লগের আলোচনার মানের সাথে পরিচিত নন, কিংবা পরিচিত হতে চান না। নাগরিক, আপনার মন্তব্যগুলো আমার কাছে সেই গোত্রের মনে হয়েছে।

    মাসুদ করিমের পোস্টে এবং এই পোস্টে আপনার মন্তব্যগুলো ভাল করে পড়লাম। লক্ষ্য করলাম আপনি বার বার “আপনারা” “আপনাদের” এই শব্দগুলো ব্যবহার করছেন, কোন ধরণের সংযম, পরিমিতি বা ব্যাখ্যা ছাড়াই। কোন একজনের মন্তব্যের উত্তর দেয়ার সময় আপনার যেন চেষ্টা থাকে ঢালাওভাবে পুরো ব্লগকে, পোস্টলেখকসহ এখানকার সব লেখককে একটা ছকে ফেলে প্রচার করতে। সেই সাথে লক্ষ্য করেছি, যে আপনি খুব সচেতনভাবে চেষ্টা করেন নানা ধরনের ধুয়া তুলে যুক্তিতর্ক বা বিশ্লেষণ থেকে পালিয়ে বেড়িয়ে কিছু ‘উপর উপর’ মন্তব্য দিতে। আপনার কয়েকটা মন্তব্য পড়ার পর এখন কিছুটা ক্লান্তিই বোধ করছি।

    ভাই, কোন বক্তব্য থাকলে দয়া করে ঝেড়ে কাশুন। সুনির্দিষ্টভাবে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে লিখুন। আর লেখার সময় সম্ভব হলে ঢালাও মন্তব্য না করে সেটি কেন বলছেন সুনির্দিষ্টভাবে বলুন, এবং তা কিসের ভিত্তিতে বলছেন সেটাও ব্যাখ্যা করুন। তাতে আমরা সবাই অংশগ্রহণে উৎসাহিত হই। যেমন, ‘আপনারা’ বলতে কাদের বুঝাচ্ছেন? ‘সুপরিকল্পিত’ বলতে কি বুঝাচ্ছেন? কোন্ ‘অরাজকতার’কথা এবং তার সাথে ঠিক কোন্ ধরনের ‘পরিকল্পনার’ কথা বুঝাতে চাচ্ছেন? গত কয়েক বছরে দেশের অরাজকতাগুলো কারা করেছে, কেন করেছে, এটা সবাই জানি। ধর্মকে এদেশের রাজনীতিতে কারা ব্যবহার করে তাও অজানা নেই। কিছু কিছু নাদান এখনো তা জানে না। নানা ধরনের ধুয়া তুলে আমাদের উল্টা সিধা বুঝাবার চেষ্টা করে। আবার এই কাপুরুষের দলের অতটুকু সৎসাহসও নেই স্পষ্ট করে নিজের যুক্তি বিশ্লেষণ তুলে ধরার। শুধু কথা দিয়েই এদের চিনে নেয়া যায়।

    এই ব্লগে আমরা কেউ কেউ অনেক আশা নিয়ে আসি। বিশ্লেষণধর্মী কিছু পড়বার জন্য। সারবস্তুহীন ফালতু মন্তব্য পড়ার জন্য না। সে সবের জন্য অন্য ব্লগ সাইট আছে, সেগুলোর একটা বেছে নিন দয়া করে।

    @ ব্লগ প্রশাসক

    অনুরোধ করবো, সব ধরনের মতামতকেই সমান সুযোগ দিতে। তবে সে সব যেন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সমৃদ্ধ “মতামত” হয়, ঢালাও প্রলাপ না হয়। মুক্তাঙ্গনের আলোচনার মান বজায় রাখার জন্য এটা জরুরী, বিশেষ করে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ইসুতে।

    • নাগরিক - ২২ মার্চ ২০০৯ (১২:০৫ পূর্বাহ্ণ)

      “এই উত্তর মাসুদ করিমের ব্লগ থেকে আনা হয়েছে”
      @শামীমঃ ‘আপনারা’ বলতে আমি বোঝাই এখনকার রাজনীতিবিদদের ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের যা কিনা এই ব্লগের সংকীর্ণ গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আর খোলাসা করে লেখা বলতে কি আপনি কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিয়ে লেখার কথা বলছেন যাতে আক্রমণ করতে সুবিধা হয়? তাই যদি হয়, তবে আপনাকে হতাশ হতে হবে। কারণ আমি এখনকার রাজনীতিকে প্রচণ্ড রকম ঘৃণা করি।
      আপনি লিখেছেনঃ

      এই ব্লগে আমরা কেউ কেউ অনেক আশা নিয়ে আসি। বিশ্লেষণধর্মী কিছু পড়বার জন্য। সারবস্তুহীন ফালতু মন্তব্য পড়ার জন্য না। সে সবের জন্য অন্য ব্লগ সাইট আছে, সেগুলোর একটা বেছে নিন দয়া করে।

      এর মানে এই দাঁড়ায়, মাসুদ করিমের লেখা আপনার কাছে বিশ্লেষণধর্মী মনে হয়েছে, আর সেই লেখার বিপক্ষে যারা লিখেছে তা আপনার কাছে সারবস্তুহীন ফালতু মনে হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমার কাছে তার লেখা স্ববিরোধী এবং খাপছাড়া মনে হয়েছে। xxxxxxxxxxxx। তাহলে আপনি পাঠক হিসেবে আপনার ওজন কতটুকু অনুমাণ করে নিন।
      এই ব্লগটির নাম মুক্তাঙ্গণ। তাই মুক্ত আলোচনাতে অভ্যস্ত হউন। শুধু আপনার পছন্দের লেখা আশা করা বোধ হয় ঠিক না। আর যদি আশাই করেন তবে আপনার জন্যও দরজা খোলা আছে বিকল্প পথের।

  39. রেজাউল করিম সুমন - ২২ মার্চ ২০০৯ (৮:৩২ পূর্বাহ্ণ)

    এই ব্লগটির নাম মুক্তাঙ্গন। তাই মুক্ত আলোচনাতে অভ্যস্ত হউন। শুধু আপনার পছন্দের লেখা আশা করা বোধ হয় ঠিক না।

    কিন্তু কাকে বলে “মুক্ত আলোচনা”? যিনি বড়ো গলায় উপরের কথাগুলো বলছেন, পোস্টলেখকের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য (৭ মার্চ ২০০৯, শনিবার, সময়: ২:১০ পূর্বাহ্ণ) দেখুন :

    আপনি তো ভাই লম্বা লেকচার দিলেন আওয়ামী লীগের সাইড নিয়ে। নিজেকে আগে রাজনীতিমুক্ত করেন তারপর আরেকজনকে জাস্টিফাই করবেন। আপনাদের মতো পলিটিশিয়ানরা দেশটাকে ডুবাবে। আমার মনে হচ্ছে আপনি নিজেকে বুদ্ধিজীবী টাইপের কিছু ভাবেন। আমার কাছে আপনার analysis খুব cheap মনে হয়েছে।

    এর এক সপ্তাহ পরেই (১৪ মার্চ ২০০৯, শনিবার; সময়: ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ) তাঁর আবদার:

    রায়হান ভাই, আপনার কাছে একটা‍ অনুরোধ রাখবো। আপনি কি দয়া করে এমন একটা লেখা উপহার দিবেন যা পড়ে আমাদের মধ্যে শুধুই দেশপ্রেম জাগবে এবং লেখাতে কোন দল, সংস্থা কিংবা সংগঠণের কথা থাকবে না। থাকবে শুধু সাধারণ মানুষের কথা আর দেশের কথা।

    এটা শুধুই আমার চাওয়া এবং এতে কোন উদ্দেশ্য নেই। ধন্যবাদ

    শেষ লাইনে ভাষা ব্যবহারে এই সতর্কতা দেখে মনে সন্দেহ জাগে, এটা মন্তব্যকারীর একার চাওয়া নয়, আর এর পেছনে গূঢ়/অসাধু কোনো উদ্দেশ্য থাকাটাও হয়তো বিচিত্র নয়। অন্তত একটা উদ্দেশ্য তো পরিষ্কার — আলোচনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা।

    প্রত্যুত্তরে রায়হান রশিদ লেখেন (১৫ মার্চ ২০০৯, রবিবার; সময়: ১০:৩৬ অপরাহ্ণ) :

    দেশের এমন একটা সংকটের বিশ্লেষণ কিভাবে কোন ‘দল, সংস্থা কিংবা সংগঠনের’ উল্লেখ ছাড়া সম্ভব হতে পারে, সেটা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। ব্যাখ্যা করলে বাধিত হব।

    ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পথে না গিয়ে নাগরিক জানান (১৬ মার্চ ২০০৯, সোমবার; সময়: ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ):

    এই পরিস্থিতিতে সম্ভব না হলে না হয় অন্য সময়ে উপহার দিবেন। আমি প্রাধান্য দিচ্ছি এমন একটি ইতিবাচক বিষয়কে যাতে সমস্ত শ্রেণীর মানুষ কোন দ্বিমত পোষণ না করে এক বাক্যে বলবে- “ঠিক! এই মুহূর্তে দেশের উন্নতির জন্য এরকম পদক্ষেপ প্রয়োজন”।

    দেশের সব শ্রেণীর মানুষই একমত হবেন, এমন একটা দেশহিতকর পদক্ষেপ নিয়ে লেখা পড়তে চাইছেন নাগরিক। চট করে মনে হতে পারে, নিতান্ত ভালোমানুষ-সুলভ এই চাওয়া। কিন্তু এই ছদ্ম-ভালোমানুষির মুখোশের আড়ালে নিজের মুখটা যে তিনি সুকৌশলে ঢেকে রাখতে চাইছেন, তা বোঝা যায় রিয়াদের মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে তাঁর এই উক্তি (২০ মার্চ ২০০৯, শুক্রবার; সময়: ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ) পড়লে:

    […] আপনাদের সদিচ্ছা থাকলে অনেক আগেই যুদ্ধাপরাধীদের নির্মূল করা সম্ভব হত। কারণ সবসময় আপনাদের মত সাধুরাই ক্ষমতায় ছিল। এই ৩৭ বছর জাতিকে দুর্বিসহ সময় কাটাতে হত না। সুতরাং দয়া করে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাবার চেষ্টা করবেন না। আমি এখনকার রাজনীতিকে ঘৃণা করি।

    গত ৩৭ বছরে যা-ই হয়ে থাক, এখন সারা দেশ জুড়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠছে সর্ব স্তরের মানুষ। আর সম্ভবত এ অনভিপ্রেত ঘটনাই নাগরিকের মনের শান্তি কেড়ে নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি উঠেছে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, এই বিচারও নিশ্চয়ই একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই হবে। সেজন্যই, ও সেই সঙ্গে নিজের অবস্থান আড়াল করার জন্যও, বারে বারে তাঁকে বলতে হয়,

    আমি এখনকার রাজনীতিকে ঘৃণা করি।

    কিংবা আরো জোরালোভাবে (২২ মার্চ ২০০৯, রবিবার; সময়: ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ) :

    […] আমি এখনকার রাজনীতিকে প্রচণ্ড রকম ঘৃণা করি।

    খুব ভালো কথা; এখনকার রাজনীতিকে প্রচণ্ড রকম ঘৃণা করার অধিকার বাংলাদেশের যে-কোনো নাগরিকেরই আছে। কিন্তু যিনি বারে বারে এখনকার রাজনীতির প্রতি তাঁর ঘৃণার কথা জানান, তাঁর কাছ থেকে অন্যদেরও নিশ্চয়ই জানবার অধিকার আছে, কখনকার রাজনীতিকে তিনি ঘৃণা করতেন না বা করেন না।


    আরো একটা ব্যাপার লক্ষ করার মতো। নাগরিক ও জিজ্ঞাসু নিজেদের মধ্যে কাজিয়া-ফ্যাসাদ চালিয়েই যাচ্ছেন। পোস্টের মূল আলোচনা কি অন্য সব মন্তব্য, কোনোদিকে নজর না দিয়েই খুব মন দিয়ে খেলে যাচ্ছেন নন্দী-ভৃঙ্গি, তাঁদের পাতানো খেলায় অন্যদের জড়িয়ে আলোচনাকে প্রবাহিত করতে চাইছেন ভিন্ন খাতে।

  40. মুক্তাঙ্গন - ২২ মার্চ ২০০৯ (৫:৩৮ অপরাহ্ণ)

    নোটিশ
    পিলখানা ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে ব্লগের প্রচলিত মডারেশন নীতি কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল, যাতে করে ঘটনার সাথে সরাসরি প্রাসঙ্গিক সব ধরণের মতামত উঠে আসতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আলোচনাগুলো এই পর্যায়ে পারস্পরিক ঠোকাঠুকির কারণে পোস্টের মূল বিষয়বস্তু থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। এমন নয় যে আলোচনার ডালপালা গজাতে কোনো বাধা আছে। এই ব্লগের পূর্ববর্তী বিভিন্ন আলোচনায় অনেক সময়েই নানা দিকে চলে যাওয়া সে-সব আলোচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টির প্রতিফলন ঘটেছে, যা থেকে লেখক-পাঠক সকলেই উপকৃত হয়েছেন।
    এসবের নিরিখে মন্তব্য মডারেশনের পূর্ববর্তী মানদণ্ড ফিরিয়ে আনা হলো। পোস্টের বিষয়বস্তুর সাথে সরাসরি যুক্ত নয় এমন কোনো মন্তব্যই আর অনুমোদন করা হবে না এখানে। আর সেখানেও সুনির্দিষ্ট যুক্তি-প্রমাণ-ব্যাখ্যাহীন কোনো ধরণের ঢালাও মন্তব্যই গ্রহণ করা হবে না।
    ধন্যবাদ।

  41. iqbal - ২৫ মার্চ ২০০৯ (৪:১২ অপরাহ্ণ)

    Muktanggon thank you apnake. Atleast sobaikey ekta valo upodesh deyar jonno.Bekti akromon baad die jekono problem theke kivave grohonjoggo somadhan paoa jai ta chinta kortey amader sobaike upodesh deyar jonno. ashakori sobai apnar upodesh er proti srodhdhaban hotey chesta korbe.
    Mr raihan r rezaul , amar vai er name colonel emdad. banani graveyard e shuey asey.I think shuney apnara shanti pachchen.

  42. রণদীপম বসু - ২৬ মার্চ ২০০৯ (৫:৩২ অপরাহ্ণ)

    হা হা হা ! ভেবেছিলাম কোন মন্তব্যই করবো না।
    রায়হান রশিদকে অভিনন্দন জানাচ্ছি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির উপর তথ্য ও যুক্তির ধারাবাহিকতায় চমৎকার বিশ্লেষণী পোস্ট দেয়ার জন্য। আপনার পরবর্তী সিরিয়ালের অপেক্ষায় থাকলাম।

    মন্তব্যের শুরুতেই হাসি এলো সেই ছাত্রজীবনে শুনা একটা আপ্তবাক্যের কথা মনে পড়ায়। স্বেচ্ছায় চোখ বুজে রাখা কিংবা অন্ধের চোখে যে ধরনের চশমাই লাগাও না কেন, অন্ধ সে অন্ধই থাকে। রায়হান, আমি যখন চোখে ঠুলি পড়ে থাকবো তখন আপনি যতকিছুই দেখাতে চান না কেন, আমি তো ঠুলির অন্ধকারই দেখবো ! যারা দেখার তারা দেখবে ঠিকই। আপনি বরং আপনার যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যান। আমার দেখার ইচ্ছা হলে আমি চোখ থেকে ঠুলিটা খুলে নেবো। ঠুলি পড়ে যারা এখানে মন্তব্য করতে আসছেন তারা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই করছেন। আমার তো মনে হয় একটা নির্বোধও তা বুঝতে পারছে। একটা চমৎকার কাজে অযথা কালক্ষেপন করিয়ে শুধু শুধু সময় ঘোলা করার অভিসন্ধি বলেই তো মনে হচ্ছে ! ধন্যবাদ সবাইকে।

    আমি কোন বিতর্ক করার জন্য এ মন্তব্য করিনি। আমার ধারণা ব্যক্ত করলাম মাত্র। কেউ একমত হোন বা না হোন। তাই আমার এ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কোন প্রতিউত্তর এলেও এর জবাব আমি দেবো না। আবার ধন্যবাদ।

  43. রায়হান রশিদ - ১৩ এপ্রিল ২০০৯ (১:৩৪ অপরাহ্ণ)

    প্রসঙ্গ: সুনিতা পাল

    পিলখানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্লেষণ কিংবা সংবাদের নামে নানাবিধ উদ্ভট গুজবের বেসাতি যারা করছেন, সেই তালিকায় নবীনতম সংযোজন সুনীতা পাল নামের জনৈকা “মূক-বধির” (!!) লেখিকা। বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্য থেকে লেখা তার এসব লেখা পড়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন; কেউ কেউ আবার সে সব জেনারেল সাহেবের ইমেইলের মত করে প্রচারও করে বেড়াচ্ছেন। সম্প্রতি সিসিবি-তেও প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয় (এখানে দেখুন)। সেখান থেকেই উদ্ধৃত করছি:


    সানাউল্লাহ (৭৪ – ৮০); ২২ মার্চ ২০০৯

    আজ দুটি ইমেইলে পাওয়া দুটি পরস্পরবিরোধী লেখার পিডিএফ ভার্সন ও লিংক এখানে যুক্ত করলাম। পিলখানায় সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ড নিয়ে এর একটির লেখক বিখ্যাত সুনিতা পল আর অন্যটি বলা হচ্ছে সাউথ ব্লকের (ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) বক্তব্য।
    সুনিতা পলের লেখা : পিডিএফ
    সাউথ ব্লকের বক্তব্য : লিংক

    আহসান আকাশ (৯৬ – ০২); ২২ মার্চ ২০০৯

    পড়ে দেখলাম… পড়ার সময় তো দুটোকেই যুক্তিযুক্ত মনে হয় কিন্তু শেষে এসে মনে হয় আরও একটি ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ এর উদয় হলো, আসল সত্য কি আমরা আদৌ জানতে পারব কখনও?

    সানাউল্লাহ (৭৪ – ৮০); ২২ মার্চ ২০০৯

    ভালো বলেছ আকাশ।
    সুনিতা হচ্ছে সেই ছদ্মনাম যে নামে এর আগে লেখা হয়েছিল উলফার টাকায় চলে প্রথম আলো!! এই নামে আসলে কেউ আছে কিনা সন্দেহ। বিশেষ মহলের স্বার্থে তিনি বিশেষ বিশেষ লেখা বিশেষ বিশেষ সময়ে লেখেন!!

    রায়হান রশিদ (৮৬‌-৯০); ৩ এপ্রিল ২০০৯
    হঠাত করেই যেন সুনিতা পাল নামের এই কলামিস্ট এর আবির্ভাব, যিনি বাংলাদেশ নিয়ে একের পর এক অত্যন্ত বিতর্কিত সব থিওরী নিয়ে হাজির হচ্ছেন। এত “প্রসিদ্ধ” কলামিস্ট (তাঁর নিজেরই বর্ণনায়), অথচ ৫৭ বছর বয়সী এই সাংবাদিক-কলামিস্টের শুরুর দিককার (ধরা যাক বছর বিশেক আগের) কোন লেখা অনেক খুঁজেও পেলাম না! সাম্প্রতিক এক লেখায় সুনিতা পাল জনৈক “সালাহ উদ্দিন শোয়াইব চৌধুরী” সম্পাদিত Weekly Blitz পত্রিকাকে বাংলাদেশের “most influential newspaper” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মজার ব্যাপার হল, Weekly Blitz এর সাইটটিতে গেলে অত্যন্ত কৌতুহলোদ্দীপক একটি ব্যাপার চোখে পড়ে। Weekly Blitz এর ওয়েবসাইটটি যারাই তৈরী করেছেন এবং চালাচ্ছেন, তারা নিজেরাই ওয়েবসাইটের meta description এ (ব্রাউজারের উপরের দিকে লক্ষ্য করুন) নিজেদের সম্বন্ধে “Weekly Blitz 1 Most Influential Newspaper in Bangladesh” হিসেবে কথাগুলো জুড়ে দিয়েছে। বিষয়টা একটু হাস্যকরও বটে। সুনিতা পাল সালাহ উদ্দিন শোয়াইব চৌধুরীকে “internationally known award winning anti-jihadist journalist” হিসেবে বর্নণা করেছেন তার একাধিক লেখায়। বলাই বাহুল্য, সুনিতার বহু লেখাতেই (প্রায় প্রতিটিতেই) Blitz সম্পাদকের প্রতি তার “অকুন্ঠ” সমর্থন প্রকাশ পেয়েছে। আশা করি দু’জন একই ব্যক্তি নন!!

    সংযোজন: সুনিতা পালকে নিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ওয়ালী-উর-রহমান এর একটা পর্যবেক্ষণ এই মাত্র চোখে পড়লো। ছাপা হয়েছে এখানে

    অবশ্য পাঠ্য:
    গত কয়েক দিনে কথিত এই সুনিতা পালকে নিয়ে আরও কয়েকজন লিখেছেন। বলা যায়, লিখতে বাধ্য হয়েছেন। সুনিতা পালের কুম্ভীলকবৃত্তি, প্রতারণা, মিথ্যাচার এবং অপপ্রচার প্রয়াসকে উম্মোচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই লেখা তিনটি সবাইকে মনযোগ দিয়ে পড়ার এবং জনস্বার্থে তা প্রচার করার আহ্বান জানাচ্ছি:

    ১। ম্যাশ এর ব্লগ: Sunita Paul: Plagiarist

    ২। ম্যাশ এর ব্লগ: Who Is ‘Sunita Paul’?

    ৩। সাদাকালো-র ব্লগ: Sunita Paul: The International (Wo)man of Mystery.

    ধন্যবাদ।

  44. ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১৩ মে ২০০৯ (৮:০৬ অপরাহ্ণ)

    বিডিআর হত্যাকান্ড নিয়ে সেনাবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত রিপোর্টের কাজ শেষ। প্রথম আলোতে প্রকাশিত খবর:


    বিডিআরে হত্যাকাণ্ড
    বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে ‘ডাল-ভাত’সহ সাত কারণ

    সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতের ২০০ পাতার প্রতিবেদনে বিডিআর কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতাকেও দায়ী করা হয়েছে
    কামরুল হাসান
    অপারেশন ডাল-ভাতই বিডিআর বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ। এর সঙ্গে রয়েছে বিডিআর সদস্যদের তুলনায় সেনা কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিরূপ ধারণা, বিডিআরের দোকান পরিচালনা নিয়ে অসন্তোষ, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের পর বিডিআর জওয়ানদের বিল না পাওয়া, সদর দপ্তরের ভেতরে ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ, বিডিআর স্কুলে ভর্তি, স্কুল পরিচালনা করা এবং সৈনিকদের অবৈধ আয়ের পথ বন্ধ করা।
    গত ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে এসব বিষয়কেই বিদ্রোহের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী তদন্ত আদালত গঠন করে। ২০ সদস্যের এ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন ১১ মে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রায় ৩০০ পাতার প্রতিবেদনে এ ঘটনার জন্য বিডিআর কতর্ৃপক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছে। তদন্ত আদালত এ ঘটনায় জড়িতদের সেনা আইনের আওতায় এনে বিচার করার সুপারিশ করেছেন বলে জানা গেছে।
    ওই ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন এবং লালবাগ থানায় একটি মামলা হয়। পরে মামলাটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ মামলাটি তদন্ত করছেন। সিআইডির পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আনিস উজ জামানের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটির প্রতিবেদন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তদন্তে সহায়তার জন্য এর আগে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ও এফবিআইয়ের সদস্যরা ঢাকা সফর করেন। তদন্ত কমিটিগুলোর সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান।
    সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার সঙ্গে হাজারীবাগ আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলী, তাঁর ছেলে সন্ত্রাসী লেদার লিটন ও বিডিআরের সাবেক সদস্য কাঞ্চনের ছেলে জাকির জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি রাজনৈতিক নেতারা জানতেন তবে তাঁরা বিডিআর কতর্ৃপক্ষকে তা জানিয়েছিলেন কি না, তা আদালত জানতে পারেননি। তদন্ত প্রতিবেদনে রাজনৈতিক নেতারা এ ঘটনাটি সেনাবাহিনীর ওপর তাঁদের প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকতে পারেন বলেও ধারণা করা হয়েছে।
    বিদ্রোহের কারণ: তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে ডাল-ভাত কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এ কর্মসূচিতে বিডিআর সদস্যরা মাছ ও মুদি দোকানির মতো কাজ করেছেন, যা জওয়ান হিসেবে তাঁদের আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছে। অনেক বিডিআর সদস্যকে এ কর্মসূচির কারণে শাস্তি পেতে হয়েছে। আবার বিল দেওয়ার নামে অনেক বিডিআর সদস্যকে একাধিক খালি ফরমে সই দিতে হয়েছে। এতে জওয়ানদের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এ কর্মসূচির কারণে জওয়ানেরা ছুটি পর্যন্ত কাটাতে পারেননি। উল্টো তাঁদের অতিরিক্ত কাজ করতে হয়েছে। এ কারণে জওয়ানেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তাঁদের মনে সন্দেহ দেখা দেয়।
    প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনীর তুলনায় বিডিআর জওয়ানেরা কম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে তাঁদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। বিডিআরের দোকান পরিচালনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্বচ্ছতা না থাকায় এ নিয়ে জওয়ানেরা নিজেদের কল্পনাপ্রসূত ধারণার অবতারণা করেন, যা তাঁদের বিদ্রোহে প্ররোচিত করে। আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জওয়ানদের মধ্যে ভাতা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এতে জওয়ানেরা মনে করেন, এসব অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিদ্রোহ পরিচালনাকারীরা সাধারণ জওয়ানদের মধ্যে এরূপ ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করেন যে বিডিআর সদর দপ্তরের ভেতরে ঠিকাদারি, স্কুলে ভর্তি এবং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পরিচালনা নিয়ে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, তাঁর স্ত্রী নাজনীন শাকিল ও ঢাকার সেক্টর কমান্ডার মুজিবুল হক। এ বিষয়গুলো জওয়ানদের বিদ্রোহের ব্যাপারে প্ররোচিত করে।
    কতর্ৃপক্ষের উদাসীনতা: তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে এ ঘটনার জন্য বিডিআর কতর্ৃপক্ষের উদাসীনতাকেও দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অসন্তোষের বিষয়টি বিডিআর কতর্ৃপক্ষ আগে থেকে জানলেও প্রধানমন্ত্রীর সফর বাতিল হবে−এ আশঙ্কায় তা গোপন রাখা হয়। উল্টো কোয়ার্টার গার্ড ও অস্ত্রাগারে পাহারা বাড়ানো হয়। এতে জওয়ানদের মনে সন্দেহের জন্ন হয়। কয়েকজন কর্মকর্তার পরিবার ও তাঁদের বন্ধুবান্ধবের প্রশাসনে অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণেও জওয়ানেরা ক্ষুব্ধ হন।
    সংশ্লিষ্টতা: তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে বিদ্রোহের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ মেলেনি। রাজনৈতিক নেতাদের ব্যাপারে বলা হয়, বিডিআর সদস্যরা আইন ভঙ্গ করে দলীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রশাসনকে সহায়তার কারণে অনেক বেসামরিক ও রাজনৈতিক নেতা সেনাবাহিনীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এসব ব্যক্তি বিডিআরের ঘটনাকে প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন বলে প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সুবেদার তোরাব আলী (আওয়ামী লীগ নেতা), তাঁর ছেলে লেদার লিটন ও জওয়ান কাঞ্চনের ছেলে জাকির জওয়ানদের সঙ্গে বৈঠক করে বিদ্রোহে ইন্ধন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তোরাব আলীর ফোন পরীক্ষা করে দেখা যায়, বিদ্রোহের সময় তিনি অনেকবার বিদেশে কথা বলেছেন। বিডিআরের অস্ত্র পাওয়ার জন্য লেদার লিটন বিদ্রোহে জড়িত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে।
    ব্যর্থতা: প্রতিবেদনে বলা হয়, বিডিআর সদস্যরা তাঁদের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও গোয়েন্দারা তা জানতে পারেনি। আবার বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আগমনের আগে গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দিলেও তাতে এ বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। অথচ এক দিন আগেই বিদ্রোহের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এটি গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবিরসহ অন্যদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, সামরিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা না থাকায় তাঁরা বিদ্রোহ দমনে সময়োপযোগী ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
    র‌্যাবের কার্যক্রম: তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে র‌্যাবের বিরূপ সমালোচনা করে বলা হয়, বিদ্রোহ শুরুর পর র‌্যাবের ৩৫০ জন সদস্য সকাল ১০টা ১০ মিনিটের ভেতরে পিলখানার তিনটি গেটে অবস্থান করলেও র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে অভিযানের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ওই সময় র‌্যাব-২-এর কর্মকর্তারা ৫ নম্বর গেটে অবস্থান করছিলেন। সেখানে বিডিআর জওয়ানেরা সংগঠিত ছিলেন না। ওই সময় অভিযান চালালে কর্মকর্তাদের জীবন বাঁচানো যেত বলে ধারণা করা হয়েছে।
    সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গ: তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে বলা হয়, সময়ের অভাবে অভিযানের আগাম জরিপ (রেকি) করতে না পারা এবং প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম মজুদ না থাকায় সময়মতো সেনাবাহিনী মোতায়েন করা সম্ভব হয়নি। আবার রাজনৈতিক নেতাদের আলোচনার জন্য ৪৬ ব্রিগেড প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে পারেনি। পিলখানার চারদিকে সেনা মোতায়েনের পর সেনাবাহিনীকে সরিয়ে যেতে বলা হলে বিডিআর সদস্যরা আরও সংগঠিত হন। এতে বলা হয়, পিলখানা আক্রমণের জন্য সব বাহিনী একটি পরিকল্পনা নেয়। এতে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটা সময় নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন পাঁচটা ৫০ মিনিটে এ পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন সিলেটে হওয়ায় বিদ্রোহ দমনে তাদের নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। এ সময় বিদ্রোহ দমনের কোনো সমন্বিত দল ছিল না। সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে হত্যা ও তাঁদের পরিবারকে লাঞ্ছনার খবর টিভিতে প্রচার করায় সেনা কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে যায়।
    খুন, লুটপাট, জিম্মি: প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০-৩৫ জনের একটি দল প্রথমে দরবার হল, ডিজি ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাণ্ডের সূচনা করে। এরপর বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ে। কর্মকর্তাদের কাকে কোথায় কে খুন করেছে, তার বিস্তারিত কমিটি পায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মূল পরিকল্পনাকারীর নামও জানা যায়নি। তবে কর্মকর্তাদের জিম্মি করার বিষয়টি সবাই জানলেও তাঁদের খুন করার বিষয়টি কম সদস্য জানতেন বলে ধারণা করা হয়েছে। জওয়ানেরা পিলখানার ভেতরে ব্যাপক লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেন। তাঁরা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে রাখেন ও নির্যাতন করেন। তাঁরা কর্মকর্তাদের যাকে যেখানে পান, খুন করেন এবং ফোন ও অন্য জিনিসপত্র লুট করেন।
    প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, দুজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, একজন সেনা, নয়জন বিডিআর সদস্যসহ ৭৪ জন নিহত হন। এ ছাড়া একজন সেনাসদস্য, একজন চিকিৎসকের স্ত্রী, একজন পুলিশসহ ১৮ জন আহত হন। দুজন কর্মকর্তা ও একজন ডিএডির মৃতদেহ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তাঁরা খুন হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
    বিডিআর ব্যাটালিয়নের ভূমিকা: প্রতিবেদনে বলা হয়, পিলখানায় অবস্থিত চারটি ব্যাটালিয়নের সবাই বিদ্রোহে জড়িত ছিল। ৪৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন তাদের কর্মকর্তাদের রক্ষা করলেও ৩৬ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন তাদের কর্মকর্তাদের খুন করেছে। বিডিআরের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা সরাসরি বিদ্রোহে অংশ নেন।
    পলায়ন: প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে একটি মিছিল পিলখানা এলাকায় ঢুকলেও কিছু বিডিআর জওয়ান মিছিলের সঙ্গে বের হয়ে যান। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া তিন কিলোমিটার এলাকা জনশূন্য করে রাখার জন্য স্থানীয় সাংসদের নির্দেশ ও চার দিনের নিরাপত্তা বেষ্টনী তুলে দেওয়ার কারণে বিডিআর জওয়ানদের পালানোর পথ সহজ হয়ে যায়। ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর দুইটার পর থেকে জওয়ানেরা পালাতে শুরু করেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
    শাস্তি: প্রতিবেদনে বলা হয়, এ আদালতের সীমাবদ্ধতার কারণে বিদ্রোহে জড়িত থাকা নিয়ে বেসামরিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কোনো তথ্য জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। এসব তথ্য সংগ্রহের জন্য উচ্চপর্যায়ের আদালত গঠনের সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া সরকারের সব বাহিনীতে বিদ্রোহের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার সুপারিশ করেছেন তদন্ত আদালত।
    পুনর্গঠন: বিডিআর গঠন নিয়ে আদালত মতামত দিয়েছেন। এতে বলা হয়, রাইফেলস আইন ১৯৭৬ সংশোধন করে আর্মি আইনের আদলে বিডিআর বাহিনী গঠন করতে হবে। বিডিআরের বিভাগীয় পদ বাতিল করে নতুন করে পৃথক অফিসার শ্রেণী গঠন করার সুপারিশ করা হয়। তদন্ত আদালত বিডিআরের দোকান বরাদ্দ, দরবার হল বরাদ্দ, অপারেশন ডাল-ভাত, পুকুর ইজারাসহ বিভিন্ন ঘটনা পৃথকভাবে তদন্ত করার সুপারিশ করেছে। বাহিনীর নির্ধারিত কাজের বাইরে অন্য কোনো কাজে না জড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

  45. সৈকত আচার্য - ১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৬:৩৯ অপরাহ্ণ)

    সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পাঠানো রেফারেন্সের শুনানী চলছে। সাদামাটা কথায়, এই রেফারেন্সের বিষয়বস্ত হল, পিলখানায় সংঘটিত ঘটনায় দায়ী বিডিআর সদস্যদের সেনা আইনের আওতায় বিচার করা যায় কিনা।

    আমাদের দেশের ১০ জন খ্যাতিমান আইনজীবিকে এমিকাস কিউরি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত বিজ্ঞ আইনজীবি সর্বজনাব টি এইচ খান, খন্দকার মাহবুবউদ্দিন আহমেদ, রফিকুল হক, আমীরুল ইসলাম এবং ডঃ কামাল হোসেন তাঁদের বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছেন।

    জনাব রফিকুল হক এবং খন্দকার মাহবুবউদ্দিন আহমেদ প্রায় একই ধরনের মতামত দিয়ে বলেছেন, সেনা আইনের আওতায় এদের বিচার সম্ভব। বিশেষ করে তারা বলেছেন, সরকার যদি একটা গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে বলে দেয় যে বিচার প্রক্রিয়াটি সেনা আইনের আওতায় হবে, তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

    অপরদিকে, টি এইচ খান মনে করছেন, প্রত্যেক সার্ভিসেরই নির্দ্দিষ্ট বিধান আছে। সেনা আইনের বিধান বিডিআরের উপর প্রয়োগ করা যায়না, ফলে বিচার প্রক্রিয়াটি সেনা আইনে সম্ভব নয়।

    ডঃ কামাল হোসেন মনে করেন, Army Act এর ২ ধারা অনূযায়ী বিডিআর সদস্যগন এই আইনের আওতা ও কর্তৃত্বভুক্ত নন। তিনি মনে করেন, বর্তমান আইন অনু্যায়ী আগেকার কোন ঘটনার বিচার পরে ইস্যুকৃত গেজেট নোটীফিকেশন দিয়ে করা সম্ভব নয়। আমিরুল ইসলামও এক্ষেত্রে একমত পোষন করেন।

    বিডি নিউজের এই রিপোর্টটি দেখুনঃ এখানে।

  46. অবিশ্রুত - ২৫ মার্চ ২০১০ (৭:০৭ পূর্বাহ্ণ)

    বিডিনিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কমে প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যেরও ময়না তদন্ত হওয়া দরকার

    চট্টগ্রাম, মার্চ ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৩০ সেনাকর্মকর্তা আওয়ামী লীগ পরিবারের বলে জানিয়েছেন দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ-মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
    বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৩০ সেনা কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ পরিবারের উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, “যাদের আমরা ক্ষমতায় এসে এসএসএফসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।”
    গত বছরের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহে ৫৬ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।

    এখানেও দলীয়করণ? নৃশংস হত্যার শিকার সেনা কর্মকর্তাদের আওয়ামী লীগ ও না-আওয়ামী লীগ পরিবারে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা কতটুকু যৌক্তিক ও শোভনীয়? রাষ্ট্রের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তার কি উচিত এমন বিভাজন তৈরি করা? বিএনপি-জামাত যদি দাবি করে বাকি সেনা কর্মকর্তারা বিএনপি-জামাত পরিবারের, সংখ্যার যুদ্ধে হেরে প্রধানমন্ত্রী তখন কী করবেন?

    • রায়হান রশিদ - ২৫ মার্চ ২০১০ (৭:৩০ পূর্বাহ্ণ)

      প্রধানমন্ত্রীর এমন বালখিল্য মন্তব্যের আসলেই ময়না তদন্ত হওয়া দরকার। সেই সাথে ইতোমধ্যে প্রদত্ত তদন্ত রিপোর্ট দু’টোরও; তৃতীয় রিপোর্টটির কি হয়েছে জানা নেই। ঢাক ঢোল পিটিয়ে অশ্বডিম্ব প্রসব আর কি!

  47. মোহাম্মদ মুনিম - ২৬ মার্চ ২০১০ (৪:০৩ পূর্বাহ্ণ)

    ‘আওয়ামী পরিবার’ এই কথাটার মানে কি? বাংলাদেশে তো একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্য বিভিন্ন দল করেন। আগের যুগে হলে এসব কথা হাওয়ায় ভেসে যেতো, এখনতো সব ইন্টারনেটে স্থায়ী রেকর্ড হিসাবে থেকে যায়। তিনি স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে এই জাতীয় কথা না বলে চাঁদাবাজী থামাতে বলতে পারতেন।

  48. নিরাভরণ - ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৫:৫১ পূর্বাহ্ণ)

    এই সিরিজের প্রথম পোস্টের দেয়া মন্তব্য এখানেও কপি করছিঃ
    নিরাভরণ লিখেছেন:
    ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১, শুক্রবার সময়: ৫:২২ পূর্বাহ্ণ
    [মন্তব্য-লিন্ক]

    – ঠিক আজই এখনই কেন এই বিদ্রোহ? ‌- তিন বছর বা ছয় মাস আগে নয় কেন?

    আমার মতে এই পোস্টের মূল প্রশ্ন এটাই। এটার সাথে আরেকটা প্রশ্ন যোগ করতে চাই। যেটা কিছুদিন আগে কিছুটা ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে মনে এসেছিল।

    তখন সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ‘মাইনাস টু’ বাস্তবায়নের জন্য নানা ধরনের তৎপরতা চলছে মুলত সামরিক তত্ত্বাবধানে। বেশকিছু ডাকসাইটে নেতাদের স্বিকারোক্তি প্রকাশিত হচ্ছিল পত্রিকায়, ইউটিউবে। স্বভাবতই সহজ আড্ডালাপে এধরনের কঠিন স্বিকারোক্তি (সত্য মিথ্যে যাই হোক) বেরিয়ে আসেনি। মানে কিছু শারিরীক মানসিন নির্যাতনের ছবিও কল্পনা করা কঠিন ছিলোনা। একজন সাধারন নাগরিক হিসাবে একটা আশঙ্কা জাগছিল মনে, যদি মাইনাস টু কাজ না করে তাহলে যারা এই ইন্টারোগেশান ইত্যাদির সাথে জড়িত তাদের পরিনতি কি হবে? তখন সামরিক বাহিনীও হয়ত বুঝে গিয়েছিল মাইনাসটু সফল না হবার ঝুকি কতটা। ফলে তাদের আচরন অনেকটা মরিয়া ছিল বলেই অনুমান করা যাচ্ছিল (এভাবেই পর্যবেক্ষন করছিলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজগুলো)। যদি প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি ক্ষমতায় আসে এবং অন্যটি বহাল তবিয়তে বিরোধী দলে যায় তারা কি কেবল এই অফিসারদের বা বৃহত্তর অর্থে সেনাবাহিনীর উদ্ধত আচরনের উত্তর দিতে চাইবে না? যদি উত্তর দিতে চায় তবে সেই উত্তরের ধরনটা কেমন হবে? কয়েকজন অফিসারকে ছাটাই করা অবশ্যই এই ঔদ্ধত্যের যথেষ্ট জবাব নয়, যদি রাজনৈতিক নেতাদের ইগোর ব্যপারটাকে বিবেচনা করি।

    তাহলে সামরিক ঔদ্ধত্যের কি ধরনের জবাব রাজনৈতিক নেতাদের মনকে শান্ত করতে পারে?

    আমার ধারনা প্রধান রাজনৈতিক দলদুটোর একটি ক্ষমতায় আসার পর আমার মত আরো অনেকেই হয়ত এইরকম আশংকা পোষন করেছেন। তারপর কিছুদিন পরেই ঘটল বিডিয়ার বিদ্রোহ। আমি জানিনা আমার উপরের প্রশ্নের উত্তর বিডিয়ার বিদ্রোহের ঘটনা কিনা। কিন্তু মন থেকে এই ভাবনাটি সরাতে পারিনি।

    পারিনি উপরে বর্ণিত পরিস্থিতির সাথে আরো কয়েকটা ফ্যক্টর যোগ করেঃ
    ১) পিলখানার ঘটনাটি যত বড় এটাতে কোন অদৃশ্য বা দূরবর্তি শক্তির পক্ষে সবার অগোচরে এমনটা ঘটান অসম্ভব।
    ২) এই ঘটনার কয়েকমাস পর কয়েকজন অল্পবয়সি সামরিক অফিসার আইন নিজের হাতে তুলে নেবার চেষ্টা করে এবং বিচারের মুখোমুখি হয়। এটাকে একটা ষড়যন্ত্র হিসাবে না পাঠ করে আমি পাঠ করেছি কয়েকজন তরুন অফিসারের হতাশাতাড়িত মরিয়া আচরন হিসাবে।

    সেইসময় কালে যেই সামরিক বাহিনীর সমর্থিত সরকারয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আরেকটা নাম ছিল মোহাম্মদ ইউনুস। এখন অনেকেই বুঝতে পারছেননা ইউনুসের প্রতি রাজনৈতিক জিঘাংসার কারনকি?

    ক্ষমা করবেন উত্তরগুলো একটু বেশি সহজ হয়ে দেখা দিচ্ছে মনে। অন্য যতরকমের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব আছে সেগুলো বিশ্বাস করতে পারলে ভালই লাগত। কিন্তু উপরে যেই ভাবনাগুলোর কথা লিখলাম এগুলো অত্যন্ত পীড়াদায়ক। কেউ যদি পারেন আমাকে সাহায্য করুন এই ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসতে তাহলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আমি নিজেও এই ধারনাটিকে অবিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু পারছিনা।

    উপরের অংশটি লেখার পর নীড়সন্ধানীর মন্তব্য চোখে পড়ে। সেটার মূল প্রস্তাবনা উপরের আশংকাকে আরো শক্ত করে।

    আনুমানিক বিশ্লেষন:
    প্রধানতঃ দুটো দল ঘটনার সাথে যুক্ত থাকতে পারে। প্রথম দলটা ‘কাভার’, দ্বিতীয় দলটা ‘ষ্ট্রাইকিং ফোর্স’। প্রথম দলটা বৈষম্য বঞ্চনা ইত্যাদিতে দীর্ঘদিন ক্ষুব্ধ ছিল। দ্বিতীয় দলটা একটা উদ্দেশ্য সাধনে সুযোগের সন্ধানে ছিল। প্রথম দল দ্বিতীয় দলের আসল পরিচয় উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু জানে না। দ্বিতীয় দলটা আসল উদ্দেশ্য গোপন রেখে প্রথম দলের ক্ষোভের সাথে তাল মেলালো। দাবী আদায়ের নামে প্রথম দলকে ফ্রন্টলাইনে পাঠিয়ে ঘটনার সুত্রপাত করলো এবং পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিতীয় দল গিয়ে ডিজিসহ প্রথম ধাক্কায় ১১ জন অফিসারকে হত্যা করলো।তারপর বাকীদেরকে খুজে খুজে হত্যা করলো।
    কিন্তু দেশবাসীকে কৌশলে জানানো হলো বৈষম্য, বঞ্চনা, অবিচারের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভ বিষ্ফোরিত হয়ে বিডিআর সেনারা বিদ্রোহ করেছে, সেনাবাহিনীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করেছে, দরবার হলে ডিজিসহ বেশ কয়েকজন অফিসারকে জিম্মি করেছে দাবী আদায়ের জন্য। টিভিতে বিদ্রোহী সৈন্যদের বক্তব্য প্রচারের পর জনসহানুভুতিও বাড়তে লাগলো বিদ্রোহের প্রতি। সরকারের প্রতিনিধি ভেতরে গেল আলোচনা করে ফিরে এল। আবার বিদ্রোহীদের ১৪ জন প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে দাবি দাওয়া দিল। সরকার দাবি মেনে সহানুভুতির সাথে সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করলো বিদ্রোহীদের প্রতি। কিন্তু অস্ত্র সমর্পনে গড়িমসি করতে দেখা গেল। রাত কেটে গেল প্রহসনে। পরের দিনও যেতে লাগলো সমাধান ছাড়া। সেনাবাহিনীর ট্যাংক বহর রওনা দেবার খবর পেয়ে সাদা পতাকা উড়িয়ে দিল বিডিআর।
    ততক্ষনে দ্বিতীয়পক্ষ উদ্দেশ্য হাসিল করে ফেলেছে। তারা শ খানেক মেধাবী অফিসারকে খুজে খুজে হত্যা করে ফেলেছে। হয়তো সে সময় প্রথম দলকে লুটপাটের দিকে লেলিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় দল লাশগুলো কিছু নর্দমায় কিছু গনকবরে ঢুকিয়ে দেয়। হয়তো প্রথম দল জানেও না কতজনকে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো যখন জেনেছে তখন দেরী হয়ে গেছে। মুখে রুমাল দিয়ে টিভিতে বিক্ষোভ দেখানো মুখগুলো মনে হয় প্রথম দলের বোকা বিপ্লবীদের। দ্বিতীয় দলের চেহারা বোধহয় মিডিয়ার কোথাও দেখা যায় নি, যার ঘটনা ঘটায় তারা সবসময় আড়ালেই থাকে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম দুঃসাহসী হত্যাকান্ড।

    • অবিশ্রুত - ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১১:৫০ অপরাহ্ণ)

      লেখা হয়েছে

      সেইসময় কালে যেই সামরিক বাহিনীর সমর্থিত সরকারয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আরেকটা নাম ছিল মোহাম্মদ ইউনুস। এখন অনেকেই বুঝতে পারছেননা ইউনুসের প্রতি রাজনৈতিক জিঘাংসার কারনকি?

      সত্যিই বুঝতে পারছি না, রাজনৈতিক জিঘাংসা বলতে কি বোঝানো হচ্ছে। আমার তো যতদূর মনে পড়ছে, ড. ইউনূসই বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক জিঘাংসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির আলামত নিয়ে কথা বলার মানে কি রাজনৈতিক জিঘাংসার প্রকাশ ঘটানো?

      • নিরাভরণ - ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ)

        স্পষ্টতই ইউনুস এই পোস্টের বা আমার মন্তব্যের মূল ফোকাস নয়, বড়জোড় একটা ফুটনোট। সময় সুযোগ হলে অবশ্যই এই বিষয়ে আলোচনা করার আগ্রহ থাকল। “ইউনুস সুযোগ পেলেই রাজনৈতিক জিঘাংসার পরিচয় ঘটিয়েছেন” — এটাকে তাই একটা ভিন্নমত হিসাবে নোট করে রাখলাম।

  49. সপ্তক - ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ (৮:২৯ অপরাহ্ণ)

    বাংলাদেশে জেনারেল এবং জানোয়ার সমারথক।এদের দারা দেশের ক্ষতি ছাড়া কন লাভ আজ পর্যন্ত হয়নি।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.